সূচনাতে প্রেম পর্ব-০১

0
678

#সূচনাতে_প্রেম
#নুসাইবা_রেহমান_আদর
#সূচনা_পর্ব

থম মেরে বসে আছে সানা। তার পাশেই তার ভাবি মুচকি মুচকি হাসছে। ভাবির এই হাসি দেখে সানার মনের ভিতর রাগ বেড়ে উঠছে।

~বখাটে ছেলেদের মতো এইরকম হাসি কেনো দিচ্ছো আমাকে দেখে?

সানার কথায় এবার সুমাইয়া হাসি থামিয়ে ফেলে।অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করে….

~ আমার হাসি তোমার বখাটেদের মতো লাগলো সানা?

~ তা নয়তো কি হ্যাঁ? এইভাবে হাসছো কেন?

সুমাইয়া জানে সানা রেগে আছে। রাগবেই না কেন? আজ যে সানার স্বামী আসবে এই বাসায়।এই নিয়ে সে সানাকে খোচাচ্ছে।

~যখন তোমার স্বামী তোমকে দেখে হাসবে তখন ঠিকি ভাল্লাগবে তাই না?রেডি হও রেডি হও স্বামী সোহাগে ভাসার জন্য রেডি হও।

কথাটি শেষ করেই জোরে হাসা ধরলো সুমাইয়া। এইবার খুব লজ্জা লাগলো সানার৷

~নিজের বড় ভাইকে নিয়ে এসব বলতে লজ্জা লাগছে না ভাবি? ছিহ কি অশ্লীল তুমি!

~ লজ্জা তখনি লাগতো যখন ভাইজান আমার সামনে থাকতো। এখন যেহেতু ভাইজান নাই সেহেতু আমি বলতেই পারি।

সানা আর কি বলবে সে যাই বলুক না কেন আজ তার ভাবী তাকে শরম দিতেই থাকবে। তাই সে ওখান থেকে উঠে গোসল করতে চলে গেল। সানার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সুমাইয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মেয়েটা আগে কত চঞ্চল ছিল এখন এত শান্ত দেখে ভালো লাগছে না তার । হয়তো বাবা-মা ভাই কে ছেড়ে চলে যাবে এই কারণে এতটা শান্ত এখন। সেও রুম থেকে বাহির হয়ে চলে যাওয়ার আগে সানাকে জোরে ডাক দিয়ে বলে গেল।

~আমি খাটের উপর শাড়ি রেখে চলে যাচ্ছি,রেডি থেকো কিন্তু।

গত পরশু সানার বিয়ে হয়ে গেল, বিয়েটা ছিল সম্পূর্ণই অনাকাঙ্ক্ষিত তার কাছে। বাবা যে তাকে হঠাৎ বিয়ে দিয়ে দিবে এই ভাবনা তার মাথায় আসেনি। বিয়েটা এমন এক লোকের হলো সাথে যাকে নিয়ে কোন চিন্তা ভাবনা মাথায় আসেনি।লোকটা কেমন যেন গুরু গম্ভীর প্রকৃতির
যার মুখ দিয়ে কখনো কথা বের হতো না। এমন চুপচাপ প্রকৃতির লোকজন সানার কোন কালেই পছন্দ ছিল না। তবুও আল্লাহ কেনো যে একে তার কপালে স্বামী হিসেবে রেখেছিলো উনিই ভালো জানেন।

গোসল সেরে এসে তার ভাবির রেখে যাওয়া হাল্কা গোলাপি রঙ্গের শাড়িটি পরে নিলো। আর যাইহোক বড় বোনের মতো ভালোবাসা দেওয়া মানুষটির কথা সে ফেলতে পারেবেনা। সানা রেডি হয়ে চলে গেলো তার বাবার রুমে। সাদিক সাহেব বসে বসে ম্যাগাজিন পড়ছিলেন। দরজায় টোকা পরতেই চোখ থেকে চশমা খুলে টি-টেবিলে রেখে, বলেন।

~ ভিতরে আসো, বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকলে হবে?

বাবার কথায় হাসে সানা। বাবা কিভাবে যেনো বুঝে যায় সে এসেছে। বরাবরের মত আবার জিজ্ঞেস করে সানা তার বাবকে।

~ আপনি কিভাবে বুঝলেন বাবা আমি এসেছি?

~ আমি বুঝে যাই যে আমার আম্মাজান এসেছেন। কারন বড় আম্মাজান তো একটু আগে এসে আমাকে চা দিয়ে গেছে। তাহলে এখন তো আমার ছোট আম্মাজান ই আসবে।

বড় আম্মাজান বলতে বাবা যে ভাবিকে বুঝিয়েছেন তা সে বুঝতে পেরেছে। ভাবিকে বাবা নিজের সন্তানের মতো স্নেহ করেন এইটা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারে সানা। সে আল্লাহ এর কাছে সবসময় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এতো ভালো পরিবারে তাকে পাঠানোর জন্য।

~বাবা এই সময় চা খেলেন যে,খাবার খাবেননা?

~ আমি খেয়ে নিয়েছি আম্মাজান।তোমার ভাবি আমাকে খাইয়ে দিয়ে গেছে একটু আগে। মা শা আল্লাহ আমার আম্মাজান কে অনেক সুন্দর লাগছে।

বাবার কথায় সানা লজ্জা পেয়ে যায়। লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলে।

~ আজ যে আপনি দুপুরে আমাকে ছাড়াই খেয়ে নিলেন বাবা?

প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে সাদিক সাহেবের দিকে তাকিয়ে আছে সানা। অবাক হয়েছে সে কারন আজ তার বাবা তাকে ছেড়ে এই প্রথম খাবার খেলো।

~ আজ তো সাফোয়ান বাবা আসবে,বললো তোমাকে নিয়ে বাহিরে খেতে যাবে। এইজন্য আর ডাকি নি। ছেলেটা আমাকে ফোন দিয়ে পারমিশন চাইলো যে তোমাকে নিয়ে সে বাহিরে যেতে চায় তাই আর না করলাম না।

সাফোয়ান যে তার বাবার কাছে এভাবে পারমিশন চাইবে বাহিরে যাওয়ার জন্য তা কারো ভাবনায় আসবে না। যেই লোক সালাম দেওয়া আর কেমন আছেন এইটাইপ কথা ব্যাতিত মুখ দিয়ে আর একটা শব্দ ও ব্যাবহার করে না সে আজ কিভাবে পারমিশন চাইলো। আশ্চর্যজনক ব্যাপার স্যাপার ঘটে যাচ্ছে। বাবার সামনে তো আর কিছু বলতে পারবেনা সে তাই বাবার থেকে বিদায় নিয়ে ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসলো। ৩ টা বাজে এদিকে খুদায় সানার পেটে ইদুর লাফাচ্ছে। এই মেয়ে না খেয়ে একদম থাকতে পারে না। টাইম মতো তাকে খেতেই হবে। হাক ছেড়ে ভাবিকে ডাকা ধরলো।

~ ভাবি ও ভাবি কোথায় তুমি?

সানার ডাক শুনে ওর বড় ভাই চলে আসে। জহির বোনের ডাকে দেড়ি করেনি আর চলে আসতে।

~ কি হয়েছে এভাবে ডাকছিস? কিছু লাগবে তোর?

~ না ভাইয়া! আসলে আমার অনেক খুদা লেগেছে তাই ভাবিকে ডাকছিলাম। ভাবি কোথায়?

~ ওহ! তোর ভাবি তো গোসলে গেলো। আচ্ছা থাক তুই বস আমি আজ তোকে খাবার দেই।

ভাইয়ের কথায় অপ্রস্তত হয়ে যায় সানা। তার ভাইয়া হয়তো জানেনা আজ তার বাহিরে যাওয়ার কথা তাইতো কি অবলিলায় খাবার বেরে দিতে চাচ্ছে। তার নিজের বলতে কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে। তাই কথা ঘুরিয়ে বলে,

~ থাক ভাইয়া। ভাবি আসুক তো, আপনিও নিশ্চিত খান নাই? ভাবি আসলে খাইয়েন।

কলিংবেলের আওয়াযে বুঝে যায় সানা যে কে এসেছে।সানা চুপ চাপ বসে থাকলো, জহির দরজা খুলে মানুষ টি কে নিয়ে ভিতরে আসলো। যতোই হোক তার স্ত্রীর বড় ভাই আবার একমাত্র বোনের স্বামী। জহির বিব্রত হলো এটা ভাবতেই বোনের স্বামী।

~ আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন?

সাফোয়ান সালাম দিলো জহির কে। জহির সালাম শুনে নিজের সব ভাবনা ফেলে দিয়ে সালামের উত্তর দিলো।

~ ওয়ালাইকুমুস সালাম। ফ্যানের নিচে গিয়ে বসো ঘেমে কি নাজেহাল অবস্থা তোমার।

~ না সমস্যা নাই ভাইয়া! আপনি এতো ব্যাস্ত হবেন না আমি বসছি।

সাফোয়ান জহির কে ভাইয়া বলার কারন সানা। সানার বড় ভাই সে সম্পর্কেও বড়।

সানা দ্রুত সোফা ছেড়ে উঠে দাড়ালো। ফ্রিজের কাছে গিয়ে ঠান্ডা পানি বের করে নিয়ে লেবু দিয়ে শরবত বানালো। ফিরে এসে দেখতে পেলো সেখানে তার ভাই নাই। সাফোয়ান একা বসে খুব মনোযোগ দিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে কি যেনো দেখে যাচ্ছে। সানা এবার শরবতের গ্লাস টা হাতে নিয়েই দাঁড়িয়ে থাকলো। দিবে কি না এই ভাবনা চিন্তায়।সানার ভাবনার মাঝেই সাফোয়ানের কথা কানে আসলো।

~ এইভাবে হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে না থেকে গ্লাস টা যদি আমাকে দিতেন খুব উপকৃত হতাম।

সানা নিজের বোকামি তে লজ্জা পেলো। বোকাবোকা চাহনী দিয়ে কাপকাপা হাতে শরবতের গ্লাস টি সাফোয়ানের কাছে দিলো। সাফোয়ান শরবত খাচ্ছে আর ফোন চাপছে। নিরব সাফোয়ান কে দেখে আবারো সানার মন খারাপ হয়ে গেলো। লোকটি তার দিকে তাকালো না,বসতেও বললো না। এইদিকে সাফোয়ান কে একা ড্রয়িংরুমে রেখে নিজের রুমেও যেতে পারছে না। ব্যাপার টা দৃষ্টিকটু লাগে তাই। দাঁড়িয়ে থাকতেও সানার একদম ভালো লাগছে না।

সুমাইয়া রুম থেকে বেরিয়ে এসে সোজা ভাইয়ের সামনে চলে গেলো।বোন কে এভাবে এগিয়ে আসতে দেখে সাফোয়ান বললো।

~ সাইফ কে পাঠিয়েছি তোর চকলেট আনতে, বাকি জিনিশ নিয়ে চলে আসবে সে।

~ তুমি কিভাবে বুঝলে আমি এখন কি বলবো?

~ ভাইরা আসছে তাদের জন্য গিয়ে খাবারের ব্যাবস্থা করো।

জহির বউয়ের ব্যাবহারে বিরক্ত। ভাইদের সামনে গেলে নিতান্তই বাচ্চা হয়ে যায়। অথচ এমনি টাইমে কি ম্যাচুরিটি দেখায়।

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে