সুখপাখি
৪.
অচেতন অবস্থায় মেঝেতে পরে আছে শিমু। সারা শরীরে কালসিটে হয়ে গেছে। কোনো কোনো জায়গায় কেটে রক্তমুখী হয়ে আছে। চুল এলোমেলো। আবির বাহির থেকে এসে শিমুকে এখনো মেঝেতে পরে থাকতে দেখে আবারো রেগে যায়। মুখের উপর এক গ্লাস পানি ঢেলে দেয়। শিমুর জ্ঞান ফিরলে উঠে বসার চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়। আবির কোলে নিয়ে ওকে বাথটাবে ফেলে দেয়। কাটা জায়গায় পানি লাগাতে ছ্যাত করে উঠে শিমুর পুরো শরীর। আবির যাওয়ার সময় বললো,
— “পনেরো মিনিট দিলাম। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আয়।”
শিমু দুই হাটু বুকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে দেয়। সারা শরীর জলছে। তখন আবির মোবাইলে কি দেখেছে কে জানে, রাগে কোমড়ের বেল্ট খুলে পিটিয়েছে। শিমু কিছু জিজ্ঞেস করলে আরো বেশি পিটিয়েছে। যার ফলে এখন এ অবস্থা। শিমু কেঁদে কেঁদে মিনমিনে স্বরে বললো,
— “কি করেছি আমি যার জন্য এভাবে মারেন আমায়? কারণটাও বলেন না। আর আমার যাওয়ার কোনো জায়গায়ও নেই যে পালিয়ে যাবো এখান থেকে। চাচির বাসায় গেলে ওই মাহিন নিশ্চিত আমাকে আবার অন্য কারো কাছে দিয়ে দিবে।”
আবারো ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। বাথটাব থেকে নেমে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে আসে। একটা সাদা থ্রিপিস পরেছে শিমু। চুলে গামছা পেছিয়ে বেরিয়ে আসে। আবির কিছুক্ষণ একধ্যানে শিমুকে দেখতে থাকে। আবির ভাবছে,
— “এতো এতো মারের মধ্যেও মেয়েটার রুপ যেনো আরো বেড়ে যাচ্ছে। অদ্ভুত!”
ফর্সা গায়ে কালসিটে মারের দাগের মাঝেও শিমুর ফর্সা চামড়া যেনো ঝিকিল মারছে। আবির অন্যকোনো দিকে না তাকিয়ে শুধু শিমুকেই দেখছে। শিমু আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখটা মলিন করে চুল মুছে নেয়। এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠে। শিমু পেছন ফিরে আবিরের দিকে তাকায়। আবির উঠে যায়। দরজা খুলে দেখলো মাহিন দাঁড়িয়ে আছে। মাহিনকে ড্রয়িং রুমে বসিয়ে আবির উপরে চলে আসে। শিমুকে বললো,
— “তোমার ভাই এসেছে। যাও দেখা করে আসো। আর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আমার জন্য কফি আনবে।”
মাহিনের নাম শুনে শিমুর বুকের ভেতরে মোচড় দেয়। এখানে কেনো এসেছে সে? শিমু বেঁচে আছে কিনা দেখতে? নাকি আধমরা হয়েছে কিনা সেটা দেখতে? অসহ্যকর। শিমু উড়নাটা নিয়ে মাথায় পেচিয়ে হিজাবের মতো করে পড়ে নেয়। আবির এখনো পলকহীনভাবে শিমুকেই দেখছে। শিমু বের হওয়ার আগে বললো,
— “রুম থেকে বেরিয়ে বা দিকের সিড়ি দিয়ে নামলে ড্রয়িং রুমে যেতে পারবে। আর ড্রয়িং রুম এর ডানদিকের গলি দিয়ে বের হলে রান্নাঘরের দরজা পেয়ে যাবে।”
শিমু আবিরের কথা মন দিয়ে শুনলো। তারপর আবিরের কথা অনুযায়ী নিচে নেমে গেলো। মাহিনকে দেখে শিমুর গা জ্বলে যাচ্ছে। শিমু তার থেকে অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে সালাম দিলো। মাহিন সালামের উত্তর নিয়ে শিমুকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পরখ করতে শুরু করে। শিমু একপাশ ফিরে দাঁড়িয়ে যায়। রাগে শরীর রিঁ রিঁ করছে। মাহিন বললো,
— “কেমন আছিস শিমু?”
মাহিনের মুখে নিজের নাম শুনে যত রাগ উঠছে তার চেয়ে বেশি রাগ লাগছে তার হাসি দেখে। একটা মানুষ এতোটা বিছরি ভাবে কিভাবে হাসতে পারে? যত্তসব। শিমু আস্তে করে উত্তর দিলো,
— “আপনি যেমন থাকতে পাঠিয়েছে তেমনই আছি।”
— “হুম দেখে বুঝাই যাচ্ছে।”
শিমু হন্তদন্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— “তাথই কেমন আছে? তাথই আসেনি? চাচি, দাদি কেউ আসেনি কেনো?”
— “ওদের আনতে চাইনি তাই। বাই দা ওয়ে, রাজপ্রাসাদে এসেই পরেছিস। তুই চাইলে আমরা একটা ডিল করতে পারি।”
— “কিসের ডিল?”
— “এই আবির চৌধুরির এই মেনসন ছাড়াও আরো অনেক সম্পত্তি আছে। এতো টাকা পয়সা সে একা খেয়ে যেতে পারবে বলে মনে হয়না। তুই ওর সাথে ভালোবাসার নাটক করে অর্ধেক সম্পত্তি তোর নামে করে নিতে পারিস। তারপর না হয় ওকে ডিবোর্স দিয়ে আমাকে বিয়ে করে নিবি।”
শিমু রাগ এবার আর কন্ট্রোল করতে পারলো না। তেড়ে এসে ঠাটিয়ে চড় মারলো মাহিনকে। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
— “তোমার মতো বেঈমানকে আবার বিশ্বাস করবো? আর তুমি আমাকে তোমার মতো বেঈমান মনে করো? যে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমার বাবার সব সম্পত্তি নিজের করে নিয়ে আবারো টাকার লোভে আমাকে এমন পাষাণ একটা মানুষের কাছে বিক্রি করেছো। বেরিয়ে যাও তুমি এখান থেকে। সে যেমনই হোক, যতই পাষাণ হোক সে আমার স্বামী। আর আমি আমার স্বামীর সাথে কোনোদিনই বেঈমানী করবো না। সে মেরে ফেললেও আমি বেঈমানী করবো না।”
মাহিন রক্তচক্ষু নিয়ে শিমুর দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
— “এই থাপ্পড়ের জন্য তোকে পস্তাতে হবে মনে রাখিস। তোকে আমি কখনো ভালো থাকতে দিবো না।”
মাহিন চলে যায়। শিমু ধড়াম করেই দরজা বন্ধ করে দেয়। দরজার সাথে পিঠ ঠেকে দাঁড়িয়ে কয়েক ফোটা চোখের পানি ফেলে। মনে মনে বললো,
— “সে যেমনই হোক আমি কিভাবে তার সাথে এতো বড় বেঈমানী করবো? আর তাকে ডিবোর্স দিয়ে আমি অন্যকারো সাথে…। না না আমি কোনোদিন এইসব কাজ করবো না। ডিবোর্স এর নাম মুখেও নিবো না। আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করে বলবো যাতে আমার স্বামীকে তিনি হেদায়েত করেন। আল্লাহ নিশ্চয় আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না।”
আবিরের চিৎকার শুনা গেলো উপর থেকে। চিল্লিয়ে বললো,
— “শিমু আমার কফি কই?”
শিমু দৌড়ে রান্নাঘরে যায়। দুইমিনিটের মধ্যেই কফি বানিয়ে উপরে আসে। আবির কফি নিয়ে এক চুমুক দিয়ে বললো,
— “এদিকে আসো।”
শিমুর কলিজা কেপে উঠে। শিমু মনে মনে ভাবছে,
— “কফি কি খারাপ হয়েছে? এখন কি উনি আমাকে আবার মারবে?”
এসব ভাবতেই চোখের কোণে পানি জমতে শুরু করে। আবির আবার বললো,
— “কি হলো কথা কানে যায় না? এদিকে আসো।”
শিমু ধীর পায়ে এগিয়ে আবিরের সামনে যায়। আবির হাত ধরে টেনে ওকে পাশে বসিয়ে দেয়। এতোটা কাছে বসায় আবিরের প্রতিটা হৃদস্পন্দন শিমু শুনতে পাচ্ছে। ছলছল চোখে আবিরের মুখের দিকে তাকায়। এই মানুষটার মতিগতি সে এখনো ঠাওর করতে পারে না। আবির কফিতে আরেক চুমুক দিয়ে বললো,
— “দেখ চিনি দিয়েছিস নাকি?”
শিমু ভয়ে কেপে উঠে। আবির সেটা টের পেলো। শিমু আমতা-আমতা করে বললো,
— “চিনিতে আমি দুই চামচ চিনি দিয়েছি।”
আবির ভ্রু কুচকে শিমুর দিকে তাকায়। আবিরের চাহনি দেখে শিমু মুখে হাত দিয়ে বললো,
— “উপস সরি! কফিতে দুই চামচই চিনি দিয়েছি।”
— “আমার তো মিষ্টি লাগছে না।”
— “আমাকে দিন আমি চিনি আরেক চামচ দিয়ে দিচ্ছি।”
— “আগে খেয়ে দেখো।”
শিমু কাপা কাপা হাতে কফির মগটা নিয়ে এক চুমুক দেয়। “উপস” বলে ঠোঁটে হাত দিয়ে ঠোঁট ঘষতে শুরু করে। আবির কফির মগটা শিমুর হাত থেকে নিয়ে নেয়। শিমু বোকার মতো ফেস করে বললো,
— “চিনিতো ঠিকই আছে।”
আবির হাসছে। প্রাণখুলেই হাসছে। শিমু মুগ্ধ নয়নে সেদিকে তাকিয়ে আছে। আবির হাসলে ওর গেজ দাঁত ঝিলিক মারে। আবিরের হাসিটাও অমায়িক। শিমু মনে মনে ভাবছে,
— “ছেলেদের হাসিও এতো সুন্দর হয়? না ছেলেদের নয়। শুধু এই পাষাণ ব্যাক্তিটার হাসি সুন্দর। খুব সুন্দর। না শুধু সুন্দর নয়। অদ্ভুত সুন্দর। এই হাসি বুকের ভেতরে তোলপাড় করে দিচ্ছে।”
আবির হাসি থামিয়ে বললো,
— “একজনের ঠোঁট পুড়ে গেছে তার মানে কফিটা নিশ্চিত অনেক মিষ্টি হয়েছে।”
আরেক চুমুক দিয়ে বললো,
— “উম! এখন আরো ভালো লাগছে খেতে।”
কথাটা বলেই আবির আবার হাসলো। শিমু সেদিকেই তাকিয়ে ছিলো। আবির আরেক চুমুক কফি খেয়ে শিমুকে জিজ্ঞেস করলো,
— “মাহিন চলে গেছে?”
— “হ্যাঁ।”
— “কি বলেছে মাহিন?”
শিমুর রাগ উঠে গেলো। দাঁড়িয়ে গিয়ে ঝাঝালো কণ্ঠে বললো,
— “ওর মন্ডু বলেছে। বেঈমান একটা। সে আমাকে তার মতো মনে করে। যত্তসব।”
শিমু মুখটা মলিন করে মাথা নিচু করে নেয়। আবির তীক্ষ্ণ চোখে শিমুকে দেখছে। শিমু মাথা উঠিয়ে চোখ রাঙিয়ে আবিরকে বললো,
— “এই মাহিন আসলে আর কোনোদিন ওকে বসতে বলবেন না। ফালতু একটা পুরুষ। না ও পুরুষের কাতারেই পরে না।”
আবির উঠে এসে শিমুর নাকে নাক ঘষে বললো,
— “আচ্ছা আর কোনোদিন বসতে বলবো না। বলবো মাহিন তুমি চলে যাও। আমার শিমু তোমাকে দেখতে পারে না। ঠিকাছে?”
আবিরের মুখে “আমার শিমু” শুনে শিমুর মনের ভেতর এক শীতল হাওয়া বয়ে গেলো। হার্টবিট মিস করলো একটা। মনে হচ্ছে তার হৃদয়ে কেউ রঙ ছড়িয়ে দিয়েছে। শিমু শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আর আবির খুটিয়ে খুটিয়ে শিমুকে দেখছে। হঠাৎই আবার রাগ উঠছে আবিরের। কিছু একটা তাকে বাধা দেয় শিমুর কাছে আসতে। কিছু কথা আবিরের মনে আগুন লাগিয়ে দেয়। যার কারণে সে একেবারে কঠোরও হতে পারে না আবার একেবারে আপন করেও নিতে পারে না। রাগের বসে ধাক্কা দেয় শিমুকে।
আচমকা ধাক্কা দেয়ায় নিজেকে সামলাতে পারেনি। পরে যায় মেঝেতে। খাটের এক কোণে মাথা বারি খায়। শিমু মাথায় হাত দিয়ে ঘষতে ঘষতে আবিরের দিকে তাকায়। শিমু ভয়ে জমে যায়। আবির আবার তখনের মতো হিংস্র হয়ে উঠছে৷ শিমু কেঁদে দেয়। কেউ নেই যাকে সে বলবে আবিরের হাত থেকে বাঁচাতে। শিমুর কান্নার বেগ বাড়তে শুরু করে। সেই সাথে ভয়ে থরথর করে কাপতে থাকে। আবির নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে সেন্টার টেবিলটায় এক লাথি মারে। দেয়ালের সাথে বারি খেয়ে ভেঙে গুড়ি গুড়ি হয়ে যায় টেবিলের সব কাচ। শিমু পিছিয়ে গিয়ে দেয়ালের সাথে এটে বসে থাকে৷ বুঝতেই পারছে না কোন বিষয়টা আবিরকে রাগিয়ে দেয়। রাগে হনহন করে বের হয়ে যায় ঘর থেকে।
—————————————-
শিমু টেবিলে খাবার বেড়ে বসে আছে। একটু আগেই আবির এসেছে। এসে বললো,
— “শিমু আমার ক্ষিদে পেয়েছে। তাড়াতাড়ি ভাত বেড়ে দাও।”
এতো কিউট করে বলায় শিমু মুচকি হেসে তাড়াতাড়ি নিচে চলে এলো। আবির নিচে এসে চেয়ার টেনে বসে পরে। কালো একটা টাউজার পরেছে আর একটা সেন্টু গেঞ্জি পরেছে। এতেও দারুণ লাগছে। আবির শিমুর দিকে তাকিয়ে বললো,
— “বউ আমাকে তোমার হাতে খাইয়ে দাও। প্লিজ।”
শিমু তৎক্ষনাৎ কেপে উঠে আবিরের এমন আবদারে। কিছু না বলে খাইয়ে দিতে শুরু করে। শিমুকে টেনে পাশের চেয়ারে বসিয়ে চুল খুলে দেয়। লম্বা এক মুঠ চুল সামনে এনে আবির চুল ঘাটছে আর শিমুর হাতে ভাত খাচ্ছে। সবই তো ঠিক আছে তারপরেও কেনো এমন করে এই লোক তার সাথে। কিছুই বুঝে না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শিমু। খাওয়া শেষে আবির উঠে যায়। শিমু নিজে হালকা খেয়ে সব গুছিয়ে রেখে রুমে এসে দেখে আবির চিৎ হয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে গেছে। শিমু আবিরের মাথার কাছে বসে চুলে হাত বুলিয়ে দেয়। মনে মনে বললো,
— “আমিতো আপনাকে সম্পূর্ণ রুপে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছি তাহলে কেনো আপনি আমাকে মানতে পারছেন না? কেনো এমন ব্যবহার করেন আমার সাথে? আমি কি খুব বেশিই খারাপ?”
একটা দীর্ঘশ্বাস বুক চিড়ে বেরিয়ে আসে শিমুর। উঠে গিয়ে আজু করে আসে। জায়নামাজ বিছিয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে শুরু করে। মোনাজাতে কেঁদে কেঁদে বললো,
— “আল্লাহ আপনিই সঠিক পরিকল্পনাকারী। আপনার পরিকল্পনা আমার থেকেও সুন্দর৷ উনাকেই যদি আমার স্বামী হিসেবে বেছে থাকেন তাহলে উনাকে হেদায়েত দিন। সঠিক পথে ফিরিয়ে দিন। আমি ধৈর্য ধরে আছি কোনদিন তিনি আবার সেই প্রথম দিনের আবিরে ফিরে আসবে সেই আশায়।”
এভাবে আরো কিছুক্ষণ দোয়া দুরুদ পড়ে ফজরের নামাজ পড়ে নেয়। কোর’আন পড়ে সোফায় শুয়ে পরে। শিমু মনে মনে ভাবছে,
— “আমাকে যতই মারুক অন্তত অন্যকোনো পুরুষের সামনে তো যেতে বলছে না আমায়। তাতেই অনেক।”
পরেরদিন শিমুর ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে আবির তার বন্ধুদের নিয়ে বাসায় উপস্থিত হয়। আর মেনসনের ভেতরে যে ড্রিংকস করার জন্য বার আছে সেটা শিমু জানতই না। সবাই সেখানে হাই ভলিউমে গান ছেড়ে নাচতে শুরু করে। আবির এসে শিমুকে বললো,
— “আমাদেরকে ড্রিংকস সার্ভ করবে তুমি। আর তার সাথে আমার বন্ধুদের আবদারও পুরণ হয়ে যাবে।”
— “কি আবদার আপনার বন্ধুদের?”
— “ওরা তোমাকে দেখতে চায়। একটু সময় কাটাতে চায়। মজা করতে চায়। ব্যাস এতটুকুই।”
মুহুর্তেই পুরো শরীরের বিদ্যুৎ খেলে গেলো শিমুর। পুরো শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেলো। শিমু কাপা কাপা স্বরে বললো,
— “আপনি যা বলছেন ভেবে বলছেন? মানে আমি এতোগুলো পুরুষের সামনে যাবো? তারা আমার দিকে কিভাবে তাকাবে আপনি বুঝতে পারছেন?”
— “এতো বুঝার কিছু নেই। তুমি এই শাড়িটা পরে নিচে আসো।”
শিমুর হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে আবির চলে গেলো। শিমু ঝাপসা চোখে প্যাকেট খুলে ব্লাউজ হাতে নিয়ে ঢুকরে কেঁদে দিলো। ব্লাউজটা স্লিভলেস। গলাটা অনেকটা বড়। ব্লাউজের পেছনে দুইটা ফিতা। শিমু ছুড়ে ফেলে দিলো এসব। দেয়ালের সাথে ঘেষে দাঁড়িয়ে মেঝেতে বসে পরে। বারবার চোখ মুছে যাচ্ছে আর বারবার চোখ ভরে আসছে। এতো বাজে অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে এটা তার জানাই ছিলো না। শিমু মনে মনে ঠিক করে নেয় সে যাবে না নিচে। যত যাই হয়ে যাক আজ সে নিচে যাবে না। ভাবতে ভাবতেই আবির চলে এলো। আবির ওকে এখনো একই ভাবে দেখে রেগে গেলো। শিমুর গাল চেপে ধরে বললো,
— “এখনো এভাবে বসে আছিস কেনো? তোকে আমি রেডি হতে বললাম না? আর কাপড় ছুড়ে ফেলে দিয়েছিস কেনো?”
— “আমি এসব কাপড় জীবনেও পড়িনি। আর এসব কাপড় আমি পড়বোও না। যেই কাপড় পড়লে দেহ নগ্ন থাকে সেই ব্যাক্তি জাহান্নামে যাবে। আমি কিছুতেই এসব পড়বো না।”
— “ওকে এটা না পড়লে নাইটি পড়ে নিচে আয়।”
শিমু দাঁড়িয়ে আবিরের কলার ধরে বললো,
— “আমাকে খুন করলেও আমি এসব কাপড় পরবো না। বুঝতে পেরেছেন আপনি? স্বামী স্ত্রীর রক্ষক হয়। আর আপনি তো আমার ভক্ষক হয়ে গেছেন। কেনো এমন করছেন? কি এমন অন্যায় করেছি আমি যার জন্য আপনি আমার সাথে এমন করেন? বলুন।”
— “ওকে তাহলে এভাবেই চল।”
শিমুকে কিছু বলতে না দিয়ে আবির টেনে নিচে নিয়ে আসে। বারে এনে শিমুর হাতে ড্রিংকস এর ট্রে ধরিয়ে দেয়। শিমুর মাথায় কাপড় নেই। ওড়নাটা গলায় ঝুলে গেছে। লজ্জায়, জড়তায় শিমুর মরে যেতে ইচ্ছে করছে। আবিরের সাথে শিমুকে দেখে ওর বন্ধুরা গান বন্ধ করে দেয়। সবাই চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে শিমুকে। শিমুর উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে দেখছে। একজন বললো,
— “ভাবি তো অনেক সুন্দর। মন ভরে গেলো।”
আরেকজন মিনমিনে গলায় বললো,
— “তুলতুলে একদম। একটু ধরে দেখতে মন চাইছে।”
কথাটা শিমুর কানে এসে পৌছেছে। শিমুর চোখ থেকে পানি ফোটায় ফোটায় গড়িয়ে পড়ছে। সবাই টিটকারি করছে। আবির বললো,
— “ইনজয় কর।”
লালসায় সবার মুখে পানি চলে এলো। শিমুর হাতের ট্রে থেকে মদের গ্লাস তুলে নিচ্ছে আর তাকে বিভিন্ন কমেন্ট করছে। শিমু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ কেউ এসে গা ঘেষে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আবির একটু অন্যদিকে ঘুরতেই একজন শিমুকে টেনে কোণায় নিয়ে যায়। শিমু বার বার হাত ছুটাতে চাইছে কিন্তু পারছে না। কোমড় চেপে ধরে কাছে নিয়ে আসলে শিমুর ধৈর্য্যের বাধ ভেঙে যায়। ঠাটিয়ে চড় মারে তাকে। তারপর সেখান থেকে দৌড়ে চলে আসে। উপস্থিত সবাই হতভম্ব হয়ে যায়। শিমু রুমে এসে বালিশে মুখ গুজে কাঁদতে শুরু করে। সবাই চলে যায়। আবিরের রাগ যা আছে সব এসে উপচে পরে শিমুর উপর। প্রথমে গায়ে হাত তুলেছে শেষে বেডে ছুড়ে মেরে সেই প্রথম রাতের মতো নির্যাতন করে। শিমু সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারায়।
চলবে,,,
® নাহার।