#সে_আমারই
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ২০
বিধ্ব’স্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরেছিল দৃষ্টি। সেই থেকে রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছে। দুপুরে খায়নি আর রাতেও না। মিসেস সীমা, মিসেস বিউটি, ফাহাদ আবরার, রামিজ আবরার সকলে এসে দু তিন বার করে ডেকে গেলেন। কিন্তু সে দরজা খুলল না। শরীর খারাপ লাগছে, ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবে বলে কাটিয়ে উঠল। ফারদিন ও ফারনাজও এসে ডেকেছে। তবুও তার একই কথা। তারা অবশেষে হাল ছেড়ে দিল।
এদিকে দৃষ্টি ফিরে থেকেই কেঁদে চলেছে। কলেজের জামাকাপড় পরনে এখনও। ফ্রেশ হয়নি। বিছানায় পড়ে কাঁদছে। কাঁদতে কাঁদতে হাঁপিয়ে উঠলেও কাঁদছে। বারংবার চোখে ভাসছে আফরানের জোর করা, তার গায়ে হাত তোলা। বুকটা ঝাঁ’জরা হয়ে যাচ্ছে তার। আফরান কেন করল এমন? সে জানে, বোঝে যে আফরান তাকে ভালোবাসে। যদিও আফরান কখনও মুখে বলেনি। যদি ভালোবেসেই থাকে তাহলে এমন জোরাজুরি কেন? লুকোচুরি কেন? তার গায়ে হাতই বা তোলা হলো কেন? কেন? কেন?
কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে সে জানে না। ঘুমের মধ্যে মনে হলো কেউ তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে। পুরো মুখ জুড়ে উষ্ণ স্পর্শ পাচ্ছে সে। সেই স্পর্শে কেঁপেও উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। সে চোখ টেনে মেলার চেষ্টা করে। ঘুমে তা বুজে আসে। গালে ঠান্ডা কিছুর আভাস পেতেই ঘুম হালকা হয়ে আসে। চোখ মেললেই পুরুষালী অবয়ব চোখে পড়ে। ধীরে ধীরে তা পরিষ্কার হয়। টনক নড়ে তার। আফরান! মুহূর্তেই মুচড়ে ওঠে,
“আপনি! কোন সাহসে আপনি আমার রুমে এসেছেন?”
আফরান তার কথাকে পাত্তা না দিয়ে গালে ঠোঁট ছোঁয়ায়। এখানেই তো মে’রেছিল। ইশ্ কেমন লাল হয়েছিল! বরফ দেওয়ার পর কমেছে। দৃষ্টি কেঁপে ওঠে। চোখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়। আফরান ফিসফিসিয়ে বলে,
“ব্যালকনির দরজা এভাবে হাট করে খোলা রাখলে যে কেউ সহজেই আসতে পারবে। কোনো সাহসের দরকার পড়বে না।”
দৃষ্টির দম বন্ধ হয়ে আসে। এতো দিন তো আফরান একটু হলেও দূরে থাকত। কেননা তাদের মধ্যে হালাল কোনো সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু এখন আছে। তার প্রয়োগ আফরান ভালো ভাবে করা শুরু করেছে। দৃষ্টি তাকে ঠেলে সরানোর চেষ্টা করে,
“মে’রে এখন আর দরদ দ্যাখাতে আসতে হবে না। সরুন।”
“তুই কি কেঁদেছিস নাকি রে, দৃষ? গলা ভেঙে গিয়েছে, চোখ লাল! কি সর্বনা’শ! দুপুরে রাতে খাসনি নিশ্চয়ই? তখন তো গটগট করে চলে এলি। সবাইকে ট্রিট দিয়েছি। তুই থাকলে কি হতো? ওঠ খেয়ে নিবি।”
“দৃষ! দৃষ বলছেন কেন? আমি কারো দৃষ নই। আমি দৃষ্টি।”
দৃষ্টি মুখ বাঁকায়। সে উঠবে না, খাবেও না, এভাবেই পড়ে থাকবে। তবে আফরান তার সে পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিল। এক টানে তাকে উঠিয়ে বসাল। ঠোঁট বাঁকিয়ে একটু হেসে বলল,
“রাগের মাথায় মানুষ কত কিছুই না করে! যা দৃষ একটু ফ্রেশ হয়ে আয়। পরনে দেখছি সেই কলেজের কাপড়! আশ্চর্য! তুই এমন করছিস যেন খুব বড় ছ্যাকা খেয়েছিস। যা, দ্রুত ওঠ।”
দৃষ্টি ওঠে না। ঠাঁই বসে রয়। আফরান সূক্ষ্ম শ্বাস ফেলে,
“তুই যদি দুই মিনিটে ফ্রেশ হয়ে না আসিস তাহলে আমিই তোকে ফ্রেশ করাতে নিয়ে যাব। নাউ ডিসিশন ইজ ইয়রস্।”
এ কথা শোনামাত্র দৃষ্টি লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। আফরানের দিকে কাঠ কাঠ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশ রুমে প্রবেশ করে। পনেরো মিনিটে শাওয়ার নিয়ে বের হয়। আফরান তাকে টেনে বিছানায় বসায়। হাত থেকে তোয়ালে কেড়ে নিয়ে আলতো হাতে চুল মোছে। দৃষ্টি মুখ গোমড়া করে ভাবে, আজ সারাদিন টা তার টানাটানির উপর দিয়েই গেল! চুল মোছা শেষে আফরান তোয়ালে ছুড়ে ফেলে, ওটা গিয়ে পড়ে রুমের এক কোণে। দৃষ্টি বিরক্ত মাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“ওটা এভাবে ছুঁড়লেন কেন?”
“আমার হাতে এতো টাইম নেই। খেয়ে নে।”
সে এক প্যাকেট বিরিয়ানী তার সামনে ধরে। দৃষ্টি চোখ কপালে তুলে বলে,
“আপনি এসব কীভাবে এনেছেন? এগুলো হাতে নিয়ে পাইপ বেয়ে উঠলেন কীভাবে?”
আফরান সাবধানে প্যাকেট খোলে। চামচে করে বিরিয়ানী তার মুখের সামনে ধরে বলে,
“তূরাগ হেল্প করেছে।”
দৃষ্টি বাড়িয়ে দেওয়া খাবার মুখে নেয়। চিবিয়ে গিলে বলে,
“সবাইকে জ্বালাচ্ছেন এভাবে! শুধু শুধু আপনার জন্য তূরাগ ভাইকেও দেওয়াল টপকাতে হলো।”
“শুধু শুধু না, ও এসেছিল নিজের কাজে। আর আমি আমার কাজে।”
দৃষ্টি বোঝে না। তূরাগের কি কাজ থাকতে পারে এখানে? আফরান একটু একটু করে তাকে খাওয়ায়। অর্ধেক খাওয়া শেষে সে আর খাবে না বলে জানায়। আফরানও আর জোর করে না। বাকি টুকু সে নিজেই খেয়ে নেয়।
ইতোমধ্যে দৃষ্টি পুনরায় শুয়ে পড়েছে। আফরান তার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল,
“আইসক্রিম খাবি না? যদিও গলে গিয়েছে। তোর গালে দিতে যেয়েই গলে গেল। এতো গরম গাল রে বাবা!”
সে সব গুছিয়ে রেখে এক লাফে দৃষ্টির পাশে শুয়ে পড়ে। দৃষ্টি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেই বলে,
“চলে যান এখন। মে’রে টেরে বহুত দরদ দ্যাখানো হয়েছে। এবার যেতে পারেন।”
কন্ঠে কি তীব্র অভিমান! আফরান হাসে। দৃষ্টি দ্যাখে না। এই হাসি যে ওর খুব প্রিয়। আফরান তাকে টেনে কাছে আনে,
“বিয়ে করেছি কি সরার জন্য? এভাবে জাপ্টে ধরে রাখার জন্য।”
দৃষ্টি কিছু বলে না। তবে মোচড়ানো শুরু করে। দৃষ্টিকে এতো কাছে পেয়ে আফরানের কেমন যেন হয়। গা শিরশির করে। গলা শুকিয়ে আসে। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,
“তোকে একটা চুমু খাই, দৃষ?”
দৃষ্টি চোখ বড় বড় করে তাকায়। এতক্ষণ এগুলো কি ছিল? এখন চুমু খেতে চায়ছে! কেমন চুমু? কিছু বলতে নিলেই আফরান আবারও বলে,
“স্যরি দৃষ। তোর অনুমতি পাবার অপেক্ষা করতে পারছি না।”
পরক্ষনেই ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়। হতভম্ব দৃষ্টি আফরানের শার্ট আঁকড়ে ধরে। থরথরিয়ে কাঁপে। চোখ বুজে আসে আপনাআপনি। অনুভব করে প্রথম ঠোঁটে ঠোঁটের ছোঁয়া, আফরানের গভীর ছোঁয়া। কিছুক্ষণ পর আফরান সরে আসে। কপালে কপাল ঠেকায়। লম্বা শ্বাস নেয়। দৃষ্টি গাল ভারি হয়েছে, অভিমান গলতে শুরু করেছে। তার মধ্যেই আফরান বলে,
“একটা কথা বলি, দৃষ?”
দৃষ্টি সম্মতিও দেয় না আবার মানাও করে না। ঘন ঘন শ্বাস নেয়। আফরান বলে,
“আমাকে ইউএসএ যেতে হবে। এক বছরের জন্য। ট্রেইনিং এর জন্য। ”
দৃষ্টি চোখ মেলে বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকায়। আফরান মৃদু হেসে নাকে নাক ঘষে বলে,
“তাই তো এমন তাড়াহুড়ো করে বিয়ের কাজটা সেরে ফেললাম। তোকে মৃন্ময়ের সামনে এভাবে রেখে যেতে মন চায়ছিল না একদম। এবার আমি না থাকলেও তুই মৃন্ময়ের থেকে দূরে থাকার রাস্তা পেয়ে যাবি নিজেই। স্যরি।”
দৃষ্টির কন্ঠনালি জড়িয়ে আসে। শব্দগুলো কেমন পাকিয়ে যায়। চোখে আবারও অশ্রু জমা শুরু হয়।
“কাল সকালে আমার ফ্লাইট।”
এবার অশ্রুর বাঁধ ভাঙল। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল সে। আফরানের বুকে মাথা ঠেকাল। অদ্ভুত শান্তি অনুভব করল যেন। আফরান হকচকায়,
“আরে কাঁদছিস কেন? এক বছরই তো, তারপর চলে আসব।”
অতঃপর দুষ্টু হেসে বলে,
“আমার জন্য তোর কষ্ট হবে, দৃষ? সত্যি? সামথিং সামথিং?”
দৃষ্টি তবুও কাঁদে। ভিজে যায় তার বুকের অংশের শার্ট। জড়ানো গলায় বলে শুধু,
“আপনি খুব খারাপ। খুব খারাপ।”
কিছু মুহূর্ত পর সে শান্ত হয়। তবে আফরানের বুকে লেপ্টে থাকে। আফরান একটু পর পর তার চুলের ভাজে অধর ছোঁয়।
“আমি এভাবে তোকে বিয়ে করতে চাইনি। চেয়েছিলাম তোর বাপের কাছে তোকে চাইব। যদি দেয় তাহলে ধুমধাম করে তোকে উঠিয়ে নিয়ে যাব। আর যদি না দেয় তো! তোকে তুলে নিয়ে ধুমধাম করে বিয়ে করব। কিন্তু শা’লারা আমাকে ঠেলে ইউএসএ পাঠাচ্ছে। আর না গেলেও উপায় নেই। তোকে আমি কুমারী রূপে রেখে যাবার সাহসটা পেলাম না রে, দৃষ। তাই জোর করে বিয়ে করে নিলাম। পাকা পোক্ত সার্জারিয়ান হয়ে দেশে ফিরে সবার আগে ওই মৃন্ময়ের বাচ্চার বারোটা বাজাব! তারপর আর যত কাজ।”
একটু থেমে আবার বলে,
“আচ্ছা? জোর করে বিয়ে করায় তুই কি রাগ করেছিস? তবে আমি প্রমিস করছি ফিরে তোকে বউ সাজিয়ে আমার ঘরে তুলব।”
দৃষ্টির চোখ বেয়ে আবারও অশ্রু গড়ায়। সে কীভাবে থাকবে এই পাগল লোকটাকে ছেড়ে? সে আবার বলে,
“আপনি খুব খারাপ, আফরান ভাই।”
“একটা বছর শান্তিতে কাটিয়ে নিস। আমি ফেরার পর তোর সব শান্তি আমার হাতের মুঠোয়।”
দৃষ্টি বিড়বিড় করে বলে,
“আপনি কেন এলেন? কেন এমন করলেন? কেন আমাকে দুর্বল করে দিয়ে চলে যাবেন? আমি থাকব কি করে?”
আফরানের কান পর্যন্ত তা পৌঁছাল না। সে তার কপালে অধর ছুঁইয়ে বলে,
“তোকে বুকের মধ্যে নিয়ে আমার ভীষণ শান্তি লাগছে রে। আমি একটু ঘুমাতে চাই। একটা শান্তির ঘুম চাই। দিবি?”
দৃষ্টি জবাব দেয় না। তবে আফরান তার জবাবের তোয়াক্কা না করেই চোখ বোজে। মুহূর্তে ঘুমে তলিয়ে যায়। দৃষ্টি হাত বাড়িয়ে তার মুখের প্রতিটি অংশ একটু একটু ছুঁয়ে দেয়। বুক ভারি হয়, কান্না গলায় দলা পাকিয়ে যায়।
চলবে,
#সে_আমারই
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ২১
কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল দৃষ্টির জানা নেই। তীব্র দরজা ধাক্কানো তে ঘুম পাতলা হয়ে এলো। পিটপিট করে চোখ মেলে পাশে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে পেল না। বুকের মধ্যে ধড়াস করে উঠল। আফরান কি চলে গিয়েছে? দেশ ছেড়ে? তাকে ছেড়ে? আবারও কান্নায় চোখ ভিজে আসতে চায়ল, তবে দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা ধৈর্যহীন ব্যক্তির জন্য তা আর হলো না। ঢোক গিলে উঠে দরজা খুলল। ওপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন মিসেস সীমা। মেয়েকে দরজা খুলতে দেখে তড়িঘড়ি করে বললেন,
“কটা বাজে দৃষ? কখন থেকে ডাকছি। তোর ঘুম এতো পুরু হলো কবে?”
দৃষ্টি নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে। মিসেস সীমা আবারও বললেন,
“তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
দৃষ্টি বিরস কন্ঠে বলে,
“কোথায় যাব? ভালো লাগছে না।”
মিসেস সীমা বেজায় বিরক্ত হলেন। মেয়েকে ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে ব্যস্ত হাতে বিছানা গোছাতে গোছাতে বললেন,
“দিন দিন বাপের মতো হয়ে যাচ্ছিস। আজ যে আমার আফরানটা অন্য দেশে চলে যাচ্ছে, তোর বাপকে বললাম, ‘চলুন যাই ও’র সাথে একটু দ্যাখা করে আসি। আর না জানি কবে দ্যাখা হবে?’ কিন্তু! তোর বাপ করল টা কি? ‘আমার কাজ আছে’ বলে চলে গেল! আর এখন তুই বলছিস ভালো লাগছে না?”
কিছু মুহূর্তের জন্য হলেও দৃষ্টির চোখ চকচক করে ওঠে। আফরান তবে এখনও যায়নি? তাকে দ্যাখার এখনও সুযোগ আছে! সে দ্রুত জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশ রুমে প্রবেশ করে,
“থামো এবার। আমি যাব, মা।”
মিসেস সীমা অবাক হলেও পরপর খুশি হলেন। যাক! মেয়েটা তাহলে বাপের মতোন হচ্ছে না।
–
সকলে রেডি হয়ে গাড়ি চেপে বের হলেন। শুধু গেলেন না দুই ভাই। এতে মিসেস সীমা কম কথা শোনাচ্ছেন না। একটু গেলে কিই বা হতো? টাকা পয়সা কমে যেত? নাকি তার বোনের ছেলে তাদের টাকা পয়সা নিয়ে ফুড়ুৎ হয়ে যাচ্ছে?
এয়ারপোর্টে এসেই সবাইকে পেয়ে গেলেন তারা। মিসেস সীমা প্রথমেই বোনের সাথে ভাব বিনিময় করে নিলেন। কত দিন দ্যাখা হয় না! তিনি বোনকে জিজ্ঞেস করলেন,
“কেমন আছ, আপা?”
প্রশ্নের উত্তর দিতে যেয়ে মিসেস সাইমা নাকে কাঁদা শুরু করলেন। পাশেই আফরান বসে ছিল। মা তাকে এসে থেকেই বগল দাবা করে রেখেছে। যেন যেতেই দেবে না। তার অক্ষি গোলক ছিল দৃষ্টির দিকেই স্থির। ইশ্! বিয়ের পর মেয়েটার রূপ বেড়েছে। আগের থেকেও এখন মা’রাত্মক সুন্দর লাগছে। এমন বউ ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে? তবুও বিধিধাম তাকে যেতে হচ্ছে। মায়ের নাকে কান্নায় সে দৃষ্টি ঘুরিয়ে মুখ কুঁচকাল,
“খালামনি! প্লিজ তুমি মাকে একটু থামতে বলো। আমি কেবল এক বছরের জন্য যাচ্ছি। সারাজীবনের জন্য নয়। এভাবে কাঁদার কি আছে? যখন থেকে জেনেছে তখন থেকে কেঁদেই যাচ্ছে!”
মিসেস সাইমা নাক টানলেন,
“দ্যাখ সীমা, মেয়েটাও সেই দূরে থাকে। হাতে গোনা বছরে হয়তো একবার আসে। আর ছেলেটাও এখন আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। কাঁদব না বল?”
মিসেস সীমা বোনের সাথে তাল মেলালেন। দুই বোন মিলে জুড়ে দিলেন যত আহাজারি। আফরান বিরক্ত মুখে একবার তাকিয়ে আবার দৃষ্টির দিকে মন স্থির করল। আর এক ঘন্টা পরই তো ফ্লাইট ততক্ষণে একটু মন ভরে দেখে নেওয়া যাক।
সকলে যখন আফরান কে নিয়ে ব্যস্ত তখন ফারনাজ তখন গুটি গুটি পায়ে তূরাগের পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। তূরাগ বাইরের দিকে চেয়ে ফোনে কথা বলছিল। মুখে মাস্ক। ফারনাজ অপেক্ষা করল তার কথা শেষ হবার। অবশেষে তার অপেক্ষার অবসান ঘটল। তূরাগ ফোন পকেটে পুরে পেছনে ঘুরে তাকে দেখে ভ্রু কুঁচকাল। তাকে চমকাতে দ্যাখা গেল না একটুও। সে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“কি? আমার পেছনে দাঁড়িয়ে কি করছিলে?”
ফারনাজ অবাক হয়। চশমা ভেদ করে ডাগর আঁখি মেলে জিজ্ঞেস করে,
“আপনি কীভাবে বুঝলেন যে আমি অনেকক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে আছি? আমি তো কোনো শব্দ করিনি।”
“আমি কাউকে এতো এক্সপ্লেইন করতে পারব না। কিছু বলার থাকলে বলো, নাহলে..”
ফারনাজ কথার মাঝপথে তাকে থামায়। তড়িঘড়ি করে বলে,
“ভালো আছেন, ভাইয়া?”
তূরাগের কপালে কটা ভাঁজ পড়ল। মতলব কি তার?
“এই কথা জিজ্ঞেস করার জন্য এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলে?”
ফারনাজ ইতস্তত বোধ করে। সেই ঘটনা এখনও ভোলেনি সে। সেই হুমকি! আবার যদি ধরে? তূরাগের সাথে সখ্যতা করতে পারলে হয়তো তার থেকে কিছু সাহায্য পাওয়া যাবে। তাই সে আগ বাড়িয়ে এসেছে কথা বলতে। নাহলে তার বয়েই গেছে এই পাথর মানবের সাথে কথা বলতে!
“না মানে ভাইয়া! আপনার সাথে তো সেই দ্যাখা হওয়া থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত ঝামেলা হয়ে এসেছে। ভালো মতো আলাপও হয়নি কখনও। তাই ভাবলাম একটু আলাপ করি।”
তূরাগ পকেটে হাত ঢুকিয়ে বুক টান টান করে দাঁড়ায়। গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
“তোমার কি মতলব বলো তো? এক মিনিট! তুমিও বাকি মেয়েদের মত নিশ্চয়ই আমার প্রেমে পা পিছলে পড়েছ? তাই এসেছে ভাব জমাতে। তাই না?”
ফারনাজ কিঞ্চিৎ হা করে তাকায়। তূরাগ কোথা থেকে কোথায় চলে গেল! তার বোকা বোকা মুখ দেখে তূরাগ আড়ালে ঠোঁট চেপে একটু হেসে নেয়। তবে ফারনাজের তা দৃষ্টি গোচর হয় না।
“এসব কি বলছেন? আমি তো সরল মনে এসেছিলাম আপনার সাথে একটু আলাপ করতে। আর আপনি কোথা থেকে কোথায় নিয়ে গেলেন!”
ফারনাজের কন্ঠে বিস্ময়। তূরাগ মুখটা ঘুরিয়ে নেয়,
“কিন্তু আমি ইচ্ছুক নই। তুমি যেতে পার।”
অপমানে থমথমে হয়ে গেল তার মুখ। তার ঘাট হয়েছে এই পাথর মানবের সাথে আলাপ করতে আসা। এই মানুষটার মধ্যে পাথর ছাড়া কিচ্ছু নেই। সে মুখ বিকৃত করে ভেংচি কেটে চলে গেল।
দৃষ্টি মায়ের পাশে বসে আছে চুপচাপ। মা আর খালামনির যেন গল্প শেষ হবার নাম নেই। আফরান চলে যাচ্ছে তাই নিয়ে কতই না দুঃখ তাদের! এদিকে সে না তাকিয়েও ঠিকই বুঝতে পারছে যে আফরান তাকে দেখছে। সেই দৃষ্টির কোনো নড়চড় নেই, কেবল আছে মুগ্ধতা। দৃষ্টির প্রচুর কাঁদতে ইচ্ছে করছে। এই লু’চু ডাক্তারের জন্য কেঁদে কেটে অজ্ঞান হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এই অস’ভ্য লোকের জন্য সে কেন কাঁদবে? চোখটা জ্বলছে প্রচুর। সে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“মা, আমি একটু ওয়াশ রুম থেকে আসছি।”
মিসেস সীমা মাথা নাড়িয়ে নীরবে সম্মতি দিলেন। দৃষ্টি চলে গেল। ওয়াশ রুমে গিয়ে চোখে মুখে বেশি করে পানি ছিটিয়ে দিল। একে তো ঘুম হয়নি, তার উপর কান্না কাটি, চোখটা লাল আছে এখনও। লম্বা শ্বাস নিল সে। আর বেশিক্ষণ নেই, একটু পরই আফরান চলে যাবে। আর সেও বেঁচে যাবে খুব করে। মুখ মুছে পেছনে ফিরতেই থমকে গেল। আফরান টান টান হয়ে দাঁড়িয়ে। চোখের দৃষ্টি খুব শান্ত। সে তাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই সে বাঁধা দেয়।
“মায়ের হাত থেকে কত কষ্ট করে বেরিয়ে এখানে এলাম। আর তুই চলে যাচ্ছিস!”
দৃষ্টি মুখ অন্যদিকে রেখেই বলে,
“আমি বলেছিলাম কাউকে এখানে আসতে? ছাড়ুন।”
আফরান তার কোমরে হাত গলিয়ে তাকে কাছে টানে। ছড়িয়ে থাকা চুল গুলো আলতো হাতে কানের পিঠে গুজে নরম কন্ঠে বলে,
“চলেই যাচ্ছি। শেষ বারের মতো তোকে একটু চোখ ভরে দেখতে এলাম। তাতেও তোর আপত্তি? আজ থেকে তো তোর শান্তির দিন শুরু তাই না?”
দৃষ্টি মুখ তুলে তাকায়। আফরানের ছোট ছোট চোখ জোড়া তাকে টানে ভীষণ। সেদিকে চেয়ে মনে মনে আওড়ায়,
“সত্যিই তো! আপনি চলে গেলেই তো আমার শান্তি। আমাকে আর কেউ বিরক্ত করবে না, হুট হাট জড়িয়ে ধরবে না। দৃষ দৃষ বলে মাথা খারাপ করবে না। তাহলে আমার এমন অদ্ভুত কষ্ট কেন হচ্ছে? মনে হচ্ছে যেন আমার আত্মাটাই আমার থেকে চলে যাচ্ছে। কেন হচ্ছে এমন?”
চলবে,
#সে_আমারই
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ২২
ফারনাজের কপালটা এমন খারাপ কেন? ফারনাজ জানে না। না একটা বয়ফ্রেন্ড জুটছে আর না এই কিডন্যাপার পিছু ছাড়ছে! তার ইচ্ছে হয় গড়াগড়ি দিয়ে নাকের জল চোখের জল এক করে কাঁদতে। একটা বয়ফ্রেন্ড জুটলে অন্তত এই কিডন্যাপার থেকে মুক্তি পাওয়া যেত। না পারে সইতে আর না পারে কাউকে বলতে। এই যেমন তাকে আজও কিডন্যাপ করা হয়েছে। রাস্তা দিয়ে একা চলার সুযোগে তাকে ওঠানো হয়েছে। এই নিয়ে তিন বার হলো। সে বোঝে না, কিডন্যাপার ব্যাটা বার বার এমন করে কি মজা পায়? তার ভাবনার মাঝেই গাড়িতে ঝাকুনি দিয়ে উঠল। সে হুমড়ি খেয়ে পড়তে নিলেই বলিষ্ঠ শক্ত হাত তাকে আঁকড়ে ধরল। সূক্ষ্ম শ্বাস ফেলল সে। দ্যাখার উপায় নেই, চোখ বাধা। হাত ছোড়াছুড়ি করার উপায় নেই, হাত বাধা। কেবল সে একটু কথা বলতে পারবে, কারণ মুখ বাধা নেই। সে অসহায় কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
“এমন করেন কেন আপনি? আজও কি বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আসবেন? তাহলে কিডন্যাপ করে কি লাভ আপনার? না আটকে রাখেন, আর না কোনো টাকার দাবি করেন! এমন কিডন্যাপার আমি আমার বাপের জন্মে দেখিনি।”
লোকটি শ্বাস ফেলে, তা ফারনাজের মুখে আছড়ে পড়ে। মৃদু আন্দোলিত হয় তার হৃদয়। লোকটি ভারী কন্ঠে বলে,
“তবে তুমি চাও যে আমি তোমায় আটকে রাখি?”
ফারনাজ হকচকিয়ে বলে,
“না না একদম না।”
লোকটি মৃদু শব্দে হেসে বলে,
“মনে রেখো, আমি যদি আটকে রাখি তাহলে সারাজীবনের জন্য আটকে রাখব। আর কোনোদিন মুক্তি পাবে না তুমি।”
ফারনাজ ভীত হয়। তার ভীত মুখ দেখে লোকটি ভীষণ মজা পায়। ফারনাজের মাঝে মধ্যে মনে হয় এই লোক তার পরিচিত। কোথাও না কোথাও এই কন্ঠ ও শুনেছে। তবে ধরতে যেয়েও যেন ধরতে পারে না। হতাশ হয় সে। যদিন এই লোককে চিনতে পারবে সেদিন সে মজা দেখিয়ে ছাড়বে।
প্রায় দু ঘন্টা তাকে গাড়িতে করে এ মাথা থেকে ও মাথা ঘুরে নামিয়ে দেওয়া হলো বাড়ির সামনে। হাতের বাঁধন হালকা করে চশমা গুঁজে দিয়েই হাওয়ার বেগে গাড়ি চলে গেল। ফারনাজ দ্রুত চোখ খুলেও গাড়ির টিকিটিও দেখতে পেল না। পুনরায় মুখ কালো করে সে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করল। আচ্ছা এই ঘটনা কি বাড়ির লোকদের সাথে আলোচনা করবে? পরক্ষনেই লোকটির কথা মনে পড়ে,
“যদি বাড়ির কাউকে এই কথা বলেছ, তাহলে ধরব ঠিকই কিন্তু ছাড়ব না।”
সে শুকনো ঢোক গেলে। না থাক, বলার দরকার নেই। তার তো আর কোনো ক্ষতি করে না। শুধু চোখ আর হাত বেধে গাড়িতে করে চক্কর কা’টে। যেচে পড়ে কেন বিপদ ডাকবে সে?
—
খাবার টেবিলে সকলে জড় হয়েছে রাতের খাওয়া সারার জন্য। মিসেস সীমা পরিবেশন করছেন এবং আফরান কে নিয়ে গুনগান করে যাচ্ছেন। তার বোনপো বিদেশ গিয়েছে! আরও বড় ডাক্তার হয়ে দেশে ফিরবে! আরও কত কি! ফাহাদ আবরার স্ত্রীর উপর বিরক্ত হলেন। বড় ডাক্তার না ছাই! মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করে বেড়াচ্ছে দ্যাখো গিয়ে অ’স’ভ্য টা! তিনি কড়া কন্ঠে বললেন,
“তুমি থামবে? বোনের ছেলে নিয়ে আর এত নাচানাচি করতে হবে না। মাথা খেয়ে ফেলল আমার!”
মিসেস সীমা মুখ বাঁকান। তরকারির পাত্র শব্দ করে টেবিলে রেখে বলেন,
“আমার আফরান টাকে নিয়ে এত কীসের সমস্যা আপনার? আপনি ও’কে দু চোক্ষে সহ্য করতে পারেন না। কেন বলুন তো? এমন সোনার টুকরো ছেলে আজকাল দুটো দেখেছেন? আপনার ছেলেটা কেমন? রাজনীতি গু’ন্ডাগিরি করে বেড়ায়। আর আমি আমার বোনের ছেলের গুনগান গাইলে দোষ?”
ফারদিন উপস্থিত ছিল না। থাকলেও সে মায়ের কথার বিপরীতে কোনো জবাব দিত না। তার স্বভাবই এমন, শান্ত গম্ভীর। নিজের প্রশংসা শুনেও তার কোনো হেলদোল হয় না, আর না নিজের দুর্নাম শুনে। ফাহাদ আবরার চুপ করে গেলেন। ছেলেকে তিনি ব্যবসায় বসাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ছেলের হাব ভাব দেখে বলতে পারছেন না কিছু। এখন কেবলই সময়ের অপেক্ষা।
দৃষ্টি চুপচাপ খেয়ে চলেছিল। তবে আফরানের প্রসঙ্গ উঠতেই বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠল। বাবা আফরানের প্রতি এত অসন্তুষ্ট! আর যখন জানতে পারবে তার নিজের মেয়েই তার অপছন্দের পাত্রটিকে বিয়ে করে বসে আছে, তখন কি হবে? দৃষ্টি ভয়ে জমে যায়। তুলকালাম কাণ্ড বাঁধবে নিশ্চিত।
আজ একটা মাস আফরান নেই। তবে সে রোজ নিয়ম করে তাকে ফোন দেয়। কিন্তু দৃষ্টি ওঠায় না। আফরানের কন্ঠ শুনলেই তার শক্ত খোলস ভেঙে যাবে। তার কাছে ছুটে যেতে মন চায়বে। হতেও পারে আফরানের সামনেই কেঁদে ফেলবে! কি একটা লজ্জার ব্যাপার হবে! আর আফরান তো তাকে লজ্জা দিয়েই মে’রে ফেলবে। এই ভয়ে দৃষ্টি নিজেকে সামলে রেখেছে। সে ঢোক গিলে হাত ধুয়ে উঠে পড়ল। মিসেস সীমা জিজ্ঞেস করলেন,
“খাবার শেষ না করেই উঠলি কেন, দৃষ?”
“পেট ভরে গিয়েছে মা।”
সে চলে গেল। মিসেস সীমা ইদানীং লক্ষ্য করেন, দৃষ্টি খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করে না। চোখের নিচটায়ও কেমন কালি পড়ে আছে! ঘুমের কথা জিজ্ঞেস করলেই বলে, পড়ার ভীষণ চাপ। তিনি আর কিছু বলতে পারেন না।
দৃষ্টি রুমে এসে শুয়ে পড়ে। কোনো কিছুই ভালো লাগে না। আফরান থাকতে যেমন তাকে উঠতে বসতে জ্বা’লাত, এখন কেউ তা করে না। তার কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। আফরান কে মিস করে ভীষণ। তবুও সে আফরানের সাথে কথা বলবে না। তাকে বউ বানিয়ে রেখে যাবার ফল স্বরূপ আফরান দেশে আসার পূর্ব পর্যন্ত না দৃষ্টির কন্ঠ শুনতে পাবে আর না তাকে দেখতে। তার ভাবনার মাঝেই ফোন রিং হতে হতে বন্ধ হয়ে গেল। দৃষ্টি সেদিকে ফিরেও তাকাল না। সে জানে কে ফোন দিয়েছিল।
—
আফরান চলে যাবার পর থেকেই একা একা দিন কাটছে তুরাগের। দু একটা কনসার্ট আর তার টুকটাক কাজ, এই নিয়েই দিন কাটে। রাতে খেতে বসেছে সে। মিসেস অনা পাশে দাঁড়িয়ে যত্ন করে তাকে পরিবেশন করছেন। যদিও ছেলে ডায়েট চার্ট অনুযায়ী তেমন কিছুই খায় না। কিন্তু তাতে কি? তিনি সব সময় নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ছেলেকে খাওয়াতে চান। হঠাৎ একটা কথা মনে পড়তেই তিনি গদগদ কন্ঠে বললেন,
“তূরাগ, আজ শপিং করতে গিয়েছিলাম না?”
সে খেতে খেতে জবাব দেয়,
“হ্যাঁ, তো?”
“হ্যাঁ শোন হলো কি! একটা জায়গায় ভীষণ ভীড় ছিল। আমি তো জানিসই কেমন বোকা! আপার থেকে কখন যে আলাদা হয়ে গিয়েছি টেরই পাইনি। ওই ভীড়ের মধ্যে আমি আটকে পড়েছিলাম। মানুষ সব যেন আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন একটা সুন্দর দেখতে মেয়ে এসে আমাকে টেনে ভীড় থেকে বের করল। কি সুন্দর মেয়েটা!”
তূরাগ ভ্রু কুঁচকাল। মনে মনে বুঝে গেল মা এর পর কি বলতে পারে। তার ভাবনা সত্যি করে মিসেস অনা বললেন,
“ইশ্! এমন একটা মেয়ে যদি আমার ছেলের বউ হতো! কিন্তু আমি মেয়েটাকে কিছু বলার সুযোগই পেলাম না। আমাকে ফাঁকা জায়গায় রেখে আবার সে চলে গেল। মনে হয় বড্ড চঞ্চল। নামটাও শুনতে পারলাম না, আর ফোন নম্বরটাও নিতে পারলাম না।”
মন খারাপ করে ফেললেন তিনি। তূরাগের খাওয়া শেষ। সে মায়ের শাড়ির আঁচলে মুখ মুছে বলে,
“ভাই আমার বড়। আগে তার বিয়ে দিয়ে বউ আনো। তারপর আমার কথা ভেবো।”
ছোট থেকেই তূরাগের অভ্যাস মায়ের বা বড় মায়ের আঁচলে মুখ মোছা। হাতের কাছে কোনো আঁচল পেলেই যেন হাত নিশপিশ করে। সময় সাপেক্ষে হয়তো এই আঁচল বদলাতে পারে। মিসেস অনা মুখ গোমড়া করে বললেন,
“সেটা তো এক বছরের জন্য চলে গেল। কবে ফিরবে, তারপর মেয়ে দেখবে তারপর বিয়ে করবে! এতদিন তুই বুড়ো হয়ে যাবি।”
তূরাগ মায়ের বাচ্চামোতে হাসে। রুমের দিকে পা বাড়িয়ে বলে,
“বাবা মায়েদের কাছে সন্তানরা কখনও বড় হয় না। আর তুমি বিয়ে দেওয়ার জন্য ঊনত্রিশ বছরের ছেলেকে যে পরের বছর ত্রিশে পা রাখবে তাকে বুড়ো বানিয়ে দিচ্ছ!”
চলবে,