#সমুদ্র_বিলাস
#Rahnuba_mim
পার্ট:১
আহিলের পদতলে বসে কুহেলিকা ফুঁপিয়ে কাদঁতে লাগলো।ভেজা কন্ঠে বলে উঠলো প্লিজ আহিল ভাইয়া তুমি এমন করো না।তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি।আর তুমি তো আমাকে ভালোবাস,তাহলে আজ কেনো সারা আপুকে বিয়ে করছো।
আহিল চোখ বন্ধ করে মৌনতা পালন করতে লাগলো।তার কাছে যে কোনো উত্তর নেই।সে কলেজ লাইফ থেকে সারার সাথে রিলেশন করে আসছে।হঠাৎ একদিন সারা তার বাবার সাথে বিদেশে চলে যায়।আহিল বহু চেষ্টা করেও সারার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি।তারপর থেকে সে কুহেলিকার প্রতি ধীরে ধীরে আসক্ত হতে থাকে।হঠাৎ একদিন সারা ফিরে আসে।তখন থেকে আহিল কুহেলিকাকে ইগনোর করতে শুরু করে।
আহিল চারপাশে তাকিয়ে দেখে সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে।আহিলের খুব রাগ হচ্ছে,বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে এমনটা কুহেলিকা না করলেও হতো।
আহিলকে চুপ থাকতে দেখে পুনরায় কুহেলিকা বলে উঠে কিছু বল ভাইয়া।কাকিকে বল যে বিয়েটা ভাঙতে।
আহিল নরমালে বলে উঠে দেখ কুহি তকে কখনো আমি ভালোবাসেনি,আর না ভালোবাসবো।
কুহেলিকা অবাক হয়ে বললো তাহলে এতদিন তুমি আমাকে কিসের স্বপ্ন দেখাতে!
কুহি তর কোথাও ভুল হচ্ছে।তুই আমার ছোট বোন।তকে আমি নিজের বোনের মতো দেখি।
আর কিছু শুনার প্রয়োজন মনে না করে কুহেলিকা দপ করে উঠে রুমে চলে যায়।দরজা বন্ধ করে সে কাদঁতে থাকে।তখনি কুহেলিকা দরজায় কড়াঘাতের শব্দ শুনে ।দরজা খুলতেই আহিলের মা রানু কুহেলিকার গালে চড় দিয়ে বলে কি শুরু করছিস?আমাদের সম্পত্তি নেওয়ার জন্য মা মেয়ে দেখি উঠে পড়ে লেগেছিস।ভালোই ভালো বলছি তর ন্যাকামি বন্ধ কর।আহিল তো তকে বলেছে সে তকে ভালোবাসে না,তাহলে বেহায়ার মত এমন করছিস কেনো?
কুহেলিকা নিরবে চোখের পানি ফেলতে থাকে।তা দেখে পুনরায় রানু বলে উঠে আনজুম তোমার মেয়েকে সামলাও।পুনরায় যদি এমন ন্যাকামি করে তাহলে মা মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করতে বিলম্ব করবো না।
কথাটা বলে রানু রাগে রগড়াতে রগড়াতে চলে যায়।কুহেলিকা তার মাকে ধরে কেঁদে উঠে।আনজুমা বলেন তর এইসব পাগলামি রাখ।তারা আমাদের খেতে দিচ্ছে তা অনেক।তুই এইসব করলে তারা যদি বের করে দেয় তাহলে আমি তকে নিয়ে কোথায় যাবো?
কুহেলিকা প্রত্যুত্তরে কিছু না বলে কাঁদতেই থাকে।আনজুম আরো কিছু বলে চলে যায়।
কুহেলিকা তার মার এক মাত্র মেয়ে।তার বাবা মারা যাওয়াই সে এখন তার কাকা কাকিদের বাসায় থাকে।আর আহিল তার চাচাতো ভাই হয়।আহিল পড়াশুনা শেষ করে বর্তমানে বাবার ব্যবসা দেখছে।আহিলের আরেক ছোট ভাই নিরব সে কানাডায় পড়াশুনা করছে।বছরে সে একবার দেশে আসে।কুহেলিকা আর নিরব সমবয়সি।তবুও তাদের মাঝে তেমন আলাপ হয় না।
কুহেলিকা বালিশে মুখ গুজে ভাবতে লাগলো কখনো কি আহিল তাকে ভালোবাসেনি।তাহলে সেদিন সে কি মিথ্যা বলেছিলো?সেদিন বিকালে কুহেলিকা ঘুম থেকে উঠে দেখে বাড়িতে কেউ নেই।তখনি তার মনে হয় আজ তো মেলা যাওয়ার কথা।সে ঘুমিয়ে ছিলো বলে সবাই হয়তো তাকে রেখে চলে গেছে।যখন দিগন্তে স্বর্ণরেখা বিলিন হয়ে গেলো তখন আকাশ গর্জন করে বারি বর্ষণ করতে শুরু করে।তখনি কলিংবেল বেজে উঠে।কুহেলিকা দরজা খুলে দেখে আহিল কাকভেজা হয়ে আছে।
কুহেলিকা প্রশ্নোচক্ষুে বলে বাকিরা কোথায় আহিল ভাইয়া?
আহিল রুমে প্রবেশ করে বলে সবাই একটু পরে এসে যাবে।আমার বাসায় দরকার ছিলো বলে আগে এসেছি।যা তো আমার জন্য কফি নিয়ে আয়।
কুহেলিকা কফি নিয়ে আহিলের রুমে যায়।আকাশ গর্জন করার সাথে সাথে কারেন্ট চলে যায়।কুহেলিকা তখন ভয়ে বলে উঠে ভাইয়া তুমি কোথায়?আমার ভয় করছে।
কারো গরম নিঃশ্বাস কুহেলিকা তার ঘাড়ে অনুভব করে।ভয়ে সে নড়াচড়া করলে আহিল বলে একদম নড়াচড়া করবি না।
আহিল ভাইয়া কি করছো এইসব?
তকে আমি খুব ভালোবাসি কুহি।আমাকে ভালোবাসবি,তকে আজিবন আগলে রাখবো।
কথাটা বলে আহিল কোনো উত্তরের আশা না করে কুহেলিকার অবেণীসম্বন্ধ কেশরাশির অভ্যন্তরে মুখ গুজায়।
কুহেলিকা তখন লজ্জায় আহিলকে আলতো ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসে।এইদিনের পর থেকে তাদের সম্পর্ক আস্তে আস্তে গাঢ় হতে থাকে।
কুহেলিকার আজ চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে।বিরবির করে বলো প্রতারক, আহিল ভাইয়া প্রতারক।আর কখনো আমি তোমার মুখোমুখি হবো না।
রাতে কিছু না খেয়েই কুহেলিকা ঘুমিয়ে পড়ে।শেষ রাতে পানি পিপাঁসায় তার ঘুম ভেঙ্গে যায়।তখন সে নিচে পানি পান করতে আসে।
তখনি কলিংবেল বেজে উঠে।কে আসতে পারে ভাবতে ভাবতে সে দরজাটা খুলে।দরজা খুলে দেখে কোনো পুরুষের মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে।ভালোভাবে লক্ষ্য করে দেখে নিরব।
নিরব দরজার ওপারে অপূর্ব রমণীমূর্তি দেখতে পায়।রমণীর কেশভার অবেণীসম্বন্ধ সংসর্পিত,রাশিকৃত,আগুলফলম্বিত।তদগ্রে দেহরত্ন যেনো চিত্রপটের উপর চিত্র দেখা যাচ্ছে।অন্ধকারের কারণে রমণীর মুখশ্রী সম্পূণ প্রকাশ পাচ্ছে না।তথাপি মেঘবিচ্ছেদনিঃসৃত চন্দ্ররশ্মির ন্যায় প্রকাশ পাচ্ছে।বিশাল লোচনে কটাক্ষ অতি স্নিগ্ধ।নিরব অকস্মাৎ এইরুপে মূর্তি দেখে নিস্পন্দশরীর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।কুহেলিকা অনিমেষলোচন বিশাল চক্ষু নিরবের মুখশ্রীতে ন্যস্ত করে বলে নিরব ভাইয়া ভিতরে আসো।
নিরব প্রশ্নোচক্ষু বললো কে তুমি?
আমি কুহেলিকা,কেনো আমাকে চিনতে পারোনি?
নিরব মাথা চুলকিয়ে বললো না,বহু দিন পর দেখছি তাই চিনতে অসুবিধা হচ্ছে।
কুহেলিকা প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলল তোমার জন্য কি কফি আনবো।
না আনতে হবে না।সকাল প্রায় হলো বলে।তুমি শুয়ে পড় গিয়ে ,আমি আম্মুকে গিয়ে ডাকি।
কুহেলিকা আচ্ছা বলে নিজের রুমে চলে যায়।
সকাল আটটায় কুহেলিকার নিদ্রা ভাঙ্গে পর সে নিচে আসতেই রানু বলে উঠে মহারাণীর বুজি এখন ঘুম ভাঙ্গলো।এখন কে তর কাজ করবে।যা এখনি কাজে লেগে পড়।
কুহেলিকা প্রত্যুত্তরে মাথা নেড়ে কাজ করতে শুরু করে।কাজ প্রায় শেষের দিকে তখন আনজুমা বলেন তর আর কিছু করতে হবে না।তুই বরং নিরবকে কফি দিয়ে আস।কুহেলিকা কফি নিয়ে নিরবের রুমে যায়।নিরব তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।কুহেলিকা কয়েকবার নিরবকে ডাকলে নিরব তন্দ্রার ভাব নিয়ে মিটমিট করে তাকিয়ে বলে ডাকছো কেনো?
আপনার কফি।
নিরব শুয়া থেকে উঠে বলে টেবিলে রাখ।দমকা বাতাসে কুহেলিকার চন্দ্ররশ্মিবর্ণাভা অবিন্যস্ত কেশভার মধ্যে প্রায় অর্দ্ধলুকায়িত হলো।তার কেশতরঙ্গমালার কারণে কফির মগটা হালকা হেলে গিয়ে নিরবের পায়ে এসে বলে।সাথে সাথে নিরব আহ বলে শব্দ করে।অকস্মাৎ এমন ঘটনায় কুহেলিকা ভয় পেয়ে যায়।এমনিতে বাড়িতে তাকে নিয়ে অশান্তি তার উপর যদি তার কাকি শুনতে পারে সে নিরবের পা পুড়িয়ে দিয়েছে তাহলে তাকে আর আস্ত রাখবে না।কুহেলিকা ভয়ে ,আতঙ্কে কেঁদে উঠে।নিরব তা দেখে বলে উঠে এতে কাঁদার কি আছে?তুমি তো ইচ্ছা করে ফেলনি।
তবুও কুহেলিকা কান্না বন্ধ করে না।রানু তখনি রুমে ঢুকে।নিরবের পায়ের অবস্হা দেখে কুহেলিকার দিকে রাগান্বিত হয়ে তাকিয়ে বলে দিলি তো নিরবের পা পুড়িয়ে।তুই আমার ছেলেদের ক্ষতি না করে কি শান্তি পাছ না।
মা শান্ত হও, কুহেলিকা তো ইচ্ছা করে ফেলেনি।
তুই থাম।কুহি ইচ্ছা করেই তা করেছে।
কথাটা বলে রানু কুহেলিকার হাত ধরে টানতে টানতে রুমে বাহিরে নিয়ে যায়।নিরব মাকে আটকানোর জন্য দাঁড়ালে পুনরায় ব্যথায় কুঁকিয়ে উঠে।
রানু কুহেলিকাকে তার রুমে এনে জুড়ে থাপ্পর দিয়ে বলে কি চাস তুই ?আহিলের জিবন শেষ করতে পারিসনি বলে এখন নিরবের পিছনে লেগেছিস।কখনোও যেনো তকে নিরবের কাছে না দেখি।
তীরের বনরাজি অবিচ্ছিন্ন মসীলেখায় সন্ধ্যাবধুর সোনার শহরে কালো পাড় টেনে দিল।পাখিগুলো বাসায় এসে কলরব থামিয়ে দিল।পশ্চিমাকাশ হতে সন্ধ্যার শেষ স্বণচ্ছায়া মিলিয়ে গেলো।তখনি মাইকোর শব্দ শুনা যায়।আহিল বউ নিয়ে এসে পড়েছে।।বাড়িতে বউকে বরণ করার জন্য আয়োজন হতে থাকে।কুহেলিকার অজান্তে আঁখি থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।নিজের চোখের অশ্রু গোপন করার জন্য নিজের রুমে যায়।রুমের দরজায় এসে সে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।নিজের বিক্ষুব্ধ বক্ষকে শান্ত করার জন্য রুমে ঢুকে।তখনি সে কাঠের উপর তার মায়ের অচেতন দেহ দেখে দৌড়ে মায়ের কাছে যায়।
চলবে,,,,,,,