সাঝের বাতি পর্ব-০৮

0
930

#সাঝের_বাতি
#Sajid_Hasan
#পর্ব_৮

হঠাৎ কেনো চলে গেলেন উনি?এমন কিছুই তো ঘটেনি যারদরুন উনি আমাকে না বলে চলে যাবেন।চাচীকেও কিছু বলেনি!ফোনটাও উপরে রেখে এসেছি।
এখানে থাকার একবিন্দু ইচ্ছে নেই।না!চাচীকে একবার বলি কথাটা,

-চাচী আমি বাড়ি যাবো!

চাচী সোফায় বসে টিভিতে মগ্ন।কথার কোনো উওর নেই।আবার জিজ্ঞেস করলাম,

-চাচীইইইইই…..

আমার দিকে ফিরে তাকাতেই আবার বললাম,

-আমি বাসায় যাবো চাচী!

চাচী টিভিটা বন্ধ করলেন।সোফা থেকে উঠে আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন,

-এইতো এলি আর এখনি চলে যাবি।না!তোমার কোথাও যাওয়া হচ্ছে না।

-একটু বোঝো চাচী…

-চুপ!কি বুঝবো?কেনো রে!আমরা তোর পর হয়ে গেছি তাইনা।সেদিনের পর তুই আমাদেরও ঘৃনা করিস আর তাই তুই চলে যেতে চাইছিস।

-তুমি আমায় ভুল বুঝছো!আমি তোমাদের আগের মতনই ভালোবাসি।আর….

-তাহলে তো হয়েই গেলো।অন্তত একটা রাত তুই থাক!কাল বিকেলে না হয় চলে যাস!

-আমি…

-আর কোনো কথা নয়।যাও গিয়ে বিশ্রাম নাও!

আর কি বলবো।চাচী ঠিকিই ইমোশনাল ব্লাকমেল করেলো আমায়!
কোনো কথা না বলে চুপচুপ রুমে আসলাম।কেমন ভয় ভয় আর অসস্তি অসস্তি লাগছে।আকাশবাবুর কথা মনে পরতেই ফোন হাতে নিয়ে কল দিলাম।উনি রিসিভ করলেন,

-আপনি এভাবে কেনো চলে গেলেন?আর আমাকেও তো কিছু বললেন না!কেনো চলে গেলেন আপনি?

-কিছু বলবে??

-না আসলে…

-তাহলে রাখছি!

কেটে দিলেন ফোন!আশ্চর্য,আমার সাথে কি হলো উনার?আমিতো কিছু বলিনি।এরকম ভাবে কেনো কথা বললেন উনি?উনার আর সিয়াম ভাইয়ার মধ্যে যেসব ঘটলো এসবের জন্য উনি কি আমায় দোষারোপ করছেন?
কিন্তু উনি তো তখন আমায় বললেন যে এতে আমার কোনো দোষ নেই,তাহলে??
বিছানায় গিয়ে বসলাম।কিছুই ভালো লাগছে না।

________🌸

সবেমাত্র নিচ থেকে ডিনার করে ঘরে আসলাম।সবাই নিচে থাকলেও সিয়াম ভাইয়া ছিলো না!তাই তারাতাড়ি যতটা তারাতাড়ি সম্ভব খেয়ে চলে এসেছি।এবাড়িতে ডিনার একটু রাত করেই হয়।তাই ঘুম পাচ্ছে।বিছানাটা ঠিক করে লাইট অফ করে সুয়ে পরলাম।

……কিছুক্ষণ পর কারো হাতে স্পর্শে চমকে উঠলাম।জানালা দিয়ে আসা স্নিগ্ধ চাঁদের আলোর স্পষ্ট সিয়াম ভাইয়ার মুখটা দেখতে পেলাম।উনি অপরাধবোধ আর করুন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।অসস্তি হচ্ছে আমার।এক ঝটকায় হাতটা ছাড়িয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললাম,

-আপনি এত রাতে এখানে কি করছেন?তখন ওভাবে অপমান করে আপনার শান্তি হয়নি?

উনি জোর করে আবারো আমার হাতটা ধরলেন।দু হাতে মুঠো করে চুমু একে দিলেন।কেপে উঠলাম!কি চাইছেন উনি?এত রাতে কেনই বা এসেছেন এখানে?উনি করুন কন্ঠে বললেন,

-আমি সব রাগের মাথায় বলেছি সিয়া।তুই রাগ করেছিস তাইনা?তোকে ওভাবে আকাশের সাথে দেখে আমি কন্ট্রোল করতে পারিনি নিজেকে।তুই আমার ওপর আর রাগ করিস না সিয়া এমনিতেই তো রেগে আছিস!

-দেখুন!আমি কারো ওপর রাগ করিনি আপনি এখান থেকে চলে যান!

-যাবো না!

মেজাজ আগুন হয়ে গেলো।তাকে থ্রেট দিলাম,

-আপনি না গেলে কিন্তু আমি চাচ্চুকে ডাকবো!

কথাটা বলেই বিছানা থেকে উঠে যেতে চাইছিলাম উনি পেছন থেকে এক টানে উনার বুকে সাথে মিশিয়ে নিলেন।
পুরো শরীর ঝাকি দিয়ে উঠলো।অল্প অল্প কম্পন হচ্ছে শরীরে সেটা টের পাচ্ছি।উনি বার বার এক হাত দিয়ে মাথায় দিয়ে টেনে আরো মিশিয়ে নিচ্ছেন।বুকের বা পাশে মনে হচ্ছে কউ করাঘাত করছে।চিনচিন ব্যাথা হচ্ছে।কি করবো কি না করবো কিছুই বুঝতে পারছি না!

-আকাশের সাথে তোকে দেখলেই মাথা দিয়ে আগুন বের হয় আমার।আর ছাঁদে তোকে ওভাবে দেখে আমি নিজেকে সামলেতে পারিনি।তাই রিয়েক্ট করেছি ওভাবে।

-ছা.ড়ুন আমায়!

-আগে বল তুই আমায় ক্ষমা করেছিস!তুই যদি ক্ষমা না করিস আজ সারারাত তোর সাথে একই ঘরে থাকবো।তখন সইবি তো?

-এ্ এসব কি আজেবাজে কথা বলছেন!আগে আমার ছাড়ে তো!

উনি কপালে অতি নরম ভাবে চুমু খেলেন।শরীরের সব লোমগুলো দাড়িয়ে গেলো।ভেতরের এই অবাধ্য শিহরণ আটকানো বড্ড মুশকিল!

-ছাড়বো না!বললাম তো?আজ আমি তোর সাথে একই বিছানায় থাকবো।আর ছাড়তেই পারি যদি তুই আমার এত্ত বড়বড় অপরাধগুলো মাফ করে দিস!

-আচ্ছা ঠিক আছে মাফ করে দিলাম!এবারতো ছাড়ুন!

-মন থেকে বলছিস তো?

-হুম!এবার ছাড়ুন সিয়াম ভাইয়া।

উনি ছেরে দিলেন!দু পা পিছিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি।উনি বললেন,

-আকাশের সাথে তোর কি সম্পর্ক সিয়া?

বারবার আকাশবাবুর কথা বলছেন উনি।কিন্তু কেনো?বিরক্ত লাগছে এবার!সত্যেটা বললাম,

-উনি আমার বান্ধবী টাপুরের কাজিন।ওই প্রথম আলাপ করিয়েছে আমাদের।আর তখন থেকে অনলাইনে একটু আধটু কথা হতো তারপর…

-তারপর??তারপর কি?

-তারপর থেকেই তাকে বন্ধু বলে সম্বোধন করি।ব্যাস এতটুকুই!

-কিন্তু ও তোকে বন্ধু মনে করে না।

-তার মানে?

-মানেটা স্পষ্ট সিয়া।দুপুরে যখন তুই আমায় প্রথম উক্তিতেই ভালোবাসি বললি।সেটা আকাশের সহ্য হয়নি।পরের কথাটুকু না শুনেই বেরিয়ে গেছে ও।কারন কি বলতো?কারন এই যে ও তোকে ভালোবাসে।

যদি সিয়াম ভাইয়ার কথা সত্যি হয়ে থাকে তাহলে…
তাই উনি ওভাবে চলে গিয়েছেন!ফোন কেটে দিয়েছেন!

-বুঝতে পারছিস আমি কি বোঝাতে চাইছি?ও তোকে শুধু বন্ধু মনে করে না!ও তোকে ভালোবাসে!

-কিন্তু উনি তো আমায় কখনোই কিছুই বলেনি!

-হয়তো বলতে পারেনি এতোদিনে!আবার এটাও হতে পারে,তোর জিবনে কেউ নেই এরকমটা ভেবেছিলো ও।পরে তোকে সবটা বলবে ভেবছে।

দুজনেই কিছুটা সময় নিস্তব্ধ।আমি আকাশবাবুর কথা ভেবে চলেছি।এ কথাগুলো সত্যি কি না।নাকি সিয়াম ভাইয়া এমনিই বলছেন?কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না!
…একটু পর বাকা হাসি ঝুকিয়ে সিয়াম ভাইয়াকে এগিয়ে আসতে দেখলাম।এদিকে আমি তার এগোনোতে পেছোচ্ছি।উল্টো দিকে হাঁটতে হাঁটতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলো।একটা শুকনো ঠোক গিললাম।উনি এখনো কিছুটা দূরে তবে এগোচ্ছেন।ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছি।কি করবেন উনি?কেনো এভাবে এগিয়ে আসছেন?কথাগুলো ভাবতেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।উনি এবার কাছে চলে এসেছেন!সারা শরীরে কেমন শিহরণ হচ্ছে।অদ্ভুত এই অনুভূতি।আমাদের মাঝে হয়তো আধ ইঞ্চি ও দূরত্ব নেই।উনি বাকা হেসে বললেন,

-তুই নামকই এক অদ্ভুত আর্কষন আছে যা আমাকে বারবার তোর কাছে টেনে আনছে।আগেও এনেছে।তবে অনেক দূরত্ব ছিলো তাতে।এ দুই বছরে যখন তুই কলেজে যেতিস আমি তোকে একবার দেখার জন্য বেড়িয়ে পরতাম।জানিনা কেনো তোকে দেখে আর কিছুই ভালো লাগতো না।কিছুই না!শুধু তোকেই দেখতে ইচ্ছে করতো!

কি বলছেন উনি?আমি সঠিক শুনছি তো?কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,

-কিন্তু কেনো?কেনো আপনাকে আমায় দেখতে ইচ্ছে করতো?আপনি তো আমায় সামান্য ও ভালোবাসেন না।তাহলে?

-জানিনা!আমি জানিনা,কেনো তোর জন্য আমি এতটা উতলা হয়ে উঠতাম।পাগল পাগল লাগতো নিজেকে।এসবের কারন আমার নিজেরও জানা নেই তবে হ্যা আমি তোকে খুব ভালোবাসি।এটুকু বুঝেছি আমি!

চোখদিয়ে ফোঁটা ফোঁটা পানি পরতে লাগলো।উনি কপালে আবারো শীতল স্পর্শ দিলেন।নাকের সাথে নাক লাগিয়ে বেড়িয়ে গেলেন রুম থেকে।আমি ধপাস করে মেঝেতে পরে গেলাম আর ভাবতে লাগলাম উনার বলা কথাগুলো।কি সব বলে গেলেন উনি?আমায় ভালোবাসে!আমায়?তার সবচেয়ে অবহেলার পাত্রীকে।

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে