সুপ্ত অনুভূতি পর্ব-০৫

0
2670

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_৫
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

আমি সামান্তা, রিংকি ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছি৷ গেটের দিকে চোখ পরতেই দেখলাম আদিল ভাইয়া বাসায় ঢুকছেন৷ নিশ্চয় পাত্রের চরিত্র কেমন সেটা জানার জন্য বেড়িয়ে গেছিলেন৷

আরুহিঃএই দেখুন আপনার গুনধর ভাই বাসায় প্রবেশ করছেন৷
.
সামান্তাঃসকালে গিয়েছিলো আর এখন বাসায় এসেছে৷ কোথায় গিয়েছিলো ভাইয়া বলতো??
.
আরুহিঃআর কোথায় যাবে,নিশ্চয় পাত্রের সম্বন্ধে জানার জন্য বেরিয়ে গেছিলো৷ একটা কথা বলি,তোর ভাই যে আমাদের পাত্রের পিছনে লেগেছে সে নিজে কেমন হ্যাঁ৷ আদিল ভাইয়ার চেয়ে রিফাতই বেটার৷ ও এটলিস্ট তোর ভাইয়ের মতো মেয়েদের গায়ে হাত তুলেনা৷
.
সামান্তাঃতো যা না রিফাতের কাছে যা, আমরা কেউ তোকে মানা করবোনা৷
.
ছাঁদে আরও বেশ কিছুক্ষন ঝগড়া করে চলে এলাম নিচে৷ আমরা তিনজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছি তখুনি একটা ৩ বছর বা ৪ বছরের হবে পিচ্চি মেয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো তারপর ঠোঁট উল্টে বললো,,

“আপুলা আমাদেল মিত্তি কই৷
.
আরুহিঃওলে পিচ্চিলে,,,মিত্তি কিসের মিত্তি৷
.
আমলা যে আসাল তময় নিয়ে এতেতি ওই মিত্তি৷
.
আরুহিঃওরে সামু,ওরে রিংকু তোরা দেখলি ভালো করে কথা বলতে পারেনা আবার মিষ্টির হিসাব ঠিকই করতে পারে৷
.
সামান্তাঃদেখ বইন তুই আবার এর সাথে ঝগড়ায় লেগে পড়িস না৷
.
আরুহিঃমিত্তি খাবি৷ কয়তা মিত্তি খাবি৷ আয় তোলে মিত্তি দেই৷
.
মেয়েটা আমার কথা শুনে ফোকলা দাঁতে হেসে ফেললো,,
.
আল্টি তবাই বলে আমি নাকি তুন্দল কলে কথা বলতে পালিনা এখন দেখি তুমিও কথা বলতে পালনা,,হিহি৷
.
ওই ছেমরি আমি সুন্দর করে কথা বলতে পারি ওকে৷
আমি মেয়েটাকে নিয়ে যেখানে মিষ্টি রাখা সেখানে গেলাম তারপর হাতে দুইটা মিষ্টি ধরিয়ে দিয়ে বিদায় করলাম৷
🍁🍁🍁🍁

সাড়ে চারটার দিকে পাত্র পক্ষরা বিদায় হলো৷ উনারা উনাদের মতামত রাতে ফোন করে জানাবেন৷আমরা সবাই আপাতত খাবার খেতে বসেছি৷ কারও খাওয়া হয়নি দুপুরে৷ সামান্তা সবার প্লেটের দিকে তাকাচ্ছে একবার তো নিজের প্লেটের দিকে তাকাচ্ছে একবার৷ আমি সামুর অবস্থা বুঝতে পেরে মিটিয়েমিটিয়ে হাসছি৷

সামান্তাঃমা,চাচীমনি৷ আমার সাথে কিন্তু গুরুতর অন্যায় করছো তোমরা৷ সবার পাতে মাংসের বড় বড় পিস অথচ আমার পাতে গলার পিস৷
.
আরুহিঃতো আর কী পেতে চাস তুই৷ সকাল থেকে যে আমরা কাজ করে যাচ্ছিলাম তখন কোথায় ছিলে তুমি৷ আর এখন বড় পিস কেনো দিয়েছেন সেটা নিয়েও ঝেড়া করছিস৷
.
সামান্তা নাক ফুলিয়ে এসব দিয়েই খেয়ে যাচ্ছে৷
🍁🍁🍁
সন্ধ্যায় বিছানা ঝাড়ু দিচ্ছি আর সামান্তা ফোন টিপছে৷ ঝাড়ু দিতে দিতেই আমার মনে হলো আহিল ভাইয়া তো আমার জন্যে পেস্ট্রি এনেছিলো৷ ফ্রিজে রেখে দিয়েছিলাম৷বিছানা ঝাড়ু দিয়ে ফ্রিজ থেকে পেস্ট্রির প্যাকেট বেড় করে এনে বিছানায় আসাম করে বসে প্যাকেট খুললাম৷ মোট চার ফ্লেভারের পেস্ট্রি আছে, ভ্যানিলা,চকলেট,স্ট্রবেরি,ম্যাংগো৷ আমি সবগুলো বেড় করে মনোযোগ সহকারে খেতে লাগলাম৷ পাশে তাকাতেই দেখলাম সামু ঠোঁট উল্টে তাকিয়ে আছে৷

আরুহিঃদেখতে পাচ্ছিসনা খাচ্ছি? এভাবে তাকিয়ে থাকার মানে কী? আমার পেটে ব্যাথা করবে তো৷
.
সামান্তাঃআমারে না দিয়ে খেলে পেটে ব্যাথা করবেই৷ প্লিজ বইন আমারে ইট্টু দে৷
.
আরুহিঃদিনশেষে আমার কাছেই আসা লাগে৷ এই নে ধর চকলেট ফ্লেভারের৷ শুধু মনে রাখিস আমি কতো দয়ালু৷
.
সামান্তাঃখোঁটা দিচ্ছিস??
.
আরুহিঃমনে করতে পারিস৷
.
সামান্তা ভেঙচি কেটে খাওয়ায় মন দিলো৷ নিচ থেকে কেমন যেন ঠাসঠুস আওয়াজ আসছে কানে৷ আমি সামান্তাকে নিয়ে নিচে গেলাম দেখতে কিসের আওয়াজ করছে৷
গিয়ে দেখলাম,আদনান ভাইয়া, আদিব ভাইয়া, আদিল ভাইয়া, আহিল ভাইয়া তারা চারজন ক্যারম খেলছে৷
আদনান ভাইয়া আমাকে দেখে একটু দাঁত খেলিয়ে বললেন,,

আদনানঃএকটু চা হবে৷ আসলে খেলতাম আর খেতাম আরকি৷
.
আরুহিঃতোমরা সবাই কী আমাকে কাজের বেটি,জরিনা,মর্জিনা ,ছকিনা পাইছো নাকি৷ সকাল থেকে একটার পর একটা ফায় ফরমাশ দিয়েই যাচ্ছো৷
.
আহিলঃসামান্তা তুই বানাতো আজ৷ দেখি কেমন বানাস৷
.
সামান্তাঃআমি পারি না তো৷
.
আরুহিঃতা পারবি কেনো৷ শুধু তো গিলতেই পারিস৷ আর ভাইয়া একে না বললে কী হতো৷ আমিতো একটু ভাব দেখাচ্ছিলাম৷ দুমিনিট পর এমনি এমনি চা বানাতে যেতাম৷ ওকে বলে শুধু শুধু মুখটা নষ্ট করলে তো৷ কথাটা বলে কিচেনে চলে গেলাম আমি৷ আমার পিছন পিছন সামান্তাও আসছে৷ আমি তাকের উপর থেকে কয়েকটা আলু নিলাম৷ পাকোড়া বানাবো বলে৷

সামান্তাঃরুহি আলু দিয়ে কী করবি?? ভাইয়া তো চা খেতে চাইছে৷
.
আরুহিঃশুধু চা খাওয়াবো নাকি৷ আলু দিয়ে পাকোড়া বানাবো আর সাথে চাও দিবো৷

সামান্তা আরও দুটো আলু নিলো৷
পাতিলে চায়ের পানি দিতেই সে আরও এক কাপ পানি ঢেলে দিলো৷ আমি শুধু সামান্তার কান্ড দেখছি৷ সে আজকে সব কিছুই বাড়িয়ে বাড়িয়ে দিচ্ছে৷

আরুহিঃআচ্ছা তোর আজ কী হয়েছে বলতো৷ সব কিছু বাড়িয়ে বাড়িয়ে দিচ্ছিস যে৷
.
সামান্তাঃদিচ্ছি এই কারনেই তুই তো আর আদিল ভাইয়ার ভাগ দিসনি তাই৷
.
আরুহিঃ সব সময় মানুষকে নিজের মতো ভাবিস কেনো?তোকে একবারও বলেছি আমি৷ যে আমি ভাইয়ার ভাগ দেইনি৷ মানছি ভাইয়া আমার সাথে যা করেছে অন্যায় করেছে তাই বলে সবাই খাবে আর ভাইয়া চেয়ে চেয়ে দেখবে নাকি৷ ভাইয়ার ভাগও দিয়েছি৷ এতটাও খারাপ না আমি৷

আমি চা পাকোড়া বানিয়ে ভাইয়াদের দিলাম৷ আদিব ভাইয়া পাকোড়া দেখে হেসে ফেললেন,,,

আদিবঃতোকে শুধু চায়ের কথা বলেছিলাম তুই দেখছি পাকোড়াও এনেছিস৷ খুব ভালো করেছিস৷
.
আরুহিঃশুধু চা খাওয়া যায় নাকি৷ তাই পাকোড়াও এনেছি৷
.
আমি ভাইয়াদের কাছ থেকে চলে গিয়ে অদ্রিতা আপু আর আয়েশা আপুর কাছে গেলাম চা পাকোড়া নিয়ে৷ ওরা দুজন একি রুমে বসে বসে গল্প করছে৷ আমার হাতে চা আর পাকোড়া দেখে দুজনই এগিয়ে এলো৷

অদ্রিতাঃবাহ্ বেশ করেছিস চল আজ চা আর পাকোড়া খাবো আর ছোটবেলার কথা গল্প করবো৷
অদ্রিতা আপু পাকোড়া একটা মুখে দিয়ে বললেন,,,

জানিস রুহি তুই যখন জন্ম নিয়েছিলি তখন কে বেশি এক্সাইটেড ছিলো৷
.
না তো৷ না বললে জানবো কী করে
.
হুম সেটাই৷ আদিল বেশি এক্সাইটেড ছিলো৷ ওই সবার আগে তোকে কোলে নিয়েছিলো৷ তখন ওর বয়স ছয় বা সাত হবে৷ তোকে কোলে নিয়ে সেকি আদর৷ কারও কাছে দিবেনা৷ সব সময় তোর কাছে থাকতো৷ ভিষন আদর করতো তোকে৷
.
আয়েশাঃআর যে আদর করতে পারে সে মারতেও পারে৷
.
অদ্রিতাঃমারায় মারায় ব্যবধান আছে৷ মার দিলে শুধু একটা চড় দিতে পারবে এর বেশি কিছুনা৷
.
কিন্তু আমি যে বেল্ট দিয়ে মেরেছি৷
আদিল ভাইয়ার কথা শুনে সবাই তাকালাম তার দিকে৷ ভাইয়া পকেটে দুই হাত গুজে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷

অদ্রিতাঃমানে কী আদি তুই রুহিকে মেরেছিস৷ কিন্তু কেনো??
.
আদিল ভাইয়া এ টু জেট সব খুলে বললো অদ্রিতা আপুকে৷ আপু শুনে ঠাসসস করে চড় বসিয়ে দিলো ভাইয়ার গালে৷

অদ্রিতাঃছিঃ আদি ছিঃ৷ তোকে নিজের ভাই বলতেও লজ্জা করছে আমার৷ ও তোকে ভাইয়ের অধিকার দিয়েছে কিন্তু বেল্ট দিয়ে মারার অধিকারটা দেয়নি৷ কী করে পারলি তুই ওর সাথে এরকম মিসবিহেভ করতে আর নির্মম ভাবে মারতে৷ তুইতো দেখছি পশুর চাইতেও কম নস৷ জানি তোর রাগ বেশি তাই বলে রাগ কন্ট্রোল করবিনা৷বুঝিয়ে বলতে পারতিস আর না বুঝলে চড় দিতে পারতি তা না করে তুই সোজা ওকে বেল্ট দিয়ে মেরেছিস৷ আর রুহি তোরও দোষ আছে৷ তোরও উচিৎ ছিলো আদিকেও কয়েক ঘা বসিয়ে দেওয়া৷ তখন আদিও বুঝতো বেল্টের একেক টা বারি কতটা মজার৷

আদিল ভাইয়া গালে হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আর অদ্রিতা আপু কথা শুনিয়েই যাচ্ছে৷

আয়েশাঃহয়েছে যা হবার তা হয়ে গেছে৷ আমার মনে হয়না আদি আর দ্বিতীয় বার এমন কিছু করবে৷
.
অদ্রিতাঃকেনো ও এমন করবে৷ ছোট নাকি ও৷ যে সব সময় যা মন চাইবে তাই করবে৷ এখন ও সময় আছে আদি নিজের রাগ বর্জন কর৷ রাগকে প্রাধান্য দিসনা৷ তুই বুঝতে পারছিস বিষয়টা বাসায় জানাজানি হলে ব্যাপারটা কী হবে৷ আদনান, আদিব এক মুহুর্তের জন্য ভুলে যাবে যে তুই ওদের ভাই হস৷

চলবে♥️

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে