সেই মেয়েটি আমি নই পর্ব-১০

0
888

সেই মেয়েটি আমি নই
১০ পর্ব
লেখা: জবরুল ইসলাম

বিনোদিনীর ক্লান্ত শরীর। এতদিন বলতে গেলে বন্দীই ছিল সে। ছিল তুষারের জন্য বিরহ। আজ আবার পুরো রাত মাজারে বসে বসে কাটিয়েছে৷ তাই আর তুলির প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলার শক্তি পেল না। গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল তুষারের বুকে। বাস চলছে দ্রুত গতিতে। হঠাৎ বেজে উঠলো তুষারের ফোন। বিনোদিনীরও ঘুম ভেঙে গেল। পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখে তার ফুপু। নয়টার দিকেও একবার কল দিয়েছেন সে রিসিভ করেনি। ভেবেছিল উনি ব্যাংকে চলে গেলেই আর কল দেবেন না। কিন্তু এখন অফিস টাইমে আবার কল দেয়ার কারণ কি?
বিনোদিনী বললো,

– ‘রিসিভ করলে সমস্যা কি? করো রিসিভ।’

তুষার কল রিসিভ করে,

– ‘হ্যালো।’

– ‘কিরে তুই কোথায়, কল রিসিভ করিস না কেন?’

– ‘ফুপু খেয়াল করিনি। আর এখন আমি বাসেই আছি।’

– ‘আচ্ছা আগে এটা বল। তুই যে রুমে ঘুমাস সেখানে বিছানায় একটা ভ্যানিটিব্যাগ দেখলাম, সেটা কার?’

তুষার কি বলবে ভেবে না পেয়ে আমতা-আমতা করতে লাগলো। তখন ফুপু আবার বললেন,

– ‘ওই ব্যাগ খুলে একটা মোবাইল পেলাম। মোবাইল লক করা। কিন্তু ক্লিক করতেই ডিসপ্লেতে আমার কলিগ ইশতিয়াক আর একটা মেয়ের ছবি দেখলাম। হয়তো উনার স্ত্রী। বুঝলাম না এই ব্যাগ তুই কোথায় পেলি। তুমি কি ছিনতাই-টিনতাই শুরু করলি না-কি?’

তুষার ব্যস্ত হয়ে বললো,

– ‘না ফুপু, উনার বউকে আমি চিনি। আর ওটা ভুলে ফেলে চলে গেছে তাই নিয়ে রাখছিলাম। ফেরত দিয়ে দিব।’

– ‘কি বলিস এসব? তুই চিনিস কিভাবে।’

– ‘এগুলো এখন থাক, বাড়িতে এসে বলবো ফুপু।’

– ‘আচ্ছা ঠিক আছে।’

ফোনলাপ শুনেই বিনোদিনীর মুখ ঝলমল করে উঠলো। ভাগ্য ভালো মেয়েটির স্বামীর সন্ধান কাকতালীয়ভাবে পেয়ে গেছে। কিন্তু কল রাখতেই দাঁত কটমট করে বললো,

– ‘আশ্চর্য তুমি আন্টির কাছ থেকে লোকটির বাসার ঠিকানা বা ফোন নাম্বার নিয়ে নিলে না কেন?’

– ‘ও স্যরি খেয়ালই ছিল না। তবে তাড়াহুড়োর কিছু নেই। বাসায় গিয়েও ফুপুর কাছ থেকে পাব।’

– ‘বোকা না-কি? তুমি কি বুঝতে পারছো না আমাদের জন্য আরেকজনের অনেক বড়ো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভুল ভাঙানো দরকার।’

– ‘এখন কি করবো?’

– ‘তুমি ওই লোকটির নাম্বার আনো। তারপর কল দিয়ে বলো যে ভুল বুঝাবুঝি হয়ে গেছে৷ তুমি যাকে ভালোবাসো ওর চেহারা অবিকল উনার স্ত্রীর মতো।’

– ‘আচ্ছা ঠিক আছে।’

তুষার আবার ওর ফুপুকে কল দিল। কিন্তু রিং হয়ে কেটে এলো।

– ‘উনি ব্যস্ত হয়তো এখন।’

– ‘তা হবেনই। আচ্ছা দেখো ব্যাক করেন কি-না।’

তারা পাঁচটার দিকে ঢাকা এসে পৌঁছে। মহাখালী বাসস্টেশনে নামতেই কল এলো তার ফুপুর। ফুপু কল ব্যাক করেছেন।

– ‘রিসিভ করো।’

তুষার কল রিসিভ করল,

– ‘হ্যালো ফুপু।’

– ‘হ্যাঁ বল, তখন ব্যস্ত থাকায় ধরতে পারিনি।’

– ‘তোমার এই কলিগের নাম্বারটা দাও তো টেক্সট দিয়ে।’

– ‘ঘটনা কি বলতো? এই লোকটাকেও আজ ব্যাংকে দেখলাম চোখের নিচ কালো হয়ে গেছে৷ সারাক্ষণ কালো মুখ করে ছিল অফিসে৷ কারও সঙ্গে কথাও বলেনি।’

– ‘তেমন কিছু না ফুপু। পরে বলবো। এখন নাম্বার দাও।’

– ‘আচ্ছা দিচ্ছি।’

তিনি নাম্বার দিলেন টেক্সটে।

– ‘চলো কোনো রেস্টুরেন্টে বসি। নাশতা করতে করতে কল দেয়া যাবে।’

– ‘হ্যাঁ, আচ্ছা চলো।’

দু’জন পাশের একটা রেস্তোরাঁয় গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে বসে।

– ‘আবার দিয়ে দেখো।’

তুষার আবার কল দেয়। খানিকক্ষণ রিং হতেই রিসিভ হয়। ওপাশে গাড়ির শব্দ শোনা যাচ্ছে।

– ‘হ্যালো।’

– ‘হ্যাঁ বলুন, কে বলছেন।’

তুষার কেশে নিয়ে বললো বললো,

– ‘ভাইয়া গতকাল আপনার ওয়াইফের সঙ্গে যাকে দেখেছিলেন।’

– ‘হোয়াট, তুই আমাকে কল দিয়েছিস কেন?’

– ‘ভাই একটা বড়ো ধরণের ভুল বুঝাবুঝি হয়ে গেছে।’

– ‘কি ভুল বুঝাবুঝি, নাটক না করে বল। না হয় রাখ ফোন।’

– ‘ভাই অস্থির হইয়েন না। আসলে কথা হলো আপনার ওয়াইফ আর আমার প্রেমিকা একজন না। দু’জনের, কণ্ঠ চেহারা সবকিছু এক, কিন্তু মানুষ ভিন্ন।’

– ‘কি বললি? আবার বল।’

– ‘আপনার ওয়াইফ নির্দোষ৷’

– ‘ফাজলামি করতে কল দিয়েছিস?’

– ‘ফাজলামো না ভাই, সত্য।”

– ‘তুলি টাকা-পয়সা দিয়ে মানাইয়া ফেলছে, এখন নাটক করছিস?’

বিনোদিনী মোবাইল কান থেকে নিয়ে বললো,

– ‘ভাইয়া আমি সেই মেয়ে। যার সঙ্গে আপনার স্ত্রীর চেহারার মিল। আমরা এখন মহাখালী আছি, চাইলে আসুন। সরাসরি কথা বলি।’

ইশতিয়াক ওর কণ্ঠ শুনে থমকে যায়। অবিকল তুলির মতো।

– ‘আচ্ছা আমি আসছি৷ আপনারা মহাখালী কোথায় এখন?’

– ‘বাস-স্টেশনের কাছেই আপনি এসে কল দিন।’

– ‘আচ্ছা আসছি।’

কল রাখতেই তুষার রূঢ় গলায় বললো,

– ‘এই লোকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে হবে কেন? জানো কেমন বদমেজাজি এই লোক। এখানে এসে আবার কি থেকে কি শুরু করবে।’

– ‘যাইই শুরু হোক। তাদের ভুল বুঝাবুঝি দূর করে আমাদের ক্ষমা চাওয়া দরকার। কারণ তোমার আর আমার কারণে এক নিরপরাধ মেয়ে মানসিক শাস্তি পাচ্ছে।’

– ‘শুধু মানসিক না। ওর হাসবেন্ড এমন লোক শারীরিক শাস্তিও দেবে।’

– ‘তো সেটা কার জন্য?’

তুষার চোখ নামিয়ে চুপচাপ বসে রইল। বিনোদিনী ফিক করে হেঁসে বললো,

– ‘অবিকল আমার মতো বলে একেবারে কাছে যাওয়ার পরও বুঝবে না? না-কি ইচ্ছা করে অন্যের বউকে জড়িয়ে ধরলে?’

– ‘আরে না, একদম সবকিছু একইরকম। শুধু ওই মেয়ে একটু মোটা। আমি ভাবলাম বিয়ের পর তো একটু-আধটু পরিবর্তন হতেই পারো।’

– ‘দেখতে ইচ্ছা করছে মেয়েটিকে।’

– ‘এতো ইচ্ছার দরকার নাই। ঝামেলা বাড়িয়ে কি লাভ। নিজেদেরই এখন বহুত ঝামেলা আছে।’

এভাবে তাদের আলাপচারিতা চলছে। হঠাৎ কল এলো ইশতিয়াকের।

– ‘হ্যালো কোথায় আপনারা?’

হোটেলের নাম বললো তুষার। খানিক পরেই ভেতরে এসে ঢুকলো ইশতিয়াক। তুষারের পাশের মেয়েকে দেখে যেকেউ বিভ্রান্ত হবে তুলি ভেবে। এটা কিভাবে সম্ভব? জমজ কিংবা আত্মীয় ছাড়াও কি অবিকল দু’জন মানুষ একইরকম হয়? কিন্তু এখন সে কি করবে? তুলির সঙ্গে সে যা করেছে মাফ চাইতে ওতো লজ্জা লাগবে।

– ‘বসুন ভাই।’

ইশতিয়াক চেয়ার টেনে বসে এক গ্লাস পানি খেল।

বিনোদিনী মুচকি হেঁসে বললো,

– ‘এখন বিশ্বাস হইছে?’

ইশতিয়াক টেবিলে কনুই ঠেকিয়ে দুই হাতে মুখ অজলা করে বসে অস্ফুটে বললো,

– ‘বিশ্বাস করে আর কি হবে? সর্বনাশ যা হওয়ার তো হয়েই গেছে।’

তুষার আমতা-আমতা করে বললো,

– ‘পার্কে ভাই আরেকটু সময় গেলে হয়তো ধীরে ধীরে সব খোলাসা হয়ে যেতো। উনি এসেছিলেন আমাকে বুঝাতে যে উনি ছবির মেয়েটি না। আমি যেন আর কল না দেই। উনার সংসারে সমস্যা হচ্ছে। রাতেও এগুলো বলেছেন। তবুও আমি বুঝতে পারিনি। আমার আসলে মাথাই ঠিক ছিল না ওকে হারিয়ে। আমি ভেবেছি উনি মিথ্যে বলছে। আর পার্কে দেখেই আমি জড়িয়ে ধরলাম উনি কিছু বলার আগেই। আপনিও ঝাপিয়ে পড়লেন। দোষ আপনার আর আমার। মাঝখান থেকে উনি….।’

কথা শেষ করার আগেই ‘টাস’ করে চড় এসে পড়লো তার গালে।

– ‘থাম তুই বলদের বাচ্চা।’

দুই হাতে মুখ ঢেকে ইশতিয়াক কান্না আঁটকে রাখতে পারছে না। বিনোদিনী তুষারের কাঁধে হাত রেখে শান্ত হতে বলে ইশতিয়াককে বললো,

– ‘ভাই শান্ত হোন। সবাই তাকাচ্ছে৷ আপুর বাসায় না হয় চলুন। আমরাও আপুর কাছে মাফ চাইব, আপনার পক্ষ হয়েও বুঝাবো। দেখবেন আপু আর রেগে থাকবে না। আশাকরি সব ঠিক হয়ে যাবে।’

– ‘ঠিক হবার নয়। আমি যা করেছি লজ্জায় আর ওর সামনেও দাঁড়াতে পারবো না।’

– ‘ভাই এসব ভাববেন না। এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপুর রাগ ভাঙাতে হবে। উনিও হয়তো কষ্ট পাচ্ছেন আপনাকে ছাড়া। অকারণ উনার আর কষ্ট বাড়াবেন না।’

– ‘সে আর আমাকে ছাড়া কষ্ট পাবে না। এখন আমাকে ঘৃণা করে। আমি যা করেছি ঘৃণা করারই কথা। আমি আর ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াবো না।’

তুষার অবাক হয়ে দেখলো।
বিনোদিনী লোকটির হাত ধরে টেনে বলছে,

– ‘উঠুন তো ভাই, যা হবার হয়ে গেছে। ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল। আপনিও না বুঝে হয়তো অতিরিক্ত করেছিলেন। এই শিক্ষার কারণে ভবিষ্যতে আর এমন করবেন না এটাই নিয়ম।’

ইশতিয়াকের চোখ দু’টো লাল হয়ে আছে৷ সে বিনোদিনীর দিকে তাকিয়ে বললো,

– ‘আমি লোকসম্মুখে ওর গায়ে হাত তুলেছি। বাসায় নিয়েও মেরেছি। অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেছি৷ মাফ চাওয়ার আর কিছু নেই। আমিও আর চাই না আমার মতো নোংরা মানুষের সঙ্গে তুলি থাকুক। আমার উচিত এখনই বের হয়ে গাড়ির নিচে পড়ে মরা।’

– ‘এসব কথা একদম বলবেন না। উনি মাফ করবে কি-না উনার বিষয়। আপনার আগে নিজের ভুলের জন্য মাফ চাওয়া উচিত।’

ইশতিয়াক কিছু না বলে চুপচাপ বসে আছে।

বিনোদিনী আবার হাত ধরে টেনে বললো,

– ‘চলুন ভাই আমরাও সঙ্গে যাব। আপনি কিন্তু নতুন করে আরেকটা ভুলের দিকে যাচ্ছেন।’

ইশতিয়াক মনে মনে ভাবলো কথাটা ঠিক। সব সময় সে ভুল সিদ্ধান্তই নেয়। অন্যের ভালো কথাও গ্রহণ করে না। তার নিজের কাছে এখন নিজেকে অস্বাভাবিক মানুষ মনে হচ্ছে। উঠে দাঁড়াল ইশতিয়াক৷ বিনোদিনীর বাড়াবাড়ি দেখে তুষার দাঁত কটমট করে তাকাচ্ছে। সেদিকে ওর খেয়াল নেই। বিনোদিনী রেস্তোরাঁর বাইরে এসে বললো,

– ‘একটা সিএনজি আনো।’

তুষার বাধ্য হয়ে গেল সিএনজি ডাকতে। খানিক পর তারা সিএনজিতে উঠে বসে। রাস্তায় প্রচন্ড জ্যামজট ঠেলে মুগদা পৌঁছাতে অনেক্ষণ লেগে যায়। বাসার গেইট খুলে কলিংবেল চাপলো বিনোদিনী। ইশতিয়াক বিধ্বস্ত অবস্থায় পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। দরজা খুলে দিল রহিমা। সে ভূত দেখার মতো তাকিয়ে আছে। তার আপুর তো এরকম ড্রেস নেই। দেখতেও আরেকটু মোটা। তাছাড়া একটু আগেই রুমে দেখে এসেছে। তাহলে অবিকল আপুর মতো এই মেয়েটি কে?

– ‘আমরা কি ভেতরে আসব?’

– ‘হ্যাঁ আসেন।’

তিনজনকে সিটিং রুমে বসতে দিয়ে রহিমা দৌড়ে গেল হুস্না বেগমের কাছে।

– ‘খালাম্মা নিজের চউক্ষে দেখেন আইসা। পুরা আপার মতো একটা মেয়ে।’

– ‘কি বলিস, কোথায়?’

– ‘দুলাভাইয়ের সঙ্গে এসেছে।’

– ‘তোর দুলাভাই আসছে না-কি?’

– ‘হ্যাঁ।’

তিনি বের হয়ে গেলেন সিটিং রুমে। মেয়েটিকে দেখে সত্যিই অবাক হলেন। কিন্তু এখন এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই। ইশতিয়াক কেন এসেছে। ঘটনা কি এসব জানতে হবে। তুষারই প্রথমে বললো,

– ‘আন্টি আমরা এসেছি আপুর কাছে ক্ষমা চাইতে। আর দুলাইভাইয়েরও ভুল ভেঙ্গেছি। এখন উনিও অনুতপ্ত।’

কথাগুলো শুনে রহিমা নিজ থেকেই ছুটে গেল তুলির রুমের দিকে৷ সে ভেতরে ভেতরে ভীষণ উত্তেজিত। দু’টো একইরকম মানুষ একসঙ্গে দেখতে কেমন লাগে? কি ঘটে সে দেখতে চায়। তুলির দরজা বন্ধ। ছিটকিনিতে সে লাগাতার ‘ঝনঝন’ শব্দ করতে থাকে। তুলি দরজা খুলে ধমকের সুরে বললো

– ‘পাগলের মতো এমন করছিস কেন, কি হয়েছে?’

– ‘আপা যা দেখেছি আপনিও পাগল হয়ে যাবেন।’

– ‘মানে?’

– ‘সিটিং রুমে কে বসে আছে শুধু দেখেন আইসা।’

– ‘কে বসে আছে?’

– ‘পুরাই আপনার মতো এক মাইয়া আপা। আল্লাহর দুনিয়ায় কত কিসিমে’র লোক।’

রহিমার এতো উত্তেজনা দেখে। তুলিও আর বসে থাকতো পারলো না। অবিকল তার মতো দেখতে আবার কে এলো। ওড়না মাথায় দিয়ে বের হয়ে গেল সে।

দরজা দিয়ে সোজা দেখা যাচ্ছে তুষার আর বিনোদিনীকে। অপর পাশে ইশতিয়াক থাকায় দেখেনি। বিনোদিনীর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রুমে ঢুকে, কিন্তু হুট করে চোখ পড়ে যায় ইশতিয়াকের দিকে। পুনরায় সে বের হতে হতে বলে এলো,

– ‘মা এই জঘন্য মানুষকে এই বাড়িতে দেখতে চাই না। এখান থেকে বের করে দাও।’

তুলি ছুটে চলে গেল নিজের রুমে। হুস্না বেগম তুষারকে বললেন,

– ‘আচ্ছা ঠিক কি হয়েছে সবকিছু খুলে বলো তো।’

তুষার পেছনের সবকিছু বলে সেদিন পার্কের প্রসঙ্গে এলো। যখনই বললো আমি বিনোদিনী ভেবে আপুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করেছি। তখন হুট করে ভাইয়া আমাকে হেঁচকা টেন দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। সঙ্গে আপুও গিয়ে পড়ে গাছের গোড়ায়। আমি আপুকে তুলে উনার দিকে আসতেই আমাকে আবার মারতে শুরু করবেন। ঠিক তখন আপু দৌড়ে এসেছিল ছাড়িয়ে নিতে।
তখন উনি আপুকেও চড় মেরে বলে,
নষ্টা চরিত্রহীন মেয়ে, বিয়ের পরও আগের নাগরের সঙ্গে পার্কে এসেছিস।
আপু তখন শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। তারপর উনি হাত ধরে টেনে পার্ক থেকে নিয়ে বেরিয়ে গেল।

হুস্না বেগম কথাগুলো শুনে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না৷ তিনি আগে শুধু ভেবেছিলেন বেল্ট দিয়ে মেরেছে৷ তাও সেরকম কোনো দোষ করেছে হয়তো৷ কিন্তু সবকিছু শুনে উনার কলিজা ফেটে যাচ্ছে। উনার একমাত্র মেয়েকে অকারণ কেউ লোক সম্মুখে অশ্রাব্য গালাগাল করে মারবে? আবার বাসায় নিয়েও বেল্ট দিয়ে প্রহার করেছে৷ কথাগুলো ভেবে তিনি প্রচণ্ড রেগে গেলেন। হুট করে দাঁড়িয়ে তেড়ে গেলেন ইশতিয়াকে দিকে।

– ‘এই ব্যাটা তুই উঠ। আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যা এখনই। তুই আমার নির্দোষ মেয়েকে পার্কে নষ্টা চরিত্রহীন বলবি। চড় মারবি। বাসায় হাত ধরে টেনে নিয়ে বেল্ট দিয়ে মারবি। এখন আবার এখানে এসেছিস, তুই পেয়েছিস কি? দোষ করলে তো তুই মেরে ফেলতি…।’

ইশতিয়াক মাথা নুইয়ে বসে আছে। বিনোদিনী তাড়াতাড়ি উঠে এসে ধরলো হুস্না বেগমকে।

– ‘আন্টি বাদ দিন, সংসারে এরকম কত হয়। আপনি মুরব্বি মানুষ এমন কইরেন না।’

তিনি চোখ লাল করে বললেন,

– ‘ছাড় আমাকে, এমন ব্যাটার ঘর করার চেয়ে আমার মেয়ে এখানেই সারাজীবন থাকবে। পড়ালেখা করিয়ে বড়ো করেছি কি ওর মতো গ’রুর বা’চ্চার সংসার করতে? এই ব্যাটা তুই বের হয়ে যা চোখের সামন থেকে। তোকে আমি পুলিশে দেবো। আমার মেয়ের পিঠে এখনও বেল্টের দাগ আছে। চলে যা না হয় জুতোপেটা করবো বলে দিলাম।’

ইশতিয়াক লজ্জায়-আপমানে চুপচাপ সিটিং রুম থেকে বের হয়ে গেল।

___চলবে__

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে