সুপ্ত অনুভূতি পর্ব-১১

0
2494

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_১১
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

সিলেট থেকে ঢাকায় এসেছি আজ দুইদিন হয়ে গেছে৷ অদ্রিতা আপুর বিয়ের আর মাত্র ছয় দিন বাকি আছে৷ অথচ এখনো কোন কেনাকাটা হয়নি৷ তাই আজ সবাই শপিংয়ে এসেছি৷ আমাদের সবার কেনাকাটা কমপ্লিট অথচ আদিব ভাইয়া মেয়েদের মতো একটার পর একটা ড্রেস দেখেই যাচ্ছে৷ ভাইয়াকে শপিংয়ে নিয়ে এলে এই সমস্যা প্রথমে জীবনেও কিছু চয়েজ করবেনা পরে আসার সময় হাতের কাছে যা পাবে তাই কিনবে চয়েজ হোক বা না হোক৷আদিব ভাইয়া প্যান্ট হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখছে৷ কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে ভাইয়ার হাত থেকে প্যান্ট ছো মেরে নিয়ে নিলো৷

“আরেহ্ বাহ প্যান্টটা তো দারুণ!!! আমি এইটা নিবো৷
.
এই যে মিস অচেনা এটা আমি আগে চুজ করেছি ওকে তাই প্যান্টটা দিয়ে দিন আমি নিবো এটা৷
.
আমার নাম আছে তাই অচেনা অজানা বলে ডাকবেননা৷
.
তা কী নাম আপনার শুনি৷
.
আমার নাম ফারিহা ইসলাম মেঘা৷ সবাই ফারিহা বলে ডাকে৷
.
আচ্ছা৷ প্যান্টটা এবার দিয়ে দেন৷
.
বললাম তো আমি এটা নিবো কথা কানে যায়না আপনার৷
.
আর ইউ মেড৷ আপনি তো হান্ড্রেড পারসেন্ট মেড তা না হলে ছেলেদের প্যান্ট কোনো মেয়েরা নেয় নাকি৷বাইরে দোকানের নাম দেখেননি বড় বড় করে লিখা আছে জেন্টস৷ আর আমি এখুনি এই মুহুর্তে পাবনায় ফোন দিচ্ছি আর তাদের বলছি যে আপানাদের পাগলাগারদ থেকে একটা পাগল পালিয়ে এসেছে৷ আর সে এখন মর্ডান হওয়ার চেষ্টা করছে৷
.
আমার কথা বললে নিজের কথাটাও একটু বইলেই কেমন৷আপনি নিজে ওতো পাবনা থেকে পালিয়ে এসেছেন৷ ইউ নো ওয়াট এক পাগল আরেক পাগলকে খুব সইজেই চিনে ফেলে৷ আর আপনি ওতো একটা পাগল আর আমার কী মনে হয় জানেন আপনি পাবনার পাগলাগারদে ছিলেন তাই আমি কোথা থেকে এসেছি সেটা খুব সহজেই বুঝতে পেরে গেছেন,রাইট৷ আশ্চর্য আমি কী একবারো বলেছি যে আমি এটা আমার জন্য নিবো৷ এটাতো আমি আমার ভাইয়ার জন্য নিবো গিফ্ট করবো বলে৷ পাগল আমি না আপনি৷ পাগলা কোথাকার৷
.
হেই ইউ মাইন্ড ইউর লেঙ্গুয়েজ৷ আমার মতো হ্যান্ডসাম ড্যাশিং বয়কে আপনার কাছে মেড মনে হচ্ছে৷ ওহ মাই গডন্যাস৷কোথায় যাই আমি৷
.
লিসেন,এক কাজ করেন আপনার ড্যাশিং হ্যান্ডসাম বরং আপনার পকেটে রাখেন৷ এসব অন্য মেয়েকে দেখাবেন কেমন৷ যত্তসব৷
.
আদিবও মেয়েটির হাত থেকে প্যান্ট টান মেরে নিয়ে নিলো৷

“মামা এটার দাম কত৷
.
চার হাজার পাঁচশো৷
.
এই নিন পাঁচহাজার বাকি পাঁচশো অন্য একদিন এসে নিয়ে যাবো৷
.
আয়েশাঃহুম তারপরও আদিব পাঁচশো টাকা ছাড়বেনা৷
.
মামা এটার মতো সেম আরেকটা হবে৷
.
না আর নেই একটাই ছিলো৷
.
মেয়েটা আদিবের দিকে শক্ত চোখে তাকিয়ে বললো,
আপনাকে আমি দেখে নিবো৷
.
কচু দেখবে৷
.
আদিব ভাইয়াকে আমরা এই প্রথম কোনো মেয়েদের সাথে ঝগড়া করতে দেখেছি তাও মেয়েদের মতো৷ এতোদিন তো আহিল ভাইয়া মেয়েদের সাথে ঝগড়া করতো এবার আদিব ভাইয়া হিহিহিহি৷
🍁🍁🍁🍁
শপিং করা শেষ অথচ সামান্তা আর আদনান ভাইয়ার কোনো খুঁজ নেই৷ এই দুজন ভালোই প্রেম করছে৷ শুধু প্রেম নাই আমার কপালে৷ তাতে কী আমার জন্যও এমন কেউ আসবে যে আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসবে ওদের সবার ভালোবাসাকেও হার মানাবে৷ যে আমাকে একমুহূর্তের জন্যও একা ছাড়বেনা ছায়ার মতো পাশে থাকবে৷ প্রটেক্ট করবে৷ আচ্ছা আমি যা ভাবছি সত্যি যদি এমন কেউ আসতো৷ আমার কেন জানিনা এসব মনে হলেই আদিল ভাইয়ার কথা মনে পড়ে৷ শুধু এটাই মনে হয় আমার সব চাওয়া পাওয়া আদিল ভাইয়াকে ঘিরে৷ভাইয়াকে না দেখলে একদম ভালো লাগেনা আমার৷ এই দুইদিন আমি ভাইয়ার চেয়ে আড়ালে আড়ালে থেকেছি৷ তাও আমাদের প্রায়ই চোখাচোখি হয়েছে৷ যখনই ভাইয়ার দিকে তাকাই তখুনি দেখি ভাইয়ার মুখে মিষ্টি হাসি লেগে আছে৷ প্রতিটি রাত আমি ভাইয়াকে নিয়ে ভাবি এখন৷ ভাইয়ার হাসি মাখা মুখ চোখ বুঝলেই অন্ধকার এক দেয়ালে বিশাল ছবির মতো ভেসে উঠে যেটা শুধুমাত্র আমিই দেখি৷ এগুলো কী শুধুই অনুভূতি নাকি ভালোবাসা৷
আদিব ভাইয়ার ধাক্কাতে হুস আসলো আমার৷

আদিবঃতুই এখানে স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কী ভাবছিস৷
আদনান ভাইয়া আর সামান্তাকে পেয়েছিস???
.
না তো আচ্ছা আমি সামনে এগিয়ে দেখছি৷ তা আয়েশা আপু আর অদ্রিতা আপু কোথায়৷
.
ওরা জুয়েলারি কিনছে৷
.
আচ্ছা
আমি এগিয়ে গেলাম সামনে রাস্তা ঘাটের দিকে ভালো করে তাকাচ্ছি কিন্তু কোথাও কেউ নেই৷ রোডের বাম পাশে তাকাতেই দেখলাম সামু কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে আসছে৷ আর ওর পিছুপিছু আদনান ভাইয়া৷
সামু আমাকে দেখে দৌরে এসে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে দিলো৷

“সামু কী হয়েছে তোর? আর ইউ ওকে?
.
রুহি,, রুহি আদিল ভাইয়া এক্সিডেন্ট করেছে৷
.
কীহ!!!! কিন্তু কিভাবে৷
.
কার দিয়ে৷ ভাইয়ার সারা শরীর জখম হয়ে গেছে৷ ভাইয়ার অবস্থা খুব ক্রিটিকাল৷
.
আদিল ভাইয়ার কথা শুনে আমার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরছে৷ দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার৷ সামুর কাছ থেকে হসপিটালের নাম জেনে আর না দাঁড়িয়ে চলে গেলাম হসপিটালে৷ পিছন থেকে সামু অনেকবার ডেকেছে কিন্তু পাত্তা দেইনি আমি৷ আমার মনে হচ্ছে আমার কলিজা কেউ ছিনিয়ে নিচ্ছে৷ কেন এমন হচ্ছে কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা আমি আর বুঝতে চাইওনা৷
আমি সারা হসপিটালের করিডোর দিয়ে দৌড়াচ্ছি আর ডক্টর নার্সকে পেলে জিজ্ঞেস করছি তারা কেউ আদিল নামের কাউকে এডমিট করেছে কী না৷ কিন্তু সবাই না করছে৷
আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছিনা৷ আদিল ভাইয়া কোথায় থাকতে পারে৷ আমি পিছন ঘুরতেই কারও বুকের সাথে ধাক্কা খেলাম মুখ মুখ তুলে ব্যাক্তিটির চেহারা দেখে চমকে উঠলাম আমি৷আদিল ভাইয়া আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে৷ একেবারে সুস্থ শরীরে৷ তারমানে সামু তখন যে বললো ভাইয়া এক্সিডেন্ট করেছে৷ কিন্তু ভাইয়াতো আমার সামনে সুস্থ শরীরে দাঁড়িয়ে আছে৷একেবারে ফিট৷ তারমানে সামু মিথ্যা বলেছে৷ কিন্তু কেন?

ভাইয়া তুমি নাকি এক্সিডেন্ট করেছো?
.
হ্যাঁ৷
.
তাহলে তুমি যে আমার সামনে সুস্থ শরীরে দাঁড়িয়ে আছো৷
.
তোর কী মনে আমি মরে যাই৷
.
ভাইয়ার মুখে মরার কথা শুনে খুব কষ্ট লাগলো আমার৷ এসব কী বলছে ভাইয়া৷ আমি কখনো এসব ভাবতে পারি নাকি৷
.
সামান্তা যে বললো তুমি এক্সিডেন্ট করেছো আর সারা শরীর নাকি জখম হয়ে গেছে আর তোমার অবস্থা নাকি ক্রিটিকাল৷
.
হুম আমি এক্সিডেন্ট করেছি৷ শুধু হাতে আর বুকে একটু ব্যাথা পেয়েছি৷তবে হসপিটালে এডমিট হইনি৷ সামান্তা মিথ্যা বলেছে তোকে৷
.
আমি ভাইয়ার কথা শুনে হাতের দিকে তাকালাম সত্যি হাতে ব্যান্ডেজ করা৷ সাদা শার্টও রক্তে লাল হয়ে আছে অনেক জায়গায়৷ যা আগে আমার চোখে পড়েনি৷ আমি আর কিছু না ভেবে ভাইয়ার বুকে ঝাপিয়ে পড়লাম৷ চোখ থেকে পানি ঝর ঝর করে পরছে৷ বেশ কিছুক্ষন পর এভাবেই থাকার পর অনুভব করলাম ভাইয়া আমার পিটে হাত রেখেছে৷

তুই যে আমার জন্য এতো পাগল সেটা যদি আজ এক্সিডেন্ট না করতাম তাহলে জানতেই পারতাম না৷ ভাগ্যিস মারা যাইনি নাহলে তোর পাগলামুটা যে দেখতে পারতাম না৷
.
প্লিজ স্টপ টকিং ননসেন্স,ইট হার্টস টু হেয়ার ইউ ডাই৷ ড্যাম ইট!!!!
.
আমার মুখে মরার কথা শুনলে তোর কষ্ট হয়৷ কিন্তু কেনো??
.
কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি৷
কথাটা বলার সাথে সাথেই ভাইয়া আমায় টাইট করে জড়িয়ে ধরলেন৷ আমার যখন মনে হলো আবেগের বশে আমি কী বলে ফেলেছি সাথেসাথেই আমি ভাইয়াকে ছাড়িয়ে দূরে সরে এলাম৷
.
ছিঃ রুহি৷ সত্যি তুই পাগল হয়ে গেছিস৷ নিজের মনের অনুভূতিগুলো প্রকাশ না করলে কী এমন হয়ে যেতো৷ এখন ভাইয়া কী ভাববে আমাকে৷ ধুর ধুর৷

“হয়েছে নিজেকে আর গালাগাল করতে হবেনা৷ তা আমার কাছ থেকে উত্তর নিলি না তো যে আমি তোকে ভালোবাসি কী না৷
.
তার দরকার নেই আমি জানি৷
.
কী জানিস??
.
জানি এটাই তুমিও আমাকে ভালোবাসো৷
কথাটা বলে হনহনিয়ে চলে এলাম সেখান থেকে৷ ভাগ্যিস তেমন কেউ ছিলোনা৷ লাঞ্চ টাইম হওয়াতে সবাই লাঞ্চ করায় ব্যাস্ত৷
আমি সিএনজিতে উঠতে যেতেই ভাইয়া আমাকে টেনে নিয়ে কারে বসিয়ে দিলেন৷ আমি এক দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি৷ ভাইয়ার দিকে আর তাকাতে পারবোনা৷ ভিষন লজ্জা করছে৷

আদিল ড্রাইভ করছে আর আরুহির দিকে তাকাচ্ছে৷
সামু মিথ্যা কথা বলে এক কাজ ভালোই করেছে৷ রুহি আমি তোকে সবার আগেই মনের কথা বলতাম কিন্তু তোর কাছে যে আমি অপরাধী ছিলাম৷ সেদিনের পর থেকে তোর সামনে যেতেও আমার লজ্জা করতো৷ কি অন্যায়টাই না করেছিলাম রাগের বশে তোর সাথে৷ আমি এটাই চাইছিলাম যাতে তুই আমাকে তোর মনের কথা বলিস৷আর আমি এই কয়েকদিন ধরেই দেখছি তুই আমার দিকে তাকিয়ে সাথেসাথে চোখ সরিয়ে নিস৷ কিন্তু সেটা ঘৃণার নয় লজ্জার৷ অনেকদিন তোর থেকে দূরে দূরে থেকেছি কিন্তু আর নয় খুব শীঘ্রই তোকে আমার করে নিবো রুহি৷

চলবে♥️

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে