#সূর্যস্নান
#পর্ব_০৫
#Nishat_Tasnim_Nishi
মায়ের কথা শেষ হতেই বাবা বললেন,,”ওই ছেলে আমার মেয়ের জামাই হবে না,বুঝেছো?”
বাবার আকস্মিক কথা শুনে আমি আর মা দুজনেই বিষ্ময় নিয়ে উনার দিকে তাকালাম।মা আর আমি দুজনেই বারবার বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম যে কেনো এ কথা বলেছে,কিন্তু বাবা এ প্রশ্ন টা সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেলেন,শুধু এ কথাই বললেন ওর থেকে ভালো ছেলের সাথে আমার মেয়ের দিবো। শেষ বাবা কথা শেষ করেই চলে গেলেন,আমি আর মা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম কিন্তুু কোনো উত্তর খুজে পেলাম না। মা কিছু না বুঝলে আমি আন্দাজ করতে পেরেছি যে আয়ান ভাইয়া নিশ্চই কিছু করেছে, যার কারনে বাবা এমন বলেছে। একবার ভাবলাম আয়ান ভাইয়াকে গিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে আসবো পরে ভাবলাম না উনার মনে আমার প্রতি আর কোনো ফিলিংস তৈরী করতে চাই না,আমি আর উনার সামনে যাবো না। মনে মনে ভাবলাম,আমি খুব স্বার্থপর,!আবার পরক্ষণেই ভাবলাম ভালোবাসার জন্য স্বার্থপর না হলে পাওয়া যায় না। দুপুরের কিছুক্ষন আগে নিদ্রদের ঘরে যাই,সদর দরজা টা খোলাই ছিলো।আমি সোজা ঢুকতেই দেখলাম নিদ্র সোফায় বসে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে হাসিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।আমি কৌতুহল নিয়ে চুপিচুপি গিয়ে উনার পিছনে দাড়ালাম। উনার ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে এবার আমি হেসে দিলাম। উনি ফানি ভিডিও দেখতেছেন। হঠাৎ আমার হাসির আওয়াজ পেয়ে উনি আমার দিকে তাকালেন।
—“তুমি এখানে?”
আমি আয়েশ করে সোফায় বসে বললাম,,
—“তো,কোনখানে থাকবো?”
উনি বিরক্তি নেয় উঠে যেতে নিলেই আমি হাত টান দিয়ে বসিয়ে দিলাম।উনি রেগে আমাকে কিছু বলতে নিচ্ছিলেন তার আগেই আমি আন্টি ভাবি বলে সবাইকে ডাকতে লাগলাম।
—“কী করছো?সবাইকে কেনো ডাকছো?”
উনার কথার মধ্যেই সবাই যে যার রুম থেকে বের হয়ে আসলেন। সবাই কেমন করে যেনো আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমিও সোজা গিয়ে আন্টিকে জড়িয়ে ধরে বললাম,,”আন্টি,আমি আপনার পুত্র বধূ হতে চাই। আপনি আজকেই আমার বাবার কাছে প্রস্তাব নিয়ে যাবেন। বুঝেছেন?”
কথাগুলো শুনতেই সবাই চোখ বড়বড় করে আমার দিকে তাকালো। আমি জানি এ মুহূর্তে সবাই হয়তো ভাবছে আমি পাগল হয়ে গিয়েছি। পাশ থেকেই নিদ্র বলে উঠলো,”তুমি কী পাগল হয়ে গিয়েছো?ছিঃ তোমার কী একটু লজ্জা করছে না এভাবে নিজের বিয়ের কথা বলতে..!!”
আমি দাত বের করে হেসে বললাম,,”আপনাকে ভালোবাসার পর সব লজ্জা বেচে দিয়েছি।” এ কথা শুনে ভাবী আর নিদ্রের বাবা হেসে দিলেন,বাকিরা কোনো আওয়াজ করলেন না উনারা হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আমার সরাসরি কথা শুনে আন্টি বললেন,,”এসব কী বলছো নূপুর,তোমার পরশু বিয়ে ঠিক হ,,”
—“আজকে সে বিয়ে ভেঙ্গেও গিয়েছে।”
তখন সবাই একসাথে বললো,,”মানে?”
—“মানে হলো,আমি আপনার ছেলেকে ভালোবাসি আপনার ছেলেও আমাকে ভালোবাসে। মাঝখানে কাবাবের হাড্ডি হিসেবে আয়ান ভাইয়া চলে এসেছিলো।”
—“কী বলতেছো আগা-মাথা কিছুই বুঝতেছি না।”
–“আগে সবাই বসুন আমি বলতেছি..!!”এরপর আমি উনাদের পুরো কাহিনী বর্নণা করলাম। নিদ্র তো মাথায় হাত দিয়ে বললেন,,”ও মাই গড ওটা প্ল্যান ছিলো।” আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললাম। উনাদের ফ্যামিলির কেউ রাজি হচ্ছেন না,আমি বারবার বলেও কোনো ফল দেখলাম না। উল্টো সবাই মিলে আমাকে বুঝাতে লাগলেন, এবার আমি কান্না করে দিলাম। আমার কান্না দেখে আন্টির মন গলে গেলো, উনি বললেন,,”আমি নিজে তোর বাবার কাছে যাবো।” আন্টির কথার বাধ সাজলেন নিদ্র।উনি দপাদপ পা ফেলে রুমে চলে গেলেন,যেতে যেতে বললেন, উনি কিছুতেই আমাকে বিয়ে করবে না। আমিও নাছড়বান্দা, উনার পিছুপিছু উনার রুমে চলে গেলাম। উনাকে গিয়ে অনেক বুঝালাম,উনি শুধু একটা কথাই বললেন,,আমি নাকি পস্তাবো। শেষমেষ উপায়ন্তর না দেখে বললাম,” লাস্টবার জিজ্ঞেস করলাম,আপনার উত্তর যদি না হয় তাহলে আমি আমার লাইফের লাস্ট দিন করে দিবো।” উনি বিষয়টা সিরিয়াসলি নেন নি , হালকাভাবে নিয়ে বললেন,,”যা ইচ্ছা করো।” আমার ভেতর জেদ চেপে বসলো ঠুস করে উনার টেবিলে রাখা ছুরি টা নিয়ে হাতের উপর এক টান বসিয়ে দিলাম,সাথে সাথে সেখান থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়লো। উনি আতকে উঠে আমার হাত থেকে ছুরি সরিয়ে নিলেন,আমি তাকাতেই ঠাস করে গালে থাপ্পর বসিয়ে দিলেন। আমি গালে হাত দিয়ে ছলছল নয়নে তাকাতেই বললেন,,”একদম ন্যাকামি করবি না। বেয়াদপ,জুতার বারি দিয়ে শিক্ষা দিতে মন চাইতেছে। তুই কি নিজেরে কী বিশ্বপ্রেমিক মনে করোস,যে হাত পা কাটা দেখলে আমি পাগল প্রেমিকের মতো পাগলামি করুম।”
আমি ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকালাম,উনি দ্রুত ড্রয়ার থেকে ফাস্টএইড বক্স বের করলেন। ব্যান্ডেজ করার পর আমাকে নরম গলায় বললেন,,”মানুষ যাহা চায় তাহা পায় না,যাহা পায় তাহা চায় না। কেউ বাচতে চায়, কেউ বাচতে চায় না।অথচ যে যেটা চাইছে সে সেটা পারছে না। যখন বুঝবি তোর সময় নেই, তুই আর বাঁচতে পারবি না তখন মনের ভেতরের বেঁচে থাকার আকুলতা অনুভব করিস। জীবন টা কী ছেলেখেলা?যে যখন যা ইচ্ছা তাই করবি,তোর কাছে তোর ইচ্ছে-আবদারই বড় হয়ে গেলো আর বাকিরা কিছুই না। ভালোবাসা কাউকে মরতে দেয় না,ভালোবাসলে মানুষ বাঁচতে শিখে। ভালোবাসার মানুষ পাশে না থাকলে কেউ মরতে শিখে না বরং ভালোবাসার মানুষের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে শিখে।আমি কি আদৌ তোর ভালেবাসা নাকি জেদ?”
আমি মাথা নিচু করে রইলাম,জবাব দিলাম না। শেষ কথাটা শুনে বললাম,,”আপনি আমার ভালোবাসা,জেদ নয়।”
–“আমি কীভাবে সেটা মানবো?”
—“কী করলে মানবেন?”
উনি জবাব দিলেন না,বক্স টা নিয়ে ড্রয়ারে রাখতে গেলেন। আমি আবারো জিজ্ঞেস করতেই বললেন,,”আজকে যেটা করেছো আর কখনও সেটা করার সাহস দেখিও না।”
আমি চুপ করে রইলাম। উনি এসে আমার হাত মুঠোয় নিয়ে বললেন,,”প্রমিস কর, তুই কোনোদিন আর এমন করবি না,আমি যদি নাও থাকি তাহলেও এ কাজ টা করবি না।পরিস্থিতি মেনে নিবি।”
—“আমি আপনাকে ছুয়ে প্রমিস করবো,সবকিছু ছুয়ে প্রমিস করবো যদি আপনি আমায় বিয়ে করতে রাজি থাকেন।”
উনি চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিলেন,নিজের মনে মনে হিসেব মিলিয়ে আমাকে বললেন,,
—“হুম।”
—“হুম কী সুন্দর করে বলেন!”
—“যাই হোক, তুই কথা দিয়েছিস। কখনও আবার প্রমিস ভুলে যাস না।”
আমি সম্মতি দিয়ে বললাম,,”কখনো না।”
আমার কথা শেষ হতেই উনি মাথায় হাত দিয়ে বললেন,,
—“আমার ভীষণ মাথা ব্যাথ্যা করছে,তুই প্লিজ এখন যা।”
—“২৪ ঘন্টা মাথায় টুপি দিয়ে রাখলে ব্যাথা করবে না তো কী করবে?এতটাও তো শীত পড়ছে না তাহলে সবসময় এই টুপি টা দিয়ে কান, মাথা ঢেকে রাখেন কেনো?”
—“এখন যা প্লিজ..!!”
—“না,আমি আপনার সিল্কি চুল দেখবো, লাস্ট কবে দেখেছিলাম মনেই নেই।”
উনি না না বলে মাথায় হাত দিলেন। আমি অবাক হয়ে গেলাম। উনি কোনোরকম অস্ফুটসুরে উনার মা কে ডাকলেন,আন্টি আসতেই উনি ইশারায় আমাকে বের করে দিতে বললেন। আন্টি আমাকে বললেন,,”নিদ্রর সাথেই তোমার বিয়ে দিবো,প্লিজ তুমি এখন চলে যাও। ” আমি অবাক হয়ে বের হয়ে আসলাম। কাহিনী কী, কিছুই বুঝলাম না।
পরের দিন রুমে থেকে বের হচ্ছিলাম তখন দেখলাম,, বাবা মাকে ডেকে নিয়ে বললেন যে নিদ্রর পরিবার থেকে আমার বিয়ের প্রস্তাব এসেছে একমাস পর উনারা বিয়ে করাতে চায়। আমি না করে দিয়েছি, কারন আমি জানি আমার মেয়ের মনের অবস্থা কেমন,কালকেই বিয়ে ভেঙ্গেছে আর আজকেই আমি আরেক জায়গায় বিয়ে ঠিক করবো, মেয়েটার কেমন লাগবে ভাবতে পারো? আমার মাও তাল মিলিয়ে বললেন,,”হ্যা,ঠিক বলেছো।পরে বলবে ও আমাদের বোঝা হয়ে গিয়েছে।”
উনাদের কথোপকথন শুনে আমি থ বনে গেলাম। কী হলো? এখন উনাদের কীভবাে বুঝাবো যে আমি নিদ্রকে বিয়ে করতে চাই। ছিঃ শরমের ও তো একটা ব্যাপার আছে। দুপুরে খাবার টেবিলে একসাথে খাবার খাচ্ছিলাম সবাই,তখন হুট করে মা বললো,,
—“নিদ্রকে তোর কেমন লাগে?”
আমি কিছু বলবো তার আগেই বাবা বললেন,,
—“আহা,দোলনের মা আমি বারন করেছি না। ”
মা কিছু মনে পড়ার ভঙ্গিতে বললেন,,”ওহ,”
আমি তখন তাড়াহুড়ো করে বললাম,,
—“আমাদের উপরতলার নিদ্রের কথা বলছো,,আমার না উনাকে বেশ লাগে।”
মা তাকাতেই আমি লজ্জা পাওয়ার ভান করে উঠে আসলাম, যাতে বুঝে লজ্জা পেয়েছি।কিন্তুু হলো উল্টো বাবা মাকে ধমক দিয়ে বললো,,
—“দিলে তো মেয়েটার মুড নষ্ট করে। রেগে হয়তো চলে গেছে..!!”
এবার আমার রাগ লাগলো,রেগে চেঁচিয়ে বললাম,,
—“আমার নিদ্রকে পছন্দ।”
বাবা আমাকে শান্ত করার ভঙ্গিতে বললেন,,
—” রেগে যেও না, মা। তোমার মা আসলে এমনিতেই বলেছে।”
আমি অসহায় দৃষ্টিতে উনাদের দিকে তাকালাম।
.
চলবে?