#সাঝের_বাতি
#Sajid_Hasan
#পর্ব_৩
বেরোনোর সময় পর্যন্ত তাকে দেখলাম না।বাড়ির বাইরে আসার আগে দোতলার কিনারের ঘরটায় একপলক উঁকি দিলাম।না!কেউ নেই।এই সিয়া আজ পাহাড় সমান অভিমান চলে যাচ্ছে সিয়াম ভাইয়া। বিশ্বাস করুন আর কোনোদিন আসব না আপনার জীবনে,কোনো দিন না!
আমি আর মা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়লাম।একটা রিকশা নিয়ে চলে আসলাম নিজ বাসায়।একটু পর ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা হেলিয়ে দিলাম।এখনো হালকা হালকা ব্যাথা আছে।কিছুই ভালো লাগছে না।বারবার সিয়াম ভাইয়ার কথা মনে পরছে।নিজেকে মনকে বারবার বললাম,
-ভাববো না আমি আর ওনার কথা।মুছে দেবো,ওনার সব সৃতি মুছে দেবো এ জিবন থেকে।যে মানুষটা আমায় এতটা কষ্ট… না!উনি তো আমায় এখন বোন হিসেবে স্নেহটুকু ও করেনে না আর ভালোবাসা!
নিজের মনকে সান্ত্বনা দিয়ে ফেসবুকে গলাম।ডাটা অন করতেই টুইং করে কয়েকটি মেসেজ ও ফেসবুক থেকে একটি নটিফিকেশন আসলো।প্রথমে পাত্তা না দিলেও বারবার মেসেজ আসতে লাগলো।উহ্!এমনিতেই এক অদ্ভুত যন্ত্রনা আর এর উপর এত মেসেজ।কে ইনি?
বিরক্তি নিয়ে মেসেজ চেক করতে গিয়ে যা দেখি তা দেখে আমি রিতমত অবাক!প্রায় বিশ টারও বেশি মেসেজ দিয়েছে।মেসেজগুলো সিন করলাম,
– Hi,Hlw……..।
ব্যাস! মেসেজ দেওয়ার দুই মিনিটও অপেক্ষা করেননি আবার মেসেজ দিয়েছেন,
-কেমন আছো এখন?
এরকম অনেকগুলো মেসেজ দিয়েছে।আবার ফ্রেন্ডরিকয়েস্ট এক্সেপ্ট করতেও বলেছেন।কে ইনি আর বলছে কেমন আছো?তারমানে আমি যে অসুস্থ ছিলাম উনি এটা জানেন।কে হতে পারে?আগ্রহ নিয়ে প্রফাইল নেম দেখলাম!” Nil Akash “প্রফাইল নাম দেখে না চিনলেও প্রফাইল ফটো দেখে চিনলাম।ইনি সেই ডাক্তারবাবু যিনি আমার চিকিৎসা করেছিলেন।কিন্তু উনি এভাবে এতবার মেসেজ দিচ্ছেন কেনো?মনটাকে ঠিক করতে রিপ্লাই দিলাম,
– জি বলুন!
সাথেসাথে রিপ্লাই আসলো,
– এখন কেমন আছো?
– আলহামদুলিল্লাহ!অনেকটা সুস্থ আছি।
– তোমার প্রফাইল লক্ কেনো?লক্ এর কারনে তোমার কোনো পোস্টই দেখা যাচ্ছে না।
আজিব!আমার পোস্ট দেখে উনি কি করবেন।আর এসবই বা কি বলছেন?তাকে রিপ্লাই দিলাম,
– কেনো?
– এমনিই,তুমি আমার ফ্রেন্ডরিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করো।
এমনিতেই ভালো লাগছে না আর উনি।ধ্যাৎ,বুঝতে পারছি না কি করলে একটু শান্তি পাবো?এরমধ্যেই উনি আবার মেসেজ দিলেন,
– কি হলো?
বুঝলাম, যতক্ষণ না এক্সেপ্ট করবো ততক্ষণ শান্তি দিবেন না।বিরক্তি নিয়েই তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করলাম।অতঃপর তাকে মেসেজ দিলাম,
– করেছি।
তার আর কোনো রিপ্লাই পেলাম না।অবশ্য মেসেজটা উনি সিন করেছে।বেড়িয়ে আসলাম অনলাইন থেকে।বিছানা ছেরে বারান্দায় এসে দাড়ালাম,আকাশটা আজ আমার মনের মতো বিষন্ন।কেমন গুমট হয়ে আছে আকাশটা।হয়তো বৃষ্টি হবে।একটু পর ফোনের টুংটাং আওয়াজ কানে ভেসে আসলো।ফোন হাতে নিয়ে দেখি “টুসি” নামটা জ্বলজ্বল করছে।আসলে টাপুর আমার বেস্টি ওকে আমি টুসি বলে ডাকি।ওর ফোন পেয়ে মনটা নেচে উঠলো।একপ্রকার উল্লাস নিয়ে ফোনটা রিসিভ করলাম,
– এই সুয়া কি করছিস?
এই একটা আমার আর ওর বধ অভ্যাস কেউ কারো সঠিক নাম ধরে ডাকি না।
– কিছু না।
– এই সুয়া!এভাবে কথা বলছিস কেনো?
– বাদ দে, কাল যাবি কলেজে?
– তুই গেলে অবশ্যই যাবো।
– কি করছিস তুই?আর দুদীন কলেজেই বা কেনো যাসনি?কিছু হয়েছে?
-আরে কিছুই হয়নি।আমি একটু অসুস্থ ছিলাম।
-আমায় একবার বলবি না তুই!এখন কেমন আছিস?
-অনেক ভালো আছি।
– আচ্ছা রাখছি।আমার জানপাখি বারবার কল করছে।
– আচ্ছা!
জানপাখি বলতে ওর bf।ওরযে কতগুলো bf আছে তা হয়তো ও নিজেও জানে না।ফোনটা রেখে বাইরে অগ্রসর হলাম।বাড়ির পেছনের রয়েছে আমার ছোট্ট একটা বাগান।বাগানে গিয়ে দেখলাম সবার জান যায় যায় অবস্থা।দৌরে গিয়ে পানি নিয়ে আসলাম।সবকটা গাছেই পানি দিলাম। পানি পাওয়ার পর সবাই যেনো প্রান ফিরে পেলো।কিন্তু আমি…….?
________________________
অন্ধকার দরজাবন্ধ ঘরটায় অনুসূচনায় আতরাচ্ছে কেউ।সমানে কামারের মতো ধপাস!ধপাস!হাতুড়ি পিটিয়ে চলেছে কেউ তার বুকে।এই হাতুড়ির আঘাতে একটু একটু করে অবস হয়ে আসছে তার শরীর। কিন্তু কেনো?ভুল তো সে করেনি, তাহলে এ দুদিন কেনো বুকের ভেতরে এই অদ্ভুত যন্ত্রণা হচ্ছে তার।কিছুতেই কেনো কিছু ভালো লাগছে না তার।এমটা হওয়ার তো কথা ছিলো না। তাহলে?
………এ কোন আগুন পোরাচ্ছে তাকে।কেনো মনে হচ্ছে তার করা কাজটা পুরোটাই অন্যায়,পুরোটাই অবিচার।
এসির হাওয়া পিরো দমে চলছে তবুও কেনো এত ঘামছে সে?কপালে,নাকে,খোঁচা খোঁচা দাড়িতে সব জায়গায় ঘাম।
বাইরে ঝরো হাওয়া বইছে।বারবার বাতাস নামক কেউ জানালাটা ঠেলছে।মাঝেমাঝে বিজলির চমক ও দেখা যাচ্ছে।ভাবনাকে বাদ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে জানালায় গিয়ে দাড়ালো(..)।বাইরে ঘটা এই দুর্যোগের আর তার মনের একই মিল।সবকিছুই এক!বাইরের ঝড়ো হাওয়া তার অন্যায়গুলো তার চোখের সামনে কেমন মেলে তুলছে।কিছুতেই তার মাথায় আসছে না এ কেমন বাতাস?কেনো বারবার তাকে সিয়ার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।অথচ,সেতো তাকে তার যথাযথ শাস্তি দিয়েছে।তাহলে কেনো তাকে কিছু ভালো লাগছে না?কেনো সিয়ার উত্তপ্ত আগুনে জ্বলছে সে?
________________________
-সপ্ন বোনা ভালো তবে তা এত তারাতাড়ি হয়ে যাবে অমি কল্পনাও করিনি।কখনো কোনো মেয়েকে দেখে এতটা আকৃষ্ট হয়নি যতটা সিয়ার প্রতি হচ্ছি,হয়েছি।যেখানে মেয়েকে দেখে এড়িয়ে যাওয়া আমার একপ্রকার ফ্যাশন আর সেখানে আমি?
একলা ঘরে সিয়ার প্রফাইলে চোখ রেখে কথাগুলো ভাবছে আকাশ।রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করার সাথেসাথে প্রফাইল উকি মারে আকাশ।সিয়ার প্রফাইল পিক ও তার কিছু পোস্ট করা পিক এ মগ্ন ও মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে।
– মাএ একদিন,হ্যা মাএ একদিন দেখেছি তাকে। তাতেই এতটা, এতটা ভালোলাগা কেনো কাজ করছে আমার? মেয়েটা কি জাদু জানে নাকি?না,নিষ্চই জাদু জানে আর তা না হলে আমি কেনো এত ওকে নিয়ে ভাবছি? কেনো?বারবার তাকে দেখতেই বা ইচ্ছে হচ্ছে কেনো আমার?এই আকাশ কোনো মেয়েকে নিয়ে ভাবছে এটাও সম্ভব। খুব তো ভেবেছিলাম মেয়ে নামক জিনিসটাই জিবনে আনবো না।আর এখন নিজে খুজে,মেসেজ এ বলে কারো প্রফাইল চেক্ করতে হচ্ছে!একদমই অন্যরকম ব্যপারটা।যকে এই প্রথম আমার ভালোলেগেছে তাকে যে ভাবেই হোক আমার চাইই! ”
সন্দেহহীন হয়েই সব ফেসবুক ফ্রেন্ড দেখতে যায় আকাশ। ফ্রেন্ড লিস্টে সিয়ামকে দেখে যতটা না অবাক হয়েছে তার থেকে বেশি অবাক হয়েছে “টাপুর” কে দেখে।কারন টাপুর ওর কাজিন। একদম বিষ্ময়কর মনে হচ্ছে তার।আকাশ আর সিয়ার পুরোই মেচুয়াল ফ্রেন্ডলিষ্টে রয়েছে টাপুর।
খুশি যেনো উপছে পরছে তার।কারন একদমই বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক টাপুর আর আকাশের।তরিঘরি টাপুরকে ফোন করে আকাশ।দু বার কল দেওয়ার পর ও যখন বিজি বলছে এবার সামান্য রাগ হয় আকাশের।রাগ নিয়েই আরেকবার ফোন করে টাপুরকে।ভেবেছিলো এবারো হয়তো বিজিই বলবে কিন্তু না,
– হ্যা ভাইয়া বলো?
– এই কার সাথে এত কথা বলিস তুই? দুবার ফোন করলাম আর দুবারই ব্যাস্ত!কোন ছেলের সাথে বলছিলি তুই?
– ক..কই না তো।আ..আমি আবার কেনো কোনো ছেলের সাথে কথা ব..লতে যাবো।
– তুই যে তোতলাচ্ছিস তাতেই বোঝা যাচ্ছে স্টুপিড!
…বাই দা ওয়ে তুই সিয়াকে চিনিস?
– কোন সিয়া?..ও ও তুমি সুয়ার কথা বলছিলে?
– সুয়া….এই সুয়া আবার কে? ”
– বুঝেছি তুমি সিয়ার কথা বলছো তো?
– হ্যা,তুই কি ওকে চিনিস?
– কেনো চিনবোনা ও তো আমার বেস্টফ্রেন্ড।ও আমার সুয়া!
– তুই ওর নাম্বরটা আমায় দিতে পারবি?আসলে…
– ওর নাম্বর কেনো ওর সাথে আমি তোমাকে দেখা পর্যন্ত করাতে পারবো আর নাম্বার!সেটা আমি তোমায় এস এম এস করে দিচ্ছি।কিন্তু তুমি…?
– আসলে ওকে.. ওকে আমার….!
– বুঝেছি…কাল তুমি আমাদের কলেজে এসো আমি মিট করিয়ে দেবো।
– আচ্ছা রাখছি,আর শোন তুই ওকে কিন্তু বলবি না যে আমি ওর জন্য কলেজে যাচ্ছি।সিয়া যেনো এসবের কিছুই না জানে!
– আচ্ছা!
ফোন কেটে দিলো আকাশ।অসম্ভব ভালোলাগা কাজ করছে তার মনে।কাল আবার তাকে দেখবে ভেবেই আনন্দে বিমোহিত হয়ে পরেছে।অনেক কিছু প্লান করে নিলো কাল কিভাবে কি করবে সে।
🌤️🌅🌄🏜️
সূর্যাস্ত হয়ে গেছে।হালকা আলো মুখে এসে পরতেই ঘুম ভেঙে গেলো আমার।চোখ টিপটিপ করে তাকিয়ে দেখি অনেকটা বেলা হয়ে গেছে।জানালায় পর্দা টানানো তাই বেলা হয়ে গেছে এটা বুঝতে পারিনি।ধরফরিয়ে উঠে বসলাম।ফোন হাতে নিয়ে দেখি সারে নটা বেজে গেছে।তারাতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলাম।একপ্রকার দৌরে রুম থেকে বেড়িয়ে আসলাম।বারান্দায় থাকা ছোট্ট টেবিলের দুটো চেয়ারে মা আর বাবা গল্প করছে।আমাকে দেখেই মা বলে উঠলো,
– সিয়া কোথায় যাচ্ছিস?এদিকে আয়!
ধির পায়ে এগিয়ে আসলাম।আমার চোখমুখের দিকে মা আর বাবা দুজনেই কেমন ড্যাবড্যাব করে দেখছে।কি হলো?আমায় এভাবে দেখার কি আছে।ভ্রু কুঁচকে তাকালাম তাদের দিকে,
– তোমার চোখমুখের এরকম অবস্থা কেনো সিয়া?কেমন চোখদুটো ফোলা ফোলা লাগছে।রাতে ঘুমোও নি নাকি?
বাবার কথায় মুখে হাত দিলাম। চোখমুখ ফোলার কারনটা কিভাবে বলবো আমি?কিভাবে বলবো যে মানুষটা আমায় এভাবে মারলো আমি তার জন্য কেঁদেছি, তার কতগুলো ছবি দেখে রাত কাটিয়েছি।আবার বুকের কোনে চিনচিন ব্যাথার অনুভব।কি বলবো এখন আমি?আর তাছাড়া ওখানকার ঘটনা বাবা কিছুই জানেন না।ইচ্ছে করেই বলতে বারন করেছি বাবাকে।এমনিতেই এক সুতোয় বেধে আছে আমাদের আর চাচ্চুর সম্পর্ক।আরও যদি….
– কি হলো?এরকম নিস্তব্ধ হয়ে গেলে যে?
– আসলে কাল রাতে ঘুমাতে পারিনি।অনেক চেষ্টা করার পর একটার পর ঘুমিয়েছি তাই হয়তো……
বাবা কতটা বিশ্বাস করেছে জানি না তবে মা যে একফোঁটা ও বিশ্বাস করেনি তা মায়ের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে।
– তা কোথায় যোচ্ছো?আর তুমি তো কিছু খাওনি!
– আমার অনেক লেট হয়ে গেছে আমি কলেজের ক্যান্টিনে গিয়ে খেয়ে নেবো।আর এমনিতেও দুদিন কলেজ যাওয়া হয়নি।
কথাটা বলেই বেড়িয়ে পরলাম।করন আর কিছুক্ষণ দাড়ালে হয়তো জেরার মুখে পরতে হতো।বাড়ি থেকে বেড়িয়ে একটা ভ্যান নিয়ে কলেজের উদ্দেশে রওনা হলাম।একটু দেরি হলেও পৌছালাম কলেজে।কলেজের সামনে প্রতিবারের মতন টুসি দাড়িয়ে আছে।রিকশা থেকে নেমে ভারা মিটিয়ে টুসির সামনে গিয়ে দাড়ালাম।আজ ওর মুখে হাসিতে ভরপুর।বুঝলাম না! আজ লেইট তাও এরকম হাসি টেনে রেখেছে মুখে।
– সুয়া তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে!
– কি?
টুসির পেছন থেকে এভাবে কারো এন্টি আশা করিনি।সারপ্রাইজ! আর তাছারা উনি তো…আমি কিছু বলার আগেই টাপুরের পেছন থেকে এন্ট্রি নেওয়া লোকটা বলে উঠলো,
চলবে