#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_১৮_বোনাস_পার্ট
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara
নিলা বালি থেকে উঠে দৌড়ে পানির মধ্যে ঝাপিয়ে পড়লো৷ সারা শরীর তার বালুতে মাখামাখি হয়ে গেছে৷
আদনান আর সামান্তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এক ডাব থেকে দুজনে পাইপ দিয়ে ডাবের জল খাচ্ছে৷ খাওয়ার মধ্যেই আদনানের মুঠোফোন বেজে উঠলো
আদনানঃআমার শাশুড়ী মায়ের কল এসে গেছে৷
.
আদনান হানিমুনে গেলে ছবি তুলে তো পাঠালে না৷
.
ঔ আসলে ছবি তোলা হয়নি দুটো তুলেছি৷ দাঁড়াও এই দুটোই পাঠাচ্ছি৷
দুটো ছবিই নিলার৷ একটার মধ্যে আরুহি ওকে নাকানি চুবানি দিচ্ছে আরেকটাতে মুখ থুবরে পড়ে আছে৷
সামান্তাঃশুধু আমরাই মজা নিবো নাকি সবারই মজা নেওয়ার অধিকার আছে হিহি৷
🍁🍁🍁
আরুহি আর আদিল দোলনায় আরও কিছুক্ষণ বসে পাড়ে চলে আসলো৷ সন্ধ্যাও হয়ে গেছে৷ সবাই রিসোর্টে ফিরে গেলো৷
আদিলঃ আরুহি তুই আগে চেঞ্জ করে নে তারপর আমি৷
.
আচ্ছা৷
আরুহি বাথরুমে চলে গেলো৷
“আআআআআআ
.
আরুহির চিৎকার শুনে আদিল দৌড়ে বাথরুমের কাছে চলে গেলো৷
“আরুহি কী হয়েছে তোর৷ ওপেন দ্যা ডুর৷
.
আরুহি দরজা খুলে বেড়িয়ে আসলো৷ কাপড় যেমন তেমন ওই আছে৷
.
একি তুই ড্রেস চেঞ্জ করিসনি৷
.
কীভাবে করবো৷ সব দেখা যায় গ্লাস দিয়ে আমি এখানে কাপড় চেঞ্জ করবোনা প্লিজ৷
.
ধুর এটা দিয়ে দেখা যায় না৷
.
সত্যি
.
পাক্কা৷
🍁🍁🍁
আরুহি চেঞ্জ করে আসার পর আদিল চলে গেলো চেঞ্জ করার জন্য৷ বেড়িয়ে এসে খাটের দিকে একবার তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে ফেললো৷
এই মেয়েটা কে?আর আমার রুমেই বা কী করছে৷ আরুহি কোথায়৷
.
মেয়েটি আদিলকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো৷
.
তুমি এতো হ্যান্ডসাম কেনো?
.
আরুহির কন্ঠ শুনে ঘুরলো আদিল একি এটাতো আমার আরুহি বাট ও এমন ড্রেস পড়েছে কেনো৷
একটা গেঞ্জি আর জিন্সের প্যান্ট গলায় স্কার্ফ পেছানো৷
.
তুই এসব কী পরেছিস৷
.
কেনো সবাই যা পড়ে৷
.
হুম৷
.
তারাতাড়ি রেডি হয়ে নাও আমরা এখন বীচের রাতের দৃশ্য দাড়িঁয়ে দাড়িয়ে দেখবো৷
🍁🍁🍁
সবাই রিসোর্টের পাশে দাঁড়িয়ে বীচ দেখছে৷ জ্যোৎস্নার আলো পরছে পানিতে৷ ঢেউ বালির কাছে আসতেই বালি নীল রং ধারন করছে৷ যেনো মনে হচ্ছে কেউ হীরে এনে রেখেছে এমন ভাবে চিকচিক করছে৷ এখানে সবাই আছে শুধু নিলা ছাড়া৷
সামান্তাঃএকি নিলা আপু কোথায়৷
.
আরুহিঃআমি দেখছি৷
আরুহি নিলার রুমে চেক করলো কিন্তু না সে কোথাও নেই৷ আরুহি হাঁটতে হাঁটতে রিসোর্টে একেবারে শেষ প্রান্তে চলে গেলো৷ ঠিক তখুনি দুটো হাত ওকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিলো৷
আরুহি নিজেকে পানির উপরে রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু সে পারছেনা ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে৷
এতো সময় হয়ে গেলো অথচ আরুহি এখনও আসছেনা দেখে আদিল এবার বেশ চিন্তায় পড়ে গেলো৷
আদিলঃআদনান আরুহি তো এখন আসেনি৷ কোনো বিপদ হয়নি তো ওর৷
.
আদনানঃহ্যাঁ তাইতো৷চলতো গিয়ে দেখি৷
.
আদনান আর আদিল ওকে রুমে না পেয়ে আরেকটু সামনে চলে এলো৷ তখনি ওদের কানে পানিতে সাতার কাটলে যে শব্দটা করে সেরকম শব্দ পৌঁছালো৷
ওরা দৌড়ে সেখানে চলে গেলো৷
গিয়ে দেখলো নিলা হাত তালি দিয়ে হাসতেছে৷
ওরা আর নিলার দিকে না তাকিয়ে আরেকটু সামনে গেলো৷
নিচে তাকাতেই দেখলো কে যেনো পানিতে একেবারে ঘুর্ণিঝড় তুলে ফেলছে৷ আদিলের আর তাকে চিনতে বেশি সময় লাগলোনা৷
সেও ঝাপিয়ে পড়লো পানিতে৷ আরুহিকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলো কিন্তু সেও তাল সামলাতে পারছেনা পানি অনেক গভীর৷ আদনান দৌড়ে বড় দড়ি এনে পানিতে ফেললো৷ আদিল এক হাত দিয়ে আরুহিকে ধরলো আরেক হাত দিয়ে দড়ি৷আরুহি কোনো রেসপন্স করছেনা পুরো ভর আদিলের উপর ছেড়ে দিছে৷ আদিল অনেক কষ্টে দড়ি ধরে উপরে উঠলো৷
আদনান আরুহিকে কোলে নিয়ে দৌড়ে রুমে চলে গেলো
আরুহিকে চিৎকার করে ডাকছে সামান্তা আর আদনান কিন্তু আরুহির কোনো রেসপন্স নেই৷
আদনানঃরুহি বোন আমার প্লিজ চোখ খোল প্লিজ৷
.
সামান্তাঃরুহি চোখ খুলছিস না কেনো৷ তুই উঠছিস না কেনো৷ আদনান রুহি উঠছেনা কেনো ওকে আমরা হারিয়ে ফেলবো নাতো৷
.
আদনানঃনা আমার রুহির কিচ্ছু হবেনা ওর কিচ্ছু হতে দিবোনা আমি৷
আদনান পাগলের মতো রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো৷ রিসোর্টের সবাইকে জিজ্ঞেস করছে ডক্টর আছে কী না৷ কিন্তু কোন ডক্টর নেই৷ আদনান সুপারি গাছের সাথে হেলান দিয়ে কাঁদতে থাকলো৷ আরুহিকে খুব ভালোবাসে সে৷ চোখের মনি আরুহি৷ যদি আজ আরুহির কিছু হয়ে যায় তাহলে মা বাবার সামনে কীভাবে দাঁড়াবে সে৷ আদনানের চোখ মুখ একদম লাল হয়ে গেছে কাঁদতে কাঁদতে৷ আদনান আরুহির রুমের দিকে তাকিয়ে নিরবে চোখের জল ফেলছে৷ সে দেখলো আদিল একটা লোককে নিয়ে রুমে ঢুকছে৷ লোকটাকে দেখে আদনানের মনে আশার আলো জাগলো৷ সে দৌড়ে আরুহির রুমে চলে গেলো৷
আদিল লোকটার কথা অনুযায়ী আরুহির পেটে চাপ দিয়ে যাচ্ছে৷ প্রতিটা চাপে আরুহির মুখ দিয়ে পানি বেরুতে লাগলো৷ আদিল এখনও চাপ দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু এখন আর পানি আসছেনা৷ লোকটি আদিলের কাঁধে হাত রেখে বললো,,
“আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি আর সেখানকার ডক্টর আমি৷আমার সাথে আমার স্ত্রী আর বাচ্চা কাচ্চা এসেছে কেউই সাতার জানেনা তাই আমি সাথে করে অনেকগুলো ইনজেকশন এনেছি যাতে কেউ পানিতে পড়ে গিয়ে অবস্থা খারাপ হয়ে গেলে এই ইনজেকশনটা দিতে পারি৷ আর এই ইনজেকশন দিলে আপনার স্ত্রীরও জ্ঞান আসবে ইনশাআল্লাহ, এখন যদি আপনি বলেন তো আমি পুশ করতে পারি৷
.
আদিলঃহ্যাঁ ডক্টর নিশ্চয়৷
.
লোকটি ইনজেকশন দিয়ে চলে গেলেন আর বলে গেলেন তিন ঘন্টা পর ওর জ্ঞান ফিরবে৷
আদিল এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরুহির দিকে৷ চোখ থেকে অঝোরে পানি পরছে৷ আদনান আর সামান্তারও সেম অবস্থা৷
🍁🍁🍁
প্রায় চার ঘন্টা পর আরুহির জ্ঞান ফিরলো৷ সে কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা৷ গায়ে অনেক জ্বর৷ উঠতে চাইলে আদিল ওকে আবার শুয়ে দিলো আর ঘুমাতে বললো৷
আরুহি চোখ বুজার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লো৷
.
আদিলঃসামান্তা ওকে দেখে রাখিস আমি আর আদনান একজনের সাথে দেখা করে আসছি৷
.
আদিল আর আদনান চলে গেলো নিলার রুমে৷নক করার বেশ কিছুক্ষন পর এসে নিলা দরজা খুলে দিলো৷
“আরে তোমরা এতো রাত্রে এখানে কেনো?
আদিল রুমে ঢুকেই নিলার গালে কয়েকটা চড় বসিয়ে দিলো৷
আদিলঃ”আমি প্রমিস করেছিলাম আমি আর কোনো মেয়ের গায়ে হাত তুলবো না কিন্তু তুই আমায় তুলতে বাধ্য করলি৷ আমার কলিজায় হাত দিয়েছিস তুই তোকে আমি ছাড়বোনা৷
আদিল ওকে একের পর এক চড় দিয়েই যাচ্ছে বেচারির ঠোঁট ফেটে রক্ত ঝরছে৷ আদিল থেমে গেলে আদনানও নিলার গালে চড় বসিয়ে দিলো৷
.
আদনানঃতুই আমার চোখের মনি আমার নিজের বোন তাকে এভাবে মৃত্যুর মুখে টেলে দিলি৷ সামান্যর জন্য রুহি বেঁচে গেলো৷ যদি আমার বোনের আজ কিছু হতো তাহলে এই মালদ্বীপে তোকেই মেরে বালিতে পুতে দিতাম৷ কথাটা বলে আদনান আরও কয়েকটা চড় বসিয়ে দিলো৷
জানিস কখনো কারও গায়ে হাত তুলিনি কিন্তু আজ তুই যা করলি সেটার জন্য তুলতে বাধ্য হলাম৷ আদিল একবার আমর বোনের গায়ে হাত তুলেছিলো ওকে তো অপমান করেছিলামই সাথে সবাই কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছিলাম আর সেই জায়গায় তুই আমার বোনকে মারার চেষ্টা করেছিলি৷আমরা পৌছাঁতে আরেকটু দেড়ি করলেই আমার বোন এতক্ষনে,, আদনান আর কিছু বললো না ফুপিয়ে কেঁদে দিলো৷
আদিল নিলার হাত ধরে টেনে বাইরে ছুরে মেরে দরজা লক করে দিলো৷
নিলাঃএকি দরজা বন্ধ করলে কেনো৷?
.
আদিলঃকারন আজ সারা রাত তুই রিসোর্টের বাইরে থাকবি আর সকালে উঠে যাতে তোকে আর এখানে না দেখি তা না হলে একেবারে খুন করে ফেলবো বলে দিলাম৷
.
আদনান আর আদিল চলে গেলো৷ নিলাও আর কোনো উপায় না পেয়ে সুপারি গাছের নিচে চলে গেলো৷
🍁🍁🍁
আদিল রুমে ঢুকতে না ঢুকতেই আদিবের কল তাও অডিও না ভিডিও৷ আদিবের ফোন দেখে আদিল কিছুটা ঘাবড়ে গেলো৷ তাও সে কল রিসিভ করলো৷
আদিবঃআদিল ভাইয়া আমার বোন কোথায় ও নাকি পানিতে পরে গিয়েছিলো৷আমার বোনকে দেখাও প্লিজ ওকে না দেখলে আজ রাতে ঘুমাতে পারবোনা আমি৷
.
আদিল আদিবকে দেখালো৷ আদিব আরুহিকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো৷
.
আদিবঃআচ্ছা রাখছি আমি৷
.
আদিলঃশুন বাড়ির কাউকে এ বিষয়ে বলবি না৷ আমরা বিডিতে ফিরে সবাইকে বিষয়টা বলবো৷
.
আদিবঃআচ্ছা৷
.
আদিল ফোন রেখে সামান্তার দিকে তাকালো৷
“আদিবকে তুই বলেছিস তাইনা৷ ”
.
সামান্তাঃহ্যাঁ আদিব ভাইয়া ফোন করেছিলো আর বলেছিলো রুহির কাছে ফোন দিতে আদিব ভাইয়া রুহির সাথে কথা বলতে চায়৷তাই আমি বাধ্য হয়ে বলে ফেলেছি৷
.
আদিলঃঠিকাছে তোরা এখন শুয়ে পড় যা৷
.
আদনান আর সামান্তা চলে গেলে আদিল দরজা বন্ধ করে আরুহিকে জড়িয়ে ধরে সেও ঘুমিয়ে পড়লো৷
চলবে♥️
[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷ ]