Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"সেই তুমি পর্ব -১০

সেই তুমি পর্ব -১০

#সেই_তুমি?
#পর্ব_১০
#Tabassum_Kotha

হীরের ডাক্তারকে একটা ঘরে বেঁধে রাখা হয়েছে। এই ঘরটাতেই রায়ানকে বেঁধে রেখেছিল তুর্য। এতোক্ষণ তুর্য ডাক্তারকে আচ্ছামতো ধোলাই দিয়েছে এখন তুর্যর বডিগার্ড জন মারছে ডাক্তারকে। মার খেতে খেতে ডাক্তারের অবস্থা শোচনীয়। হয়তো আর কিছুক্ষণ মার খেলেই অক্কা পেয়ে যাবে।

— আর কতো মার খাবে ডাক্তার! এখন তো বলো হীরকে ড্রাগস্ কেনো দিতে তুমি?

— আর কতোবার বলবো আমি শুধু টাকার জন্য দিতাম। আমার নিজের কোনো স্বার্থ নেই।

— টাকার জন্য একটা মানুষের জীবন নষ্ট করতে একটুও দ্বীধা বোধ করলে না। কেমন ডাক্তার আপনি! আপনারা তো মানুষের জীবন বাঁচানোর শপথ নেন। তাহলে কেনো টাকার জন্য আমার হীরের এতো ক্ষতি করলেন!

— আমাকে ক্ষমা করে দিন আমি টাকার লোভে পরে এসব করেছি। আমি এর ফলাফল জানতাম কিন্তু তখন আমার কাছে টাকা টাই সব ছিল।

— আপনাকে কে টাকা দিয়েছে হীরকে ড্রাগস্ দেওয়ার জন্য?

— আমি তাকে চিনি না। তার সাথে ফোনেই কথা হতো সবসময়। আর টাকাগুলো আমার ব্যাংক একাউন্টে পাঠিয়ে দিতো সে।

— আপনি মিথ্যা বলছেন তাই না! জন আরো মারো এই লোকটাকে। আমার হীরের এই অবস্থার জন্য এই লোকটা দায়ী।

— না বিশ্বাস করুন। আমি সত্যি বলছি। আমি লোকটাকে কখনও দেখি নি। তার নাম টাও জানি না আমি। সে শুধু ফোনেই কথা বলতো।

— তার ফোন নাম্বার কোথায় পাবো?

— সে প্রাইভেট নাম্বার থেকে ফোন করতো।

— Damn it! (দেয়ালে ঘুসি মেরে)

চৌধুরী বাড়িতে রিসান আর হীরের সাথে গল্প করছে রায়ান আর রাহি। রায়ানের এই অবস্থা কিভাবে হলো সেটা এখনও হীরের জানা হয় নি। তাই ঘুরিয়ে পেচিয়ে বারবার জিজ্ঞেস করছে আর রায়ান তাকে চুপ করাচ্ছে।
সার্ভেন্ট জুস সার্ভ করার সময় রায়ানের শার্টের উপর খানিকটা জুস পরে যায়। সেটা পরিষ্কার করতে রায়ান ওয়াশরুমের দিকে আগায়। তখনি তাফসি কলেজে থেকে ফিরে হুড়মুরিয়ে ভিতরে ঢুকছিল। রায়ানের সাথে ধাক্কা খেয়ে তাফসি নিচে পরে গিয়ে কোমড়ে ব্যথা পায়।

— আই এম সো সরি পিচ্ছি! আর ইউ ওকে?

— পিচ্ছি! মানে কি আমাকে কি পিচ্ছি মনি হচ্ছে?

— না মানে আসলে,, আমি দুঃখিত। মাফ করবেন আপু।

— আপু!! এই আমি তোমার কোথাকার বোন?

— কি মুশকিল! আচ্ছা আমি সরি বলছি। আপু, পিচ্ছি, দাদি- নানি কিছুই বলবো না।

রায়ান তাসফিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো। তাসফি আর রায়ানের সামনা সামনি কখনও দেখা না হওয়াতে তারা একে অপরকে চিনে না। তাফসি কিছুক্ষণ রায়ানের দিকে তাকিয়ে থেকে তার ঘরে চলে যায়।

এদিকে তুর্য হন্যে হয়ে সেই মাষ্টার মাইন্ডকে খুঁজছে। প্রাইভেট নাম্বার হওয়াতে ফোন নাম্বারের খুঁজ পাওয়া যায় নি। একটা আশার আলো খুঁজে পেয়েছিল তুর্য কিন্তু সেই আলো বেশিক্ষণ রইলো না। চারিদিক অন্ধকার মনে হচ্ছে তুর্যর কাছে। যতোক্ষণ না ঐ লোকটাকে খুঁজে পাচ্ছে ততোক্ষণ হীর সেইফ না।

অনেক চেষ্টা করে ব্যাংক ডিটেইলস এর মাধ্যমে কালপ্রিটটাকে খুঁজে বের করার আশ্বাস পেয়েছে তুর্য। কিন্তু সেটাতেও সময় লাগবে। এতোদিন তুর্যকে আরো সাবধান থাকতে হবে। হীরকে আরো চোখে চোখে রাখতে হবে।

বাসায় গিয়ে রায়ানের সাথে সব কথা আলোচনা করে তুর্য। ডাক্তারকে এখনও আটকে রেখেছে তুর্য। যদিও তার ট্রিটমেন্ট চলছে। রায়ানের সাথে কথা বলছিল তুর্য তখন তার মোবাইলে একটা কল আসে। কলটা কিয়ারা করছে। কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কিয়ারা বললো,

— তুর্য প্লিজ কল টা কাটিস না। আমার কথাটা একবার শুন প্লিজ।

— কেনো ফোন করেছিস?

— তুর্য আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দে। আমি হীরের কাছেও ক্ষমা চেয়ে নেবো।

— কিয়ারা তুই আমার সাথে যাই করিস আমি ভুলে যাবো কিন্তু হীর আমার জীবন। ওকে আমার থেকে আলাদা করতে চেয়েছিস তোকে এতো সহজে কিভাবে ক্ষমা করবো আমি?

— আমার ভুল হয়ে গেছে তুর্য আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দে। আমি ভীষণ অসুস্থ। একা পরে আছি বাসায়। প্লিজ আমাকে তোদের বাসায় নিয়ে যা।

— ঠিক আছে তুই সব গুছিয়ে নে আমি আসছি।

রায়ানের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে তুর্য কিয়ারাকে নিয়ে আসে বাড়িতে।

তুর্য আর কিয়ারাকে একসাথে বাসায় আসতে দেখে আমার বুকটা ছ্যাঁত করে উঠে। কারণ তুর্য কিয়ারার হাত ধরে ওকে ভিতরে নিয়ে আসছেন। না না এসব আমি কি ভাবছি! তুর্য তো সেদিন সব ক্লিয়ার করে দিয়েছেন যে তার কিয়ারার মধ্যে কিছুই নেই। আমি শুধু শুধুই এতো বেশি ভাবছি। তুর্য আমাকে পাশ কাটিয়ে কিয়ারাকে নিয়ে উপরে চলে গেলেন। আমাকে দেখেও দেখলেন না কেনো! আমার তুর্যর উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে। আজকে আসুক একদম কথা বলবো না।

তুর্যর জন্য বেশকিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম কিন্তু সে এখনও কিয়ারার ঘর থেকে ফিরে নি। কেনো যেনো খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। ভীষণ কান্না পাচ্ছে। আমি কাঁদতে চাচ্ছি না কিন্তু তুর্যকে এভাবে অন্যকারো সাথে এতো সময় ধরে সহ্যও করতে পারছি না। চোখ দিয়ে আপনা আপনিই পানি পরছে। অপেক্ষা করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পরেছি কে জানে।

রাত ১ টার পর তুর্য ঘরে ঢুকে দেখে হীর ঘুমিয়ে পরেছে। দুচোখের কার্ণিশ বেয়ে এখনও পানি পরছে হালকা হালকা। হয়তো এতোক্ষণ কেঁদেছে। একটা গভীর নিশ্বাস নিয়ে হীরের কপালে একটা চুমু এঁকে দিলো তুর্য। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে সিগারেটের প্যাকেট টা হাতে নিয়ে ব্যালকোনিতে গিয়ে বসে পরলো। আজ এই সিগারেটগুলো ভীষণ দরকার তার। সিগারেটের ধোয়ার কুন্ডলীগুলো হাওয়ায় উড়িয়ে দিচ্ছে আর অতীতে ডুব দিচ্ছে তুর্য।।







তুর্য লন্ডন যাওয়ার আগে একপ্রকার জোর করেই আকদ্ করে রেখে গিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু হীর ছোট থাকায় তুর্য বেশি কথা বলতে পারতো না। যখন তুর্য ফ্রী থাকতো তখন হীর ঘুমে বা পড়তে থাকতো। আবার হীর যখন ফ্রী থাকতো তুর্য তখন ব্যস্ত থাকতো। দুজনের কথা হতো না, দেখা হতো না কিন্তু তুর্য এক মিনিটের জন্যও তার ছোট্ট বউটাকে ভুলতে পারে নি। তার সবটা জুরে ছিলো শুধু হীর। তুর্য দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম হওয়াতে অনেক মেয়েরা তার জন্য পাগল ছিল। কিন্তু তুর্যর কাছে তার ছোট বেলার ভালোবাসাটাই সব ছিল। যদিও তুর্য হীরকে এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারে নি কিন্তু তার ভয় ছিল হয়তো এতো বছরের দুরুত্ব হীরকে তার কাছে থেকে দূর করে দিয়েছে।

যখন গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে দেশে ফিরে আসে তুর্য, তখন সে কোনো সাধারণ মানুষ নয়। সে তুর্য থেকে রকস্টার তুর্য আহমেদ চৌধুরী হয়ে গেছেন। তুর্য দেশের মাটিতে পা রেখে প্রথমেই হীরদের বাড়িতে যায়। কিন্তু বাড়ির গেইটে বড় একটা তালা ঝুলতে দেখে। আশেপাশের মানুষের কাছে থেকে খুঁজ নিলে সে জানতে পারে যে হীর রা এখান থেকে চলে গেছে প্রায় বছর খানিক হয়েছে। যদিও এটা এখনও তাদের বাড়িই রয়েছে কিন্তু তারা এখানে থাকে না এখন।

তুর্যর মন ভেঙে যায় কথাগুলো শুনে। প্রায় বছর দুয়েক আগে শেষবারের মতো কথা হয়েছে হীরের সাথে তার। তবুও সেই কথা ৫ মিনিটের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কেনো সিরাজ মাহমুদ তার পরিবার নিয়ে ঢাকা ছেড়ে চলে গেলেন সেটা তুর্য জানে না। তবে কি তারা তুর্য আর হীরের বিয়ের সম্পর্ক মানে না? তবে কি হীর তুর্যর জীবন থেকে দূরে সরে গেলো?

কথাগুলো ভাবতেই তুর্যর বুকটা ছ্যাঁত করে উঠে। দুচোখের কার্ণিশ বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে। তুর্য কোনোমতে বাড়ি ফিরে গিয়ে সোজা তার বাবার কাছে চলে যায়। তার বাবার কাছে প্রশ্ন করে কেনো সে তুর্যকে সবকিছু জানায় নি। তুর্যর বাবা তখন তুর্যকে সামলায় যে সব ঠিক আছে। সিরাজ মাহমুদের ঢাকার বিজনেস টা লসে যাচ্ছিল যার জন্য তিনি সেটা বন্ধ করে চট্টগ্রামের বিজনেসটা সচল রাখার জন্য চট্টগ্রামে শিফ্ট করেন। আর তুর্যকে জানানো হয় নি যাতে সে এসব ভেবে নিজের কারিয়ার হ্যাম্পার না করে।

বাবার এই যুক্তি মানতে তুর্যর ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল কিন্তু তার কিছুই করার ছিল না। দেশে ফিরেও সে তার হীরকে একবার দেখতে পারছিল না। কষ্টে যেনো তার কলিজা ছিড়ে যাচ্ছিল। অতঃপর তিনদিন পর তুর্যর পরিবার হীরদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এতোগুলো বছরে তুর্য একবারের জন্যও হীরের ছবি দেখে নি। কিন্তু তার কল্পনার রাজকন্যার ছবি তার মনে আঁকা আছে। সেই ছবি দিয়ে সে তার পরীকে খুঁজে বের করবে।

যদিও তুর্য প্রাপ্ত বয়স্ক কিন্তু হীরের সর্বোচ্চ হলে পনেরো বছর হবে। তুর্য খুব ভালো করেই জানতো হীর ওদের বিয়ের কথা নিশ্চিত ভুলে যাবে এতোদিনে। আবার হীরের মন জয় করতে হবে তার। কিন্তু তাতেও তুর্যর কষ্ট নেই। হীরের জন্য শতবার-শতরূপে নিজেকে প্রমাণ করতে রাজী সে।



তুর্যদের গাড়ী হীরদের বাড়িতে পৌঁছানোর পর থেকে তুর্যর চোখ হীরকে খুঁজছে। কিন্তু কোথাও সে তার কলিজাকে খুঁজে পাচ্ছে না। আশেপাশে সবাই আছে কিন্তু যার জন্য তুর্য বেকুল হয়ে আছে তাকেই সে পাচ্ছে না।

তুর্যরা সবাই সিরাজ মাহমুদের বাড়িতে গেছে প্রায় ১ ঘন্টার উপরে হয়েছে তবুও হীরের দেখা নেই। তুর্যর যেনো আর তর সইছে না। সবাই গল্প করছে কিন্তু তুর্য ছটফট করছে বসে বসে। তখন এক বুড়ো মহিলা তুর্যর কাছে এলো। আর তুর্যকে সাথে নিয়ে গেলো একটু সাহায্য করার জন্য।

একটা ঘরে নিয়ে গেলো বুড়ি তুর্যকে। ঘরটা বেশ সাজানো-গোছানো। তুর্য ঘরে ঢুকতেই বুড়ি দরজা লাগিয়ে দিয়ে তুর্যকে জরিয়ে ধরে। বুড়ির এহেম কাজে তুর্য হতবাক। দু হাত উঁচু করে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সে। যেনো ফ্রিজ হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর হঠাত্ বুড়ির হাসির আওয়াজ শুনে তুর্যর হুশ ফিরলো।

— আরেহ দাদু ছাড়েন আমাকে। কি করছেন?

— এই দাদু কাকে বলছেন হুহ! আমি আপনার বউ।

— অ্যা! কি বলছেন দাদু আমি আপনার বউ থুরি আপনি আমার বউ কিভাবে??

— আরেহ রাম ছাগল আমি দাদু হতে যাবো কেনো? আমি আপনার ছোট বেলার বউ হীর।
হীর নিজের শরীর থেকে বুড়ির শাড়ি আর লাগানো পাঁকা চুলের উইগটা খুলে জোরে জোরে হাসতে লাগলো।

এখন তুর্যর চিনতে আর সমস্যা হচ্ছে না। এই মেয়েই তার হীর। তার ছোট হীর এখন অনেকটা বড় হয়ে গেছে। আগের থেকে আরো বেশি সুন্দর হয়েছে। গালের তিল টা সময়ের সাথে সাথে আরো কুচকুচে কালো হয়েছে।

তুর্য কিছুক্ষণ স্তব্ধ দৃষ্টিতে হীরকে আপাদমস্তক দেখে নিলো। এতোদিন পর হীরকে সামনে তুর্য যেনো বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। আচমকা তুর্য হীরকে বুকে জরিয়ে নিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিলো। হীরও পরম আবেশে তুর্যকে জরিয়ে ধরলো। কিছুক্ষণ এভাবে থেকে তুর্য হীরকে ছেড়ে একটু দূরে সরে দাড়ালো। হীর ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে তুর্যর দিকে।

— আপনি কি মনে করেছিলেন আমি আপনাকে ভুলে গেছি?

— হুম। অনেক বছর হয়ে গেছে আর তুমি তখন ছোট ছিলে তাই ভেবেছিলাম।

— হ্যাঁ সত্যি ভুলে যেতাম এতোদিনে। কিন্তু আমার আর আপনার বাড়ির মানুষ আমাকে ভুলতে দেয় নি।

— মানে?

— প্রতি মুহূর্তে সবাই আমাকে তুর্যর বউ, তুর্যর বউ বলে বলে কানে পোকা ধরিয়ে দেয়। জানেন বাবা আমাকে গার্লস্ স্কুলে ভর্তি করেছেন যাতে অন্য কোনো ছেলের সাথে আমার কথা না হয়।

— I am sorry Heer. আমার জন্য তোমার ভীষণ কষ্ট হয়েছে তাই না।

— আরেহ কষ্ট হবে কেনো? আমি তো আরো এনজয় করি এই জিনিসটা। আপনার প্রতিটা গান আমি শুনি, প্রতিটা কনসার্ট লাইভ না দেখতে পেলেও মিস করি না। প্রতিদিন কথা না হলেও ডায়েরিতে আপনাকে নিয়ে রোজ কিছু লেখা হয়। সামনে না দেখলেও আপনার ছবি টা একবার দেখা হয়।

— তুমি অনেক পেঁকে গেছো হীর।

— কি বললেন আপনি!! আমি পেঁকে গেছি!! আরেহ খচ্চর বেটা তোকে ভালোবেসে ফেলেছি আমি। ১৫+ আমি, ছোট বাচ্চা নই। অনেক কিছুই বুঝি বুঝলেন।

— হুম বুঝলাম।

— এখন আমাকে কিস করেন একটা।

— কিহ! তুমি এসব কোথায় শিখলে?

— টিভিতে দেখেছি। এখন ওতো শতো কথা না বলে কিস করেন তো।

— একদম না। তুমি এখনও ছোট। একটু বড় হও তারপর করবো।

— এমন করেন কেনো আমি তো আপনার বউ, একটা কিসও কি করবেন না?

— না এখন কিছুই না। এখন তুমি পড়া লেখা করো আরেকটু বড় হও তারপর তোমাকে আবারো ধুমধাম করে বিয়ে করে নিজের কাছে নিয়ে যাবো।

হীর হালকা হেসে তুর্যর গালে একটা চুমু বসিয়ে দৌড়ে পালালো।

তুর্যরা হীরদের বাড়িতে কয়েকদিন থেকে ঢাকাতে ফিরে এলো। হীর আর তুর্যর প্রতিদিন কথা হলেও তুর্য পড়ার কথাই বেশি বলতো। ভিডিও কল দিয়ে তুর্য হীরকে দেখতো আর হীর পড়তো। এভাবেই সময় কেটে যাচ্ছিল। তুর্যর মাঝে মাঝেই শহরের বাইরে দেশের বাইরে যেতে হতো।

একদিন হুট করেই চট্টগ্রামে চলে যায় তুর্য হীরকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য। হীরের কলেজের সামনেই দাড়িয়ে ছিল সে। হীর ক্লাস শেষ করে বের হলে হীরের একজন ক্লাসমেট ওকে রাস্তায় প্রপোজ করে। কারণ কলেজে কেউই জানতো না হীর বিবাহিত। সবার সামনে এভাবে হীরকে প্রপোজ করায় তুর্যর মাথায় রক্ত উঠে যায়। ডানে বামে না তাকিয়ে সবার সামনে গিয়ে ছেলেটাকে আচ্ছামতো ধোলাই দেয় সে। তুর্যর মার খেয়ে ছেলেটা কোনোমতে জীবন বাঁচিয়ে পালায়।

সবার সামনে মারামারি করা পর্যন্তু তো তবুও ঠিক ছিল কিন্তু এরপর তুর্য যা করলো তাতে হীরের মুখ লুকিয়ে সেখান থেকে ফিরতে হলো।

রাস্তায় জরো হওয়া সব মানুষের সামনে হীরকে বুকে জরিয়ে নিয়ে তুর্য বললো,
— হীর তুর্য আহমেদ চৌধুরীর বিবাহিতা স্ত্রী। ওর উপর যদি কেউ নজর দেয় সেই চোখ উপরে ফেলার আগে দ্বিতীয়বার ভাববো না আমি। এরপর থেকে সবাই কথাটা মাথায় রাখবেন।

তুর্যর এহেম কান্ডে হীর মাথায় হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। আর বাকিরা সবাই মুখ হা হয়ে দাড়িয়ে আছে। রকস্টার তুর্যর বউ তাদের ক্লাসমেট ভাবা যায়।

তুর্য একটানে হীরকে গাড়িতে বসিয়ে ড্রাইভ শুরু করলো। আর নিয়ে গেলো সোজা কাজী অফিসে। হীর এখনও হা হয়ে আছে। ওর সাথে হচ্ছে টা কি।

— কাজী অফিসে কেনো এলাম আমরা?

— আজ এখনি আবার বিয়ে করবো।

— কিন্তু কেনো?

— তোমাকে আর নিজের কাছে থেকে দূরে রাখতে পারবো না।

— আরেহ কিন্তু এভাবে!!

— আর কোনো কথা নয়। ভালোবাসো না আমায়?

— নিজের থেকেও বেশি।

— বিশ্বাস করো আমাকে?

— বিশ্বাস আছে বলেই সেই ছোট থেকে ভালোবেসে আসছি।

— তাহলে আর কোনো কথা না। আজই হবে বিয়ে।

হীর আর কিছু বললো না। সে তো এমনিতেও তুর্যরই। দ্বিতীয় বার তার ভালোবাসার মানুষটার হয়ে যেতে ক্ষতি কি!

তুর্য ফোন করে হীরের বাবা মা কে এনে তখনই আবারো বিয়ে করে নিলো। হীরের বাবা মা তুর্যর পাগলামি দেখে মুখ টিপে হাসছে। নিজের বউকে আবারো বিয়ে করছে।

সেদিন রাতেই তুর্য হীরকে ঢাকাতে নিয়ে এলো।
নিয়ম অনুযায়ী সেদিন তুর্য আর হীরের বাসররাত ছিল কিন্তু ওদের ফিরে আসতে লেট হয় যার জন্য হীরের বাসর করার স্বপ্ন মাটি হয়ে যায়। চৌধুরী বাড়িতে সবাই তুর্য আর হীরকে একসাথে অবাক হয়ে যায়। কিন্তু হীরকে নিয়ে তুর্যর পাগলামির কথা সবাই জানে তাই তেমন ভাবে কেউ রিয়েক্ট করে না।

পরদিন সকালে তুর্য জানতে পারে তার মিউজিক ভিডিওর জন্য তাকে জরুরী ভিত্তিতে দেশের বাইরে যেতে হবে। যদিও তুর্য রাজী হচ্ছিল না কিন্তু তুর্যর বাবা তাকে রাজী করান যাওয়ার জন্য। তুর্য রাজী হলেও তার মন মানছে না হীরকে এভাবে রেখে যেতে। কিন্তু কিছুই করার নেই।

চলবে..

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ