সুখেরও সন্ধানে পর্ব-১৪+১৫+১৬

0
751

#সুখেরও_সন্ধানে
লেখনীতে: #মাশফিত্রা_মিমুই
[পর্ব:১৪]

শরৎ ঋতু শেষের পথে। চারিদিকে শীত শীত একটা আমেজ। অফিস থেকে বের হওয়ার পর আজও তানিমের সঙ্গে দেখা হলো অনুভার।গত চারদিন ধরে অনিচ্ছাসত্বেও তানিমের গাড়িতে করেই বাড়িতে ফিরতে হচ্ছে তাকে। মুখের উপর কড়া করে নাও বলতে পারে না মেয়েটা। পাছে চাকরি যাওয়ার ভয়ে। তবে ভদ্রতা বজায় রেখে একবার তানিমের উদ্দেশ্যে অনুভা বলেই দিয়েছিল,“রোজ রোজ কষ্ট করে আমাকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই স্যার। এমনিতে তো আমি একা একাই বাড়ি ফিরি।”

তানিমের তখন সোজাসাপ্টা জবাব,“আগে ফিরতেন বলে যে এখনো একা একা ফিরতে হবে তেমন কোনো কথা ছিলো নাকি মিস.অনুভা? এবার থেকে আপনাকে আমার সঙ্গেই ফিরতে হবে। তাতে যদি আপনার আপত্তি থাকে তারপরেও আমার সিদ্ধান্ত বদলাবে না।”

এরপর আর কিই বা বলার থাকে? অন্য কেউ হলে না হয় ত্যাড়ামো করা যেতো। কিন্তু বসের মুখে মুখে কি আর তর্ক করা যায়? তবে আজকাল অনুভার নিকট সবকিছুই বিরক্ত লাগে। আশেপাশে থাকা মানুষজনকেও বড্ড বিরক্ত লাগে। তবে এর মধ্যে একটা ব্যাপার খুব ভালো করেই খেয়াল করেছে অনুভা। সবাইকে তার নিকট বিরক্ত লাগলেও শ্রাবণ নামক পুরুষটির প্রতি তার নেই কোনো বিরক্তি। চাইলেও তার প্রতি রাগ আসে না। ছেলেটার মুখখানা দেখলেই যেনো দিন দুনিয়া ভুলে বসে থাকে মেয়েটা। এসব লক্ষণ ছেলেটার সঙ্গে পরিচয় পর্বের শুরুর দিকেও ছিলো অনুভার ভেতরে।

হাস্যজ্জ্বল মুখে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে তানিম। আজ ড্রাইভার নেই সঙ্গে। দেখে বোঝাই যাচ্ছে তার মন মেজাজ আজ খুবই ভালো। দৃষ্টি অনুভার পানে স্থির। একঝাঁক বিরক্তি নিয়ে অনুভা এগোলো। তৎক্ষণাৎ তার মোবাইলটা ঝংকার তুলে বেজে উঠলো। দ্রুত ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে স্ক্রীনে তাকাতেই ভাসমান একটি নাম্বার দেখতে পেলো। তৎক্ষণাৎ আপনাআপনি ঠোঁটের কার্নিশে ফোটে উঠলো মৃদু হাসির রেখা। এই নাম্বারটি অনুভার খুবই পরিচিত। সেদিন রাতে এই নাম্বার থেকেই শ্রাবণের কল এসেছিল। এই নাম্বারের কল পেয়েই তো মাঝরাতে নিজের ঘুম বিসর্জন দিয়ে অনুভা ছুটে গিয়েছিল নিচে। তারপর টানা তিনদিন কেটে গেলো অথচ শ্রাবণের দেখা মিললো না আর। একেবারে লাপাত্তা হয়ে গেলো ছেলেটি। যদিও পরিচয় পর্বের শুরু থেকেই এভাবে হুটহাট উধাও হয়ে যাওয়া শ্রাবণের অভ্যাস।

বাজতে বাজতে কল কেটে যাওয়ার আগ মুহূর্তেই রিসিভ করে মোবাইল কানে ধরলো অনুভা। কিছু বলার পূর্বেই বিপরীতে পাশ হতে ভেসে এলো ভারি কণ্ঠস্বর,“অফিস রোডের অপজিটে দাঁড়িয়ে আছি। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পায়ে জং ধরে যাচ্ছে নোভা। পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমার সামনে দেখতে চাই তোমাকে।”

কথাটা শেষ হতেই কেটে গেলো কল। অবাক হলো অনুভা। ছেলেটা কী তাকে আদেশ করল? ভাবতেই দম ছাড়লো সে। তাকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে ভ্রু যুগল কুঁচকে নিলো তানিম। শুধালো,“এনি প্রবলেম মিস.অনুভা?”

নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখলো অনুভা। সে জানে এই মুহূর্তে যদি শ্রাবণের ডাকে সাড়া না দেয় তাহলে ছেলেটা রাগারাগী না করলেও অভিমান করবে। চরম অভিমান। হয়তো আরও দুই তিন সপ্তাহ সামনেই আসবে না। এমনটা অনুভা চায় না। সামনে যত যাই বলুক না কেন,সত্যি বলতে সে চায় না শ্রাবণ আবারো লম্বা একটা সময়ের জন্য তার চোখের আড়াল হোক। মনে মনে কথা সাজিয়ে নিয়ে অনুভা বললো,“স্যরি স্যার। আমার ফ্রেন্ড ফোন করেছিল। ও আমার অপেক্ষায় বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। তাই আপনার সঙ্গে আজ যাওয়া হচ্ছে না।”

কথাটাকে খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিলো তানিম। দায় সারা ভাবে বললো,“নো প্রবলেম। ফ্রেন্ড ডাকলে যেতে হয়। যান তবে।”

তার থেকে বিদায় নিয়ে দ্রুত চলে গেলো অনুভা। তার যাওয়ার পথে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়িতে উঠে বসলো তানিম।

গাড়ির সম্মুখ অংশে বসে আকাশের দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে শ্রাবণ। এই রাস্তাটায় জনমানব খুব কম। আশেপাশে তেমন দোকান পাটও নেই। অফিস এড়িয়া বলেই হয়তো। গাড়ির কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ালো অনুভা। তার উপস্থিতি টের পেয়েও পূর্বের ন্যায় ঠাঁয় বসে রইলো শ্রাবণ। কিছু সময় নিরবতা পালন করল। তারপর হুট করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। গাঢ় দৃষ্টি স্থির করল অনুভার অক্ষি যুগলে। ভড়কে গেলো অনুভা। এতক্ষণ তো সে শ্রাবণের পানেই তাকিয়ে ছিলো। চোখাচোখি হতেই খানিকটা লজ্জা পেলো।

নেশাতুর কণ্ঠে শ্রাবণ বলে উঠলো,“লজ্জা পেলে তোমায় দারুন লাগে নোভা। ইচ্ছে করে ওই চোখ, ওই ঠোঁট জোড়া ছুঁয়ে দিতে।”

কথাটা শ্রবণালী পর্যন্ত পৌঁছাতেই হতভম্ব হয়ে গেলো অনুভা। এমন দ্বারার কথাও এই পুরুষ বলতে পারে? হ্যাঁ পারে তো, না পারলে বললো কী করে? তার এই অবাকত্বের মধ্যেই আরো অবাক করে দিয়ে স্লান হাসে শ্রাবণ। কণ্ঠে গভীরতা ঢেলে বলে,“চলো না বিয়ে করে ফেলি। কথা দিচ্ছি, সকল কষ্ট দূর করে দিয়ে পৃথিবীর সব সুখ এনে দিবো তোমার দোরগোড়ায়।”

হতবিহ্বল চিত্তে তাকিয়ে থাকে অনুভা। এমন একটি কথা শ্রাবণের থেকে কখনোই সে প্রত্যাশা করেনি। কিছুক্ষণ হতভম্বের ন্যায় দাঁড়িয়ে থেকে চেহারায় কঠোরত্ব এঁটে বললো,“মজা করছো আমার সঙ্গে? এটা তোমার কাছে মজা করার মতো সময় মনে হলো? তোমার কাছে মনে হলেও আমার কাছে কিন্তু সময়টা একদম মজা করার মতো নয়।”

“আমার অনুভূতি তোমার কাছে মজা মনে হয়? তুমি তো অবুঝ নও নোভা তাহলে অবুঝ হওয়ার ভান কেন করছো? কখনো সো কল্ড প্রেমিকদের মতো হাঁটু গেড়ে প্রপোজ করিনি বলে, হাত ধরে হাঁটিনি বলে, ফোনকলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রেমময় বাক্য শুনাইনি বলে কি আমি ভালোবাসতে জানি না?”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে অনুভা। কিয়ৎক্ষণ নিরব থাকে। মনে মনে সাজায় কথা। জিভ দিয়ে ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিয়ে বোঝানোর উদ্দেশ্যে বলে,“তুমিও তো অবুঝ নও শ্রাবণ। তারপরেও কীভাবে এমন একটা প্রস্তাব দিচ্ছো বলো তো? আমাদের অবস্থা আর আগের মতো নেই। আমি এখন একটা ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে। বিয়ে করে সুখে সংসার করার মতো অবস্থায় আমি নেই। পুরো একটা সংসারের দায়িত্ব আমার উপর। তাছাড়া তোমারও তো একটা পরিবার আছে। যা বোঝা যায় তুমি সম্রান্ত পরিবারের ছেলে। তোমার বাবা-মা যখন জানতে পারবে আমার পরিবারের কথা, আমার বাবা ঘুষ নিতে গিয়ে চাকরি হারিয়েছে, জেল খেটেছে তখন কী তারা মুখ ফিরিয়েও তাকাবে আমার দিকে? সমাজ, আত্মীয় স্বজন বলেও তো একটা কথা আছে। যেখানে আমরাই আত্মীয়, স্বজন, পরিচিতদের সামনে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারি না সেখানে তোমাদের কী অবস্থা হবে?”

দম ছাড়ে অনুভা। ফের বলে,“তুমি বুদ্ধিমান, শিক্ষিত ছেলে। সবকিছু জানার পরেও আবার ফিরে আসা উচিত হয়নি তোমার। উচিত হয়নি আমার মুখোমুখি হওয়া।”

শ্রাবণের মুখভঙ্গি অত্যন্ত স্বাভাবিক। বললো,“প্রথম বার যেদিন আমাদের দেখা হয়েছিল সেই দেখাটা ছিলো একদম আকষ্মিক আর কাকতালীয়। হয়তো ওইদিনই আমাদের শেষ দেখা হতে পারতো। কিন্তু তোমার কিছু বোকা বোকা কথা আর ভুল ধারণার কারণে দ্বিতীয়বার দেখাটা আমার পক্ষ থেকে ছিলো ইচ্ছাকৃত। তোমার ভুল ভাঙানোর জন্যই দ্বিতীয়বার তোমার সম্মুখে এসে দাঁড়িয়েছিলাম। আর তারপরেই সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলো। তোমার ওই চোখ, ঠোঁট, কথাবার্তা বারবার আমার মনে পড়তে লাগলো। অনেক চেষ্টা করেও আমি ভুলতে অক্ষম হলাম তোমায়। দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগে তার ঠিক এক সপ্তাহ পর আবারো দেখা করতে ছুটে এলাম। সেমিষ্টার পরীক্ষার কারণে তারপর আর আসা হলো না, দেখা হলো না আমাদের। পরীক্ষা শেষ হলো, ফলাফল দিলো তারপর আচানক তোমার কথা আবারো মনে পড়ে গেলো।ততদিনে তোমার কোচিংয়ের ক্লাস শেষ। কোন বিল্ডিংয়ের কততম ব্যাচে তুমি ছিলে তা আমার জানার বাহিরে ছিলো। তারপরেও সেদিন পুরোটা দিন ধরে সব কয়টা বিল্ডিংয়ে গিয়ে গিয়ে মানবিক বিভাগের হাজিরা খাতা ঘেঁটে তোমার নাম, ঠিকানা সবকিছু খুঁজে বের করেছি। সামনে তোমার পরীক্ষা ছিলো বলে তখন বিরক্ত করিনি। যখন যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজাল্ট দিয়েছে সেখানকার ওয়েবসাইটে গিয়ে গিয়ে চেক করে দেখেছি।সবশেষে জবিতে গিয়ে তোমায় পাই। এই যে রোজ রোজ এতটা পথ পাড়ি দিয়ে, জ্যামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে তারপর তোমার সঙ্গে দেখা করতাম এগুলো কী তোমার কাছে নিছক মজা মনে হয়? মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার হলে, তিনটে বছর কোনো যোগাযোগ ছাড়া থাকার পরেও দেশে এসে খোঁজ খবর নিয়ে সবটা জানতে পারার পর তখনই সব ভুলে যেতাম। কিন্তু না দুটো মাস কোথায় কোথায় না খুঁজেছি তোমায়? অবশেষে পেয়েছি। তারপরেও ছায়ার মতো পেছন পেছন থেকেছি। বাড়ি থেকে যতক্ষণ না অফিস পর্যন্ত পৌঁছেছো আবার অফিস থেকে বাড়িতে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত খেয়াল রেখেছি। কখনো হয়তো এসব কিছুই টের পাওনি। আর এখন তুমি আমায় বাস্তবতা, সমাজের ভয় দেখাচ্ছো? একটা কথা জানো কী? শ্রাবণ কারো ধার ধারে না। আমার নজরে পড়ার পর থেকেই তুমি শুধু শ্রাবণের নোভা। শুধুই শ্রাবণের।”

শেষের কথাটা বলতে গিয়ে কণ্ঠস্বর কঠিন হয়ে এলো শ্রাবণের। শুকনো ঢোক গিললো অনুভা। এসব কিছু এতদিন তার জানার বাহিরে ছিলো। সরাসরি কিছু জিজ্ঞেস না করেও শ্রাবণ যে তার সম্পর্কে এতকিছু কী করে জানে এই প্রশ্নটাই কখনো মাথায় আসেনি। আসলেও হয়তো সামনাসামনি দেখা হলে তা জিজ্ঞেস করতে ভুলে যেতো। তবে সে এবার পুরোপুরি নিশ্চিত যে এই পুরুষ তাকে সত্যি সত্যিই ভালোবাসে। কিন্তু সে যে অপারগ। শ্রাবণের ডাকে সারা দেওয়া তার জন্য নিষিদ্ধ। সন্তর্পণে নিঃশ্বাস ফেলে প্রশ্ন করে,“সেদিন দুর্ঘটনার সময় তুমি ওখানে উপস্থিত ছিলে তাই না? তুমিই ওই ওষুধগুলো পাঠিয়েছিলে আমার জন্য?”

বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো শ্রাবণের।তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো,“দেখলে? মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে তুমি কতটা ভুলে গিয়েছো আমায়? আমার উপস্থিতি, আমার কণ্ঠস্বর পর্যন্ত তোমার কাছে অচেনা।”

“ভুল ভাবছো।”

“তাহলে ঠিকটা কী?”

“কিছু না, ভালো লাগছে না। বাড়ি চললাম। তুমিও নিজ বাড়িতে ফিরে যাও।”

কথাটা বলে সামনের দিকে এগোনোর জন্য উদ্যত হলো অনুভা। কিন্তু পারলো না। সামনে এসে তার পথ রোধ করে দাঁড়ালো শ্রাবণ। চোখেমুখে তার কাঠিন্য। কঠোর গলায় বললো,“তোমার কথায় তো শ্রাবণ চলবে না নোভা। বাড়ি পর্যন্ত তোমায় পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব আমার। এই দায়িত্ব কেড়ে নেওয়ার কোনো অধিকার তোমার নেই। আর না আছে তোমার ওই বসের।”

ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অনুভা। বাঁকা হাসলো শ্রাবণ। অনুভার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,“তুমি শুধু আমার নোভা। তোমার দায়িত্ব নেওয়ার অধিকার শুধুই আমার। তোমার ভালো-মন্দও আমি বুঝবো। আমাদের মাঝখানে যদি অন্য কেউ চলে আসে তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম। তোমাকে অন্য কারো সঙ্গে দেখলে আমার সহ্য হয় না। এ কথা কবে বুঝবে বলো তো?”

ঠান্ডা কণ্ঠের হুমকি শুনতেই পুরো দেহ শীতল হয়ে উঠলো অনুভার। এমন একটা সময় এসে তার মনে হলো, ছেলেটা ভারি হিংসুটে। অনুভাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো শ্রাবণ। গম্ভীর কণ্ঠে বললো,“গাড়িতে উঠো। তোমায় পৌঁছে দিয়ে আমারও তো ফিরতে হবে।”

নড়চড় করল না অনুভা। নিজের কথাতেই সে অনড় থাকবে আজ। কিছুতেই শ্রাবণের সঙ্গে ফিরবে না। শ্রাবণ হয়তো বুঝতে পারলো তার মনোভাব তাই কণ্ঠে গাম্ভীর্য রেখেই বললো,“নিজ থেকে উঠবে নাকি আমায় জোরাজুরি করতে হবে? আমি জোরাজুরি করলে কিন্তু তোমার জন্য তা মোটেও ভালো হবে না নোভা।”

কথায় কথা বাড়ে। শ্রাবণের বিপরীতে গিয়ে এখান থেকে যাওয়া যে তার জন্য কষ্ট সাধ্য হয়ে যাবে তা বেশ বুঝতে পারলো অনুভা। হার মেনে নিয়ে চুপচাপ উঠে বসলো গাড়িতে।

নিঃশব্দে হাসলো শ্রাবণ। চালকের আসনে গিয়ে বসে স্টার্ট বসালো গাড়িতে। অনুভা সিদ্ধান্ত নিলো এই ছেলের সঙ্গে আর কথাই বলবে না সে। এই মুহূর্তে মৌন থাকবে। গাড়ি চলছে কিন্তু ধীর গতিতে। এই ধীর গতি খুবই বিরক্ত লাগে অনুভার নিকট। কথা বলবে না বলবে না ভেবেও একপ্রকার বাধ্য হয়েই বলে উঠলো, “সমস্যা কী তোমার? এভাবে ধীরে ধীরে গাড়ি চালাচ্ছো কেন?”

শ্রাবণের দৃষ্টি সম্মুখে। হতাশ কণ্ঠে উত্তর দিলো, “জীবনটাই তো ধীর গতিতে চলছে সেখানে গাড়ির গতি এমন হওয়া তো অস্বাভাবিক কিছু নয়।”

“হয় গাড়ির গতি বাড়াও নয়তো গাড়ি থামাও। আমি নেমে যাবো।”

“তোমার কথা আমি শুনবো না।”

“এমন করছো কেন?”

“বিয়ে করে নাও আমায়। তাহলে আর কিছুই করবো না।”

নিরব হয়ে গেলো অনুভা। দৃষ্টি নিবদ্ধ করল জানলার বাহিরে। তার এই নিরবতায় শ্রাবণ পুনরায় বলে উঠলো,
“বিয়ে করলেই যে সংসার করতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই। আগে না হয় বিয়েটাই করে ফেলি চলো। সংসার তো পরেও করা যাবে তাই না?”

এবারো নিরুত্তর রইলো অনুভা। এই পুরুষকে যে বারংবার না করতে তার কষ্ট হয়। ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায় হৃদয়। যথাসম্ভব নিজেকে শ্রাবণের সামনে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টায় মগ্ন হয়ে পড়ল সে। ততক্ষণে গাড়ির গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নির্দিষ্ট স্থানে এসে থেমে গেলো গাড়ি। তাড়াহুড়ো করে নেমে গেলো অনুভা। বিদায় না জানিয়েই হাঁটা ধরলো সামনের পথ ধরে।
_______

তানিম বাড়ি ফিরেছে ঘণ্টা খানেক পূর্বে। ফ্রেশ হয়ে ল্যাপটপে মুখ গুঁজে বসে আছে। আফসানা এসে উপস্থিত হলেন প্রাণপ্রিয় পুত্রের ঘরে। রাগমিশ্রিত কণ্ঠে বললেন,“আমায় কী তোরা বাপ ছেলে একটু শান্তি দিবি না? ওদিকে বাপের হাজার হাজার হুকুম আর এদিকে ছেলে।”

“আমি কী তোমায় আসতে বলেছি?”

“তাহলে রোজিনাকে দিয়ে যে তোকে ডেকে পাঠালাম এলি না কেন? খাওয়া দাওয়া কী ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিস নাকি?”

“খাওয়া দাওয়া কী ছাড়ার মতো কিছু? খিদে নেই তা তো বলেই দিয়েছি।”

ললাটে ভাঁজ পড়ল আফসানার। রোজিনা খাবারের ট্রে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করল। তার হাত থেকে ট্রে টা নিজ হাতে নিয়ে নিলেন আফসানা। তৎক্ষণাৎ কক্ষ থেকে চলে গেলো রোজিনা। আফসানা ভাত মেখে এক লোকমা তুলে ধরলেন পুত্রের মুখের সামনে। কড়া গলায় বললেন,“তোকে আমি জন্ম দিয়েছি। তাই তোর খিদে আছে কি নেই তা আমার চেয়ে ভালো কেউ জানে না, বুঝলি? এবার চুপচাপ খেয়ে নে।”

মায়ের কথার উল্টো পিঠে দ্বিমত পোষণ করতে পারলো না তানিম। কারো উপরে রেগে গেলেই সেই রাগটা খাবারের উপর দিয়ে প্রয়োগ করা তার সেই ছোটোবেলাকার বদ অভ্যাস। ছেলের এই বদ অভ্যাস সম্পর্কে খুব ভালো করেই অবগত আফসানা। তাই যখনি তানিম খেতে চায় না তখনি উনি বুঝে যান যে ছেলে উনার রেগে আছে। তাই জোট ঝামেলা না করে তখন জোর করে নিজ হাতেই এভাবে খাইয়ে দেন ছেলেকে।

খাওয়ানো শেষ হতেই হাত ধুয়ে নিলেন আফসানা। যেতে যেতে বললেন,“এদের জ্বালায় আর বাঁচি না। বয়স তো কম হয়নি এখনো নাকি মাকে খাবার নিয়ে পিছুপিছু ঘুরতে হয়। এবার অন্তত বিয়ে করে বাড়িতে একটা বউ নিয়ে আয়। তারপর যত আধিখ্যেতা সব বউয়ের সামনে করিস।”

আরো অনেক কিছুই বলতে বলতে চলে গেলেন আফসানা। তানিমের মস্তিষ্কে গিয়ে শুধু আটকে রইলো দুটো শব্দ, ‘বিয়ে’ ‘বউ’।

চলবে _________

#সুখেরও_সন্ধানে
লেখনীতে: #মাশফিত্রা_মিমুই
[পর্ব:১৫]

প্রতি মাসের নির্ধারিত একটা সময়ের জন্য অফিস থেকে ছুটি নেয় অনুভা। আজই তার সেই ছুটির দিন। এই দিনটিতে সে বাবাকে ডাক্তার দেখায়। তবে আজ বাবা-মা দুজনকেই সঙ্গে করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে অনুভা। সুফিয়ার ব্যথাটা ইদানিং খুব বেড়েছে। এই ব্যথা সহ্য করতে না পেরেই সারাক্ষণ সবার সঙ্গে খিটখিটে মেজাজ দেখান ভদ্রমহিলা। খারাপ আচরণ করেন। কখনো তো সাধারণ একটা বিষয়কেও বড়ো করে দেখেন। তবুও মুখ ফুটে নিজের অসুস্থতার কথা জানান না কাউকে। আড়াল রাখেন মেয়ের থেকে।

হুইল চেয়ারে করে কামরুল হাসানকে একটি কেবিনের ভেতরে নিয়ে গেছে নার্স। ওখানেই ডাক্তার এসে দেখবে উনাকে। এই সুযোগে মাকে নিয়ে অন্যদিকে আরেক বিশেষজ্ঞের কাছে ছুটলো অনুভা। মেয়ের এহেন কাণ্ডে প্রচন্ড ক্ষীপ্ত সুফিয়া। দাঁতে দাঁত চেপে মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললেন,“এমনিতেই মাস শেষে টাকায় টানাটানি পড়ে। তার উপর আবার আমাকেও সঙ্গে করে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে এসেছে। বোকাসোকা দুটো মেয়ে জন্ম দিয়েছি আমি।”

আড়চোখে মায়ের মুখভঙ্গি দেখে সন্তর্পণে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো অনুভা। কয়েক মিনিট বাদেই তাদের সিরিয়াল এলো। ডাক্তার ভদ্রলোক কিছুক্ষণ কথা বলে কয়েকটা টেস্ট লিখে দিয়ে বললেন,“এই পরীক্ষাগুলো আজই করাবেন। রিপোর্ট হাতে পেতেই আমার কাছে আবার চলে আসবেন।”

প্রত্যুত্তরে মাথা নাড়ালো অনুভা। সেখান থেকে এবার মাকে নিয়ে গেলো পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো করাতে। ঘণ্টা খানেক সময় নিয়ে সব পরীক্ষা করিয়ে তারপর আবারো ছুটলো বাবার কাছে।

যেই ডাক্তারের চিকিৎসাধীন কামরুল হাসান, সেই ডাক্তার আলাদা ডেকে পাঠিয়েছে তাকে। উনার চেম্বারেই প্রবেশ করল অনুভা। অর্ধ বয়স্ক লোকটি হাতের ইশারায় চেয়ারে বসতে বললো অনুভাকে। মুখে উনার চিন্তার ছাপ। চশমাটা নাকের ডগায় নামানো। রয়েসয়ে হতাশ কণ্ঠে বললেন,“আমরা ডাক্তাররা রোগীর রোগ নির্ণয় করে সে অনুযায়ী তার চিকিৎসা করি, ওষুধ লিখে দেই। কিন্তু সুস্থ করার মালিক হচ্ছেন মহান আল্লাহ তায়ালা। তবে নিজেরও তো নিজের শরীরের যত্ন নিতে হবে তাই না? বেঁচে থাকার পূর্ণ একটা ইচ্ছা থাকতে হবে। মি.কামরুলের শরীরে রোগের তো অভাব নেই। এমনিতেই ক্যান্সারের মতো বড়ো একটা অসুখ বাঁধিয়ে বসে আছেন তার উপর বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আরো কতকিছুই যুক্ত হয়েছে। উনার কন্ডিশন তেমন ভালো নয়। ঠিকমতো খাওয়া- দাওয়া করেন না। বাঁচার কোনো ইচ্ছেই উনার মধ্যে নেই। যতবার হাসপাতালে আসেন ততবারই শুধু জিজ্ঞেস করেন, ডাক্তার আর কতদিন এভাবে পার করতে হবে? মরার সময় কী এখনো আসেনি? মানুষ যেখানে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করে সেখানে উনি নিজের মৃ’ত্যুর দিন গুনেন। কী আর বলবো? উনার মধ্যে কোনো ইম্প্রুভমেন্ট আমি দেখছি না। শুধু ওষুধ সেবন করলেই তো আর মানুষ সুস্থ হয়ে ওঠে না।”

শ্রবণালী পর্যন্ত কথাগুলো পৌঁছাতেই মস্তিষ্ক জ্বলজ্বল করে উঠলো অনুভার। কণ্ঠনালী তার কাঁপছে। ভেতরে এসি থাকার পরেও ললাটে জমেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। সংকীর্ণ স্বরে শুধালো,“আপনি কী বলতে চাইছেন বাবা আর বেশিদিন বাঁচবে না?”

সশব্দে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ডাক্তার। উনার নিরবতা দেখে যা বোঝার বুঝে গেলো অনুভা। পুরোনো ক্ষত জেগে উঠলো মুহুর্তে। বাবা-মায়ের মুখের দিকে তাকিয়েও না হয় সব দুঃখ কষ্ট মেনে নিয়েছিল মেয়েটা। কিন্তু তাদের মধ্যকার একজনই যদি না থাকে তাহলে এই কষ্ট, পরিশ্রম যে বৃথা যাবে। ডাক্তার হয়তো আরো কিছু বললেন কিন্তু তা যেনো শ্রবণালী পর্যন্ত পৌঁছালোই না অনুভার। ছোটো ছোটো কদম ফেলে চলে গেলো বাবার কাছে।

গোরস্থানের একটি কবরের পাশে বসে আছে অর্থিকা। কবরের পাশে বাঁধাই করে লেখা আছে,‘তন্ময় খান’। প্রায়সই রাতের বেলা যখন বিভৎস স্বপ্নগুলো দেখতো মেয়েটা, তার পরেরদিনই ছুটে আসতো স্বামীর কবরের কাছে। তবে আজ অর্থিকা একা আসেনি। সঙ্গে এনেছে তাঈমকে। এই প্রথম বাবার কবরের কাছে এসেছে তাঈম। মা-খালার সান্নিধ্যে থাকলে কখনোই ছেলেটাকে কাঁদতে দেখা যায় না। আজও তাই, নিজের মতো করে মুখ দিয়ে অস্ফুট শব্দ করছে। ক্ষণে ক্ষণে তাকাচ্ছে মায়ের মুখপানে।

প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে স্বামীর কবরের পাশে বসে রইলো অর্থিকা। ছেলেকে দেখিয়ে দেখিয়ে বিড়বিড় করে কিছুক্ষণ আপনমনে কথা বললো তারপর উঠে গেলো সেখান থেকে। কখনো কী ভাবতে পেরেছিল প্রিয় মানুষটির সাক্ষাৎ পাওয়ার জন্য গোরস্থানের মতো একটি জায়গায় আসতে হবে তাকে?
_______

হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেই ফ্ল্যাটের দরজায় বাহির থেকে ঝুলন্ত তালা দেখে চমকায় সকলে। ক্লান্ত দেহগুলো যেনো আরো ক্লান্ত হয়ে পড়ে। রাগে গজগজ করতে থাকেন সুফিয়া। কণ্ঠে অঢেল রাগ ঢেলে বলেন,“অর্থিটা এবার খুব বাড়াবাড়ি করে ফেলছে। ও কী জানে না আমরা যেকোনো মুহূর্তেই যে চলে আসবো? আজকের দিনটাও কাউকে শান্তি দিবে না মেয়েটা?”

অনুভা নিরব, বোনের উপর তারও এবার কিছুটা রাগ হচ্ছে। একটা মানুষকে প্রতিটা দিন কতভাবে বোঝানো যায়? কতভাবে তার পাশে থেকে ভরসা যোগানো যায়? হয়তো যায়, তবে সেই মানুষটা এতকিছুর পরেও যদি না বোঝে সবসময় নিজের পরিস্থিতির কথা ভাবে তাহলে বিরক্ত আর রাগ তো আসবেই।

কামরুল হাসান হুইল চেয়ারে বসে ঘুমাচ্ছেন। আশেপাশে উনার নেই কোনো খেয়াল। পাশের ফ্ল্যাটের মহিলার সঙ্গে এর আগেও অনেকবার কথা হয়েছিল সুফিয়ার। মহিলাটি উনাদের আহ্বান করলেন তাদের ফ্ল্যাটে গিয়ে যাতে আপাতত উনারা বসে। সুফিয়াও রাজি হলেন। এই অসুস্থ শরীর নিয়ে তো আর এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। কিন্তু ভেতরে যাওয়ার আগেই সেখানে চলে আসে অর্থিকা। সকলকে দেখতেই দৃষ্টি তার ভিতু হয়। কোলে ঘুমন্ত তাঈম। দ্রুত গিয়ে ফ্ল্যাটের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে। অনুভাও আর দেরি করে না। হুইল চেয়ার ঠেলে বাবাকে নিয়ে সোজা ঘরে চলে যায়।

বিছানা গুছিয়ে ঠিকঠাক করে বাবাকে শুইয়ে দিয়ে বাহিরে আসতেই শুনতে পায় মায়ের তেজস্রী কণ্ঠস্বর। সকল রাগ এবার বড়ো মেয়ের উপর ঝাড়ছেন সুফিয়া। উনার চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেছে তাঈমের। চিৎকার চেঁচামেচিতে সে অভ্যস্ত নয়। এমনটা এর আগে কখনোই এ বাড়িতে হয়নি।সুফিয়া দিক বেদিক চিন্তা না করে একদমে বলে যাচ্ছেন,“সারাজীবন শুধু নিজের কথাই ভেবে গেলি তাই না? পৃথিবীতে কী আর কোনো মানুষ মরে না? সবাই কী তোর মতো দিন দুনিয়া ভুলে নিজের স্বার্থ নিয়ে বসে থাকে নাকি? স্বামী মরেছে বছর হতে চলেছে অথচ মহারানীর শোক এখনো কাটেনি। এতদিন যা করেছিস সব সহ্য করেছি। কিন্তু আর নয়। এসব চলবে না এ বাড়িতে। ছোটো বোনের দিকে একবার তাকিয়ে দেখ। মেয়েটা নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে সারাদিন খেটেখুটে সংসার চালায়। সবার দায়িত্ব পালন করে।অথচ তুই? নিজেকে নিয়ে পড়ে থাকিস সারাক্ষণ। সবার কথা বাদই দিলাম। এতদিন তো নিজের সন্তানের দিকে তাকানোরও প্রয়োজন মনে করিসনি। দয়া করে এবার একটু শান্তি দে আমাদের। এসব আর নিতে পারছি না আমরা।”

একপর্যায়ে কেঁদে উঠলো তাঈম। তার কান্না দেখেও থামলেন না সুফিয়া। অনুভা এগিয়ে এলো। বোনের কোল থেকে নিজের কোলে তুলে নিলো তাঈমকে। পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে মায়ের উদ্দেশ্যে বললো,
“নিজের রাগকে সংবরণ করো মা। বাইরে থেকে এসেছো, ঘরে যাও, বিশ্রাম নাও।” এবার বোনের উদ্দেশ্যে বললো,“মায়ের কথা ধরে মন খারাপ করে বসে থাকিস না। জানিস তো সবকিছু। ঘরে যা। আর হ্যাঁ হুটহাট করে বাড়ি থেকে বের হোস না। চিন্তা হয় আমাদের।”

নিজের কথাটুকু শেষ করে তাঈমের কান্না থামাতে থামাতে নিজ কক্ষের দিকে অগ্রসর হলো অনুভা। অর্থিকা শুধুই নিরব রইলো। নিরবে নিভৃতে সহ্য করে গেলো মায়ের বলা তিক্ত কথাগুলো।
_______

মাত্র কয়েকদিনেই সামিরা নামক মেয়েটির মুখশ্রী বিবর্ণ, অনুজ্জ্বল হয়ে গেছে। চোখের নিচে জমেছে কালো দাগ। মা মৌরি মেয়েকে নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। হঠাৎ করে মেয়ের আমূল পরিবর্তন উনাকে খুব ভাবাচ্ছে। স্বামী মারা গেছেন বছর দুয়েক আগে। বড়ো ছেলে বিয়ে করে বউ নিয়ে আলাদা সংসার পেতেছে। এখন উনার শেষ সম্বল ছোটো ছেলে আর এই মেয়েটা।

বান্ধবীরা মাঝে দুদিন এসে গেছে বাড়িতে। তাদের সঙ্গে এই বিষয়ে বেশ কয়েকবার কথা বলেছেন মৌরি কিন্তু তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে তারা নাকি কিছু জানে না।যা মৌরির নিকট একদম বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়নি। রাতে তানভীর এসে বেশ কিছুক্ষণ কথা বললো বোনের সঙ্গে। ছোটো থেকেই বোনের ছোটো ছোটো সকল আবদারই পূরণ করে এসেছে সে। প্রথমে ভাইকে কিছু বলবে না বলবে বলেও একপর্যায়ে সব কথাই বলে দিলো সামিরা।

তানভীর চমকায়নি। বোনের হাবভাব দেখে আগেই কিছু একটা টের পেয়েছিল সে। তবে আজ সবটা জেনে বড়ো ভাই হিসেবে বোনকে বোঝানো তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সামিরাকে পাশে বসিয়ে অনেকক্ষণ গল্প করল তানভীর। বাস্তবতা সম্পর্কে বোঝালো। হয়তো সামিরা ভাইয়ের কথা বুঝতেও পারলো। পরেরদিন যথা সময়ে ক্লাসে উপস্থিত হলো।।

সেদিনের পর শ্রাবণের দুটো ক্লাসেই সে অনুপস্থিত ছিলো। তবে আজ মনোযোগ সহকারে ক্লাস করেছে সামিরা। একটুও শ্রাবণের পানে তাকায়নি। এতে শ্রাবণও মনে মনে বেশ স্বস্তি অনুভব করল।

সৌহার্দ্যের ছুটি ফুরিয়ে এসেছে। আগামীকাল তার ফ্লাইট। শান্তা ছেলের হাতে হাতে গোছগাছ করতে সাহায্য করছেন। দুদিন ধরে নাড়ু, মোয়া বানিয়ে তিনটে বয়াম পরিপূর্ণ করেছেন তিনি। নাড়ু, মোয়া, বিভিন্ন পিঠা ছেলেটার খুবই পছন্দের। তার এই পছন্দটা অবশ্য গড়ে তুলেছিল তাদের দাদী। উনি বেঁচে থাকাকালীন নাতিদের জন্য গ্ৰাম থেকে নিয়ম করে এসব পাঠাতেন। শ্রাবণের এসব অপছন্দনীয় হলেও সৌহার্দ্যের নিকট এগুলোই যেনো অমৃত। শাশুড়ি মা’রা যাওয়ার পর থেকে নিজেই সবসময় এসব তৈরি করে ছেলের আবদার পূরণের চেষ্টা করেন শান্তা।
________

বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যে নেমেছে ধরণীতে। মায়ের জোরাজুরিতে অফিস থেকে সোজা বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে এসেছে নাহিয়ান। চোখেমুখে তার বিরক্তির ছাপ। পাশেই মা কুলসুম বসে হেসে হেসে কথা বলছেন মেয়ের বাবা-মায়ের সঙ্গে। কিছুক্ষণ বাদেই মেয়েকে নিয়ে উপস্থিত হলো তার ভাবী। বসালো পাত্র পক্ষের সম্মুখে।

ছেলের বিয়ের বয়স হয়েছে সেই কবে। এর আগেও অনেক মেয়েই ছেলের জন্য দেখেছিলেন কুলসুম। কিন্তু কোনো মেয়েই ছেলের মনে ধরে না। একপর্যায়ে হাল ছেড়ে দেন। তবে আজ ভাই বউয়ের কথায় এই মেয়েটিকে দেখতে এসেছেন তিনি। এতক্ষণ মুখশ্রীতে খুশি খুশি একটা ভাব থাকলেও এই মুহূর্তে হাস্যজ্জ্বল মুখখানা মলিন হয়ে গেলো কুলসুমের। মেয়েটির গায়ের রং বড্ড চাপা। আড়চোখে তাকালেন ভাই বউয়ের পানে। ভাই বউ সাবিনা ননদের হাবভাব দেখে পুরো বিষয়টাই ঠাহর করতে পারলেন। এখান থেকে বের হওয়ার পর যে উনার কপালে চরম দুঃখ আছে এও বেশ বুঝতে পারলেন। জোরপূর্বক হেসে মেয়ের বাবা-মায়ের উদ্দেশ্যে বললেন,“ছবিতে তো মেয়েকে অনেক ফর্সা দেখেছিলাম। কিন্তু বাস্তবে তো! তা এডিট করা ছবি ছিলো বুঝি?”

পাত্রীর বাবা-মা অপ্রস্তত হলেন। পাত্রীর মুখের লাজুকতাও মুহূর্তেই বিলীন হলো। নাহিয়ান নিরবে তাদের হাবভাব দেখে যাচ্ছে। পরিস্থিতি সামলাতে পাত্রীর বাবা বলে উঠলেন,“আপনারা কিছু নিচ্ছেন না কেন? একটু মিষ্টিমুখ করুন।”

কথাটা কানে নিলেন না কুলসুম। এনাদের কথা এখন আর উনার কাছে একদম ভালো লাগছে না। একটা মাত্র ছেলে, তার জন্য কিনা এমন কালো মেয়ে বউ করে ঘরে তুলবেন? কথাটা ভাবতেই মন মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো কুলসুমের। বললেন,“আমরা কিছু খাবো না। আজ তাহলে উঠছি।”

“এত তাড়াতাড়ি? আমার মেয়েকে তো ভালো করে দেখলেনই না। কথাও বললেন না। ওকে কী আপনাদের পছন্দ হয়নি?”

গোপনে হতাশার শ্বাস ফেললেন কুলসুম। সরাসরি পছন্দ হয়নি এমন কথা বলাটা মোটেও শোভা পায় না। ইনিয়ে বিনিয়ে বললেন,“তেমন কিছু না ভাই। আমাদের একটু তাড়া আছে। বিয়ে বিষয়ক বাদ বাকি কথা না হয় ফোনেই জানিয়ে দিবো?”

যা বোঝার সকলেই বুঝে গেলো। পাত্রীর বাবা-মায়ের মুখে হতাশার ছাপ। বাধ্য হয়েই কুলসুমের বিপরীতে মাথা নাড়ালেন উনারা। পাত্রীর আসনে বসা মেয়েটি পূর্বের স্থানে জড়সড় হয়ে বসে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এ বিয়ে যে হবে না তা সে সুনিশ্চিত। এমনকি এসব পরিস্থিতির সঙ্গেও সে পূর্ব পরিচিত।

নাহিয়ান এবার সোজা হয়ে বসলো। মৌনতা ভেঙে পাত্রীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করল,“আপনার নামটা যেনো কী?”

ছোট্ট সহজ একটা প্রশ্ন অথচ সকলেই বিষ্মিত হলো। মেয়েটি উত্তরে বললো,“শ্রেয়ানী তমা।”

“মাশাআল্লাহ সুন্দর নাম। তা কী করছেন? লেখাপড়া নাকি চাকরি?”

“লেখাপড়া চলমান, বি.এ তৃতীয় বর্ষে পড়ছি।”

“ভবিষ্যৎ নিয়ে কী পরিকল্পনা? শুধুই সংসার ধর্ম করা নাকি চাকরি বাকরি করারও ইচ্ছে আছে?”

“ইচ্ছে তো আছে একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়ার। স্বামী এবং শ্বশুর বাড়ির লোকেরা যদি রাজি থাকে তাহলে আরকি।”

“বিয়েতে কী আপনার কোনো মত আছে? অর্থাৎ আমাকে বিয়ে করতে কোনো আপত্তি নেই তো?”

মেয়েটি চমকায়। এতক্ষণ দৃষ্টি মেঝেতে নিবদ্ধ থাকলেও এবার মাথা তুলে তাকায় সে। কুলসুম চাপা কণ্ঠে ছেলের উদ্দেশ্যে বলেন,“এখানে তো প্রথমে আসতেই চাইছিলি না। তাহলে এখন কী হলো? এত কথা আসছে কোত্থেকে? মেয়ে কিন্তু আমার পছন্দ হয়নি বলে দিলাম।”

নাহিয়ান অত্যন্ত স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো,“কেন পছন্দ হয়নি? গায়ের রঙের কারণে? গায়ের রঙে কিই বা আসে যায় মা? মানুষের আসল সৌন্দর্য তো থাকে অন্তরে, আচার-ব্যবহারে। আমার তো উনাকে কোনোদিক দিয়ে খারাপ মনে হচ্ছে না।”

“তার মানে?”—-কণ্ঠে কুলসুমের রাগ বিদ্যমান।

নাহিয়ানের সোজাসাপ্টা উত্তর,“বিয়ে যখন করাবেই তাহলে এত জায়গায় ঘুরে কী লাভ? করলে এখানেই করবো। উনার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আমি উনাকেই বিয়ে করতে চাই।”

তমার বাবা-মায়ের মলিন মুখটা উৎফুল্ল হয়ে উঠলো। ছেলের প্রতি মন ক্ষীপ্ত হয়ে উঠলো কুলসুমের। তবে এখানে সবার সামনে কিছু বলতেও পারলেন না। অবশেষে ছেলেটা বিয়ের জন্য রাজি হয়েছে এর বিপরীতে আর কিই বা বলার আছে উনার? দুই পক্ষের সম্মতিতে বিয়ের কথাবার্তা শেষমেশ পাকা হয়ে গেলো। আসার আগে পূর্ব প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিলেন কুলসুম। ভেবে রেখেছিলেন, মেয়ে যদি পছন্দ হয় তাহলে একেবারে আংটি পরিয়ে যাবেন। অগত্যা সঙ্গে আনা আংটিটা পরিয়ে দিলেন তমার আঙুলে।

রাতের খাবারের জন্য মেয়ের বাবা-মা জোরাজুরি করলেও কুলসুম তাদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে বিদায় নিয়ে সেখান থেকে চলে এলেন বাড়ির উদ্দেশ্যে।

চলবে __________

#সুখেরও_সন্ধানে
লেখনীতে: #মাশফিত্রা_মিমুই
[পর্ব:১৬]

বিকেল থেকেই আকাশে গুমোট ভাব। চারিদিকে কালো মেঘের ছড়াছড়ি। রাত হতেই প্রবল ধারায় বৃষ্টি নামলো ধরণীতে। তুমুল বর্ষনে ভিজিয়ে দিতে লাগলো শহর। রাতের খাবার খেয়ে বিছানায় এসে সবে শুয়েছে নাহিয়ান। তখনি ঘরে উপস্থিত হলো ছোটো বোন নিধি। শ্বশুর বাড়ি থেকে গতকালই সে বাপের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। আজ মা-ভাইয়ের সঙ্গে তারও পাত্রী দেখতে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু দুধের শিশুটি হুট করে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার আর যাওয়া হলো না।

বোনকে দেখতেই উঠে বসলো নাহিয়ান। ভ্রুদ্বয় কিঞ্চিৎ কুঁচকে শুধালো,“এ সময় আমার ঘরে? কিছু বলবি?”

কোনো ভণিতা না করেই সোজাসাপ্টা ভাইয়ের উদ্দেশ্যে নিধি বলে উঠলো,“মা তোমার উপর রেগে আছে ভাইয়া। যাকে বলে চরম রাগ।”

“খাওয়ার সময় মাকে টেবিলে না দেখতে পেয়েই তা বুঝতে পেরেছিলাম।”

“বোঝার পরেও এত কুল মুডে আছো কী করে?”

কোনোরূপ উত্তর দিলো না নাহিয়ান। নিধি বসলো ভাইয়ের পাশে। মুখ বিকৃত করে বললো,“হুট করে তোমার কী হয়েছে বলো তো? মায়ের জোরাজুরিতে মেয়ে দেখতে গিয়ে একেবারে মেয়ে পছন্দ করে বিয়ের কথাবার্তা বলে চলে এলে? আচ্ছা সবই না হয় মানলাম। কিন্তু তুমি ওই কালো মেয়ের মধ্যে কী এমন দেখলে বলো তো? তোমার সঙ্গে অমন কালো মেয়ে মানায়?”

“মেয়ে কালো নয় শ্যামলা। আর যদি কালো হয়েও থাকে তাতে সমস্যা কোথায়? গায়ের রঙ, চেহারা, উচ্চতা সব তো সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত, তাই না?”

“কথাটা আমি ওভাবে বলতে চাইনি। আসলে..”

কথার মাঝখানেই বোনকে থামিয়ে দিলো নাহিয়ান। মৃদু হেসে বললো,“একজনকে তো এতদিন ধরে ভালোবেসে এলামই। তার সৌন্দর্যের তো কোথাও কোনো কমতি ছিলো না। অথচ দেখ! ও জানতেই পারলো না ওকে একজন খুব করে চেয়েছে নিজের জীবনে। প্রতি মুহূর্তে তাকে স্মরণ করে ভালোবেসে গেছে। আমার চাওয়াটা একতরফাই রয়ে গেলো রে নিধি। সত্যি বলতে কি, সৌন্দর্যের কদর অনেক বেশি। সুন্দর মানুষদেরকে ভালোবাসার লোকের অভাব হয় না। তাদের খেয়াল রাখার মানুষেরও অভাব হয় না। আমার আগেই কেউ ওকে ভালোবেসেছে। নিজের পাশে আজীবনের জন্য চেয়েছে। সেও হয়তো সারা দিয়েছে সেই প্রেমিক পুরুষের ডাকে।”

বড়ো ভাইয়ের প্রতিটি শব্দেই কষ্টের ছাপ অনুভব করল নিধি। নরম হয়ে এলো তার মন। শুধালো,“তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না ভাইয়া? অনুভাকে ভুলে যাওয়ার জন্য এই বিয়েটা করতে চাইছো তাই তো?”

এবারও হাসলো নাহিয়ান। শাণিত কণ্ঠে বললো,
“মানুষ ভুলা যে অনেক কঠিন কাজ রে নিধি। যারা এই কঠিন কাজটা সম্ভব করতে পারে তারা হচ্ছে স্বার্থপর। কিন্তু তোর ভাই তো মোটেও স্বার্থপর নয়। অনুকে আমি কিছুতেই ভুলতে পারবো না। কখনো ভুলার চেষ্টাও করবো না। তাই বলে সারাজীবন যে একা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে তিলে তিলে কষ্ট পেয়ে মরবো এমন বোকাও আমি নই। আমার একটা মানুষ চাই। যাকে শুধু আমি ভালোবাসবো, বিভিন্ন ভাবে ভালোবাসবো। যাকে যত্ন করে আমি আমার বুকে আশ্রয় দিবো। আমার শুধু একটা মানুষ চাই, যাকে সবাই অবহেলা করলেও আমার ভালোবাসা পেয়ে সেই অবহেলা সে ভুলে যাবে। তার কাছে আমিই হবো সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রিয় একজন মানুষ।”

“তাই বলে ওই মেয়েকে? যার রূপ নেই?”

বোনের কথার বিপরীতে মুচকি হাসে নাহিয়ান। বলে,“হ্যাঁ, গায়ের রঙে আমার কিছুই আসে যায় না। আমার শুধু নিজের মানুষ চাই। ওকে নিজের জন্য বেছে নেওয়ার কারণ ওর ওই রূপ। যেই রূপ অন্যদের নিকট বিষাদের ন্যায় ঠেকলেও আমার কাছে হবে অমৃত সুধা।”

ভাইয়ের কথার অর্থ বুঝতে পেরেই লজ্জিত হলো নিধি। হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে ত্যাগ করল কক্ষ। নাহিয়ান পূর্বের ন্যায় আবারো শুয়ে পড়ল বিছানায়। নরম বালিশে মাথা রেখে বুঁজে নিলো চোখ। বুকের ভেতর আস্তরণ গেড়ে থাকা দুঃখের পাহাড়টা এবার ক্ষয় হতে লাগলো একটু একটু করে। ভালোবাসলেই যে পেতে হবে এমন কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম কী আছে নাকি? ভালোবাসার মানুষকে না পেয়ে নিজের জীবনকে একাকিত্বের দিকে ঠেলে দেওয়ারও কোনো অর্থ নেই। ভালোবাসার থেকেও উর্ধ্বে নিজের ভালো থাকা।
________

খানিক বাদে বাদে আকাশে গুরুম গুরুম শব্দ হচ্ছে। দু ঘণ্টা আগেই বিদ্যুৎ চলে গিয়ে অন্ধকার করে দিয়েছে পুরো এলাকা। তিনটে ঘরে তিনটে মোম জ্বালানো। তাঈমকে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে অর্থিকা।বাবা-মাও ঘুমের ওষুধ খেয়ে এতক্ষণে পাড়ি জমিয়েছে ঘুমের রাজ্যে। তবে অনুভার চোখে ঘুম নেই। হাঁচি দিতে দিতেই তার অবস্থা নাজেহাল। বাড়িতে নেই কোনো ঠান্ডার ওষুধও। কবে যে শেষ হয়েছে সে খেয়ালও নেই মেয়েটার।

শ্রাবণের সঙ্গে দেখা হয়নি দুদিন হলো। তবে এসবে অনুভা অভ্যস্ত। সে জানে এই পুরুষটা খুব অদ্ভুত। হুটহাট নিখোঁজ হওয়া তার চিরাচরিত অভ্যাস। তবে অনুভা একটা বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত যে শ্রাবণ তাকে দূর থেকে ঠিকই পাহারা দেয়, মন ভরে দেখে নেয়। শুধু নিজেকে দেখানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে অনুভাকে। আজও তানিম অনুভাকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন বাহানা দিয়ে একা একাই বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি চলে এসেছে অনুভা। এই বৃষ্টিতে ভেজার কারণেই তার প্রচন্ড ঠান্ডা লেগেছে। রাতে হয়তো জ্বরও আসতে পারে।

শত অসুস্থতার মধ্যেও শ্রাবণকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে তার। এই বিশেষ কারণটা অজানা নয়। তবে শ্রাবণ নামক স্নিগ্ধ পুরুষের ডাকে সাড়া দেওয়া যে অনুভার জন্য গুরুতর অপরাধ। সেই পরিস্থিতিটাই যে এখন আর নেই। অথচ একটা সময় এই পুরুষকে নিয়ে কত স্বপ্নই না দেখেছিল মেয়েটি। স্বপ্ন দেখেছিল সাজানো গোছানো একটা সংসারের।সেই স্বপ্ন হয়তো স্বপ্নই রয়ে যাবে। মানুষের সব স্বপ্ন কী আর পূরণ হয়?

মোবাইলের কল লিস্টের একটি নাম্বারে দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে অনুভা। নাম্বারটা শ্রাবণের। খুব যত্ন সহকারে এই নাম্বারটা সেদিন রাতেই সে সেভ করে রেখে দিয়েছিল। কল দিবে কী দিবে না? বিষয়টি নিয়ে চরম দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে। এই দ্বিধাদ্বন্দ্ব ব্যাপারটা খুবই অস্বস্তিকর এবং মারাত্মক। ভাবতে ভাবতেই মোবাইলটা বিছানার অন্যপাশে রেখে মোম নিভিয়ে দিলো অনুভা। বন্ধ করে নিলো নেত্র যুগল।

তৎক্ষণাৎ ঝংকার তুলে বেজে উঠলো রিংটোন। সেই সাথে অন্ধকার বিলীন হয়ে ঘরে জ্বলে উঠলো মোবাইলের আলো। শোয়া অবস্থাতেই মোবাইল হাতে নিলো অনুভা। স্ক্রীনে জ্বলজ্বল করা নাম্বারটা দেখে না চমকে আর পারলো না। কল রিসিভ করল সঙ্গে সঙ্গে। তখনি অপরপাশ থেকে ভেসে এলো সুপরিচিত কণ্ঠস্বর,“তোমাদের ওখানে কারেন্ট আছে?”

“না তো।”

“পুরো ঘর অন্ধকার?”

“হ্যাঁ।”

“বাহিরে অনেক বৃষ্টি পড়ছে, সাথে বাজও পড়ছে। ভয় করছে না তোমার?”

“ভয় করবে কেন? সবসময় তো একাই ঘুমিয়ে এসেছি।”

“তুমি তো দেখছি ভারি আনরোমান্টিক মেয়ে।”

“এর সঙ্গে রোমান্টিক আনরোমান্টিকের কী সম্পর্ক?”

“অবশ্যই সম্পর্ক আছে।কত স্বপ্ন দেখেছিলাম, আকাশে বাজ পড়লেই আমার বউ ভয় পেয়ে আমায় জড়িয়ে ধরবে। আমি তাকে আগলে নিবো নিজের সাথে।অথচ তুমি আমার সব স্বপ্নকে কাঁচের টুকরোর ন্যায় ভেঙে দিলে নোভা। এর জন্য তোমাকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে।”

শ্রাবণের কণ্ঠে চাপা রাগ। অজান্তেই মুচকি হাসলো অনুভা। প্রশ্ন করল,“কী শাস্তি শুনি?”

“সুখের সমুদ্রে তোমাকে ডুবিয়ে রাখবো। এটাই হচ্ছে তোমার চরম শাস্তি।”

শব্দ করে হেসে উঠলো অনুভা। এটা আবার কেমন শাস্তি? এমন শাস্তির নাম তো আগে কখনো শুনেনি সে। শ্রাবণ তীক্ষ্ণ কণ্ঠে শুধালো,“আমার স্বপ্ন ভাঙার খুশিতে তুমি হাসছো? হাসি পাচ্ছে তোমার?”

হাসি থেমে গেলো অনুভার। বুক চিরে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস। বললো,“ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়েদের ওইসব বাজ পড়ার শব্দে ভয় পেয়ে ন্যাকামি করা সাজে না। তোমার বাবা-মা তোমাদের মতোই একটা পরিবার থেকে তোমার জন্য ভিতু সুন্দর বউ খুঁজে এনে দিবে, দেখো। তোমার স্বপ্ন একদম ভাঙবে না।”

অপরপাশে থমথমে নিরবতা।কয়েক মিনিট অতিক্রম হতেই শ্রাবণের গম্ভীর কণ্ঠস্বর ভেসে এলো,“আমার শুধু নোভাকে চাই। আমার নোভার থেকে সুন্দর ফুল কী আর আছে? কই আমি তো আজ পর্যন্ত বিকল্প দেখিনি। আর দেখতে চাইও না।”

“দিনদিন তুমি অসহ্য হয়ে যাচ্ছো শ্রাবণ।”

“অথচ এই অসহ্য মানবটাই তোমার সুখ, তোমার ভবিতব্য।”

প্রত্যুত্তর করল না অনুভা। শ্রাবণের কথার বিপরীতে সঠিক উত্তর দেওয়া তার পক্ষে খুবই কঠিন একটি কাজ। তার এহেন নিরবতায় মুঠোফোনের বিপরীত পাশ হতে ভেসে এলো খালি গলার মৃদু তরঙ্গ ধ্বনি,

❝তুমি সুখ যদি নাহি পাও
যাও সুখেরও সন্ধানে যাও
তুমি সুখ যদি নাহি পাও
যাও সুখেরও সন্ধানে যাও
আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয়মাঝে….❞

মাঝপথেই থেমে গেলো গান। ততক্ষণে শ্রাবণের এই সুন্দর গুণের সঙ্গেও অতীব পরিচিত হয়ে উঠলো অনুভা। ছেলেটা গানও গাইতে পারে? এত সুন্দর কণ্ঠস্বর তার! কই আগে তো এ বিষয় সম্পর্কে টের পায়নি অনুভা। তাহলে? এই প্রতিভা তবে লুকিয়ে রেখেছিল কী? হয়তো তাই। কণ্ঠে মায়া ঢেলে শ্রাবণ বলে উঠলো,“গানটার এই তিনটে লাইন আমার খুব প্রিয়। তবে তোমার সুখ শুধুই আমার কাছে নোভা। তোমার সুখ আমি।আমি ব্যতীত অন্য কারো সঙ্গে যে তোমায় আমি কিছুতেই সুখী হতে দেখতে পারবো না নোভা। অন্য কারো সঙ্গে তোমায় আমি সুখী হতে দেবো না। বলবো না, সুখের সন্ধানে অন্য কোথাও যেতে। তুমি যেমন আমার হৃদয়মাঝে আছো ঠিক তেমনি ভাবে খুব শীঘ্রই তোমাকে প্রকাশ্যে আমার দেহের সঙ্গেও বেঁধে ফেলবো।”

শীতল একটা স্রোত ছুঁয়ে গেলো অনুভার পুরো দেহ জুড়ে। মুহূর্তেই টের পেলো তার খুব ঠান্ডা লাগছে। শরীরে ছড়িয়েছে উত্তাপ। আজ রাতে যে জ্বর আসবে তাও সে নিশ্চিত। কণ্ঠনালী থেকে হারিয়ে গেছে বাক্য। শ্রাবণ ফের বললো,“বৃষ্টিতে ভিজেছো। জ্বর আসতে পারে। নিজের শরীর নিয়ে হেলাফেলা অন্তত করো না। ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। শুভ রাত্রি মেঘফুল।”

আর এক মুহূর্তও দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হলো দুই পাশের সংযোগ। এতকিছুর ভেতরেও প্রশান্তি অনুভব করল অনুভা।অতঃপর তার মনে হলো,“আমার জন্যও তবে কেউ আছে। আমাকে নিয়ে ভাবার জন্য কেউ আছে। কেউ আছে সময় নিয়ে আমার যত্ন করার।”
_________

বাংলাদেশ থেকে গতকাল রাতেই কানাডা এসে পৌঁছেছে সৌহার্দ্য। দীর্ঘক্ষণ জার্নি করায় মাথাটা ভার হয়ে আছে এখনো। সকাল হয়েছে অনেকক্ষণ হলো কিন্তু আজ আর নিয়মমাফিক হাঁটতে বের হওয়া হয়ে উঠলো না তার। ফ্রেশ হয়ে চোখ বন্ধ করে সোফায় বসে আছে সে। কিছুক্ষণ আগেই মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। ছেলের মাথা ব্যথার খবর পেতেই চিন্তিত হলেন শান্তা। উপদেশ দিলেন কড়া করে এক মগ চা বানিয়ে খেতে। এই মুহূর্তে চা অথবা কফি কিছুই বানানোর মনোবল পাচ্ছে না সৌহার্দ্য, তাই আধ ঘণ্টা ধরে ঝিম মেরে বসে আছে।

ডাবল রুমের মাঝারি অ্যাপার্টমেন্টটায় সে একাই থাকে। বন্ধু বান্ধবরা আগের মতো তেমন একটা আর বাড়ি এসে আড্ডা দেয় না। তাদের সঙ্গে যা দেখা হওয়ার তা ক্লাবেই হয়। কিন্তু হুট করেই কলিং বেল বাজার শব্দ হলো। হেলিয়ে দেওয়া মাথাটা উঠিয়ে সোজা হয়ে বসলো সৌহার্দ্য। এমন সময় কে আসতে পারে এখানে? কারো আসার তো কথা নয়। তবে?

আরো দু-তিন বার বেজে উঠলো বেল। বিরক্তি নিয়ে হেলেদুলে গিয়ে দরজার সম্মুখে দাঁড়ালো সৌহার্দ্য। দরজা খুলতেই অপরপাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলো একটি মেয়েকে। ফর্সা মুখশ্রীতে তার জমে আছে স্পষ্ট রাগ। চোখের নিচ অল্পসল্প কালচে দাগ। মনে হয় কয়েক রাত নির্ঘুমে কাটিয়ে দিয়েছে মেয়েটি। বোচা নাকের ডগা লালাভ আভায় ছেয়ে। এ সময় এখানে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে মেয়েটিকে দেখে খুব অবাক হলো সৌহার্দ্য। তার এই অবাকের ধার না ধেরে তাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল মেয়েটি।

দরজা আটকে নিজেও ভেতরে চলে এলো সৌহার্দ্য। শুধালো,“তুমি?”

“কেন আশা করোনি বুঝি?”

“না।”

“তা করবে কেন? দেশে ফিরে তো তোমার পাখা গজিয়েছে। আমায় ব্লক করলে কোন সাহসে?”

“রাগের মাথায় করে ফেলেছি, স্যরি।”

“রাগ যখন কমেছিল তখন কেন ব্লক খুলে কল দাওনি? কেন স্যরি বলোনি?”

“ব্লক তার পরেরদিনই খুলে দিয়েছি। তুমি হয়তো খেয়াল করোনি।”

“কল দাওনি কেন?”

“আমাদের ব্রেকআপ হয়ে গেছে তাই আর কল দেওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি।”

“তুমি বললেই হলো? সম্পর্কটাকে কী তোমার ছেলেখেলা মনে হয়?”—চিৎকার করে বলে উঠলো কথাটি।

সৌহার্দ্যেরও ভীষণ রাগ হলো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,“লিসেন প্রান্তি, একদম আমার সঙ্গে গলা উঁচু করে কথা বলবে না। তোমার এই রাগ, চেঁচামেচি এতদিন সহ্য করেছি বলে এখনো যে সহ্য করবো তা কিন্তু ভাববে না।”

প্রিয় মানুষের এমন করে বদলানোয় বিষ্মিত হলো প্রান্তি। ঢপ করে বসে পড়ল সোফায়। বড়ো বড়ো কয়েকটা নিঃশ্বাস ফেলে নিজের রাগ সংবরণ করার প্রচেষ্টা করল সৌহার্দ্য। শান্ত কণ্ঠে বললো,“আমাদের এই সম্পর্কটাকে আমি শুরু থেকেই সিরিয়াস ভাবে নিয়েছিলাম।তোমার সকল রাগ, অভিমান, আবদার, আজেবাজে কথা সহ্য করে গেছি বারংবার। কিন্তু তুমি শুরুতে ঠিক থাকলেও দিনদিন অনেকটা বদলে গেছো প্রান্তি। তারপরেও আমি সব মেনে নিয়েছি। কিন্তু এতকিছুর পরেও সেদিন তুমি আমার মাকে নিয়ে ওইরকম কথা কীভাবে বলতে পারলে বলো তো? আমার মা থার্ড ক্লাস? আমার সঙ্গে রিলেশন করে ভুল করেছো তুমি?”

দুদিকে মাথা নাড়ালো প্রান্তি। চঞ্চল হয়ে উঠলো তার চোখের বাদামি মণি। বলতে চাইলো কিছু। কিন্তু পারলো না। সৌহার্দ্য ইশারায় তাকে চুপ থাকতে বলে নিজেই পুনরায় বললো,“শুরুতেই আমি আমার মায়ের ব্যাপারে তোমায় জানিয়েছি, তুমি বলেছিলে তাতে তোমার কোনো সমস্যা হবে না। তাহলে এখন কেন সমস্যা হচ্ছে? সারাজীবন ওইসব প্রেমপ্রেম সম্পর্কে আমি থাকতে পারবো না। ভাইয়ার বিয়ে দিয়ে বাবা-মা হজ্জে যাবে। সেখান থেকে আমি তাদেরকে আমার কাছে নিয়ে আসবো। তাই বিয়ের পর আমার ওয়াইফকে আমার মায়ের সঙ্গেই থাকতে হবে। সেখানে তুমি আমার মা নিয়ে অমন কথা বলো কী করে হ্যাঁ? আমার কাছে আমার মা-ই সব। যে আমার মাকে নিয়ে এমন নোংরা মনোভাব পোষণ করে তাকে আমি আমার জীবনে চাই না। আমাদের মধ্যকার সকল সম্পর্ক আপাতত শেষ।”

সৌহার্দ্যকে চমকে দিয়ে শব্দ করে কেঁদে উঠলো প্রান্তি। তার এহেন কাণ্ডে ভড়কে গেলো সৌহার্দ্য। কান্নাজড়িত কণ্ঠেই প্রান্তি বলে উঠলো,“আমি ওসব বলতে চাইনি বিশ্বাস করো। তুমি তো জানো, মাঝে মাঝেই মাইগ্ৰেশনের ব্যথা উঠে আমার। ব্যথাটা সহ্য করতে না পেরেই বাজে আচরণ করে ফেলি।সেই মুহূর্তে অফিসের একটা প্রজেক্ট নিয়ে খুবই ব্যস্ত ছিলাম। তার উপর তোমার কথাগুলো। সব মিলিয়ে মুখে যা এসেছে বলে ফেলেছি। তাই বলে তুমি এত বছরের সম্পর্ক শেষ করে দিবে? প্লিজ এমনটা করো না সৌহার্দ্য। খুব ভালোবাসি তোমায়। এ কটা দিন তোমায় ছাড়া খুব কষ্ট হয়েছে আমার।”

শুকনো ঢোক গিললো সৌহার্দ্য। মেয়েটার চোখের পানি কিছুতেই যেনো সহ্য হচ্ছে না তার। ভেতরটা নরম হয়ে এসেছে এতক্ষণে। কিন্তু বাহির থেকে নিজেকে যথাসম্ভব কঠোর রাখলো। ছোটো থেকে বাবা-মা যতই তাকে শাসন করুক না কেন তাদেরকে যে খুব ভালোবাসে সৌহার্দ্য। সেখানে সেদিনের সেই ব্যবহারটা কিছুতেই সে আশা করেনি। কঠোর কণ্ঠে বললো,
“মাইগ্ৰেশনের ব্যথা উঠেছে বলে তুমি আমার মাকে কটু কথা বলতে ছাড়োনি। ভবিষ্যতে কখনো যে মায়ের সামনে এমনটা করবে না তার কী গ্যারান্টি আছে? মা যদি কখনো এমন ব্যবহারের সম্মুখীন হয় তাহলে তিনি খুব কষ্ট পাবেন। হয়তো দেখা যাবে আমার সঙ্গে থাকবেনই না আর। তোমার তো আবার ব্যথা উঠলে কোনো বোধবুদ্ধিই থাকে না। যাই হোক এই ব্যাপারটা বেশিদূর না এগোনোই ভালো।তোমরা বিদেশি কালচারে বড়ো হওয়া মানুষ, এসব ছোটো খাটো রিলেশন ভাঙলে তেমন কিছু যায় আসবে না।”

কান্নার বেগ বৃদ্ধি পেলো প্রান্তির। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো,“আমি তোমার ব্যাপারে খুব সিরিয়াস সৌহার্দ্য। তোমাকে ছাড়া থাকাটা আমার কাছে অসম্ভব। যা এ কদিনে খুব ভালো করেই বুঝে গেছি আমি। বিশ্বাস করো তোমার মা আমার কাছে একজন সম্মানীয় নারী। কারণ তিনি তোমায় জন্ম দিয়েছেন। বড়ো করেছেন। তাকে কেন আমি অপমান করবো? সেদিন অনিচ্ছাকৃত একটা ভুল হয়ে গেছে। এমন ভুল আর কখনো হবে না। যদি কখনো হয়েও থাকে সেদিন না হয় তুমি আমায় ছেড়ে দিও। তখন আমি আর তোমায় কিছুই বলবো না প্রমিস।”

দীর্ঘশ্বাস ফেললো সৌহার্দ্য। প্রান্তি পুনরায় বললো,
“দয়া করে সম্পর্কটাকে আগের মতো করে নাও না। তুমি বললে আমি এখনি তোমাকে বিয়ে করতে রাজি আছি। তবুও আমায় ছেড়ে দিও না।”

আলতো করে প্রান্তির হাতের উপর হাত রাখলো সৌহার্দ্য। শীতল কণ্ঠে বললো,“শান্ত হও।”

“আগে বলো মাফ করেছো আমায়?”

উপরনিচ মাথা নাড়ায় সৌহার্দ্য। সঙ্গে সঙ্গেই ক্রন্দনরত মুখশ্রীতেই ফোটে ওঠে একফালি হাসি।

চলবে ________

(কপি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে