#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#সিজন_২
#পর্ব_৯
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara
দেখতে দেখতে কেটে গেলো একমাস৷ হাতের টাকা ফুরিয়ে যাওয়ার কারনে অনু এখন টিউশনি করাচ্ছে৷ ভার্সিটি থেকে এসে কোনরকমে ফ্রেস হয়ে একটা বিস্কুট মুখে দিয়ে চলে যায়৷ আজও তার ব্যাতিক্রম হয়নি৷
ত্রিশ মিনিটের পথ হাঁটতে হয় তাকে৷ প্রতিদিন হেঁটে হেঁটেই যায়৷ রিক্সার ভাড়া দেবার মতো টাকা নেই অনুর কাছে৷
🍁
ছাত্রর মা আজ অনুকে একটা কলা আর দুটো ব্রেড দিয়েছে৷ অন্যদিন চা বিস্কুট দিতো৷ অনু ব্রেড আর কলা নিজের ভ্যানিটি ব্যাগে পুরে নিলো আজ আর রান্না করবেনা এগুলো দিয়েই রাতে খাবে৷ আর একটা আলু যে ছিলো ওটা দিয়ে কাল সকালে রান্না করে খাবে৷
আজ টিউশনির বেতন দেওয়ার কথা ছিলো কিন্তু ছাত্রর মা বলে দিয়েছি ছয় সাত দিন পর টাকা দিবে তারা নাকি কী সমস্যায় পেড়েছে৷টাকা দিতে পারবেনা কথাটা শুনে অনুর চোখে পানি চলে আসলো৷ টাকাটা না দিলে যে কালকের খাবারটাও জুটবেনা৷ রুমিও মেস থেকে চলে গেছে ওকে সাহায্য করার মতোও কেউ নেই৷ রুমি যাওয়ার সময় অনুকে চাল ডাল সব দিয়ে গেছে এগুলো দিয়েই অনু পনেরো বিশ দিন কাটিয়েছে৷ কিন্তু এখন?
অনু মনে একরাশ কষ্ট নিয়ে টলমল পায়ে সেখান থেকে চলে গেলো৷ রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় একটা পাঁচ বছরের ছেলে এসে অনুর পা জড়িয়ে ধরলো৷
“আপা আমারে কিচ্ছু খাইবার দিন৷ আমি দুইদিন কিচ্ছু খাইনা গো আপা৷
.
“আমিতো শুধু আজ দুপুরে খাইনি কিন্তু ছেলেটা দুইদিন ধরে খায়না৷ ”
অনু ব্যাগ থেকে ব্রেড আর কলা বেড় করে ছেলেটির হাতে দিলো৷ ছেলেটা খুশি মনে সেখান থেকে চলে গেলো৷
.
কাউকে খুশি করতে যেয়েও যে আমাদেরও কষ্ট পেতে হয়৷ হয়তো এটাই প্রকৃতির নিয়ম৷
অনু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সেখান থেকে চলে গেলো৷
🍁
আবির কালই দেশে ফিরেছে৷ এই কথা অনু জানেনা শুধু রিমি জানে৷ আবির রিমিকে মানা করে দিয়েছে যেনো অনুকে আবিরের দেশে ফিরার কথা না বলে৷
অনু ফিরার পথে দেখলো আবিরের মতোই একটা ছেলে যেনো কার সঙ্গে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে৷ অনু ছেলেটাকে ভালো করে পরিক্ষা নিরিক্ষা করে দেখলো না এটাই আবির৷
অনু দৌড়ে আবিরের কাছে যেতেই আবির তার কারে উঠে পরলো৷ অনুও আর কিছু না ভেবে একটা সিএনজিতে উঠে পরলো আর ড্রাইভারকে বললো যাতে সামনের কারটাকে ফলো করে৷আবিরের কার স্লো মোশনে চলছিলো তাই সহজেই ওর কারকে ড্রাইভারের ফলো করতে সুবিধা হচ্ছিলো
আবিরের কার একটা বিশাল বাড়ির সামনে এসে থামলো৷ আবির জানেনা অনুও ওর পিছন পিছন আসছে৷তাই সে কোনদিকে না তাকিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো৷
অনুও সিএনজি থেকে নামলো৷এত বড় বাড়ি দেখে অনু কিছুটা অবাক হলো৷ কখনো আবিরের বাড়িতে আসেনি আগে৷
ড্রাইভারঃম্যাডাম ভাড়া কোথায়?
.
অনু ব্যাগ খুঁজে দু’টি দশ টাকার নোট পেলো আর সেটাই ড্রাইভারকে দিলো৷
“একি ম্যাডাম এখানে তো বিশ টাকা মাত্র কিন্তু ভাড়া তো চল্লিশ টাকা৷
.
চাচা আমার কাছে আর একটা কানাকড়িও নেই৷ প্লিজ আপনি এই বিশ টাকাটাই নিন৷ আমি নাহয় বাকি টাকা আপনাকে পরে দিয়ে দিবো৷
.
ড্রাইভার কিছুক্ষন টাকা টার দিকে তাকিয়ে রইলো৷ তারপর সিএনজি নিয়ে চলে গেলো৷
অনু কাঁপা-কাঁপা পায়ে আবিরের বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো৷
মেইন ডুরে হাল্কা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো৷ ড্রয়িং রুমেই দুজন মধ্য বয়সি মহিলা আর পুরুষ বসে বসে টিভি দেখছেন আর গল্প করছেন৷ হয়তো উনারা আবিরের মা বাবা হবেন৷
অনু উনাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে সালাম দিলো৷ আবিরের মা বাবা সালামের উত্তর দিয়ে দুজনেই প্রশ্নবোধক চোখে তাকিয়ে আছেন অনুর দিকে৷
বাবাঃবসো এখানে৷ কে তুমি?তোমাকে তো আগে দেখিনি?
.
অনু সোফায় বসে বললো,,আমি আসলে,,,
.
মাঃকী আসলে বলো?
.
আমি আসলে আবিরের বান্ধবী৷
.
বাবাঃ বান্ধবী? কিন্তু আবিরের তো কোনো মেয়ে বান্ধবী নেই৷ থাকলে আমাদের অবশ্যই বলতো৷
.
মাঃহ্যাঁ আবিরের কোনো মেয়ে বান্ধবী নেই৷ একটা মেয়েকে ভালোবাসতো আমার ছেলে মেয়েটি রাগ করবে ভেবে কোন মেয়ের সাথে কথাও বলতো না৷ ইভেন আমার বোনের মেয়ের সাথেও কথাও বলেনা৷যে মেয়ের জন্য এমন পাগলামু করতো সেই মেয়ের এখন কোনো হদিসই নেই৷
.
অনু কী বলবে কিচ্ছু মাথায় আসছেনা৷ মিথ্যা বলে সেইরকমের ফাঁসা ফেঁসে গেছে৷ আমতা আমতা করে বললো,,ওই আসলে,আমি আবিরের পুরনো ফ্রেন্ড৷ স্কুলের ফ্রেন্ড বলতে পারেন অনেক দিন ধরে আবিরকে দেখিনি তো তাই ভাবলাম ওকে দেখে আসি৷ আপনারা শুধু আবিরকে ডেকে বলুন যে ওর ফ্রেন্ড এসেছে আর কিছু বলতে হবেনা৷
মাঃঠিকাছে ওকে বলছি আমি৷
আবির!!তোমার এক ফ্রেন্ড দেখা করতে এসেছে৷
.
আবির উপরে ওর রুম থেকে জবাব দিলো,,,রুমে পাঠিয়ে দাও৷
.
বাবাঃওই যে দেখছো সিড়ির বাম পাশের দুই নাম্বার রুমটাই আবিরের৷
.
অনু উপরে গেলো৷ আবিরের রুমের দরজার এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে৷ ভয়ে ওর মন ধুরুধুরু করছে৷ বুকের মধ্যে একটা ফু দিয়ে ভিতরে চলে গেলো৷
আবির তখন শাওয়ার সেরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঝাড়ছিলো৷
আফটার শাওয়ার লুকে আবিরকে দেখে অনু কিছুটা ঘাবরে গেলেও ন্যাকামু না করে আবিরকে এগিয়ে গিয়ে পিছন থেকে সোজা জড়িয়ে ধরলো৷
আবিরকে কোন মেয়ে জড়িয়ে ধরাতে সে খুব রেগে গেলো৷ অনুর হাত দুটো নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে অনুকে ঘুরিয়ে ওর সামনে আনলো৷অনুকে দেখে আবিরের রাগ নিমিষেই উধাও৷
“অনু তুমি!!!!!!
.
হুম,,,(মাথা নিচু করে)
.
এখানে কী করছো তুমি? কেনো এসেছো?
.
আমি আমার নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি আর আপনাকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাইনা৷ প্লিজ আমাকে ছেড়ে আর যাবেননা৷
.
যখন আমি বলেছিলাম এই কথাটা তখন শুনেছিলে তুমি আমার কথা হুম৷ তাহলে ভাবলে কী করে যে আমি তোমার কথা শুনবো৷ একটা মিথ্যা প্রমানের ভিত্তিতে তুমি আমার সাথে সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটালে৷ একটুও বিশ্বাস ছিলোনা তোমার আমার প্রতি৷ আমি যখন তোমাকে মানাতে চাইছিলাম তখন তুমি না মানছিলে আর না আমার কথা বুঝার চেষ্টা করেছিলে তাহলে এখন কোন অধিকার নিয়ে আমার সামনে এসেছো৷ চলে যাও এখান থেকে৷ আর হ্যাঁ আমি নিজেকে খুব কষ্ট করে গুটিয়ে নিয়েছি আমি আর চাইনা তুমি আবারো আমার লাইফে এসে আমার গোছালো জীবনকে অগোছালো করে দাও৷
.
প্লিজ আপনি আমার কথা বুঝার চেষ্টা করুন(কেঁদে)
.
স্টপ৷বাহ্ অনু৷ পাঁচ বছর আগে যখন আমি তোমাকে এই কথাটা বলেছিলাম তখন তুমি আমাকে কী যেনো বলেছিলে,,ওহ হে মনে পড়েছে৷ তুমি আমাকে বলেছিলে যে তুমি আমাকে ঘৃণা করো৷ তোমার মুখ থেকে এই কথাটা শুনে আমি কতটা কষ্ট পেয়েছিলাম জানো?চোখ থেকে তখন পানি গড়িয়ে পরার অবস্থা ছিলো তবুও পড়েনি আটকে নিয়েছিলাম চোখের অশ্রুকে কারন ছেলেদের যে কাঁদতে বারন৷ আর আজ আমি তোমার কথাই তোমাকে রিপিট করছি আর তাতেই তুমি কেঁদে কেটে শেষ৷ ওয়াও৷
দেখো অনু আমি আর কথা বাড়াতে চাইনা প্লিজ চলে যাও এখান থেকে৷
.
অনু আবিরকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আবির হাত দিয়ে থামিয়ে দিলো৷
অনু শুধু আবিরকে চেয়ে চেয়ে দেখছে৷ এ যেনো অনুর দেখা এক নতুন আবির৷
যে আবির ওর কথা শুনার জন্য পাগল ব্যাকুল হয়ে থাকতো সেই আবির এখন অনুর কোন কথাই শুনতে চাইছেনা৷ এর জন্যে তো স্বয়ং সে নিজেই দায়ী৷
অনু আবিরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে গেলো৷ দরজার বাইরে পা রাখতেই আবির ওর হাত ধরে টেনে আবার রুমের ভিতর নিয়ে গেলো৷
অনুকে ওর সামনে দাঁড় করিয়ে চোখের পানি মুছে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো৷
“এতো রাগ তোমার আমার প্রতি এখনো৷ তোমাকে কয়েকটা কথা শুনিয়ে নিজেকে শান্ত রাখতে চাইছিলাম কিন্তু পারিনি৷ আমার মনে হলো আমি তোমাকে একটু বেশিই হার্ট করে ফেলেছি৷ তুমি বোধহয় আমাকে ভালোবাসোনা কিন্তু আমি তো তোমাকে ভালোবাসি৷ আমার কথায় কষ্ট পেয়েছো জানি,, আমাকে মাফ করে দাও অনু প্লিজ৷
অনু আবিরের উন্মুক্ত বুকে মাথা রেখে বললো,,,
জানেন আমি না খুব খারাপ৷ দেখেন না পাঁচ বছর ধরে আমি আপনাকে কষ্ট দিয়ে গেছি কিন্তু একবারো মাফ চাওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি৷ কিন্তু আপনি আমাকে দু একটা কথা বলেই আমার কাছে মাফ চেয়ে নিলেন৷ আসলে জানেন আমি না ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যই নই৷ নাহলে কীভাবে পারলাম আপনার ভালোবাসাকে পায়ে টেলে দূরে সরিয়ে দিতে৷
.
হ্যাঁ যদি তোমার আর আমার সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকতো তাহলে বিয়ে হয়ে এতদিনে আমাদের একটা বেবিও থাকতো৷
.
যাহ্৷
.
ভালোবাসি অনু৷
.
আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি৷
.
অনু আবিরের বুক থেকে মাথা তুলে বললো,,চেঞ্জ করে নিন আমার আনকম্ফরটেবল ফিল হচ্ছে৷
.
এতক্ষণ আমার উন্মুক্ত বুকে মাথা রেখে এখন তোমার আনকম্ফরটেবল ফিল হচ্ছে হুম?
.
হুম আমি বাইরে যাচ্ছি আপনি চেঞ্জ করে আসুন৷
.
কেনো? তুমি বাইরে যাবে কেনো? তোমার সামনে পোষাক পরলে কী সমস্যা? তুমি তো আমার হবু বউই৷
.
হবু বউ এখনও বউ হয়নি৷ আমি বাইরে যাচ্ছি৷
অনু হেঁসে বাইরে চলে গেলো৷ সিড়ির দিকে তাকাতেই দেখলো আবিরের মা ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছেন৷ উনার এমন চাহনি দেখো অনুর মন ধক করে উঠলো৷
চলবে♥️
[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷ ]