Monday, October 6, 2025







সুতোয় বাঁধা জীবন পর্ব-১৩

#সুতোয়_বাঁধা_জীবন
লেখনীতে : তামান্না বিনতে সোবহান
পর্ব – তেরো

রাতটা নির্ঘুম কাটল রুদিতার। টুকরো টুকরো গল্প আদান-প্রদান ছাড়াও একখণ্ড সুখকর মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছিল সে। রুদিতার ধারণা ছিল, সব পুরুষের কাছে নারী মানেই অসম্মান ও অবহেলার পাত্রী। ইফতির সংস্পর্শে থেকে শুধু উপলব্ধি করেছে, ‘ঠকায় একজন অথচ বিশ্বাস উঠে যায় সবার ওপর থেকে।’ এতটুকু। অথচ উষাদ তাকে প্রতিপদে, প্রতিবাক্যে পবিত্র সম্পর্কটা নিয়ে সুন্দর একটি ধারণা দিয়েছে। এরপর থেকে রুদিতা মানতে বাধ্য হয়েছে, ‘সঙ্গী হচ্ছে স্বস্তি ও শান্তির অন্যতম মাধ্যম।’ যার সান্নিধ্য লাভের পর নারী নিজেকে পরিপূর্ণ ভাবতে পারে, স্বস্তি ও শান্তি অনুভব করতে পারে, যার মাঝে নির্দ্বিধায় নিজেকে সঁপে দিতে পারে, তাকে আর যাই বলা হোক, কখনও অশান্তির কারণ বলা ঠিক হবে না।

সকালের মৃদুমন্দ আলো ভেন্টিলেটর দিয়ে রুমের ভেতরে প্রবেশ করতে দেখে বিছানা ছাড়ল রুদিতা। ফ্রেশ হয়ে রুমের জানালা খুলে দিল। সকালের নরম ও স্নিগ্ধ হাওয়া ছুঁয়ে যাচ্ছে তাকে। ভীষণ শান্তি অনুভব হচ্ছে। বাহির দেখতে ব্যস্ত ছিল রুদিতা। ঘুমজড়ানো গলায় উষাদ বলল,

-‘স্বামী সংসারে প্রথম রাত কেমন কাটল তোমার?’

রুদিতা হাসিমুখে জানিয়ে দিল,
-‘ভালো।’

-‘শুধু ভালো?’

-‘খুব ভালো। আরও কিছু বলব?’

-‘বলতে পারো। মানা করব না।’

-‘থাক্, আর কিছু না বলি। উঠে ফ্রেশ হোন, আমি বাচ্চাদের দেখে আসি।’

রুম ছেড়ে বের হয়ে হোসনা বেগমের রুমে গেল রুদিতা। বাচ্চারা এখনও ঘুমোচ্ছে। ওদের নিষ্পাপ, ঘুমন্ত মুখখানি ছুঁয়ে ছুঁয়ে দু’জনকেই আদর দিল। ডাকল না। আরেকটু ঘুমোক তারা। হোসনা বেগমকে খুঁজতে বসার ঘরে এলো। দেখল, তিনি রান্নাঘরে টুকটুক করে রান্না করছেন। ছুটে গিয়ে পাশে দাঁড়াল রুদিতা। বলল,

-‘একী, মা। আপনি কেন এসব করছেন? আমাকে ডাকলে হতো।’

হোসনা বেগম হাসিমুখে বললেন,
-‘একদিনে কিছু হবে না। এসব কাজ উষাদই করে। বহুদিন রান্নাঘরে আসি না আমি। গতকাল তো খুবই ব্যস্ততা গেল। ও হয়তো বিশ্রাম নেয়ারও সুযোগ পায়নি। নয়তো এতক্ষণে অর্ধেক রান্না কমপ্লিট হয়ে যেত।’

হোসনা বেগমের কথাবার্তা মাথার উপর দিয়ে গেল রুদিতার। পুরুষ মানুষ আর রান্না! পুরুষেরা রাঁধে না এমনটা নয়। কিন্তু খুব কম পুরুষই আছে এই তালিকায়, যারা স্ত্রী ও মায়ের কষ্ট দুটো একত্রে অনুভব করতে পারে। বাড়িতে পা রাখার প্রথম সকালেই এমন একটা চমৎকার খবর শোনে মন ভরে উঠল রুদিতার। বিস্ময়ভরা কণ্ঠে বলল,

-‘কী বলছেন মা? উনি রান্নাও করেন?’

-‘হ্যাঁ। সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে যখন প্রথম প্রথম ঘর-সংসার ও উমাকে সামলানো লাগত, তখন আর চাকরি-বাকরির খোঁজে যায়নি। দু’হাতে সংসারের সব দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে। ওই অপয়া দিনে ওর বাবাও মারা যান। দু’দুটো মানসিক আঘাত সামলে নিয়েও নিজেকে শক্ত রেখে উমাকে সব সুখ দিতে চেয়েছে। এরপর যখন উমা একটু বড়ো হলো, হাঁটতে শিখল, তখন কিন্ডারগার্টেনে চাকরিটা পেল।’

রুদিতা নিশ্চুপে শুনল। হোসনা বেগম রুদিতার দুটো হাত আঁকড়ে ধরে মায়াজড়ানো গলায় বললেন,

-‘আমার ছেলেটা সংসারের সুখ কী তা বুঝেনি! সেদিন আমি ঘরে বউ তুলে এনেছি ঠিকই কিন্তু ঘরের যোগ্য কর্ত্রীর ছায়া তার মাঝে খুঁজে পাইনি। তুমি আমার ছেলেকে একটা পরিপূর্ণ সংসারের সুখ দিও। একটা পরিবার গঠন করার দায়িত্ব শুধু পুরুষের একার নয়, নারীরও। ঘরের কর্ত্রীরও। আমি তোমাকে এই ঘরের যোগ্য কর্ত্রী মনে করি। পারবে না আমার সংসারটাকে নিজের প্রাণ মনে করে সোনার সংসারে রূপান্তরিত করতে?’

উপরনিচ মাথা নাড়ল রুদিতা। ভদ্রমহিলার হাতটা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বলল,
-‘পারব মা। খুব পারব। আপনি শুধু দোয়া করুন।’

হোসনা বেগম মনভরে ছেলের বউকে দোয়া করলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। রুদিতা তাকে চুলার পাশ থেকে সরিয়ে একটা বেতের মোড়াতে বসিয়ে দিয়ে বলল,

-‘এখন চুপ করে এখানে বসুন। আমি রান্না করছি।’

-‘তুমি পারবে না। উষাদ কোনদিকে কী যে রেখেছে! খুঁজে বের করতে সময় লাগবে। তুমি সরো, আমি করছি।’

-‘একদমই নয়। এখন আপনার কাজ করার বয়স নেই। আপনি শুধু বিশ্রাম নিবেন। কোথায় কী আছে আমি খুঁজে নেব। রান্নাঘরের সবদিক মেয়েদের মুখস্থ থাকে। আমার কোনো অসুবিধা হবে না।’

চুলায় গরম পানি বসানো ছিল। রুদিতা মিটসেফের দিকে তাকিয়ে ময়দার বোয়াম খুঁজে বের করল। এরপর এক চিমটি লবণ দিয়ে গরম পানির সাহায্যে ময়দার ডো তৈরী করে চায়ের পানি বসিয়ে দিল। গোল গোল সাইজ করে নির্দিষ্ট মাপের রুটি বেলে নিল। কে কীভাবে খায়, এটা সে জানে না। তাই শাশুড়ির থেকে জেনে নিল সবটা। সবগুলো রুটি বেলার কাজ শেষ হলে গরম তেলে ভেজে নিল। ডিম ভাজা করল। চায়ের কেটলি নামিয়ে সেটাও যত্ন করে কাপে কাপে সাজিয়ে খাবার টেবিলে নিয়ে রাখল।

উষাদ ঘুম থেকে উঠেছিল বেশ কিছুক্ষণ আগে। তখন ঘুম ভাঙলেও আলসেমির কারণে উঠতে পারেনি। বিছানায় শুয়েছিল ক্লান্তি ও আলসেমি দূর করে তবেই উঠে এসেছে। রান্নাবান্নার দেরী হবে দেখে তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে এসে দেখল, আজকের রান্নাটা কে সামলাচ্ছে। দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে মন ভালো হয়ে গেল তার। ঠোঁটে ফুটে উঠল একটুকরো প্রশান্তির হাসি। রুদিতার চোখে পড়তেই দূর থেকে বলল,

-‘বাচ্চারা কি ঘুমোচ্ছে?’

-‘হ্যাঁ। কেউ-ই জাগেনি এখনও।’

-‘কষ্ট করে ওদের ডেকে আনুন না, নাশতা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। আমার আবার অফিসে যেতে হবে।’

রোদ্দুরে ভরা পরিবেশে একখণ্ড মেঘ এসে জমা হলো। উষাদ অসহায় চোখে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘অফিস…!’

-‘আমি ছুটি নিইনি তো।’

বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য-শস্যের যেমন প্রয়োজন, তেমনই প্রয়োজন টাকারও। প্রত্যেকটা পরিবারে কেউ না কেউ থাকে, উপার্জনের পথে ব্যস্ত। যারা নিজের ব্যক্তিগত সুখের চেয়ে পরিবারের সবার ভালো থাকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করে বেশি। রুদিতারও নিজের মা ও বোনকে নিয়ে চিন্তা হয়। এটা সেদিন রাতেই বুঝে গিয়েছিল উষাদ। দুই ভাই-বোনের কথোপকথন ও রওনকের লোভটা তার চোখে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বুঝে গিয়েছিল, রুদিতা ওখানে ভালো নেই। শুধু রুদিতা কেন, রুহামা ও আতিকা জাহান কেউ-ই ভালো নেই। যেহেতু সে এই ব্যাপারটা জানে, বুঝে, তাই তার চাকরি নিয়ে কিছু বলার আগ্রহ পেল না। শুধু বলল,

-‘আমি চাইছিলাম আজকে একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি।’

-‘ওম! কীভাবে হয়? আগামী সোমবার থেকে ওদের এ্যাক্সাম না? এখন যদি ঘোরাঘুরিতে মন বসে যায়, পড়াশোনা হবে?’

-‘একদিনে কিচ্ছু ক্ষতি হবে না।’

-‘আচ্ছা, ঠিক আছে। ঘণ্টাখানেক ওদেরকে সামলে রাখুন। আমি এরমধ্যেই চলে আসব।’

-‘তোমার বস ছাড়বে? ছুটি দিবে?’

-‘কেন দিবে না? অবশ্যই দিবে।’

-‘ঠিক আছে। তোমার অফিসের অ্যাড্রেসটা দিও। আমরা তোমাকে রিসিভ করে নেব।’

উষাদ রুমে এসে দেখল, বাচ্চারা দু’জনেই জেগে আছে। বিছানায় বসে টেডিবিয়ার দিয়ে খেলছে দু’জনে। সে দু’জনকে একসাথে ওয়াশরুমে নিয়ে গেল। দাঁত ব্রাশ করিয়ে, হাত-মুখ ধুইয়ে নাশতা খেতে আসলো। জীবনে প্রথম বারের মতো মায়ের হাতে নাশতা মুখে তুলল উমামা। খুশি খুশি মন নিয়ে আদুরে গলায় বলল,

-‘খাবারটা ভীষণ ইয়াম্মি মাম্মাম।’

উমামা আবারও মুখ খুলে দিল। রুদিতা হাসিমুখে মেয়ের মুখে খাবার তুলে দিল। পরক্ষণে রুহানকেও খাওয়াল। দু’জনকে একসাথে খাইয়ে, নাশতার ঝামেলা শেষ করে, দ্রুত তৈরী হলো সে। ছুটি নেয়নি রুদিতা, তবে এই প্রথম একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে তাকে। এই একটা কঠিন সিদ্ধান্তই পারে দুটো সন্তানের ভবিষ্যতকে সুন্দর ও সহজ করে দিতে।

***

অফিস থেকে বের হতেই অফিসের কলিগ, হাসির রাজা ফাহাদ ছুটে আসলো রুদিতার সামনে। গেট ক্রস করে রাস্তায় এসেছিল মাত্র। এরমধ্যেই হন্তদন্ত হয়ে ফাহাদকে দেখে হাসিমুখে রুদিতা জানতে চাইল,

-‘দৌড়াচ্ছেন কেন ফাহাদ ভাই? কোনো সমস্যা?’

স্বলজ্জ হেসে মাথা চুলকাল ফাহাদ। বলল,
-‘অনেকদিন ধরে আপনাকে একটা কথা জানাতে চাইছি। কিন্তু সুযোগ হচ্ছে না। আজ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আপনি, সেটা দেখে মনে হলো, এরপর আর সুযোগ পাব না। তাই বলতে আসলাম। যদি আর যোগাযোগ না হয়, সেজন্য।’

ফাহাদের হাসি হাসি ভাবটা চোখে লাগলেও বুঝতে পারল না তার কথার অর্থ। ছেলেটা কারণ ছাড়াই হাসতে জানে। তাড়াহুড়ো থাকার কারণে বলল,

-‘আজ আমার একটু তাড়া আছে ফাহাদ ভাই। সময় দিতে পারছি না।’

-‘বেশি না, পাঁচ মিনিট।’

-‘আচ্ছা ঠিক আছে। বলুন।’

ফাহাদকে বলার অনুমতি দিয়ে ফোন বের করে উষাদকে কল করল রুদিতা। ফাহাদ তখন ফট করে বলল,

-‘আমি আপনার বোনকে বিয়ে করতে চাই, মিসেস রুদিতা। আপনি অনুমতি দিলে আপনার বাসায় প্রস্তাব পাঠাতে পারি।’

রুদিতা বেশ অবাক হলো। ফাহাদ এমন একটা প্রস্তাব করবে ভাবতে পারেনি। ছেলেটা খারাপ নয়, ভালো। মেয়েদের পিছনে ছোটাছুটি করার অভ্যাস নেই। অফিসে খুব মনোযোগী। দায়িত্ববানও। কিন্তু চিন্তা রুহামাকে নিয়ে। মেয়েটা এখনও পড়ছে। রাজি হবে কি-না কে জানে। সে ভেবেচিন্তে বলল,

-‘আপনি কি শিওর?’

-‘অফকোর্স।’

-‘আমি আগে মা ও রুহামার সাথে কথা বলি। তারপর জানাই। ঠিক আছে?’

-‘আপনার বোন যদি রাজি না হয়, তাকে একটু বুঝাবেন। আমি পাত্র হিসেবে খুব ভালো। এটা গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি।’

খিলখিলিয়ে হেসে ফেলল রুদিতা। বলল,
-‘ফাহাদ ভাই, আমি আপনাকে খুব ভালো করেই চিনি। এত ঘাবড়ানোর কিছু নেই। ও এখনও পড়ছে তো, তা-ই জোর করে কিছু চাপিয়ে দিতে পারছি না। আগে আলাপ করে দেখি, যদি রাজি থাকে, তাহলে আপনাকে জানাব। সময় পেলে আপনি আন্টিকে নিয়ে একদিন আমাদের বাসায় আসবেন।’

ঠিক সেই সময় পাশ ঘেঁষে দাঁড়াল একটা উবার। বাচ্চাদের গাড়িতে বসিয়ে রেখে উষাদ নেমে এলো। বলল,

-‘যাওয়া যাক?’

রুদিতা নির্ভার হেসে উষাদের হাত ধরে ফাহাদকে বলল,
-‘মিট মাই হাজব্যান্ড, আবু উষাদ তালুকদার।’

উষাদ এক হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে বলল,
-‘কেমন আছেন?’

-‘ভালো। আপনি?’

-‘আলহামদুলিল্লাহ।’

দেরী হবে দেখে উষাদ ফের রুদিতাকে বলল,
-‘কী হলো? দাঁড়িয়েই থাকবে? গাড়িতে ওঠো।’

জানালা দিয়ে মাথা বের করল বাচ্চারা। কাছে ডাকল মাকে। বিদায় নিয়ে তড়িঘড়ি পায়ে উবারে উঠল রুদিতা। বাচ্চাদের সাথে গল্প জুড়ে দিল। উষাদ সামনের সিটে আরোহণ করলে স্পেস পেয়ে খানিকটা সামনে এগোলো ফাহাদ। রুদিতাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

-‘আর হয়তো অফিসে দেখা হবে না। অফিসের সবাই আপনাকে অনেক মিস্ করবে, সাথে আমিও। ভালো থাকবেন।’

সৌজন্যতাবোধ থেকে হাসল রুদিতা। বলল,
-‘আপনিও ভালো থাকবেন। আসি…।’

উষাদ ভ্রু নাড়িয়ে দু’জনার কথা শুনল। রুদিতার হাসি হাসি মুখ দেখে বিরক্ত লাগল তার। ব্যাটাছেলের সাথে কথা বলতে গিয়ে এত হাসবে কেন? রেগেমেগে গাড়ি স্টার্ট করার অনুমতি দিল। বেশ খানিকটা দূর এগোনোর পর সন্দিহান মন নিয়েই উষাদ জানতে চাইল,

-‘লোকটা কে?’

-‘অফিসের কলিগ।’

-‘বিরক্ত করত?’

-‘আরেহ্ দূর। বিরক্ত করবে কেন? ফাহাদ ভাই যথেষ্ট ভালো মনের মানুষ।’

-‘তাহলে এত ভাব জমাতে চাইছিল কেন?’

-‘বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।’

-‘কী? শা//লার এত্তবড়ো সাহস। আমার বিয়ে করা বউকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। নাকমুখ চ্যা//প্টা করে দিতে পারলে ভালো হতো।’

উষাদের রাগ দেখে মুখে হাত চেপে হেসে ফেলল রুদিতা। উষাদ বলল,
-‘একদম হাসবে না। বলোনি কেন, তুমি বিবাহিতা?’

-‘আপনি কি বোকা? আমার কথা কেন বলব? সবাই তো জানে আমি বিবাহিতা। উনি তো রুহামার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন।’

উষাদ আর কিছু বলল না। ঠোঁট কামড়ে হাসল। বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে, এটা শোনে মনে হয়েছিল তার বউকেই বুঝি বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসেছে। রুহামার দিক তার মাথাতেই আসেনি। সে অস্বস্তি ভাব এড়িয়ে গিয়ে বলল,

-‘তুমি কী বলেছ?’

-‘মায়ের সাথে আলাপ করি। রুহামা কাউকে পছন্দ করে কি-না এ-ও জানতে হবে। বোঝেশোনে এগোনো ভালো। তাড়াহুড়ো করার কিচ্ছু নেই।’

-‘সেটা ঠিক। ছেলেটা ভালো হলে আপত্তি করো না কেউ। ওর মোবাইল নম্বর ও বাড়ির ঠিকানা থাকলে দিও।’

-‘আচ্ছা, কোথায় যাচ্ছি আমরা?’

-‘দিকশূণ্যপুর।’

রুদিতা বুঝতে না পেরে চমকে গিয়ে বলল,
-‘সেটা আবার কোথায়?’

উষাদ হাসতে হাসতে বলল,
-‘যেথায় খুশি সেথায় যাব, তোমার কী মেয়ে? তুমি বরং দিক খুঁজে নাও আমার চোখে চেয়ে।’

দুই লাইনের অদ্ভুত এই কবিতা শেষ করে চট করে পিছন ফিরে একটা টিপ্পনী কাটল উষাদ। বাচ্চারা খেয়াল করেনি। তারা দিগন্ত বিস্তৃত পথের দিকে দৃষ্টি দিয়ে রেখেছে। রুদিতা প্রথমে চোখ কটমট করে তাকালেও অভিনয়ে কাঁচা থাকার কারণে বেশিক্ষণ অভিনয়টা জমিয়ে রাখতে পারল না। শব্দহীন, লাজুক হাসিতে ঠোঁট ভরিয়ে তুলল। বিড়বিড়িয়ে বলল,

-‘আপনি এত নির্লজ্জ কেন বলুন তো?’

***

রওনক বাইরে থেকে এসে শর্মীকে তাড়া দিয়ে বলল,
-‘মায়ের ব্যাগটা একটু গুছিয়ে দাও তো। ক’দিনের জন্য মাকে রাহার ওখানে রেখে আসি। কাল ওরা দাওয়াত দিয়েছিল, কেউ-ই যেতে পারিনি। ব্যাপারটা কেমন দেখাচ্ছে এখন।’

নাতি-নাতনীর সাথে গল্প করছিলেন আতিকা জাহান। রওনক ছেলেমেয়েকে বলেছে, আজ তারা দামী রেস্টুরেন্টে খেতে যাবে। সবাই যেন প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। ক’দিন পরপরই সবাই মিলে এইভাবে ঘুরতে বের হয়। ঘোরাঘুরি ও জম্পেশ খাওয়া-দাওয়ার সুযোগ পাওয়াতে দু’জনের কেউ স্কুলে যায়নি। বাড়িতেই আছে। দাদীকে সময় দিচ্ছে, গল্প করছে। রওনক যখন এমন হুকুম করল, সঙ্গে সঙ্গে মৌমি বলল,

-‘দাদীকে আমাদের সাথে নিয়ে যাই না বাবা। ছোটো ফুপিও টিউশনি শেষ করে বাসায় ফিরুক।’

-‘আর কাউকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। তোমরা যাও, নতুন জামা পরো গিয়ে।’

বাবার কথা অমান্য করার দুঃসাহস বাচ্চাদুটোর নেই। তাই রওনক যেভাবে আদেশ দেয়, তারাও সেইভাবে চলে। পিকলু ওমৌমি চলে যাওয়ার পর রওনক মায়ের কাছে গিয়ে বলল,

-‘মা, যাও। তৈরী হয়ে এসো। রাহার শাশুড়ি দাওয়াত দিয়েছিল গতকাল যেতে পারিনি। আজ যাব। ভাবছি, তোমাকে ক’টাদিন ওখানে রেখে আসব।’

আতিকা জাহান ছেলের কথা শোনে অবাক হলেন। রুদিতা তো এমন কিছু আজ জানায়নি। সকালে ফোন করে বলেছে, বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে, তখনও তো দাওয়াতের কথা বলেনি। জীবনের এতগুলো বছর পেরিয়ে কম অভিজ্ঞতা হয়নি তাঁর। ছেলের মতিগতি যে ভালো না, সেটা তিনি দিব্যি বুঝে গেলেন। বললেন,

-‘আচ্ছা দাঁড়া, রাহাকে জিজ্ঞেস করে দেখি, আজ আবার কীসের দাওয়াত।’

তিনি নিজের বাটন ফোনটা বের করার সঙ্গে সঙ্গে রওনক সেটা কেড়ে নিয়ে বলল,
-‘আহ্, মা। খামোখা ও’কে বিরক্ত করতে চাইছ কেন? আমাকে কি বিশ্বাস করো না, না-কি?’

-‘কীভাবে করি বল তো? তুই যে আমার পেটের ছেলে এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়। তোকে যে দু’হাতে কোলে তুলে মানুষ করেছি, এটাও আমার কাছে ভুল মনে হয়। তোকে জন্ম দিয়ে আমি নারীজন্ম স্বার্থক ভাবতাম, অথচ আজ উপলব্ধি করছি, তোর মতো সন্তানের জন্ম হওয়া শুধু ভুলই নয়, পাপও।’

রওনক ফুঁসে উঠল। বলল,
-‘অনেক সহ্য করেছি। আর না। এবার একটা সমাধানে যাবই।’

আতিকা জাহান বিশ্বাস করতে পারলেন না ছেলের কথা। কী বলল ছেলে? কীসের সমাধান? মায়ের সাথে সন্তানের সমস্যা কী, সেটার সমাধানই বা কী? তিনি জড়ানো গলার বললেন,

-‘কী বলছিস্ তুই? কীসের সমাধান?’

দেরী করল না রওনক। ছুটে গেল নিজের রুমে। একটা দলিল এনে মায়ের সামনে রেখে বলল,
-‘এখানে সাইন করে তুমি নিজে স্বীকারোক্তি দিয়ে যাও, তোমার স্বামীর ভাগে যতটুকু সম্পত্তি ছিল, সবকিছুর মালিক আজ থেকে পিকলু ও মৌমি।’

ভদ্রমহিলা টের পেলেন তিনি শূণ্যে ভাসছেন। তার মায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে। আচমকা এমন পরিস্থিতিতে পড়ে তিনি কথা হারিয়ে ফেললেন। ভারসাম্য ধরে রাখতে বসলেন সোফায়। মাথায় হাত রেখে কয়েকমুহূর্ত অনেক ধৈর্য্য নিয়ে নিজেকে সামলালেন। পরমুহূর্তে উঠে দাঁড়িয়ে শক্ত হাতে ছেলেকে বেশ কয়েকটা থা//প্প//ড় দিলেন। রওনক টাল সামলাতে না পেরে খানিকটা দূরে সরে গেল। তিনি ছুটে আসলেন ছেলের সামনে। আরও একটা থা//প্প//ড় দিয়ে বললেন,

-‘অ//মানুষ কোথাকার। তোর মতো সন্তানের বেঁচে থাকার চেয়ে ম//রে যাওয়াই ভালো। এ্যাই, তুই বেঁচে আছিস্ কেন? কীসের জন্য?’

শরীরের সবটুকু শক্তি নিয়ে রান্নাঘরে গেলেন তিনি। হাতে নিলেন ব//টি। পূণরায় তাড়া করলেন রওনককে। রওনক সামনে এসে দাঁড়িয়ে ব//টি কেড়ে নিল। ধা//ক্কা মা//রল মা’কে। তিনি শক্তি দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারলেন না আর। শরীরের সব শক্তি হারিয়ে গেল ইতিমধ্যে। মাটিতে বসে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে শুরু করলেন। ব্যাগপত্র নিয়ে এবার শর্মী বেরিয়ে এলো। আতিকা জাহানের চুল টেনে ধরে তাকে দাঁড় করাল। টা//নতে টা//নতে বাড়ির বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা টেস্কিতে রাখল। পাড়ার মানুষ ততক্ষণে এসব দেখে বাড়ির সামনে চলে এসেছেন অনেকেই। কেউ-ই রওনক ও শর্মীকে থামাতে পারছেন না। শর্মী তো গলা উঁচিয়ে বলল,

-‘আমাদের বাড়ির জঞ্জাল আমরা পরিষ্কার করব। আপনারা এখানে কেন এসেছেন? ডাক দিয়েছি আপনাদের? সাহায্য চেয়েছি কারও কাছে?’

শর্মীর এই রূপ ব্যবহার ও আচরণে সবাই হতভম্ব। তর্কে না গিয়ে যে যার জায়গায় থেকে শর্মী ও রওনকের দিকে জু//তো ছুঁড়ে মা//রলেন। তবুও থামল না দু’জনের কেউ। জোরপূর্বক দলিলে সই নিয়ে মাকে ট্যাক্সিক্যাবে বসাল রওনক। নিজেও উঠে বসল। ড্রাইভারকে বলল, একটা ঠিকানা নাম। ড্রাইভার তা শোনে গাড়ি ছাড়ল। এগিয়ে গেল গন্তব্যের দিকে। বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে বিজয়ীর মতো হাসল শর্মী। দু’হাতে তালি বাজিয়ে বালি ঝারার ন্যায় হাত পরিষ্কার করে গলা উঁচিয়ে বাচ্চাটাদের ডাকল। বলল,

-‘পিকলু, মৌমি। কই তোরা? তৈরী হচ্ছিস্? তাড়াতাড়ি কর। আজ আমাদের ঘুরতে যাওয়ার দিন।’

দুপুরের দিকে বাড়ি ফিরল রুহামা। দরজায় মোটা সাইজের তালা দেখে বাইরে দাঁড়িয়ে রইল। এভাবে তো বাড়িতে তালা দেয়া হয় না। সে দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেল। এক সপ্তাহ ধরে টিউশনি করাচ্ছে। মা’কে নিয়ে যেন শান্তিতে থাকতে পারে, এজন্য টাকার দরকার। বোনের কাছে আর কত চাইবে? তারও তো নিজের জীবন আছে। এজন্য অনেক খুঁজে চারটে টিউশনি জোগাড় করেছে। দুটো সকালে আর দুটো বিকেলে। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে এটাই এখন তার সময় কাটানোর একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠেছে। টিউশনি শেষ করে ফার্মেসিতে গিয়েছিল, মায়ের জন্য কিছু ঔষধ আনবে বলে। সেগুলো নিয়ে ফিরতেই দেরী হয়ে গেল। তাকে গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পাশের বাড়ির দুই-চারজন মুরব্বি মহিলা ছুটে আসলেন। একজন জানতে চাইলেন,

-‘তুই এতক্ষণ কোথায় ছিলি, রুহামা? সর্বনাশ হয়ে গেছে। তোর ভাই-ভাবী যে এত জ//ঘ//ন্য হয়ে উঠেছে, আমরা তো টেরই পাইনি।’

সর্বনাশের কথা শোনে আঁৎকে উঠল রুহামা। জিজ্ঞেস করল,
-‘কী হয়েছে চাচী?’

একে একে পুরো ঘটনা বর্ণনা করে গেলেন সবাই। রুহামা হতবাক হয়ে গেল এসব শোনে। চোখ ফেটে কান্না আসলো তার। গড়িয়ে পড়ল কয়েকফোঁটা পানি। মাকে এখন কোথায় পাবে সে? ব্যাগ হাতড়ে ফোন বের করে রুদিতাকে কল করল। কাঁদতে কাঁদতে শুধু এইটুকু বলতে পারল,

-‘ভাইয়া-ভাবী মায়ের গায়ে হাত তুলেছে আপু। মা’কে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। ভাইয়া না-কি মাকে কোথায় একটা রেখে এসেছে। আমার ধারণা, বৃদ্ধাশ্রম। আমি মাকে কোথায় খুঁজব এখন? বৃদ্ধাশ্রমে খোঁজ নিয়ে দেখব? আমার মাথায় তো কিছুই আসছে না। তুমি কিছু করো, প্লিজ।’

সময় যত এগোবে, মা’কে হারাবে। এই কথা মাথায় আসতেই দ্রুত একটা ট্যাক্সিক্যাব থামাল রুহামা। উদ্দেশ্যহীন গন্তব্যের দিকে রওনা দিল। শহরের ছোটো বড়ো সবগুলো বৃদ্ধাশ্রমে খোঁজ নিতে হবে। কে জানে, মা এখন কোথায় আছেন! কেমন আছেন! কীভাবে আছেন!

***

চলবে…

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ