গল্পের নামঃ- #সুখ_পাখি🕊️💖
লেখিকাঃ- আইদা ইসলাম কনিকা
পর্বঃ১০
আদারার সাফ সাফ কথা সে এই বাসায় থাকবে না। মাহিরের মা, নিশু, বাবা, চাচা, চাচি সবাই একসাথে বলে বুঝিয়ে রাজি করায় আদারাকে। মাহির তো অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদারার দিকে কিন্তু এই দৃষ্টিতে আদারার রাগ গলে যাওয়ার মতো না। আদারা বলে
— কেন থাকবো আমি? কি পরিচয় থাকবো বলতে পারো তোমরা? আজ না হয় কাল কাল না হয় পরশু চলে যেতেই হবে আমাকে। মাহিরের মা বলে
— তুই তোর ফুপির কাছে থাকবি, তোকে বলবো না মাহিরের বউ হয়ে থাকতে, তুই নিশু আর মিলির সাথে থাকবি। কাল থেকে তুইও ভার্সিটি যাবি মিলি আর নিশুর সাথে। মাহিরের বাবা এতে তোমার কোন আপত্তি আছে? মাহিরের বাবা বলে
— না আমার কোনো আপত্তি নেই। আর আজিজ ( মাহিরের চাচার নাম) আমি চাই না এই দুই ছেলের কুকর্মের জন্য আমাদের খারাপ হোক। আকাশকে তার বউকে নিয়ে আসতে বল। আর হ্যা সে যাই করুক তোর ছেলে তাই বলে তেয্য পুত্র করার মানে হয় না, এটা ইসলামে হারাম। বলেই মাহিরের বাবা বেড়িয়ে যায় অফিসের জন্য । মাহিরের বাবা বরাবরই এমন সব কিছু
ঠান্ডা মাথায় করার চেষ্টা করে। মাহিরের চাচাও বেড়িয়ে যায় । আকাশ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে ছিল। মাহিরের বাবা হাতে ইশারায় মাহির আর আকাশকে আসতে বলে , আকাশও যেতে লাগে। মাহির বলে
— আমি কিছুদিন অফিসে যেতে পারবো না। মাহির বাবা একমিনিট দাড়িয়ে শুধু এত টুকু বলে
— ok Take your time… বলেই বেড়িয়ে যায়। আদারা ভাবছে সে এখন যাবে কোথায় গ্রামে ফিরে গেলো হাজারো কথা শুনতে হবে তার জন্য তার পরিবারের। সে এই জিনিসটা ২য় বার চায় না। মাহিরের মা বলে,
—আয় মা, আয় কিছু খেয়ে নে। আদারা বলে
— ভালো লাগছেনা ফুপি আমার কাজ আছে। জামা কাপড় সব পড়ে আছে ঐ রুমে সেগুলো গুছাতে হবে। অনেক কাজ। মাহিরের মা বলে
— সার্ভেন্টরা করে দিব।আদারা বলে
— না আমারটা আমিই করব।
নিশু হঠাৎ করে বলে
— ভাইয়া তোর হাতে কি হয়েছে? মাহির নিজের বেন্ডেজ করা হাতটার দিকে তাকিয়ে বলে
— কিছু না, আর উপরে চলে যায়। আদারাও কিছু না খেয়ে গেস্ট রুমে চলে আসে। দরজাটা লাগিয়ে বালিশে মুখ গুজে কান্না করছে। এটা তার সাথে কি হচ্ছে। আদারা ভাবতেও পারেনি তার জীবন থেকে সুখ নামক জিনিসটা এভাবে উরাল দিবে। দেখতে দেখতে দুপুর গড়িয়ে এলো। মাহির সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে আদারার জন্য যখন আদারা রুমে আসবে তার জামা কাপড় গুছাতে তখন সে তার সাথে কথা বলবে। কিন্তু এটা ছিল তার ভুল ধারণা। সেদিনে আদারাকে মাহিরের রুমের আশেপাশে অব্দি দেখা যায়নি। মাহিরের আর একসময় ভালো লাগে না তাই সে তার রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। মাহিরের মা ছেলেকে ভরদুপুরে কোথাও যেতে দেখেও চুপই থাকলেন। অন্য কোনোদিন হলে হয়তো মাহিরকে বাঁধা দিত। সবাই দুপুরে একসাথে বসে খেতে লাগলো আদারকেও জোর করে নিয়ে আসে মিলি আর নিশু মিলে । আদারা হালকা পাতলা কিছু মুখে দিয়ে উঠে দাড়ায়। আর মাহিরের আম্মু বলে
— আদারা খাবার শেষ কর। আর নিশু মিলি তোরা তিনজন একসাথে থাকবি। নিশু মাথা দোলায় নিশু আর আদারা অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে ছাত্রী আর মিলি তাদের এক বছরের জুনিয়র। আদারাও মাথা দোলায়। তারপর তিনজন মিলে যায় মাহিরের রুমে। ফার্স্ট এড বক্সটায় থাকা ঔষধ গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ফ্লোরে এখনো পর্যন্ত। আদারা সেগুলোর দিকে একপল তাকিয়ে কিছু না ভেবেই নিজের জামা কাপড় গুছিয়ে নিতে থাকে তখনই রুমে প্রবেশ করে মাহির। মাহির আদারাকে দেখে মনে মনে খুশি হয়ে যায়। মাহির নিশু আর মিলিকে বলে
— নিশি, মিলি বাইরে যা তোরা । নিশু আর মিলি আদারার লাগেজটা নিয়ে বাইরে চলে যায় আদারাও বেড়িয়ে যেতে চাইলে মাহির গিয়ে দরজা আটকে দাঁড়ায়। আদারা সেটা দেখে ভ্রু-কুচকে ফেলে। আদারা মাহিরের হাতের নিচ দিয়ে বেড়িয়ে যায়। মাহির বলে
— এই মেয়ের এত জিদ কেন? একটু কথা শুনলে কি হয়!!
! কথাটা আদারা কান এড়ায়নি এত বড় অন্যায় করার পরও আদারার রাগটাই ছোখে পরলো তার আবেগ অনুভূতি গুলো তুচ্ছ তার কাছে। আদারা সামনে এগুতেই দেখে একটা ফুলদানি সেটা নিয়ে সে ছুড়ে মারলো মাহিরের রুমের দরজাটার ঠিক একটু আগে। মাহির রুমে ছিল হঠাৎ কিছু ভাঙার আওয়াজে সে ভয় পেয়ে যায় রুম থেকে বেড়িয়ে দেখে তার দরজার কাছে ভাঙা ফুলদানিটা পরে আছে। মাহির কি মনে করে হেসে দেয়।
বিকেলের দিকে নিশু, আদারা আর মিলি বের হয় সপিং করতে। আদারা নিশু আর মিলি মিলে অনেক সপিং করে আর শেষে আদারা নিজের জন্য একটা ফোন আর বই কিনে। এখন থেকে সে আর মাহিরকে নিয়ে ভাবতে চায় না। নিজেকে নিয়ে ভাববে সে। মাহির নামক কোনো মানুষ তার জীবনের বড় একটা অংশ জুড়ে ছিল সেটা সে মুছে ফেলবে। বাসায় এসে আদারা একদম ফ্রী হয়ে যায় আগের মতো সবার সাথে। শুধু এড়িয়ে যায় মাহির আর আকাশকে। মাহিরের চোখের দিকে তাকায় না অব্দি আদারা। মাহিরের মাও মাহিরের সাথে তেমন দরকার ছাড়া কথাই বলে না। দেখতে দেখতে কেটে যায় ১ সপ্তাহ এই এক সপ্তাহে আদারা যথা সম্ভব এড়িয়ে চলছে মাহিরকে। মাহিরের ও প্রচুর খারাপ লেগেছে কাজ টায় । কিন্তু কারণটা তার অজানা। আজ মিলি আর নিশু আদারা বাসায় একা। কারণ বাসার সবাই মাহিরের চাচির সাথে তাদের চাচির বাবাকে দেখতে গিয়েছে বাসায় শুধু মাহির আদারা, নিশু আর মিলি। মাহিরের অফিসে তার ফিরতে লেট হবে। তাই নিশু আর মিলি প্লান করে যে তারা সবাই একসাথে পার্টি করবে ডিজে পার্টি। সবাই টি-শার্ট আর একটা থ্রি কোয়াটার পেন্ট পরে আছে। নিশু আর মিলি এগুলো পরে অবস্থ তারা প্রায় সময় এগুলো পরে থাকে। কিন্তু আদারার একটু আনইজি লাগছে। কিন্তু আদারাকে বেশ কিউটও লাগছে পরনে তার গোলাপি আর সাদা কালের টি-শার্ট, সাদা কালের পেন্টে জাস্ট চুল গুলো উঁচু করে জুটি করা ওয়াও। দেখতে দেখতে রাত এগারোটা বেজে যায়। তখনও তারা ডান্স করছে
All I see, in hersszz touch
What’s the fun? (ah, ah)
Do you know what I mean it is? (ah, ah)
Mmm, sup, sup, sup, sup
Ooo, can I get ya’?
Ooo, can I touch you?
Ooo, can I get ya’?
Ooo, can I touch you? আদারাও তাল মিলিয়ে ডান্স করছে। একটা সময় তাদের বেশ গরম লাগে। তখন নিশু বলে
— আদারা নিচে গিয়ে আইসক্রিমের বক্সটা নিয়ে আয়। আদারা বলে
— আমি যাবো না নিচে। মিলি বলে
— কেন কেউ কি তোমায় খেয়ে ফেলবে নাকি? আদারা বলে
— ধূর নিচে সার্ভেন্টরা আছে না। নিশু বলে
— চুপ শাঁকচুন্নি। তুই ভালো করেই জানিস সন্ধ্যার পর বাসায় আমরা ছাড়া কেউ থাকে না। আদারা বলে
— যাচ্ছি, তোদের আমি আইসক্রিম দিব না। বলেই নিচের দিকে পা বাড়ায়। আদারা এখন ফ্রী মাহিরকে দেখলে খারাপ লাগে কিন্তু তার বলা করা ব্যবহার গুলোর কথা মনে পরলেই আদারার আর ভালো লাগে না। আদারা ফ্রিজ থেকে একটা কোন বের করে খুলে খেতে থাকে আর আইসক্রিমের বক্সটা না নিয়ে বাটিতে করে নিয়ে যেতে থাকে। কারণ নিশু আর মিলি একবারে এক বক্স সবার দিয়ে দিবে পরে তাদের কষ্ট হবে ঠান্ডা জ্বর লাগবে। আদারা কিচেন থেকে মাত্রই বের হয় কিন্তু সমস্যা হচ্ছে একহাতে তার ট্রে আরেক হাতে তার আইসক্রিম। ঠিক তখনই বাসায় প্রবেশ করে মাহির। অনেক ক্লান্ত সে। হঠাৎ করে দরজা খুলাতে আদারা ভয় পেয়ে যায় । মাহির তো হা হয়ে তাকিয়ে আছে । আর মাহিরের এমন করে তাকিয়ে থাকে দেখে আদারা কেমন যেন লাগছে। মাহির কি হলো কে জানে। সে গিয়ে আদারার হাত থেকে কোনটা নিয়ে খেতে খেতে বলে
— হেল্প করে দিলাম #সুখ_পাখি এবার যাও। আদারা অবাক হয়ে যায়। এই প্রথম মাহিরের মুখে এত সুন্দর একটা ডাকনাম পেল সে। মাহির বলে
— অনেক গরম লাগছে। বলেই চলে যায় কোনটা নিয়ে। মানে কি আদারা মাহিরের এমন হঠাৎ পরিবর্তন মেনে নিতে পারছে না। নিশ্চিত এর পিছনে কোনো কারণ আছে। মাহির নিজের রুমে এসে একাই হেসে ফেলে। ভাবে ডোসটা হয়তো একটু বেশিই হয়েগেছে…
চলবে?