#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#সিজন_২
#পর্ব_৮
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara
অনু চিঠিটা ভাজ করে ডায়েরির ভিতরে রেখে দিলো৷ ওর চোখ বেয়ে অঝোরে নোনা জল গরিয়ে পরছে৷
“আমি যদি আবিরকে একটা বার বলতাম তাহলে হয়তো আজকের এই দিনটি দেখতে হতোনা৷
খিদেও পেয়েছে প্রচুর৷ অনু খাট থেকে নেমে রান্না ঘরে গেলো৷ পাতিল উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখলো কিন্তু খাওয়ার মতো কিছু নেই৷
অনু দুটো রুটি আর আলুর ভাজি করলো৷ খাবারটা মুখে দিতে গিয়েও কেঁদে দিলো৷
আজ কয়টা দিন হয়ে গেলো মাছ মাংস খায়না সে৷ তেলের ভাজা জিনিস সবসময় খাওয়া যায় নাকি৷ কিন্তু খেতে তো হবেই না খেলে চলবে কী করে৷ অনু রুটি টুকরো করতে যেতেই রুমি এসে ওর হাত থেকে প্লেটটা নিয়ে নিলো৷
.
“প্লেট নিয়ে নিলে কেনো আপু? আমার খুব খিদে পেয়েছে আমি খাবো তো৷
.
আমি কী তোমাকে না করেছি নাকি৷ আজ তুমি আমার সাথে খাবে৷
.
না আপু আমারটা আমি খেয়ে নিবো৷ এইতো দেখোনা ভাজি করেছি আর রুটি ওগুলো খেলেই আমার পেট ভরে যাবে৷
.
জানি তো কী পেট পুরে খাও তুমি৷ আসার পর থেকে একদিনও দেখিনি ঝুল দিয়ে ভাত খেতে সবসময় এরকম শুকনো খাবার খাও কী করে বলোতো৷
আজ মা আমার জন্য ইলিশ মাছ আর দেশী মুরগির তরকারি রান্না করে পাঠিয়েছেন৷ কিছুক্ষণ আগেই বাবা এসে দিয়ে গেলেন৷ আমি একা খাবো কেনো?তাই তুমিও খাবে আমার সাথে৷
.
কিন্তু আপু আমাদের রুমে তো আরও তিনজন আছে ওদেরকে তো বললেনা৷ আমি এতিম বলে আমাকে দয়া করে খাওয়াচ্ছো?
.
ছিঃ ছিঃ অনু এসব তুমি কী বলছো৷ এসব তোমার কাছ থেকে এক্সপেক্ট করিনি৷ আমার ওদের সবার মাঝে তোমাকেই ভালো লাগে৷ কেমন একটা টান অনুভব হয় তোমার প্রতি৷ তোমার এই মায়াবী চেহারা,কথা বার্তা এসব আমার খুব ভালো লাগে অনু৷ নিজের বোন মনে করি তোমায়৷ আর তুমি কী না আমাকে এসব বলছো৷ এই কয়েকদিনে এটাই মনে হয়েছে তোমার৷ এই চিনেছো তুমি আমাকে৷
.
আপু আমি তোমার মনে কষ্ট দিতে চাইনি স্যরি৷
.
আচ্ছা ঠিকাছে ঠিকাছে৷
.
রুমি একটা প্লেটে করে ভাতের সাথে মাছ, মাংস নিয়ে এলো৷
“অনু হা করো৷
.
একি আপু তুমি কী আমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিবে নাকি?
.
হুম৷ তাতে কী?হা করো৷
.
অনু হা করলো৷ রুমি ওকে খাইয়ে দিচ্ছে আর অনু কাঁদছে আর খাচ্ছে৷
“আরে পাগলী মেয়ে কাঁদছো কেনো?
.
জানো আপু আমাকে না বাবা ছাড়া কেউ নিজ হাতে খাইয়ে দেয়নি৷ বাবার হাতেও খেয়েছিলাম দশ পনেরো বছর আগে৷ বড় হওয়ার পর আর খাইনি৷ কোন নারীর হাত থেকে এই প্রথম খাবার খাচ্ছি তো তাই৷
.
হুম৷ কিন্তু তোমার মা উনি কোথায়?
.
আমার মা তো আমার জন্মের সময়ই মারা গেছিলেন৷ খুব কষ্ট করে আমার বাবা আমাকে মানুষ করেছিলেন৷ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বিয়েও করেননি৷ সব সময় আমাকে খুশি রাখার চেষ্টা করেছেন৷
.
থাক কেঁদোনা বোন৷কেউ তো আর অমর হয়ে জন্মায় না৷ মানছি আংকেল কে খুন করা হয়েছে উনার সাথে তোমার সাথে অন্যায় করা হয়েছে কিন্তু এখন চাইলেই তুমি তো আর তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি দিতে পারবেনা৷
🍁
রাতে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে অনু৷ মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে৷ বৃষ্টির তালে তালে যে বাতাসটা বয় সেটা খুব ভালো লাগে অনুর৷
“যদি এমন হতো বৃষ্টির পানির সাথে আমার সব দুঃখ কষ্ট চলে যেতো৷
.
রুমিঃঅনু কী করছো?
.
এইতো আপু বৃষ্টি দেখছি৷ কিছু বলবে?
.
হ্যাঁ৷ ওয়েট আসছি৷
.
রুমি হাতে করে একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে আসলো৷
এনে অনুর খাটের উপরে সব কিছু বেড় করে রাখলো৷
.
একি এসব দিয়ে কী হবে আপু?
.
বাহ্ রে ফ্যাশন ডিজাইনার কী কাগজ কেটে সেলাই করে হয়ে যাবে নাকি৷ আমি বাবাকে দিয়ে এই পাঁচ গজ কাপড়,রেশমি সুতো,আর এই পাথর গুলো আনিয়েছি৷ আর এই দেখো চাকও আছে৷ আমার বাবাও মধ্যবিত্ত তা না হলে আরও অনেক কিছু আনাতাম৷
.
না আপু তুমি আমার জন্য যতটুকু করছো ততটুকুই যথেষ্ট৷আমি সত্যিই তোমার কাছে খুব কৃতজ্ঞ৷
.
আচ্ছা, এবার ঝটপট কাজে লেগে পরতো৷
🍁
পরের দিন~~~~
অনু আর রিমি বট তলায় বসে আছে৷ রিমি বসে বসে বাদাম খাচ্ছে৷অনুকে দিচ্ছে অনু নিচ্ছেনা৷
“আবে ইয়ার কী হয়েছে বলবি তো৷ এভাবে এখানে বসিয়ে রাখার কী মানে?এমনিই আমার বট গাছ দেখলে কেমন জানি ভয় লাগে তার মধ্যে আবার তুই আমাকে বট গাছের নিচে বসিয়ে রেখেছিস৷
.
রিমি আমি অনেক করে ভুল করে ফেলেছি৷
.
এটাতো এখন নিয়ে পাঁচশবার বলে ফেলেছিস৷ কী ভুল করেছিস সেইটাতো এটলিস্ট বল৷
.
আমি আবিরকে ভুল বুঝেছি রিমি৷আবির কোনো ভুল করেনি তারপরও ওকে ভুল বুঝে এসেছি৷ আবির তো চলে গেছে তাই-না৷ ওতো আর ফিরবে না৷ আর ফিরবেই বা কেনো ওকে যে আমি সেদিন খুব হার্ট করেছিলাম রে৷
.
তা এতো বছর পর তোর মনে হলো যে তুই কাজটা ভুল করেছিস ওয়াও৷
.
আমি এসব জানতামও না যদি রনি আমাকে না বলতো৷
.
রনি!!রনি কী বলেছে তোকে?
.
অনু রিমিকে কালকের ঘটনা সব খুলে বললো৷
“লাইক সিরিয়াসলি রনি এসব করেছিলো? এখন কী করবি?
.
কী আর করার প্রায়শ্চিত্ত আর আফসোস করা ছাড়া কিছু করার নেই৷
🍁
রাতে~~~
ক্রিং,ক্রিং,ক্রিং আবিরের ফোন বাজছে৷ আবির সবেমাত্র মিটিং সেড়ে একটু রেস্ট করার জন্য বসেছিলো৷ ফোনের স্ক্রিনে রিমির নাম্বার দেখে তারাতাড়ি রিসিভ করলো৷
“হ্যা বলো রিমি কী খবর?
.
ভাইয়া অনু নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে৷
.
এখন বুঝতে পারলেই কী আমি তো চলেই এসেছি৷
.
ভাইয়া অনু আর আপনার মধ্যে যে মিসআন্ডারস্ট্যানডিং হয়েছিলো সেটা একটা নাটক ছিলো৷ রনি আমাদের ক্লাসমেট ও আপনাদের আলাদা করার জন্য আপনার ফেইক ছবি দেখিয়েছিলো অনুকে৷আর অনু ছবিগুলো দেখেই আপনার সাথে সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটিয়েছিলো৷
রিমি আবিরকে সব খুলে বললো,,
“ভাইয়া অনু নিজের কাজের জন্য ভিষণ অনুতপ্ত৷ আজ ভার্সিটিতে এসে শুধু কেঁদেছে এটা ভেবে যে এই পাঁচ বছর ধরে ও আপনাকে ভুল ভেবে এসেছে৷ আর ও এটা মনে করছে যে আপনি ওকে ভুলে যাবেন আর ওর কাছে ফিরবেননা৷
.
আমি পাঁচ বছর ধরে ওকে ভুলিনি আর এখন ভুলে যাবো?
.
হুম
.
আর একটা কথা ওকে তুমি বলবেনা যে আমি তোমার সাথে কথা বলি৷ আমি বাংলাদেশে আসবো কিন্তু এখন নয়৷ হুট করে দেশে ফিরে যাওয়াতে বিজন্যাসে কিছু প্রবলেম দেখা দিয়েছে সব ঠিকঠাক করে তবে ফিরতে হবে৷
আচ্ছা এখন আমি রাখছি মাথাটা ব্যাথা করতেছে৷
.
ওকে ভাইয়া টেক কেয়ার বাই৷
.
আবির ফোনটা রেখে একটু মুচকি হাসলো যে ওর আর অনুর মধ্যে সব ঠিকঠাক হতে যাচ্ছে৷ অনু ওর নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে৷
চলবে♥️