সম্পর্কের_মারপ্যাঁচ পর্ব-৫

0
1514

#সম্পর্কের_মারপ্যাঁচ
পর্ব-৫
#tani_tass_ritt

রিয়া ফোনটা তুলে ছবি গুলো দেখে চমকে গেলো।কিভাবে সম্ভব এটা!
প্রভাতির সাথে একটা ছেলের হাস্যোজ্জ্বল কিছু ছবি।একটা ছবিতে তো ছেলেটা প্রভাতির হাত ধরে আছে।

“ভাই এই ছেলে কে? আর প্রভাতি ওর সাথে কি করছে?”

রুদ্র রিয়ার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ছবিগুলো ভালোভাবে দেখতে থাকে।হঠাৎ সে হেসে উঠে।

রিয়া অবাক হয়ে যায়।
“এমা তুই হাসছিস কেনো? পাগল টাগল হয়ে গেলি নাকি?”

“হাসবোনাতো কি করবো।তুই ছবিটা ভালো করে দেখ ছেলেটা তৌকির। আর প্রভাতি পরে যাচ্ছিলো তৌকির তখন ওকে ধরেছে। প্রভাতি এখনো বাচ্চাই রয়ে গেলো। উঠতে বসতে পরে যায়।ওকে নিয়ে যে কি করবো আমি। কেউ ইচ্ছে করে এই ছবিগুলো তুলেছে।”

রিয়া আবার ছবি গুলো দেখলো আসলেইতো।
“তৌকির ভাইয়া মানে খালামনির বান্ধুবির ছেলে?”
“হ্যা রে পাগলি।”

“কিন্তু তোমাকে এই ছবি গুলো কে পাঠালো?”
“দাড়া দেখছি।”
রুদ্র নাম্বার টা খেয়াল করে দেখলো শুমনের নাম্বার। তার মেজাজটাই চটে গেলো।

“কত বড় বদমাইশ দেখেছিস? আমি ওকে বলেছিলাম প্রভাতির থেকে দূরে থাকতে।আর সে এখন আমার আর প্রভাতির মধ্যে ভুলবুঝাবুঝি করাতে চাচ্ছে।ওকে আমি এক্ষুনি কল দিয়ে.. ”

“উফ ভাইয়া মাথা ঠান্ডা কর।এইসব মানুষকে কিছু বলে লাভ নেই।তার চে ভালো তুই ওকে ব্লক করে দে।”

রুদ্র রিয়ার কথা মতো শুমনকে ব্লক করে দিলো।

“ভাইয়া একটা কথা বলি?”

“তুই আবার কবের থেকে পারমিশন নেয়া শুরু করলি?”

“তোর প্রভাতির উপর এতো বিশ্বাস! আমি নিজেই তো এই ছবিগুলো দেখে অন্য কিছু মনে করেছিলাম।”

“ভালো কি আর এমনি বাসিরে পাগলি।যদি বিশ্বাসই করতে না পারি তাহলে এই ভালোবাসার কোনো মানে আছে? আমি ওসব ঠুনকো ভালোবাসা বাসি না।যার ভিত্তি ই নড়বড়ে থাকে।”

“তোকে দেখলে খুব অবাক লাগে।এতোভালো কিভাবে বাসিস? আর বলছিস না কেনো ওকে? ওর মনে যদি অন্য কেউ থাকে? অন্য কেউ এসে যদি তোর থেকে ওকে নিয়ে যায়?”

“উহু ওর মনে অন্য কেউ নেই।ও আমাকেই ভালোবাসবে।আমার ভালোবাসার জোড় আছেরে পাগলি।আমি না বললেও ওর মনে শুধু আমি ই আছি।”

“এতোটা কনফিডেন্স ভালোনা ভাইয়া।”
“এটা আমার বিশ্বাস।” বলেই রুদ্র একটা মুচকি হাসি দিলো।

রিয়া আর কথা বাড়ালো না।তার কেনো যেনো খুব ভয় হয়। তার ভাইটা যদি কষ্ট পায় তাহলে সে মরে যাবে।রিয়া উঠে সেখান থেকে চলে গেলো।

রুদ্র ছবি গুলো ক্রপ করলো।শুধু প্রভাতির ছবি গুলো রেখেদিলো।সে খুব খুটিয়ে খুটিয়ে প্রভাতির ছবিগুলো দেখছে।

“তুই এতো সুন্দর কেন হচ্ছিস রে আমার মায়াপড়ি।তোর থেকে দূরে থাকা যে বড্ড কষ্টকর।জানিস কত রাত আমি শুধু তোর কথা ভেবেই কাটিয়ে দেই।আচ্ছা তোর কি আমার কথা মনে পরেনা? অবশ্যই মনে পরবে। তা না হলে তোকে মেরে তক্তা বানাবো।তুই শুধু আমার।
জানিস মা যখন তোর উপর অত্যাচার করে আমার খুব কষ্ট লাগে।একবার ভাবি তোকে নিয়ে কোথাও চলে যাবো।আবার চিন্তা করি হাজার হোক সে তো আমার মা। জানিস আমার মায়ের যেনো কিসের কষ্ট আছে রে।আমার বাবার সাথেও তার সম্পর্ক আমি কোনোদিন স্বাভাবিক দেখিনি। কিন্তু দেখিস একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।তোর জীবনটা খুশিতে ভরে যাবে।”

প্রভাতির ছবির সাথে একা একাই বক বক করতে লাগলো রুদ্র।
★★★★★★★★★★★★★

তৌকির রাতের খাবার খেয়ে ছাদে চলে গেলো সিগারেট খেতে। ছাদের এক কোণায় কাউকে দেখতে পেলো।ভালো করে খেয়াল করে দেখলো প্রভাতি দাড়িয়ে আছে।

“একা একা ছাদে কি করছো?”
তৌকিরের আওয়াজ শুনে প্রভাতি চমকে গেলো।এতক্ষণ আনমনে সে তার অনুভূতি বুঝার চেষ্টা করছিলো।

“কিছুনা।আমি রাতে প্রায়ই ছাদে আসি।”

“তুমি কি কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত?”
“নাহ”

“কিন্তু আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে তুমি কিছু নিয়ে ভাবছো।”

প্রভাতি কোনো উত্তর দেয়না। আসলে তার কাছে যে কোনো উত্তরই নেই।সে কি বলবে! তার সবটা জুড়ে যে শুধু একজনই আছে।তাকে ছাড়া তার মাথায় আর কিছুই ঢুকেনা।তাকে নিয়ে সে এভাবে ভেবেই জনম জনম পার করে দিতে পারবে।তার মনের ভিতর থাকা এই অনুভূতিগুলোর কি নাম দেয়া যায় ঠিক জানা নেই তার।

“আমার ঘুম ধরেছে। আমি আসছি।”বলেই প্রভাতি সেখান থেকে চলে যায়।

তৌকর তার যাওয়ার দিকে থাকে।পকেটে থাকা সিগারেটটা বের করে আগুন জ্বালায়।তারপর সেই সিগারেটে একের পর এক টান দিতে থাকে।

প্রভাতির মধ্যে যে রহস্যটা আছে সেটা তাকে জানতেই হবে।কিন্তু এই রহস্য জানতে গিয়ে যদি সে নিজেই রহস্যের জ্বালে আটকা পরে যায়!

” আমার প্রভাতিকে বেশ পছন্দ হয়েছে।ঠিক ওর মতোই পূত্রবধু আমার লাগবে।” তৌকেরে মা সালমা বেগম বললেন।

সালমার কথা শুনে রুবি বেগম একটু নড়েচড়ে বসলেন।
“কি বলছিস তুই? ভেবে বলছিস তো?”
“অবশ্যই ভেবে বলছি।ওর মতো শান্ত লক্ষি মেয়ে কে না চায়।আমি তোর জায়গায় হলে ওকে কবে নিজের ছেলের বউ বানিয়ে ফেলতাম।”

“এখনো চাইলে পারিস।”
“তুই সত্যি বছিস?”
“হ্যা।এমনিতে ওর জন্য ভালো ছেলে খুঁজছিলাম।আর তৌকিরের থেকে ভালো ছেলে পাওয়া যাবেনা।”

রুবি বেগমের কথা শুনে সালমা বেগম বেশ খুশি হয়ে যায়।নিজের মনের মতো মেয়ে পেয়েছে ছেলের জন্য আর কি লাগে।
★★★★★★★

রুদ্র সকালবেলা ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠলো।তার সারা শরীর কাঁপছে।ঘেমে টেমে অস্থির।বিছানার পাশে রাখা পানির গ্লাসটা নিয়ে এক ঢোকে সব খেয়ে নিলো।তার কেমন যেনো অস্থির লাগছে।তার প্রভাতি যদি তার থেকে দূরে সরে যায় তাহলে সে কিভাবে বাঁচবে। নাহ আর দেরি করলে চলবে না তার আজই বাড়ি যেতেই হবে।সে আজই প্রভাতিকে সবটা জানাবে। তার প্রভাতিকে যেভাবেই হোক সে নিজের করে ছাড়বে।

রুদ্র রিয়াকে ডেকে বললো সবটা।রিয়াও বায়না ধরলো তার সাথে যাবে।

” তোর তো সামনে পরীক্ষা রে।”

“আরে ভাইয়া এখনো দুমাস আছে।আর দুদিনের জন্য তেমন কিছু হয়ে যাবে না।তুমি প্রভাতিকে প্রপোজ করবে আর আমি থাকবো না সেটা কি হয় নাকি।”

” পাগলি বোন আমার।আচ্ছা তুই সব গুছিয়ে ফেল আমরা বিকালে রওনা দিবো। আর শুন খালাকে বলবি যাতে মাকে কিছু না জানায়।”

“যো হুকুম মেরে আকা।” বলেই রিয়া সেখান থেকে চলে যায়।

বিকেল ৪ টার নাগাদ তারা রওনা দেয়।রুদ্র অস্থির হয়ে আছে কখন সে যাবে আর তার মনের কথা প্রভাতিকে বলবে।

বাস ছেড়েছে আধা ঘন্টা হবে।হঠাৎ রিয়ার ফোনে একটা কল আসে।

“হ্যালো”

ওপাশ থেকে
………

সাথে সাথে রিয়ার হাত থেকে ফোনটা পরে যায়।সে সাথে সাথে কান্না শুরু করে।

“ভাইয়া আমাদের এখনি ব্যাক করতে হবে।” বলেই পাগলের মতো কাঁদতে থাকে।

রুদ্র বুঝে উঠতে পারছে না কি হলো।
“প্লিজ শান্ত হ বোন।আমাকে বল কি হয়েছে।”

“ভাইয়া তিথি……..

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে