#সুখেরও_সন্ধানে
লেখনীতে: #মাশফিত্রা_মিমুই
[পর্ব:২৩]
সুফিয়া সালাম জানিয়ে তাদের সম্মুখে বসলেন। আজিজুল হক সৌজন্য হেসে নিজেদের পরিচয় জানাতেই ভেতরে ভেতরে বেশ চমকে উঠলেন তিনি। এত বড়ো ঘর থেকে সম্বন্ধ এসেছে মেয়ের জন্য! ভাবতেই মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো। মাজেদা এসে দিয়ে গেলো চা এবং বিস্কুট। আফসানা হাস্যজ্জ্বল মুখে বললেন,“মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছি সেই কবে। সে ঘরে নাতি-নাতনিও আছে। এখন বাকি শুধু আমার এই একটামাত্র ছেলে। তারও বিয়ের বয়স হয়েছে। বাড়িতে একা একা কী ভালো লাগে বলুন তো?”
সুফিয়া জোরপূর্বক হেসে বললেন,“বিয়ের বয়সী ছেলে আছে ঘরে তাহলে তাকে বিয়ে করিয়ে দেওয়াই তো উত্তম।”
“এটাই তো আমি বলি। কিন্তু ছেলেকে এ বিষয়ে বললেই সে এড়িয়ে যায়। তারপর পরশু এসে আমায় জানালো তার নাকি একটা মেয়েকে পছন্দ হয়েছে। বিয়ে করলে তাকেই করবে। ছেলের যখন পছন্দ হয়েছেই তাহলে অন্য কোথাও মেয়ে খুঁজে সময় নষ্ট করতে যাবো কেন বলুন?”
কৃত্রিম হাসলেন সুফিয়া। আজিজুল হক বললেন,
“না জানিয়ে আসার জন্য দুঃখিত আপা। আমার স্ত্রীর তো আর তড়ই সইছিল না। তাই আজই আসতে হলো। অনুভার ছবি আমরা দেখেছি, আমাদেরও তাকে খুব পছন্দ হয়েছে। তাই আমরা চাইছি আজই বিয়ের কথাবার্তা একেবারে পাকাপোক্ত করে যেতে।”
প্রত্যুত্তরে কী বলবেন বুঝতে পারলেন না সুফিয়া। তবে তিনিও খুব করে চান নিজে দাঁড়িয়ে থেকে মেয়েটার বিয়ে দিতে। মরার আগে মেয়েটার সুখ নিজ চোখে দেখে যেতে। উনার নিরবতা দেখে আফসানা আশ্বস্ত করে বললেন,“আমরা সবকিছু জানি আপা। ওসব নিয়ে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। বউ নয় বরং আমরা এক কাপড়ে একটা মেয়ে নিয়ে যেতে চাই বাড়িতে। আপনার মেয়েকে রাজরাণী করে রাখবো, কখনো কোনো কষ্ট হবে না তার। আমার ছেলেটা রাগী হলেও মনটা কিন্তু ওর খুব ভালো। খুব আশা নিয়ে এসেছি আপা। খালি হাতে ফেরাবেন না আমাদের।”
মহিলাটির কণ্ঠস্বর খুবই করুণ শুনালো। ভদ্রমহিলার চোখ জোড়ার পানে তাকিয়ে সুফিয়া খেয়াল করলেন ওই চোখে অদৃশ্য এক মায়া আছে। এত সুন্দর অক্ষি যুগলের মালিকের মনটাও নিশ্চয়ই অনেক সুন্দর হবে! মনে মনে সুফিয়া সিদ্ধান্ত নিলেন, যাই হয়ে যাক না কেন এখানেই এবার তিনি ছোটো কন্যাকে বিয়ে দিবেন। কারো ‘না’ শুনবেন না। তারও তো একটা জীবন আছে নাকি? তার উপর ওদের বাবা মারা গেছেন। অর্থিকাও এখন সুস্থ স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছে, চাকরি করছে। উনার অবস্থাও তেমন ভালো নয়। তাই মা হিসেবে ছোটো মেয়েটার জীবন সাজিয়ে দেওয়া তো উনার কর্তব্য।
দুজন নর নারী কাঙ্ক্ষিত উত্তরের অপেক্ষায় উনার মুখপানে চেয়ে আছেন। লম্বা একটা শ্বাস টেনে নিলেন সুফিয়া। অধর প্রশস্ত করলেন কিছু বলার উদ্দেশ্যে আর তখনি শব্দ হলো কলিং বেলের। কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলেন সুফিয়া। মাজেদা দৌড়ালো দরজা খুলতে। মিনিট দুয়েক পরেই দু হাতে বাজারের থলে নিয়ে হাজির হলো অনুভা।
অপরিচিত দুজন মানুষকে সোফায় বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুটির কুঁচকে নিলো। ব্যাগ দুটো মাজেদার হাতে দিয়ে ফিসফিসিয়ে শুধালো,“উনারা কারা?”
মাজেদাও ঠিক একইভাবে ফিসফিস করে উত্তর দিলো,“আপনেরে দেখতে আইছে আপা। খালার মতিগতি দেইখা যা বুঝলাম ভিতরে ভিতরে খালায় কিন্তু রাজি। খুব তাড়াতাড়ি আপনের বিয়ার ঢোল বাজতে যাইতাছে গো আপা!”
কথাটা বলেই লাজুক হেসে প্রস্থান করল মাজেদা। ললাটে এখনো কয়েকটা ভাঁজ পড়ে আছে অনুভার। এগিয়ে গিয়ে সালাম দিলো অপরিচিত মানুষ দুজনকে। আফসানা এবং আজিজুল হক সমস্বরে জবাব নিলেন সালামের। ভদ্রতা বজায় রেখে অনুভা প্রশ্ন করল,“আপনারা? ঠিক চিনলাম না তো আপনাদের।”
আফসানা একপাশে সরে গিয়ে নিজের পাশেই কিছুটা জায়গা করে দিলেন তাকে বসার জন্য। হাত বাড়িয়ে ডেকে বললেন,“আমরা তানিমের বাবা-মা। এখানে এসে বসো তো মা।”
আশ্চর্য হয় অনুভা।তানিমের বাবা-মা! উনারা এখানে কেন? মায়ের বয়সী ভদ্রমহিলার ডাকে উনার পাশে গিয়ে বসলো অনুভা। প্রশ্ন করল,“আপনারা? হঠাৎ এখানে?”
এবারো হাসলেন আফসানা। বললেন,“তোমার জন্যই তো আসা।”
“আমার জন্য?”
উনাকে কিছু বলতে না দিয়েই সুফিয়া বলে উঠলেন,
“উনারা তোর জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে।”
চমকায় অনুভা। বিয়ের প্রস্তাব! গলা শুকিয়ে আসে মুহূর্তেই। শুকনো ঢোক গিলে শুধায়,“কার সাথে?”
আফসানা মুচকি হেসে উত্তর দেন,“তানিমের সাথে। তুমি তো আমাদের অফিসেই চাকরি করো তাই না?”
অপ্রস্তুত হয় অনুভা। মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে বলে,“আমার সঙ্গে স্যারের বিয়ে এটা কী করে হয় আন্টি? উনি আমার অফিসের বস আর আমি উনার একজন কর্মচারী।”
আফসানা ভদ্রমহিলা প্রাণবন্ত একজন নারী। স্বভাব সুলভ অধরে হাসি রেখেই বললেন,“কেন হয় না? চাইলেই হয়। আর আমরা তা চাইছি। তোমাকে আমাদের একমাত্র ছেলের পছন্দ হয়েছে। তুমি যদি চাও বিয়ের পরেও চাকরি করতে পারবে তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবুও না করো না মা। খুব আশা নিয়ে যে এসেছি। এই মাকে ফিরিয়ে দিও না।”
অনুভা অনুভব করল ভদ্রমহিলার কণ্ঠস্বরে কিছু একটা আছে। যার বিপরীতে কিছু বলার মতো খুঁজে পাচ্ছে না সে। এত সুন্দর আবেদনের পর মনে হয় না কেউ মুখের উপর না বলে দিতে পারবে। সবচেয়ে বেশি অবাক হচ্ছে এটা শুনে যে তানিমের তাকে পছন্দ! যেই লোকটা শুরু থেকেই তাকে বিভিন্ন ভাবে অপমান অপদস্থ করে আসছে সেই লোকটা তাকে বিয়ে করতে চায়? যদিও লোকটার ইদানিংকালের ব্যবহারে কিছু একটা টের পেয়েছিল অনুভা। তবুও বারবার ভাবনা সরিয়ে দিয়েছে মন মস্তিষ্ক থেকে।
ভেতরে অস্বস্তিবোধ করছে অনুভা। কীভাবে এদের না বলে দিবে বুঝতে পারছে না। মায়ের দিকে তাকিয়ে এটা অবশ্য বুঝতে পারলো যে মা এই প্রস্তাবে রাজি। রাজি থাকবে নাই বা কেন? তিনি তো কবে থেকেই চাইছিলেন মেয়েকে সুপাত্রে হস্তান্তর করতে। আজিজুল হক আর আফসানা চা খেতে খেতে সুফিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন কথাবার্তা বলছেন।
আবারো কলিং বেল বেজে উঠলো। মাজেদা দরজার দিকে এগোতে এগোতে বললো,“মনে হয় বড়ো আপায় আইয়া পড়ছে।”
তার কথাই ঠিক হলো।ভেতরে প্রবেশ করল অর্থিকা। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে সকলকে সালাম দিয়ে বসে পড়ল মায়ের পাশে। আফসানা হেসে প্রশ্ন করলেন,
“তুমি বুঝি অনুভার বড়ো বোন?”
“জ্বি, আপনারা?”
উনারা উনাদের পরিচয় দিতেই অর্থিকাও ঠিক ছোটো বোনের মতোই ভেতরে ভেতরে চমকালো। আড়চোখে দেখে নিলো তাকে। অনুভার চোখেমুখে ফোটে উঠেছে অসহায়ত্ব। সুফিয়া মেয়ের উদ্দেশ্যে তাদের আসার কারণটা বলে এবার তাদের উদ্দেশ্যে বললেন,“আমার মেয়েটা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেছে। আমিও চাই আমার মেয়েটা এবার অন্তত সুখের মুখ দেখুক। তাই আমার কোনো আপত্তি নেই আপনাদের প্রস্তাবে।”
বুক কেঁপে ওঠে অনুভার। মা তো উনাদের কথা দিয়ে দিচ্ছে! এবার কী হবে? বড়োদের মাঝখানে কিছু বলতেও পারছে না মেয়েটা। অসহায় দৃষ্টিতে বড়ো বোনের পানে তাকালো। অর্থিকা ইশারায় বোনকে আশ্বস্ত করে মায়ের উদ্দেশ্যে হেসে বললো,“অনু প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে। ওর অনুমতি না নিয়েই হুটহাট এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তো তুমি নিতে পারো না মা।”
বড়ো কন্যার দিকে ভ্রু যুগল কুঁচকে তাকান সুফিয়া। বলেন,“ওর মতামত নিয়ে কী হবে? সেই তো বলবে তোমাদেরকে ছেড়ে আমি যাবো না।”
আজিজুল হক বললেন,“না না বিয়েটা যেহেতু ওর, সারাটা জীবন যখন ওকেই কাটাতে হবে তখন ওর সিদ্ধান্তটাই আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
আফসানা আলতো করে অনুভার মাথায় হাত রেখে শুধালেন,“নির্দ্বিধায় তুমি তোমার মতামত জানাতে পারো মা। তুমি কী বিয়েতে রাজি?”
পুনরায় বড়ো বোনের পানে তাকায় অনুভা। অর্থিকা চোখ দিয়ে ইশারা করে বোনকে। যার অর্থ সহজেই বোধগম্য হয় অনুভার। সোজাসাপ্টা জবাবে বলে,
“তানিম স্যারকে আমি শুরু থেকেই অফিসের বস হিসেবে জেনে এসেছি। অফিসের কাজ ব্যতীত উনার সঙ্গে আমার তেমন কোনো পরিচয় নেই। সেক্ষেত্রে এ বিয়েতেও আমি সায় দিতে পারছি না, মাফ করবেন আমায়। এমন একটা সিচুয়েশনে যে কখনো পড়তে হবে তা ভাবতেও পারিনি।”
ভেতরে ভেতরে আহত হলেন আফসানা। বোঝানোর সুরে বললেন,“তাতে কী হয়েছে মা? পরিচয় নেই তো পরিচয় হয়ে যাবে। পারিবারিকভাবেই না হয় তোমাদের বিয়েটা হবে তারপর সংসার করতে গিয়ে দুজন দুজনাকে চেনাজানাও হয়ে যাবে। কত মানুষেরই তো অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হচ্ছে যেখানে একজন আরেকজনকে আগে কখনো দেখেনি পর্যন্ত। তারা কী সংসার করছে না?”
এবার কী যুক্তি দিবে ভাবতে লাগলো অনুভা। কিন্তু তাকে আর ভাবতে না দিয়েই অর্থিকা ভদ্রতা বজায় রেখে বললো,“সবার ক্ষেত্রে এমনটা হয় না আন্টি। অফিসের বসের সঙ্গে বিয়েটা দৃষ্টিকটু দেখায়। অন্যান্য কর্মচারীরা ব্যাপারটা নিয়ে যে আড়ালে কথা বলবে তার কী গ্যারান্টি আছে? তাছাড়া আমার বোনের জন্য যোগ্য পাত্র আমি পেয়ে গেছি। তাকে আমি কথাও দিয়েছি অনুভার সঙ্গে তার বিয়ে দিবো। মা বেশিরভাগ সময় অসুস্থ থাকেন তার সঙ্গে বিভিন্ন ঝোট ঝামেলা তো আছেই তাই বলা হয়ে ওঠেনি। আশা করি বুঝতে পারছেন আন্টি?”
তার কথায় অনুভা এবং সুফিয়া দুজনেই চমকালো। মনক্ষুণ্ণ হলেন আফসানা। আজিজুল হক ব্যাপারটাকে ভীষণ স্বাভাবিকভাবে নিলেন। বিয়ের বয়সী মেয়ে যখন বাড়িতে আছে বাড়ির কেউ না কেউ তার বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিবে এটাই স্বাভাবিক। আফসানা কিছুক্ষণ নিরব রইলেন। মেয়েটাকে উনার প্রথম দেখাতেই মনে ধরেছিল তার উপর ছেলের পছন্দ বলে কথা! তারপরেও কিছুটা আশা নিয়ে বললেন,“আরেকবার যদি ভেবে দেখতে? বিয়েটা তো এখনো হয়নি। তাছাড়া আমার ছেলেও তো কোনোদিক দিয়ে খারাপ নয়।”
অর্থিকা মিহি হেসে উত্তর দেয়,“খারাপ ভালোর কথা আসছে না আন্টি। বিয়েটা তো আর ছেলেখেলা নয়। একজনের পছন্দ দিয়ে কখনোই বিয়ের মতো সম্পর্ক হয় না। যাকে অনুভা এতদিন স্যারের সম্মান দিয়ে এসেছে তাকে তো আর হুট করেই স্বামীর স্থান দেওয়া যায় না। তাছাড়া ওরও নিজের পছন্দের মানুষ আছে। তাই আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত আন্টি।”
আশার আলো চট করেই নিভে গেলো আফসানার। আজিজুল হক নিরব রইলেন। সকলের থেকে বিদায় নিয়ে তারা চলে যেতে চাইলেন কিন্তু অর্থিকা তাদের যেতে দিতে নারাজ হলো। যতোই হোক বোনের অফিসের বসের বাবা-মা বলে কথা! আপ্যায়ন না করলে কী আর হয়? একেবারে নাস্তা করিয়েই তারপর উনাদের যেতে দেওয়া হলো।
উনারা যেতেই সুফিয়া চেপে ধরলেন মেয়েকে। প্রশ্ন করলেন,“তুই কাকে বিয়ের কথা দিয়ে এসেছিস হ্যাঁ? এত ভালো সম্বন্ধটা হাতছাড়া হয়ে গেলো। তুই কজনকে চিনিস বল তো? আমাকে না জানিয়ে এত বড়ো সিদ্ধান্ত নেওয়ার তুই কে?”
অর্থিকার সোজা উত্তর,“আমি ওর বড়ো বোন। তাই ওর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আমার আছে। বড়ো ঘর হলেই যে বিয়ে দিতে হবে এমন কথা কোথায় আছে? যে বস নিজের ইমপ্লয়ীদের সম্মান দিতে জানে না সে আবার বউ পালবে কী করে? যত্তসব।”
“কিন্তু তুই কথা দিয়েছিস কাকে?”
“হয়তো চিনতেও পারো আবার নাও পারো তবে এটা জেনে রাখো অনু তাকে ভালোবাসে এবং ছেলেটাও অনুকে প্রচন্ড ভালোবাসে। আমাদের জন্য ও ওর ভালোবাসাটা অনেক আগেই বিসর্জন দিয়ে দিয়েছে মা। নেহাৎ ছেলেটা ভালো তাই এখনো ওর অপেক্ষায় বসে আছে। আমি আমার ভালোবাসার মানুষ হারিয়েছি কিন্তু বোনকে কিছুতেই তার ভালোবাসা হারাতে দিবো না। অনুভার জন্য যদি যোগ্য কেউ থাকে তাহলে সে হচ্ছে শ্রাবণ।”
বলেই নিজ ঘরের দিকে পা বাড়ালো অর্থিকা। তার কথা শুনে সুফিয়া এখনো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলেন পূর্বের স্থানে। দরজার আড়াল থেকে সমস্ত কথাই কর্ণগোচর হয়েছে অনুভার। দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপচাপ গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে চিৎ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল সে।
অর্থিকাও ফ্রেশ হয়ে এলো। তাঈম জেগে উঠেছে। বিছানায় একঝাঁক খেলনা নিয়ে খেলছে। মাকে দেখতে পেয়েই ভাঙা ভাঙা শব্দে নিজের মতো বলে যাচ্ছে কথা। অর্থিকা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে গভীর ভাবনায় মগ্ন হয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তে মুহূর্তেই একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে বসলো।
সবে সাড়ে সাতটা বাজে। শ্রাবণ এখনো বাড়ির বাহিরে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে ক্যাফেটেরিয়ায়। টেবিলের উপর রাখা মোবাইলটা বেজে উঠলো তৎক্ষণাৎ। স্ক্রীনে জ্বলজ্বল করা ‘অর্থি আপু’ দিয়ে সেভ করা নাম্বারটা দেখে ভ্রু দ্বয় কুঞ্চিত হলো তার। বন্ধুদেরকে ওয়াশরুমের বাহানা দিয়ে সেখান থেকে সরে গেলো মোবাইল হাতে। কল রিসিভ করে সালাম জানিয়ে প্রশ্ন করল,“সব ঠিক আছে তো আপু?”
সালামের জবাব নিলো অর্থিকা। গম্ভীর কণ্ঠে বললো, “না নেই। কিচ্ছু ঠিক নেই।”
“কেন? কী হয়েছে?”
“তুমি কী বিয়ের জন্য প্রস্তুত শ্রাবণ? অনুকে বিয়ে করতে পারবে?”
আচমকা এমন কথায় অবাক হয় শ্রাবণ। ভাবার জন্য সময় না নিয়েই উত্তর দেয়,“অবশ্যই প্রস্তুত। আমি তো কবে থেকেই ওকে বিয়ের কথা বলে যাচ্ছি কিন্তু ওই তো রাজি হচ্ছে না।”
“ওর কথা ছাড়ো, যদি আজকালের মধ্যে অনুকে বিয়ে করতে বলি তাহলে পারবে করতে?”
আশ্চর্যান্বিত কণ্ঠে শ্রাবণ শুধালো,“আজকে?”
“আজ রাতে যদি তোমার সমস্যা না থাকে তাহলে আজ রাতেই, আর সমস্যা থেকে থাকলে না হয় কাল। করবে বিয়ে?”
“নোভা রাজি?”
“রাজি কী রাজি না তা জানি না তবে ও তোমায় ভালোবাসে। এর থেকে বেশি কিছু জানার কী আর প্রয়োজন আছে?”
ওষ্ঠদ্বয়ের কার্ণিশ বর্ধিত হলো শ্রাবণের। শীতল কণ্ঠে বললো,“নাহ।”
“তা বাবা-মাকে নিয়ে আসছো তো? নাকি আপত্তি আছে?”
মুচকি হাসে শ্রাবণ। উত্তর দেয়,“না নেই। তবে এখন তো সাড়ে সাতটা বাজে আপু। বাবা-মাকে জানিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক করতেও তো একটা সময়ের প্রয়োজন তাই না?”
অর্থিকাও হাসে। বলে,“আচ্ছা রাখি তবে। কাল দেখা হচ্ছে।”
“ইনশাআল্লাহ।”
মুচকি হাসে শ্রাবণ। কল কেটে দেয় অর্থিকা। পা বাড়ায় মায়ের ঘরের দিকে। মাকে তো জানাতে হবে সবকিছু তাই না? মোবাইল পকেটে ভরে বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে আসে শ্রাবণ।
অফিস শেষে বাড়ি ফিরে এসেছে তানিম। ভেতরে প্রবেশ করেই বাবা-মাকে ড্রয়িং রুমে পেয়ে গেলো। পুলকিত হয়ে উঠলো মন। বড়ো বড়ো কদম ফেলে সোফায় গিয়ে বসে পড়ল। মায়ের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়লো,“দেখেছো অনুভাকে? পছন্দ হয়েছে মা?”
ছেলের উৎসুক মুখশ্রী দেখতেই ভেতরে চাপা কষ্ট অনুভব করলেন আফসানা। মুখখানি উনার মলিন হলো। উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে বোঝালেন হ্যাঁ। অধরে হাসি ফোটে উঠলো তানিমের। পুনরায় জিজ্ঞেস করল,“বিয়েতে রাজি হয়েছে উনার মা? তারিখ ঠিক করে এসেছো?”
তৎক্ষণাৎ উত্তর দিতে পারলেন না আফসানা। ছেলের এই হাসিটা মা হয়ে কী করে বিলীন হয়ে যেতে দেখবেন তিনি? উত্তরের অপেক্ষায় মায়ের পানে তাকিয়ে আছে তানিম। আজিজুল হক গলা ঝেড়ে বললেন,“তার মা রাজি হলেও কনে এবং কনের বড়ো বোন রাজি নয়। মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে একজনের সঙ্গে। আর খুব শীঘ্রই তার সঙ্গেই বিয়ে হবে।”
পিতার মুখ থেকে এমন কথা শুনে হাস্যজ্জ্বল মুখখানা মলিন হয়ে গেলো তানিমের। ক্ষত বিক্ষত হয়ে উঠলো হৃদয়। অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক হয়ে আছে? মানে কী এর? কে সে? কার সঙ্গে বিয়ে? খুব রাগ হলো তানিমের। সেন্টার টেবিলের উপর রাখা রাজহংসী আকৃতির শো পিসটা ছুঁড়ে ফেললো মেঝেতে। পুত্রের এমন রাগ দেখে মুহূর্তেই চমকে ওঠেন কপোত কপোতী যুগল। গভীর শঙ্কায় নিমজ্জিত হয়ে ওঠে আফসানার মন।
বসা থেকে উঠে নিজ কক্ষের দিকে অগ্রসর হলো তানিম। বিড়বিড় করে বললো,“আজ পর্যন্ত যা যা আমার পছন্দ হয়েছে সবই আমি পেয়েছি। আপনাকে তো আমি ছাড়ছি না অনুভা।”
________
রাতের খাবারের উদ্দেশ্যে সকলে এসে উপস্থিত হয়েছে খাবার টেবিলে। সবার পর নিজ চেয়ারে এসে বসলো শ্রাবণ। শান্তা ছেলের প্লেটে বেড়ে দিলেন খাবার। সৌহার্দ্য দিন পনেরো আগেই আবারো ফিরে গেছে কানাডা। টেবিলে এখন তিনজন। হানিফ শেখ নিজ প্লেটের পানে দৃষ্টি রেখে মনোযোগ সহকারে খাবার খাচ্ছেন। ভেতরে ভেতরে শ্রাবণের উত্তেজনা বিরাজ করছে। যতই বাবা-মায়ের সামনে বেফাঁস কথাবার্তা বলে ফেলুক না কেন এই মুহূর্তে নিজের বিয়ের কথা বলতে বেশ লজ্জা করছে তার। শুকনো ঢোক গিলে নিজেকে উপরে উপরে যথাসম্ভব স্বাভাবিক এবং গম্ভীর রাখলো। গলা খাঁকারি দিয়ে বাবা-মায়ের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করল। সঙ্গে সঙ্গেই শান্তা ছেলের মুখপানে তাকালেন কিন্তু হানিফ শেখের কোনো নড়চড় নেই।
হেরফের না করে শ্রাবণ স্পষ্ট ভাষায় বলে উঠলো,
“আমি বিয়ে করবো।”
কথাটা দুজনে তেমন আমলে নিলেন না। শ্রাবণ পুনরায় বললো,“কালকেই বিয়ে করবো।”
এবারের কথাটা কাজে দিলো। খাওয়া ছেড়ে পুত্রের পানে তাকালেন হানিফ শেখ। স্বামী-স্ত্রী দুজনের মুখেই বিষ্ময়। শান্তা বললেন,“গতকাল না বললি সামনের শুক্রবার করবি? তাহলে?”
“শুক্রবার আসতে অনেক দেরি। তাই কালই বিয়ে করবো।”
হানিফ শেখ গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,“মগের মুল্লুক নাকি? কালকের মধ্যে কী করে বিয়ের আয়োজন করবো?”
“ঘরোয়াভাবে করবো। আমরা যাবো, কাজী ডাকবো, বিয়ে করবো তারপর চলে আসবো। ব্যস।”
“তাই বলে হুটহাট সিদ্ধান্ত নিবি? মেয়ের বাড়ির লোকের মতামতেরও তো একটা ব্যাপার আছে নাকি?”
“ওর বড়ো বোনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের কোনো আপত্তি নেই। আর তোমাদেরও থাকার কথা নয়। বিয়ে করলে কালই করবো নইলে কখনো বিয়ের কথা বলবে না।”
ছেলের কথায় এক মহা চিন্তায় পড়ে গেলেন হানিফ শেখ। উনার এই ছেলেগুলো এমন কেন?
চলবে _________
#সুখেরও_সন্ধানে
লেখনীতে: #মাশফিত্রা_মিমুই
[পর্ব:২৪]
গতকাল বলে দেওয়ায় আজ সাত সকালেই বাড়িতে এসে হাজির হয়েছে মাজেদা। আজকের দিনটা ছুটি নেওয়ার জন্য গতকাল রাতেই অফিসে মেইল করে দিয়েছে অর্থিকা। মাজেদাকে নিয়ে দ্রুত সকালের নাস্তা তৈরি করে খেয়ে নিলো সে। অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি হয়ে ঘর থেকে বের হয়ে টেবিলে এসে চেয়ার টেনে বসলো অনুভা। রুটি ছিঁড়ে মুখে পুরতেই তার সামনে এসে হাজির হলো অর্থিকা। শুধালো,“অফিসে যাবি নাকি?”
খেতে খেতেই সে উত্তর দিলো,“হুম, তুই যাবি না?”
“না, ছুটি নিয়েছি।”
“কেন?”
“দরকার আছে তাই। সাথে তুইও আজ যাচ্ছিস না।”
ললাটে ভাঁজ পড়ে অনুভার। জিজ্ঞেস করে,“কেন? গতকালকের ঘটনাটার জন্য যেতে নিষেধ করছিস? ওই সামান্য কারণে আমি অন্তত অফিস বন্ধ করতে পারবো না। চাকরির বাজার সম্পর্কে তো জানিসই আপু।”
চটজলদি টেবিলের উপর একটা ফর্দ রাখলো অর্থিকা। বললো,“অত কিছু জানি না। আজ আর তোর অফিসে যাওয়া হচ্ছে না। এই রইলো বাজারের ফর্দ। খাবারটা শেষ করে ফর্দ মিলিয়ে মিলিয়ে বাজার করে নিয়ে আয়। তুই তো আবার এই কাজে ভালোই পারদর্শী।”
বাম হাত দিয়ে ফর্দটা তুলে চোখের সামনে ধরলো অনুভা। লেখাগুলো পড়েই চমকে উঠলো। জিজ্ঞেস করল,“এতকিছু! কেউ আসছে নাকি বাড়িতে?”
“হ্যাঁ, এবার প্রশ্ন না করে তাড়াতাড়ি যা। তুই এলে রান্না বসাবো।”
“কে আসবে তা তো বললি না আপু।”
চোখ পাকিয়ে শাসন করার ভঙিতে ছোটো বোনের পানে তাকালো অর্থিকা। তার এহেন দৃষ্টিতে নিরব হয়ে গেলো অনুভা। রুটিটা শেষ করেই বাজারের ব্যাগ হাতে বের হলো বাড়ি থেকে। সে যেতেই মাজেদাকে নিয়ে ঘরদোর পরিষ্কার করতে নেমে পড়লো অর্থিকা। যদিও গতকালই তারা সবকিছু গুছিয়েছে কিন্তু আজ বিশেষ একটা দিন থাকায় কোনোদিকেই কোনো খুঁত রাখতে চাচ্ছে না সে।
শান্তার দিনটা আজকে ব্যস্তময়। ছেলের বিয়ে দেওয়া কী কম ঝক্কি ঝামেলা নাকি? যতই ঘরোয়াভাবে বিয়ে হোক না কেন খালি হাতে তো আর ছেলের জন্য বউ তুলতে পারেন না ঘরে। আলমারি থেকে বড়ো পুত্রবধূর জন্য গড়া গহনাগুলো বের করলেন তিনি। তার থেকে এক সেট গুছিয়ে নিলেন নিজের ব্যাগে। বাকিগুলো পুত্রবধূকে একেবারে বাড়ি এনে তারপর বুঝিয়ে দিবেন। হানিফ শেখ ঘরে এলেন। স্ত্রীকে বিছানায় বসে গহনা হাতাতে দেখে শুধালেন,
“প্রয়োজনীয় সব নিয়েছো তো?”
“হ্যাঁ নিয়েছি নিয়েছি। আচ্ছা রুবিকে আসতে বললে ভালো হতো না?”
“এখন কিছু বলার প্রয়োজন নেই। আগে বিয়ে হোক তারপর না হয় জানিও।”
মন ভার হলো শান্তার। আফসোস করে বললেন, “ছেলেদের বিয়ে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিলো আমার কিন্তু সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেলো। দু দুটো ছেলেই আগে থেকে মেয়ে পছন্দ করে রেখেছে। করে রেখেছে তো রেখেছে তার উপর বিয়েটাও কিনা এমনভাবে সবাইকে না জানিয়ে করবে?”
মুচকি হাসলেন হানিফ শেখ। স্ত্রীকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,“মন খারাপ করো না। বৌ-ভাত না হয় আমরা অনেক ধুমধাম করে করবো দেখে নিও।”
________
অনুভার চেয়ারটা আজ ফাঁকা। ফাঁকা চেয়ারের পানে তাকিয়ে ভেতরে ভেতরে ভীষণ রাগ হলো তানিমের। বিড়বিড় করে বললো,“গতকালের ওই ঘটনার জন্য আপনি আজ অফিসে এলেন না অনুভা? ঠিক আছে আমিও দেখে নিবো কতদিন আপনি না এসে পারেন। কতদিন আমায় এভাবে এড়িয়ে চলতে পারেন।”
পরক্ষণেই ভেতরে একটা হাহাকার টের পেলো তানিম। ইচ্ছে করল অনুভা নামক মেয়েটির সম্মুখে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করতে,“আমায় বিয়ে করতে আপনি রাজি হলেন না কেন অনুভা? আমি কী আপনার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নই? কেন যোগ্য নই? কোথায় কমতি আছে আমার? সবকিছু ভুলে গিয়ে একবার আমার হবেন অনুভা? খুব যত্ন করে ভালোবাসবো আপনায়।”
ভাবতে ভাবতেই বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো তানিমের। নিজ চেয়ারে শরীর হেলিয়ে বন্ধ করে নিলো আঁখি যুগল।
বাজার থেকে বাড়ি ফিরে বিছানায় শুয়ে আছে অনুভা। তখনি ঘরে প্রবেশ করল অর্থিকা। হাতে তার একটা ছোটো বাটি। তাড়া দিয়ে বোনের উদ্দেশ্যে বললো,“এই এই তুই শুয়ে আছিস কেন এখন? দেখি ওঠ তো তাড়াতাড়ি।”
বিরক্তির সহিত উঠে বসলো অনুভা। ক্লান্ত স্বরে শুধালো,“কী?”
তার সম্মুখে বসলো অর্থিকা। বাটি থেকে ডাল বাটাটা নিয়ে চট করে অনুভার মুখে মাখতে মাখতে বললো, “ইস! চেহারার কী অবস্থা হয়েছে একবার দেখেছিস আয়নাতে? একটু যত্নও কী করতে পারিস না?”
নাকমুখ কুঁচকে নিলো অনুভা। জিজ্ঞেস করল,“কী এগুলো?”
“ডাল বাটা। মাখিয়ে দিয়ে যাচ্ছি, টানা আধ ঘণ্টা পর গিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলবি, বুঝেছিস?”
“তোর সমস্যা কী বল তো? হঠাৎ আমার রূপচর্চা নিয়ে পড়লি কেন? আমার কী বিয়ে লেগেছে নাকি?”
“হুম।”
“কী হুম?”
“আজ তোর বিয়ে।”
অবাক হলো অনুভা। আশ্চর্যান্বিত কণ্ঠে শুধালো,
“মজা করছিস আপু?”
“না তো।”
“কার সাথে বিয়ে?”
“কার সাথে আবার? তোর প্রেমিক পুরুষের সঙ্গে।”
আঁতকে উঠলো অনুভা। ভালো করে বড়ো বোনের মুখশ্রী পর্যবেক্ষণ করল। অর্থিকা যে মজা করছে না তা সে সুনিশ্চিত হলো। বাড়িতে রান্নাবান্নার যেই ধুম পড়েছে তাতে বোঝাই যাচ্ছে আজ বাড়িতে বিশেষ কিছু আছে। অবিশ্বাস্য সুরে বললো,“শ্রাবণ!”
মুচকি হাসলো অর্থিকা। উপরনিচ মাথা নাড়িয়ে বললো,“হুম, বেচারা আর কতদিন তোর মতো গবেটের জন্য অপেক্ষা করবে? তাই ভাবলাম আজ দুটোকে ধরে বেঁধে একেবারে বিয়ে দিয়ে দেই।”
রাগ হলো অনুভার। নিজের মোবাইলটা হাতে নিয়ে কল লিস্টে যেতে যেতে বললো,“শ্রাবণ তোর মাথায় এসব ঢুকিয়েছে তাই না? দাঁড়া আজ ওর একদিন কী আমার একদিন।”
চটজলদি তার হাত থেকে মোবাইলটা কেড়ে নিলো অর্থিকা। মুখ বাঁকিয়ে বললো,“যত কথা সব বাসর ঘরে গিয়ে বলবি। আপাতত এই মোবাইলটা আমার কাছেই রইলো। আর হ্যাঁ শ্রাবণ বিয়ের ব্যাপারে আমায় কিছু বলেনি। গতকাল রাতে আমিই তাকে জিজ্ঞেস করেছি তোকে বিয়ে করতে পারবে কিনা। আর ও রাজিও হয়ে গেলো তাই বলে দিয়েছি যাতে আজকের মধ্যে বাবা-মা নিয়ে চলে আসে বাড়িতে।”
“আমায় না জিজ্ঞেস করেই কেন এসব করতে গেলি আপু?”
চমকপ্রদ হাসলো অর্থিকা। পরম মমতায় হাত রাখলো ছোটো বোনের মাথায়। কোমল স্বরে বললো,“নিজের ভালো পাগলেও বোঝে। শুধু তুই বুঝিস না। ছেলেটা তোকে খুব ভালোবাসে অনু। ওর চোখে আমি তোর জন্য ভালোবাসা দেখেছি, সম্মান দেখেছি। শ্রাবণ ছাড়া অন্য কেউ তোকে ভালোবাসতে পারলেও বুঝতে পারবে বলে মনে হয় না। ভালোবাসার থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বোঝাপড়া। তাই অমন একটা মানুষকে কখনোই দূরে ঠেলে দিতে নেই। বরং পরম আবেশে তাকে আগলে রাখতে হয়। হ্যাঁ আমি হয়তো তোকে না জানিয়েই হুট করে সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলেছি কিন্তু এর পেছনে কারণ আছে। আশা করি তোর এতে কোনো আপত্তি নেই?”
চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এলো অনুভার। দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বোঝালো ‘না’।
________
সূর্য অস্ত গেছে পশ্চিমাকাশে। কিচিরমিচির শব্দ তুলে আকাশ পথে নিজেদের নীরে ফিরছে পাখির দল। লাল টুকটুকে চমৎকার একটি বেনারসি নিয়ে মেয়ের ঘরে উপস্থিত হলেন সুফিয়া। বেনারসিটি মূলত উনি নিজেই পছন্দ করে কিনেছিলেন বড়ো কন্যার জন্য। কিন্তু অর্থিকা সেই বেনারসি পরিধান করে কিছুতেই বিয়ের পিঁড়িতে বসবে না বলে সরাসরিই জানিয়ে দিয়েছিল।বিয়েতে সে নিজ পছন্দসই একটি ল্যাহেঙ্গা পরেছিল।তখন মনে মনে বেশ আফসোস নিয়েই যত্ন করে শাড়িটা নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন সুফিয়া। ভেবেছিলেন বড়ো মেয়েকে না হয় শাড়িটা পরাতে পারেননি কিন্তু ছোটো মেয়ে তো আছে। তার বিয়েতেই না হয় শাড়িটা পরাবেন।
বিছানায় হতাশ হয়ে বসে আছে অনুভা। মাকে দেখতেই সে নড়েচড়ে উঠলো। সুফিয়া হাস্যজ্জ্বল মুখে বিছানায় এসে বসলেন মেয়ের সম্মুখে। শাড়িটা তুলে ধরে বললেন,“আমার অনেক ইচ্ছে ছিলো এই শাড়িটা পরে আমার মেয়ে তার নতুন জীবনের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাবে। কিন্তু অর্থি তো এটা পরলোই না তাই ভেবেছিলাম তোর বিয়ের সময় না হয় তোকেই পরাবো কিন্তু বিয়ে করবো না করবো না বলে তুইও যা শুরু করেছিলি আমি তো ভেবেই নিয়েছিলাম যে আমার স্বপ্নটা হয়তো আর পূরণই হবে না। এই অসম্পূর্ণ ইচ্ছে নিয়েই হয়তো আমাকে মরে যেতে হবে। যাক অবশেষে মেয়ের বিয়ে হচ্ছে। তা পরবি এই শাড়িটা?”
আজ অনেকদিন বাদে মায়ের সেই কোমল গলাটা শুনতে পেলো অনুভা। চোখের কোটরে জমলো অশ্রু। উপরনিচ মাথা নাড়ালো। তৎক্ষণাৎ সুফিয়ার অধরে ফোটে উঠলো হাসির রেখা। আজ অনেকদিন বাদে ভদ্রমহিলার মলিন মুখখানায় হাসির দেখা মিললো। যা দু চোখ ভরে দেখে নিলো অনুভা। এই ছোট্ট একটা কারণে মা হাসলো! ভেবেই বিষ্মিত হলো। সুফিয়া আবদারের সুরে বললেন,“আমি পরিয়ে দেই?”
অনুভা জড়ানো গলায় উত্তর দিলো,“দাও।”
আশানুরূপ উত্তর পেয়ে পুলকিত হয়ে উঠলো সুফিয়ার মন। শাড়ির ভাঁজ খুললেন। তৎক্ষণাৎ কয়েকটা গহনার বাক্স দৃষ্টিগোচর হলো অনুভার। ভ্রু দ্বয় কুঞ্চিত হলো তার। কৌতূহলী কণ্ঠে শুধালো,“এই বাক্সগুলোতে কী আছে মা?”
মেয়ের প্রশ্নে বাক্সের পানে তাকালেন সুফিয়া। একে একে বাক্স তিনটে খুলে বললেন,“কী আবার? গহনা।”
একটা বাক্সে গলার মোটা হার আর কানের এক জোড়া ঝুমকা। আরেকটাতে সোনার দুটো মোটা বালা। তৃতীয় ছোট্ট বাক্সে সোনার দুটো আংটি। এগুলো দেখতেই বিষ্ময় প্রগাঢ় হয় অনুভার। শুধায়, “এগুলো কোত্থেকে এলো মা? তুমি না সব গহনা বিক্রি করে দিয়েছিলে?”
মৃদু হাসলেন সুফিয়া। বললেন,“যেসব গহনা বিক্রি করে দিয়েছিলাম ওগুলো ছিলো আমার বিয়ে আর বৌ ভাতের গহনা। আর এগুলো আমি তোর জন্য গড়েছিলাম তাই আর হাত দেওয়ার সাহস পাইনি। শাড়ির সাথে এগুলোও তুলে রেখেছিলাম। অর্থির গুলো তো অর্থিকে বিয়ের সময়ই দিয়ে দিয়েছিলাম। তার সাথে তোর বাবাও নতুন নতুন অনেক গহনা গড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সেসব তো আর ওর ননদেরা ফেরতই দিলো না।নিজেরাই আত্মসাৎ করল। অর্থির বিয়ের সময় তোর বাবা বলেছিল তোর বিয়ের সময়ও নাকি নতুন নতুন অনেক গহনা গড়িয়ে দিবে, বড়ো মেয়ের মতো ছোটো মেয়েকেও সোনা দিয়ে মুড়িয়ে তারপর শ্বশুর বাড়িতে পাঠাবে। কিন্তু তা তো আর হলো না তাই আর কী করার? এইটুকুই রাখ মা। আর পারলে মাফ করে দিস বাবাকে।”
বলেই আঁচলে চোখ মুছলেন সুফিয়া। মাকে জড়িয়ে ধরলো অনুভা। ভারি কণ্ঠে বললো,“তোমাদের প্রতি আমার কোনো রাগ ক্ষোভ নেই মা। তাহলে মাফ করার প্রশ্ন আসছে কোত্থেকে?”
প্রসন্ন হলেন সুফিয়া। নিজের থেকে মেয়েকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললেন,“হয়েছে, এবার তৈরি হতে হবে তো নাকি? ওদের তো আসার সময় হয়ে গেলো।”
লাজুক হাসলো অনুভা। মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জ্ঞাপন করল।
কালো রঙের গাড়িটা এসে থামলো নির্দিষ্ট বিল্ডিং এর সামনে। হানিফ শেখ এবং শান্তা নামলেন গাড়ি থেকে। তাদের পিছুপিছু নামলো শ্রাবণও। গাড়ির ডিকি থেকে ড্রাইভারের সাহায্যে নামানো হলো সঙ্গে আনা মিষ্টান্ন আর ফলমূলের প্যাকেট। ভেতরের দিকে হাঁটা ধরলেন হানিফ শেখ। উনার সঙ্গে ব্যাগ হাতে ড্রাইভার লোকটি। শান্তা হাঁটছেন ছেলের সঙ্গে। ফিসফিস করে বললেন,“আমার তো হার্টবিট বাড়ছে রে মেহু।”
“একদম মেহু মেহু বলে ডাকবে না মা।”
“আহা অভ্যাস হয়ে গেছে তো।”
“হোক অভ্যাস। তবুও ডাকবে না। আর ভেতরে তো একদমই নয়, আমার মান সম্মানের ব্যাপার।”
মুখ বাঁকালেন শান্তা। বললেন,“মান সম্মান! তোর আবার মান সম্মান আছে? বিয়ের দিন মাকে তৈরি বউ দেখাতে নিয়ে এসেছে।তার আবার মান সম্মান।”
কথাটা বলেই আগে আগে হাঁটতে লাগলেন শান্তা। একটা সিঁড়ি অতিক্রম করতেই মস্তিষ্কে কিছু একটা উঁকি দিলো শ্রাবণের। দাঁড়িয়ে পড়লো পথিমধ্যে। গলা উঁচিয়ে পিতার উদ্দেশ্যে বললো,“যাহ বাবা! আমি তো একটা জিনিস আনতে ভুলেই গিয়েছি।”
হানিফ শেখও থেমে পুত্রের পানে তাকালেন।জিজ্ঞেস করলেন,“কী আনতে আবার ভুলে গেলি? সবই তো নেওয়া হয়েছে।”
“আমার নেওয়া হয়নি। তোমরা ভেতরে যাও আমি ওই জিনিসটা নিয়ে আসছি।”—বলেই নিচে নামা ধরলো শ্রাবণ।
হানিফ শেখ পিছু ডেকে শুধালেন,“আরে কোন ফ্ল্যাট সেটাই তো আমরা জানি না।”
“চতুর্থ ফ্লোর, বাম দিকের দুই নম্বর ফ্ল্যাট।”—কথা শেষ করে চলে গেলো শ্রাবণ।
তার কথামতো স্ত্রীকে নিয়ে সেদিকেই পা বাড়ালেন হানিফ শেখ। নির্দিষ্ট ফ্ল্যাটের সামনে এসে কলিং বেল চাপতেই দরজা খুলে দিলো একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারী। হানিফ শেখ সৌজন্য হেসে বললেন,“আমরা শ্রাবণের বাবা-মা।”
মেয়েটি হেসে দরজার সম্মুখ থেকে সরে দাঁড়িয়ে বললো,“আমি মেয়ের বড়ো বোন। ভেতরে আসুন।”
উনাদের নিয়ে সোফায় বসালো অর্থিকা। ডেকে আনলো মাকে। সুফিয়া এসেও বসলেন সোফায়। সালাম বিনিময় করলেন। মাজেদা এসে শরবত আর কিছু নাস্তা সেন্টার টেবিলের উপর রেখে উনাদের আনা মিষ্টির প্যাকেটগুলো নিয়ে গেলো ভেতরে। একে অপরের সঙ্গে মুহূর্তেই পরিচয় পর্ব শুরু হলো। হবু পুত্রবধূকে দেখার জন্য মন উথাল পাতাল করছে শান্তার। আর না পেরে এবার বলেই বসলেন,“মেয়েকে আনুন না। ওকে দেখার জন্য তো আমার আর তড় সইছে না।”
স্ত্রীর এহেন কথায় অপ্রস্তত হলেন হানিফ শেখ। জোরপূর্বক হেসে বললেন,“কী বলবো বলুন তো? আমরাই হয়তো প্রথম বাবা-মা যারা কিনা বিয়ের দিন পুত্রবধূর সঙ্গে পরিচিত হবো, পুত্রবধূকে চোখের দেখা দেখতে পাবো। তাই শ্রাবণের মা একটু কৌতূহলী হয়ে আছে।”
উনাদের কথায় সুফিয়া চমকান। চমকিত কণ্ঠে শুধান, “সে কী! এর আগে আপনারা অনুকে দেখেননি? ফটো? কোনো ফটোও দেখেননি?”
শান্তা পাল্টা প্রশ্ন করেন,“মেয়ের নাম বুঝি অনু?”
চমকের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলো সুফিয়ার। দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বললেন,“আমার ছোটো মেয়ের নাম অনুভা হাসান। ডাকনাম অনু।”
“সুন্দর নাম। আমাদের ছেলেদের কথা আর কী বলবো? ছোটোটা প্রাণচ্ছল হলেও বড়োটা হয়েছে একেবারে বিপরীত। সহজে মুখ ফোটে কিছু বলতেই চায় না। এই যে বিয়ের জন্য যখন আমি মেয়ে দেখার চাপ দিলাম তখনই বললো, আমার বউ হিসেবে মেয়ে অলরেডি পছন্দই আছে মা। তারপর যখন ওর পছন্দের মেয়ে দেখতে চাইলাম তখন জানেন কী বলে? বলে যে, আহা মা এত আগে বউ দেখে কী করবে বলো তো? বিয়ের পর তো একেবারে তোমার কাছেই চলে আসবে তখন মনে ভরে দেখে নিও তাকে।”—বলেই শব্দহীন হাসলেন শান্তা।
সুফিয়া ভেতরে ভেতরে বেশ চমকেছেন। এ আবার কেমন দ্বারার ছেলে? প্রশ্ন করলেন,“ছেলেকে দেখতে পাচ্ছি না যে কোথায় ও?”
হানিফ শেখ উত্তরে বললেন,“ও এসেছে, কী যেনো আনতে ভুলে গেছে সেটাই আনতে গিয়েছে। চলে আসবে।”
শান্তা এবার অশান্ত কণ্ঠে বললেন,“আপা মেয়েকে নিয়ে আসুন না।”
তখনি ড্রয়িং রুমে অনুভাকে নিয়ে হাজির হলো অর্থিকা। এনে বসালো সোফার এক স্থানে। হাতের তালু, পায়ের পাতা এতক্ষণে ঘেমে গেছে অনুভার। ভেতরে বয়ে যাচ্ছে ঝড়। কী অদ্ভুত অনুভূতি! জড়োসড়ো হয়ে বসে রইলো চুপচাপ। শান্তা একদৃষ্টে তার পানে তাকিয়ে থেকে একটু এগিয়ে গিয়ে বসলো। থুতনিতে ধরে মুখ উঁচু করে আনমনে বলে উঠলো,“মাশাআল্লাহ কী স্নিগ্ধ!”
এ কথাটাই যেনো ছিলো অনুভার অস্বস্তি বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। লজ্জায় নুইয়ে গেলো সে। ফর্সা মুখশ্রীতে ছড়িয়ে গেলো রক্তিম আভা। তাও চোখে পড়ল শান্তার। প্রসন্ন হেসে বললেন,“আমার ছেলের পছন্দ আছে বলতে হবে।”
বড়ো ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে দুটো মোটা সোনার বালা বের করলেন শান্তা। অনুভার হাত দুটো টেনে নিজের কোলে এনে পরাতে পরাতে বললেন,“এখন বুঝলাম কেন আমার খুঁতখুঁতে, গম্ভীর স্বভাবের ছেলেটা তোমার প্রেমেতে মজেছে।”
বাকরুদ্ধের ন্যায় বসে রইলো অনুভা। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে তার।মনে মনে অজস্র গালি দিচ্ছে শ্রাবণ নামক অসহ্য পুরুষটিকে। তার এমন পাগলামির কারণেই তো আজ অনুভাকে এমন বিপাকে পড়তে হলো।
নিজের কাজ সেরে এসে উপস্থিত হলো শ্রাবণ। দরজা খোলাই ছিলো। ভেতরে প্রবেশ করে নির্দিষ্ট মানুষের দিকে দৃষ্টি যেতেই ভেতরটা হাহাকার করে উঠলো তার। লাল টুকটুকে শাড়ি পরিহিত এক রমনী বসে আছে মায়ের পাশে। রমনীর এই রূপের সঙ্গে অপরিচিত প্রেমিক পুরুষটি। এত বছরের পরিচয় এবং গোপন প্রণয়ে এই প্রথম মেয়েটির এমন রূপ দু চোখ ভরে দেখে নিলো শ্রাবণ। পুত্রকে দৃষ্টিগোচর হলো হানিফ শেখের। উৎফুল্ল কণ্ঠে বললেন,“এই তো শ্রাবণ এসে গেছে। দেখি এদিকে আয়।”
পিতার কণ্ঠস্বরে ধ্যান ভঙ্গ হলো শ্রাবণের। সুফিয়াকে সালাম জানিয়ে বসে পড়ল পিতার পাশে। ছেলেটাকে চিনতে তেমন অসুবিধে হলো না সুফিয়ার। কামরুল হাসান যেদিন মারা গেলেন সেদিনই তো এই ছেলেকে দেখেছিলেন উনি। এই ছেলেই তো উনাদের অনেক সাহায্য করেছে। তবে সেদিন একটা শোকের মধ্যে থেকে অতো ভালো করে দেখা হয়নি ছেলেটাকে। তবে আজ মন ভরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে নিলেন তাকে। মনে মনে উচ্চারণ করলেন,“মাশাআল্লাহ।”
ছেলের উদ্দেশ্যে শান্তা উৎফুল্ল কণ্ঠে বলে উঠলেন,
“তোর পছন্দ আছে রে মেহু, আমার কিন্তু বউমাকে খুব মনে ধরেছে।”
মনে মনে মায়ের উপর চরম ক্ষীপ্ত হলো শ্রাবণ। এতবার বলে দেওয়ার পরেও কিনা আবারো মা তাকে এই নামে ডাকলো? এখনো একবারের জন্যও শ্রাবণের মুখপানে তাকায়নি অনুভা। হবু শাশুড়ির এমন কথাতেই লজ্জার পর্দা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। সেই লাজুক মুখশ্রীটাও দেখে নিলো শ্রাবণ। জিভের ডগা দিয়ে ভিজিয়ে নিলো ওষ্ঠদ্বয়।
চলবে __________
(কপি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।)