Sunday, October 5, 2025







সে প্রেমিক নয় পর্ব-০৭

#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)

#পর্ব ০৭

নির্জন রজনী। মেঘাচ্ছন্ন আকাশে মিটমিট কয়েকটা তারা দেখা যাচ্ছে। মেঘ গুলো আপন মনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। চন্দ্র জানো আজ সরম পাচ্ছে! কিছুক্ষন পর পরই মেঘের আড়ালে নিজেকে ঘুঁটিয়ে নিচ্ছে। মৃদু বাতাস। সবটাই কোনো ঝড়ের পূর্ণভাস। দমবন্ধকর গুমোট পরিবেশ রুমের ভিতরে। আনাবিয়ার উচ্চারিত বাক্য শুনে ঠোঁট কামড়ে হাসে ইরান। রসিকতার স্বরে বলে,

-বিয়ে করেছি। নিজ ওয়াইফের সমন্ধে জানবো না তো কার সমন্ধে জানবো?

ইরান হাত বাড়িয়ে রুমের বাতি জ্বালিয়ে দেয়। ধীরে সুস্থে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় আনাবিয়া। ইরানের পানে কঠোর দৃষ্টিতে তাকায়। ইরান হালকা ধাক্কা খায় আনাবিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে। এক বিদেশী মুখখানায় এক অন্যরকম আঁখিজোড়া। সাদা রঙের মধ্যে এক ফোটা কালো মিক্স করলে একটা রঙ হয় না? একটু ছাই ছাই কালার। ঠিক সেইরকম আঁখিজোড়া আনাবিয়ার। না চেনার ভান করে বলে,

-তোমাকে আমি আগে দেখেছি?

-হুম, তিনদিন আগে বৃষ্টির মধ্যে আমাকেই লিফ্ট দিয়েছিলেন আপনি।

-তাহলে কালও তুমিই ছিলে?

-অবশ্যই।

-কে তুমি? কেনো নিজের পরিচয় পাল্টে বাংলাদেশ এসেছো?

আনাবিয়া কোমর দুলিয়ে হেঁটে ইরানের একদম মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়। মুহূর্তেই আঁখিজোড়া লাল হয়ে যায় আনাবিয়ার। মুখে রাগের আভাস। চোয়াল শক্ত করে বলে,

-আমার পরিচয় জানতে চান তো?

-হ্যাঁ।

-আপনাদের পরিবার ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে আসা আমার।

ইরান চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলে,

-আমাদের শত্রু আছে এটা আমি জানি। তবে দেশের বাহিরেও যে আমাদের শত্রু আছে এটা জানা ছিল না!

আনাবিয়া এটিটিউড নিয়ে বিছানায় যেয়ে বসে। নিঃশাস নিয়ে বলে,

-তন্নী ফারুককে চিনেন?

-কয় বছর আগে যে গাড়ি এক্সিডেন্টে পুরো পরিবারসহ মারা গেলো সিআইডি অফিসার তন্নী ফারুক তার কথা বলছো?

-মা*রা যায়নি। পরিকল্পিত ভাবে মা*র্ডা*র করা হয়েছে তাকে।

আনাবিয়ার চিৎকার করা উক্তিটি শুনে মৃদু অবাক হয় ইরান। অবিশ্বাস স্বরে বলে,

-কিভাবে জানো তুমি মার্ডার করা হয়েছে? আর তুমি বা তার কে?

-আমি তন্নী ফারুকের ছোট মেয়ে। আর তাকে কেনো মার্ডার করা হয়েছে তার প্রুভ আছে আমার কাছে। শেখ বাড়ির সকলে মিলে এই কার্য পরিচালনা করেছে।

-আমি সেইসময় কানাডায় ছিলাম তাই বেশি কিছু জানি না। শো মি ইউর প্রুভ?

-ল্যাপটপ আছে?

ইরান তার ল্যাপটপ এনে আনাবিয়ার হাতে ধরিয়ে দেয়। ল্যাপটপ নিয়ে বিছানায় আসুম করে বসে আনাবিয়া। নিজের ব্যাগ থেকে একটা পেনড্রাইভ বের করে ল্যাপটপের ভিতরে ঢুকায়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই একটা ভিডিও চালু হয়ে যায়। প্রথমেই একজন পুরুষের গলার আওয়াজ শুনা যায়। ইরান নিজের জন্মদাতার কণ্ঠস্বর শুনে এগিয়ে এসে ল্যাপটপে চোখ স্থির করে। অস্পষ্ট ভাবে এরফান শেখকে দেখা যাচ্ছে। হাতে হয়তো সি*গারেট। হাসতে হাসতে বলছে,

-এই মা*গী আমার কাজে বাধা দেবে আমার! প্রথমে ভেবেছিলাম ওর উপচে পরা যৌ*বন নিয়ে একটু খেলা করব। কিন্তু না মা*গীর যে তেজ! এতো এতো টাকার অফার করেছি তবুও মা*গী আমার পাটিতে জয়েন হবে না। এক মিনিটেই মাগীরে মরার দেশে পাঠিয়ে দিয়েছি। শুধু শুধু নিজের জন্য নিজের স্বামী আর মেয়ের প্রাণ হারালো!

পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল আরো কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে ইসরাফ ছিল। সাত বছর আগের ঘটনা। কতই বা বয়স তখন ইসরাফের হয়তো কুড়ি! বাবার এইরকম জঘন্য কথা শুনে শব্দ করে হাসছে সে। আপসোস স্বরে বলে,

-কিন্তু আব্বা আমার মনের আশা তো পূরণ হলো না! এই মা*গীর মাইয়ার লগে রাত কাটাতে কত চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না।

-এখন মনের আশা পূরণ করে নে।

বাবার কথা শুনে আবারও হাসে ইসরাফ। গাড়ির ভিতরে উঁকি দিয়ে দেখে বলে,

-আব্বা কী যে বলেন! রক্ত দিয়ে জঘন্য অবস্থা।

-তাইলে আর কী।

-আব্বা পুলিশ যদি জেনে যায়?

-তোর আব্বার টাকা কী কম আছে নাকি? এই দুনিয়ায় সব হইলো টাকার খেলা। যার টাকা বেশি তারই হুকুম চলে।

দুই হাত মুঠো করে রেখেছে আনাবিয়া। পা দিয়ে লা*ত্থি মেরে ল্যাপটপটা নিচে ফেলে দেয়। ঠাস শব্দ করে বেচারা ল্যাপটপটা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ইরান একমনে ভাঙা ল্যাপটপের পানে তাকিয়ে রইলো। সে এখনও একটা ধেনের মধ্যে আছে। তার জন্মদাতা খারাপ মানুষ এটা সে জানে। কিন্তু এতো নিচু মানুষ এটা তার অজানা ছিল। আর ইসরাফ! তাহলে কী ইসরাফ সবার সামনে ভালো সাজার নাটক করে? আনাবিয়া মেরুদন্ড সোজা করে ইরানের স্মুখীন দাঁড়ায়। টাউজারের পকেটে দুইহাত গুঁজে রেখেছে। মেয়ে হিসেবে আনাবিয়া একটু বেশিই লম্বা যেটা সবাই বলে। কিন্তু এখন ইরানের সামনে আনাবিয়ার নিজেকে নিজের খাটো খাটো মনে হচ্ছে। ইরানের থুতনির নিচে পরে সে।

-আমি আনাবিয়া সাবরিন। তন্নী ফারুক ও সেলিম আলীর কনিষ্ঠ মেয়ে। বাবার পুরো পরিবার রাশিয়ান হওয়ায় আমিও রাশিয়ার বাসিন্দা। মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষে পড়ছি। ডক্টর এখনও হইনি। মা বাবা ও বড় বোনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে নিজের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে বাংলাদেশে এসেছি। আরো কিছু জানতে চান?

-এতো বছর আগের ভিডিও কোথায় পেয়েছো তুমি?

-এক্সিডেন্টের সময় বাবা বুদ্ধি করে নিজের ফোনের সাহায্যে ভিডিও করেছিল। আমার খালারা যখন তাঁদের এক্সিডেন্টের কথা শুনে সেখানে যায় তখন তারা সেই ফোনটা পায়। আরো কয়েক বছর আগে আমি বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার ভিসা পাসপোর্টে প্রবলেম ছিল তাই দেরি হয়ে গেলো।

ইরান ক্রুটি হাসলো। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তার পা ব্যাথা হয়ে গিয়েছে। তাই ডিভাইনের ওপরে পায়ের ওপর পা তুলে বসে পরে। পা নাচাতে নাচাতে বলে,

-দেরি না অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে আনাবিয়া সাবরিন!

-মানে?

-তোমার শত্রু তো কয়েকদিন আগেই মারা গিয়েছে তাও নিজ ছেলের হাতে।

চমকিত দৃষ্টিতে আনাবিয়া ইরানের দিকে তাকায়। অবুজের মতো প্রশ্ন করে,

-কে মারা গিয়েছে?

-এরফান শেখ মারা গিয়েছে। বেঁচে আছি আমি আর ইসরাফ। আমাদের মেরে নিজের প্রতিশোধ নিতে চাইলে আমি বাধা দেবো না।

-এরফান শেখ কিভাবে মারা যেতে পারে!

-ঐ কাপুরুষের মৃত্যু আমার হাতে লেখা ছিল।

-নিজে পিতাকে মারতে হাত কাঁপে নি?

-একদমই না।

আনাবিয়া শুধু ইরানের শান্ত থাকা লক্ষ্য করছে। আড়চোখে তাকিয়ে বলে,

-আপনার শত্রু আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। যদি আমি এখন আপনার ওপর আক্রমণ করি? এতো স্বাভাবিক কিভাবে আপনি?

শব্দ করেই হেসে দেয় ইরান। আনাবিয়া জানো জোকস বলেছে! গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

-তোমাকে দেখে আমার মনে হচ্ছে না তুমি নির্বোধ! যা করবে অবশ্যই ভেবে চিন্তে করবে।

মাথা ঘুরিয়ে ফেলে আনাবিয়া। সবটা না জেনেই সে আজ নিজের পায়ে কুড়াল মারলো! এই ইরানকে আনাবিয়ার কাছে ইসরাফের থেকেও বেশি ভয়ংকর লাগছে। কোন বেড়াজালে ফেঁসে গেলো সে!
ইরান পিছন থেকে আনাবিয়াকে আপাদমস্তক পরোক্ষ করে বলে,

-তুমি খ্রিস্টান?

ইরানের প্রশ্ন শুনে চেঁচিয়ে উঠে আনাবিয়া। উঁচু কণ্ঠে বলে,

-আমি মুসলিম। আমার বাবার ফ্যামিলি খ্রিস্টান ছিল। মাকে বিয়ে করার আগে বাবাসহ তার পুরো পরিবার মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে। তাই আমিও মুসলিম ধর্ম অবলম্বন করি।

ইরান ভাবুক হয়ে বলে,

-ওহ! আমার জীবনে আসতে না আসতেই আমার জিনিস কব্জা করে বসেছো। তুমি মেয়েতো দেখছি ভালো নও!

আনাবিয়া বিষয়টা বুঝে। গম্ভীর মুখে হুকুম করার মতো বলে,

-কাল সকালে মার্কেটে গিয়ে আগে আমার জন্য ড্রেস আনবেন।

-বিয়ে মেনে নিয়েছো?

বাঁকা হাসলো আনাবিয়া। আধশোয়া হয়ে বিছানায় বসে ফোন টিপতে টিপতে বলে,

-একদমই না। খুব শিগ্রই আপনিই আমাকে সযত্নে ডিভোর্স দিয়ে দেবেন।

ইরান আর কিছু বললো না। এই মেয়ের আত্মবিশ্বাস অনেক বেশি! কাবাড খুলতেই ভেবছেঁকা খেয়ে যায়। কোনো টর্নেডো গিয়েছে তার কাবাডের ওপর দিয়ে। পরনের জন্য জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুম চলে যায়। ইরানের যাওয়া দেখে আনাবিয়া দ্রুত জয়তিকে কল দেয়। কল রিসিভ করার সাথে সাথেই আনাবিয়া বলে,

-খালামুনি, অনেক বড় ভেজাল হয়ে গিয়েছে। বড়োসড়ো জালে ফেঁসে গিয়েছি আমি।

-ইরান কোনো রূপ অভদ্রতা করেছে?

-তুমি আবার দুই লাইন বেশি বুঝো। আচ্ছা আমি ঠিক আছে। সকালে কল দিয়ে সব খুলে বলবো এখন রাখছি।

ইরানকে ওয়াশরুম থেকে বের হতে দেখে ফোন কান থেকে সরিয়ে ফেলে। হাতে নিয়ে আঁকিবুকি করতে থাকে। ইরান মাথা মুছে তার ফোন হাতে নেয়। কিছু একটা দেখতে দেখতে ডিভাইনে বসে পরে। ইসরাফ ইরানের তুলনায় বেশি ফর্সা। ইরান উজ্জ্বল শ্যামলা। ইরানের ফেইস কাটিং ও শারীরিক গঠন একটু বেশি আকর্ষণীয়।
ফোন টিপতে টিপতে ইরান আনাবিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,

-তুমি বর্তমানে আমার সামনে যে অবস্থায় আছ এই অবস্থায় কোনো বাঙালি নারী হলে এতক্ষনে সরমে জ্ঞান হারিয়ে ফেলতো!

আনাবিয়া ইরানের কথা উপেক্ষা করে। এখানে সরম পাওয়ার কী আছে? আজব! পাশ ফিরে শুতেই ঘুমিয়ে পরে আনাবিয়া। পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে কপালে হাত দেয় ইরান। যে ইরান নিজ রুমের বিছানার একটু চাদর কুঁচকানো সহ্য করতে পারে না। সেই তার রুমই এখন গরুঘর! সব কিছু এলোমেলো। এমন কী আনাবিয়াও বিছানায় এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে আছে। ইরান আপসোস স্বরে বিড়বিড় করে বলে,

-সর্বপ্রথম আমার ভাবনা এলোমেলো করে দিয়েছিল, এখন রুম। না জানে কবে আমার মনকেও এলোমেলো করে দেয়! বিদেশীনি-ই আবার সর্বনাশীনি না হয়ে উঠে!

____________________🌸

আড়মোড়া দিয়ে বিছানা থেকে নামে আনাবিয়া। মাত্রই ঘুম ভেঙেছে তার। কিছুক্ষন আগে কেউ একজন দরজায় আওয়াজ করেছিল। হয়তো তাকে জাগানোর জন্য। আনাবিয়া আশেপাশে চোখ বুলালো। ইরানকে না দেখে স্বস্তির নিঃশাস ছাড়ে। ওয়াশরুম থেকে মুখ ধুয়ে নেয়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এক রহস্যময় হাসি দেয়।

ডায়নিং টেবিলে বসে নিঃশব্দে নাস্তা করছে সবাই। ইরান সবসময়ের মতো ফর্মাল ড্রেসাপে। তনুসফার মুখ ভাড় ভাড়। রাকিয়া তাজীবের সাথে হসপিটাল গিয়েছে। খাওয়ার ফাঁকে সিঁড়ির দিকে তাকাতেই খাবার গলায় আটকে যায় তনুসফা শেখের। কাশতে থাকে। জেসিকা মাকে পানি এগিয়ে দেয়। তনুসফার চাহনি লক্ষ্য করে ইরানও সিঁড়ির দিকে তাকায়। সেই রাতের ঢোলা-ঢালা টাউজার আর টি-শার্ট পরে আইম দিতে দিতে নিচে নামছে আনাবিয়া। শরীরে ওড়নার ছিটফোঁটাও নেই। তনুসফা হতভম্ব হয়ে নিজের কল্পনার ইরানের বউর সাথে আনাবিয়াকে মিলানোর চেষ্টা করে।

একদম সংস্কারী, প্রভাবশালী পরিবারের মেয়ে, দায়িত্বশীল, নম্য, ভদ্র, সুশীল, একদম খাঁটি বাঙালি, চেহারার আঁকার-আকৃতি বাঙালি অপরূপ মেয়েদের মতো, কোমর সমান লম্বা চুল, একটু স্বাস্থবান যাতে শাড়ী পড়লে আকর্ষণীয় লাগে ইত্যাদি। কিন্তু এ তো সে দেখছে এক বিদেশীকে! যার একদম মোমের মতো সাদা গায়ের বরণ। জানো আটা মেখে সাদা বানানো হয়েছে! কাঁধ সমান কেমন রঙের কেশ, লম্বাটে চেহারা, হেংলা-পাতলা লম্বা জিরাফের মতো কায়া! তার ওপর সবচেয়ে বড় কথা হলো মেয়েটার লাজ নেই! বিয়ের পরেরদিনই এ কী পরে সবার সামনে এসেছে! তনুসফার চোখ জানো কৌঠা থেকে থেকে বেরিয়ে আসবে। জেসিকা আনমনে প্রশ্ন করে,

-উনি কী ইরান মামুর ওয়াইফ? আমার মামী?

জেসিকার প্রশ্নের উত্তর কেউ দিলো না। তনুসফা কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে,

-ইরান এ কে রে ভাই?

ইরানের হাবভাব আগের মতোই। কফি খেতে খেতে বলে,

-কাল যার সাথে আমার বিয়ে করালেন এই সেই রমণী।

-এ যে বিদেশী ভুত!

-আপা!

-সত্যি।

আনাবিয়া ডায়নিং টেবিলে সামনে আসে। শান্ত দৃষ্টিতে সবাইকে দেখে নেয়। একজন ভৃত্য আনাবিয়াকে জিজ্ঞেস করে,

-ম্যাম নাস্তা হিসেবে কী খাবেন?

-অনলি ব্ল্যাক কফি উইথউট সুগার।

-জি।

আনাবিয়া একটি চেয়ার টেনে বসে পরে। তনুসফার এবার রাগ উঠে যায়। কেমন খাপছাড়া মেয়েরে বাবা! রাগী কণ্ঠে বলে,

-তুমি না পর্দা করো? তাহলে এখন এই অবস্থায় কেনো?

আনাবিয়া ঢক ঢক করে একগ্লাস পানি খেয়ে নেয়। শান্ত ভণিতায় বলে,

-কে বললো আমি পর্দা করি! এর এই অবস্থায় বলতে?

-এইসব কী পোশাক পরেছো তুমি?

-যে পোশাকই পরেছি। পরেছি তো এটাই অনেক। আপনি যেমন রিঅ্যাকশন দিচ্ছেন জানো আমি ব্যার্থসুট পরে ঘুরছি!

জেসিকা আনাবিয়ার কথা শুনছিলো আর জুস খাচ্ছিলো। আনাবিয়ার শেষের কথা শুনে নাকেমুখে উঠে যায় তার। ইরান মাথা উঠিয়ে আনাবিয়ার দিকে তাকায়। আনাবিয়া তনুসফাকে প্রশ্ন করে,

-আচ্ছা আপনে কে? আই মিন আমার কী হন?

-আমার বড় বোন। (ইরান)

-ওওও!

তনুসফা চরম আশ্চর্য হয়ে ইরানের দিকে তাকায়। তার জানামতে ইরানকে জোর করে কিছু করানো যায় না। সেই ইরান কাল মায়ের কথায় এতো সহজেই বিয়ের জন্য কেনো রাজি হয়ে গেলো! আর এই বিদেশী মেয়েকে কিভাবে নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নিলো! কিভাবে সম্ভব সবকিছু। রেগে বসা থেকে উঠে যায় তনুসফা। জেসিকাও উঠে চলে যায়। রইলো শুধু ইরান আর আনাবিয়া। ইরান আনাবিয়াকে বলে,

-এখন আমার সাথে মার্কেটে যাবে তুমি। আমি জানি তুমি অন্য দেশের, তোমার কালচারাল ভিন্ন, তবুও এখন আমার অফিসিয়ালি ওয়াইফ রূপে এই বাসায় প্রবেশ করেছো। বন্ধ কক্ষে তুমি টি-শার্ট, পেন্ট যা মন চায় পরিধান করতে পারো। তবে কক্ষের বাহিরে তোমাকে শালীন পোশাক পরতে হবে। যদি আবার শুধু আমরা দু’জন থাকতাম তাহলে আমি তোমাকে জোর করতাম না। এই বাসায় ভৃত্যর অভাব নেই। অনেক ছেলে ভৃত্যও আছে। আমি চাইনা তারা তোমাকে খারাপ নজরে দেখুক।

আনাবিয়া ইরানের কথায় অমনোযোগী হয়ে আপন মনে পানির গ্লাস ঘুরাতে থাকে। আনাবিয়ার এহেন আচরণ দেখে চোয়াল শক্ত হয়ে যায় ইরানের। নিজের কাজ করতে করতে আনাবিয়া বলে,

-হু দে হেল আর ইউ মান? আপনি এইরকম ব্যবহার কেনো করছেন জানো আমি আপনার বহুবছরের পরিচিত কেউ?

ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে ইরান। হাত ঘড়িতে সময় দেখতে দেখতে বলে,

-এটা নাতো কোনো টিভি সিরিয়াল ওর মুভি। এটা হলো একটা বাস্তব জীবন। রাগ, জেদ দেখিয়ে কতদিন থাকা যায়? একদিন না একদিন তো তোমাকে স্ত্রী হিসেবে মানতেই হবে। তাই আমি এখন থেকেই শুরু করেছি। এখন তুমি যদি শত্রু ভাবো তাহলে আর কী করার!

-আমার চোখে আপনাদের পুরো পরিবার আমার শত্রু ছাড়া কিছুই নয়। আমি নাতো সংসার করতে চাই আর নাতো আপনাকে স্বামী হিসেবে মানতে চাই।

-ডিভোর্স তো তুমি পাচ্ছ না। আর বিয়ে যেহেতু হয়েছে মানতে তুমি বাধ্য আনাবিয়া সাবরিন।

>>>>চলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ