গল্পের নামঃ- #সুখ_পাখি🕊️💖
লেখিকা- আইদা ইসলাম কনিকা
পর্বঃ০৪
অপর দিকে, হসপিটালে মায়ার কেবিনে কেউ হুট করে ঢুকে যায়। মায়ার মা তখন মায়াকে আপেল কেটে দিচ্ছিল আর মায়া সেটা খাচ্ছিল আর ফোন চালাচ্ছিল হঠাৎ করে কারো কেবিন প্রবেশ করাতে মায়া ভয় পেয়ে যায়। ভেবে ছিল হয়তো তাদের প্লানটা ভেছতে গেলো কিন্তু মায়া যাকে দেখে সে খুশিতে দৌড়ে গিয়ে তাকিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে
—- Miss you jaan… সেই ব্যক্তিটাও মায়াকে জড়িয়ে ধরে বলে
— Miss you too…. মায়ার মা বলে
— বাবা তুমি এসেছ। জানো কাল কি হয়েছে একটুর জন্য আমারা বেঁচে গিয়েছি। কালকে যখন মাহির আসে আমি তো প্রথম খেয়ালই করিনি আর মায়াতো নিজের মতো নিজের চুল বাঁধতে ব্যস্ত। হঠাৎ করে আমি বাইরে এসে দেখি মাহির আসছে। আর আমি ব্যাপারটা কোন মতে সামলে নেই। আচ্ছা তোমরা গল্প কর আমি বাইরে দেখি মাহির আসে কিনা। মায়ার মা কেবিন থেকে বেড়িয়ে আসে। মায়া সেই ব্যক্তিটাকে বলে
—- বাবু যানো মাহির কালকে কি যেন বলছিল। ও নাকি বদলা নিবে, আদারার থেকে। সে বলে
—- হুমম,,,। মায়া বলে
— এই মাহিরের থেকে নিজের পিছ ছাড়াতে গিয়ে আমরা যে ওর এত এত টাকা আর আদারাকে নিয়ে চালটা চাললাম সেটা কি কাজে লাগবে। আদারার জন্য আমার খারাপ লাগছে। সে বলে
— দেখ মায়া,,, সব কিছু এত ভাবতে হয় না। বর আমাদের আর কোন রাস্তা ছিল না। আর বাকি রইলো আদারার সে আমাদের প্লানিং এর একটা অংশ। আদারা যে দিন মাহিরকে প্রপোজ করে সেটা আমি আর তুমি দেখে ফেলি। আর তারপরই প্লানটা কাজে লাগাই। মাহির কিন্তু অনেক বোকা। মায়ার সাথে কিছু কথা বলে সে ব্যাক্তিটা চলে যায়।
অপর দিকে আদারা শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে আসে। মাহিরের দিকে তাকিয়ে একটা চওড়া হাসি দিয়ে বলে
— গুড মর্নিং পাতি নামক ডেভিল হাসবেন্ড। মাহির একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে
— হ্যা আমি ডেভিল। ঠিক বলেছ। যাও এখন নিচে যাও নাশতা বানাবে তুমি। আজ সার্ভেন্টদের ছুটি। আদারা কিছু না বলে মাহিরের দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । মাহির বাঁকা হাসি দিয়ে এক চোখ মেরে নিজের টাওয়েল টা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পরলো। তারপর ব্রাশ করে শাওয়ার নিতে লাগলো। অন্য দিকে আদারা মাহিরকে বকতে বকতে নিচে নামছে
—- হারামি, খারাপ, খচ্চর, শয়তানের নানা। আমার হাতের নাশতা খাবা। ভালো করে ভালোভাবে খেতে চাইলে তো কিছু বলতাম না কিন্তু এবার দেখ আমি কি করি। এমন নাশতা খাওয়াবো তোমাকে যে কিছু বলতেও পারবানা ইভেন করতেও না। আদারা নিচে কিচেনে গিয়ে সার্ভেন্ট দের হালকা সাহায্য নিয়ে নাশতা বানাতে লাহে। একটা সময় আদারা বলে
— আপনারা যান আমি একাই পারবো। কুকরা চলে যায়। আদারা বাকা হাসি দিয়ে ফ্রিজ থেকে কাঁচা ডিম নিয়ে আসে। আর সেটা মাহিরের জুসের সাথে মিক্সিং করে । কিন্তু কেমন মিক্সি হচ্ছে না তাই সে ব্লেন্ডার ব্যবহার করে। কিন্তু একটা বাজে গন্ধ আসছে।
আদারা টোস্ট, অমলেট, জুস আর ফ্রুট সালাদ তৈরি করে। মাহির নিচে আসে সবাই একসাথে খেতে বসে আদারা চালাকি করে আগে থেকেই মাহিরের গ্লাসটা সে জাগায় রেখে দিয়েছে যেখানে মাহির প্রতিদিন বসে। আজকেও মাহির ঠিক একই জায়গায় বসে। সবাই খেতে লাগে। আদারও মাহিরের পাশে বসে। খাচ্ছে আর দেখছে সে কি করছে। একসময় মাহির গ্লাসটা হাতে তুলে মুখের কাছে নিতেই মাহিরের কাছে একটা বাজে গন্ধ আসে। সে সেটা খেতে না চেয়ে উঠে যেতে চাইলে। আদারা বলে
— না খেয়ে যাবেন না প্লিজ। আপনার জন্যই তো নিজ হাতে নাশতা বানালাম আপনি খাবেন বলে। মাহিরের চাচি বলে
— আদারা তুমি নাশতা বানিয়েছ। মিলি বলে
— হ্যা আমি ভাবিকে কিচেনে কাজ করতে দেখেছি। মাহিরের মা বলে
— মাহির মেয়েটা তোর জন্য এত কষ্ট করে খাবার বানিয়েছে আর তুই না খেয়ে চলে যাবি? সেটা হয় না বস চুপচাপ আর সবটা শেষ কর। আদারা মাহিরের দিকে একটা ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিয়ে চোখের ইশারায় বলে খেতে। মাহির পরেছে মহাবিপদে কারণ সবাই তৃপ্তি সহ কারে খাচ্ছে এখন যদি সে কিছু বলে তাহলে সবাই মাহিরকেই ভুল বুজবে। মাহির আবার নিজের জায়গায় বসে পরে। গ্লাসটা মুখের কাছে নিতেই মাহিরের বমি আসে। কিন্তু তাও চুপচাপ এক ঢুক খেয়ে নেয়। আর আদারা দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায় আদারা তো চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে খাচ্ছে আর মিটমিট হাসছে। মাহির রাগে কটমট করতে করতে জুস নামক অখাদ্য টা খেয়ে নিল। তখনই মাহিরের বাবা বলে
—- আকাশ কোথায়, আকাশকে যে দেখছিনা? তখনই সদর দরজা দিয়ে আকাশ প্রবেশ করতে করতে বলে
— সরি চাচ্চু জগিং করতে বেরিয়ে ছিলাম। মিলি বলে
— এখন ১০টা বাজে তুই বেড়িয়ে ছিলি কখন? আকাশ বলে
— ৭টার দিকে। আকাশের বাবা বলে
— ১০টা যে আমাদের সকালের নাশতার সময় সেটা নিশ্চয়ই আকাশ তোমার অজানা নয়। আর তিন ঘন্টা কেউ জগিং করে। আকাশ বলে
— রাস্তায় এক ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হয়েছিল তাই লেট হয়েছে। আকাশের বাবা কিছু বলতে যাবে তখনই
আকাশের মা বলে
— আহহ চুপ করত। বাবা তুই যা ফ্রেশ হয়ে আয়। খাওয়া শেষ করে মাহির, আকাশ, মাহিরের চাচা, আকাশ সবাই অফিসের জন্য বেড়িয়ে পরে। মাহির বরাবরই একা গাড়ি নিয়ে যায় এবারও সেম। আদারা নিজের রুমে গিয়ে দেখে মাহির ভেজা টাওয়ালেটা বিছানয় ফেলে রেখেছে। আদারা রেগে বলে
—কি ফালতু কাজ কর্ম, ধরু। বলেই সেটা বেলকনিতে মেলতে যায়। আর আদারার চোখ পরে মাহিরের ফোনের উপর। সে ফোনটা হাতে তুলে নেয় এটা ভেবে যদি কোনো প্রমান পাওয়া যায়। যেই ভাবা সেই কাজ সে টাওয়ালেটা বেলকনিতে রেখে দিয়ে ফোনটা নিয়ে রুমে আসে। ফোন লক করা। পাসওয়ার্ড কি হবে। প্রথমে সে মাহির লিখে কিন্তু কাজ হয় না, তারপর মায়া তাও কোন কাজ হয়না। তারপর আদারা মাহিরের বার্থডে ডেট টা লিখে আর সাথে সাথে ফোনের লক খুলে যায়। আর তখনই কেউ এক ঝটকায় ফোনটা তার কাছ থেকে নিয়ে নেয়। আদারা সামনে তাকিয়ে দেখে মাহির। মাহির তো বেড়িয়ে গিয়েছিল। মাহির একটু দূরে যেতেই তার মনেপরে সে তার ফোন ভুলে বাসায় রেখে এসেছে তাই সে আবার গাড়ি ঘুরিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। আর রুমে এসে দেখে আদারা মাহিরের ফোন নিয়ে কিছু করছে। আদারের সকালের সেই দুষ্টামি আর এখন ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো ছিল। আদারা মাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। মাহির আদারাকে বলে
— কি করছিলি ফোনে? আদারা কেন কথা বলে না। মাহির আদারা গাল চেপে বলে
— কিছু জিজ্ঞেস করেছি আমি। আদারা মাহিরের হাতটা ছাড়িয়ে বলে
— আপনি যে কথায় কথায় গায়ে হাত তুলেন জানেন এটা কারা করে? যারা কাপুরষ তারা এটা করে। মাহির আদারার মুখে কাপুরষ কথাটা শুনে কষিয়ে একটা চড় লাগিয়ে দেয় আদারার গালে। আদারা বিছানায় ছিটকে ওরে আর তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে
—- আপনি সত্যি একটা কাপুরষ। নাহয় কথায় কথায় গায়ে হাত তুলতেন না। আপনি আমার উপর যে এত অত্যাচার করছেন সেটা কিসের জন্য মায়ার জন্য? আপনার কাছে কোনো প্রমাণ আছে? নাকি প্রমাণ ছাড়াই আমার অপর এমন হিংস্র পশুর মতো অত্যাচার করছেন। মাহির নিজের ফোনটা ফ্লোরে ছুড়ে মারলো আর সাথে সাথে ফোনটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। মাহির আদারার চুলের মুঠি ধরে বলে
— মাহির আহনাফ আবিদ খান কখনো প্রমান ছাড়া কাজ করে না। মায়ার এক বন্ধ এসেছিল সেই পার্কে যেদিন তুই আমাকে সেখানে প্রপোজ করিস। আর সেটা দেখে মায়া দৌড় চলে যেতে চাইলে একটা গাড়ি এসে।। মাহিরকে থামিয়ে আদারা বলতে লাগে
—- এটা মায়ার কেমন ভালোবাসা যেখানে কোন বিশ্বাস নেই। আর সে একটা ছেলের সাথেই বা সেখানে কি করছিল? আর ও যে গাড়িতে এক্সিডেন্টে করে কই আমারওতো সেখানে ছিলাম। কোন ভির বা এক্সিডেন্ট হয়েছে দেখলাম না বর শুনালম না। আর আমার চুল ছাড়ুন। এটা রাবার না যে আপনি টানাটানি করবেন। কাপুরষ একটা বলেই আদারা রুমের দরজা খুলে বেড়িয়েছেন যায়। আর মাহির উপর দিকে ভাবতে লাগে আদারার এক একটা কথা সত্যি। তাহলেকি তার কোথাও ভুল হচ্ছে। সে যদি ভুল কিছু করে তাহলে!!!
চলবে