Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"সাদা মেঘের আকাশসাদা মেঘের আকাশ পর্ব-১২+১৩

সাদা মেঘের আকাশ পর্ব-১২+১৩

#সাদা_মেঘের_আকাশ
(১২)
লেখক: হানিফ আহমেদ

চৌধুরী পরিবারে একজনের পর একজন যখন খু’ন হয়ে যাচ্ছিল, তখন আড়ালে একজনের অন্তর পু’ড়ছিলো। তিনি কান্না করছিলেন আড়ালে। প্রিয়জনের একের পর এক লা’শ দেখে শুধুই চোখে আসা জল মুছেন। চৌধুরী পরিবারের কাউকে জড়িয়ে ধরে কান্না করলে হয়তো উনার ভালো লাগতো। কিন্তু তিনি তা পারেন না।
চৌধুরী পরিবারের সবাই তাকে দেখে। কিন্তু তাকে তারা জড়িয়ে ধরতে পারে না সবার সামনে। সে তখন শুধুই একজন সাধারণ মানুষ।
তিনি চাইলেও পারেন না প্রিয়জনের লা’শ একবার স্পর্শ করতে। এমন না যে, তাকে চৌধুরী পরিবারের আশেপাশের বাসার মানুষগুলো চিনেনা। তাকে অনেকেই চিনে। কিন্তু শহরের বাসা বলে কথা। কতো মানুষ এসে থেকে যায়, কিছু চিহ্ন রেখে যায়। আবার নতুন আসে, আবার চলে যায়। এভাবেই একের পর এক পরিবারকে নিজের বুকে রাখে শহরের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা ইট পাথরের বাসা গুলো।
তিনি পত্রিকায় আরো এক প্রিয় মানুষের মৃ’ত্যুর খবর পড়ে পাথরের মতো শক্ত হয়ে বসে আছেন। কে করছে একের পর এক খু’ন?
তিনি অনুভব করলেন,
হাত গুলো কাঁপছে। মৃ’ত্যুর খবর পড়ে পড়ে নিজেকে একটুও সামলিয়ে রাখতে পারছেন না। ইচ্ছে করছে কোনো ভাবে প্রতিশোধ নেওয়ার। কিন্তু কে করছে এসব তিনি জানেন না।
হাত থেকে পত্রিকাটি রেখে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। চৌধুরী বাড়ি যাবেন, ১ঘন্টা লাগবে পৌঁছাতে। আরো একটি প্রিয় মানুষের লা’শ দেখতে যাচ্ছেন তিনি।
চুপিচুপি বাসা থেকে বের হয়ে রওনা দিয়েছেন। কেউ দেখে ফেললে সমস্যা। তাই একপ্রকার লুকিয়েই বাসা থেকে বের হলেন।
উনার মনের মধ্যে কিছুটা ভয় কাজ করছে। কারণ উনার শত্রুর অভাব নাই, চৌধুরী পরিবারের প্রতিটা শত্রুই উনার শত্রু। রিকশায় বসে নীল আকাশের দিকে তাকালেন তিনি। নীল আকাশটা ঢেকে রেখেছে সাদা মেঘ। সাদা মেঘের ফাঁকে ফাঁকে নীল আকাশ দেখা যাচ্ছে। এ যেন সাদা মেঘের আকাশ। এমন আকাশ দেখে উনার অতীত মনে পরল। কোনো পরিবারকে বলেছিলেন তিনি, তোদের বংশের যে-ই বেঁচে থাকুক না কেন। ওরা হবে নীল আকাশের সাদা মেঘ। আকাশে ভেসে যাওয়া ছাড়া কোনো কাজ নাই সাদা মেঘের। এসব বলেই ভয়ংকর হ’ত্যাকাণ্ডে মেতে উঠেছিলেন তিনি সহ নিজের পরিবারের সাথে।
আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন, আজ তাদের উপর কেউ এমন হ’ত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে।
এই চৌধুরী পরিবারের ভয়ংকর রূপ এর কথা কী মানুষ ভুলে গিয়েছে? নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলেন।
তিনি রিকশা থেকে গাড়িতে উঠলেন, তখনও মনটা খুব খা’রাপ উনার। একটি শক্তিশালী পরিবারের মানুষদের কেউ খু’ন করে যাচ্ছে, কিন্তু আজ চৌধুরী পরিবার চুপ৷ বিষয়টা সত্যিই উনাকে কাঁদায়। একটি শাস্তি প্রয়োজন, কিন্তু তিনি একা কীভাবে দিবেন।
আজ বসবেন, যেভাবে বসতেন অতীতে। সবাই এক সাথে বসা মানে ছিলো একটি পরিবারের সমাপ্তি। আজ না হয় আবার বসবেন সবাই। এভাবে চুপ থাকলে কী সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
তিনি গাড়ি থেকে নেমে হেটেই চৌধুরী বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাসা থেকে লুকিয়ে আসার কারণে নিজের বাইকটি নিয়ে আসেন নি।
দুই মিনিট হাটলেই চৌধুরী বাড়ির নিজস্ব রাস্তা। তাই হাটছেন, ভিতরে উনার জন্য আরো এক প্রিয় ভাইয়ের লা’শ অপেক্ষা করছে। মাহাব চৌধুরী উনার থেকে ৭বছরের ছোট। কিন্তু আজ সেই ভাইটি পৃথিবীতে নেই আজ।

মাহাব চৌধুরীকে এভাবে পাবে কেউই এমন কল্পনা করেনি। কারণ এই মানুষটি ছিলো বুদ্ধির দিক দিয়ে খুবই পারদর্শী। খুব রাগী হলেও মানুষটি ঠান্ডা মাথায় কাজ করতেন। আজ সেই মানুষটিকেও খু’ন হতে হলো।
অ’ত্যাচারেরও একদিন শেষ আছে। সেটা আজ সত্যিই মনে হচ্ছে সবার কাছে। যেই পরিবার একের পর এক খু’ন করত, মানুষের উপর অ’ত্যাচার করত। আজ তাদের উপর কেউ এসব চালাচ্ছে। এটাই দুনিয়ার নিয়ম।
মাহাব চৌধুরীকে তার মৃ’ত্যুর একদিন পর মাটি দেওয়া হয়। এবার চৌধুরী পরিবার গর্জে উঠার চেষ্টা করল। খু’নি সুযোগ বুঝেই কাউকে না কাউকে মে’রে যাচ্ছে। এভাবে চলতে দেওয়া যাবে না।
চৌধুরী পরিবারের কেউই আজ সেই মানুষটিকে দেখতে পায়নি। কিন্তু এটা কী সম্ভব? সে কী খবর পায়নি মাহাবের খু’ন হয়েছে। সবাই একে অন্যকে জিজ্ঞেস করছে, কিন্তু সবাই না শব্দতেই ছিল।
জালাল চৌধুরী চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে বললেন, হয়তো সমস্যায় পরেছে। তাই আসতে পারেনি। আগের সবার বেলায় তো ও এসেছে।
কেউ কোনো কথা বলল না।
ও কী আমার কথা জানে? আমাকেও যে খু’ন করার চেষ্টা করা হয়েছে, সেটা কী ও জানে?
মাশুক চৌধুরী বললেন,
হ্যাঁ আমি ফোন দিয়ে বলেছিলাম। বলেছে আসবে, কিন্তু আসেনি।
জালাল চৌধুরী চিন্তিত হয়ে বললেন,
হয়তো সময় পাচ্ছে না।

নাওশিন চুপচাপ বসে আছে। মাঝেমধ্যে আতিকার দিকে তাকাচ্ছে। উনি চুপচাপ বসে আছেন। নাওশিনের কথা বলতে ইচ্ছে করছে। নাওশিন বলল,
আপা চুল টেনে দিবো?
আতিকা হেসে সম্মতি দিলেন।
নাওশিন খুব যত্নে চুলগুলো টানতে থাকে। নাওশিন প্রশ্ন করল,
আপা ভাইয়াদের কী খবর?
আতিকা শুধু বললেন, ভালো।
নাওশিন কিছু বলল না।
আতিকা এখনও জানেন না চাচাতো ভাই মাহাবের খু’ন এর কথা। জানেন না নিজের ভাই জালাল চৌধুরীর একটি হাত শরীর থেকে আলাদা করে দিয়েছে সেই খু’নী। জানলে হয়তো মন খা’রাপ করতেন। আবার নাও করতে পারতেন। স্বামীর খু’নিদের কষ্টে আবার কীসের কষ্ট।
আপা একটা কথা বলব?
বল।
আমাকে একটি কথা বলবে!
কী?
আপনি যে এই বাসায় থাকেন, এই কথা আপনার পরিবার জানে?
আতিকা একটি শব্দই বললেন,
না।
আপা আপনার ছেলের কোনো খোঁজ পাননি আর?
না পাইনি। রাগ করে কেউ চলে গেলে তার খবর কী এতো সহজে পাওয়া যায়?
নাওশিন চুপ থাকে। একটু পর আবারও প্রশ্ন করে নাওশিন,
আপা আপনার ছেলের জন্য অপেক্ষা করেন কী?
আতিকা বেগম দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বললেন,
প্রতিটা মুহূর্ত অপেক্ষা করি। অপেক্ষা, এক দীর্ঘ অপেক্ষা৷ কখন আসবে ছেলেটা, এসে আম্মু বলে ডেকে জড়িয়ে ধরবে। অপেক্ষা করি, আমি জীবিত থাকা অবস্থায় তাকে একটি নজর দেখে যেতে। আমি তার গর্ভধারিণী মা। কৃষক সোনালী ধান কা’টার জন্য যতোটা আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে, তার থেকে কয়েক গুণ বেশি অপেক্ষা করি আমার ছেলের জন্য। কোকিলের ডাক শোনার জন্য যেমন মানুষ অপেক্ষা করে, কখন বসন্ত আসবে আর কোকিল ডাকবে।
আমিও অপেক্ষা করি আমার পা’গল ছেলেটাকে একটিবার দেখতে, আর সেই অপেক্ষাটা খুব বেশি কষ্ট দেয়।
অগ্রহায়ণ, বৈশাখ মাসে কৃষক ধান কা’টে। বসন্তে কোকিল ডাকে। তাদের অপেক্ষা শেষ হয়। কিন্তু আমার অপেক্ষা শেষ হয় না। প্রতিটা সকাল অপেক্ষা করি, এই বুঝি আসলো ছেলেটা। আমার অপেক্ষে দুই চোখ যতক্ষণ খোলা থাকে, ততক্ষণ।
অপেক্ষা যে করে সে জানে অপেক্ষা কতো কাঁদায়, অপেক্ষা কতো স্বপ্ন দেখায়। অপেক্ষা এনে দেয় নীরবতা। সঙ্গী করে একাকিত্ব। শুধুই অপেক্ষা।

নাওশিনের চোখজোড়া ভিজে যায় আতিকার কথা শুনে। কেউ নিজের সন্তানের জন্য অপেক্ষা করে চোখের জলে গাল ভেজায়। আর কেউ সন্তানের কষ্টে হাসে। দুজনই মা। কিন্তু কতোটা পার্থক্য।
আম্মা কী আমার জন্য অপেক্ষা করেন?
নাওশিন মনে মনে প্রশ্ন করল নিজেকে। হয়তো না।
আতিকা বললেন,
তুই কাঁদছিস কেন?
নাওশিন চুপ থাকলো।
কাঁদিস না। সুখ একদিন আসবে। মাত্রই তো ১৬বছরের এক ছোট্ট মেয়ে। জীবনটা তো মাত্র শুরু তোর।
নাওশিন কিছু বলল না। চুপচাপ বসে আছে সে। একটু চিৎকার করে কাঁদতে পারলে তার ভালো লাগতো।

চোখজোড়া খোলে নিজেকে একটি অচেনা জায়গায় আবিষ্কার করেন তিনি।
কিন্তু তিনি তো চৌধুরী বাড়ির রাস্তায় হাটছিলেন। তাহলে এই অচেনা জায়গায় কীভাবে আসলেন তিনি?
মনে করার চেষ্টা করলেন, কিন্তু মনে করতে পারছেন না।
নিজের হাত পা বাঁধা অবস্থায় দেখে খুব ভয় পেয়ে যান তিনি। তাহলে কী তার সাথেও কিছু ঘটতে যাচ্ছে।
সামনে তাকালেন, তার সামনে পিছন ফিরে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। প্রশ্ন করার চেষ্টা করতে চেয়ে নিজের মুখটি বাঁধা দেখলেন। মনের মধ্যে একটু বেশিই ভয় করছে।
এসেছিলেন নিজের প্রিয় মানুষের লা’শ দেখতে। কিন্তু হয়েছেন বন্দী।
হ্যাঁ এবার উনার মনে পড়েছে। চৌধুরী বাড়ির নিজস্ব রাস্তায় যখন প্রবেশ করবেন তখন কেউ তার নাকে কিছু চেপে ধরে।
তিনি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু খুব শক্ত করে বাঁধা।
তাহলে কী তাকেও কেউ খু’ন করবে? কিন্তু তিনি তো চৌধুরী বাড়ি থাকেন না। চৌধুরী বাড়ি থেকে অনেক বছর হলো তিনি আলাদা। তাহলে?
কিছু ভাবতে পারছেন না। কী হবে, কি করবেন এসব ভেবে ভয়ে গলা শুকিয়েছে উনার। চিৎকার কিংবা পালানো কোনোটাই করার সুযোগ নাই। সব রাস্তা বন্ধ।
সময়টা আন্দাজ করার চেষ্টা করছেন। দূর কোথাও থেকে আজানের শব্দ কানে আসে। আছরের সময় এখন। তিনি বুঝতে পারছেন না, কী হবে এখন।
আজ সবাইকে নিয়ে বসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই বসা আর হলো কই, তিনি এখন দাঁড়িয়ে আছেন মৃ’ত্যুর মুখে। হয়তো খা’রাপ কিছুই ঘটবে।

সামনে থাকা মানুষটি উনার দিকে ঘুরে দাঁড়ায়।
মুখোশ পরা মানুষটিকে দেখে বুঝতে পারছেন না কে। কিন্তু চোখজোড়া দেখে মনে হলো তিনি এই চোখজোড়া চিনেন। খুব ভালো ভাবে চিনেন। কিন্তু সঠিক মনে করতে পারছেন না, এই চেনা চোখজোড়ার মানুষটির চেহারা। কে হতে পারে?
এবার মুখোশ পরা ব্যক্তিটি কথা বলল। এর পূর্বের খু’নগুলোতে কোনো কথা বলেনি সে। তবে এবার কথা বলল সে।
তোমার মৃ’ত্যুটা হবে ভীষণ কষ্টের।
মুখোশ পরা ব্যক্তির কণ্ঠ একজন মহিলার। তিনি এবার চুপসে যান। এই কণ্ঠ তো তিনি চিনেন। এবার চেহারাটি চোখের সামনে ভেসে উঠলো। কোনো ভাবেই বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি। কীভাবে সম্ভব? প্রশ্নটি মনের মধ্যেই থেকে যাচ্ছে। মুখে আর নিয়ে আসতে পারছেন না।
মুখোশ পরা মানুষটি আবারও বলে উঠলো,
শরীরের একটি অঙ্গ কা’টবো, আর একটু একটু করে মুখের মুখোশ খুলবো
কথাটি শুনে তিনি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন। ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছেন, মহিলাটি কী বলল৷ তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না, কোনো ভাবেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। এমন কেউ হবে, সামনের মানুষটি।
মুখোশ পরা মহিলাটি উনার ডান হাতের একটি আঙুল কা’টে আর তাচ্ছিল্য করে বলে উঠে,
উফফ, কী ব্যথা।
তিনি ব্যথায় চিৎকার করার চেষ্টা করছেন। মনে হচ্ছে ভিতর থেকে জান পাখি বের হয়ে যাচ্ছে।
মহিলাটি এক এক করে বাকি চারটা আঙুল কা’টে।
আহা কষ্ট, আহা ব্যথা। শরীরে ভিতর জীবন্ত আত্মা রেখে শরীর থেকে প্রতিটা অঙ্গ আলাদা করার অনুভূতি জানতে চাইলে আমি বলব, আমার ভীষণ ভালো লাগে। আর তোমাকে তো খুব ভালোবেসে প্রতিটা অঙ্গ আলাদা করব, এই যে হাতের চা’কু এতোটা ধারালো না। একটি অঙ্গ আলাদা করতে আমার কতো শক্তি খরচ করতে হবে।
মহিলাটি কথা বলে কেমন এক বিশ্রী হাসি দেয়। তবে উনি দেখতে পারলেন মহিলাটির চোখ ভেজা।
নিজের মৃ’ত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখতে পারছেন তিনি। আজ এই ব্যথা কোনো ব্যথা না। সামনে থাকা মানুষটি তাকে আঘাত করছে। এই ব্যথার কাছে সব ব্যথা আজ তুচ্ছ।
মহিলা এবার চা’কু দিয়ে হাতের উপর থেকে টেনে কবজি পর্যন্ত নিয়ে আসে। এর পর আবার একই কাজ করে। সাথে নিয়ে আসা লেবুর রস ঢেলে দেয় এই গভীর ক্ষ’ত জায়গায়।
তিনি এবার সহ্য করতে পারলেন না। এই বুঝি ভিতর থেকে জানপাখি বের হয়ে যাবে।
মহিলা আবারও বলল,
কষ্ট হচ্ছে বুঝি? অনুভব হয় আজ কষ্ট?
কথাগুলো বলে বাম হাতের পাঁচ আঙুল আলাদা করে, এবং হাতের উপরের মাং’সের ভিতর দিয়ে চা’কু ঢুকিয়ে অন্য পাশ দিয়ে বের করে। এবার হাতের দুটি গর্তে লাল মরিচে মাখানো দুইটি মোরগ এর পা ঢুকিয়ে দেয়।
মৃ’ত্যু যন্ত্রণা হচ্ছে? ম’রে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে?
মহিলাটি তাচ্ছিল্য করে প্রশ্নগুলো করে।
কানের দুই লতি কা’টতে বেশি সময় নেয় সে। একটু কাটছে তো একটু তাকাচ্ছে। মানুষটি কষ্টে কাতরাচ্ছেন।
কানের লতির মধ্যে হালকা গরম পানি লাগিয়ে দিলো এবার সে।
সে হাসছে। কষ্ট দেখে হাসছে।
এমন এমন জায়গা ক্ষ’তবিক্ষত করছে সে, যেন তাড়াতাড়ি মৃ’ত্যু না হয়।
দুই পায়ে পাঁচ পাঁচ করে দশবার চা’কু ঢুকায়। সেই জায়গা গুলোতে লবণ ছিটিয়ে দেয়।
কষ্ট, ফেটে যাচ্ছে বুক।
হেসেই বলল সে।
এবার দুই পায়ের আঙুল থেকে চার আঙুল উপরে চা’কু
দিয়ে শরীর থেকে আলাদা করে।
সে এসবে এক অজানা সুখ পাচ্ছে।
একটু একটু করে একবারে মুখোশ খুলে ফেলে।
তিনি শুধু তাকিয়ে আছেন। হ্যাঁ সত্যিই দেখছেন। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। কীভাবে সম্ভব। কখনো কল্পনা করেন নি তিনি এসব।
মহিলা এবার বিশ্রী হাসি দিয়ে মুখের বাঁধন খুলে জিহ্বা কা’টতে চাইতেই তিনি চিৎকার দিয়ে উঠলেন।
কয়েকবার চিৎকার দেওয়ার পর বুঝতে পারলেন কেউ আসছে।
সে এবার তাড়াহুড়ো করে গলায় চা’কু চালিয়ে দেয়, কিন্তু চাকু এতোটা ধারালো না। সে নিজেই এমন চা’কু নিয়ে এসেছে।
দেরি হয়ে যাবে তাই চা’কু এবার বুকে বসাতে চাইলেন। কিন্তু সেটি যেয়ে লাগে বুকের উপরে ডান হাতে পাশে।
চা’কু সহ সব কিছু নিয়ে সে পালিয়ে যায়।
কয়েক মিনিট এর মধ্যেই কয়েকজন মানুষ আসে।
একটি মানুষকে এভাবে দেখে ওরা ভয় পেয়ে যায়। মাটিতে পড়ে মানুষটি কাতরাচ্ছে। হয়তো জীবনটা শেষ হয়ে যাবে।
মানুষদের মধ্যে একজন উনাকে নেওয়ার জন্য গাড়িকে ফোন করে। হসপিটাল নিতে হবে।
ভীড় হয়, ভীড়ের মধ্যে মাশুক চৌধুরী ছিলেন।
তিনি চিনতে পেরে চিৎকার দিয়ে উঠলেন,
তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়ে আসো।
উনাকে গাড়িতে উঠানো হয়।

চৌধুরী বাড়ি থেকে ৩কিলোমিটার দূরে এই ঘটনাটি ঘটে। মাশুক চৌধুরী বের হয়েছিলেন নিজের আপন ভাই মাহাবের কবর দেখতে। কিন্তু হঠাৎ উনার মনে হয় তাকে যদি কেউ হ’ত্যা করতে চায়। তাই ভাইয়ের কবরের দিকে না যেয়ে বাড়ির দিকে হাটতে শুরু করেন। কিন্তু আবার মনে হলো না তিনি যাবেন কবরে। তাই যাচ্ছিলেন।
চৌধুরী পরিবারের কবরস্থান নিজেদের বাড়ি থেকে ২কিলোমিটার দূর। একটু বেশিই দূর।
ভাইয়ের কবর দেখে বাড়ি আসার পথেই মানুষকে দৌড়াতে দেখে তিনিও তাদের পিছন পিছন দৌড়ান। এক পর্যায়ে দেখতে পান এমন দৃশ্য যা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না।

২ব্যাগ র’ক্ত দেওয়া হয় উনাকে। চৌধুরী পরিবারের অনেকেই আছেন হসপিটালে।
রাত ১টায় উনার জ্ঞান ফিরে। তবে ডক্টর বলেছে উনি কোনো ভাবেই কথা বা কিছুই করতে পারবেন না। যেকোনো সময় মৃ’ত্যু হতে পারে।
জালাল চৌধুরী জোর করে কেভিনে যান। উনার একটি কথাই যদি সে নাই-বা বাঁচে তাহলে আমাদের দেখা করতে দিন।
রাত ৩টার দিকে উনি চোখ মেলে তাকান, কাছে নিজের আপন বড় ভাই জালাল চৌধুরীকে দেখতে পেয়ে শুধুই চোখের পানি ছাড়তে শুরু করলেন।
সমস্ত শরীর ব্যান্ডেজ করা।
জালাল চৌধুরী কান্না মাখা কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন,

আনিছুর ভাই আমার, কে করেছে তোকে এই অবস্থা?

আনিছুর রহমান এবার চুপ। শতো চেষ্টা করে কোনো কথা বলতে পারছেন না। জালাল চৌধুরী বারবার জিজ্ঞেস করছেন।
আনিছুর রহমান এর গলায় চা’কু চালানোর কারণে কথা বলতে পারছেন না।
অনেকবার জিজ্ঞেস করার পর আনিছুর রহমান খুব কষ্টে বললেন,

আমার স্ত্রী, সব কয়টা খু’ন সে করেছে।

মুখ দিয়ে মুহূর্তেই র’ক্ত বের হওয়া শুরু হয়। একটু পূর্বে মাত্র র’ক্ত দেওয়া হয়েছিল।
জালাল চৌধুরী তাড়াতাড়ি ডক্টর নিয়ে আসেন।
ভিতরে আনিছুর রহমানকে ডক্টর বাঁচানোর চেষ্টা করছে। রেগেমেগে বলছে আর কাজ করছে। কে বলছে এমন রোগীকে কথা বলাতে। হয়তো বেঁচে যেতো। কিন্তু এখন হয়তো আর সম্ভব না।
জালাল চৌধুরী সবার সামনে বসে আছেন। খু’নি কে জানতে পেরে সবাই শুধু অবাক হয়েছে। এতো অবাক হয়তো এর পূর্বে আর হয়নি ওরা।
কখনো কল্পনা করেনি কেউ এই কথা।

চলবে,,,

#সাদা_মেঘের_আকাশ
(১৩)
লেখক: হানিফ আহমেদ

আনিছুর রহমান, তিনি চৌধুরী পরিবারের সন্তান। নাম আনিছুর চৌধুরী। মুহিত চৌধুরীর আদরের ছোট ছেলে। আনিছুর চৌধুরী ছিলেন একজন হিং’স্র ব্যক্তি। উনি উনার বাবা, চাচা, ভাইদের মতোই অহংকারী ব্যক্তি। অ’ত্যচার করা যেন চৌধুরী পরিবারের নেশা হয়ে উঠেছিল। সাধারণ মানুষের জমি, বাড়ি, বাড়ির বড় বড় গাছ থেকে শুরু করে সব কিছুই ছিনিয়ে নিতে দুই বার ভাবতো না।
এই অ’ত্যাচারীদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো ভাবেই প্রতিবাদ করলেই তার শেষ পরিণতি হতো মৃ’ত্যু। তাই তো সাধারণ মানুষ নীরবে সহ্য করে যেতো। কখনো কখনো কেউ কেউ সহ্য না করতে পেরে প্রতিবাদ করত, তারপর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যেতো না।
চৌধুরী পরিবার যেন ছিলো ভূমি খেকো।

আশেপাশের মানুষগুলোর জমি ছিনিয়ে নিতে নিতে চৌধুরী পরিবার জোর করে ফারুক আহমেদ (আদিব এর বড় চাচা) এর জমি দখল করে নেয়৷ চৌধুরী পরিবারের এই অ’ত্যাচার শুধু দেখে যাচ্ছিলে ফারুক আহমেদ সহ উনার পরিবার। কিন্তু যখন ওরা নিজেদের জমি দখল করে জোর করে, তখনই প্রতিবাদ শুরু হয়। থানায় মামলা হয়। চৌধুরী পরিবার এর কিছুই হয়নি সেই মামলায়। একটানা ৪বছর মামলা চলার পর যখন ফারুক আহমেদ নিজেদের জমি ফিরে পাচ্ছিলেন। তখন সালটা ছিলো ১৯৯৩ সাল।
গভীর রাতে চৌধুরী পরিবারের ১৫জন হা’মলা চালায় ফারুক আহমেদের বাড়িতে। প্রথম ভয় দেখায় যেন এই জায়গা ছেড়ে দেয়। মুহিত চৌধুরী ফারুক আহমেদকে মৃ’ত্যুর ভয় দেখিয়ে জায়গা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি।
রাত গভীর হয়। চৌধুরী পরিবার ভয় দেখিয়ে যাচ্ছে, মা’রার হুমকি দিচ্ছে।

ফারুক আহমেদের বড় ছেলে শফিকুল আহমেদ হঠাৎ গর্জে উঠে। তার বয়স সবে মাত্র চব্বিশ শেষ হয়ে ২৫ হয়েছিল। ফারুক আহমেদের বংশের বড় ছেলে ছিলো সে।
পরিবারের উপর এতো অ’ত্যাচার দেখে কোনো ভাবেই সহ্য করতে পারেনি সে। তাই তো গর্জে উঠে।
তোমরা কী আমাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবে? নাকি লা’শ হয়ে বের হতে চাও?
শফিকুল এর রাগী কণ্ঠে বলা কথা শুনে মুহিত চৌধুরী বলে উঠেছিলেন,
এতো সাহস, আমাদের হুমকি দিচ্ছিস।
শুরু হয়ে যায় হাতাহাতি। চৌধুরী পরিবারের সবার কাছে অ’স্ত্র ছিলো। ফারুকের বিশাল পরিবার অ’স্ত্র ছাড়া কীভাবে এই অ’ত্যাচারের মোকাবিলা করবে, সেটা তারা জানতো না। তবুও লড়ে যাচ্ছিল। ফারুক আহমেদ এবং উনার তিন ভাই আর বড় চার ভাতিজা যাদের মধ্যে শফিকুল ছাড়া তিনজনের বয়স ছিলো ১৬থেকে ২২এর ভিতর।
এই ৮জন এবং খালেদ আহমেদ খালি হাতে লড়তে শুরু করে অ’স্ত্র ভরা হাতের সাথে।
চৌধুরী পরিবারের হাতে প্রথম খু’ন হয় শফিকুল। এই দৃশ্য কেউ মেনে নিতে পারেনি। একের পর একজনকে যখন খু’ন করতে শুরু করে ওরা। তখন ফারুক আহমেদ চিৎকার করে বলতে থাকেন, তার বংশের একজনকেও হলে যেন খালেদ বাঁচিয়ে নেয়। খালেদও আহত ছিলো। খুব কষ্টে আদিবকে নিয়ে তিনি পালিয়ে যান। কীভাবে পালিয়েছিলেন, সেটা তিনি তখন জানেন না।
চৌধুরী পরিবার নিজেদের জীবনের সব থেকে ভয়ানক হ’ত্যাকাণ্ড চালায়। একটি পরিবারের কাউকেই বাঁচিয়ে রাখেনি। পরিবারের সব নারীকে হ’ত্যা করতেও তাদের হাত একটুও কাঁপেনি সেদিন।
খালেদ আহমেদ আদিবকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কারণে, তার প্রতি একটি আক্রোশ সৃষ্টি হয় চৌধুরী পরিবারের। তাকে সেই রাতে আর খুঁজে পায় নি তারা।

এমন হ’ত্যাকাণ্ড দেখে সবাই চোখের পানি ফেলেছে সকালের আলো ফোটার পর। কিন্তু গভীর রাতে এতো এতো চিৎকার, আহাজারি এই মানুষগুলোর কানে পৌঁছায় নি। কতো আকুতির চিৎকার, কিন্তু সেদিন সবাই চুপ ছিলো। কিন্তু সকালে ওরাই চোখের পানি মুছতে ব্যস্ত। একটি পরিবারের মৃ’ত্যু। বেঁচে আছে ৭জন শিশু বয়সী ছেলে। এই দৃশ্য খুবই কষ্টের ছিলো সেদিন।
চৌধুরী পরিবার যখন জানতে পারে ফারুক আহমেদের পরিবারের ৭ছেলে সন্তান বেঁচে আছে। তখন যেন তাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। কীভাবে সম্ভব?

২০০১ যখন চৌধুরী পরিবারের দুইজনের ফাঁ’সি হয়। তখন তারা আবারও জ্বলে উঠে। খালেদ আহমেদকে মা’রারা জন্য উঠেপড়ে লাগে৷ কিন্তু খালেদ আহমেদ কয়দিন পর পর বাসা পরিবর্তন করতে শুরু করেন। আদিব সহ সবাইকে তিনি খুব যত্নে বড় করতে শুরু করেন।
কিন্তু চৌধুরী পরিবার খালেদ আহমেদকে যেভাবেই হোক এই পৃথিবী থেকে বিদায় করবে। তাই তারা বসে, তাদের বসা মানেই কিছু ধ্বংসের কথাবার্তা চলা।
সবাই এটাই ঠিক করে, খালেদ আহমেদের বড় বোনকে হাত করতে হবে। কিন্তু সাজেদা বেগম বিবাহিত।
দিন যেতে থাকে। আনিছুর চৌধুরীকে বের করে দেয় ওরা বাড়ি থেকে। যেভাবেই হোক সাজেদাকে যেন সে বিয়ে করে।
নাওশিনের ৯বছর বয়সে তার বাবা আলতাফ হোসেন মা’রা যান। হঠাৎ তিনি ঘুমের মধ্যে মা’রা যান।
সাজেদা বেগম ৮মাসের মাথায় বিয়ে করেন আনিছুর রহমান নামের কাউকে। সাজেদা জানতেন না, আনিছুর রহমান কে। পাশের বাসায় ভাড়াটিয়া হয়ে আনিছুর থাকতেন। তিনি সফল হয়েছিলেন। সাজেদাকে নিজের ভালোবাসার ফাঁদে ফেলতে পেরেছিলেন তিনি।
আলতাফ হোসেন এর মৃ’ত্যু স্বাভাবিক ছিলো না।
গভীর রাতে সাজেদার সামনে খুব যত্ন নিয়ে খু’ন করা হয় আলতাফ হোসেনকে। আর সেই খু’ন করেছে আনিছুর চৌধুরী। সাজেদা এতোটা অন্ধ হয়েছিলেন, লোভে পরেছিলে। এতো বছরের ভালোবাসার মানুষটিকে মৃ’ত্যুর মুখে ছেড়ে দিলেন মাত্র ৫মাসের একটি অবৈধ প্রেমের সম্পর্কে।
সকালে বলা হয়, মৃত্যুটা হার্ট অ্যাটাক। ডক্টরকে বড় অংকের টাকা দিয়েছিলেন আনিছুর চৌধুরী।

খালেদ আহমেদকে খু’ন করার জন্য প্রথম খু’ন করতে হলো খালেদ আহমেদের বড় বোনের স্বামীকে।
সাজেদা চৌধুরী পরিবারের ঘৃণা ভরা কাজের কথা জানতেন। কিন্তু চৌধুরী পরিবারের কাউকে চিনতেন না।
সাজেদা যেদিন বিয়ে করেন আনিছুর চৌধুরীকে। সেদিন খালেদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল। কোনো ভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।
সাজেদাকে বারবার বলার পরেও সে লোভের সাগড়েই ভাসতে থাকে।
সেও হয়ে উঠে আনিছুর চৌধুরীর মতো খা’রাপ মানুষ।
আনিছুর রহমান আস্তে আস্তে বোনের বাসায় যাওয়া ছেড়ে দিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, তাকে খু’ন করার একটি ফাঁদ মাত্র তার বোন।

সাজেদা বেগম যখন নিজের স্বামীর অপেক্ষা করছিলেন। যতো সময় যাচ্ছিল, ততোই যেন অপেক্ষা দিগুণ হচ্ছিল।
দরজায় শব্দ হয়।
সাজেদা দরজা খুলে পুলিশ এর লোকদের আবিষ্কার করলেন। অন্তর কেঁপে উঠে উনার, পুলিশ কেন?
অফিসার হামিদুর রহমান বললেন,
আপনাকে আমার সাথে থানায় যেতে হবে।
সাজেদা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
কেন? আমার স্বামীর খোঁজ পেয়েছেন?
হামিদুর রহমান রেগে বললেন,
স্বামীকে খু’ন করার চেষ্টা চালিয়ে ভালো সাজা হচ্ছে। উনাকে সাথে নিয়ে চলো।
একজন মহিলা পুলিশকে বললে।
সাজেদা অবাক হলেন, কেঁদে দিলেন।
কী বলছেন এসব? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
জেলে যাওয়ার পর সব বুঝবে।
সাজেদা বেগমকে গাড়িতে তোলা হয়। তিনি কান্না করে যাচ্ছেন।
হামিদুর রহমান এর ফোন বেজে ওঠে। কারো সাথে কথা বললেন। তারপর সাজেদার দিকে তাকিয়ে বললেন,
আপনার স্বামী আনিছুর চৌধুরীর মৃত্যু হয়েছে।
সাজেদা চিৎকার দিয়ে উঠলেন, বিশ্বাস করিনা বলে হাউমাউ করে কান্না শুরু করেন।

বায়েজিদ, একা বাসায় বসে আছে। যাকে সে মা বলে ডাকতো, তাকে পুলিশ ধরে নিয়েছে। বাবা আনিছুর চৌধুরীর খু’ন করার চেষ্টায়।
ছোট্ট বায়েজিদ মুচকি হেসে যাচ্ছে একা একা বাসায় বসে।
কারণ সে সাজেদার ছেলে না। আনিছুর তাকে রাস্তা থেকে নিয়ে এসে বলছিল এই ছেলেকে রাস্তায় পেয়েছি। আমরা ওরে লালন পালন করব।
কিন্তু সাজেদা সে কথাই বিশ্বাস করেছেন। বায়েজিদকে আদর করতেন, কিন্তু নিজের মেয়েকে করতেন অবহেলা।
বায়েজিদকে আদর করলে আনিছুর চৌধুরী খুব খুশি হতেন।

জালাল চৌদুরীর কথায় পুলিশ অফিসার হামিদুর রহমান সাজেদাকে ধরেন।
চৌধুরী পরিবার এর মনের মধ্যে প্রশ্ন জমেছে, যা পুলিশকে জানায় নি তারা।
আনিছুর চৌধুরী শুধু বলেছেন, আমার স্ত্রী। কিন্তু কোন স্ত্রী সেটা বলেন নি।
আর চৌধুরী পরিবার কোনো ভাবেই মানতে চায় না, আনিছুর চৌধুরীর দ্বিতীয় স্ত্রী সাজেদা এসব খু’ন করেছে। এইসব করেছে আনিছুর এর প্রথম স্ত্রী আমিনা বেগম। এই কথাই তারা জোর দিয়ে বিশ্বাস করে যাচ্ছে। এতো খা’রাপ ভাবে প্রতিশোধ নেওয়ার মানুষটি আমিনাই হবে। আর এই আমিনা হলো আনিছুর চৌধুরীর প্রথম স্ত্রী।
সবার মনে কতো মানুষের নামই মনে হয়েছে। কিন্তু আমিনার নামটি একবারের জন্যেও মনের মধ্যে আসেনি কারো। চৌধুরী পরিবারের সবার সন্দেহের খাতায় এতো এতো মানুষের নাম ছিলো যে, মধ্য দিয়ে আমিনার নামটি ভুলেই গিয়েছিল ওরা।
জালাল চৌধুরীর চোখে তো তাই সেদিন ওই মহিলার চোখজোড়া এতো পরিচিত লেগেছিল। উনার বিশ্বাস এইসব আমিনা করেছে।

আমিনা ছিলেন আনিছুর রহমানের প্রথম স্ত্রী৷ যাকে তালাক দিয়েছিলেন শুধু সাজেদাকে বিয়ে করার জন্য। আনিছুর চৌধুরী এবং আমিনা বেগমের দুই সন্তান ছিলো। যার মধ্যে বড় সন্তান বায়েজিদ, যাকে রাস্তায় পেয়েছে বলে সাজেদার বাসায় লালন পালন করাচ্ছিল। উনার মনে একটি কথাই ছিলো, যে বায়েজিদ হবে সাজেদার মৃ’ত স্বামীর সম্পত্তির মালিক। কারণ নাওশিনকে যেন কোনো কিছু না দেওয়া হয়, সেই দিকেও চিন্তা করে নাওশিনকে দিয়ে খা’রাপ ব্যবসা শুরু করার চিন্তা করেছিলেন। বায়েজিদকে খুব বুঝিয়ে এই বাসায় এনেছিলেন আনিছুর চৌধুরী। ছেলে বাবার কথায় সাজেদাকে কিছুই বলেনি। একদিকে নতুন মা পেয়ে সেও খুশি ছিলো।
কোনো পিচ্চিকে যদি কিছু বলে বলা হয়, এই কথা আর কাউকে বলবে না কিন্তু। তখন দেখা যায় সত্যিই তারা কাউকে কিছুই বলে না। কারণ বাচ্চাকে যা শিখাবেন তাই শিখবে বাচ্চা। একটি বাচ্চাকে পানির স্রোত এর সাথে তুলনা করলে খুব একটা ভুল হবে না। পানির স্রোতের সামনে যেই দিকে রাস্তা করে দিবেন সেই দিকেই পানি প্রবাহিত হবে। তেমনি বাচ্চাকে ছোটবেলায় যা শিখাবেন, সে তাই শিখবে। এবং সেই পথেই চলবে।
বায়েজিদ চৌধুরী, সে ১৩বছরের হলেও বাবার মতোই কিছুটা স্বভাব তার। তবে সেই স্বভাব হলো ভালো। অন্যায়ের প্রতিবাদ করা। তাইতো নাওশিনকে নিজের বড় বোনের মতোই শ্রদ্ধা করত। এবং পালাতে সাহায্য করে।
আর আনিছুর চৌধুরীর দ্বিতীয় সন্তান মালিহা চৌধুরী। যাকে দুই বছর বয়সেই মায়ের সাথে দিয়েছিলেন তিনি।
আমিনা বেগম মালিহাকে নিয়েই চৌধুরী বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন।

আমিনা বেগম, যার কোনো দোষ ছিলো না। আনিছুর যতোই খা’রাপ হোক না কেন, তিনি তাকে খুব ভালোবাসতেন। কারণ এই মানুষটি তার স্বামী ছিলো।
মাঝেমধ্যে বুঝাতেন এভাবে খা’রাপ কাজ করে কেন মানুষকে কষ্ট দিচ্ছো বলো তো।
এভাবেই মাঝেমধ্যে শাসন করতেন। উনি বিশ্বাস করতেন, কাউকে ভালোবাসলে তাকে শাসন করার সব ধরণের অধিকার থাকে, সেই অধিকার থেকেই শাসন করতেন। আনিছুর কিছুই বলতেন না।
যখন ফারুক আহমেদ এর পরিবারকে হ’ত্যা করা হয়। তবুও জমি পান নি৷ জমি যখন পান নি, তখন চৌধুরী পরিবারের চোখ যায় ফারুক আহমেদের পরিবারের অঢেল সম্পত্তির উপর। কিন্তু খালেদ আহমেদ বাঁচিয়ে রেখেছিলেন সেই পরিবারের সাত সন্তানকে।
তারপর যখন ২০০১ সালে চৌধুরী পরিবারের দুইজনের ফাঁ’সি হয়। তার পর থেকে চৌধুরী পরিবার গর্জে উঠে। খালেদ আহমেদ সহ সবাইকে খু’ন করার জন্য উঠেপড়ে লাগে৷ কিন্তু খালেদ আহমেদ খুব সতর্কে থাকতেন।
তাই তারা টার্গেট করেছিল খালেদ আহমেদের বড় বোন সাজেদাকে।
কিন্তু কে বিয়ে করবে সাজেদা কে? আর কে পারবে সাজেদার সংসার ভাঙতে?
এসব প্রশ্ন যখন সবার মন ছুঁয়ে যাচ্ছিল। তখন মুকিত চৌধুরী বলে উঠেছিলেন, একমাত্র আনিছুর পারবে এই কাজ করতে।
সবাই তখন আনিছুরকে জোর করে। উনিও রাজি হয়ে যান।
আমিনা তখনও উনার স্ত্রী। কিন্তু সাজেদাকে যখন তিনি নিজের কথার মধ্যে নিয়ে আসতে পারলেন। তখন চৌধুরী পরিবার থেকে নির্দেশ আসে তিনি যেন সাজেদাকে বিয়ে করেন।
সবাই আবারও বসেছে।
আমিনা কোনো ভাবেই রাজি না। যাকে ভালোবাসেন, তাকে কোনো ভাবেই দ্বিতীয় বিয়ে করতে দিবেন না। একজন মেয়ে হয়ে পারবেন না, আরো একটি মেয়ের সংসার ভাঙা দেখতে।
তিনি কোনো ভাবেই কল্পনা করেন নি ৭বছরের বিবাহিত জীবন তিন কথায় ভেঙে যাবে। আনিছুর তাকে তালাক দিয়ে দেন। সেই মুহূর্তের জন্য তিনি কোনো ভাবেই প্রস্তুত ছিলেন না।
এক এক করে সবার পায়ে পর্যন্ত ধরেছিলেন আমিনা। এক পর্যায়ে রাজিও হয়েছিলেন, তিনি শুধু আনিছুর এর স্ত্রী হয়ে এই বাড়িতেই থাকতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু আনিছুর তার চাচা এবং সব ভাইদের কথায় আমিনাকে তালাক দিয়েছিলেন।
আমিনা নিজের সংসার টিকিয়ে রাখতে পারেন নি। নিজের কোনো ভুল তিনি খুঁজে পাননি। সেদিন চিৎকার করে কান্না করেছিলেন। একটি মেয়ে কিংবা ছেলে বুঝে একটি সংসার ভেঙে যাওয়ার কষ্ট, যেখানে এক পাক্ষিক ভাবে সংসার ভাঙে।
আমিনাকে সেই রাতেই বিদায় করা হয়, সঙ্গে দেওয়া হয় মালিহাকে। গভীর রাতে কান্না করে করে বাবার বাড়ি গিয়েছিলেন সেদিন তিনি।
বায়েজিদ কান্না করছিল, কিন্তু কোনো ভাবেই তাকে সাথে নিয়ে আসতে পারেন নি তিনি। বায়েজিদ এর বয়স তখন ছয় ছুঁই ছুঁই।
আমিনা সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, শুধু প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য যদি তাকে তালাক দিতে পারে, তাহলে তিনিও নিজের সংসার ভেঙে যাওয়ার প্রতিশোধ নিবেন। এক এক করে চৌধুরী পরিবারের সবকেই শেষ করবেন তিনি।

আনিছুর চৌধুরীকে মাটি দেওয়ার পর চৌধুরী পরিবারের কয়েকজন যান আমিনার বাড়ি। কিন্তু সেখানে তালা ঝুলানো পায় তারা।
সবাই ভেবেছিল, তারাই খু’ন করবে আমিনাকে। কিন্তু কোথাও খুঁজে আমিনাকে পাওয়া যায় নি।
জালাল চৌধুরী সবার সাথে পরামর্শ করে পুলিশকে বলে দিলেন আমিনার কথা।
সব শুনে হামিদুর রহমান যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছেন। একটি পরিবারে এতো রহস্য? তিনি মনে মনে ভেবে নিয়েছেন, সাজেদা খু’নি৷ এখন শুনলেন আরো একটি নাম। তাই এবার তিনি ঠিক করলেন আমিনাকে গ্রেফতার করার পর চৌধুরী পরিবারের সবাইকে গ্রেফতার করবেন। ওদের শাস্তি তো প্রথম প্রয়োজন।
এইজন্যই তো সাজেদাকে এতো খা’রাপ ভাবে টর্চার করার পরেও সে বলে আসছিল সে নির্দোষ।
জালাল চৌধুরী আমিনা বেগমের কয়েকটি ছবি দিয়েছেন অফিসারের কাছে। আর সেই ছবি আনিছুর চৌধুরী এবং আমিনার বিয়ের। এই ছবি গুলো দেখেই যেন আমিনাকে ধরতে পারে পুলিশ।
সাজেদা খুব অবাক হয়েছেন। তার দ্বিতীয় স্বামী আনিছুর চৌধুরী বিবাহিত ছিলেন। তিনি ছিলেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী।
কতোটা বোকা তিনি বুঝতে পারছেন এখন। এবার তিনিও মুখ খুলবেন। শুধু সময়ের অপেক্ষা।

চলবে,,,

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ