#সেই_তুমি?
#পর্ব_০৬
#Tabassum_Kotha
রাত ২টা বাজে, আমার চোখে ঘুম নেই। তুর্য ঘুমিয়ে পরেছে, এই অপেক্ষাতেই ছিলাম আমি। এখন আমি ওই ঘরটাতে কে আছে সেটা দেখতে যাবো। যেই ভাবা সেই কাজ, চলে গেলাম ওই ঘরটার সামনে। দরজায় অনেকক্ষণ যাবত ধাক্কা মারছি কিন্তু পাজী দরজাটা খুলছে না। এবার আমার অনেক রাগ উঠছে, শেষবারের মতো জোরে একটা ধাক্কা দিলাম। ধাক্কাটা জোরে থাকায় দরজা টা খুলে গেলো কিন্তু ব্যালেন্স করতে না পেরে এ আমি মেঝেতে পরে গেলাম। উঠে দাড়িয়ে সুইচ বোর্ড খুঁজতে লাগলাম, ভাগ্যক্রমে পেয়েও গেলাম। লাইট জ্বালিয়ে পিছন দিকে ঘুরতেই আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম। পুরো ঘর ভর্তি আমার আর তুর্যর ছবি। আমার ছবিই বেশি, তুর্যর সাথের ছবিও আছে বেশ কয়েকটা। কিন্তু প্রশ্ন হলো আমি তো এই ছবিগুলো কখনই তুলি নি তাহলে এগুলো কিভাবে এলো? আমার ছবিগুলো যদি লুকিয়েও তোলা হয় তাহলে তুর্যর সাথের ছবিগুলো কিভাবে সম্ভব? তুর্যর সাথে কখনই এভাবে ছবি তুলি নি আমি। ছবিগুলোর দিকে আর তাকিয়ে থাকতে পারছি না, মাথায় অনেক ব্যথা করছে। মাথাটা চেপে ধরে আছি। এই ঘরটাও বেশ পরিচিত মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে এই ঘরে অনেকবার এসেছি আমি কিন্তু এই ঘরটাতে আজকেই প্রথম এলাম আমি। ব্যালকোনিতে কারা যেনো দাড়িয়ে আছে। একটা ছেলে আর একটা মেয়ে। জোরে জোরে হাসছে মেয়েটা আর বারবার ঢলে পরছে ছেলেটার বুকে। ওরা আমার দিকে এগিয়ে আসছে! এখন আনেক ভয় করছে আমার, মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে, চোখ দুটো কেমন ঝাপসা হয়ে আসছে।
চোখ খুলতেই দেখি তুর্য আমার পাশে বসে আছে। আমার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে। চারপাশটা তাকিয়ে দেখলাম আমি আমার ঘরেই আছি। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? আমি তো ঐ ঘরটায় ছিলাম। এক লাফে বিছানা থেকে নেমে পরলাম। আমাকে এমন হুড়মুড়িয়ে উঠতে দেখে তুর্যও অনেকটা ঘারড়ে গেছে।
— কি হলো তোমার এইভাবে উঠলে যে?
— আমাকে এই ঘরে কে এনেছে? আমি তো ঐ ঘরটাতে ছিলাম!
— এই ঘরে কে এনেছে মানে? এটা তোমার ঘর তুমি কি ভুলে গেছো? তুমি এই ঘরেই থাকো।
— আমি কিছু ভুলি নি আর এটাও ভুলি নি যে কাল রাতে আমি ঐ পূর্ব দিকের ঘরটাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি এখানে কিভাবে এলাম? আর ঐ ঘরে আমার ছবি কি করে এলো?
— কিসব আবোল-তাবোল বকছো? তুমি এই ঘরেই ঘুমিয়ে ছিলে রাতে আর এখন উঠেছো।
— না আপনি মিথ্যা বলছেন। এ বাড়ির সবাই আমাকে মিথ্যা বলেছে। আপনারা আমার কাছে অনেক কিছু লুকিয়েছেন।
— শান্ত হও হীর। কিছুই লুকাই নি আমরা। তোমার স্ট্রেস হয়েছে আর কিছুই না।
— আমি প্রমাণ করছি। চলেন আমার সাথে!
— হীর স্টপ! দাড়াও হীর।
— না আজকে আমি সব জেনেই ছাড়বো ঐ ঘরটাতে আমার আর আপনার ছবি কোথা থেকে এলো? আপনি আমার এতো কাছে কবে এলেন? আমার সব জানতেই হবে।
— এগুলো তোমার ভ্রম হীর। এগুলো সত্য নয়।
— আপনি দরজা টা খুলুন।
ধাক্কা দিতেই দরজা টা একাই খুলে গেলো কিন্তু ভিতরে ঢুকতেই আমি আরেক দফা আশ্চর্য হলাম। ঘরে আমার একটা ছবিও নেই। যা কয়েকটা আছে তুর্যর একার। আমি পুরো রুম তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম কিন্তু আমার একটা ছবিও পেলাম না। এবার কেমন জানি নিজেকেই পাগল পাগল মনে হচ্ছে। তার মানে কি আমি সবটাই স্বপ্ন দেখছিলাম? নাকি যা দিখেছিলাম সত্যি ছিল? ঐ ছেলেটা আর মেয়েটা? সবটাই কি আমার ভ্রম ছিল? আবারো মাথাটা ভারী ভারী মনে হচ্ছে চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে, মনে হচ্ছে জ্ঞান হারাচ্ছি।
বিছানায় শুয়ে আছে হীর, পাশের তুর্য বসে আছে আর ডাক্তার হীর কে দেখছেন।
— তুর্য! তোমার ছবিগুলো আগেই সরিয়ে নেওয়া উচিত ছিল। হীর ছবিগুলো না দেখলে এমন হাইপার হতো না।
— আসলে ডক্টর আমি ভাবি নি যে হীর রাতে ঐ ঘরে যাবে চেক করার জন্য। ভালোতো মাঝ রাতে আমার ঘুম ভেঙে যায়। হীর কে ঘরে না পেয়ে খুঁজতে খুঁজতে ঐ ঘরে গেলে দেখি হীর অজ্ঞান হয়ে পরে আছে।
— হীর এখন স্বাভাবিক নেই তুর্য তোমার এটা বুঝতে হবে। ওই মেডিসিন গুলো হীরের অনেক ক্ষতি করেছে। এজন্য ওর আর তোমার ছবিগুলো দেখে ও জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।
— আমি আগেই ধারণা করেছিলাম হীরের স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার পিছনে এক্সিডেন্ট না অন্য কোনো কারণ রয়েছে। কিন্তু কেউ এতো নিঁখুত প্ল্যানিং করে আমার হীরকে আমার কাছে থেকে দূরে সরিয়ে দেবে ভাবতে পারি নি।
— ওগুলো মনে করে কষ্ট পেয়ো না। যা হবার হয়ে গেছে। এখন হীর কে সুস্থ করাটাই আসল। যেই ঔষধটা হীর প্রতিদিন নিতো, ওটা আমি পাল্টে এর জায়গায় অন্য ঔষধ দিয়ে দিয়েছি। এই ঔষধটা হীরের স্মৃতি ফিরিয়ে আনবে আর হীরকে স্বাভাবিক করে তুলবে।
— ধন্যবাদ ডক্টর আপনার এই উপকার আমি কখনই ভুলতে পারবো না।
— এটা আমার দায়িত্ব ছিল ইয়াং ম্যান।
হীরকে ঘুমের ঔষধ দেওয়া হয়েছে। তুর্য সেই ঘরটা তে গিয়ে আলমারি থেকে একটা ফটো এলবাম বের করলো। প্রথম ছবিটতে, একটা কিশোর ছেলের কোলে একটা ২ বছরের মেয়ে বসে আছে। ছবিটা দেখেই তুর্য হেসে ফেললো। এলবামটা বিছানায় রেখে দিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে ব্যালকোনিতে গিয়ে দাড়ালো তুর্য। সিগারেটের ধোয়ার সাথে মিশে অতীত স্মৃতিগুলো ভেসে আসছে চোখের সামনে।
।
।
।
তুর্যর বাবা তিয়াস চৌধুরীর একমাত্র বেষ্টফ্রেন্ড সিরাজ মাহমুদের মেয়ে হীর। তুর্যর যখন ৯ বছর বয়স তখন হীরের জন্ম হয়। ছোট্ট হীরকে হাসপাতালে সবার আগে কোলে তুলে নিয়েছিল তুর্য। হীরের নামটাও তুর্যই রেখেছিল। সিরাজ মাহমুদ অনাগত মেয়ের নাম সায়নী রাখতে চেয়েছিলেন কিন্তু তার মেয়ের হবু জামাই নিজের বউর নাম নিজেই রেখে দিয়েছিলেন। এ নিয়ে অবশ্য দুই পরিবারই খুশি ছিল। হাসপাতাল থেকে যেদিন হীরকে বাড়ি নেওয়া হচ্ছিল সেদিন তুর্য জিদ করেছিল তার বউকে সে তার সাথে নিয়ে যাবে। তুর্য তখন ছোট থাকায় বউ বা বিয়ে জিনিসটা বুঝতো না কিন্তু সেই ছোট্ট হীরের মায়ায় পরে গিয়েছিল সে। সেই মায়া সময়ের সাথে সাথে কখন যে ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে কে জানে। হীরের বয়স যখন নয় বছর সে তখন পুতুল খেলে। ভালোবাসা, বিয়ে, স্বামী এসব তার কাছে ভারী ভারী শব্দ মাত্র। কিন্তু তুর্য তখন নিজের কৈশর ফেলে মাত্রই যৌবনে পা রেখেছে। সে সব জানে সব বুঝে ভালোবাসা কি জিনিস। নয় বছরের একটা বাচ্চা মেয়ের জন্য তার মন কাঁদে। হীরকে না দেখে একদিন থাকাও তার কাছে ভীষণ কষ্টের। হীরকে দেখার লোভ সামলাতে না পেরে প্রতিদিন হীরের স্কুলে গিয়ে দাড়িয়ে থাকতো তুর্য। স্কুল ছুটি হলে হীর কে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া, রাতভর হীরের কথা ভাবা যেনো তুর্যর প্রতিদিনকার রুটিনে পরিণত হয়েছিল। ফলস্রুতিতে তুর্যর পড়ালেখা অনেক হ্যাম্পার হচ্ছিল। রেজাল্টও খারাপ হয়। তিয়াস চৌধুরী ভীষণ রাগী মানুষ হওয়াতে তিনি এটা মানতে পারেন নি। সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো তুর্যকে লন্ডন পাঠিয়ে দেওয়া হবে হাইয়ার স্টাডিজের জন্য। বাকি সবাই মানলেও মানতে পারে নি তুর্য আর হীর। হীর ছোট থাকলেও আদর জিনিসটা সেও বুঝতো। তুর্য ওকে অসম্ভব ভালোবাসতো আর আদর করতো। যা চাইতো সব ইচ্ছা তুর্য পূরণ করতো। তুর্য কিছুতেই হীরকে ছেড়ে যেতে রাজী হয় নি। তার ভয় ছিল হয়তো হীর বড় হওয়ার সাথে সাথে তাকে ভুলে যাবে। তুর্যর অনেক আকুতি মিনতি করার পর দুই পরিবারে মিলে ঘরোয়া ভাবে তুর্য আর হীরের আকদ্ করিয়ে রাখলো। যদিও এতো ছোট বয়সের বিয়ের কোনো ভিত্তি নেই কিন্তু তুর্যর কাছে এই কবুল পড়া টা ওর জীবনের সবচেয়ে বড় সত্যি ছিল। আকদ্ এর দিন হীর একটা লাল লেহেঙ্গা আর দুই বেনুনি করে সারা বাড়ি দৌড়েছিল। তুর্য মন থেকে হীরকে বউ বলে মেনে নিলেও হীর কবুল বলেছিল খেলা ভেবে। ২ মাস পর তুর্যর যাওয়ার দিন হীর তুর্যকে জরিয়ে ধরে সে কি কান্না। হীরের কান্না থামানোর জন্য তুর্য হীরকে অনেক গুলো চকোলেট দিয়ে গিয়েছিল আর ওয়াদা করেছিল আসার সময় অনেক চকোলেট আর ব্ল্যাক টেডি বিয়ার নিয়ে আসবে। এয়ারপোর্টের বাইরে দাড়িয়ে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিল তুর্য হীরের দিকে, আর হীর! হীর চকোলেট খেতে খেতে ফর্সা মুখখানা চকোলেট কালার বানিয়ে ফেলেছিল। চলে গেলো তুর্য ভীনদেশে। হয়ে গেলো আলাদা দুজনে।
তিন চারটা সিগারেট প্রায় শেষ তুর্যর। তখনই তাসফির ডাকে অতীত থেকে ফেরে আসে।
— ভাইয়া! ভাবির ঘুম ভেঙে গেছে।
— তুই যা আমি আসছি।
সিগারেটে শেষ টান টা দিয়ে, নিচে ফেলে পা দিয়ে আগুন নিভিয়ে দিলো তুর্য। এখন আবার অভিনয়ের পালা।
ঘুম থেকে উঠে বসতেই তুর্যকে পাশে দেখলাম। তার মানে আমি স্বপ্ন দেখছিলাম। কিন্তু স্বপ্নটা আমার কাছে সত্যি মনে হয়েছিল। তুর্য আমাকে খাবার খাইয়ে দিয়ে ঔষধ হাতে দিলেন।
— এটা কিসের ঔষধ?
— এটা ডাক্তার দিয়েছেশ তোমার শরীর খুব দুর্বল হওয়াতে।
তুর্য কিছুটা বিচলিত হলেন আমার প্রশ্নে। কিন্তু কেনো জানি না তাকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছে। ঔষধটা খেয়ে নিলাম। তুর্য খাবার প্লেট নিচে রাখতে গেলে আমি বিছানা থেকে নেমে ব্যালকোনির দিকে যাচ্ছিলাম। তখন নিচ থেকে চেচাঁমিচির শব্দ আসতে লাগলো। কি হয়েছে জানার জন্য নিচে নামতেই বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো আমার।
রায়ান ভাইয়া দাড়িয়ে আছে আমার সামনে, তুর্যর বডিগার্ড জন তাকে ধরে রেখেছে। হয়তো তুর্যর সাথে কথা কাটাকাটি হচ্ছিল। আমাকে দেখে দুজনেই থেমে গেলো। রায়ান ভাইয়া আমার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার দুচোখ পানিতে টলমল করছে। হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই অশ্রুকণা গুলো নিচে গড়িয়ে পরবে। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে। লজ্জায় মাথা নুইয়ে পরেছে আমার। আমি যে তার অপরাধী। তার সব স্বপ্ন, সব আশা, ভালোবাসা আমি কেড়ে নিয়েছি।
— হীর তুই এটা কিভাবে পারলি? কিভাবে আমার মনটা তুই ভেঙে দিলি? আর কেউ না জানুক তুই তো জানতি আমি তোকে কতোটা ভালোবাসি? তাহলে কেনো করলি আমার সাথে এমনটা? আমার ভালোবাসার কি কোনো মূল্য ছিল না তোর কাছে বল? এতোটাই তুচ্ছ ছিল আমার ভালোবাসা?
— আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ আমি যে নিরুপায় ছিলাম। আমার সামনে আর কোনো পথ খোলা ছিল না।
— কি এমন অসহায়ত্ব ছিল তোর যে তুই আমাকে ছেড়ে এই লোকটাকে বিয়ে করেছিস?
রায়ান ভাইয়াকে কি তবে মামি কিছুই বলে নি? মামা মামির জীবন বাঁচাতেই তো আমি বিয়েটা করলাম। তখনই মনে পরে গেলো আমার, ভিডিও কলে মামি রাহি সবাই অবচেতন অবস্থায় ছিল। তার মানে তারা কেউই জানে না বিয়েটা আমি উপায়হীন হয়ে করেছি? তুর্যর প্রতি আমার ঘৃণা যেনো আরো বেরে গেলো আজকের পর থেকে। আমার সবগুলো আপন মানুষের কাছে আমাকে চিরদিনের জন্য অপরাধী বানিয়ে দিয়েছে এই লোকটা। সবাই আমাকে ঘৃণা করে। কিন্তু রায়ান ভাইয়ার চোখে নিজের জন্য ঘৃণা দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। এই মানুষটার চোখে আগে আমার জন্য ভালোবাসা ছিল। আমার জীবন এভাবে পাল্টে যাবে আমি কখনও ভাবি নি। রায়ান ভাইয়া আরো কিছু বলতে চাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই তুর্য তাকে থামিয়ে দিলো।
— লুক রায়ান তোমার সাথে ঝগড়া করতে চাই না কিন্তু আমার ওয়াইফ কে নিয়ে এসব কথা বললে আমি সহ্য করতে পারবো না। হীর আমার বউ ওকে ভালোবাসার অধিকার একমাত্র আমার। সেই অধিকারের ভাগ তো দূরে থাক ছিঁটেফোঁটাও আমি কাউকে দিতে প্রস্তুত নই। সো নেক্সট্ টাইম থেকে একটু সাবধান। হীরের রিলেটিভ হিসেবে এই বাড়িতে আসবা এন্ড ইউ আর মোষ্ট ওয়েলকাম। কিন্তু হীরের লাভার হয়ে আসতে চাইলে আই ওন্ট টলারেট। নাও ইউ ক্যান গো।
রায়ান ভাইয়া কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলেন। আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে বেরিয়ে গেলেন। আমি সেভাবেই দাড়িয়ে রইলাম কিছুই করার নেই আমার। নিজেকে নিজের কাছেই নিকৃষ্ট মনে হচ্ছে।
বিকেলে বাসার সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে, আমিও বসে আছি। তবে শুধুই বসে আছি তারা কথা বলছে আমি শুনছি। রিসান আর বাবা অফিসের কাজ করছে আর তুর্য ল্যাপটপে মুখ গুজে কি যেনো করছে। তখনই একটা মেয়ে ঝড়ের বেগে এসে তুর্যকে জরিয়ে ধরলো। ঘটনার আকস্মিকতায় সবারই মুখ হা হয়ে গেছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে আশ্চর্য হয়েছে প্রচুর কিন্তু সবার থেকে আমি বেশি আশ্চর্য হয়েছি। কে এই মেয়েটা যে অন্য একজনের স্বামীকে আষ্টে-পৃষ্ঠে জরিয়ে ধরে আছে? মেয়েটার উপর কেনো জানি না প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। জরিয়ে ধরেছে তো ধরেছেই ছাড়ার নাম নেই। পরপুরুষের সাথে এতো চিপকানোর কি দরকার যত্তসব। জানে তুর্যর বউ আছে তারপরেও এমনভাবে ধরে রেখেছে। মেয়েটা তুর্যকে ছেড়ে দাড়াতেই ফুপি আম্মু এসে মেয়েটাকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলো। ফুপি আম্মু সরে যাওয়ার পর একে একে সবাই মেয়েটাকে জরিয়ে ধরতে লাগলো। আর আমি হ্যাবলা কান্তের মতো দূরে দাড়িয়ে সবটা দেখছি। তবে দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটা এদের রিলেটিভ হবে। সবার সাক্ষাত পর্ব শেষ হলে ফুপি আম্মু মেয়েটাকে আমার সামনে নিয়ে এলো।
— হীর! ওর নাম কিয়ারা। আমার মেয়ে। আজকেই লন্ডন থেকে ফিরলো।
এতোক্ষণে বুঝতে পারলাম কাহিনী। মেয়েটা তুর্যর বোন। আর আমি কি না কি কি ভাবছিলাম।
— কেমন আছো হীর?
— আমি ভালো আছি আপু। তোমার কি খবর?
— আর খবর! তুর্য একা একা বিয়ে করে নিলো আমাকে একবার বললোও না। ভালো কিভাবে থাকি বলো?
আমার কিছু বলার আগেই তুর্য বলে উঠলো,
— হীর তোর ভাবি হয় কিয়ারা। ওর নাম ধরে বলছিস কেনো?
— হীর আমার বয়সে অনেক ছোট তাই ওর নাম ধরে ডেকেছি।
— কিন্তু আমি তোর বড়। তাই আমার বউকে ভাবি বলে ডাকবি।
— হুহ হীর ভাবি এখন ঠিক আছে?
— হুম।
তুর্য ঘরে চলে গেলো। কিয়ারা তুর্যর যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আর আমি কিয়ারার দিকে। কেনো যেনো ওর তাকিয়ে থাকাটা আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।