সাঝের বাতি পর্ব-০৫

0
957

#সাঝের_বাতি
#Sajid_Hasan
#পর্ব_৫

হঠাৎই কেউ আমায় পেছন থেকে জড়িয়ে সোজা বিছানায় ফেলে দিলো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমায় মিশিয়ে নিলো তার বুকের সাথে।আচমকা এরকমটা হওয়ায় চোখমুখ খিচে বন্ধ করে রয়েছি।ভেতরে কেমন তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে।ইিয়াসকে হাড় মানিয়ে নিবে এই ঝড়।তার বুকের ধুপধাপ আওয়াজ দ্বীগুন গতিতে বাড়ছে।শার্টের দুটো বোতাম খোলা,উদম বুকে মাথা ঠেকানো আমার।তার গরম নিশ্বাস আঁচছে পরছে মুখে।এই শ্বাস সরাসরি হৃদয় নামক স্থানে বিধছে ।পা থেকে মাথা পর্যন্ত একটি পশম ও নড়ছে না পুরাই ফ্রিজড্ হয়ে রয়েছি।নিশ্বাস অনেকক্ষণ যাবত বন্ধ। অনেক চেষ্টা করেও শ্বাস নিতে সক্ষম হইনি।একদম নির্বাক দুটি মানুষ এক হয়ে রয়েছি।বুকটা টিপটিপ করছে।শরীরে ঘটে চলা এক অদ্ভুত অনুভূতি প্রকাশ হচ্ছে।কিন্তু আর কতক্ষণ? কে হতে পারে?বর্তমানে আমি যেখানে আছি সেখানে তো এরকম হওয়াটা কল্পনারও বাইরে।এখানে যদি কেউ গলাটা টিপে ধরতো সেটাও মেনে নিতাম।কিন্তু!না..
শক্তি যেনো হাড়িয়ে ফেলিছি।সামান্য মাথাটা তুলতেই মনে হচ্ছে সব শক্তি খাটাতে হচ্ছে।মাথাটা তুললাম, সামনে থাকা লোকটাকে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না।এটা কোনো কল্পনা নয়তো,নাকি আমি সপ্নের জগতে রয়েছি।বাকা হাসি ঝুলিয়া রাখা মুখটা আর কারো নয়,সিয়াম!হ্যা সিয়াম ভাইয়ার!এটা মানতে যে বড্ড কষ্ট হচ্ছে।তোলপাড় হওয়া ঝড়কে কাটিয়ে ফনি শুরু হয়েছে বুকে।নিজেরি অজান্তে চোখ দিয়ে নামছে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি। সিয়াম ভাইয়ার মুখটা আমি সপ্নেও আশা করি নি।হাত পা কেমন অবস হয়ে আসছে।
__কেনো আজ উনি আমায় এভাবে জড়িয়ে ধরছেন?কেনো?সেদিনের পর তো একটা বারও খোজ নেয়নি আমার।তাহলে?কোনো অধিকার নেই তার সিয়ার শরীরে হাত দেয়ার।একটাবারও উনি কখনো বলেনি “সিয়া কেমন আছিস” তাহলে আমায় উনি ঠিক কি মনে করে এভাবে বিছানায়…
আমায় কি পুতুল পেয়েছে?উনি যেভাবে নাচাবেন আমি সেভাবে নাচবো।না!আর নয়!আর এক মূহুর্ত এভাবে নয়।এক ঝটকায় দূরে ঠেলে দিলাম তাকে।এতে উনি বেশিদূর যায়নি উনি কারন,একটু বেশিই জোরে ধরেছিলেন।

-কেমন আছিস তুই?তোর মুখচোখ তো শুকিয়ে কাট।ক বছর খাসনি?

বাহ্!ভালোই তো নাটক পারে দেখছি।খুব আদর দেখাচ্ছে যে আজ।কিন্তু আমিতো এখন এই আপনি নামক কোনো আদরের অপেক্ষা করি না।আপনি কেনো?কারো আদরের জন্য এই সিয়া অপেক্ষা করে না এখন।মনে সাহস যোগালাম।চোখের কোনে লেগে থাকা পানিটুকু মুছে ঠাসস করে একটা চড় লাগিয়ে দিলাম,

-আপনি কোন সাহসে আমায় এভাবে জড়িয়ে ধরছিলেন?ঠিক কোন সাহসে?

-তুই আমার ওপর রাগ করেছিস তাইনা?এটাই স্বাভাবিক।তুই বিশ্বাস কর তোকে সেদিন কষ্ট দিয়ে আমিও ভালো ছিলাম না।এক একটা দিন আমি কোনো এক অজানা আগুনে পুড়েছি।মোটেই ভালো ছিলাম না আমি।কথায় আছে না, অন্যকে কষ্ট দিয়ে নিজে কখনো ভালো থাকা যায় না,ঠিক তেমনি।এতদিনে বুঝছি তুই আমার ঠিক কোন জায়গায় বাসা বেঁধেছিস।প্রতিসপ্তাহে এসে তুই যে খড়কুটো দিয়ে যেতিস সেটা আমার কল্পনার ও বাইরে ছিলো।সেদিনের পর যখন তুই আর আসলি না,তোর কোনো ফোন আর আসলো না,যানিনা কেনো সেদিন থেকেই তোকে বারবার দেখতে ইচ্ছে করতো।মনটা ছুটে যেতে চাইতো তোর কাছে।তুই যখন কলেজে যেতিস চুপিচুপি একবার হলেও তোকে দেখে আসতাম।এক দিন!মাএ একটা দিন তোকে না দেখলে অতি অসস্তি লাগতো।নিজেকে বহুবার প্রশ্ন করেছি,
কেনো আমায় তোকে দেখতে ইচ্ছা করে?আমার তো খুশি হওয়ার কথা। যেখানে আমায় জ্বালানোর মতো আর কেউ নেই!কিন্তু কে জানবে ধিরে ধিরে এই মনটা যে তোকে জরিয়েছিলো। তোর দেয়া একটু একটু ভালোবাসা নিয়ে হৃদয়ের এক কোনে জমাচ্ছিলো।আমি আবারো বলছি তুই বিশ্বাস কর,এই দু বছরে একটা দিনও আমি তোকে ছাড়া ভালো থাকিনি।থাকিনি ভালো!

কথাগুলো বলতে বলতে তার চোখ বেয়ে নোনাজল পড়ছিলো।কোনো আগ্রহ দিলাম না তাতে।চেচিয়ে বললাম,

-ব্যাস!অনেক বলেছেন।আপনার মুখের এসব কথা তো আমি বিষবার মরে গেলেও বিশ্বাস করবো না।যে মানুষ কোনোকিছু না ভেবেই একবার জানার চেষ্টাও না করে এভাবে অমানুষের মতো মারতে পারে, তার মুখে এসব কথা হস্যকর ছারা আর কিছুই নয়।কেনো?কি লাভ আপনার এরকম কথা বলে?ওওও এতদিন কাউকে অপমান আর মারতে পারেননি তাই…একটা কথা জেনে রাখুন সিয়াম ভাইয়া, আমি আপনাকে শুধুই ঘৃনা করি শুধুই ঘৃনা।

-আমি এসব করার আগেই অবহত ছিলাম যে আমায় এসব শুনতে হবে।আর শুনছিও,শুনবোও।এই দু বছরে আমি অনেক পাল্টে গেছি সিয়া।তুই নামক অনেক সপ্ন দেখেছি।এই প্রথম কাউকে পাগলের মতো ভালোবাসেছি আমি।যদিও আমার আগে একটা সম্পর্ক…..

-আমিতো শুনতে চাইছি না এসব।আপনার কটা গার্লফ্রেন্ড আছে,কজনকে ভালোবেসেছেন। তাহলে?এসব আমায় কেনো বলছেন আপনি?কেনো?

সাহস করে আজ অনেক কথা বলে ফেলেছি।জানি ভাগ্যে অনেক কষ্ট আছে।কিন্তু ওনার আজ এই ব্যবহারে এটুকু কি প্রাপ্প নয়?রুম থেকে বেড়িয়েই আসছিলাম উনি ঝাঁঝালো কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন,

-আকাশের সাথে তোর কিসের সম্পর্ক?

থমকে গেলাম।আকাশে বাবুর কথা উনি কিভাবে জানলেন?এই দু বছরে আমার সুখ ও দুঃখের সাথি টাপুর আর আকাশ বাবু।আমার বেস্টফ্রেন্ডে পরিনত হয়েছেন উনি।
সিয়াম ভাইয়ার প্রশ্নের উওরটা দেইনি।কেনো দেবো?কে হয় উনি আমার?কেউ না!জোর পায়ে হেটে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলাম।চাচির রুমটা বরাবরের মতো আমার জন্য বরাদ্দ থাকে।এ বাড়িতে আসলে চাচির সাথেই থাকি।রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ফুপিয়ে কেদেঁ দিলাম।দরজার সাথে ঘেসে মাটতে বসে পড়লাম।

-যে মানুষটাকে ভুলতে আমার দেড় বছরের বেশি সময় লেগেছে। আজ আবার আমার জিবনে কেনো ডুকতে চাইছেন উনি?কেনো ভোলা সৃতিগুলো আবার মনে করিয়ে দিলেন?এই দুটো বছর আমি কিভাবে কাটিয়েছি তা আপনার কল্পনার বাইরে সিয়াম ভাইয়া।দেড় বছরে এমন একটি রাত যায়নি যে রাতে আপনার ছবি দেখে অঝরে চোখের পানি ছেরে কাঁদিনি।তাবুও আপনাকে কিছুটা ভুলতে সক্ষম হয়েছিলাম আমি।হয়েছিলাম!…….

দরজার ওপাড় থেকে চাচি দরজাটা সমনে ধাক্কাচ্ছে।নিজেকে ঠিক করে নিলাম যতটা সম্ভব।দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে ছিলাম এতক্ষণ। উঠে দাড়িয়ে দরজাটা খুলে দিলাম।দরজা খোলার সাথেসাথে চাচী বললো

-কিরে দরজা বন্ধ করে কি করছিলি?তোকে যে বললাম কাপড়গুলো নিয়ে….তোর মুখচোখের এই হাল কেনো?ও ঘরে সিয়াম তোকে কিছু বলেছে?তোকে কি ও মেরেছে? কি হলো আমায় বল সিয়া!

নিজেকে যথাসম্ভব সামলে আমতাআমতা করে বললাম,

-কিছু হয়নি চাচি।কি বলোতো মাথাটা কেমন ঘুরছে।অনেকদিন পর আসা তাই একটু ইতস্তত লাগছে।তা ছারা আর কিছু না।

-তবে তোর মুখচোখ এরকম লাগছে কেনো?কি হয়েছে? সিয়াম কিছু বলে থাকলে আমায় বল!বললে তোর নিজেরো মনটা হালকা হবে।!

চাচির কথায় বুকটা কেমন ভার হয়ে আসছিলো।নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না।হু হু করে কেঁদে দিলাম।চাচি হয়তো আমার কাঁদাটা আশা করেন নি।আমায় বিছানায় নিয়ে বসিয়ে চাচি ও বসে পড়লো।চাচির কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পরলাম।চাচি মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,

-তুই জানিস….
তখন বেলাটা মাথার উপর। আমি দুপুরের জন্য রান্না করছিলাম!প্রায় শেষ ও হয়ে এসেছিলো সব।তখন সিয়ামের আগমন।আমি সেদিন যতটা অবাক হয়েছিলাম তা হয়তো সিয়াম দুনিয়াতে আসার পর কোনোদিন এতটা অবাক হইনি।বিদেশ থেকে আসার পর তো আর সিয়াম কোনোদিন রান্নাঘরে যায়নি।যাগগে, ও আমার সামনে আসলো।ওকে জিগ্যেসা করলাম কিছু লাগবে নাকি।ও বললো কিছু লাগবে না।আড়াই মিনিট ওখানেই দাড়িয়ে কিছু একটা ভেবে আমায় জিজ্ঞেস করলো,

– আম্মা সে..সেদিনের পর সিয়া আর একবারও এখানে ফোন দে..য়নি তাইনা?

হঠাৎ তোর কথা বলাতে আমি সেদিন হকচকিয়ে গেছিলাম।এতদিন বিশ্বাস না করলেও সেদিন বিশ্বাস করেছিলাম,ভুতের মুখে….

ততক্ষণে উঠে গেছি আমি।কি শুনলাম আমি?ঠিক শুনলাম তো?উনি আমার কথা জিজ্ঞেসা করেছেন।আমার কথা!যাকে কিনা উনি ঘৃণা ছারা আর কিছুই করেননা।তার কথা!তাহলে সত্যিই উনি আমায় ফলো করছেন এতদিন।তার তো মেসেজ ও পেয়েছি একদিন….

_______সেদিন_______

সেদিন সবেমাত্র আমি,টুসি,আর আকাশ বাবু অনলাইনে ভিডিও চ্যাট করে বেড়োলাম।মাএ কিছুদিনেই আরও একজন বন্ধু পেয়েছি।বন্ধু বললে ভুল হবে বেস্টফ্রেন্ড।তিনি আর কেউ নয় আকাশবাবু।অনলাইনে আসলেই তার সাথে কথা হয়।ফেসবুকে ঘাটাঘাটি করছিলাম।
মুলত,সিয়াম ভাইয়ার করা কিছু নতুন পোস্ট দেখছিলাম।উনিও তখন অনলাইনে ছিলেন।তার সাথে কথা হয়নি প্রায় পাঁচ মাস হয়েছে।দেখাও হয়নি!হঠাৎ একটা মেসেজ আসলো,প্রথমে আকাশবাবু ভেবেছিলাম। কিন্তু না,ওই মেসেজটা আকাশবাবুর ছিলো ওটা সয়ং সিয়াম ভাইয়ার ছিলো।মেসেজটা চেক করলাম,

– সরি!

শুধু সরিটুকু লিখেছেন উনি।হাজারটা অভিমান আর কষ্ট বুকে পাথরচাপা আছে তাই রাগে আর রিপ্লাই দেয়নি।আর কেনই বা দেবো?উনি তো আমায় শুধু ঘৃনা করে তাহলে সরি কেনো বললেন উনি?..হয়তো চাচ্চু কিংবা চাচির কথায়..!

_______🌼

এসব কি কারনে করেছেন উনি?কেনোই বা চাচিকে আমার সম্পর্কে এসব বলেছেন। চাচিকে জিজ্ঞেসা করলাম,

-কেনো জিজ্ঞেস করেছিলেন উনি।তাও আবার তার সবথেকে ঘৃণার মানুষের কথা!আমি তো তার কাছে অসয্যকর,তাহলে?বলো চাচি, বলো?

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে