#সুখ_সন্ধানী
পর্ব-১৭
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
★★★
শিহাব নিশির প্রেমের সম্পর্ক খুব মিষ্টিতালে এগিয়ে যাচ্ছে।দুজনের দুষ্টমিষ্টি আলাপ,কথার খুনশুটি,ভালোবাসার লাল নীল অনুভূতি সব মিলিয়ে নিশি এক নতুন পৃথিবী দেখছে।তবে শিহাব আগের মতো আর দেখা করে না।তার বয়সটা ভালোবাসার মধ্যে অন্য কিছু খোজার বয়স,নিশির কাছে আসলেই ছোঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে,খুব নিজের করে ছুঁয়ে দিতে মন চায়,একান্ত কাছে টেনে সারা অঙ্গে ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়ার তীব্র বাসনা হয়,তাইতো নিজেকে সামলায় সে জানে নিশিকে কাছে টানলে সে কখনোই দূরে সরবে না মেয়েটা সবে-মাত্র ভালোবাসার মায়ায় পড়েছে আর শিহাব তাকে খেয়া নৌকায় তুলে সারা রাজ্য ঘুরিয়ে আনতে পারে শিহাবের সামনে নিজেকে পান পাতার মতো খুলে দিতে দিদ্ধা করবে না।কিন্তু আপত্তি শিহাবের সে নিশিকে খুব নিজের করে চায় তবে যে চাওয়াতে সংশয় থাকবে না,আর না থাকবে ভয়।পবিত্র বন্ধনে নিশিকে কাছে টানার ইচ্ছে।
আজকে নিশিদের বাসা থেকে খাবার আসবে।তার মা বাবা দেশের বাড়িতে গিয়েছে।তাই নাহার সানন্দে শিহাবকে খাওয়াবে বলেছে।শিহাব না করার পরেও নাহার শুনেনি।মাত্র অফিস থেকে ফিরে লম্বা গোসল দিয়ে বেরোলো।চুলগুলো সেট করতে করতেই শুনল কলিংবেলের শব্দ।
নিশি তার বুকের ধুকপুকানি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে।সবচেয়ে অপছন্দের মানুষটা এখন সবচেয়ে প্রিয়।এমন রাগী ঘোড়া যে এমন ভয়ংকর প্রেমিক পুরুষ হতে পারে নিশি কখনো কল্পনাও করেনি।শিহাবের মৃদু প্রেমের দোলাতে নিশির মন চনমনিয়ে নেচে উঠে।সারাক্ষণ শিহাবকে চোখে হারাতে মন চায় কিন্তু তার মা নাহার খুবই কড়া একবার বুঝতে পারলে খবর করে ফেলবে।আজকে যেন সুযোগ দরজায় এসে কড়া নেড়েছে।নাহারের বিপি হাই হয়ে গেছে তাই তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েছেন আর নিশিকে বলেছে শিহাবের খাবারটা দিয়ে আসতে।এমন সুযোগ পেয়ে নিশির পাগল মনে খুশীর আতশবাজি ফুটে।সব খাবার ডালায় করে নিয়ে এসেছে।দরজায় কলিং বেল চেপে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।প্রচন্ড খুশিতে বুকে কেমন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে।আচ্ছা এটা কি সুখের ব্যাথা!
শিহাব দরজা খুলে অশান্ত নারীর ছটফটানি রুপ দেখে যা বুঝার বুঝে নিল।চুপচাপ খাবারগুলো হাতে নিয়ে নিশিকে বলল,
—“এবার বাসায় যা।”
নিশি শিহাবকে এমন অবস্থায় দেখে বিষম খেল।বুকের খাচায় থাকা দুষ্ট পাখি ধরাস করে বেরিয়ে আসতে চাইল।কি ভয়ংকর সিগ্ধ লাগছে শিহাবকে!কবিরা শুধু নারীর স্নানের পরের সৌন্দর্যের কথাই বলে গেছেন কেউ কি পুরুষের এই মোহনীয়,ভয়ংকর রূপ দেখেছে?দেখেনি!কিভাবে দেখবে সবাই কি আর নিশির মতো মুগ্ধ চোখে দেখে!কিন্তু শিহাবের মুখের কথা শুনে নিশির উচ্ছল মুখ মুহূর্তেই চেপে গেল।কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
—“আমি একটু ভেতরে আসি?”
শিহাব যানে এই মেয়ে খালি বাসায় আসা মানেই সর্বনাশের ছোঁয়া সর্বত্র লেগে যাওয়া,প্রণয়ের বিষ সারা অঙ্গে ছড়িয়ে যাওয়ার আগেই শিহাব দরজা বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়ে বলল,
—“বাসায় গিয়ে ফোন দে পাখি,বিডিও কলে দেখব।”
নিশি আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে বলল,
—“আমি সামনে এসেছি আপনি তাড়াতে চাইছেন আবার বলছেন ভিডিও কলে দেখবেন।এখন এভাবে দেখলে কি সমস্যা?”
শিহাব বুঝল ক্ষেপাটে রমনীকে এভাবে মিষ্টি কথায় মানানো যাবে না।গলার স্বর কঠিন করে বলল,
—“বাসায় না গেলে কথা বার্তা টোটালি অফ?ও’কে?”
নিশি কিছু বলতে গিয়েও শিহাবের চোখ রাঙ্গানি দেখে অনিচ্ছা শর্তেও ঘুরে দাড়াল।লোকটা এত বজ্জাত!ব্যাথাতুর মন নিয়ে বাসায় ঢুকে গেল।পিছনে শিহাব মুচকি হেসে দরজা লাগাল।মনে মনে ভাবল খুব শীঘ্রই এই প্রণয়ীর প্রণয়ে মেখে যেতে হবে তা না হলে দুনিয়ার সব কিছুই বিতৃষ্ণা লাগে।
★★★★★★★
রাফি ডাইনিং এ বসে আছে।মাথা ঝিমঝিম করছে।চোখ জ্বালা করে পানি বের হওয়ার অবস্থা।সারা রাত না ঘুমিয়ে ভোররাতে ঘুমিয়েছিল,এই ঘুম আবার ভেঙ্গে গেছে মোয়াজ্জিনের আজানে।মাথা চেপে ধরে রাফি ফ্লোরের দিকে তাকাল।তখনি কানে এল তার ছোটমা রুবি নোহাকে বলছে,
—“কিরে আজকে কি ভার্সিটিতে কোন অনুষ্ঠান আছে?শাড়ী পড়লি কেন?”
নোহা যেন লজ্জা পেল।কলমি লতার মতো মিশে যেতে চাইল।মাথা নাড়িয়ে বলল,
—“এমনি পড়লাম আম্মু।কোন কারন নেই।”
নোহার আজকে খুব লজ্জা লাগছে।সবার সামনে আসতে শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে।তার শুধু মনে হচ্ছে রাফির ছোঁয়া গুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে,যা সবাই দেখে ফেলবে।নোহাকে এমন কাচুমাচু করতে দেখে রুবি ধমক দিলেন,
—“সাপের মতো পেচাচ্ছিস কেন?শান্ত হয়ে টেবিলে বোস।”
শান্ত কে হবে?নোহা!অসম্ভব তার মনে প্রবল আকারে ঝড় বইছে,এই অশান্ত মন শান্ত করার জন্য তার রাফির সানিধ্য চাই।
নোহা আড়চোখে রাফিকে দেখল,রাফি তার দিকেই তাকিয়ে আছে।নোহা লজ্জা অবনত হয়ে চেয়ার টেনে বসে পড়ল।
নোহার এমন রূপ দেখে রাফির আরো মাথা ভার হয়ে এলো।একি রূপের বাহার নিয়ে বেরিয়ে এসেছে মেয়েটা!খয়েরী সুতির শাড়ী পড়নে সদ্য গোছল করা চুল থেকে এখনো পানির ফোটা শাড়ী বেয়ে সাদা ফ্লোরে পড়ছে,লজ্জায় মুখ লাল হয়ে আছে।রাফি অবাক হয়ে বারবার নোহাকে দেখল,যেন নতুন বউ বিয়ের পরের দিন সকালে সদ্য স্নান করে নাস্তা করতে এসে লজ্জার বিষে মাথা নুয়ে গলায় লেগে যাচ্ছে।রাফি আরেকবার নোহাকে আড়চোখে দেখতে গিয়ে চোখ পড়ল বুকে,তিলসহ আশেপাশে অনেকটা জায়গাই কালসিটে দাগ পড়ে গেছে।রাফি চোখ বড় করে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিল।কাঁপা হাতে পানির গ্লাস টেনে নিয়ে গলায় পানি ঢালল,নিশ্বাস উল্টাপাল্টা বেগে ছুটে গলায় পানি আটকে গেল।বিষম খেয়ে নাকেমুখে পানি বেরিয়ে আসল।নোহা ব্যাস্ত পায়ে উঠে দাঁড়িয়ে মূহুর্তেই রাফির কাছে চলে এসে অস্থির চোখ তাকিয়ে আছে।রাফি চোখ ইশারা করে বুঝাতে চাইল দাগটা ঢাকতে কিন্তু নোহা কি বুঝল কে যানে সে গিয়ে আবার চেয়ার টেনে বসল।রুবি রান্নাঘর থেকে ছুটে এসে বললেন,
—“আস্তে খা বাবা।এত তাড়া কিসের?”
রাফি কিছু বলার আগেই তিনি নোহাকে বললেন,
—“এই তোর গলায় কি হয়েছে?”
নোহা রাফি দুজনেই চমকে উঠে।নোহা ব্যাস্ত ভঙ্গিতে দাগটা ঢেকে দেয়।চুল দিয়ে ঢেকেই বেরিয়েছিল,চুল সরে গিয়ে দেখা গেছে।এটা তার জীবনের ফাস্ট লাভ বাইট এটা তো আর মা কে বলা যাবে না।কিছু একটা ভেবে বলল,
—“ওই ছাড়পোকা!ছাড়পোকা আম্মু।ঘুমিয়ে ছিলাম কখন কামড়ে দিল টের পাইনি।”
রুবি এতটা পাত্তা দিলেন না।বরং আফসোসের সুরে বললেন,
—“ইশ কিভাবে কামড়েছে দেখ!একদম কালো হয়ে গেছে।”
নোহা মলিন মুখে নাস্তায় মনোযোগ দেয়,আড়চোখে রাফিকে দেখে রাফির মুখ চুপসে আমের আটি করে রেখেছে।নোহা বাম হাত দিয়ে মুখ ঢেকে মুচকি হাসল।
রাফির বুকে ঢিপঢিপ করে হৃদপিণ্ডের উত্তেজিত ভাব প্রকাশ করছে।এবার রাফির মনে হচ্ছে সে পারলে মাটির নিচে ঢুকে যায় নাহলে আকাশের উপরে উঠে যায়।একটা মেয়ে এতটা কেয়ারলেস কিভাবে হতে পারে!রাফি খাবার রেখে উঠে দাঁড়ায় এখানে থাকা অসম্ভব।মেয়েটা নিজেও ডুবেছে তাকেও ডুবিয়েছে।কি এক যন্ত্রনাময় জীবন।
—চলবে—