#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_১৯
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara
সকালে দরজা ধাক্কানোর শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো আরুহির৷ পাশে তাকিয়ে দেখলো আদিল ওর পাশেই ঘুমিয়ে আছে৷ আরুহি উঠে আস্তে আস্তে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো৷ শরীর খুব দুর্বল মনে হচ্ছে যেনো এখুনি পড়ে যাবে৷ দরজা খুলে ওপারে দাড়িয়ে থাকা ব্যক্তিকে দেখে ভয় পেয়ে গেলো আরুহি৷ নিলা আরুহির গলা টিপে ধরে রুমে ঢুকে গেলো৷আরুহি ওর হাত ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে বাট পারছেনা৷
নিলাঃখুব শখ ছিলো তোর আদিলের সাথে সংসার করার তাইনা কিন্তু তুই তোর এই শখ পূরন করতে পারবিনা৷ কাল মারতে পারিনি তো কী হয়েছে আজ তোকে আমি মেরে তবেই যাবো৷ নিলা এবার দুই হাত দিয়ে আরুহির গলা টিপে ধরলো৷ আরুহি তার হাতের কাছের টব ফ্লোরে ফেলে দিলো যাতে এটার শব্দে আদিল ঘুম ভেঙে উঠতে পারে৷
কিছু ভাঙার শব্দে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠলো আদিল৷ ওর সামনেই নিলা ওর আরুহির গলা টিপে ধরেছে৷ আদিল তারাতাড়ি আরুহিকে ছাড়িয়ে নিজে নিলার গলা টিপে ধরলো৷
আদিলঃএখনো যাসনি তুই?হাউ ডেয়ার ইউ! কালই বলেছিলাম তোকে যে আমার কলিজার গায়ে হাত দিবে তাকে আমি জ্যান্ত পুতে দিবো তবুও তুই আমার কলিজার গায়ে হাত দিলি৷ যদি মনে করে থাকিস যে কাল তোকে ছেড়ে দিয়েছিলাম বলে আজও ছেড়ে দিবো তাহলে তুই ভুল ভাবছিস তোকে তো আজ আমি মেরেই ফেলবো৷
আদিল এমন ভাবে গলা টিপে ধরেছে যেনো এখুনি নিলার প্রান তার দেহ ছেড়ে পালিয়ে যাবে৷ আরুহি ভয়ে আদিলের হাত ধরে ওকে থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু আদিল আরও শক্তে চেপে ধরেছে৷ আরুহি এবার আর চোখে কিছু দেখতে পারছেনা খালি সরষে ফুল দেখছে৷ সে আস্তে আস্তে আদিলের হাত ছেড়ে দিয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পরলো৷ আদিল নিলাকে ছেড়ে আরুহিকে তারাতাড়ি কোলে নিয়ে খাটে রাখলো৷
সকাল সকাল আদিলের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে পাশের রুম থেকে সামান্তা আর আদনান দৌড়ে এলো৷
আদনানঃকী হয়েছে আদি আর এই ব্লাডি এখনো যায়নি ও এখানে কী করছে৷আর রুহির বা কি হয়েছে?
.
আদিলঃআরুহি অজ্ঞান হয়ে গেছে৷
.
আদনানঃনিশ্চয় এই মেয়েকে দেখে ভয় পেয়ে জ্ঞান হারিয়েছে৷
.
আদিলঃনা আদনান এই মেয়ে আমার আরুহিকে আবারও মারতে এসেছিলো৷ যদি আমি ঘুম থেকে তখন না উঠতাম তাহলে ও এতক্ষণে আমার আরুহিকে প্রানে মেরে ফেলতো৷
.
আদনানঃকীহ!!!! এই মেয়ে কাল বোধহয় চড় কম পরে গিয়েছিলো তাই এবার আরও চড় খাওয়ার শখ হইসে তোর৷ কিন্তু এবার আমরা তোকে শাস্তি দিবোনা যা শাস্তি দেওয়ার আইন দিবে তোকে আইনের হাতে তুলে দিবো৷
সামান্তা নিলার সামনে এসে কষিয়ে চড় বসিয়ে দিলো৷ “লজ্জা হওয়া উচিৎ তোর৷ তোর বুঝার দরকার যে যা তোর নয় সেটা তুই জোর করে নিতে পারবিনা৷ অন্যের স্বামীকে কেড়ে নেবার জন্য এই খেলা শুরু করেছিস৷ ভাবলি কী করে যে তুই এতোকিছু করবি আর আদিল ভাইয়া তোকে মেনে নিয়ে বিয়ে করে ফেলবে৷ তোর ভাগ্য ভালো যে রুহির কিছু হয়নি তা না হলে তোকে আজ আমি নিজেই মেরে কুচি কুচি করে মালদ্বীপের সব মাছকে খাওয়াতাম৷ তোর তো ফাঁসি হওয়া দরকার ফাঁসি৷ তোর মতো মেয়ে যাতে আর কারও না হয়৷ তা না হলে কোন মেয়ে তার স্বামীর ঘরে সুখে সংসার করতে পারবেনা৷ অতল গভীরে তলিয়ে যাবে তারা৷ এতটাি গভীরে তলিয়ে যাবে যেখান থেকে ফিরে আসা ইম্পসিবল৷”
কথাটা বলে সামান্তা আরেকটা চড় বসিয়ে দিলো৷
“তুই আমার অনেক বড় কিন্তু আজ আমি বাধ্য হয়ে তোকে চড় মেরেছি কেনো মেরেছি বেশ ভালোই বুঝতে পারছিস কারন তুই তোর লিমিট ক্রস করে ফেলেছিস৷ আজকের পর থেকে তুই আমাদের কেউ না৷ কোনো সম্পর্ক নেই তোর সাথে৷তুই একটা ক্রিমিনাল৷
.
আদিলঃআদনান আমরা শীঘ্রই বাংলাদেশে ফিরছি সো সব রেডি কর৷ আজই আমরা চলে যাবো৷ যতক্ষণ না এই ব্লাডিকে শাস্তি দিতে পারছি ততক্ষণ আমার মনের জ্বলন্ত আগুন নিভবে না
আদিল আরুহির কাছে গিয়ে পানির ছিটে দিলো৷ বেশ কয়েকবার দেওয়ার পর আরুহির জ্ঞান ফিরলো৷
সামান্তা কিছু খাবার এনে আরুহিকে খাইয়ে দিয়ে কিছু মেডিসিনও হাতে ধরিয়ে দিলো৷
🍁🍁🍁🍁
সন্ধ্যায় ফ্লাইট৷ আদিলের কথা অনুযায়ী সবাই আজই বাংলাদশের উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছে৷ আদিল একবারো আরুহির সাথে কথা বলেনি৷ আরুহি কষ্ট হলেও বুঝতে পারছে কথা না বলার কারন৷ সত্যি তো নিলাকে আমাদের সাথে এনে সবার হানিমুনের আনন্দটাই মাটি করে দিয়েছি৷ আমি দুবার বিপদে পড়েছি আর দুবারই আদিল আমাকে বাঁচিয়েছে আজ উনার কথা অমান্য করে নিলাকে আমাদের সাথে আনার কারনে আমি নিজেই মৃত্যুর মুখে পরেছিলাম৷ নিজের প্রাণ নিজের দোষে একটুর জন্য হারাতে যাচ্ছিলাম৷মানুষ একজন আরেকজনকে কীভাবে খুন করতে পারে৷ যদিও ক্রিমিনালদের দ্বারা সবই সম্ভব৷ আদনান আর সামান্তাও মুখ ভাড় করে রেখেছে খুব কষ্ট হচ্ছে আরুহির সবাইকে দেখে৷
🍁🍁🍁🍁
বাংলাদেশে এসে বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত ১০টা হয়ে গেলো৷ আদিল নিলার হাত ধরে টেনে বাসার ভিতরে নিয়ে গিয়ে ছুড়ে মারলো৷ তারপর ফোন বেড় করে কাকে যেনো কল করলো৷ তখন বাড়ির সবাই ডিনারে বসে ছিলো ওদেরকে ফিরে আসতে দেখে সবাই ঘাবড়ে গেলো৷ আহিল আর আদিবও সবাইকে দেখে এগিয়ে এলো৷ আদিব দৌড়ে এসে আরুহিকে জড়িয়ে ধরলো৷
আদিবঃবোন তুই ঠিক আছিস৷
.
আরুহিঃহ্যাঁ ভাইয়া৷
.
চাচীমনিঃআদিল কী হয়েছে তোমরা ফিরে এসেছো কেনো৷ আর কাল ওতো আসতে পারতে আজই কেনো৷
.
আদিলঃযদি আজ না আসতাম তাহলে তোমার গুনধর বোনঝি আরুহিকে প্রাণেই মেরে ফেলতো৷
.
বাবাঃমানে৷
.
আদিল সবাইকে সবটা খোলে বললো৷
আদিলের মা সব শুনে নিলাকে পরপর দুটি চড় মারলেন৷
“বেড় হয়ে যা আমার বাসা থেকে তোদের মতো ক্রিমিনালদের আমার বাসায় কোনো জায়গা নেই৷সামান্তা ওকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দে৷
.
মাঃআমি তোমাকে আমার নিজের মেয়ের মতোই মনে করতাম কিন্তু তুমি এটা কী করলে আমার মেয়ের সাথে৷ কী ক্ষতি করেছিলো আমার মেয়ে তোমার৷ শুনো তোমাকে আমি কোনদিনও ক্ষমা করবোনা কোনদিন না৷
.
আহিল আর আদিবও নিলাকে ইচ্ছেমতো অপমান করলো৷ নিলা মাথা নিচু করে সবটা শুনছে৷
প্রায় আধা ঘন্টা পর পাঁচ ছয় জন পুলিশ খান বাড়িতে ঢুকে গেলো৷ আদিলই তাদের কল করে আসার জন্য বলেছে৷ নিলা পুলিশদের দেখে ভয় পেয়ে গেলো৷
অফিসারঃহ্যালো মিস্টার আদিল খান আমরাতো আপনার মুখ থেকে সবই শুনেছি এখন আমরা প্রমান ছাড়া তো আর আাসামীকে গ্রেফতার করতে পারিনা৷
.
আদিলঃআমাদের নিজের চোখে দেখার চেয়ে বড় কোনো প্রমান হতেই পারেনা অফিসার৷ আমরা কী প্রমাণের জন্য ছবি তুলে রাখবো নাকি৷ এই যে আপনারা প্রমান প্রমান করেন না সব খুনের কিন্তু প্রমান থাকেনা৷ আর আপনারা প্রমান না পেয়ে এটাকে মিথ্যা মামলা বলে দামাচাপা দিয়ে দেন আর ক্রিমিনাল শান্তিতে জীবনযাপন করে৷ কিন্তু এটা আমি হতে দিবোনা৷ ওই যে মেয়ে দেখছেন এটাই কালপ্রিট৷ ও দুবার আমার স্ত্রীকে মারার ট্রাই করেছে৷
.
সামান্তাঃকে বলেছে প্রমান নেই৷ আমার কাছে আছে তো৷
সামান্তা ওর ফোন বেড় করে একটা ভিডিও প্লে করলো যেটাতো নিলা বলছে,,,বেশ করেছি৷ ওর তো মৃত্যু হওয়ারই ছিলো৷ ওর কারনে আমি আদিলকে পাইনি৷ আমার আফসোস হচ্ছে দুবার চেষ্টা করেও ওকে মারতে পারলাম না৷
.
আদিবঃকী পুলিশ আরও প্রমান চাই নাকি৷ ক্রিমিনাল তো নিজের দোষ নিজেই স্বীকার করছে৷
.
নিলা দৌড়ে পালিয়ে যেতে নিতেই লেডি পুলিশ ওকে ধরে নিলো৷ তারপর সবার সম্মতিতে পুলিশ ওকে গ্রেফতার করে নিয়ে চলে গেলো৷ নিলা কিচ্ছু করতে পারলো না৷
পরিবেশ একেবারে ঠান্ডা যে যার রুমে চলে গেলো৷ আদিল ও আরুহির দিকে না তাকিয়ে চলে গেলো৷
আরুহি আদিলের পিছন পিছন সেও গেলো৷
আরুহি আদিলের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে বাট আদিল আরুহিকে এভয়েড করছে৷
“তুমি আমাকে এভয়েড করছো কেনো?প্লিজ কথা বলো আমার খুব কষ্ট হচ্ছে তো৷
,
তবুও আদিল আরুহির সাথে কথা বলছেনা৷
“কথা বলবেনা তো৷ আমার মরে যাওয়াই উচিত ছিলো তাহলে এটলিস্ট কেউ রাগ করে মুখ ফুলিয়ে রাখতো না৷
আদিল আরুহির দিকে চোখ গরম করে তাকালো৷ আরুহি আদিলের তাকানো দেখে চোখ নামিয়ে নিলো৷ আদিল আরুহি কে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো৷
আদিলঃআমার কী রাগ করাটা উচিত নয় বলো৷ আজ তোমার কারনে আমি আমার কলিজাকে হারিয়ে ফেলতাম যদি তুমি মরে যেতে তাহলে আমিও এমনি এমনি মরে যেতাম,আর যদি তোমার মুখে মরার কথা শুনি তাহলে আমার চাইতে কেউ খারাপ হবেনা দেখো৷
.
আদিল আমাকে তুমি করে বলছে৷(মনে মনে)
আদিল একটু মুচকি হেঁসে বললো,
“এটাই ভাবছো তো যে তোমাকে তুমি করে বলছি৷ কী করবো তখন তো আমার বোন ছিলে তাই তুই করে বলতাম কিন্তু এখন আমার বউ এখন তো একটু ভদ্র হতেই হয় তাই-না৷
উত্তরে আরুহিও একটু মুচকি হাসলো৷
চলবে♥️♥