#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_৪
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara
বাড়িতে তোরজোড় চলছে৷ আজ নাকি বাড়ির সবচেয়ে বড় মেয়ে অদ্রিতা আপুকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে৷ যেহেতু আমার বিয়েটা হয়নি তাই বড় আব্বু অদ্রিতা আপুর বিয়ের ব্যবস্থা করছেন৷ আমাদের তো আবার বোনের অভাব নেই একটা একটা করে আস্তে আস্তে সবকটাকে বিদায় করতে হবে৷ আমি শুধু বসে বসে সামান্তাকে দেখছি৷ বেচারি সকাল থেকে সাজা শুরু করেছিলো এখনও সাজতেছে৷ আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটা ভেংচি কেটে বললো,,,
“কী রে এভাবে কী দেখছিস??
.
“তোকে দেখছি৷তোকে খুব বান্দর লাগছে ইয়ার আমিতো প্রেমে পড়ে গেছি৷ না জানি আজ পাত্র পক্ষ তোকে দেখে ভয়ে না পালিয়ে যায়৷
.
“তুই তো আমার প্রশংসা জীবনেও করিস না৷ কী বলতে চাস সেটা বল৷ আমি জানি তুই কিছু বলতে চাস৷
.
“রিংকিকে তো আসার জন্য বললি না সেদিকে খেয়াল আছে৷
.
ওহ্ তাইতো৷ প্লিজ ওকে একটু ফোন করে বলে দে যাতে ও তারাতাড়ি চলে আসে৷ আমার একটুও মনে ছিলোনা৷
.
“মনে থাকবে কী করে৷ আমি পারবোনা ফোন দিতে৷ পারলে নিজে দে আর না দিলে নাই৷ আমি যে স্মরণ করে দিয়েছি সেটাই অনেক৷
.
“তুই সব সময় আমার সাথে এমন করিস৷ ঠিক আছে আমিই ফোন দিচ্ছি৷ তা তুই সাজবি না??
.
বিয়ে তো আর আজই না৷ আমার ড্রেস পড়ে আরেকটু লিপস্টিক লাগালেই সাজ কমপ্লিট হয়ে যাবে৷ তোর মতো এত সাজ না সাজলেও চলবে৷আমরা তো আর নিজেকে হিন্দি নায়িকা মনে করিনা৷
.
তুই সবসময় আমাকে টিজ করিস৷ না করলে তোর পেটের ভাত হজম হয়না৷
.
না হয়না৷
কথাটা বলে সামান্তার রুম থেকে চলে আসলাম৷ সকাল থেকে চাচীমনি আর আম্মুকে হেল্প করে যাচ্ছি৷ আর উনি সকাল ৯টায় উঠেছেন তারউপর আবার কাউকে হেল্প না করে সাজায় বসে পড়েছে৷ আমার কী ট্যাকা পড়ছে নাকি৷ এখন আবার যেতে হবে গিয়ে ছাঁদ ঝাড়ু দিতে হবে৷ এতো বড় ছাঁদ আমার পক্ষে একা ঝাড়ু দেওয়া সম্ভব নয়৷ রিংকি আসুক তাকে নিয়েই না হয় ছাঁদ ঝাড়ু দিবো৷ বাকি সবাই তো কাজে ব্যাস্ত৷ আর সামুতো সেজে সেজে মডেল হচ্ছে৷ আরে ইয়ার কাজ সেরে তারপর রেডি হস তখন দেখিস আমি তোকে টিজ করি কী না৷
ছাঁদে অনেক্ষন বসে রইলাম একা একা৷ একটা ব্রেঞ্চে বসে রেলিঙয়ে মুখ দিয়ে রেখেছি৷ গেটের দিকে চোখ পড়তেই দেখলাম রিংকি ওর চুল ঠিক করতে করতে আসছে৷ আমি ওকে দেখে মুখ তুলতেই থুতনিতে ব্যাথা অনুভব করলাম৷ এতোক্ষন রেলিঙে মুখ দিয়ে রাখার ফলে থুতনিতে ব্যাথা করছে৷ আমি থুতনি ডলতে ডলতে নিচে গেলাম৷ গিয়ে দেখলাম ও সোফায় বসে আছে৷ কিচেনে গিয়ে ওর জন্য এক গ্লাস অরেঞ্জ জুস বানিয়ে ওর সামনে ধরলাম৷ রিংকি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,,
“আজ অরেঞ্জ জুস দিচ্ছিস যে!!
.
আগে খা তারপর বলবো৷
.
আচ্ছা
.
রিংকি জুস খাওয়ার পর ওকে নিয়ে ছাঁদে গেলাম৷ তারপর হাতে একটা শলার ঝাড়ু ধরিয়ে দিলাম৷
“একি রে এটা তো ঝাড়ু এটা দিয়ে কী হবে৷ কী করবো আমি৷
.
বোন এটা দিয়ে আমাকে মার৷ মেরে তারপর তোর ব্যাগে পুরে নিয় যাস৷
.
তোকে মারবো তো বুঝলাম৷ কিন্তু আবার ব্যাগে করে নিয়ে যাবো কেনো৷
.
এটা দিয়ে ছাঁদ ঝাড়ু দিবো ছাগলনি৷ এই জিনিসটা বুঝতে তোর এতো সময় লাগে৷ নে এবার কাজে লেগে পর পাত্র পক্ষ এই এলো বলে৷
.
রিংকি ছাঁদ ঝাড়ু দিতে দিতে বললো,,
“পাত্র পক্ষ কী আজ রাত্রে ঘুমায়নি নাকি৷ যে সকাল এগারোটায় চলে আসবে৷ সব নাহয় বুঝলাম কিন্তু সামু কোথায় ওকে তো দেখতে পাচ্ছিনা৷
.
আমিও ঝাড়ু দিতে দিতে বললাম,,ওতো রুমে, সেজে সেজে মডেল হচ্ছে৷ সামু থাকলে কী আমি আর তোকে কাজে লাগাই নাকি৷কিছু মনে করিসনা হে,বিপদে পড়েই কাজে লাগিয়েছি৷
.
ধুর তোরা তো আমার বোনের মতোই৷ আর এই বাড়িকে আমি আমার নিজের বাড়িই মনে করি৷
.
ঝাড়ু দিয়ে ময়লা ছাঁদের এক কোনায় রাখতেই আহিল ভাইয়ার আগমন৷ ভাইয়াকে দেখে রিংকি তারাতাড়ি নিজের ওরনা জরিনার মতো যে দিয়েছিলো সেটা তারাতাড়ি এখন আধুনিকার মতো দিলো৷ আমি ওর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে আহিল ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,,
“আরে তুমি এখানে৷
.
তোকে খুঁজতেই এসেছিলাম৷
.
কী দরকার৷
.
আসলে আমার কয়েকটা ময়লা টি-শার্ট আর প্যান্ট ছিলো ওগুলো যদি একটু ধোয়ে দিতি৷
.
আজ সবাই আমাকে কী পেয়েছে হ্যা৷ প্রথমে মা আমাকে দিয়ে পেয়াজ কাটালো৷ চোখ থেকে আনলিমিটেড পানি ঝরছিলো তখন৷ তখন যদি কোনো সাংবাদিক আমাকে দেখতোনা একটা নিউজ বানিয়ে ফেলতো সাথে সাথে৷ যেমন,,এই দেখুন বাংলাদেশের সবচেয়ে অভাগী নারী৷ যিনি কষ্টে কেঁদে কেটে গঙ্গা যমুনা বহিয়ে ফেলছেন৷মানে তখন সাংবাদিকেরও আমার জন্য কষ্ট হতো৷ কিন্তু আমার মায়ের হয়নি৷ আমার মা আমাকে মোট পাঁচ থেকে ছয় কেজি পেয়াজ কাটিয়েছে৷ এখনও আমার চোখ জ্বলতেছে৷ তার উপর আবার চাচীমনি আমাকে সবজি কাটায় বসিয়ে দিয়েছেন৷ আজ বসতে বসতে আমার কোমড় গেছে৷
.
কেনো আয়েশা কোথায়??
.
আয়শু আপু সারা বাড়ি পরিষ্কার করছে৷
.
আর সামান্তা সে কোথায়??৷
.
সে তো মডেল হচ্ছে৷
.
আাচ্ছা আমার এগুলো ধোয়ে দিস বাজার থেকে আসার সময় পেস্ট্রি আনবো৷
.
তাহলে ঠিক আছে৷
.
“আহিলেরটা ধোয়ে দেওয়ার সময় আমারও কতগুলো শার্ট আছে ওগুলো ধোয়ে দিস৷”
আদিব ভাইয়ার কথা শুনে অবাক হয়ে গেছি আমি৷ এরা কী পেয়েছে কী আমাকে৷
“আমি পারবোনা তোমরা গিয়ে সামান্তাকে বলো৷ আমি সব কাজ একা একা করবো নাকি৷
.
আদিবঃ সে তো সাজছে তাই তোকে বলেছি৷ প্লিজ বোন আমার রাগ করিস না৷ একটু কষ্ট কর৷ বাজারে যেতে হবে তা নাহলে নিজেই ধোতাম৷
.
ঠিকাছে৷ধোয়ে দিবো তার আগে তোমরা ওই যে কোনায় ময়লা রাখা আছে ওগুলো ফেলে আসো৷
.
আহিলঃ কী আমাদের মতো হ্যান্ডসাম ছেলেরা এসব করবো৷
.
তোমরা নিজেকে হ্যান্ডসাম,ডেশিং,স্মার্ট ভাবতেই পারো কিন্তু আমার কাছে তোমরা মোটেই এসব না তাই টাইম ওয়েস্ট না করে তারাতাড়ি ময়লা ফেলে দাও৷
.
আদিবঃ চল আহিল ময়লা গুলো ফেলে দেই৷
আমি আর রিংকি ছাঁদ থেকে এসে সোজা আহিল ভাইয়ার রুমে ঢুকলাম খাটের মধ্যেই সব কাপড় রাখা৷ ঘড়ির দিকে চোখ পরতেই দেখলাম ১২ঃ১০ বাজে৷ হায় আল্লাহ্ ওরাতো চলে আসবে৷ রিংকি তুই গিয়ে রেডি হয়ে নে৷ আমি কাপড় কেচে তারপর রেডি হবো৷
.
“তুই এতো কাপড় নিজে কাচবি৷ চল আমিও হেল্প করি৷
.
যথেষ্ট হেল্প করেছিস এবার গিয়ে রেডি হো যা৷ যদি তোর মতো সামুও আমার একটু দরদ বুঝতো৷
.
রিংকি চলে গেলো৷ আমি আদিব ভাইয়ার কাপড় এনে দুজনের কাপরই কাচতে লাগলাম৷ অনেক গুলো কাপড়৷ বেশ কিছুক্ষন পর কেমন অচেনা অচেনা কন্ঠ শুনছি৷ তারমানে ওরা চলে এসেছে৷ আমি তারাতাড়ি করে কাপড় গুলো ধুতে থাকলাম৷ কাপড় ধোয়ে বালতি হাতে ড্রয়িং রুমে তাকাতেই দেখলাম ছোট বড় কতো সদস্য বসে আছে৷ আমি আর না দাঁড়িয়ে সিড়িতে পা রাখতেই পিছন থেকে কে যেন বলে উঠলো,,
“আপনাদের বাড়ির কাজের মেয়েটা কিন্তু খুব সুন্দর৷ এতো সুন্দর কাজের মেয়ে পান কই থেকে৷
.
ছিঃ ছিঃ কী লজ্জা কী লজ্জা৷ শেষে কী না কাজের মেয়ে হতে হলো৷
আমি আর দেড়ি না করে তারাতাড়ি ছাঁদে গেলাম৷ কাপড় রোদে দিয়ে নিজের রুমে গেলাম তারপর একটা ড্রেস বের করে সেটা পড়ে একটু সাজুগুজু করলাম৷ একেবারে রেডি হয়েই নিচে গেলাম৷ সামু আমাকে দেখে ফিসফিসিয়ে বললো,,
সামান্তাঃতুই এতো ফাস্ট!!
.
আরুহিঃতোমার শান্তি হয়েছে তো৷ নিজে তো মেহমানের সামনে মডেল,নায়িকার পরিচয় পেলে আর আমি কাজের মেয়ের৷
.
সামান্তাঃসোয়াগ সে কারিঙ্গে সাবকা সোয়াগাত৷
.
আরুহিঃতুই গান গাইছিস৷
.
সামান্তাঃএকচুয়েলি নট৷ আমি মেহমানদের বরন করার কথা বলছি৷
আরুহিঃওদেরকে বরন করা হয়ে গেছে অলরেডি৷
সামান্তা আর আমার ফিসফিসানি দেখে আম্মু আমাদের ড্রয়িং রুম থেকে বিদায় করে দিয়েছেন৷
আমি, রিংকি, সামান্তা আমার রুমের খাটে বসে আছি৷ বেশ কিছুক্ষন পর একটা ছেলে এলো৷ আমরা কেউ ওই তাকে চিনতে পারছিনা৷ তার দিকে হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছি৷তারপরও নিজেকে ঠিক করে সৌজন্যতার খাতিরে বললাম,,
“আরে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো বসুন?
.
ছেলেটা ধপ করে সোফায় বসে পরলো তারপর বললো,
আপনারা আমাকে চিনতে পারছেননা আমি বুঝতে পারছি৷ আসলে আমি পাত্রের ভাই আকাশ৷ আপনাদের পরিচয়টা কী জানতে পারি৷
.
“হ্যা নিশ্চয়, আমি আরুহি,ও আমার কাজিন সামান্তা আর ও আমার বেস্টফ্রেন্ড রিংকি এন্ড আমরা তিনজন একসাথেই লেখাপড়া করি৷এটাই আমাদের পরিচয়৷
.
তা একটা কথা জিজ্ঞেস করি??
.
হ্যাঁ নিশ্চয়৷
.
আপনাদের বয়ফ্রেন্ড নেই৷
.
আছে তো আমাদের তিনজনেরই বিএফ আছে৷
.
ছেলেটা কিছু না বলে মোবাইল ঘাটতে শুরু করলো৷ আরও কিছুক্ষন বসে তারপর চলে গেলো৷
সামান্তাঃতুই মিথ্যা বললি কেনো?ইশ ছেলেটা কতো কিউট ছিলো৷
.
আরুহিঃতুই চুপ কর ছেলে দেখলেই শুরু হয়ে যায় তোর৷ বল আমি ছেলেটিকে আবার ডেকে আনছি৷
.
রিংকিঃএই আদিল ভাইয়াকে তো দেখছিনা৷
.
সামান্তাঃহ্যাঁ আমি ও দেখতে পারছিনা৷ ভাইয়া কোথায় গেছে বলতো৷
.
আরুহিঃজাহান্নামে যাক তোর ভাই৷
.
সামান্তাঃরুহি!!!তুই ভাইয়াকে জাহান্নামে পাঠাচ্ছিস৷
.
আরুহিঃহ্যাঁ পাঠাচ্ছি৷ তোর ভাই আমাকে নির্যাতন করেছে তারপর তার জায়গা তো জাহান্নামেই হবে৷ যদি আমি ক্ষমা না করি৷ আর আমি জানিও না তোর ভাইকে কোনদিন ক্ষমা করতে পারবো কী না৷
চলবে♥️