Sunday, October 5, 2025







সে প্রেমিক নয় পর্ব-০৯

#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)

#পর্ব ০৯

তুমুল বেগে ঝড় বইছে বাহিরে। বড় বড় গাছগুলো বেসামাল ভাবে নড়ছে। কিছুক্ষন পর পরই চারপাশ আলোকিত করে বজ্রপাত তো আছেই। সেই সন্ধ্যা বেলা থেকে তুফান শুরু হয়েছে এখনও থামার নাম নেই। দু’হাত মেলে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে আনাবিয়া। বৃষ্টির ফোটা গুলোর সাথে গড়িয়ে পড়ছে তার চোখের পানি। এই ভয়ংকর তান্ডব বৃষ্টিতে ভিজতে ভালো লাগছে তার। জেসিকা কয়েকবার বলেছিল রুমের ভিতরে চলে আসতে। কিন্তু আনাবিয়া যায়নি। এক ঘন্টা ধরে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। আনাবিয়ার আজ তার মা বাবার কথা একটু বেশিই মনে পরছে। সবার পরিবার আছে তার কেনো কেউ নেই! এতো বড় দুনিয়ায় সে-ই কেনো এতিম! এইরকম নানা ধরণের কথা ভাবছে আর অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে সে। বৃষ্টি ধীরে ধীরে জানো বেড়েই চলছে। বার বার উড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে আনাবিয়ার পরিহিত ওড়না।

হালকা ভেজা শার্ট হাতের সাহায্যে ঝাড়তে ঝাড়তে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে ইরান। কিছু সময়ের জন্য বাসায় এসে পুনরায় অফিসে চলে গিয়েছিল তখন। এখন বৃষ্টির কারণে বাসায় আসতে দেরি হয়ে গেলো। এতো বড় বাড়ি অথচ সবসময়ই নীরব থাকে। হয়তো সবাই যার যার রুমে। ইরান নিজ রুমে এসে দেখে রুম অন্ধকারে ছেয়ে আছে। হাওয়ায় জালানার সাদা পর্দা গুলো উড়ছে। বেলকনির দরজা খোলা। ইরান বাতি জ্বালিয়ে পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে নেয়। আনাবিয়াকে না দেখে বেলকনিতে উঁকি দেয়। সেখানেও আনাবিয়াকে না দেখে একটু অবাক হয় ইরান। চিন্তিত ভঙ্গিতে পরিহিত শার্ট ইং করা থেকে ঠিক করে। ওপরের দুইটা বোতাম খুলে রুমের বাহিরে চলে আসে। পাশের খালি রুম গুলোতে খুঁজে নেয়। কোথায়ও না পেয়ে ললাটে ভাঁজ পরে তার। এই ঝড় তুফানের মধ্যে মেয়েটা গেলো কোথায়? ছাদের কথা মনে পরতেই ইরান দ্রুত পায়ে সিঁড়ি দিয়ে ছাদে উঠে। সে যা ভেবেছিল তাই হলো। ছাদে গুঁটিসুটি মেরে বসে আছে আনাবিয়া। সাদা শরীর লাল বর্ণ ধারণ করেছে। চুলগুলো উস্কোখুস্ক হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

রাগে ইরানের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। হাত মুঠো করে চেপে রাখে। আনাবিয়ার কাছে এগিয়ে যেয়ে রাম ধমক দিয়ে বলে,

-এই মেয়ে ঝড়ের মধ্যে এখানে বসে আছে কেনো তুমি? পুরো বাড়িতে আমি তোমাকে খুঁজে পাগল প্রায়! আর তুমি ভুতের মতো এখানে বসে আছো!

আনাবিয়া উত্তর দিলো না। আগের ভঙ্গিতেই বসে রইলো। ইরানের রাগ এবার মাথায় চড়ে যায়। আনাবিয়ার হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে জোর করে দাঁড় করায়। কাঁকভেজা আটস্যাট হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো আনাবিয়া। মাথা তার নিচের দিকে ঝুঁকে আছে। ইরান বুঝতে পারছে না আনাবিয়ার হঠাৎ কী হয়েছে। নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত করে করুণ চাহনি নিক্ষেপ করে আনাবিয়ার ওপর। থুতনি ধরে আনাবিয়ার মাথা ওপরে তুলে। ফর্সা মুখ ফেকাশে হয়ে গিয়েছে। আঁখিজোড়া লাল হয়ে আছে। ইরান আতকে উঠে আনাবিয়ার এই রূপ দেখে। কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তার আগেই আনাবিয়া জ্ঞান হারিয়ে ইরানের বুকে ঢলে পরে।
জ্ঞানশূন্য হয়ে ইরান কোলে তুলে নেয় আনাবিয়াকে। নিজেদের রুমে এনে বিছানায় শুয়ে দেয়। ফোন নিয়ে দ্রুত ফ্যামিলি ডাক্তারকে কল দেয়। বৃষ্টি এখন অনেকটাই কমেছে। কিছু সময়ের মধ্যেই ডাক্তার আসে। আনাবিয়ার চেকাপ করে। কিছু মেডিসিনের নাম লিখে দিয়ে চলে যায়। এক এক করে হাজির হয় তনুসফা, জেসিকা, রাকিয়া। তনুসফা বিছানায় শোয়া আনাবিয়াকে দেখে বলে,

-কী হয়েছে এই মেয়ের?

বোনের এইরকম খাপছাড়া কথা শুনে মেজাজ গরম হয়ে যায় ইরানের। নিজেকে শান্ত রেখে বলে,

-বৃষ্টিতে ভিজেছে। জ্বর এসেছে।

-কে বলেছিল ওকে এতো রাতে বৃষ্টিতে ভিজতে? কথাবার্তা তো ছোটদের মতো নয় তাহলে কাজ কেনো ছোটদের মতো করে! এমনেও এতদিন ধরে তোমাদের বিয়ে হয়েছে। এই বাড়ির বড় বউ সে। এখন পর্যন্ত তাকে বাড়ির একটা কাজেও দেখলাম। সারাদিন শুধু খায়, ঘুরে, ঘুমায় আর সবার সাথে ঝগড়া করে।

ইরানের সহ্যের সীমা শেষ হয়ে যায়। এমনেই এখন আনাবিয়া অসুস্থ। এইসব কথা কী এখন বলার সময়! রাগী কণ্ঠে বলে,

-হয়েছে আপা। আনাবিয়া এই বাড়ির কাজের মেয়ে নয়। বাড়িতে কী কাজের লোকের অভাব পরেছে যে ইরান শেখের বউ এখন কাজ করবে? ও যদি কোনো কাজ করতেও চায় তাহলে আমি না-ই করব। আর ও এখন অসুস্থ। দোয়েয়া করে আপনার যা বলার তার সুস্থ হওয়ার পর বলুন।

-এখন দুইদিনের মেয়ের জন্য নিজের বড় বোনের সাথে এভাবে কথা বলবি তুই? দেখো আম্মা দেখো, তোমার ছেলে বউ পেয়ে বোনের মূল্য ভুলে গিয়েছে।

-আপা আমি এখানে কোনো মূল্যের কথা বলিনি।

-তুই কী বলেছিস বুঝেছি আমি। সবই বুঝেছি।

রাকিয়া বিরক্ত হয়ে করুণ কণ্ঠে তনুসফাকে বলে,

-তনুসফা তুই চুপ মা। অনেক বেশি বেশি বলছিস।

-ঠিক আছে আর কিছু বলবো না।

রুম থেকে বেরিয়ে যায় তনুসফা। পিছন পিছন জেসিকা আর রাকিয়াও যায়। অগোছালো চুল গুলো মুঠি করে ধরে সোফায় বসে পরে ইরান। বিছানার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে থাকে।

রাত কয়টা বাজে অনিশ্চিত। কাশতে কাশতে ঘুম ভেঙে যায় আনাবিয়ার। গলায় হাত দিয়ে বিছানায় উঠে বসে। কাশি জানো থামাথামির নামগন্ধও নেই। সামনে তাকাতেই ইরানের মুখশ্রী চোখে ভেসে উঠে তার। ইরানের হাতে পানির গ্লাস। এগিয়ে দিচ্ছে আনাবিয়ার দিকে। গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে গ্লাসের সবটা পানি শেষ করে ফেলে। খালি গ্লাসটা ইরানের হাতে দিয়ে মাথা নিচু করে বসে। গ্লাস টেবিলের ওপরে রেখে ইরান আনাবিয়ার স্মুখীন এসে দাঁড়ায়। মুখে তার রাগের আভাস। দু’হাত শক্ত করে বুকে ভাঁজ করে গম্ভীর কণ্ঠে আনাবিয়াকে বলে,

-কে বলেছিল তোমাকে এই রাতে বৃষ্টিতে ভিজতে? কত জোরে বজ্রপাত হচ্ছিলো যদি শরীরে পরতো?

আনাবিয়া চুপ। কপালে আসা চুলগুলো হাতের সাহায্যে সরিয়ে শান্ত ভণিতায় বসেই রইলো। ইরান শত চেষ্টা করেও নিজের রাগ সংবরণ করতে পারছে না। আনাবিয়ার চুপ থাকা তাকে আরো ভয়ংকর করে তুলছে। নিজের শক্ত পুরুষালি হাত দিয়ে আনাবিয়ার দু’গাল চেপে ধরে। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে,

-আই আস্ক ইউ সামথিং আনাবিয়া সাবরিন? কিসের জন্য তুমি এই ঝড়ের মধ্যে বৃষ্টিতে ভিজতে গিয়েছিলে? আনসার মি?

আনাবিয়া ব্যাথায় চোখে খিচে বন্ধ করে রাখছে। শান্ত স্বরে বলে,

-মরতে গিয়েছিলাম মরতে। আই জাস্ট ওয়ান্ট টু ডেথ।

আনাবিয়ার কথায় আরো ক্ষেপে যায় ইরান। মৃদু চিৎকার করে বলে,

-মরতে চাও? ওয়েল, যাও বেলকনি থেকে লাফ দেও।

ইরান আনাবিয়ার হাত ধরে টেনে বেলকনিতে নিয়ে আসে। আনাবিয়া ইরানের এইরকম অদ্ভুত আচরণ দেখে একটু ভয় পেয়ে যায়। ইরান গম্ভীর হয়ে বলে,

-গো জাম্প।

আনাবিয়া একবার নিচের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার ইরানের দিকে। ইরানের বেলকনিতে রেলিং নেই। একদম ফাঁকা। দুই তালায় ইরানের রুম। এখান থেকে পরলে মনে হয় না আনাবিয়া বেঁচে থাকবে! কাঁপা কাঁপা চোখে আনাবিয়া ইরানের দিকে তাকিয়ে বলে,

-ইউ,

-জাস্ট শাটআপ। মরতে চাওয়া যতটা সহজ মরা ঠিক ততটা সহজ নয় বুঝলে? কেনো মরার ভুত ঢুকেছিল মাথায়?

-আমার ভালো লাগছে না বেঁচে থাকতে। আই এম জাস্ট গোনা ম্যাড! কত ব্যর্থ মেয়ে আমি। এতদিন হয়ে গেলো এখন পর্যন্ত নিজের বাবা মায়ের খুনের প্রতিশোধ নিতে পারলাম না! এইরকম ব্যর্থ মেয়ের বেঁচে থাকার অধিকার নেই।

ইরান বরাবর সামনে দৃষ্টি স্থির রেখে বলে,

-প্রতিশোধ নিতেই তো চাও? একজন আধমরা হয়ে হসপিটালে আছে আরেকজন তোমার সামনে। ওয়েট।

ইরান বেলকনি থেকে রুমে আসে। আনাবিয়া শুধু মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে ইরানের কাজ দেখছে। কাবাড খুলে কিছু একটা বের করে ইরান। সেটা নিয়ে পুনরায় বেলকনিতে আসে। আনাবিয়া ইরানের হাতের দিকে তাকিয়ে বিস্ময়বিমূঢ়। চোখ বড় বড় করে ইরানের দিকে তাকায়। অস্পষ্ট স্বরে আনাবিয়া বলে,

-বন্দুক!

ইরান কিছু না বলে আনাবিয়ার হাতে বন্দুকটা ধরিয়ে দেয়। গম্ভীর কঠিন স্বরে বলে,

-টেক ইট এন্ড কিল আস।

আনাবিয়া দ্রুত বন্দুকটা হাত থেকে নিচে ফেলে দেয়। কৌতূহল দৃষ্টিতে ইরানের পানে তাকায়। কাঁপাকাঁপি আশ্চর্যজনক কণ্ঠে বলে,

-হু আর ইউ?

আনাবিয়ার প্রশ্নে ইরান শুধু বাঁকা হাসে। নিচে পরা বন্দুকটা সযত্নে হাতে তুলে নেয়। আনাবিয়ার দৃষ্টি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে দূরে আকাশের পানে তাকিয়ে থাকে।

__________________🌸

আজ ভোট হবে। তার ঠিক কয়েকদিন পর নির্বাচন। সকাল সকাল তৈরি হয়ে ড্রইংরুমে বসে নিজের অ্যাসিস্ট্যান্টের সাথে কথা বলছে তনুসফা। মুখে তার রাজ্যের যত চিন্তার ছাপ দেখা যাচ্ছে। তাঁদের আলোচনার মূল বিষয় হলো গতকাল সে মন্ত্রীদের সাথে একটা মিটিংয়ে গিয়েছিল। মন্ত্রী মিনিস্টারদের ডানহাত হয়ে থাকা মানে অবশ্যই সে-ই ভোট বিজয়ী হবে। কিন্তু এবার মন্ত্রী সাহেব তাকে একটি প্রস্তাব দিয়েছে। ইরান একজন সাধারণ এমপি হলেও তার বিজনেস স্লিক একটু বেশিই ভালো। বুদ্ধি আর মেধা তারিফ করার মতো। বড় বড় মন্ত্রীরাও তার তারিফে পঞ্চমুখ। এইটুকু বয়সেই অনেক নামডাক কামিয়েছে সে। এভাবে চলতে থাকতে নিশ্চই খুব জলদি ইরান বাংলাদেশের ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে হাই লিস্টে থাকবে। তো মন্ত্রী সাহেবের প্রস্তাব হলো সে নিজের একমাত্র আদরের মেয়ের সাথে ইরানের বিয়ের কথা পরিকল্পনা করছে। তনুসফা সেই সময় হ্যাঁ বলবে নাকি না বলবে কিছুই ভেবে পেলো না। সামনে নির্বাচন। বিজয়ী হতে হলে তাঁদের মন জিততে হবে। তাই তনুসফা কিছু না ভেবে নিজের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মন্ত্রী সাহেবকে কথা দেয় সে তার ভাই ইরানের সাথেই মন্ত্রীর মেয়ের বিয়ে দেবে।

এখন তনুসফা পরেছে মহাজ্বালায়। ইরান যে বিবাহিত এটা এখন পর্যন্ত কেউই জানে না। ইরান বলেছে সে সুযোগ বুঝে সবাইকে জানাবে। আর বড় করে বিয়ের ফাঙ্কশনও করবে। তনুসফা কপালে হাত দিয়ে বসে আছে।
বাঁকা কোমর দুলিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছে আনাবিয়া। তার পরনে জিন্স পেন্ট, টপ্স আর গলায় পেঁচানো ওড়না। তনুসফাকে চিন্তিত হয়ে বসে থাকতে দেখে মুখে হাসি ফুটে তার। সামনের চুলগুলো আঙুলে পেঁচাতে পেঁচাতে তনুসফার কাছে এগিয়ে যায়। আনাবিয়াকে দেখে তনুসফার মুখ ভার হয়ে যায়। আনাবিয়া ঠাট্টা স্বরে বলে,

-হেই ডিয়ার সিস্টার ইন লো, রাজনীতি কর্মচারীদের ভাতা দেওয়া কী বন্ধ হয়ে গিয়েছে? এভাবে পঁচা মাছের মতো মুখ লটকিয়ে বসে আছেন যে?

তনুসফা রেগে আনাবিয়াকে বলে,

-অভদ্র, বেহায়া মেয়ে তুমি আমার সামনে এসেছো কোন সাহসে?

-ওমা সিস্টার ইন লো আপনি কী জানেন না আমার সাহস যে আকাশ ছুঁই ছুঁই!

বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় তনুসফা। অগ্নি দৃষ্টিতে আনাবিয়ার পানে তাকিয়ে দাঁত চিবিয়ে বলে,

-জানো মেয়ে আমি ঠিক ছিলাম। আমার মাকে এতো বার বললাম রাস্তার মেয়ের সাথে আমাদের বাড়ির চিরাকের বিয়ে দিও না। বাট কে শুনে আমার কথা! এখন তো সবাই নিজের চোখেই দেখছে কী নমুনা আমার ভাইয়ের গলায় ঝুঁলে পরেছে! এক বিদেশী অকর্মা মুলা!

আনাবিয়া শব্দ করে হেসে দেয়। হাসতে হাসতে সোফায় বসে পরে। নিজের পেট ধরে কোনোরকম হাসি থামায়। পায়ের ওপর পা তুলে বসে বলে,

-সিস্টার ইন লো এই অকর্মাই একদিন আপনার গলায় বিষ হয়ে ঢুকবে। বুঝলেন?

তনুসফা রাগের চেঁচিয়ে আনাবিয়ার দিকে আঙুল তুলে বলে,

-এই মেয়ে তুমি জানো তুমি কার সাথে কথা বলছো? দুইদিনের মেয়ে এতো তেজ কেনো তোমার?

বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় আনাবিয়া। নিজ আঙুল দিয়ে তনুসফার আঙুল সরিয়ে ফেলে। গম্ভীর মুখে এটিটিউড নিয়ে বলে,

-আমি তো জানি আপনি কে বাট ইউ ডোন্ট নো হু এম আই। এমপি ইরান শেখ ওরফে এই বাড়ির একমাত্র উত্তরাধিকারের একমাত্র বউ আনাবিয়া সাবরিন শেখ আমি।

তনুসফা আনাবিয়ার শেষের কথা শুনে চমকায়। তার মানে আনাবিয়া তাঁদের ফ্যামিলি বিষয় সবই জানে। তনুসফা আনাবিয়ার সামনে ভীত হলো না। বরং আনাবিয়ার মতোই এটিটিউড নিয়ে বলে,

-এই সো কলড সম্পর্ক নিয়ে বড় কথা বলছো? খুব জলদিই তোমাদের ডিভোর্স করাচ্ছি আমি। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।

-ওকে। আমিও দেখছি কিভাবে ডিভোর্স হচ্ছে।

তনুসফা কঠিন চোখে আনাবিয়াকে পরোক্ষ করে তার অ্যাসিস্ট্যান্টকে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। তনুসফার যাওয়ার পর আনাবিয়া মনে মনে ভাবে জেদে বসে সে আজ কী চ্যালেঞ্জ করে ফেললো! তার কাছে তো এই বিয়ে কিছুই না। সে আরো ভাবছিলো কিভাবে ইরান থেকে ডিভোর্স নামক মুক্তি পাবে। কিন্তু এখন কী হবে! এর জন্যই মানুষ বলে জেদে বসে কখন ডিসিশন নিতে নেই! আনাবিয়া ধপ করে সোফায় বসে পরে। দুই হাত দিয়ে নিজের চুল নিজেই মুঠি করে ধরে। রাগে পারছে না সে নিজেকেই শেষ করে দিতে!

ইরান আজ ফর্মাল ড্রেস পড়েনি। যেহেতু ভোটের সেখানে যাবে তাই ধবধবে সাদা রঙের পাঞ্জাবী পড়েছে। হাত ঘড়ি পড়তে পড়তে সিঁড়ি দিয়ে নামছে। ড্রইংরুমে চোখে যেতেই দেখে আনাবিয়া পাগলদের মতো বসে আছে। ইরান ভ্রু কুঁচকে সেদিকে এগিয়ে যায়। গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

-মাথা ব্যাথা করছে কী? নাকি অসুস্থ লাগছে? হসপিটালে চলো।

আনাবিয়া চুল ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ইরান আনাবিয়ার সামনে যেয়ে কপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বর কমেছে কি না। আনাবিয়া অকারণেই রেগে ইরানের বুকে নিজের দুইহাতের সাহায্যে ধাক্কা দেয়। সামনে থেকে চলে যেতে যেতে রাগী স্বরে বিড়বিড় করে বলে,

-ব্লা*ডি বি*চ।

ইরান সবটা না শুনতে পেলেও শেষের একটা শব্দ স্পষ্ট শুনতে পেরেছে। চোখ বন্ধ করে বড় একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

_____________________🌸

সারাদিন অত্যাধিক ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে ইরানের সময় যাচ্ছে। এক এক জনের এক এক কথা শুনতে শুনতে বিরক্ত সে। তার ওপর অনেকরই শুধু বিয়ে নিয়ে কথা। বয়স তো ভালোই হচ্ছে এমপি সাহেব বিয়ে করছে না কেনো? নাকি এমপি সাহেব আমাদের থেকে লুকিয়ে কাজ সেরে ফেলেছে? পছন্দের কেউ আছে নাকি? বেশিরভাগ অতি চেনা বয়স্ক লোকরাই এইরকম প্রশ্ন করে তাকে। এমনে কারো সাহস নেই তাকে এইরকম কিছু বলা বা জিজ্ঞেস করার। কাজের মধ্যে থাকলেও ইরানের মন পরে আছে আনাবিয়ার কাছে। অথচ এই বিদেশীনি কি জানে? কখন বুঝতে পারবে তার জন্য যে প্রতিনিয়ত একজনের মনে একটু একটু করে প্রণয় জন্ম নিচ্ছে? ঐ ছাই ছাই রঙগা নয়নে কেউ একজন যে গভীর ভাবে ডুবে যাচ্ছে সেটা কি জানে সেই বিদেশীনি?

বিকেলে রুমে বসে থাকতে থাকতে বোরিং আনাবিয়া। তাই এখন সে বাড়ির বাহিরে এসেছে। বিশাল জায়গা জুড়ে আলিশান দু’তালা বিশিষ্ট ভবন। পুরো বাড়ি সাদা রঙ আর মার্বেল পাথর দিয়ে কারুকার্য করা। বাড়ির সদর দরজা খুলে ডানপাশে গাড়ি পার্ক এরিয়া। মধ্যে দিয়ে সুন্দর করে বাড়ির ভিতরে যাওয়ার রাস্তা বানানো। দুইপাশে বিভিন্ন জাতের ফুল। পিছনের সাইটে মাঝারি আকারের সুমিংপুল আর বাগান। বাগানটা বেশ লাগলো আনাবিয়ার কাছে। একজন মালি গাছে যত্ন করে পানি দিচ্ছে। আরেকজন গাছের পাতালতা ছাটাই করছে। আনাবিয়া বাগানের ভিতরে ঢুকলো। মালিরা তাকে দেখে একটু ভীত হয়। আনাবিয়া সেটা লক্ষ্য করে মুচকি হাসি দেয়। বেঞ্চের মতো বসার জায়গাও আছে। আনাবিয়া সেখানে বসে পরে। মালিদের এটা সেটা জিজ্ঞেস করছে। ধীরে ধীরে তারা তিনজন খোশগল্পে মেতে উঠে। একজন বৃদ্ধ মালি আরেকজন তার মেয়ে। আনাবিয়ার সমবয়সী।
আনাবিয়া তাঁদের থেকে জানতে পারলো এই বাগান ইরানের। যখন ইরানের মন ভালো থাকে না তখন ইরান এখানে এসে বসে থাকে। প্রকৃতি অনেক বেশি পছন্দ ইরানের। এখানে এতশত ফুলের মাঝে জেসমিন ফুল ইরানের সবচেয়ে বেশি প্রিয়। তাই জেসমিন ফুলের গাছের সংখ্যা অনেক বেশি। আনাবিয়া মন ভরে সুবাস নেয় জেসমিন ফুলের। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। কিছুক্ষন পর সন্ধ্যা হয়ে যাবে তাই বাড়ির ভিতরে যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়। বাগান থেকে বের হবে এমন সময় তার পায়ের সামনে একটি লাল টকটকে জুমকো জবা ফুল পরে। বড় একটি হাসি দিয়ে ফুলটা তুলে নেয় আনাবিয়া। সুন্দর করে কানের পিছনে গুঁজে নেয়।

বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করার সময় আনাবিয়ার নজরে পরে অচেনা একটি যুবকের মুখ। সদর দরজার রাস্তা ধরে বাড়ির ভিতরেই আসছে যুবকটি। সেও মুগ্ধ হয়ে এক ধেনে তাকিয়ে আছে আনাবিয়ার দিকে। চোখের পলক জানো ফেলতে পারছে না। প্রথম চাহনিতেই এক অন্যরকম মায়ায় আটকে পড়েছে ছেলেটি। আনাবিয়া চোখ সরিয়ে নেয়। ছেলেটিকে উপেক্ষা করে জলদি করে ভিতরে চলে যায়।

>>>>চলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ