#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_২
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara
সকালে ঘুম থেকে উঠে অনুভব করলাম পিঠে ব্যাথা খুব কম করছে৷ মলমটা তাহলে কাজ করেছে৷ কিন্তু একটা কথা আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে যে আমি চিৎকার করলাম বাট কেউ শুনলো না কেনো৷ কিছুক্ষণ ভাবার পর হঠাৎই মাথায় এলো আমাদের বাসায় সবার রুম সাউন্ড প্রুফ৷ যার কারনে আমার চিৎকার কারও কানে যায়নি৷ আর আদিল ভাইয়াও এই সুযোগটাই নিয়েছে৷ ডাকাত এসে যদি মেরে ফেলে তখন চিৎকার করলেও তো কেউ শুনবেনা৷ না বাবা রিস্ক নেওয়া যাবেনা৷ আজ তো শুধু ভাইয়া মেরেছে অন্যদিন যদি অন্য কিছু করে, সাবধানের মার নেই৷ আমি আজই বাবাকে বলবো যাতে রুম আর সাউন্ড প্রুফ না রাখে৷ আর একা একা ঘুমাবো না সামান্তা,আয়েশা আপু বা অদ্রিতা আপুকে সাথে নিয়ে ঘুমাবো৷ আপাতত এখন ব্রেকফাস্ট করতে হবে৷ তারপর আদিল ভাইয়ার সাথে বুঝাপড়া করতে হবে৷ কী পেয়েছিলো আমাকে যে এভাবে গরুর মতো মারবে৷ আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম৷ সবাই তখন ব্রেকফাস্ট করায় ব্যস্ত৷ বাবা আমাকে ডেকে কাছে নিলেন৷ আমি বাবার পাশে গিয়ে ফাঁকা চেয়ারটায় বসে পরলাম৷ বাবা আমাকে কিছুক্ষণ দেখে বললেন,,
“আরুহি তোমার চোখ মুখের এই অবস্হা কেনো?? তুমি কী রাতে রিফাতের ব্যপার নিয়ে কান্না করছিলে?? দেখো মা যা হবার তা হয়ে গেছে৷ তোমার জন্য আমি ওর চাইতেও বেটার কেউ আনবো৷
.
না বাবা তেমন কিছু না৷ আমি তো এখন বিয়ে করতে চাইনি তাই কষ্টের চাইতে বেশি খুশিই হয়েছি৷ বাবা আমি একটা কথা বলতে চাই তোমাকে৷ আসলে আমার মনে হয় আমাদের রুম সাউন্ড প্রুফ না রাখাই বেটার৷ আমাদের যে বিশাল ব্যালকনি কেউ এসে যদি খুনও করে ফেলে তখন চিৎকার করলে ওতো তোমরা কেউ শুনবেনা৷ আর কি দরকার এরকম রুমকে সাউন্ড প্রুফ করে রাখার৷ আমি জাস্ট আমার সমস্যাটা বললাম এখন বাকিটা তোমাদের হাতে৷
.
এতদিন তো তোমার সমস্যা হয়নি তাহলে আজ তোমার সমস্যা হচ্ছে যে৷
.
এতদিন আমি বিষয়টা নিয়ে ভাবিনি তাই৷ আর আগে ভাবলে হয়তো আরও ভালো হতো৷ কথাটা বলে আদিল ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ভাইয়া খাবারের চামচ প্লেটে রেখে আমার দিকে ব্রু কুচকে তাকিয়ে আছে৷ আমি একটু মেকি হাসি দিয়ে বললাম,,,
“আদিল ভাইয়া ইদানিং এখন আমার দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে থাকো কেনো বলতো৷ আমি ব্যাপারটা কিছুদিন ধরেই খেয়াল করেছি৷ মানে এখন কী আমাকে তোমার কাছে বিরক্তিকর মনে হয় নাকি৷
.
তুই একটু বেশিই কথা বলিস রুহি৷ কখন আমি তোর দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়েছি৷ এখন তোর যদি এটা মনে হয় তাহলে আমার কিছু করার নেই৷
.
এই তোরা খাবি কখন? ঝগড়া পরেও করা যাবে এখন খেয়ে নিন ম্যাম এন্ড স্যার৷ (আদনান)
.
আমি আর কিছু না বলে শুধু একটা ব্রেড নিয়ে চিবোতে থাকলাম৷ বাবা আমার খাওয়া দেখে বললেন,,
“একি আরুহি তোমার মা আর চাচীমনি মিলে এতো রান্না করেছে আর তুমি শুধু ব্রেড খাচ্ছো যে৷???
.
এমনি এগুলা পরে খাবো৷
আমি শুধু ব্রেড খাচ্ছি কারণ আদিল ভাইয়ার খাওয়া প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে৷ ভাইয়ার সাথে কাল রাতের বিষয় নিয়ে কথা বলা দরকার৷ এখন যদি আমি অন্য খাবারে মন দেই তাহলে ভাইয়া এতক্ষণে ভার্সিটিতে চলে যাবে৷
আদিল ভাইয়ার খাওয়া শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আমি টেবিল ছেড়ে উঠে পরলাম৷ তারপর ভাইয়ার রুমে ভাইয়ার আসার আগেই চলে আসলাম৷ ভাইয়া আমাকে উনার রুমে দেখে ব্রু কুচকালেন তারপর বললেন,,,
“তুই আমার রুমে কী করিস??
.
সিরিয়াসলি তুমি বুঝতে পারছোনা আমি কেনো এসেছি? কাল তুমি আমার সাথে এরকম বিহেভ কেনো করেছিলে৷ কোন সাহসে আমার গায়ে হাত তুলেছিলে৷ তুমি জানোনা আমার দুই ভাই আদনান আর আদিব তারা আমার গায়ে কোনদিন ফুলের টোকাও দেয়নি আর তুমি কী না আমাকে বেল্ট দিয়ে মেরেছো৷ আমি এতোদিন তোমাকে আদনান আর আদিব ভাইয়ার মতোই নিজের ভাই ভেবে এসেছি আর তুমি নাকি তার এমন প্রতিদান দিলে বেল্ট দিয়ে পিটিয়ে৷ আমি তোমাকে ভাই ভেবে আসলেও তুমি আমায় কোনদিন তোমার বোন সামান্তা আর অদ্রিতার আপুর মতো ভেবে আসোনি৷ পারতে নিজের বোনদের এভাবে পেটাতে৷ ওদেরকে পিটানোর সময় না তোমার হাত কাঁপতো কিন্তু আমাকে মারার সময় তোমার হাত একটুও কাঁপেনি৷ কী দোষ ছিলো আমার শুধু তোমার কথা অমান্য করে পাত্র পক্ষের সামনে গিয়েছিলাম বলে৷ ওরাতো বিয়ে ভেঙে দিয়েছে তারপরও কেনো তুমি আমায় মেরেছিলে বলো৷আমি জানি আমি কোন ভুল করিনি তারপরও যদিও কোন ভুল করেই থাকি তাহলে একটা চড় মারতে তা না করে তুমি সোজা আমায় ছিঃ,,৷ তোমার উপরে নারী নির্যাতনের কেস চুকবো আমি৷
.
আদিল ভাইয়া আমার দুই কাঁধে হাত রেখে বললেন,,
আমি জানিনা রুহি আমার কেনো তখন রাগ উঠে গিয়েছিলো৷ রিফাত তোর দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো যেটা দেখে আমার একদম সহ্য হয়নি৷ আর তোকে না করেছিলাম কারণ আমি খুঁজ নিয়ে দেখেছিলাম রিফাতের ক্যারেক্টার একদম ভালো নয়৷ আমার এক বন্ধু থাকে আমেরিকায় সে রিফাতকে খুব ভালো করেই চিনে৷ আর তার কাছ থেকেই শুনেছিলাম সব৷ আর তোকে মানা করেছিলাম যাতে ওর সামনে না যাস যদি ও তোকে বিয়ে করে নিতো তাহলে তোর লাইফ পুরো হেল হয়ে যেতো৷ ও মেয়েদের মধ্যে আসক্ত ঘরে বউ রেখেই বাইরে ফষ্টিনষ্টি করতে যেতো৷ বাঙালী নারী সব সহ্য করলেও নিজের স্বামীকে অন্য মেয়ের সাথে কিছুতেই সহ্য করতে পারেনা৷ তুই কী করে সহ্য করতি তোর স্বামীকে অন্য মেয়ের সাথে দেখে৷ তখন আমার কথা শুনিসনি তাই রাগ উঠে গিয়েছিলো৷ তুই তো জানিসই আমি রাগলে সব কিছু আমার হাতের বাইরে চলে যায়৷ নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনা৷ শত হউক তোকে এরকম বেল্ট দিয়ে মারা আমার উচিৎ হয়নি৷ ক্ষমা করে দিস আমায়৷
.
আমি ভাইয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললাম “সব না-হয় বুঝলাম কিন্তু কাল রাতে আমার রুমে কে এসেছিলো আর আমার পিটেই বা কে মলম লাগিয়েছিলো৷
ভাইয়া আমার কাধঁ ছেড়ে পকেটে দুই হাতগুজে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,,
“আমিই গিয়েছিলাম৷ যখন বুঝতে পারলাম তোর সাথে খুন অন্যায় করে ফেলেছি তখন আমার ভিষন অনুশোচনা হচ্ছিলো৷ তোর হয়তো খুব ব্যাথা করছে সেটা ভেবেই আমি মলম নিয়ে গিয়েছিলাম৷ এবারের মতো আমায় মাফ করে দে আই সোয়ার আর কখনো তোর গায়ে হাত তুলব না আমি৷ আর না তোর কোনো ম্যাটারে ইন্টারফেয়ার করবো৷
.
তার মানে তুমি আমার পিটে হাত দিয়েছো৷
.
তুই যেভাবে বিষয়টা নিচ্ছিস সেরকম কিছুইনা৷ তুই উপুর হয়ে ঘুমাচ্ছিলিস আর টি-শার্ট পড়ে থাকায় আমি খুব সহজেই তোর পিটে মলম লাগাতে পেরেছিলাম৷ ওই যে সিনেমাতে দেখিসনা চোখ বন্ধ করে যেমন করে কাজ করে ঠিক সেরকমই কিছুটা৷
.
তাহলে ঠিক আছে কথাটা বলে আমি চলে এলাম ভাইয়ার রুম থেকে৷যাইহোক আমার গায়ে হাত তুলেছে এতো সহজে মাফ করবোনা আমি হুহ!!
চলবে♥️