#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_৩
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara
ভার্সিটিতে গিয়ে দেখলাম আদিল ভাইয়া আর আদনান ভাইয়া মেয়েদের সঙ্গে বসে হেসে হেসে কথা বলছে৷
আজবতে কাল আমি পাত্র পক্ষের সামনে গিয়েছিলাম বলে আমাকে কীরকম মেরেছিলো৷ আর যে নিজে মেয়েদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে এসব কিছুই না৷ যদি আদিল ভাইয়া আমার ছোট হতো তাহলে এখন আমি গিয়েও কয়েক ঘা বসিয়ে দিতাম৷
আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রিংকি আর সামান্তা দুজনেই ভ্রু কুচকালো৷
“কী রে এরকম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কী দেখছিস৷ ক্লাসে চল৷ (রিংকি)
.
হুম চল৷
.
ক্লাসে অনেক্ষন যাবত বসে আছি আর আড় চোখে রিংকি আর সামান্তাকে দেখছি৷ ওরা আমার দিকে ভ্রু কুচকানোর পাশাপাশি কপাল কুচকেও তাকিয়ে আছে৷ তাকানোর কারন হলো আমি ওদের সাথে কথা বলছিনা৷ ওরা বকবক করছেই কিন্তু আমি পাত্তা দিচ্ছিনা৷ খাতার মধ্যে ইচ্ছে মতো আঁকিবুঁকি করছি৷ সামান্তা আর না পেরে আমার কাছ থেকে খাতাটা কেড়ে নিলো,,,
“অনেক হয়েছে রুহি৷ আমাদের সাথে এমন করছিস কেনো তুই৷ কী হয়েছে তোর৷ আচ্ছা রুহি একটা কথা বলতো কাল বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত তো সবকিছু ঠিকই ছিলো কিন্তু আজ সকাল থেকেই তোকে একদম ঠিক লাগছেনা৷ আমি জানি তুই রিফাতের ব্যাপার নিয়ে একদমি আপসেট নস৷ তাহলে কী নিয়ে আপসেট তুই (সামান্তা)
.
“হ্যাঁ আমিও লক্ষ করছি৷কী হয়েছে বলতো৷ তুই তো এমন চুপচাপ থাকিস না৷ (রিংকি)
.
কাম অন ইয়ার আমার কিছু হয়নি৷ জাস্ট ভালো লাগছিলোনাা তাই একটু আকিঁবুকিঁ করছিলাম৷ কিন্তু তোরা তো শান্তিতে এটাও করতে দিলিনা৷
.
কথা ঘুরাস না রুহি তোকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি কিছুটা একটা হয়েছে তোর৷ প্লিজ বল৷(সামান্তা)
.
বলবো তাহলে শুন!!! তোর ভাই কাল রাতে আমায় বেল্ট দিয়ে পিটিয়েছে৷ বোনকে কেউ এভাবেও মারতে পারে সেটা আমার দৃষ্টির অগোচরে ছিলো কিন্তু কাল প্রাকাশ্যে চলে এসেছে৷ দোষ কী ছিলো আমার জানিস শুধু তোর ভাইয়ের কথা অমান্য করে রিফাতের সামনে গিয়েছিলাম বলে৷ মানছি আমি রিফাতের ক্যারেক্টার ভালোনা৷ আমি তো আর আগে জানতাম না৷ বাবার কথা অমান্য করতে পারছিলাম না তাই আমি রিফাতের সামনে গিয়েছিলাম৷ ছোট বোন হিসেবে একটা চড় ওতো মারতে পারতো, তা না করে আমায় বেল্ট দিয়ে মেরেছে৷ বেশি হলেও দশটা বারি তো দিয়েছেই এখনও আমার পিঠ ব্যাথা করছে৷ জানিস আবার হিরোদের মতো ব্যালকনি দিয়ে এসে মলমও লাগিয়ে দিয়েছে৷ কী পেয়েছে আমাকে তোর ভাই আমি ওতো একটা মানুষ নাকি৷ এরকম অমানুষিক অত্যাচার কেউ করে নাকি৷ সি ইয়ার তোর ভাই বোনকে যেভাবে মেরেছে না জানি তার বিয়ে হলে নিজের বউকে কীভাবে পেটায়৷ তবে এরকম যদি হয় তাহলে তোর ভাইকে নিষেধ করবি এমন যাতে না করে খুব ব্যাথা করে রে বেল্ট দিয়ে মারলে৷বুঝতে পারছিস আদনান ভাইয়া আর আদিব ভাইয়া যদি শুনে তাহলে এক মুহুর্তের জন্য ভুলে যাবে যে ওরা একে অপরের ভাই হয়৷ তোর ভাই নব্বই দশকেই পড়ে আছে৷ দেখতিনা তখন বেত বেল্ট দিয়ে যে মারতো৷ তোর ভাইও সেম৷ কি হতো এভাবে না মারলে৷ আমি মানছি আদিল ভাইয়ার রাগ বেশি তাই বলে রাগ কন্ট্রোল করবেনা৷ দেখ সামু এটা আকস্মিক হয়েছিলো তাই আমি তোর ভাইকে আমাকে মারা থেকে আটকাতে পারিনি৷ কিন্তু এরপরও যদি এমন করে তাহলে আমিও তার গায়ে হাত তুলতে বাধ্য হবো৷ আমি ভুলে যাবো যে সে আমার বড় ভাই হয়৷ নারী নির্যাতন আমি এমনিতেই সহ্য করিনা আর সেটা কিনা নিজের সাথেই ঘটলো৷
এক নাগারে কথাগুলো বলে থামলাম আমি৷ মনের মধ্যে জমিয়ে রাখা কথাগুলো বলে দিলাম৷
.
এসব কী বলছিস রুহি!!!ভাইয়া তোকে এভাবে মেরেছে চিৎকার তো নিশ্চয় করেছিলি তাহলে আমরা কেউ তোর চিৎকার শুনিনি কেনো৷
.
প্রথমে এটা নিয়ে আমিও চিন্তিত ছিলাম আফটার মনে হলো আমাদের রুম তে স্পেশাল সাউন্ড প্রুফ করা যার জন্য আমার চিৎকার কারো কানে পৌঁছায়নি৷
.
ছিঃ!!!আদিল ভাইয়া এতোটা চিপ৷ আমার ভাবতেই কেমন লাগছে৷ এই জন্যেই আমার আহিল ভাইয়াকে ভালো লাগে৷ ভাইয়ার মেজাজ একেবারে ঠান্ডা৷ যা করবে একশোবার ভেবেচিন্তে করবে৷ রাগকে কোন সময়ই প্রাধান্য দেয়না৷ আদিল ভাইয়া একেবারে আহিল ভাইয়ার বিপরীত৷ ওরা সিবলিংস বাট কেউ দেখলে বুঝবেই না৷
.
এক্সেক্টলি,,তাইতো আমার আহিল ভাইয়া কে এতো ভালো লাগে৷ হি লাইক এ ইনোসেন্ট বয়!!
.
রিংকির কথা শুনে আমি আর সামু দুজনই ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছি ও যখন আহিল ভাইয়ার কথা বলছিলো তখন মনে হয়েছিলো যেন অন্য এক জগতে হারিয়ে গেছে৷ আমাদের দুজনকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,,,
“আব আমি এভাবে বলতে চাইনি৷ আসলে আহিল ভাইয়া ভালো এটাই বলেছি৷ নাথিং এল্স৷
.
হুম আমরা কী তোকে কিছু বলেছি নাকি৷(আরুহি)
রিংকি একটা ভেংচি কেটে বই মেলে বসে রইলো এমন ভাবে বই পড়ছে মনে হচ্ছে এক মিনিটেই সে বিদ্যাসাগর হয়ে যাবে৷ আমার মনে হয় ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরও এরকম মনোযোগ দিয়ে বই পড়েননি৷৷ সামান্তা ও বাইরে গেছে৷ বেশ কিছুক্ষন পর সামান্তা এলো ওর চোখ ছলছল করছে৷
“কী রে সামু তোর আবার কী হয়েছে৷(আরুহি)
.
রুহি আদনান ভাইয়া একটা মেয়েকে প্রপোজ করেছে৷ আমি দেখেছি৷(সামান্তা)
.
হ্যাঁ এটতো গুড নিউস৷ আমরা ভাইয়ার কাছ থেকে এর জন্যে ট্রিটও চেয়ে নিবো৷ কিন্তু তোর কী হলো???
.
না কিছুনা৷
.
আরে বুঝতে পারছিস না রুহি, তোর ভাই যে মেয়েটাকে প্রপোজ করেছে সেটা সামু মেনে নিতে পারছেনা৷ ওর মনে অলরেডি আদনান ভাইয়ার জন্য লাড্ডু ফুটছে৷(রিংকি)
.
“কী যা তা বলছিস এসব একদমি না৷
.
হ্যাঁ সেটাতো দেখতেই পারছি৷
.
ওকে ওকে এখন ঠিক হয়ে বসেন ঘন্টা পড়ে গেছে স্যার চলে আসবেন৷ (আরুহি)
🍁🍁🍁🍁🍁
বাড়িতে এসে শাওয়ার সেরেই আমি আদনান ভাইয়ার রুমে গেলাম৷ ভাইয়া তখন শার্টের বোতাম লাগাচ্ছেন৷ আমাকে দেখে বললেন,,,
.
কী রে কিছু আনতে হবে নাকি??
.
উহু,,একটা কথা জানতে এসেছি৷
.
কী কথা??
.
তুমি নাকি ভার্সিটির একটা মেয়েকে প্রপোজ করেছো? তা কে সে??
.
ওটা প্রপোজ ছিলো নাকি৷
.
তাহলে কী ছিলো??
.
আমার এক ফ্রেন্ড একটা মেয়েকে প্রপোজ করবে এখন কীভাবে প্রপোজ করবে সেটা বুঝতে পারছেনা৷ তাই তাকে একটু অভিনয় করে দেখালাম৷
.
তা মেয়েটা যদি সত্যি মনে করে যে তুমি তাকে প্রপোজ করেছো৷ সত্যি ভালোবাসো৷
.
না এমন মনে করবেনা৷ কারন ওর বয়ফ্রেন্ড আছে৷ আর জানে আমরা যে অভিনয় করেছি৷
.
আরেহ বাহ,,তুমিতো খুব শেয়ানা হয়ে গেছো৷ কিভাবে প্রপোজ করতে হয় সেটাও জানো দেখি৷
.
ওই একটুই৷ আচ্ছা আমি বেড়োচ্ছি আসার সময় তোর জন্য চকলেট আনবো৷
🍁🍁🍁🍁
আমি ভাইয়ার রুম থেকে এসে সামান্তার রুমে গেলাম৷ বেচারি ভার্সিটি থেকে এসে শাওয়ার সেরে আর বাইরেই যায়নি৷ খাটে উপুর হয়ে শুয়ে বালিশে মুখ গুজে রেখেছে৷
“আদনান ভাইয়া মেয়েটিকে প্রপোজ করেনি৷”
.
আমার কথা শুনে মুখ তুলে তাকালো সামান্তা৷ মুখে বালিশের চাপ পরে মুখ লাল হয়ে গেছে৷
“মানে৷ তাহলে আমি তখন যা দেখলাম সব কী ভ্রম ছিলে নাকি৷
.
না ভ্রম ছিলোনা৷ তুই যা দেখেছিস ওইটা অরিজিনাল প্রপোজ ছিলোনা৷ ভাইয়ার এক ফ্রেন্ড প্রপোজ করতে চিনেনা তাই ভাইয়া শিখিয়ে দিয়েছিলো৷ এ ছাড়া আর কিছুইনা৷
.
ওহ৷
.
কেনো তুই খুশি হসনি,ভাইয়া যে মেয়েটাকে অরিজিনাল প্রপোজ করেনি৷
.
খুশি হওয়া না হওয়ার কী আছে আজব৷
.
হুম সেটাই৷
সামান্তার রুম থেকে চলে আসার পর দেখা হলো আদিল ভাইয়ার সাথে, কানে ইয়ারফোন গুজে ছাঁদের দিকে যাচ্ছে৷ আদিল ভাইয়াকে এখন এক মুহুর্তের জন্যও সহ্য হয়না আমার৷
চলবে♥️♥️