“সুখময় বৃষ্টি”পর্ব : ২

0
1307

“সুখময় বৃষ্টি”পর্ব : ২
লেখা : রায়না মনি

ধারা পুরো বিকালটা ব্যালকনিতেই কাটিয়ে দিলো। কত বার যে রাস্তার দিকে তাকিয়েছে তা ধারার হিসেবে নেই। ধারা বার বার আশা করেছে, রাস্তায় হয়তো ওই লোকটাকে আবার দেখা যাবে। কিন্তু না, তাকে আর দেখা যায়নি । ধারার দু চোখ কেন ওই লোকটাকে খুঁজছে তা ধারা জানে না। ধারার শুধু এটাই মনে হয়েছে ওই লোকটাকে আবার দেখতে পেলে ধারার ভালো লাগবে।

রাতে পড়তে বসেও কিছুতেই পড়ায় মন দিতে পারলো না ধারা। পড়ার টেবিল থেকে উঠে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো হাত পা ছড়িয়ে। কতক্ষণ হাবিজাবি অনেক কিছু ভাবলো। ভাবতে ভাবতেই তলিয়ে গেল ঘুমের রাজ্যে।

রুবিনা এক কাপ কফি নিয়ে ধারার রুমে আসলো। এসে দেখলো ধারা ঘুমিয়ে আছে। টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখলো বই খোলা । কী আশ্চর্য! পড়া লেখা রেখে মেয়েটা অসময়ে ঘুমিয়ে আছে কেন? রুবিনা কয়েক বার ধারাকে ডাকলো। কিছু হলো না তাতে, ধারার ঘুম ভাঙলো না। রুবিনা এবার ধারার কাছে যেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে ধারাকে বেশ কয়েক বার ডাকার পরে ধারা চোখ খুললো।
“এই অসময়ে ঘুমাচ্ছিস যে ?”

ধারা উঠে বসলো। কিন্তু মার কাছে কী বলবে? একটা অচেনা অজানা ছেলেকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেছে। অসম্ভব! এটা তো কিছুতেই বলা যাবে না । ধারা বললো,
“না আসলে মাথা ব্যাথা করছিল, তাই শুয়ে ছিলাম কখন যে ঘুমিয়ে গেছি টের পাইনি।”

“হঠাৎ মাথা ব্যথা করে কেন? তুই কি আজকে বৃষ্টিতে ভিজছিস?”
বৃষ্টির কথা শুনে আবার সেই মানুষটার কথা মনে পড়ে গেল ধারার । ধারার চোখের সামনে ভেসে উঠলো দুপুরের সেই বৃষ্টির মাঝে মানুষটার অপেক্ষার দৃশ্য।

“কী হলো, কথা বলছিস না কেন ? সত্যিই আজকে বৃষ্টিতে ভিজছিস তাই না ?”

“না মা বৃষ্টিতে ভিজিনি । এমনি মাথা ব্যাথা করছে।”
রুবিনা কফির কাপটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
“কফিটা খা ভালো লাগবে।”

ধারা রাতে আর কিছু খেলো না, কফিটা খেয়েই শুয়ে পড়লো। রুবিনা বকাবকি করেও খাওয়াতে পারলো না।

পরের দিন সকাল থেকেই খুশি মনে এখানে সেখানে ঘুরঘুর করছে ধারা । অপেক্ষা করে আছে ওর আব্বুর জন্য। আব্বু গ্রামে গিয়েছিল আব্বুর চাচাকে দেখতে । দুদিন আগে ধারার দাদু ফোন করে জানালো, আব্বুর চাচা স্ট্রোক করেছে। খবর শুনেই আব্বু সেখানে গিয়েছিল। আজ বাসায় আসতেছে। সাথে ধারার দুইটা কাজিন ও আসছে, দিয়া আর অর্ক। শুনে তো ধারার খুশি আর ধরে না।
দিয়া, ধারা, অর্ক এই তিন জনের ভিতর খুব ভাব। দিয়া অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী, ধারা ক্লাস টেন আর অর্ক ক্লাস নাইনের ছাত্র। ওরা তিনজন এক জায়গায় হলে ওদের কথা ফুরোয় না। সারাক্ষণ এক সাথেই ঘুর ঘুর করে তিন জন।
জামাল হোসেন দুপুরেই বাসায় আসলো। সাথে দিয়া আর অর্ক।

বিকালে ধারা, অর্ক, দিয়া ধারার রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে।
ধারা এক সময় খুব আগ্রহ নিয়ে দিয়াকে জিজ্ঞেস করলো,
“দিয়া আপু তুমি হঠাৎ কুমিল্লা কলেজে ভর্তি হলে কেন? এখানের কলেজে কী সমস্যা ছিল?”

দিয়া প্রশ্নটা শুনে হকচকিয়ে গেল, তারপর আমতা আমতা করে বললো,
“না আসলে আমার একটা বান্ধবী আছে, আমার খুব কাছের, খুব প্রিয়। ও কুমিল্লায় ভর্তি হয়েছে তো, তাই আমি ও ভর্তি হলাম ।”

দিয়ার কথা শুনে অর্ক এমন ভাব করলো, যেন দিয়া খুব মজার কথা বলেছে। অর্ক মজার ছলেই বলে উঠলো,
“তা তোমার সেই পরাণের বান্ধবীটা কে? সেই কবে থেকেই শুধু শুনছি বান্ধবীর কথা।
সে তো একজন সৌভাগ্যবান ব্যক্তি। তার জন্য মানুষ ঘরের কাছের কলেজ রেখে অতদূরে চলে গেল। তা তোমার সেই বান্ধবীটার সাথে কি আমাদের একটু দেখা করিয়ে দেবে? তার সাথে দেখা হলে আমরা একটু ভাগ্যবানের ছোঁয়া পেতাম।”

দিয়া কথা গুলো শুনে অর্কর দিকে কটমট করে তাকালো। কিন্তু অর্ক সেসব পাত্তা দিলো না। অর্ক আবার বললো,
“কি দেখা করাবা না?”
বলেই ধারার দিকে তাকিয়ে ধারাকে বললো,
“ধারা আপি তুমি কি সেই ভাগ্যবান মানবীর সাথে দেখা করতে চাওনা?”
ধারা কিছু বুঝতে পারছে না অর্ক এসব কী বলছে? ধারা অবুঝের মত অর্কর দিকে তাকিয়ে আছে।

অর্ক দিয়ার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বললো,
“চুপ করে থাকাই সম্মতির লক্ষণ, ধারা আপি যেহেতু চুপ করে আছে, তার মানে আপিও দেখা করতে চায়। এখন তুমি বলো কবে আমাদের সাথে তার দেখা করাবা?”

দিয়ার ইচ্ছা করছে অর্কর মাথার চুল গুলো টেনে ছিঁড়ে ফেলতে। দিয়া কোন রকমের বললো,
“অর্ক আমি এইবার কুমিল্লা থেকে আসার পর থেকেই দেখছি তুই কেমন ত্যাড়া ত্যাড়া করে কথা বলিস, তোর সমস্যাটা কোথায়? আর আমার বান্ধবীর…”
দিয়া কথা শেষ করতে পারলো না তার আগেই তার ফোন বেজে উঠলো। দিয়া ফোনের দিকে তাকিয়েই বললো, তোরা থাক, আমি একটু আসছি। বলেই ছাদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

অর্ক এতক্ষণ ড্রেসিং টেবিলের সামনে টুলের উপর বসা ছিল। দিয়া রুম থেকে বের হতেই অর্ক এসে বিছানায় ধারার মুখোমুখি বসলো। তারপর গলার স্বরটা একটু নিচু করে বললো,
“আপি কিছু বুঝতে পারলে?”

“কী বুঝবো ?”

“দিয়া আপু যে ফোন নিয়ে নাচতে নাচতে চলে গেল, কার ফোন ছিল কিছু ধারণা করতে পারলে?”

“অর্ক এখানে ধারণা করার কী আছে? আপুর কোন ফ্রেন্ড হয় তো কল দিয়েছে ।”

“আমার কিন্তু তা মনে হয় না। আমার মনে হয় ঘটনা অন্য কিছু ।”

“অন্য কিছু মানে? একটু বুঝিয়ে বল তো।”

“আপু যে খুলনা কলেজ ছেড়ে কুমিল্লা কলেজে ভর্তি হলো, এটা কি সত্যিই কোনো বান্ধবীর জন্য? আমার সেটা মনে হয় না। আপুর সব থেকে কাছের বান্ধবী সোমা আপু খুলনাতেই আছে। সোমা আপুই আপুর সব ছিল। অথচ আপু হঠাৎ করেই কুমিল্লা কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেল। তখন বললো সোমার থেকেও প্রিয় বান্ধবী আরও একজন আছে। দুজন নাকি দুজনকে ছাড়া থাকতে পারবে না। আম্মুকে ফোনে কথাও বলিয়েছে সেই বান্ধবীর সাথে। কুমিল্লা ভর্তি হওয়ার ব্যাপারে কারোর মত ছিল না। কিন্তু আপু কারোর কোনো কথা শুনলো না। শেষ পর্যন্ত এটা বলে দিলো কুমিল্লা ভর্তি না করিয়ে দিলে স্টাডি অফ করে দিবে। তারপরই তো কুমিল্লা ভর্তি করিয়ে দিলো।
এখন আমি যেটা বলতে চাচ্ছি সেটা হলো, আপু মিথ্যা বলে কুমিল্লা ভর্তি হয়েছে। অন্য কারো জন্য, স্পেশাল কেউ।”

“কী বলিস! স্পেশাল কেউ? তুই কি অন্য কিছুর ইঙ্গিত দিলি?”

“হুম ।”

“কিন্তু এমন হলে আপু তো বলতো আমাদের। সব কিছুই তো বলে। কয়টা প্রপোজ পেয়েছে, কে কে প্রপোজ করলো, কার কার উপর ক্রাশ খায় সবই তো আমাদের কাছে বলে। তাহলে রিলেশনে জড়ালে আমাদের কাছে বলতে সমস্যা কী? তুই শিওর?”

“শিওর না, তবে মনে হচ্ছে আমার ধারণাই ঠিক। আপু এইবার কুমিল্লা থেকে আসার পরে আমি নতুন একটা ব্যাপারে জানলাম।”

“কী ?”

“আপুর ফোনে আগে থেকেই একটা নাম্বার সেইভ করা ছিল Soma 2 দিয়ে। প্রায়ই কল আসতো ওই নাম্বার থেকে। আমি ভাবতাম ওটা সোমা আপুর নাম্বার। একদিন জিজ্ঞেস ও করেছিলাম ওটা কার নাম্বার। আপু বলেছিল সোমার নাম্বার। কিন্তু এইবার আপু কুমিল্লা থেকে আসার পরে, ওই নাম্বার থেকে পাঠানো একটা ম্যাসেজ দেখলাম।”

“ম্যাসেজে কী লেখা ছিল ?”

“ম্যাসেজে লেখা ছিল, ‘এতদূর আসতে পারলে আমার জন্য, অথচ বাড়িতে গেলে একটু ঠিক মত কথা বলতে পারো না আমার সাথে!’
সোমা আপু তো খুলনাতেই আছে, সোমা আপুর জন্য তো আর আপু কুমিল্লায় যায়নি। সোমা আপুর এমন ম্যাসেজ পাঠানোর প্রশ্নই আসে না। ওই নাম্বারটা অন্য কারো।”

অর্কর কথা শুনে ধারা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।
“বলিস কিরে অর্ক?”

“হুম তাহলে ভাবো একবার ।”

“দিয়া আপু আমাদের কাছ থেকে এই ব্যাপারটা লুকাতে পারলো! আমাদের এই বিষয়ে তদন্ত শুরু করতে হবে।”

“হুম আজকে থেকেই মিশন শুরু।”

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে