সুখ সন্ধানী পর্ব-০৫

0
757

#সুখ_সন্ধানী
পর্ব-৫
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
★★★
আজকে নিশি প্রথম ভার্সিটিতে গিয়েছিল।
নিশি বাসায় এসে দেখল ড্রয়িংরুমের মাঝখানের সোফায় আয়েশ করে বজ্জাত পুরুষ বসে আছে।নিশি দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছিল।শিহাব গলা বাড়িয়ে ডাকল,
—“আমি ঠিকি বলি তুই একদম তর ফুফুদের মতো অভদ্র হইছিস।আমি জলজ্যান্ত তোর বড় ভাই হই কই দেখে সালাম টালাম দিবি তা না দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছিস।”

নিশি ফুসে উঠে বলল,
—“আপনার কি নিম্নতম লজ্জা নাই শিহাব ভাই?এত বড় কান্ড ঘটিয়ে এমন অবলা সেজে কিভাবে থাকতে পারেন?লজ্জাহীন পুরুষ।”

শিহাব মাসুম চেহারা করে বলল,
—“নিশু তুই এটা বলতে পারলি? আমি কি এমন কাজ করেছি যে লজ্জাহীন হয়ে গেলাম?”

নিশু ভ্রুজোড়া কুচকে বলল,
—“এতবড় কাহিনী আপনার মনে নেই?কি বাটপার।”

শিহাব মনে করার ভঙ্গিতে বলল,
—“এহ!হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে আর আমাদের তো প্রেট্টিক্যালি আরেকটা বিষয়ে গবেষণা করার দরকার ছিল।চল এখনি ট্রাই করি।”

নিশি চরম পর্যায়ের রেগে গেল ফুসে উঠে বলল,
—“আপনি চরম লেভেলের খারাপ লোক হয়ে যাচ্ছেন শিহাব ভাই।”

এটা বলে হনহনিয়ে রুমে চলে গেল।পিছনে শুনতে পেল শিহাবের গা কাপানো হাসির শব্দ।নিশি আশ্চর্য হয়ে ভাবে এই লোকের ছায়া মাড়াতে চায় না কিন্তু স্বয়ং এই খারাপ মানুষ হাজির।আল্লাহ বোধহয় নিশির দোয়া কবুল করেনা।
অনেক্ষন পরে কারো সাড়া শব্দ না পেয়ে নিশি রুম থেকে বের হল।
নাহার ডাইনিং পরিষ্কার করছিল,নিশিকে দেখে আনন্দে ঝুপঝুপিয়ে বলল,
—“নিশি একটা মস্ত বড় সুখবর আছে।”
নিশি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই বলল,
—“আমাদের পাশের ফ্লাটের মিতুলরা চলে গেছে তুই তো জানিস।আপাকে অনেকদিন থেকে বলছিলাম যে আমার কাছে চলে আসতে দুইবোন একবাসায় থাকি।আজকে এসে বাসা ভাড়া করে গেল।আল্লাহ চাইলে আগামীকাল থেকে মালামাল নিয়ে চলে আসবে।আমার যে কি খুশী লাগছে।”

নিশি চোখ বড় বড় করে বলল,
—“মা এটা করার কি খুব প্রয়োজন ছিল?খালামনি দূরে ছিল এইতো ভাল ছিল কেন কাছে টান খালি খালি?”

নাহার বিরক্ত হয়ে বলল,
—“তুই কিরে?আমার বোন আমার পাশে থাকবে এতো খুশীর খবর আর তুই বলছিস দূরে থাকলেই ভালো।”

নিশু আর কিছু না বলে রুমে চলে আসে।নিশি উপলব্ধি করার চেষ্টা করছে আগামী দিনগুলো কেমন কাটবে ভাবতে নিশির গা হিম হয়ে যায়।নিশি বিরক্ত হয়ে ফ্রেস হয়ে এসে রেডি হতে লাগল আজকে এক ফ্রেন্ডের বাসায় যাবে।নোহাকে সাথে নিবে।রেডি হতে গিয়ে নিশির মন ভাল হয়ে গেল শিহাবের উপর যতটুকু রাগ ছিল কিছুটা কমল,তার সামনে রাখা প্রত্যেকটা সাজুগুজুর জিনিস শিহাবের দেয়া।শিহাবের পছন্দ ভালো।নিশির কি লাগবে কিভাবে যেন বুঝে যায়।এতে অবশ্য নিশি কখনোই অবাক হয় না সেই ছোটবেলা থেকে এমন করে আসছে।

রাফি অফিসের কাজে মগ্ন।জিনিয়া সেই কখন থেকে তাকিয়ে আছে।রাফি এই মেয়েটার উপর প্রচন্ড রকম বিরক্ত।নেহাৎ বসের মেয়ে বলে কিছু বলা মুসকিল।জিনিয়া আর রাফি একি ডেক্সে কাজ করে।জিনিয়া যে রাফিকে প্রছন্দ করে সেটা আর কেউ বুঝার বাকি নেই।অফিসের সবাই টিটকারি করে রাফিকে,
“”এবার তোমার প্রমোশন আটকায় কে?স্বয়ং বসের মেয়ের নজরে পড়েছ।”
রাফি এসব কথায় ভিষণ বিরক্ত।মোবাইল হাতে নিয়ে একটা অতি মায়াবী মিষ্টি মেয়ের ছবি দেখে ।এটাই রাফির অক্সিজেন।এই মেয়েটাকে একদিন না দেখলেই বুকের ভেতরে সুখের সন্ধানে তপড়াতে থাকে।আচ্ছা কখনো কি সুখের পাখিটা এই বুকের খাঁচায় বন্দী করা যাবে?কি জানি!আল্লাহ ভাগ্যে লিখে রাখলে করা যাবে হয়ত।

বাসায় আসার পরে রাফি ড্রেস আনতে গিয়ে বুঝল তার কালো টিশার্ট টা উধাও। খুবই অবাক করা বিষয়।এত দামি জিনিস রেখে সাড়ে চারশ টাকার টিশার্ট নিল?ভাবার বিষয়।রাফির কেন যেন মনে হল এটা নোহা করেছে।কেন মনে হচ্ছে রাফি ঠিক জানে না।তার একটা কড়া লিকারে চা প্রয়োজন।প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরে খায় এটা অভ্যাস।রাফি রান্নাঘরে গিয়ে দেখে নোহা চা বানাচ্ছে।রাফি জানে এই চা নোহা তার জন্যই বানাচ্ছে। সবসময় বানিয়ে রহিমা খালাকে দিয়ে পাঠায় কিন্তু রাফি বুঝে চা
বানানো ব্যাক্তিটা কে।রাফি কে দেখে নোহা মাথা নিচু করে ফেলল।রাফির কাছে এখন নোহাকে নতুন বউ মনে হচ্ছে।নতুন বউ যেমন লজ্জায় নুয়ে থাকে নোহাও তেমন লজ্জায় নুয়ে আছে।রাফি নিজের ভাবনায় নিজেই অবাক এসব কি ভাবছে সে অসহ্য চিন্তাভাবনা সব।নোহা মূলত রাফির জন্যই চা বানাচ্ছিল চা বানিয়ে রহিমা খালাকে দিয়ে পাঠাত।কিন্তু এখন যে রাফি নিজেই এসে উপস্থিত।কিভাবে বলবে চা খেতে?নোহা কিছু ভেবে রাফির দিকে তাকাল।নরম কন্ঠে বলল,
—“আপনাকে এক কাপ চা দেব?”

রাফি কিচেন কেবিনেটে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়।দুহাত বুকে মুড়ে বলে,
—“তো আমার জন্য বানানো চা কাকে দিবি?”

নোহা অপ্রস্তুত হয়ে চোখ সরিয়ে নিল।
—“নোহা তাড়াতাড়ি দে না ভাই। প্রতিদিন চা খাইয়ে তো অভ্যাস করে দিচ্ছিস।”

নোহা কাপে চা ঢালে আর বলে,
—“আমিতো চাই আপনি সব কিছুতেই আমাতে অবস্থ হয়ে যান।”

রাফি দাত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে।এই মেয়েটা আজকাল বেশরম হয়ে যাচ্ছে,আগে কথা বলতে ভয় পেত কিন্তু এখন ভয় পায় না নিজের ইচ্ছা জানাতে মরিয়া হয়ে থাকে।
রাফি বুঝানোর জন্য বলল,
—“নোহা কেন বুঝিস না তুই?”

নোহা হাত ধুয়ে রাফির দিকে ফিরে। —“আমি বুঝতে চাই না।আমি যদি কোন দিন বেশি বুঝে যাই,তাহলে যেন আমার মরন হয়।আমি বোকা থেকেই প্রিয় মানুষটাকে চাই।খুউব।”
রাফির বুকে সুখের ব্যাথা হয়।মুখে বলল,
—“যা সম্ভব না তার আশা করা বোকামি।”
নোহা জোর দিয়ে বলে,
—“আমি যদি হেরেও যাই তাও এই বোকামি করতেই ভালোবাসি।”

রাফি হুমকির স্বরে বলল,
—“আমি চাচ্চুকে বলে দিব তুই আমার সাথে এমন অস্বাভাবিক ব্যাবহার করিস।”

নোহা হাসল।খুবই মিষ্টি করে হাসল।রাফি সেদিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হল।নোহা দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে বলল,
—“আপনি কখনোই বাবাকে কিছু বলবেন না এটা আমি জানি।”

—“যদি বলে দেই।”

—“বলার হলে এতদিনে বলে দিতেন।”
রাফি আর কিছু বলল না।চায়ের কাপ রেখে রান্নাঘর থেকে সরে এল।মেয়েটা তার জন্য দিনদিন পাগল হয়ে যাচ্ছে।এই মেয়েকে কিভাবে তার থেকে সরাবে।সাহায্য করো আল্লাহ।
নোহা চায়ের কাপটা খুব যত্নে হাতে নিল।রাফি যেভাবে ধরেছিল ঠিক সেভাবেই ধরল,তারপর রাফি যেখানে ঠোঁট লাগিয়ে খেয়েছে নোহা সেখানেই ঠোঁট লাগিয়ে চায়ের বাকি অংশটা খেল।
দূর থেকে রাফি এই দৃশ্য দেখে আর থাকতে পারল না ধপাধপ করে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল।
আর এই সবটা বিষয় পর্যবেক্ষণ করল,নোহার খালা আছমা বেগম।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে