#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#সিজন_২
#পর্ব_১৪(শেষ)
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara
আবির অনিমা আর আদিবকে দেখছে৷ তার মেয়ে হয়েছে তার মতো আর ছেলে একেবারে মায়ের মতো৷ সব সময় রাগ যেনো নাকের ডগায় থাকে৷ আজ বাবা আর ছেলে সেম ড্রেস পড়েছে৷ সাদা শার্ট কালো জিন্স চোখে আবার সানগ্লাসও আছে৷ ব্র্যান্ডের ঘড়ি৷ সব মিলিয়ে একেবারে পারফেক্ট৷ আবিরের দুই হাতে দুইজন এসে ধরলো৷
অনিমাঃচলো পাপা!!
.
হুম৷
.
আবির অনিমা আর আদিবকে নিয়ে বেড়িয়ে পরলো৷
আবির ড্রাইভিং করছে আর ছেলে মেয়ের কথার এটা সেটার উত্তর দিচ্ছে৷
অাদিবঃআচ্ছা পাপা আমরা কোথায় যাচ্ছি?
.
তোমার মাকে যেখানে বেস্ট ফ্যাশন ডিজাইনারের এ্যাওয়ার্ড হবে সেখানে৷
.
অনিমাঃওহ মাকে দিবে তোমাকে দিবেনা৷
.
না মামনী৷ তোমার পাপার ওতো অনেকগুলো এ্যাওয়ার্ড আছে৷
.
অনিতাঃওহ আচ্ছা৷ আরেকটা কথা বলি?
.
সব পরে বলবে৷ আগে পাপাকে ড্রাইভিং করতে দাও সোনা৷ তোমার মাম্মামের কাছে পৌঁছাতে হবে তো৷
.
“ওকে পাপা(মুখে আঙুল দিয়ে)
.
অনিতা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,,,
“পাপা আমার মুখে চুলকাচ্ছে৷
আবির কথাটা শুনা মাত্রই কার থামিয়ে দিলো৷
“কী হয়েছে সোনা৷ মুখে চুলকাচ্ছে কেনো তোমার?
.
ওই যে কথা বলছিনা সেইজন্যে৷
.
আবির মেয়ের কথা শুনে নিজের কপালেই নিজে বারি দিলো৷
🍁
স্টেজে এনাউস হচ্ছে,,,,
আমাদের শহরে অনেক ফ্যাশন ডিজাইনাররা আছেন৷ কিন্তু এ বছরের সবচাইতে জনপ্রিয় ফ্যাশন ডিজাইনার যিনি যার প্রত্যেকটা ফ্যাশনই মানুষের মন ছোঁয়ে যায়৷ দেশের পাশাপাশি বিদেশেও তার পোষাকের চাহিদা আছে৷একটা টেক্সটাইল কোম্পানির সামান্য একজন স্টাফ ছিলেন উনি৷ এক বছর সেখানে কাজ করে নিজেই স্বামীর নামে টেক্সটাইল খুলে ফেললেন৷ আর খুব তারাতাড়ি শো রুমও ওপেন করলেন৷ উনার প্রতিটি ড্রেসের কাজ একেবারে মোহনীয়,নিখুঁত ভাবে তৈরি৷ শহরে উনার ড্রেসের চাহিদা বেড়েই চলছে৷ সবার মনেই প্রশ্ন জাগছে যে কে উনি তাইতো৷ তাহলে আর আপনাদের অপেক্ষা করাবোনা৷ মিসেস অনিতা রায়হান চোধুরী অনু আপনাকে স্টেজে আসার জন্য অনুরোধ করা হলো৷
অনু স্টেজের পিছনের পর্দা টেলে স্টেজে উপস্থিত হলো৷ সেখানে ওকে বেস্ট ফ্যাশন ডিজাইনারের এ্যাওয়ার্ড দেওয়া হচ্ছে৷ স্টেজের উপর থেকে গোলাপের পাপড়ি পড়ছে৷ পরনে একটা দামী ডিজাইন করা ড্রেস অনুকে এই মুহুর্তে আবিরের কাছে খুব মোহনীয় লাগছে৷ আবির ওর চারিপাশে তাকিয়ে দেখলো একবার৷ ছেলে মেয়ে সবাই অনুর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷
আদিবঃপাপা আমার মাম্মাম কতো সুন্দর তাই-না৷ দেখো এখানের সবচাইতে আমার মাম্মাই সুন্দর৷
.
অনিমাঃকেনো আমার পাপা বুঝি সুন্দর না৷ আমার পাপাও অনেক সুন্দর৷ এখানের সবার চাইতে বেশি সুন্দর৷
.
কথা বন্ধ৷ তোমাদের মাম্মাম এখন কিছু বলবে মনোযোগ দিয়ে শুনো৷
“আসসালামু আলাইকুম৷ আশা করি সবাই ভালো আছেন৷ আজকে আমি যে এই এ্যাওয়ার্ড পেয়েছি তাতে আমি কতটা খুশি আপনাদের বলে বুঝানো সম্ভব নয়৷ আমার যে লক্ষ্য ছিলো সেটা আমি পুরন করতে পেরেছি৷ আমি আজ যে এতো দূরে এলাম সেটা শুধুমাত্র সম্ভব হয়েছে আমার স্বামী আর শশুড় বাড়ির লোকদের জন্য৷ তারা আমার পাশে না থাকলে আমি এতদূর পৌঁছাতে পারতাম না৷ আরেকজনের ভুমিকা আছে যিনি আমার খারাপ সময়ে পাশে ছিলেন সব সময় সাহস জোগানোর প্রেরনা দিতেন৷ তিনি হলেন আমার মেসের আপু রুমি৷ উনি এখানেই আছে৷ উনাকেও শুভেচ্ছা জানালে আমি খুব খুশি হতাম৷
.
“নিশ্চয়৷ মিসেস রুমি আপনাকে স্টেজে আসার জন্য অনুরোধ করা হলো৷
.
রুমি ওর স্বামী আর মেয়েকে রেখে স্টেজে গেলো৷ অনু রুমির কাছে গিয়ে ওকে হাগ করলো৷
ওয়েলকাম রুমি৷ অনুর পাশাপাশি কিন্তু আপনার নামও অনেক শুনা যাচ্ছে৷ আপনার প্রশংসাও চারিদিকে চরাচরি৷ কিছু বলবেন কী আপনি?
হ্যাঁ৷
“আসসালামু আলাইকুম৷ ভালো আছেন সবাই আশা করি৷ অনু আজ আমাকে যে সম্মান পাইয়েছে সেটা আমি কোনদিন ভুলবো না৷ মানুষ বলে যে ভালো সময় আসলে বিপদে যে এগিয়ে গিয়ে সাহায্য করে তাকে মানুষ ভুলো যায়৷ কথাটা কত পারসেন্ট সত্য সেটা আমার জানা নেই৷ তবে হে সবাই কিন্তু একরকম না৷ আমি অনুকে হেল্প করেছিলাম ছোট বোন হিসেবে৷ অনু খুব ভালো মেয়ে ওকে হেল্প করতে যে কারোই ভালো লাগবে৷ অনুকে সাহায্য করার জন্য ও আমাকে তার এতো বড় প্রতিদান দিবে সেটা আমার কল্পনারও বাইরে ছিলো৷ আমি মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির মেয়ে বিয়েও হয়েছে মধ্যবিত্ত ফ্যামিলিতেই৷ অবস্থা ততটাও ভালো ছিলো না আমাদের৷ হঠাৎই একদিন দেখলাম অনু আমাদের বাড়িতে আসছে৷ অনুর পরিবর্তন দেখে দৃষ্টির অগোচরে মুচকি হাসলাম আমি৷ ওকে জিজ্ঞেস করতে জানতে চাইলাম ও আমার খবর কীভাবে জানে তখন ও বললো আমার বাড়িতে গিয়েই আমার শশুড় বাড়ির এড্রেস এনেছে৷
.
থাক না আপু এসব কেনো বলছো?
.
না অনু সবারই জানার অধিকার আছে৷ মানুষও জানুক শুনুক যে কাউকে খারাপ সময়ে সাহায্য করলে সে ছোট হয়ে যায়না বরং সাহায্য স্বরুপ বড় কিছু প্রতিদান হিসেবে পাওয়া যায়৷ রুমি মাইক্রোফোনটা আবারও মুখের সামনে তুলে ধরে বললো,,,
“অনুর অনেক নাম ডাক৷ ওকে তো নিউজ চ্যানেলেও দেখায়৷ অনেক ইন্টারভিউতে আনা হয়৷ যখন ওকে টিভিতে দেখতাম তখন আনন্দে মনটা পরিপূর্ণ হয়ে যেতো৷ অনু আমাদের বাড়িতে এসে বললো,আমাকে নাকি ওর এসিস্ট্যান্ট হতে হবে৷ আগেও যেভাবে এসিস্ট্যান্টের মতো হেল্প করে গেছি এখনও নাকি হেল্প করতে হবে৷ কথাটা শুনে কিছু সময়ের জন্য নির্বাক হয়ে গিয়েছিলাম আমি পরমুহূর্তে অনুকে ধরে কেঁদে দিলাম৷অনু কে আমি জাস্ট অনুপ্রেরণা দিতাম তার জন্যে এত বড় পুরুষ্কার পাবো ভাবিনি৷সেই থেকে ওর সাথেই আছি৷টাকার অভাবে আমার লেখ পড়া বন্ধ করে আমাকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়৷ নিজের স্বপ্ন কে মাটির তলায় চাপা দিয়েছিলাম সেদিন৷ সত্যি অনুর কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ৷
.
“আমি রুমি আপুকে আমার বড় বোনের মতোই ভালোবাসি তাকে শ্রদ্ধা করি৷ আপু যেমন আমার দুর্দিনে পাশে ছিলো তেমনি আমারও আপুর পাশে থাকাটা প্রয়োজনীয় মনে করেছি৷ফ্যাশন নিয়ে লেখা পড়া করাতে আপুকেও কোনো ঝামেলায় পড়তে হয়নি৷ একটার পর একটা নিউ ফ্যাশন আবিষ্কার করেই চলছেন৷
আমার স্বামীও কিন্তু কম না৷ তখন যদি উনি আমাকে হেল্প না করতেন তাহলে হয়তো কোন এক রাস্তার পাশে বা নদীর কিনারায় মরে পড়ে থাকতাম আরো আগেই৷
.
“মিস্টার আবির রায়হান চৌধুরী৷ প্লিজ স্টেজে আসুন৷
আবির অনিমা আর আদিবের হাত ধরে স্টেজে গেলো৷
.
“তা আপনার কী কিছু বলার নেই৷
.
আবিরঃতেমন কিছু বলার নেই শুধু এটুকুই বলবো যে আমি যাকে ভালোবেসেছি তার পাশে থেকেছি৷ অনুর পাশে থাকাটা আমার কর্তব্য৷ ভালোবাসার মানুষটা ভালো থাকলে আর কিচ্ছু চাই না আমার৷ আর আমি সত্যি অনুর জন্য খুব প্রাউড ফিল করি৷
.
আপনারা ভালোবেসে বিয়ে করেছেন হাও সুইট৷
.
হুম৷ আমরা একজন আরেকজনকে খুব ভালোবাসি আর দোয়া করবেন সবাই আমাদের জন্য৷
.
মেয়েটি আদিব আর অনিমার সামনে মাইক্রোফোন ধরে বললো,,,,
“বাবু তোমরা কিছু বলবে?
.
অনিমাঃহ্যাঁ৷ বলবো
.
বলো৷
.
অনিমাঃআমার পাপা মাম্মামকে বেশি ভালোবাসে আমাদের চেয়ে৷
.
অনিমার কথা শুনে সবাই হেঁসে দিলো৷
.
আদিবঃতবে আমার মাম্মাম আমাকে বেশি ভালোবাসে
.
অনিমাঃআর আমার পাপা তার প্রিন্সেস কে৷
.
সত্যি আপনাদের মতো সুখি পরিবার খুব কমই আছে৷ আপনাদের বায়োগ্রাফি শুনে খুব ভালো লাগলো৷আপনাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারলাম৷
.
থ্যাংক ইউ৷
🍁
বিকেলে~~~~
আদিবঃমাম্মাম আমার ক্যাপ কোথায় পাচ্ছিনা কেনো?
.
অনিমাঃআদিব এতো জোড়ে ডাকছিস কেনো?মাম্মাকে এটলিস্ট কিচেন থেকে আসতে তো দে৷
.
তুই চুপ কর বুচি৷
.
পাপা দেখেছো আমাকে বুচি বলছে৷ আমি কী সত্যি বুচি পাপা?
.
কে বলেছে আমার মামনী বুচি না কিউট৷
.
হিহি
.
অনুঃকী হয়েছে আদিব?
.
এতক্ষণ সময় লাগে আসতে৷
.
আবির ছেলের ধমক শুনে সোফা থেকে উঠে এলো৷
.
আদিব এসব কী ধরনের অভদ্রতামি৷ মায়ের সাথে এভাবে কেনো কথা বলছো?এই শিক্ষা তোমাকে দিয়েছি? এখুনি মাকে স্যরি বলো নাহলে কিন্তু খুব বকবো?
আদিব কানে হাত দিয়ে অনুর দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টে বললো,,,,
স্যরি মাম্মাম আর এভাবে তোমার সাথে কথা বলবো না৷ আমাকে মাফ করে দাও৷
.
আবির আর অনু ছেলের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো৷
.
রাতে~~~
আবির আর অনু বিছানায় বসে বসে অনিমা আর আদিবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে৷ দুই বাচ্চা ঘুমিয়ে আছে৷
আবির এক দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে৷
.
কী দেখছো?
.
তোমাকে?
.
আগে বুঝি দেখোনি৷
.
হুম দেখেছি তবে এটা দেখছি যে তুমি আগের চাইতে আরেকটু মোটা আর কিউট হয়ে গেছো৷
.
তারমানে আমাকে এখন সুন্দর লাগেনা?
.
আরে ভাভা বললামই তো এখন তোমাকে আরও বেশি কিউট লাগে৷ একেবারে কিউটের ডিব্বা৷
আর এই দেখো ডিব্বার বাচ্চারাও কতো কিউট তাই না৷ কিন্তু একটা জিনিস তোমার প্রিন্স কিন্তু তোমার মতোই রাগী আর জেদি হয়েছে আর আমার প্রিন্সেস আমার মতোই হয়েছে৷
.
কচু হয়েছে৷
.
জেলাস হচ্ছে তাই না?
.
মোটেও না৷
আবির ওর মেয়েকে বালিশে রেখে অনুর কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে ব্যালকনিতে নিয়ে গেলো৷
“অনু
.
হুম৷
.
থ্যাংক ইউ৷
.
হঠাৎ?
.
হুম৷ দুটো চাঁদ কে আমায় উপহার দেওয়ার জন্য৷
.
ধন্যবাদ তো আমার তোমাকে দেওয়া উচিৎ৷
.
আবির অনুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,,,
.
ভালোবাসি অনু
.
আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি আবির৷
.
আজ একটা জিনিস লক্ষ্য করছি তুমি আমাকে তুমি করে সম্বোধন করছো ব্যাপার কী হুম?
.
এখন থেকে তুমি করেই বলবো আপত্তি আছে?
.
একদমি না৷
.
এখন তাহলে আমার জন্য তোমার মনের কোনে “সুপ্ত অনুভূতি” জাগ্রত হয়েছে৷
.
সেটা অনেক আগে থেকেই৷
.
আবির অনুর কপালে ভালোবাসার পরশ একেঁ দিয়ে আবারো জড়িয়ে ধরলো৷
[বেঁচে থাকুক আবির অনুর ভালোবাসা]
~~~~~~~~~সমাপ্ত~~~~~~~~