সাদা মেঘের আকাশ পর্ব-০৬

0
784

#সাদা_মেঘের_আকাশ
(৬)
লেখক: হানিফ আহমেদ

রাত ১টা, নাওশিন গাড়িতে বসে আছে। তার সাথে আদিব এবং জাহেদ আছে। নাওশিন আজ খুব মন খা’রাপ করেছে। মনের আকাশে মেঘ জমেছে।
কেন তাকে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কোথায় নিয়ে রাখবে তাকে।
ভাইয়া আমি কেন আপনাদের বাসায় নিরাপদ না?
নাওশিন নিজেকে চুপ করে রাখতে পারেনি, তাই তো মনে আসা প্রশ্নটি করে ফেলে।
আদিব বলল,
কারণ কাল সকালে হয়তো পুলিশ আসবে।
পুলিশ আসবে কেন?
নাওশিন অবাক হয়েই প্রশ্নটি করে।
শহরে মানিক চৌধুরী নামে একজন খু’ন হয়েছে। আর এই মানিক হলো আমাদের পরিবারের খু’নীদের মধ্যে একজন। কেউ তাকে খুব বাজে ভাবে মে’রেছে। আমাদের সন্দেহ, এই মানিককে মা’রা হয়েছে আমাদের ফাঁসাতে। এটা আমাদের আন্দাজ মাত্র। তাই পুলিশ যেকোনো সময় আসতে পারে। এইদিকে তোমার মা পুলিশকে তোমার ছবি দিয়ে বলছে তুমি তোমার মামার পরিবারকে খু’ন করেছো। পুলিশ তোমায় খুঁজে বেড়াচ্ছে। তাই আমরা বাধ্য হয়েই তোমায় নিরাপদ কোথাও নিয়ে যাচ্ছি।
নাওশিন ছোট্ট করে একটি প্রশ্ন করে শুধু।
ভাইয়া সেই নিরাপদ জায়গা কোথায়?
আদিব এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে গাড়ি চালাতে মন দেয়।
নাওশিন আর প্রশ্ন করল না। তার পাশে জাহেদ বসে আছে। নাওশিন চোখজোড়া বন্ধ করল, ভাবনায় ডুব দেওয়ার চেষ্টা করে।
নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে নাওশিন, এই ১৬বছর বয়সের জীবনে আনন্দের দিন গুলো কী তার ফিরবে কখনো? নাকি তার মৃ’ত বাবার মতো আনন্দেরও মৃ’ত্যু
হয়েছে।

নিয়াজ রুমে বসে আছে। কিছু ভাবছে সে, তার ভাবনায় আজকাল অনেক কিছুই আসে। বেশি ভাবার কারণে সে কেমন রাগী আর গম্ভীর হয়ে গিয়েছে।
একটু পূর্বেই সবাই মিলে নাওশিনকে বিদায় দিলো। নিয়াজ স্পষ্ট ভাবেই দেখতে পেয়েছেলি তখন নাওশিনের চোখে পানি ছিলো।
নিয়াজ আজ নাওশিনকে নিয়ে ভাবছে। মেয়েটা তো নিরাপদ জায়গায় ছিলো। কিন্তু ভাগ্য আবার তার সহায় হলো না। সে হয়তো এই বাসাকেই নিজের বাসস্থান ভাবতে শুরু করেছিল। কিন্তু কিছু ভাবনা, কথা, সময়, দিন যে শুরুতেই শেষ হয়ে যায়। তা হয়তো সে ভুলে গিয়েছিল।
নিয়াজ নিজের রুমে পায়চারি করছে। গভীর রাত৷ আজ তার মনটা খুব ভালো। প্রিয় মানুষগুলোকে যারা কেড়ে নিয়েছিল, তাদের মধ্য থেকে আজ একজন দুনিয়া ত্যাগ করেছে৷ এখনো বেঁচে আছে ওদের বিশাল দল।
কিন্তু নিয়াজ আবার একটি প্রশ্নে এসে থেমে যায়। এই মানিককে কে মে’রেছে?
সে তো মাত্র মনে প্রতিশোধ এর আগুন জ্বালিয়েছিল। বের হয়েছিল কিছু একটা করবে। কিন্তু সে তো পুলিশ অফিসার হামিদুর রহমানের সাথে দীর্ঘ ৪০মিনিট কথা বলে। হামিদুর রহমানকে সেই ১৯৯৩ সালের সেই ভয়ানক ঘটনাটি বলে। সে দেখেছে, সব শুনে পুলিশ অফিসারের চোখ ভিজেছে।
নিয়াজ বারবার বলেছে, স্যার আপনি অন্তত আমাদের বাঁচান। শান্তিতে বেঁচে থাকার পথ দেখিয়ে দেন। ওদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করুন। স্যার, যারা আমাদের থেকে আমাদের বাবা মা কে কেড়ে নিয়েছে, আপনি তাদের গ্রেফতার করুন। শাস্তি দিয়ে প্রমাণ করুন এই দেশটা খুব সুন্দর৷
স্যার আমাদের বাবা মায়ের পর আমাদের মাথার উপর যে আকাশটি ছিলো, সেটাও ওরা ভেঙে দিয়েছে। আমরা তো সব সহ্য করে বসেই ছিলাম। মন টা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য খুব ক্লান্ত হয়ে যেত, তবুও আমরা আজ পর্যন্ত দেশের আইনের দিকেই তাকিয়ে আছি। আমার বাবা মায়ের চেহারা আমার মনে নাই স্যার। সেই কালরাত্রির সময় আমি ৩বছরের ছিলাম। ছবিতে নিজের মা বাবা বোনকে দেখেছি। ভাইয়ের মুখে শুনেছি, আপু ছাড়া কিছুই বুঝতাম না। কিন্তু সেই আপুর চেহারা আমার মনে নাই। ছবিতে দেখি আমার আপু মিষ্টি হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমায় কোলে নিয়ে।
যেই মানুষটিকে বাবা ডেকে তৃষ্ণা মেটাতাম, ওরা সেই মানুষটিকেও কেড়ে নিলো। কিন্তু ফাঁসিয়ে দিলো ছোট্ট নাওশিন নামের মেয়েটিকে।
এরকম অনেক কথাই সে আজ পুলিশ অফিসার হামিদুর রহমানের সাথে বলেছে। মানুষটিকে তার খুব ভালো লেগেছে। এর পূর্বের পুলিশ অফিসার ছিলো অসৎ, তাইতো খু’নি গুলো মুক্ত আকাশের নিচে ঘুরে বেড়াচ্ছে আরামে।

নাওশিনকে নিয়ে গন্তব্যে পৌছে ওরা। নাওশিন গাড়ি থেকে নেমে দেখল একতলা বিশিষ্ট একটি বাসা। চার দিকে দেয়াল ফেরানো। অন্ধকার রাত, তবুও জায়গাটা কতো আলোকিত।
বাসার ভিতর থেকে কেউ দরজা খুলে বের হয়। অর্ধ বয়স্ক মহিলা। আদিব এবং জাহেদ মহিলাটিকে সালাম দিয়ে নাওশিনকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে।
নাওশিন ভেবেছিল তাকে হয়তো একা কোথাও ছেড়ে দিবে ওরা। কিন্তু তার মাথায় আসে নি, ওরা কী ভাবে কোথাও তাকে একা ছেড়ে দিবে। ওরাও তো মানুষ। আর ওরা তো তাকে বাঁচাতে চায়।
আপা আমরা তাহলে আসি। ফজরের পূর্বে আমাদের যেতে হবে৷
মহিলাটি কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলল,
চুপচাপ খাবার টেবিলে বস। খাবার নিয়ে সেই কখন থেকে বসে আছি আমি।
আদিব আর জাহেদ কোনো কথা না বলেই খাবার টেবিলে বসে যায়। মহিলাটি নাওশিনের দিকে তাকিয়ে বলল,
খাবার টেবিলে যাও।
নাওশিন অবাক হয়ে তাকায়। এতো রাতে শেষ কবে খেয়েছে তার সেটাই মনে নেই।
আমার খিদে নেই।
মহিলাটি আদিবের দিকে তাকিয়ে বলল,
আদিব ওরে আমার কথা কিছু বলিস নি?
আদিব মাথা নাড়িয়ে না বলে।
মহিলাটি এবার হেসে বলল,
যাও বোন খেতে বস৷ নয়তো আমি নিজ হাতে খাইয়ে দিবো। আর আমি যাকে নিজ হাতে খাইয়ে দেই, তাকে তিন প্লেট ভাত খেতেই হবে।
এমন কথা শুনে নাওশিন মহিলাটির দিকে অবাক হয়ে তাকায় অল্প কিছুক্ষণ। তারপর চুপচাপ খাবার টেবিলে যায়, আর আদিব আর জাহেদের পাশে বসে।
আদিব আর জাহেদ নাওশিনের এমন অবস্থা দেখে মনে মনে হাসলো।
সবাই অল্প অল্প করে কিছু খায়৷ নাওশিনের খেতে ইচ্ছেই করছিল না। কিন্তু না খেয়েও কোনো উপায় ছিলো না।
আদিব আর জাহেদ নাওশিনকে আসি বলে নিজেদের বাসার পথে রওনা দেয়। নাওশিন ওদের যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে রইল। এই পথ ধরেই সে আজ নতুন জায়গায় এসেছে। তার নিজ বাড়ি বলতে কিছুই নেই। মাঝেমধ্যে মনে হয় তার। বিশাল আকাশটি মাথার উপর থাকার পরেও, তার পৃথিবীতে কোনো আকাশ নাই।

মহিলাটি এবার নাওশিনকে তার পিছু পিছু আসতে বলল।
আমার নাম হল আতিকা বেগম। এখন আমার নামটাই জানো। পরে না হয় আস্তে আস্তে আমায় চিনবে। তবে আমি তোমায় ভালোভাবে চিনি।
নাওশিন হয়তো কিছু বলতে চেয়েছিল। কিন্তু উনি আবারও বলে উঠলেন,
সকালে কথা হবে। এখন ঘুমাও।
উনি এই বলে রুমের লাইট অফ করে চলে যান। নাওশিন দাঁড়িয়ে আছে। উনি একাই কথা বলে গিয়েছেন শুধু, তাকে কিছুই বলতে দিলেন না।
নাওশিন আস্তে আস্তে বলল,
আল্লাহ এখানে অন্তত কোনো রহস্য রেখো না। আমি একটু ভালো থাকতে চাই।

সকালের আকাশে সূর্য উঠেছে। সবার চেনা সূর্যটি প্রতিটা সকালেই নতুন ভাবে উঠে, আবার সন্ধ্যের পূর্বে ডুবে যায়।
একটি দিনের মতো যে আরো একটি দিন আসবে তা ভাবা সত্যিই বোকামি।
আদিব সহ সবাই অপেক্ষা করেছে সারাটা সকাল। না পুলিশ আসে নি। কিন্তু পুলিশের তো আসার কথা। এক এক করে সবাই নিজেদের কাজে চলে যায়। কিন্তু পুলিশ আসে নি৷ বাসায় এখন শুধু নিয়াজ একাই আছে। সেই এক মাত্র বেকার। পড়ালেখায় আছে এখনো, কিন্তু বর্তমানে তার কোনো পড়া নাই। ভার্সিটিতে আ’ন্দোলন চলছে। ভার্সিটিতে কোন স্যারকে জানি কয়েকজন ছাত্র মিলে অপমান করেছে। এসব নিয়েই ভেজাল চলছে। তাই সে বাসাতে নিজের ভাতিজা এবং ভাতিজীদের সাথে সময়টা কাটায়।

বাসার দরজায় কেউ শব্দ করে। বেশ কিছুক্ষণ শব্দ করার পর জাহেদের স্ত্রী মিনা দরজা খুলে দেয়। দরজায় পুলিশ দেখে একটুও অবাক হয় নি সে। কারণ তার স্বামী সহ সবাই তো সকাল থেকে পুলিশের অপেক্ষা করছিল। তাই সে একটুও অবাক হয় নি। স্বাভাবিক ভাবেই ওদের ভিতরে আসার প্রস্তাব করে সে।
পুলিশ অফিসার হামিদুর রহমান ভিতরে প্রবেশ করে শুধু বললেন,
ঘরের পুরুষদের ডেকে আনুন।
মিনা নিয়াজকে নিয়ে আসে৷ বর্তমানে পুরুষ মানুষ বলতে একমাত্র নিয়াজই আছে।
নিয়াজ এসে সালাম দেয় ওদের। সেও তো মনে মনে অপেক্ষায় ছিলো তাদের।
বাকিরা কোথায়?
পুকিশ অফিসার হামিদুর রহমান এর প্রশ্নের উত্তরে নিয়াজ বলল,
স্যার ভাইয়ারা তো চাকরি করেন, তারা তাদের ডিউটিতে৷ আর সাইফ ভার্সিটিতে।
তিনি বললেন,
বর্তমানে বাসায় যে কয়জন সদস্য আছেন। সবাইকে ডেকে আনুন।
সবাই এসে উপস্থিত হয়।
আপনারা জানেন মানিক চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি খু’ন হয়েছে।
নিয়াজ সবার হয়ে উত্তর দেয়,
হ্যাঁ পত্রিকায় দেখেছি।
মানিক চৌধুরীকে চিনেন?
অফিসারের প্রশ্নে নিয়াজ আবারও বলল,
হ্যাঁ, আমাদের পরিবারের খু’নিদের মধ্যে এই মানিকও একজন।
হামিদুর রহমান নিয়াজকে চিনেন। একটু সময় চুপ থেকে বললেন,
মানিক চৌধুরীর আপন জনেরা আপনাদের আসামী করে মামলা করেছে।
নিয়াজ স্বাভাবিক ভাবেই বলল,
স্যার আমি আপনাকে কাল সব বলেছি। বাসায় আসার পর আমি শুনেছি মানিকের খু’ন হওয়ার কথা। কালকের আমার বক্তব্য শুনেও কী মনে হয় আমরা কিছু করতে পারি?
অফিসার হামিদুর রহমান চুপ থাকেন নিয়াজের প্রশ্নে। উনার সাথে আরো চারজন পুলিশের লোক আছে। নিয়াজের সাথে উনার কথা হয়েছে উনারই বাসায়। তখন তিনি ছিলেন একজন সাধারণ মানুষ। কিন্তু এখন তিনি একজন পুলিশ অফিসার। পুলিশের পোশাক তার শরীরে। তিনি বললেন,
ওরা থানায় মামলা করেছে। মানিককে আপনারা মে’রেছেন।
নিয়াজ যেন এখন কোনো নতুন অফিসারকে দেখতে পাচ্ছে।
স্যার ওরা আমাদের ফাঁসাতে চাচ্ছে।
হামিদুর রহমান শুধু বললেন,

আপনি আমাদের সাথে থানায় চলুন।

থানায় যাওয়ার কথা শুনে নিয়াজ খুব অবাক হয়। থানায় যাওয়া মানে তাকে গ্রেফতার করার কথাই বলছেন অফিসার।
নিয়াজ কোনো কথা বলার পূর্বে আরো একজন মুখ খুলল,

ও থানায় যাবে না। ও কেন থানায় যাবে? কেউ মিথ্যে মামলা দিলো আর আপনারাও তদন্ত না করে চলে আসলেন গ্রেফতার করতে। সত্যতা যাচাই করুন, তারপর আসুন।

মিনহা প্রতিবাদী সুরে কথাগুলো বলে থামে। অফিসার মিনহার দিকে তাকান। তিনি শান্ত গলায় বললেন,

এটি আমাদের ডিউটি।

মিনহা হাসলো। আর বলল,
এখন আপনাদের ডিউটির কথা বলছেন। যেদিন এই পরিবারের ১৭জন মানুষকে এক সাথে খু’ন করা হয় তখন কোথায় ছিলেন আপনারা? কোথায় ছিলো আপনাদের ডিউটি? আজ আসছেন মিথ্যে মামলায় এখানে ডিউটি দেখাতে।

একজন পুলিশের লোক বলে উঠলেন,
আপনি এভাবে আমাদের সাথে কথা বলার কারণে আপনাকে এখনই এই মুহূর্তে গ্রেফতার করতে পারি। সেটা জানেন?
মিনহা এবার রাগী চেহারায় কঠিন গলায় সেই পুলিশের দিকে তাকিয়ে বলল,
হ্যাঁ আপনাদের আইন তো তাদের জন্যই। যারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করলে আপনারা কঠিন আইন দেখাবেন, তাহলে অন্যায় করা মানুষদের বেলায় আপনাদের এতো সহজ আইন কেন?
পুলিশ এর লোকটি চুপ। হামিদুর রহমান কিছু বলতে চাইলেও মিনহা আবারও বলে উঠল,
ওরা মামলা করেছে, আপনারাও চলে আসছেন। কিন্তু সেইদিন তো ওদের সবার উপর মামলা করা হয়েছিল। কী করেছিলেন আপনারা তখন? গিয়েছিলেন তাদের বাড়ি? এতো নিয়ম দেখিয়েছিলেন তাদের সেদিন? সেদিন তো আপনাদেরই এক পুলিশ অফিসার টাকা খেয়ে ওদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নিতে রাজিই হচ্ছিল না। বলছিল ডা’কাতের হ’ত্যাকাণ্ড বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিল। সেদিন কোথায় ছিলো এতো নিয়ম?

হামিদুর রহমান চুপ করে শুনলেন মিনহার কথা। হামিদুর রহমান মনে মনে হাসলেন। আর বললেন, মেয়েটা ভালোই প্রতিবাদী।
তিনি বললেন,
ওরা মামলা করেছে, যাদের উপর মামলা তাদের গ্রেফতার করা দ্বায়িত্ব আমাদের কর্তব্য।
মিনহা চিৎকার করে বলল, যারা মামলা করেছে তাদের উপর তো ১৯৯৩ সালে মামলা করা আছে। কই তারা তো আজো বাহিরেই আছে। যান তাদের ধরে জেলে বরুন।

পুলিশ অফিসার চুপ থাকেন। কিছুক্ষণ পর বললেন,
নিয়াজ আপনি আমাদের সাথে চলুন।
কথাটি খুব শান্ত গলাতেই বলেন তিনি। কিন্তু নিয়াজ চুপ।
হামিদুর রহমান হঠাৎ অন্য সুরে কথা বললেন।
নিয়াজ আমরা চলে যাচ্ছি। আপনি ২টার ভিতর থানায় আসুন। সাথে আপনাদের ভাইদেরকে নিয়ে।
কথাটি বলে মুচকি হেসে বিদায় নেন তিনি পুলিশের সবাইকে নিয়ে।
নিয়াজ বুঝতে পেরেছে এই হাসির মানে তাকে পালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া।
সেও পালাবে৷ বড় ভাবির দিকে তাকিয়ে নিয়াজ বলল,
ভাবি আজকের এই মুহূর্ত যদি আমার ছয়টা ভাই দেখতো, তাহলে আমার সার্থক হতো। আজ তুমি মায়ের কাজ করেছো। আমাদের মা থাকলে হয়তো এভাবেই পুকিশের সাথে তর্ক করতেন। সত্যিই ভাবি তুমি আজ মায়ের জায়গায় দাঁড়িয়ে কথা গুলো বললে। বুঝিয়ে দিলে তুমি বাসার বড় বউ। আমি জানি আমার প্রতিটা ভাবিই প্রতিবাদী। আজ আমি মুগ্ধ হয়েছি ভাবি।
মিনহা শুধু মুচকি হাসলো। আর বলল,
নিয়াজ এখনই তোমাকে পালাতে হবে।
নিয়াজ অবাক হয়,
কেন ভাবি?
তোমার ভাগ্য ভালো ওরা তোমাকে পালানোর একটি সুযোগ দিয়েছে। তুমি কোথাও চলে যাও। আর নিজেকে লুকিয়ে রাখো। আমরা তোমার ভাইয়াদের বলে দিচ্ছি ওরা যেন কোথাও চলে যায়। নয়তো অকারণে জেলে পঁচতে হবে।
নিয়াজকে কোনো কথা না বলতে দিয়েই তিনি নিজের রুমে চলে যান।
নিয়াজ বলে উঠল,
ভাবি তোমাদের এভাবে রেখে আমি কোথাও যাবো না।
রবিনের স্ত্রী তামান্না যে ২মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সে বলে উঠল,
ভাই তুমি এখনই পালাও। আমাদের নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমরা পাঁচবোন আছি। ইনশা আল্লাহ ভালো থাকবো।
নিয়াজ কিছু বলল না। সে সাহস পেয়ে গিয়েছে। যেখানে একজন গর্ভবতী নারী সাহস দিতে পারে, সেখানে তার আর কী বলার আছে।
প্রতিজন তাদের স্বামীকে ঘটে যাওয়া সব কিছু ফোন করে বললেন৷ নিয়াজ সাইফকে ফোন দিয়ে সব বলে, কোনো বন্ধুর বাসায় যেন চলে যায় সেটাও বলে।
এক কালো মেঘের ছায়া যেন তাদের গিলে খাচ্ছে।
ওরা কী থামবে না?
সুখে থাকা তো কবেই কেড়ে নিয়েছিল। একটু একটু সুখ খুঁজে পাচ্ছিল। কিন্তু আজ তাদের বাসা ছাড়া করল।
কী জন্যে এমন নোং’রা খেলা শুরু করেছে এরা?

সন্ধ্যা হয়েছে। আলোর রাজত্ব শেষে অন্ধকার এর রাজত্ব শুরু হয়।
মানিক চৌধুরীর বড় ছেলে শান্ত চৌধুরীর একটি পা ইতি মধ্যে কেটে ফেলেছে মুখোশ পরা মানুষটি।
মুখ বাঁধা শান্তের। বাঁচার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। শরীর থেকে আরো এক পা এবং দুই হাত আলাদা করে বুককে ক্ষ’তবিক্ষত করে দেয়। শান্ত তার নিশ্বাস নেওয়ার পূর্বে সামনের মানুষটি নিজের মুখোশ খুলে।
শান্ত চোখ বড় বড় করে দুনিয়া ত্যাগ করে। কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে তাকে কে খু’ন করছে, মুখোশ খুলে খু’নি নিজেই তাকে দেখায়৷ তার এখন শুধু র’ক্তের পিপাসা।

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে