#সুপ্ত_অনুভূতি🍂
#পর্ব_১
#Writer_Nusrat🌹
পাত্র পক্ষের সামনে সেজেগুজে গিয়েছিলাম বলে আদিল ভাইয়া আমার রুমে এসে আমার পিটে একের পর এক ঘা দিয়েই যাচ্ছেন৷ ভাইয়াকে চিৎকার করে বলছি মার থামানোর জন্য কিন্তু আমার চিৎকার ভাইয়ার কান অব্দি পৌছাচ্ছে না৷ সে তো মারায় ব্যস্ত৷ শেষে আমাকে মেরে ক্লান্ত হয়ে ভাইয়া চলে গেলেন আর আমিও কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়লাম৷
🏙️🌃🏙️🌃
মধ্যরাতে টের পেলাম কেউ আমার পাশে বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে৷ আর খুব গভীর ভাবে দেখে যাচ্ছে৷ তার মুখ সম্ভবত আমার মুখের উপরেই আছে যার কারনে তার চোখের জল এসে আমার মুখে পড়ছে৷ আমি কিছুটা নড়ে উঠলাম৷ বেশ কিছুক্ষন পর চোখ খুললাম আমি৷ খুলে দেখলাম আমার রুমে কেউ নেই৷ পোষাকও ঠিকঠাক আছে৷ আর মুখে পানি ঠিকই আছে৷ আমি সারা রুমে আবারও চোখ বুলালাম কিন্তু কেউ নেই দরজা পর্যন্ত ভিতর থেকে লক করা৷
আশ্চর্য কেউ তো এসেছিলো নাহলে আমার মুখে পানি এলো কই থেকে৷ ব্যালকনির কথা মনে আসতেই আমি দৌড়ে ব্যালকনির কাছে চলে এলাম দেখলাম ব্যালকনির দরজা খুলা তারমানে কেউ সত্যি সত্যি এসেছিলো৷ কিন্তু কে??আর কেনই বা আসছে৷ আমি পিছন ফিরে আসতেই দরজার সাথে খেলাম এক ধাক্কা৷ ধাক্কা খেয়ে আমার মনে হয়েছিলো আমি অজ্ঞান হয়ে যাবো৷ যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেড়ে আমি ফ্লোরেই বসে পড়লাম আর মনে করতে থাকলাম আজ ঘটে যাওয়া আমার সাথে খারাপ মুহুর্তগুলি৷
ফ্ল্যাশব্যাক☘️☘️🌿
পাত্র পক্ষ আজ আমায় দেখতে এসেছে৷ বাড়িতে আয়োজন চলছে৷ মা, চাচীমনি,দাদু সবাই রান্নার কাজে সকাল থেকেই ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে যেন আজই আমার বিয়ে দিয়ে দিবে ওরা৷ আমাকে বাড়ি থেকে বিদায় করার জন্য এদের এতো তাড়া৷ পাত্র সম্পর্কে আমার বাবার বন্ধুর ছেলে৷ ছোট বেলা থেকেই নাকি আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে৷ উনারা আমেরিকায় থাকেন তাদের কোনো মেয়ে না থাকায় উনারা আমাকে যত তারাতাড়ি সম্ভব বউ করে উনাদের কাছে নিয়ে যেতে চান৷ পাত্রেরও নাকি আমাকে খুব ভালো লেগেছে৷ কিন্তু আমার বিয়ে করার কোনো মুড নেই এখন৷ বাবাও আমার কথায় রাজী হতেন কিন্তু উনার বন্ধুর দিকে তাকিয়ে রাজী হননি আর বিয়ের জন্য তাড়া দিচ্ছেন৷ আমার কাজিনরা আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করা অলরেডি শুরু করে দিয়েছে৷ খাটের এক কোনে অভাগীর মতো বসে আছি আমি৷ আমাকে কিন্তু এই মুহুর্তে কাঙালীর মায়ের চেয়ে কম অভাগী লাগছেনা৷আদনান ভাইয়া,আদিব ভাইয়া,আহিল ভাইয়া,অদ্রিতা আপু,আয়েশা আপু, সামান্তা আর আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড রিংকি৷ সবাই আমাকে এটা ওটা এনে দিচ্ছে৷ হাসানোর চেষ্টা করছে৷ কিন্তু আমি হাসছিনা৷ বিয়ের জন্য এক্সট্রা প্রিপারড্ নিতে হয় কিন্তু আমি মাত্র কালই শুনলাম৷ আমাকে অদ্রিতা আপু আর আয়েশা আপু মিলেই সাজাচ্ছে৷ সাজানো হয়ে গেলে আমার সব কাজিনরা আমায় নিয়ে নিচে গেলো৷ পাত্র পক্ষের সামনে বসানো হলো৷উনারা আমায় আংটি পড়াবার মুহুর্তেই রিফাত(পাত্র) না বলে উঠলো৷ পাত্রের বাবা মাহমুদ আংকেল জিজ্ঞেস করলেন কী হয়েছে???
“বাবা আমি আরুহিকে বিয়ে করতে পারবোনা৷
.
এ তুমি কী বলছো রিফাত৷ ওকে বিয়ে কেনো করবেনা তুমি?কী নেই ওর মধ্যে৷
.
বাবা ওর মধ্যে সবই আছে৷ কিন্তু আমি ওকে বিয়ে করতে পারবোনা৷
.
কিন্তু কেন৷ তুমিতো বলেছিলে যে আরুহিকে তোমার পছন্দ হয়েছে তাহলে আজ কেনো না করছো তুমি৷
.
হ্যা ওকে আমার ভালো লাগে৷ কিন্তু আমি আরেক জনকে ভালোবাসি৷ এ কথাটা আমি তোমাদের আগেই বলতে পারতাম কিন্তু তখন বললে হয়তো তোমরা আমার কথা শুনতেনা তাই আমি আংকেল আর আন্টির সামনে বললাম যেন উনারা তোমাদের বুঝাতে পারেন৷ আর সত্যি বলতে আরুহিরও বয়ফ্রেন্ড আছে তাইনা আরুহি৷
.
না আমার মেয়ের কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই৷ ছোট বেলা থেকে বিয়ে ঠিক ছিলো বলে আমার মেয়ে কোনো ছেলেদের দিকেও সেভাবে তাকায়নি৷ আর তোমাকেই বা কী দোষ দিবো তোমরা এখন যে বয়স পার করছো এটা আবেগপ্রবণের বয়স৷ তোমার আমার মেয়েকে বিয়ে করতে হবেনা৷ আমি চাইনা আমার মেয়ে কারও বিচ্ছেদের কারণ হউক৷ আর এটা আরও আগে বললে ভালো হতো৷ যাইহোক বিয়ে করে বউকে সাথে করে নিয়ে এসো৷ (বাবা)
.
মাহমুদ আংকেল বাবার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছেন৷ উনার চোখে সুস্পষ্ট অনুশোচনা দেখা যাচ্ছে৷
বাবা আংকেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,,আর হে আমাদের বন্ধুত্বটা যেরকম আছে ঠিক সেইরকমই থাকবে৷ বাবার কথা শুনে মাহমুদ আংকেল বাবাকে হাগ করলেন৷ তারপর সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে চলে গেলেন৷
🌿🌿🌿🌿
রাত ১১টা বেজে ১০ মিনিট৷রুমে একা একা বসে আছি৷ আদিল ভাইয়ার কথা ভিষন মনে পড়ছে৷ ভাইয়া আমায় বলেছিলো আমি যাতে পাত্র পক্ষের সামনে না যাই৷ তা না হলে নাকি ভাইয়া আমার অবস্থা খারাপ করে ছাড়বে৷ জীবনের প্রথম ভাইয়াকে আমার সাথে এরকম কথ বলতে দেখেছি৷ ভাইয়া আমাকে এই কথা কেন বলেছিলো সেটাও বুঝতে পারছিনা৷ আমার ভাবনার মাঝেই আমার হাতে হেঁচকা টান পরলো৷ আমি হকচকিয়ে গেলাম৷ আদিল ভাইয়া রক্ত চক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ সিল্কি চুলগুলো উসকোখুসকো হয়ে আছে৷ ফর্সা মুখও লাল হয়ে আছে৷ ভাইয়া আমায় টেনে দাঁড় করিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,,,তোকে কতবার বলেছিলাম ওদের সামনে যাবিনা৷ শুনিসনি তো আমার কথা৷ এবার দেখ কী হাল করি তোর আমি৷ কথাটা বলে আদিল ভাইয়া উনার বেল্ট খুলে একের পর এক ঘা আমায় দিয়েই যাচ্ছেন৷ আমার শরীরর মরিচের মতো জ্বলছে৷ জীবনেও এরকম ঘা একটাও খাইনি৷ আর আজ এক সাথে এতোগুলো৷ আমি চিৎকার করে ভাইয়াকে বলছি যেন ভাইয়া মারা বন্ধ করে কিন্তু ভাইয়া আমার কথা শুনছেনা নিজের ইচ্ছে মতো মেরেই যাচ্ছে৷ আমি শেষে ভাইয়াকে আটকাতে না পেরে হাল ছেড়ে দিলাম৷ ভাইয়া আমাকে ইচ্ছেমতো মেরে হাপিয়ে বললেন,,,,সি আমার কথা যদি দ্বিতীয় বার অমান্য করিস তাহলে এর চাইতেও আরও কঠিন শাস্তি তোকে পেতে হবে গট ইট৷ কথাটা বলে ভাইয়া আমার রুম থেকে হনহনিয়ে চলে গেলেন৷ আমি খুব কষ্টে দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পরলাম৷ চোখের পানি বাঁধ মানছেনা৷ এভাবে টর্চার করলো কেন ভাইয়া আমাকে৷ ভালো করে বুঝাতে ওতো পাড়তো৷ আমি কী তার বউ নাকি যে সে যা বলবে আমি তাই করবো৷ আমিও আরুহি আমি কারও কথা শুনবোনা৷
ফ্ল্যাশব্যাক এন্ড🍀☘️🌿
ভাইয়ার এরকম অমানুষিক নির্যাতনের কথা মনে আসতে আবারও আমার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরছে৷ পিটে হাত দিয়ে দেখলাম তরল কিছুর মতে হাতে লাগছে৷ ঘ্রাণ শুঁকে বুঝতে পারলাম এটা মলম৷ কিন্তু এটা কে লাগালো৷ আদিল ভাইয়া তো জীবনেও লাগাবেনা তাহলে কে??
চলবে♥️