#সুখ_সন্ধানী
পর্ব-৮
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
★★★
শিহাব চুপচাপ বিছানায় বসে আছে।প্রিয় রমিনীর মুখের কথা শুনে দুনিয়াদারি সব ভুলে গেল।অগোছালো ফ্লাট,অগোছালো মন সব নিয়ে শক্ত হয়ে বিছানায় বসে রইল।আবেগের রেশ টানার সুযোগ পেল না মন খারাপের ঝাপি আপনা আপনি খুলে গেল।দুহাতে চুল খামচে ধরে নিজেকে আশ্বস্ত করল এমন কিছু হবেনা।
নিশি রুমে এসে দেখল শিহাব বিধস্তভাবে বিছানায় বসে চুল খামচে ধরেছে।নিশি বুঝতে পারল না এর মধ্যে আবার কি হল?নিশি ওরনার কোন হাতে পেচাতে পেচাতে ওগিয়ে এল,
—“শিহাব ভাই কি হয়েছে।”
শিহাব লাল চোখ নিয়ে নিশির দিকে তাকাল।মাথা দুদিকে নেড়ে বলল,
—“কিছু না।”
নিশি যেন বুঝল মিথ্যা কথা।তাই আবার জিজ্ঞেস করল,
—“মাথা ব্যাথা করছে?”
শিহাব মাথা তুলে নিশিকে দেখল।কিভাবে বলবে তার বুকে প্রচন্ড ব্যাথা।নরম স্বরে বলল,
—“নিশি তুই এখন আম্মুর কাছে যা।আমার ভালো লাগছেনা।”
নিশি অবাক হয়ে শিহাবকে দেখল।এই শিহাবের সাথে নিশির পরিচয় নেই।সে চিনে রাগী,দুষ্ট,ঝগরাটে শিহাবকে।শিহাবের নরম গলার স্বর শুনে নিশির মন আনচান করে উঠল।লোকটার হঠাৎ কি হল?নিশি মাথায় হাজারো চিন্তা নিয়ে আলগোছে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
দুপুর তিনটায় নাহারের বাসায় দুপুরের খাবার খেতে সবাই গেল।বাসা মোটামুটি গোছানো হয়েছে।আর যেটুকু বাকি রাতের মধ্যে গোছানো হয়ে যাবে।শিহাব চুপচাপ হয়ে চেয়ারে বসে আছে।নুরজাহান কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছেন কি হয়েছে?কিন্তু শিহাব আলতো হেসে বলেছে কিছু না।নিশি রান্নাঘর থেকে খাবার আনছে আর আড়চোখে শিহাবকে দেখছে।কি হল এমন চোখ নাক লাল হয়ে গেছে কেন? নিশির মন খারাপ হল।সবাই একসাথেই খেতে বসেছে।নাহার সবার আগে শিহাবের প্লেটে কালাভুনা দিতে গেলে নিশির মুখে হাসি ফুটল কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে শিহাব বলল,
—“খালামনি আমি এটা খাব না।রোস্ট দাও।”
নিশির মন মূহুর্তেই খারাপ হয়ে গেল।শিহান বরাবরই নিশির রান্না খুব পছন্দ করে।আজকে কেন খাবেনা।নিশিও কালাভুনা খেল না।শিহাব খাওয়ার মাঝে দুইবার নিশির দিকে তাকিয়েছে নিশির অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠেছে।এত গভীরভাবে কেন তাকায়?শিহাবের তাকানোর গভীরতায় নিশির তলপেট মোচর খায়।মাঝেমধ্যে নিশি শিহাবকে বুঝতে পারে না।
এরপরের দুই দিন শিহাব নিশির সাথে কথা বলল না।কাকে জিজ্ঞেস করবে এই মেয়ের বয়ফ্রেন্ড কে শিহাবের মাথায় এল না।হুট করেই মনে হল নোহা তো নিশির বেস্টফ্রেন্ড নোহা জানতে পারে অফিস শেষে মামার বাসায় রওনা দেয়।।
রাত নয়টা বাজে।রাফি শান্তি পাচ্ছে না।নোহা অভিমান করে আছে।সেটা ঠিক অভিমান নাকি রাগ বুঝতে পারছেনা।সেই গিফট বক্স দেখেই এমন অবস্থা।রাফির সামনে আসছেনা।রাফিকে সন্ধ্যায় চা দিচ্ছে না।গাছে পানি দিচ্ছে না।অসহ্য দুনিয়া।রাফি মোবাইলে রেকর্ডিং করা গান চালু করল সেখানে এক নেশাময়ী নারী আবেগ ঢেলে গান গাইছে,
“”””যে পাখি ঘর বুঝেনা উড়ে বেড়ায় বনবাদারে,
ভোলা মন মিছে কেন,
মনের খাচায় রাখিস তারে।
ও পাখি ছন্নছাড়া বাধনহারা
মানেনা প্রেমের শিকল,
ও পাখি দশ দুয়ারে
শত মন করে দখল।
যে পাখি ঘর বুঝেনা।।।।
পাখিটার এমন স্বভাব নিজের অভাব পূরুন করে নিজের মতো,
পাখিটা হাসে খেলে অন্তরালে,
সুনিপুন করে কতো।
ও পাখি ছন্নছাড়া বাধনহারা……….
রাফির চোখ থেকে দু ফোটা তপ্ত পানি গড়িয়ে পড়ে।কাকে বুঝাবে সে!প্রিয়তমাকে নাকি বাবা তুল্য চাচ্চুকে।দাদা দাদীর মানসম্মান জড়িয়ে আছে এতে।নোহাকে কাছেই পাচ্ছে না যে কোন কিছু বলে বোঝাবে।ওই মেয়েটাও কেমন একটুও রাফিকে বুঝে না।অশান্তি লাগছে বরাবরের মতো বাবা মায়ের উপর রাগ লাগছে কেন চলে গেল একা করে?ফ্লুরে বসে বিছানায় ঘাড় এলিয়ে দিল চোখের সামনে মোবাইলে প্রেয়সীর অজান্তে তোলা হাজারো ছবি।রাফি মোবাইল বুকে চেপে ধরল।মনে হল সে পাখিটাকে ধরতে পেরেছে।একি অনুভূতি!মনে হয় সব বাস্তব। আচ্ছা ফুসফুসে প্রেমের বাতাস লেগে যাওয়ায় কি রাফি নিজেও পাগল হয়ে যাচ্ছে?রাফি কিছু একটা ভাবল বিচ্ছেদের তাপে রাফির চোখ থেকে আরেক ফোটা তপ্ত পানি গড়িয়ে পড়ল।
–চলবে–