#সম্পর্ক
২য়+৩য় পাঠ
আমি যত হিসামের কথা শুনছি ততই রহস্যের অতল গহীনে ডুবে যাচ্ছি। নিজের ছোট ভাই মোবাইল ধরছে বলে তার গায়ে বড় ভাই হয়ে কিভাবে পারলো হাত তুলতে। আর নিজের মা হয়ে ছেলেকে পাগল বলে, সে তো পারতো হিসামকে মোবাইল কিনে দিতে, টাকা পয়সার তো কোন অভাব নেই।
কেন তারা হিসামের সাথে এমন ব্যবহার করে, কিছুই বুঝতে পারছিনা, আমাকে জানতেই হবে।
হিসামকে অনেক ভাবে জিজ্ঞাস করলাম কেন মা ভাই তোমার সাথে এমন ব্যবহার করে, আমার কথার উত্তর হিসাম দিতে পারে না। সে শুধু বলে আমি অসুস্থ, আমি না কি তাদের কথা শুনি না তাই আমার সাথে এমন করে। হিসামের উত্তরে আমি কোন যুক্তি খুঁজে পায় না তার সাথে খারাপ আচরণ করার।
আমি আম্মা আব্বাকে সবকিছু খুলে বললাম আর বললাম আমাকে কিছু টাকা দিতে আমি হিসামকে মানসিক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো, আমি দেখতে চাই আসলে তার সমস্যাটা কোথায়।
পরেরদিন সন্ধ্যায় হিসামকে নিয়ে গেলাম মানসিক রুগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শফিক রহমানের চেম্বারে, ডাক্তার হিসামকে দেখে হিসামের সাথে কথা বলে, আমাকে জানালেন।
,, শুনেন আমার মনে হয় আপনার স্বামীর মানসিক সমস্যা নেই, কিন্তু আপনি বলছেন সে ভয় পায় আর তার কোন কথা মনে থাকেনা, এটা কেন হচ্ছে বুঝতে পারছিনা, তাই কিছু টেস্ট দিচ্ছি করিয়ে আমাকে রিপোর্ট গুলো দেখান।
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী টেস্ট গুলো করালাম, দুই ঘন্টা পর রিপোর্ট পেলাম, রিপোর্ট দেখে ডাক্তার বলল।
,, মিস্টার হিসামের মানসিক কোন প্রব্লেম নেই, তার মস্তিষ্ক সুস্থ স্বাভাবিক, তার ব্লাডে একটু প্রব্লেম পাওয়া গিয়েছে, তাকে অনেকদিন যাবত ড্রাগস জাতীয় মেডিসিন সেবন করানো হয়।
ডাক্তারের কথা শুনে আমি ওষুধ গুলোর নাম বললাম যে গুলো হিসামকে খাওয়ানো হয়, ওষুধের নাম শুনে ডাক্তার শফিক রহমানের চোখ বড় হয়ে গেলো।
,, মিসেস অবনী আপনি কি বলছেন, আপনি যে মেডিসিনের নাম বললেন সেই মেডিসিন গুলো মানুষের জন্য খুব ক্ষতিকারক, এই ওষুধ বেশিদিন সেবন করলে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যায় মানুষ এই ওষুধের প্রভাবে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয় অবশেষে পাগলে পরিনত হতে হয় সেবনকারীকে।
ডাক্তারের কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম, কিছুই ভাবতে পারছিনা আমি, কিসের জন্য বা কি কারণে মা হয়ে ছেলেকে পাগল বানিয়ে রাখছে।
আমি ডাক্তার শফিক রহমানকে বললাম, এখন হিসামকে সুস্থ করে তুলবো কিভাবে, যে ভাবেই হোক তাকে সুস্থ করতে হবে।
,, আমি কিছু মেডিসিন লিখে দিচ্ছি সেগুলো নিয়মিত খাওয়ান ইনশাল্লাহ সুস্থ হয়ে যাবে, দেখবেন ড্রাগস জাতীয় মেডিসিন গুলো যেনো আর না খাওয়ানো হয়, তাহলে কিন্তু আপনার হাসবেন্ড সুস্থ হবেনা।
বাসায় এসে হিসামকে বুঝিয়ে বললাম আমরা যে ডাক্তারের কাছে গিয়েছি সে যেনো বাসায় গিয়ে কাউকে না বলে।
হিসাম আমাকে কথা দিলো সে কাউকে এই বিষয়ে বলবেনা, আমার বাসায় ৬ দিন ধরে আছি শাশুড়ী মা ফোন করে বলে দিয়েছে কাল চলে যেতে।
আমি খুবই চিন্তায় পড়ে গেলাম, তাদের বাসায় গেলে তো হিসামকে আবার ড্রাগস মেডিসিন গুলো খাওয়াবে, আর আমি যেই ওষুধ গুলো হিসামকে খাওয়াচ্ছি সেগুলো যদি শাশুড়ী মা দেখে ফেলে তাহলে খাওয়াতে দিবেনা, কি করব। যাই হোক ওষুধ গুলো আমি ব্যাগে লুকিয়ে নিয়ে যাবো আর সময় বুঝে লুকিয়ে খাওয়াবো।
হিসামের বাসায় যাবার পর শাশুড়ী মা দৌড়ে এসে হিসামকে জড়িয়ে ধরলো।
,, আমার ছেলেটা কয়েকদিন বাসায় ছিল না বাসাটা পুরো খালি খালি লাগছে, সবসময় শুধু টেনশন হয়ছে, বাবা তুই ঠিক আছিস তো।
,, আম্মু আমি ভালো আছি, অবনী আমার খেয়াল রাখছে, আমারও তোমার কথা মনে পড়েছে, জীবনে প্রথম বাহিরে কোথাও থাকলাম তোমাকে ছাড়া।
মা ছেলের ইমোশনাল কথাবার্তা শুনে আমি থ মেরে দাঁড়িয়ে আছি, শাশুড়ী মা ছেলেকে এতো ভালাবাসা দেখাচ্ছে, তাহলে ছেলের ক্ষতি হবে এমন ওষুধ খাওয়াচ্ছে কেন, না কি অন্য কারো চক্রান্ত, হতে পারে তাই, শাশুড়ী মাকে আমার সবকিছু বলতে হবে।
রাতে খাবার পর শাশুড়ী মা হিসামকে খাওয়ানো জন্য ড্রাগস মেডিসিন নিয়ে আসবে, তার আগেই শাশুড়ী মাকে এই মরণ নাশক মেডিসিনের ব্যাপারে বলতে হবে।
,, আম্মা আপনার সাথে কিছু জরুরী কথা ছিলো, না বললেই নয়, আপনি কি শুনবেন আমার কথা গুলো।
,, কেন শুনবো না মা, তুমি আমার ছেলের বউ, তুমি যা বলতে চাও মন খোলে বল।
,, হিসামকে যে মেডিসিন গুলো অনেকদিন যাবত খাওয়াচ্ছেন, সেগুলো ড্রাগস জাতীয় মেডিসিন, এই মেডিসিন সেবনের প্রভাবে হিসাম মানসিক সমস্যায় ভুগছে।
,, কি বলছ তুমি আবোল তাবোল, আমি হিসামের মা, আকিব আর রিমি হিসামের ভাই ভাবী, এখানে কেউ হিসামের পর না, ডাক্তার অনেক পরীক্ষানিরীক্ষা করে এই মেডিসিন খেতে দিয়েছে, আর এই মেডিসিন খেয়ে হিসাম ভালো আছে, না হলে পাগলামি করতো।
,, মা আপনি বিশ্বাস করছেন না তো ঠিক আছে আমি আপনাকে এই শহরের নামকরা মানসিক ডাক্তার শফিক রহমানের কাছে নিয়ে যাবো, আপনি নিজের কানে শুনে আসবেন, এই মেডিসিন কতটা ক্ষতিকর এই মেডিসিনের জন্য হিসাম মানসিক ভাবে অসুস্থ।
কথা গুলো বলে আমি শাশুড়ী মায়ের রুম থেকে বেড়িয়ে আসতে পা বাড়াতেই শাশুড়ী মা আমার হাতটা ধরে ফেললেন, কেন হাত ধরল বুঝে উঠতে না পাড়ার আগেই শাশুড়ী মা বলতে শুরু করল।
দেখো অবনী আমি যখন তোমাকে বিয়ের জন্য দেখতে গিয়েছিলাম, তখন তোমাকে বলছিলাম আমার সমস্ত কথা তোমাকে শুনতে হবে রাখতে হবে।
শাশুড়ী মাকে জিজ্ঞেস করলাম কি কথা রাখতে হবে বলুন।
,, হিসামকে যে মেডিসিন খাওয়াচ্ছি সেগুলো রেগুলার খাওয়াতে হবে, এই মেডিসিন যাই হোক তুমি কাউকে এটার ব্যাপারে কিছু বলবেনা, তোমাকে আমি বিয়ে করিয়ে আনছি তুমি আমার কথা শুনো, আশা করি তোমার ভালো হবে, আর যদি বাড়াবাড়ি কর আমাদের কিছুই করতে পারবেনা বরং তোমার নিজের ক্ষতি হবে।
,, আপনি মা হয়ে ছেলের জীবন শেষ করে দিচ্ছেন, আবার বলছেন আমাকে আপনার সাথে হাত মেলাতে, হিসাম আমার স্বামী, তার কোন ক্ষতি আমি চাইব না, আর বললেন আমার ভালো হবে কি ভালো হবে বলেন তো।
,, তুমি আমার কথা মত চললে, বসুন্ধরায় আমাদের জমির প্লট আছে সেটা তোমার নামে লিখে দিবো, সেই জমির বাজারদর প্রায় পঞ্চম লক্ষ টাকা, তুমি চাইলে আরো টাকা দেবো।
,, আচ্ছা দিবেন বুঝলাম সেই জমি তো হিসামের, তার জমি আমাকে দিবেন তার জীবন নষ্ট করতে, আপনি কি সত্যি হিসামের মা, ভাবতে অবাক লাগে।
,, আমার কথা রাখবে কি না হ্যাঁ বা না বল।
আমি ভয় পেয়ে গেলাম শাশুড়ী মায়ের রুক্ষমূর্তি রুপ দেখে, এই মহিলা যা খুশী করতে পারে নিজের জন্য হয়তো আমাকে মেরে ফেলতে পারে তার কথা না মানতে চাইলে।
আমি রাজী হলাম তার প্রস্তাবে বললাম আমাকে জমি লিখে দিতে হবে যদি দেন আপনার সব কথা রাখবো।
শাশুড়ী মা বললেন অবশ্যই লিখে দেবো।
আমি রুমে যেয়ে দেখি হিসাম মোবাইলে আমার পিকচার দেখছে, আমাকে দেখে হাসি হাসি মুখ করে বলল, অবনী তুমি খুব সুন্দরী, ঠিক যেনো পরীর মতো।
হিসামকে বললাম তুমি পরী দেখেছ, কিভাবে জানলে আমি পরীর মতো সুন্দরী।
দেখিনি কিন্তু শুনেছি পরীরা খুব সুন্দরী হয়, তুমি সুন্দরী তাই আমার চোখে তুমি পরীর মতো সুন্দরী।
আজ প্রথম হিসাম আমাকে ভালো করে দেখছে মনে হয়, আমি তাকে বললাম, আমি সুন্দরী না পঁচা সুন্দরী হলে আমার বর আমাকে ভালোবাসতো আদর করতো।
আমার কথা শুনে হিসাম কি যেনো ভাবলো, সে আমার কাছে এসে হাত ধরে বললো, সত্যি অবনী তুমি খুব সুন্দরী, আমি তোমাকে ভালোবাসি, তুমিতো জানো আমি অসুস্থ মানুষ দেখে ভয় পেতাম, এখন কিন্তু ভয় পাইনা তেমন, তুমি যদি আমার পাশে থাকো আমি সুস্থ হয়ে যাবো।
হিসামের মুখে এমন কথা শুনে আমার চোখে জল চলে আসছে, আমি তাকে জড়িয়ে ধরছি, হিসাম আমার স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠল তার হাত দুইটা আমার পিঠের উপর রেখে আমাকে শক্ত করে চেপে ধরল।
হিসামের শরীরের স্পর্শ আমাকে পাগল করে দিয়েছে এতো দিনের অপেক্ষা আজ হয়তো পূরণ হবে।
দরজায় নক করার শব্দ শুনে আমরা দুজন দুজকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম, শাশুড়ী মা আসছে হিসামকে মেডিসিন খাওয়াতে।
আমার কলিজা ফেটে যাচ্ছে আমি পারছিনা আমার স্বামীকে রক্ষা করতে, শাশুড়ী মা চলে যাবার পর হিসাম আমাকে বলল, অবনী আমি তো ভালো হবো না এই ড্রাগস মেডিসিন খেলে।
,, অবশ্যই তুমি ভালো হবে, শুনো আমি যা বলছি তুমি তাই করবে, আম্মা যখন তোমাকে মেডিসিন খেতে দিবে তুমি মুখে পানি নিয়ে পানিটা গিলে খেয়ে ফেলবে তারপর টেবলেট গুলো মুখে দিবে, টেবলেট গুলো জিভের নিচে রেখে আবার পানি খাবে যেনো আম্মা বুঝতে না পারে।
সেদিনের পর থেকে আমার কথা মত হিসাম অভিনয় করে যাচ্ছে, আমি যে ওষুধ গুলো নিয়ে আসছি সেগুলো নিয়মিত খাওয়াচ্ছি।
হিসাম এখন আগের থেকে অনেক নরমাল, কিন্তু আমি হিসামকে সাবধান করে দিছি সে যেনো বাসার সবার সাথে আগের মত ব্যবহার করে, তারা যেনো মনে করে তাদেরকে দেখে হিসাম ভয় পায়।
বিয়ে হয়েছে দেড় মাস, আমাদের এখনো শারীরিক সম্পর্ক হয়নি, কি করে হবে আমি চাইলে তো আর হবেনা হিসামেরও তো চাইতে হবে, আমাদের মধ্যে জড়িয়ে ধরা চুমু দেয়া এতটুকুই হয়েছে।
ঘুমের মাঝে অনুভব করলাম আমার পেঁটের উপর হিসামের হাত, আমি চোখ খুলে চেয়ে দেখি হিসাম ঘুমায়নি কেমন ছটফট করছে, কি হয়েছে জানতে চাইলাম কিছু না বলে হিসাম আমাকে জড়িয়ে ধরলো তার বুকে আমার সারা শরীর শিহরিত হয়ে গেলো, আমার এতদিনের স্বপ্ন আজ হিসাম সত্যি করে দিলো।
চলবে,,,,
সাদমান হাসিব সাদ
#সম্পর্ক ৩য় পাঠ
বিয়ে হয়েছে দেড় মাস, আমাদের এখনো শারীরিক সম্পর্ক হয়নি, কি করে হবে আমি চাইলে তো আর হবেনা হিসামেরও তো চাইতে হবে, আমাদের মধ্যে জড়িয়ে ধরা চুমু দেয়া এতটুকুই হয়েছে।
ঘুমের মাঝে অনুভব করলাম আমার পেঁটের উপর হিসামের হাত, আমি চোখ খুলে চেয়ে দেখি হিসাম ঘুমায়নি কেমন ছটফট করছে, কি হয়েছে জানতে চাইলাম কিছু না বলে হিসাম আমাকে জড়িয়ে ধরলো তার বুকে আমার সারা শরীর শিহরিত হয়ে গেলো, আমার এতদিনের স্বপ্ন আজ হিসাম সত্যি করে দিলো।
হিসামের জন্য ডাক্তার শফিক রহমান যে মেডিসিন গুলো দিয়েছিল সেগুলো প্রায় শেষ, আমার তো আবার ডাক্তার শফিক রহমানের সাথে দেখা করতে হবে, কিন্তু কি করে যাবো।
শাশুড়ী মাকে বললাম অনেকদিন যাবত বাসায় যাইনা, আব্বা আম্মাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
,, আচ্ছা বিকেলে ড্রাইভার তোমাকে দিয়ে আসবে কাল সকালে নিয়ে আসবে।
,, আপনার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে যাই।
,, না তার দরকার নেই, তুমি একা যাও।
বিকেলে আমি বাসায় গেলাম ড্রাইভার আমাকে দিয়ে আসলো, সন্ধ্যার সময় আমি আব্বাকে নিয়ে ডাক্তার শফিক রহমানের কাছে গেলাম।
এই দেড় মাসে হিসাম অনেকটা সুস্থ হয়ে গেছে শুনে আগের দেওয়া ওষুধ গুলো নিয়মিত খাওয়াতে বললেন। আমি দুই মাসের ওষুধ কিনে নিলাম।
পরেরদিন সকাল এগারোটায় ড্রাইভার এসে হাজির আমাকে নিয়ে যাবার জন্য।
আমি শাশুড়ী মায়ের মন রাখতে তার সব কথা শুনে চলি, আমার উপর শাশুড়ী মায়ের অনেকটা বিশ্বাস জন্মে গেছে।
আজ সকালে হিসামের ভাইয়া হিসামের কাছে আসলো একটা ফাইল সাইন করতে।
হিসাম ফাইলটা সাইন করে দিলো আমি কাছেই ছিলাম উকি মেরে দেখলাম ষাট লক্ষ টাকার ডিল।
ভাইয়া চলে যেতে হিসামকে জিজ্ঞেস করলাম, সাইন তোমাকে করতে হয় কেন, আম্মু আছে ভাইয়া আছে তারা থাকতে তুমি সাইন কর, মানে বুঝলাম না।
,, আব্বু মারা যাবার পর থেকেই সবকিছুর সাইন আমাকে করতে হয়।
,, আই মিন সবকিছুর মালিক তুমি, আম্মু ভাইয়া থাকতে সবকিছুর মালিক তুমি কি করে হলে, মাথায় কিচ্ছু আসছেনা, তুমি কিছু জানো জানলে প্লিজ আমাকে বল।
,, আমি মনে করতে পারিনা, তুমি তো জানো আমার অতীত স্মৃতি মনে নেই, একবার আব্বাসউদ্দীন চাচা আমাকে বলছিল এই সব সম্পদের মালিক তুমি এই বাসা অফিস ব্যবসা সব তোমার, আম্মু চাচার কথা শুনে ফেলে চাচাকে মেরে বাসা থেকে বের করে দেয় আর বলে কখনো যদি হিসামের আশেপাশে তোকে দেখি চোর বলে পুলিশে দেবো।
,, আচ্ছা তুমি কি জানো ওই চাচা থাকে কোথায়।
,, মনে নেই, কিন্তু আমি মনে করবো, যখন মনে পড়বে তোমাকে জানাবো।
হিসাম গম্ভীরমুখে ভাবতে শুরু করে দিলো, আমি বুঝতে পারলাম হিসামের জীবনের সাথে কোন অজানা রহস্য জড়িয়ে আছে, আব্বাসউদ্দীন চাচাকে খুঁজে পেলেই এই রহস্যের জট খুলবে।
মাঝরাতে হিসাম আমাকে ডেকে বলছে, অবনী তারাতাড়ি উঠো, আমার মনে পড়ছে আব্বাসউদ্দীন চাচা কোথায় থাকে।
,, হ্যাঁ সোনা বল, তোমার যা যা মনে পড়ে সব বল।
,, আমি তখন সিক্সে পড়ি সম্ভবত চাচা একদিন আমাকে তার বাসা দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল যাত্রাবাড়ী বস্তিতে, অনেকদিন হয়ে গেলো সেখানে চাচা আছে কি না।
,, যে করেই হোক চাচাকে খুঁজে বের করব, যদি সে বেঁচে থাকে।
চাচাকে খুঁজে বের করতে হলে হাতে কয়েকদিনের সময় নিয়ে যেতে হবে, শাশুড়ী মাকে বললে একদিনের জন্য বাবার বাসায় যেতে দিবে, একদিনে তো চাচাকে খুঁজে না ও পেতে পারি।
আব্বকে ফোন করে বললাম শাশুড়ী মাকে বলতে, আমার মা অসুস্থ, তাই আমি যেন কয়েকদিন আম্মার কাছে গিয়ে থাকি।
শিখানো কথা অনুযায়ী আব্বা আমার শাশুড়ীকে ফোন দিয়ে বলল আমার মায়ের অসুখের কথা।
শাশুড়ী ৭ দিনের জন্য আমাকে বাবার বাসায় যেতে দিলো, হিসামকে সাথে করে নিতে চাইলাম শাশুড়ী মা রাজী হলো না।
যাবার আগে হিসামকে বলে গেলাম সাবধানে থাকতে, আর তাদের সাথে ভালো ভাবে অভিনয় করতে, তারা যেন কোন ভাবেই বুঝতে না পারে হিসাম এখন সুস্থ।
৭ দিন হিসামকে ছেড়ে থাকব শুনে হিসামের চোখে পানি দেখা যাচ্ছে।
,, অবনী তুমি আমাকে রেখে যাচ্ছো আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, এই কয়দিন তোমাকে ছেড়ে কিভাবে থাকব, তুমি ছাড়া কেউ তো আমাকে ভালোবাসে না।
,, আরে পাগল কাঁদছো কেন, আমি কিসের জন্য যাচ্ছি তুমি তো জানো, চাচাকে খুঁজে পেলে দুই চারদিনের মধ্যে চলে আসবো।
অনেক বুঝিয়ে হিসামকে শান্ত করে আমি চলে আসলাম, বাবার বাসায় এসে পুরো ঘটনা আম্মা আব্বকে বললাম, সব শুনে আব্বা বলল, কাল সকালে আমরা যাত্রাবাড়ী বস্তিতে যাবো।
সকালে নাস্তা করে আব্বা আর আমি বের হলাম যাত্রাবাড়ীর উদ্দেশ্যে। বস্তিতে গিয়ে অনেকজনের কাছে জানতে চাইলাম আব্বাসউদ্দীন নামে কাউকে চিনে কি না, কারো কাছ থেকে জানতে পারলাম না।
আব্বা বলল, অনেকদিন আগের কথা হয়তো আব্বাসউদ্দীন অনেক আগে এখান থেকে চলে গেছে তাই কেউ তার খুঁজ দিতে পারছেনা।
আব্বার যুক্তি আমি মানতে পারছি না, কেউ না কেউ তো আব্বাসউদ্দীন চাচার কথা মনে রাখছে, দরকার হলে পুরো বস্তির ঘরে ঘরে গিয়ে খুঁজবো।
সকাল দশটায় আসছি বিকেল পর্যন্ত খুঁজলাম, আব্বা বলল চল আজ বাসায় চলে যাই কাল আরেকবার এসে খুঁজে দেখবো।
চলে আসলাম হাজারো চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে আমার মাথায়, যদি চাচাকে খুঁজে না পাই তাহলে কি হয়েছে, কিসের জন্য হিসামকে মা হয়ে পাগল বানিয়ে রাখছে কিছুই জানতে পারব না।
রাতে তেমন ঘুম হলো না, চাচাকে না পাওয়ার চিন্তা, হিসাম আমাকে ছাড়া কেমন আছে সেই চিন্তা।
আসার সময় হিসাম ছলছল চোখে তাকিয়ে ছিলো, ভাবতেই এখন আমার বুকের ভিতর মুচড় দিয়ে উঠলো, অনেক ভালোবাসি আমি হিসামকে, সেও আমাকে অনেক ভালোবাসে, না হলে আমি ক’দিন থাকব না বলে কান্না করতো না।
হিসামকে দেখলে যে কারো মায়া হবে, কিন্তু তার নিজের ফ্যামিলির লোকেরা তার সাথে কেন মানসিক ভাবে অত্যাচার করে কি কারণ, কি অপরাধ করছে হিসাম চাচাকে পেলে সব জানা যাবে।
চলবে,,,,
সাদমান হাসিব সাদ