সুখ সন্ধানী পর্ব-১৩

0
723

#সুখ_সন্ধানী
পর্ব-১৩
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
★★★

পরের দিন রাফি ঘুম থেকে উঠে শুনল বাসায় সবাই এসে গেছে।ওয়াশরুমে গিয়ে আয়নায় দেখল ঠোঁটটা খুব বাজেভাবে কেটেছে।যদিও রাফির এখন রাগ করার কথা ছিল কিন্তু রাফি মোটেই রাগল না।বরং বিষাক্ত সুখের অনুভূতি পেল।এর পরের এক সাপ্তাহ রাফি বাসা থেকে অফিসে খুব ভোরে চলে গেল আর রাত দশটায় ফিরে এল।সবার সামনে মাক্স পরে থাকল।বাসায় কোন খাবার খেল না।ছোটমা দিদা বারবার খেতে বলার পরেও জরুরি কাজ আছে বলে বেরিয়ে পরেছিল।কারন যে কেউ দেখলে বুঝে যাবে এটা মানুষের কামড়ে কেটেছে।আর যাইহোক কাউকে বুঝতে দেয়া যাবে না।নোহা আর রাফির সামনে আসল না।সেদিন রাতের ঘটনা তাকে খুঁচিয়ে যাচ্ছে।ইশ প্রেমে মানুষ পাগল হয় শুনেছিলাম কিন্তু এমন পাগলামি কিনা নোহা নিজেই করে ফেলল।সেদিন সকালে ঘুম ভেঙ্গেছিল নোহার মায়ের ডাকে,নোহা উঠে প্রথমে যে ব্যাপারটা মাথায় এসেছিল সে রাফির রুমে ছিল এখানে এল কিভাবে?রাফি এনেছে?আর রাগে রাফির….,রাফির ঠোঁট থেকে খুব রক্ত বের হচ্ছিল।নোহা লজ্জায় মাথা চেপে ধরল।রাফিতো নোহাকে ভালোবাসে না আর পছন্দও করে না।একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলল না?ভয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে ডাইনিং এ গেল তখনি রাফি তার রুম থেকে বেরোলো।মাক্স পরে রাফি আর কোনদিকে না তাকিয়ে সোজা মেইন ডোর দিয়ে বেরিয়ে গেল।নোহার বুঝতে অসুবিধা হল না অ-সময়ে মাক্স এর দরকার কেন।বুঝে হোক আর যাই হোক মনের রাগটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে।জিনিয়ার কথা মাথায় আসতেই ফুস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।আজকে থেকে রাফিকে আর বিরক্ত করবে না।এভাবেই এক সপ্তাহ গেল।এর মধ্যে নোহার খালা আছমা গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে রাসেলকে সাথে নিয়ে,উনি নোহাকেও যাওয়ার জন্য জোড় করেছিল,কিন্তু আর কয়েকদিন পরেই নোহার ফাস্ট ইয়ার পরিক্ষা।তাই নোহা না করে দিয়েছে।আর না করার আরেকটা কারন হলো,নোহার কেন জানি মনে হয় রাসেল নোহাকে পছন্দ করে।নোহাকে পেলে খুব আগ্রহ নিয়ে কথা বলে কিন্তু নোহা হু হা কতে উত্তর দিয়ে দেয়।চোখের সামনে পরলেই কেমন,নেশাতুর চোখে তাকায় যা নোহার সারা শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়।প্রিয় মানুষটার রাগী দৃষ্টি ছাড়া আজকাল অন্য দৃষ্টি সহ্য হয় না।রাফিকে দেখা যায় কানে হেডফোন গুঁজে মুচকি হেসে ঠোঁট নেড়ে কথা বলে।নোহা বুঝে নেয় এটা জিনিয়া ছাড়া আর কেউ না।মনে শরীরে রাগ এলেও চুপচাপ সব দেখে কারন লোকটা তাকে একদম পছন্দ করে না কি দরকার তার প্রেমে বাধা দেয়ার।
রাফির নোহার শান্তরূপ মেনে নিতে পারছেনা এই প্রথম সে খেয়াল করছে নোহাকে সে খুব ভালোবাসে। নোহার কন্ঠ,পাগলামি ছাড়া তার দিনকাল খুব পানসে।অবসরে কানে হেডফোন গুঁজে নোহার গান শুনে আর ঠোঁট মিলায়।নোহাকে এখন প্রায়ই তার খালার বাসায় যেতে দেখা যায়।রাফির চিন্তিত মস্তিষ্ক এটা ভাবে খালার বাসায় এত কেন যায়?বিদেশি ছাগল আসছে সে জন্য?

★★★_
নিশি আজকাল চঞ্চল চড়ুই পাখির মতো উড়ে বেড়ায়।সেই রাতের পর থেকে দুজনে আর কাছে আসেনি।নিশি অবশ্য চাইত শিহাব কাছে আসুক,একটু ভালোবাসুক।মনটা বড় লোভী হয়ে গেছে একটু ভালোবাসা পেয়ে আরো পাওয়ার জন্য উতলা হয়ে থাকে কিন্তু ভালোবাসার ভান্ডার যার কাছে সে দেখেও দেখে না বুঝেও বুঝে না।তার নিলিপ্ততা বুঝিয়ে দেয় এই মূহুর্তে নিশির জন্য আদর টাদর বন্ধ।সিড়ি বেয়ে উপরে উঠা নামার সময় দুজনে মুখোমুখি হলে শিহাব অতি যত্নে আঙ্গুল ছুঁয়ে ভালোবাসার পরশ একেঁ দেয়।বারান্দায় গেলে কয়েক পলক দেখে নেয়।আর সবার সামনে ধমক দিয়ে তব্দা লাগিয়ে দেয়।নিশি মাঝেমাঝে ভাবে সেইরাতের ওই ছেলেটা শিহাব ছিল তো!নাকি শিহাবের বেশে কোন প্রেতাত্মা ছিল?তা না হলে ওমন নিলিপ্ত ভাব কিভাবে দেখায়,সেদিনতো খুব মোহাব্বত দেখাচ্ছিল এখন সবার সামনে কি ধমক দেয়।এবাবেই ধমক খেতে খেতে নিশির পরিক্ষা শেষ হয়।
তারপর একদিন শিহাব সবাইকে নিয়ে ঘুরতে যাবে ভাবছে।
যেই কথা সেই কাজ।বাড়ির সবার মতামত নিয়ে সোনারগাঁও যাবে ঠিক হলো।রাফি প্রথমে যাবেনা বললেও পরে শিহাবের জোড়াজুড়িতে রাজি হয়েছে।রাফি গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।তার মন আজকে খুব করে চাইছে নোহা তার গাড়িতে যাক।অবশ্য তাদের ফ্যামিলির সবাই যেহেতু যাচ্ছে তাহলে নোহা তার গাড়িতে বসার সম্ভাবনা বেশি।এই মেয়েটা আশেপাশে থাকলেও রাফির শান্তি লাগে মনে হয় বুকের শূন্যস্থানের হাহাকার থেমে যায়।
রাফির সামনে রাসেল দাঁড়িয়ে আছে সেও যাবে। দেশে থাকেনা এসেছে যেহেতু ঘুরতে যেতে আপত্তি নেই।আর সেখানে যদি স্বয়ং নোহা সুন্দরী থাকে তাহলে তো কথাই নেই।
একে একে সবাই বেরিয়ে আসছে।রুবির সাথে সামনের ফ্লাটের পিচ্ছিটাকেও দেখা যাচ্ছে।রাফির খুব আদিরের বাচ্চাটা।সময় পেলেই রাফির সানিধ্যে চলে আসবে।তখনি রাফি নোহাকে দেখল,খুব খুটিয়ে খুটিয়ে।সাদা জামায় খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।মনে হচ্ছে সাদা ফকফকা দ্যুতি চারদিকে ছড়াচ্ছে।রাফি চোখ বন্ধ করে ফেলে।নোহা’টা এমনি এত সুন্দর যে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না চোখ বুজে আসে।রাফির নিজেকে খুব হতভাগা মনে হল।কাছে পেয়েও আপন করে নিতে না পারার জন্য।রাফি কিছুএকটা ভেবে চটপট গাড়িতে বসে লুকিং গ্লাস ঠিক করে নিল,নোহা পেছনে বসবে একটু দেখার প্রয়াশ।লুকিং গ্লাস ঠিক করে সামনে তাকিয়ে দেখল,রাসেল সামনে এগিয়ে এসেছে,নোহাকে কি জানি বলছে তা শুনে নোহা হেসে কুটিকুটি।রাফির সহ্য হলো না,সবাই গাড়িতে উঠে গেছে আর নোহা কিনা ওই বিদেশি ছাগলের সাথে আলাপ জমিয়ে ফেলেছে! রাফি গলাউচিয়ে ডাকল,
“নোহা তাড়াতাড়ি আয়।”
নোহা রাফির দিকে তাকিয়ে আবার রাসেলের দিকে তাকাল রাসেলের চোখে মুখে বিশাল মাপের আকুতি মিনুতির ছোঁয়া স্পষ্ট।নোহা রাফিকে অবাক করে দিয়ে বলল,”আম্মু আমি রাসেল ভাইয়ার সাথে যাই। তোমরা চলে যাও।”

তখন রাসেল বিশ্বজয়ের হাসিটা দিয়ে গাড়ির দরজা খুললে নোহা মুচকি হেসে উঠে পড়ে।এদিকে রাফি দুহাত দিয়ে স্টিয়ারিং চেপে ধরে।রাগে চোয়াল শক্ত হয়,চোখের রং লালচে বর্ন হয়,নিশ্বাসের গতি বেড়ে যায়।পিছন থেকে এসব কেউ খেয়াল না করলেও আছমা বেগম ঠিল খেয়াল করে রেখেছেন।নিজের ছেলের জয়ের খাতায় নাম লেখাতে দেখে মুখে বিজিয়ের হাসি ফুটে উঠে।
—চলবে—

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে