সুপ্ত অনুভূতি পর্ব-৬+৭

0
2789

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_৬
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

“কে ভুলে যাবে কে কার ভাই??
আদনান ভাইয়ার কন্ঠ শুনে দরজার দিকে তাকাতে দেখলাম আদনান,আহিল,আর আদিব ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে৷ আদনান ভাইয়া রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললেন,,
.
আদনানঃকী রে বল??
.
আয়েশা আপু, অদ্রিতা আপু সামান্ত, ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে৷

আয়েশাঃআদনান এসব কী বলছিস তুই?
.
আহিলঃআমরা সব শুনেছি আপু তাই কথা ঘুরিয়ে লাভ নেই৷ আদিল ভাইয়া যখন এখানে এসেছিলো তখন ভাইয়ার পিছুপিছু আমরাও এসেছিলাম আর সব শুনেছি আমরা৷
.
আদনানঃহাউ ডেয়ার ইউ আদি!!! তুই আমার বোনের গায়ে হাত তুলিস৷ তোকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম আমি এটা দেখার জন্যে যে কেউ যাতে আমার বোনের গায়ে একটা আছড়ও না দিতে পারে আর এই তুই তোর দায়িত্ব পালন করলি বেল্ট দিয়ে পিটিয়ে৷
.
আদিবঃভাইয়া তুমি ভালো করেই জানো যে রুহি আমাদের সকলের নয়নের মনি ওর গায়ে কেউ হাত তুলেনা কিন্তু তুমি কী করলে৷ এটা তোমার কাছ থেকে এক্সেপ্ট করিনি৷
.
আদনানঃঅদ্রিতা আপু ঠিকই বলেছে তোকে সব অধিকার দিলেও ওর গায়ে হাত তোলার অধিকার দেয়নি৷
.
আরুহিঃব্যস অনেক হেয়েছে,,আমি কাকে কোন অধিকার দিবো না দিবো সেটা আমি ডিসাইড করবো৷আদিল ভাইয়াকে যেমন আমি আমার গায়ে হাত তোলার অধিকার দেইনি তেমনি তোমাদেরও আমার ম্যাটারে ইন্টারফেয়ার করার অধিকার দেইনি৷ তোমরা আমার বড় ভাই৷ অবশ্যই আমার ম্যাটারে ইন্টারফেয়ার করতে পারো৷ কিন্তু সব ম্যাটারে নয়৷ কিছু কিছু ম্যাটারও ছেড়ে দিতে হয়৷ আদিল ভাইয়া আমায় মেরেছে তার কারণ আছে৷ ভাইয়া রিফাতের সম্পুর্ন ডিটেইলস নিয়েছে কিন্তু তোমরা কী করেছিলে৷ একবারো রিফাতের সম্বন্ধে জানার চেষ্টা করেছিলে?? করোনি তো৷তাহলে এখন কেনো চিল্লাচ্ছো৷ তোমরা চার ভাই একসাথে থাকো৷ আমার বিষয় আমি দেখে নিবো৷
.
আহিলঃশত হোক এতো রাগ ভালো নয়৷
.
আদিলঃআমি জানিনা আমার তখন কী হেয়েছিলো৷ রাগকে কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না আমি৷ তার জন্য আমি রুহির কাছে অনেক বার ক্ষমা ও চেয়েছি৷ তারপরও যদি তোমাদের আরও কিছু বলার থাকে তাহলে বলো আমি শুনবো৷ (ভাঙা গলায়)
.
আদিল ভাইয়ার জন্য অনেক খারাপ লাগছে আমার৷ প্রথমে আমি ভাইয়াকে কতো কথা শুনাচ্ছিলাম৷ তারপর আবার অদ্রিতা আপু চড়ও মেরেছে আবার যা নয় তাই বলেছে এখন আবার আদনান,আহিল,আদিব ভাইয়েরা কথা শুনিয়ে যাচ্ছে রাগারাগি করছে৷ একটু আগেও সবাই মিলে কত হাসাহাসি করেছিলো৷
এক এক করে সবাই রুম থেকে চলে গেলো৷ আমি জানি এখন সবাই আমার সাথে অভিমান করবে৷ কিন্তু আমিই বা কী করবো৷
🍁🍁🍁🍁

রাতে কেউই ডিনার করিনি৷ মা আর চাচীমনি সবাইকে ডেকেছেন কিন্তু কেউই আসেনি৷ সবাই যেমন কেমন হয়ে গেছে সামান্তাও আমার সাথে তেমন কথা বলছেনা৷ আমাদের এমন হাসিখুশির ফ্যামিলির সদস্যরা কেমন মনমরা টাইপ হয়ে গেছে৷ না আমার আর এসব সহ্য হচ্ছেনা৷ সামনে বিয়ে এভাবে থাকলে চলবে নাকি৷ যেভাবেই হোক সবাইকে আবার আগের মতো করতে হবে৷ আদিল ভাইয়া,, আদিল ভাইয়া তো বেশি কষ্ট পেয়েছে৷ কী করছে ভাইয়া এখন৷ আমি চুপিচুপি ভাইয়ার রুমের সামনে এসে দাঁড়ালাম৷ দরজা একটু ফাঁক করা তারমনে ঘুমায়নি৷ আমি দরজায় একটু আলতো করে ধাক্কা দিতেই ভাইয়া” কে” বলে এগিয়ে এলেন৷
ভাইয়া আমায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকালেন৷
.
তুই!! তুই এখানে কী করছিস??নাকি তুইও আরও কিছু বলতে এসেছিস৷
.
সেরকম কিছুনা৷ আসলে সবাইকেই দেখতে আসছিলাম ঘুমিয়ে পরেছে কী না৷ তাই৷
.
“আচ্ছা৷”
কথাটা বলে ভাইয়া দরজা বন্ধ করে ফেললেন৷ আমার ভাইয়ার জন্য খারাপ লাগছে৷ এক সাথে এতো অপমান বেচারা সহ্য করবে কী করে৷ না আমাকেই কিছু একটা করতে হবে৷ কিন্তু কী করবো?? ধুর মাথায় কিচ্ছু আসছেনা৷মাথাটাও প্রচন্ড ব্যাথা করছে৷ কিচেনে যাওয়া দরকার তারপর কড়া করে চা বানিয়ে খাবো৷ তাতে যদি একটু মাথা ব্যাথা কমে৷
কিচেনে যেতেই দেখলাম অদ্রিতা আপুও চুলায় চা বসিয়েছে৷ পানি ফুটে গেছে কিন্তু আপু চা পাতা দিচ্ছেনা৷ কেমন যেন এক ধ্যানে রয়েছে৷ আমি এগিয়ে গেলাম আপুর দিকে৷

“আপু আর ইউ ওকে??
.
হুম আ’ম ওকে৷ ওই একটু মাথায় ব্যাথা করছিলো তাই চা বসিয়েছি কিন্তু তুই এখানে এতো রাত্রে??
.
আমারও মাথা ব্যথা করছিলো তাই চা খাবো ভেবেছিলাম৷ তোমার খুব মুড অফ তাই-না আপু৷
.
না তা হবে কেনো৷
.
আমি জানি৷ হয়তো প্রথম বার তুমি আদিল ভাইয়ার গায়ে হাত তুলেছো আর কটু কথাও শুনিয়েছো৷ তারমধ্যে আবার ওরা তিন ভাইয়ের অপমান৷ তোমার খুব খারাপ লাগছে আমি জানি৷ আমি বুঝতে পারিনি বিষয়টা এতো বড় হয়ে যাবে৷ আমি তো তোমাদের শুনাতেও চাইনি৷ কিন্তু ভাইয়া নিজেই বলে দিলো৷ আমাকে ক্ষমা করে দিও আপু৷

আপু চায়ে চিনি দিতে দিতে বললো,,
ধূর পাগলী৷ তুই কোনো অন্যায় করসিনি৷ তুই কেন ক্ষমা চাইছিস৷ আর ধর চা হয়ে গেছে৷ চা টা খেয়ে মাথা ব্যাথা কমলে ঘুমিয়ে পরিস৷ বেশে চাপ নিসনা৷ কাল সকালে উঠে যা করার তা ভাবা যাবে৷ আপতত আজ রাত ঘুমানো প্রয়োজন৷
আমি আর আপু চা টা খেয়ে যে যার রুমে চলে গেলাম৷ বিছানায় এপাশ ওপাশ করছি৷কিন্তু চোখে ঘুম আসছেই না৷
🍁🍁🍁🍁🍁
সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে খেয়াল করছি আদিল ভাইয়ার সাথে কেউ কথা বলছেনা৷ ভাইয়াও কেমন যেন মনমরা হয়ে থাকে৷সবাইকে এড়িয়ে চলে৷ এভাবে চলতে থাকলে তো বড় কিছু হয়ে যাবে৷

দেখতে দেখতে কেটে গেলো কয়েকদিন৷ আপুর বিয়ের আর মাত্র দশদিন বাকি আছে৷ এই কয়েকদিনে আমরা নানান ভাবে চেষ্টা করেছি সব ভাইদের মিল করার কিন্তু কোনো কাজ হয়নি৷ আয়েশা আপু প্ল্যান করলো ট্যুরে যাওয়ার৷ হয়তো ট্যুরে গেলে ওদের মিল হতে পারে৷ যেই ভাবা সেই কাজ৷ আপু বড় চাচ্চু আর বাবাকে জানিয়েছে ব্যাপারটা উনারা রাজি হয়েছেন৷ ডিসাইড করা হয়েছে সিলেট যাওয়ার৷ সেখানে জাফলং, বিছানাকান্দি,ড্রিম ল্যান্ড পার্ক, চায়ের বাগান আরও খুব সুন্দর সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য রয়েছে যা একেবারে নজর কাড়া৷ কখনো দেখা হয়নি তাই সবাই এবার দেখবে৷ সকাল থেকেই সবাই রেডি হওয়া শুরু করে দিয়েছে৷ ঢাকা থেকে সিলেট অনেক দূরে তাই সকাল সকাল যেতে হবে৷ দশটার দিকে আমরা আট ভাইবোন রওনা দিলাম সিলেটের উদ্দেশ্যে৷

চলবে♥️

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_৭
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

সকাল ১০টায় ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে বেলা ৩টায় এসে পৌঁছালাম সিলেটে৷ সবাই সবার ব্যাগপত্র টেনে টেনে রিসোর্টের বুক করা রুমে রাখছে৷তিন চারদিন থাকার প্ল্যানিং করেই আসা হয়েছে৷ একদিন বা দুইদিনে তো আর সব দেখা সম্ভব নয়৷আহিল ভাইয়ার এক ফ্রেন্ড নাকি সিলেটের তাকে দিয়েই রিসোর্ট বুক করিয়েছে৷
🍁🍁🍁🍁
আমরা সবাই লাঞ্চ করে রিসোর্টের চারদিক ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম৷আদিল ভাইয়া আমাদের থেকে আগে আগে যাচ্ছেন৷ আমরা জৈন্তা হিল রিসোর্টে উঠেছি৷ রিসোর্টটা অনেক উঁচুতে৷ চারিদিকে পাহাড় আর পাহাড়৷ পাহাড়ার মধ্যে সবুজ গাাছগাছালি পাহাড়কে আরও মোহনীয় করে তুলেছে৷প্রাকৃতিক দৃশ্যের পাশাপাশি মেঘালয় পাহাড়ের জলপ্রপাতও দেখা যায়৷ পাহাড়,ঝর্না,নদী সুনীল আকাশ ছাড়াও জৈন্তা হিল রিসোর্ট থেকে আরো চোখে পড়ে স্বচ্ছ পানির গভীর থেকে শ্রমিকদের পাথর তুলে আনার দৃশ্য৷ আমরা সব কিছু ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম৷ সিলেটের নেচার আসলেই মুগ্ধকর৷
সামান্তা সেলফি তুলতে তুলতে এসে বললো,,
.
“চল দৃশ্যটা ক্যামেরা বন্দী করে রাখলে মন্দ হয়না”৷ আমি সামান্তার কথায় হ্যাঁ মিলিয়ে সবাইকে ছবি তোলার জন্য বললাম কিন্তু কেউই ছবি তুলছেনা৷ আমি আর সামান্তা নিজেদের ছবি যা পারছি তুলছি৷
🍁🍁🍁🍁
রাতে খাবার খেতে এসে হলো সমস্যা৷ আমরা সবাই ডিনার করতে এসে পরেছি কিন্তু অনেক্ষন হয়ে গেছে আদিল ভাইয়ার কোনো খুঁজ নেই৷ সবাই বেশ চিন্তিত৷ আদনান ভাইয়া তো রেগে বোম৷ আহিল ভাইয়া,আদিব ভাইয়া ফোন করছে ফোন সুইচ অফ বলছে৷

আদনানঃকী মনে করেছে কী ও৷ ওর যা ইচ্ছা তাই করবে৷ একবারও ভেবেছে আমরা কতো চিন্তা করছি ওর জন্য৷ ও বোধহয় আমাদের কথা ভাবেনা কিন্তু আমরা তো ভাবি নাকি৷ এভাবে কাউকে না জানিয়ে হারিয়ে যাওয়ার মানে কী৷
.
আয়েশাঃতাহলে ওকে খোঁজে নিয়ে যা৷ হয়তো রিসোর্টের বাইরে আছে৷
.
আয়েশা আপুর কথা শুনে ওরা সব ভাইরা চলে গেলো আদিল ভাইয়াকে খুঁজতে৷ আহিল আর আদিব চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে ডাকছে কিন্তু আদিলের কোনো রেসপন্স নেই৷ ওরা রিসোর্ট থেকে অনেক দূরে চলে গেছে৷ রিসোর্টের আলো আর সেখানে পৌঁছাচ্ছে না৷ ওরা ফোনের টর্চ জ্বালিয়েছে৷ আরও কিছুটা দূর যাওয়ার পর চোখে পরলো আদিলকে৷ সে নদীর পারে একটা পাথরের উপর বসে আছে৷ আর এক ধ্যানে স্বচ্ছ পানির দিকে তাকিয়ে আছে৷ আদনান এগিয়ে এসে আদিলকে দাঁড় করিয়ে কষিয়ে তাপ্পর মেরে দিলো গালে৷

আদনানঃকী মনে করেছিস তুই?? এভাবে একা একা এখানের আসার মানে কী এতো রাত্রে৷ এখানে সাপ ওতো থাকতে পারে৷ যদি কামড়ে দিতো তখন?? তুই বোধহয় আমাদের চিন্তা করিসনা কিন্তু আমরা তো করি৷
.
আদিলঃ কেনো এসেছো তোমরা?? আমাকে একা থাকতে দাও৷ একাকিত্বই এখন আমার একমাত্র সঙ্গি৷ মৃত্যু হলেও আমার কোনো আফসোস নেই৷
.
আদনানঃ আরেকটা চড় বসিয়ে দিবো৷ এসব কী বলছিস তুই হে৷ আমরা তোকে একা ছেড়েছিলাম বলে তুই এখন মৃত্যুকে বরন করে নিচ্ছিস৷ শোন আমরা সব সময় জোড়া ছিলাম আর জোড়াই থাকবো৷আর এরকম পাগলামু করবিনা৷
আদনানের কথা শুনে আদিল ওকে জড়িয়ে ধরলো৷

আদিলঃ আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছিস??
.
আদনানঃহুম৷
🍁🍁🍁
সবার সাথে আদিল ভাইয়াকে ফিরে আসতে দেখে সবাই চিন্তা মুক্ত হলো৷ অদ্রিতা আপু তো কেঁদেই দিয়েছে৷ কোন বোনেরই ভালো লাগবেনা এতো রাতে তার ভাই মিসিং হয়ে গেলে৷
🏜️🏜️🏜️🏜️
সকালে ঘুম থেকে উঠার পরই দেখছি ওরা চার ভাই আবার আগের মতো হয়ে গেছে৷ হেসে হেসে কথা বলছে আনন্দ করছে৷ ছবি তুলছে৷ আমরা এখন উসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে৷ কখনো এই এয়ারপোর্ট দেখেনি৷ এয়ারপোর্টের একদিকে চা পাতার বাগান৷ বেশ উন্নত৷ এয়ারপোর্টের পূর্বের দিকে তাকালে চোখে পড়ে ড্রিম ল্যান্ড পার্কের উচ্চ নাগরদোলা৷

আমরা সবাই এয়ারপোর্ট দেখার পর ড্রিম ল্যান্ড পার্কে আসলাম৷ এই পার্কটা নামের চাইতেও বেশি সুন্দর৷ আদিব ভাইয়া নাগরদোলার টিকিট কেটেছে৷ আমি,আয়েশা আপু,অদ্রিতা আপু,সামান্তা এতো উঁচু নাগরদোলা দেখে ভয়ে শেষ৷ অন্য সবার কথা বলতে পারবোনা কিন্তু আমার ভয়ে গলা কাঠ হয়ে গেছে৷ ভাইয়ারা আশ্বস্ত দিয়েছে তারা আমরা চারজনের সাথে একজন একজন করে বসবে৷ সামান্তা আর আদনান ভাইয়া,আয়েশা আপু আর আদিব ভাইয়া, অদ্রিতা আপু আর আহিল ভাইয়া,আমি আর আদিল ভাইয়া৷

নাগরদোলায় উঠার পর আমি ভাইয়ার চেয়ে ডিস্টেন্স রেখে বসেছি৷ নাগরদোলা ঘুরতেই আমার মনে হলো প্রাণ একেবারে বেড়িয়ে যাবে৷ আমি ভয়ে ভাইয়াকে দুইহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম আর তার বুকে মাথা রাখলাম৷ উপরে উঠলে ভয় করেনা কিন্তু যখন নিচে নামে তখন খুব ভয় করে৷ কিছুক্ষণ পর অনুভব করলাম ভাইয়া তার হাত একটা আমারে পিঠে রেখেছে৷ আমি ভাইয়ার বুকে থেকে উঠে ভাইয়ার দিকে তাকালাম৷ ভাইয়া এক দৃষ্টিতে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে৷ আমি সরে আবারও ভাইয়ার হাত জড়িয়ে ধরলাাম৷ এছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই৷ সামান্তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও কেঁদে কেটে শেষ৷ আদনান ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে আর ভাইয়া মিটিয়েমিটিয়ে হাসছে৷ আপু আর অদ্রিতা আপু তেমন ভয় পাচ্ছেনা৷ প্রায় পাঁচ মিনিট ঘুরার পর নাগরদোলা অফ হলো৷ আমি নেমেও টাল সামলাতে পারছিনা৷ মনে হচ্ছে এখনও ঘুরছি৷ অদ্রিতা আপুর হাত ধরে ধরে হাঁটছি৷

অদ্রিতাঃকার কেমন লেগেছে জানিনা বাট আমার কিন্তু সেই লেগেছে৷ আমি আবারও আসবো৷
.
আরুহিঃতুমি আইসো বইন আমি আর জীবনেও আসবোনা৷ যদি আসিও এই নাগরদোলায় উঠবোনা৷ এ কী উঁচুরে বাবা৷ নাগরদোলা থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত দেখা যায়৷
.
সামান্তাঃশুধু কী তাই!! যখন পাহাড়ের দিকে তাকাই তখন মনে হয় ছিটকে পাহাড়েই পরে যাবো৷
.
আয়েশাঃএখন কোথায় যাবো তাহলে???
.
আদিবঃএখন পার্কের ভিতরে যাবো৷ সেখানে পুল আছে৷ পুলের মধ্যে বোটও আছে৷
.
আদনান ভাইয়া টিকিট কেটে আমাদের ভিতরে নিয়ে গেলো৷ সেখানে অনেক জায়গা নিয়ে পুল৷ আর সেখানে এক বোট আরেক বোটকে ধাক্কা দিচ্ছে৷ আর উপরে উঠছে৷

আরুহিঃসামু এখানে মজা হবে তাইনা???
.
সামান্তাঃহ্যাঁ দেখ কী সুন্দর একটা আরেকটাকে ধাক্কা দিচ্ছে৷ তুই আর আমি একসাথে বসবো৷
.
আরুহিঃআচ্ছা৷
.
অদ্রিতাঃআদি আমরা তো কাপড় আনিনি৷ বোটে উঠলে তো কাপড় ভিজে যাবে৷
.
আয়েশাঃআমি এনেছি, ব্যাগ আদিবের কাছে আছে৷

সবাই ড্রেস চেঞ্জ করে বোটে উঠে পরলাম৷ এখন বসেছি আমি সামু, অদ্রিতা আপু আর আয়েশা আপু,আদনান ভাইয়া আর আদিল ভাইয়া,আদিব ভাইয়া আর আহিল ভাইয়া৷ আমি আর সামু সামনের বোটে উঠেছি৷ যেমনি পিছন থেকে আরেক বোট ধাক্কা দিলো ওমনি আমি আর সামু একে ওপরকে খামচি মেরে ধরেছি৷ ও আল্লাহ্ গো এটাতো দেখছি নাগরদোলা থেকেও আরও ভয়ানক৷ পিছন থেকে আরেক ধাক্কা দিতেই আমি আর সামু একে অপরকে ছেড়ে দিয়ে পানিতে পড়ে গেলাম৷
ইয়া আল্লাহ পানি এতো গভীর কেনো শুনেছিলাম পুলের পানি গভীর কম হয়৷ কিন্তু এটাতে ভারী ডিপ৷ হয়তো পুলে পানি বেশি পরে গেছে৷ আমি নিজেই সাতার জানিনা তার মধ্যে আবার সামু আমার ঘাড় ধরে আছে৷
সামান্তা আর আরুহিকে পানিতে দেখে আদনান আর আদিল ও পানিতে জাম্প দিলো৷ আদনান সামান্তাকে আরুহির কাছে থেকে সরিয়ে নিজের কাছে নিয়ে গেলো৷ আর আদিল আরুহিকে৷ কোনোমতে দুটোকে কোলে করে পাড়ে নিয়ে গেলো৷
নিজেকে আদিল ভাইয়ার কোলে দেখে আমার দিকে তাকালাম ভালো করে আমি৷ কাপড় ভিজে গায়ের সাথে লেপ্টে গেছে৷ ভাইয়া আমাকে কোল থেকে নামাতেই আমি তারাতাড়ি ব্যাগ তেকে দুটো ওরনা বেড় করে একটা সামুকে দিয়ে আরেকটা নিজের গায়ে জড়িয়ে নিলাম৷ আদিল ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে৷ আমি তারাতাড়ি লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিলাম৷ এমন পরিস্থিতিতে পরবো সিলেটে এসে কখনো ভাবিনি৷

আদনানঃসামু তুই এতো ভারী৷ আগে জানলে কোলে নিতাম না৷
.
সামান্তাঃএই তুমি জীম করো৷ আটচল্লিশ কেজির একটা মেয়েকেই কোলে নিতে পারোনা৷

চলবে♥️

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে