সব সম্পর্কের নাম হয় না পর্ব-১৫ এবং শেষ পর্ব

0
1601

💗#সব_সম্পর্কের_নাম_হয়_না💗

পর্বঃ১৫(অন্তিম পর্ব)

#লেখাঃ #বাশরুন_বর্ষা

তড়িঘড়ি করে স্টেশন পৌছাতেই বৃষ্টি দেখে আন্না একটা বেঞ্চিতে বসে আছে।এগিয়ে গিয়ে সামনে দাঁড়ায় বৃষ্টি,

“এটা কি ধরনের পাগলামো বলো তো?এতোদিন জোর করলাম কই তখন তো রাজি হলে না।আবার একা একাই চলে আসলে? আর তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে না তুমি পথ হারিয়ে ফেলেছিলে।দিব্বি তো বসে আছো।

বৃষ্টির কথা শেষ হতেই উঠে দাঁড়ায় আন্না।ফিক হেসে বলতে লাগে,

” সত্যিই ভাবছিলাম রাস্তা হারায় ফেলছি এর লিগাই তো ফোন দিছি তোরে।আমি সেই কোন সময় আইসা বইসা আছি এই জায়গায়।কিন্তু তুই নামলি কোন সময় আর এইখান থিকা বাইর হইলি কোন সময়?

“নেমেই বের হয়েছি।এখন বলো যাবে তো আমার সাথে নাকি আবার কোন বাহানা করবে?

” নাহ এইবার আর যাইতাছি না ওই ঢাকা শহরে।আর শুধু তাই না ওই জাহান্নামেও আর যামু না।সব ছাইড়া চইলা আইছি।আর ওগোরে কইছলাম এই পথ ছাইড়া দে।কয়জন শুনলো কয়জন রইয়াই গেলো।

পরের কথাগুলো হয়তো বৃষ্টির কানে গেলো না তার আগেই আন্নাকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে।

“তুমি সত্যি বলছো? আর যাবে না তুমি ওখানে?এখন থেকে আমার সাথেই থাকবে সবসময়?

” হ রে পাগল হ।আর যামু না।এহন চল বাসা কই নিছোস? আমি তো আর তোর সাথে কলেজে যাইতে পারুম না তাই না?

“হ্যাঁ চলো তোমায় আগে বাসায় দিয়ে তারপর না কলেজে দেখা করবো।

বৃষ্টি আর আন্না চলে যায় বাসায়।

উচ্ছ্বাসের বাড়ির সবাই ট্রেন থেকে নেমে দাদি বাড়ি দিয়ে পৌঁছে। সেখানে বাড়ির সবাই কথাকে নিয়ে ব্যস্ত।যদিও সেখানে সহানুভূতি টাই বেশি।কারণ কথা যে কথা বলতে পারে না।ব্যাপারটা উচ্ছ্বাসের মোটেও ভালো লাগছে না।তাই কথাকে উঠিয়ে নিয়ে রুমে চলে যায়।বাড়ির এতোগুলো লোকের সামনে থেকে কথার হাত ধরে রুমে নিয়ে যেতেই লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে কথার মা।এদিকে অজান্তা খানের রাগ যেনো বেড়ে আরও চারগুন হয়ে যায়।

“রুমে আসার পরই বোঝাতে লাগে কথা,

” এভাবে সবার সামনে?

কথাকে থামিয়ে দেয় উচ্ছ্বাস।আর নিজেই বলতে লাগে,

“কেনো নিয়ে এসেছি বুঝতে পারছো না? দেখছিলে না কিভাবে ব্যবহার করছিলো তোমার সাথে?

” ওনারা তো আমাকে আদড়ই করতে?

“চুপ একদম।কোন আদড় আর কোনটা করুনা আমি বুঝি কথা।তুমি হয়তো শুনতে বা বলতে পারো না।তার মানে এই না যে তুমি কিছুই পারো না।বরং আর পাঁচটা স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে অনেক বেশিই জানো তুমি।আচ্ছা একটা কথা বলো তো আমি তো তোমায় কতোভাবে কষ্ট দিয়েছি। কোনদিন কি তোমায় তোমার কথা বলতে না পারা বিষয়টা নিয়ে কিছু বলেছি বলো?

” কি শুরু করলেন বলুন তো? ছাড়ুন এসব।আমি কিছু মনে করি নি।

“তুমি??

ভাইয়া ভাবিকে বলো যে গোসল করবে কিনা? তাহলে আমি সাথে করে নিয়ে যাই।চাচাতো বোন সোহানার ডাকে দড়জার কাছে যায় উচ্ছ্বাস।

” ভিতরে এসো সোহান।

“কিছু বলবে ভাইয়া?

” কথা কিছু বুঝতে পারছে না শুধু তাকিয়ে আছে। একবার উচ্ছ্বাসের দিকে একবার সোহানার দিকে।

“তোমার ভাবি কথা বলতে পারে না কানেও শুনতে পায় না জানো তো?

” হ্যাঁ জানি বলেই তো,,

সোনাহাকে আর কিছু বলার সুযোগ দেয় না উচ্ছ্বাস।

“জানো বলেই এই সহানুভূতি দেখাচ্ছো সবাই মিলে? শুনো সোহানা আমার স্ত্রী হয়তো বলতে আর শুনতে পারে না কিন্তু বাকি সব কাজই করতে পারে। তাই ওকে অন্ধ বা পঙ্গু ভাবার কিছু নেই।কথাটা বাড়ির সবাইকে বলে দিও। এখন তুমি আসতে পারো।

সোহানা মাথা নিচু করে চলে যেতেই কথা এগিয়ে আসে উচ্ছ্বাসের দিকে।

” এতো কি বললেন ওকে?

“কিছু না ভোর বেলা সবাই জাফলং যাবো দেখতে যাবো রেডি থেকো কেমন?

চারদিক কোয়াশায় আচ্ছন্ন।স্বচ্ছ পানির পাশদিয়েই হাজার হাজার পাথর। অতিথি পাখির কিচির-মিচির শব্দে ভরে যাচ্ছে চারদিক।বাড়ির সবাই এসেছে সেখানে শুধু উজ্জ্বল বাদে।সবার সাথে একসাথে বের হলেও ছেলে এই ভোরবেলা কোথায় গেলো সেই চিন্তায় অস্থির অজান্তা খান।একের পর এক ফোন।করেই যাচ্ছে কিন্তু কোন ভাবেই রিসিভ করছে না ফোন।ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে হাটতে হাটতে কখন যে একটা পাথরের সাথে হোচট খেয়ে পরে যায় টেরই পায় না অজান্তা। আর পরার সাথে সাথে খুব বাজে ভাবে আরেকটা পাথরের সাথে মাথায় আঘাত লাগে।খানিক বাদেই খেয়াল করে তার বা পায়ের উপর ভারি একটা পাথর পরে আছে।ব্যাথায় জান যায় যায় অবস্থা অজান্তার চিৎকার করে ডাকছে সবাইকে। কিন্তু হাটতে হাটতে কখন যে এতোদূর চলে এসেছে খেয়ালই করে নি। একদিকে মাথায় চোট আরেক দিকে পায়ের এই হাল।ফোনটা ছিটকে যে কোথায় পরেছে বুঝতেই পারছে না সে।

এদিকে উচ্ছ্বাসরা সব ভাইবোন মিলে তো পানিতে ইচ্চমতো ভিজে যাচ্ছে।শুধু কথা দাঁড়িয়ে আছে একটাপাশে।কারণ ওর বেশিক্ষন পানিতে থাকা বারণ। এলার্জিতে শ্বাসকষ্ট হয়।একটু বাদেই খেয়াল করে বাবার ইশারায় ডাকছে কথাকে। তাই এগিয়ে যায় বাবার দিকে,

” তোমার মাকে দেখেছো?

কথা আঙুল ইশারায় নিজের মাকে দেখায়।

“অজান্তাকে।দেখেছো।অনেকক্ষন হয় ফোন করে যাচ্ছি।ধরছে না।

” না বাবা দেখি নি আসেপাশেই আছে হয়তো আমি দেখছি।বলেই কথা চলে যায় ওখান থেকে।আসেপাশে শাশুড়ীকে খুজতে লাগে।কিন্তু কোথাও দেখে না।আরও কিছুদূর যেতেই পায়ে কিছুর স্পর্শ পেয়েই নিচে তাকায় কথা।দেখে যে মায়ের ফোন পরে আছে।ফোনটা দেখা মাত্রই ভয় বেড়ে যায় কথার।তাহলে কি কোন বিপদ হলো? এদিক ওদিক তাকায় কথা।খেয়াল করে একটু দূরেই কেউ হাত ইশারা করছে হয়তো।কুয়াশায় স্পষ্ট দেখার উপায় নেই।কথা এগিয়ে গিয়েই এক দৌড় দেয়।মায়ের এই অবস্থা দেখে হাত পা কাপতে থাকে।এতো বড় একটা পাথরের টুকরো কিভাবে পরলো? এপাশ ওপাশ দৌড়াতে লাগে কথা।চিৎকার দিয়ে আসেপাশে কাউকে ডাকার বৃথা চেষ্টা করে।কিন্তু কোন লাভ হয় না।অবশেষে নিজেই আপ্রান চেষ্টা করে পাথরটা সরানোর।কিন্তু কিছুতেই পারে না।কথা মায়ের মাথার কাছে গিয়ে দেখে মাথা দেখে রক্ত গরাচ্ছে।নিজের সুতির শাড়ির আচল টা দাতে কাটে কথা এরপর মাথাটা আটকে দেয়।মাকে একটু সাহস দিয়ে আবারও পায়ের কাছে যায় কথা নিজের সর্বশক্তি দিয়ে এবার পাথরে ধাক্কা দেয় কথা। আর আল্লাহর অশেষ রহমতে পাথরটা সরেও যায়।পা টা পুরো অবশ হয়ে যায় অজান্তার।কথার দিকে তাকাতেই হাওমাও করে কেঁদে দেয়।যাকে এতোদিন অপয়া ভেবেছে অলক্ষি ভেবেছে।বারবার যার মৃত্যু চেয়েছে।আজ আল্লাহ তার হাতেই নিজের প্রান বাঁচালো।শাশুড়ীকে এভাবে কাঁদতে দেখে কথা ভাবে যে হয়তো পায়ে ব্যাথা করছে তার।কথা পায়ের কাছে গিয়ে পা টা ধরে নিজেও কাঁদতে লাগে।হুট করেই মাথায় আসে সবাইকে ব্যাপারটা জানানো দরকার।কথা বাবার ফোনে একটা ম্যাসেজ করে কারণ আর কাউকেই এখন ফ্রি পাওয়া সম্ভব না।একটু বাদেই সবাই চলে আসে সেই জায়গায়।

আজ ৩ দিন হয় কলেজে জয়েন করেছে বৃষ্টি। আর এই তিনদিনই বিকেলের শিফটে। আজকে সকালের শিফটে ক্লাস নিয়ে দুপুরবেলা কলেজ থেকে বের হয় বৃষ্টি। গেটের সামনে আসতেই দেখে উজ্জ্বল দাঁড়িয়ে আছে।এই তিনদিন মাকে নিয়েই পরেছিলো সবাই।তাই আর সামনাসামনি হতে পারে নি উজ্জ্বল। উজ্জ্বলকে সামনে দেখা মাত্রই তড়িঘড়ি করে অন্যদিকে ঘুরে চলে যেতে লাগে বৃষ্টি উজ্জ্বলও পেছন পেছন আসতে লাগে।কয়েক পা এগোতেই থেমে যায় বৃষ্টি। পাশেই দাঁড়ায় উজ্জ্বল। চোখ দুটো আটকে যায় বৃষ্টির। একটু দূরেই একটি মেয়ে এক মহিলাকে খাবার খাইয়ে দিচ্ছি।পাশেই দাঁড়িয়ে আছে এক ভদ্রলোক।তবে মহিলাটার অবস্থায় কোন ভদ্রতা নেই।এলোমেলো চুল।ময়লা শাড়ি।হাতে পায়ে মাটি লেগে আছে।দূরে থাকা মানুষ দুটোকে খুব বেশিই চেনা লাগছে বৃষ্টির।আর কিছু না ভেবে এগিয়ে যায় সেদিকে।আর সামনে গিয়েই যেনো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না বৃষ্টি। এ যে তার সেই বাবা মা।কিন্তু মায়ের এই অবস্থা কিভাবে হলো।বৃষ্টিকে সামনে দেখা মাত্র উঠে দাঁড়ায় বাবা।চিনতে হয়তো ভুল হয়নি।খাবার খাইয়ে মেয়েটি চলে যেতে নিলেই হাত ধরে নেই মা।

“এই তুই মাকে রেখে কোথায় যাচ্ছিস হ্যাঁ। একদম যেতে দিবো না। এই যাবি না তুই একদম না।কথাগুলো বলেই মেয়েটাকে খুব শক্ত করে চেপে ধরলো মা।বৃষ্টি অবাক হয়ে দেখছে শুধু।মেয়েটি অনেক কষ্টে নিজেকে ছাড়িয়ে আড়ালে চলে যায়।বৃষ্টিও কারো সাথে কোন কথা না বলে মেয়েটার পিছু পিছু যেতে লাগে।

” এই মেয়ে শুনো?

বৃষ্টির ডাক্ব ঘুরে তাকায় মেয়েটি।উজ্জ্বল এখনো বৃষ্টির সাথে।বৃষ্টি এগিয়ে এসে মেয়েটিকে সাত পাঁচ না ভেবেই বলতে লাগে,

“চেনো তুমি ওনাদের?

” না ম্যাম। সেরকম ভাবে তো চিনি না। তবে অনেকদিন হয় ওনারা এখানে আসেন।একদিন কেউ আমার নাম ধরে ডাকছিলো ওনাদের সামনে আর তখন থেকেই ওই মহিলা আমাকে নিজের মেয়ে ভেবে নেয়।আর এরকম পাগলামো করে।

“ওনার মেয়ে মানে?

” ওনার হাসবেন্ড এর কাছ থেকে যতোদূর শুনেছি ওনাদের নাকি দুটো ছেলেমেয়ে ছিলো ছেলেটা নাকি গতো দুবছর হয় মারা গেছে।আর মেয়েটা নাকি এসএসসি পরিক্ষার পরেই কোথায় হারিয়ে গেছে।সেই শোকেই নাকি স্ত্রীর এই দশা।ওহ ওনার মেয়ের নামও নাকি বৃষ্টি ছিলো।সেজন্যই আমাকে।দেখলে এমন করে।বড্ড মায়া হয় জানেন? বেচারা দুজন সন্তান হারিয়ে কি হালটাই না হয়েছে আজ।ওনার হাসবেন্ডও এখন খালি প্রায়।স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য কতো কি যে করে যাচ্ছে।শুনেছি শশুর বাড়ির সবাই নাকি ওনার স্ত্রীকে বের করে দিয়েছিলো কিন্তু লোকটা স্ত্রীকে একা ছাড়ে নি।আবার নিজে কোন কাজও ঠিকঠাক করতে পারছে না। আল্লাহ কিসের পরিক্ষা যে নিচ্ছে ওনাদের?

মেয়েটার কথা শুনে অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে বৃষ্টি। সেদিন রাতে বৃষ্টি ঘুরেছিলো রাস্তায় রাস্তায়।আজ কালের বিবর্তনে সেই মানুষ দুটোই রাস্তায়।প্রকৃতি আসলেই হয়তো ক্ষণিকের জন্য মানুষকে।ছাড় দেয় তবে ছেড়ে দেয় না।

“ম্যাম ঠিক আছেন আপনি?

” ইটস ওকে।সরি তোমার টাইম ওয়েস্ট জন্য।

“ইটস ওকে ম্যাম।

মেয়েটি চলে।যেতে গেলেই আবার পিছু ডাকে বৃষ্টি।

” জ্বি ম্যাম?

“ওনাত হাসবেন্ড ওনাকে হসপিটাল এডমিট করছেন না কেন জানো কিছু?

” কিভাবে করবে? সেখানে যে খরচ তা কিভাবে দেবে কোন কাজই তো এখন করতে পারে না।

“আমি যদি ব্যবস্থা করে দেই তোমার কোন প্রবলেম হবে?

” মানে?

“মানে ওনাকে যতো দ্রুত পারো হসপিটালে ভর্তি করাও।যা যা করতে হয় আমি করবো।তবে প্লিজ আমার কথা তুমি বলবে না। প্রমিজ করো?

মেয়েটা কিছুক্ষন চুপ থেকে বৃষ্টির কথায় রাজি হয়ে চলে গেলো।

” এখনো তুমি এদের জন্য কিছু করবে বৃ.

বৃশু বলতে গিয়েও থেমে।যায় উজ্জ্বল। তাই বৃষ্টি নিজে থেকেই বলে উঠে,

“দেখলে তো উজ্জ্বল সব #সম্পর্কের_নাম_হয়_না?ওই মানুষগুলোর সাথে কিন্তু এই মেয়েটার কোন সম্পর্কই নেই।তবু দেখো মেয়েটা ভাবে ওদের জন্য।আর কি কি করে যাচ্ছে ওদের জন্য?

” সরি বৃশু।ভুল হয়ে গেছে আমার।প্লিজ ক্ষমা করো।আমি আসলে।

“ছাড়ো ওসব। কবে ফিরছো ঢাকা।

বৃষ্টির কথার কোন উত্তর না দিয়ে পালটা প্রশ্ন করে বসে উজ্জ্বল,

” বললে না তো কেন করলে এসব?

“কারণ একজন।অন্যায়কারীর আগে তারা আমার নতুন জীবনদাতা।আল্লাহর ইচ্ছাতেই তারা আমায় তুলে নিয়েছিলো।সেদিন যদি আমায় তারা না নিয়ে যেতো আজ আমি এখানে থাকতাম না উজ্জ্বল। আমি শুধু সেই প্রতিদানটুকু দিতে চাইছি।এছাড়া আর কিছুই না।

” সেটা তো সামনে থেকেও করা যেতো?

“সেই ইচ্ছা নেই।চাইলেই আমি তাদের আমার সাথে রাখতে পারতাম তবে সেটা তাদের জন্য শাস্তিস্বরুপ হতো।প্রতি দিন একটু একটু করে শেষ হতো।অপরাধবোধটা জেকে বসতো খুব করে।আমি সেটা চাই না।

উজ্জ্বলকে আর কিছু বলতে না দেখে বৃষ্টি আবারও বলে,

” এখন আসি উজ্জ্বল। আন্না বাসায় একা?

“আন্না?

” হ্যাঁ আমার সাথেই থাকে এখন।কথাটা বলে চলে যায় বৃষ্টি।

বাসায় গিয়ে অনেকবার কলিংবেল চাপে বৃষ্টি। কিন্তু কেউ দড়জা খুলে না।ব্যাপারটা ঠিক বুঝে পায় না বৃষ্টি। আবার ভাবে হয়তো ঘুমিয়ে আছে আন্না তাই বাইরে থেকে নিজেই লক খুলে ভীতরে ঢুকে বৃষ্টি। ব্যাগটা ডাইনিংয়ে রেখে রুমে পা রাখতেই চমকে যায় বৃষ্টি। বুকে হাত দিয়ে বিছানায় ছটফট করছে আন্না। তড়িঘড়ি করে সামনে এসেই কোলে মাথা রাখে।

“কষ্ট হচ্ছে তোমার? কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলো? এরকম কেন করছো? পানি খাবে? দাড়াও আনছি।

বৃষ্টি ওঠে পানি খাওয়ায় আন্নাকে কিন্তু তবুও কোন পরিবর্তন না দেখে এম্বুলেন্স কল করে।

রাত্রি ১১ টা। হসপিটালের কেবিনে শুয়ে আছে আন্না।একটু আগেও খুব খারাপ অবস্থায় ছিলো। কিছুক্ষন হয় একটু স্বাভাবিক। আন্নার হাত দুটো দুইহাতে জাপটে কপালে ধরে আছে বৃষ্টি। কোন কথাই বের হচ্ছে না মুখ থেকে। শুধু পানি গড়িয়ে পরছে। কিছুক্ষন বাদেই ডাক পরে বৃষ্টির। আন্নার মাথায় হাত বুলিয়ে বাইরে চলে আসে ডক্টরের সাথে কথা বলার জন্য।অনেকদিন ধরেই হৃদরোগের সমস্যায় পরে আছে আন্না।কিন্তু আজকে যে ব্যাপারটা এতোদূর যাবে ভাবতেও পারে নি।ডক্টরের চেম্বারে যেতেই ডক্টর বৃষ্টিকে সামনের চেয়ারটাতে বসতে বলে।কিছুক্ষন নিরবতার পর সার্জন ডক্টর এক্সরে ছবি দেখালেন বৃষ্টিকে,

“দেখছেন, হৃদযন্ত্রটা কিভাবে গোটা বুকের খাঁচাটা ভরে রেখেছে? এটা হলো হার্টের বাঁ দিক, কিভাবে ফুলে রয়েছে৷” আমার পক্ষে আর ওষুধ দিয়ে রোগীকে বাচানো সম্ভব না।

কথাটা শুনেই বৃষ্টির অন্তর আত্না কেমন কেপে ওঠে।ওষুধে আর কাজ হবে না মানে কি?এই মানুষটা বাঁঁচবে না আর?কাপা কাপা গলায় বলতে লাগে বৃষ্টি,

“ওষুধে বাঁচবে না মানে কি ডক্টর? এছাড়া আর কি উপায় আছে? কোন উপায় তো নিশ্চয় আছে তাই না?

অত্যন্ত ঠান্ডা গলায় বলতে লাগে ডক্টর,

ঠান্ডা লাগা থেকে শুরু তারপর ভাইরাস ইনফেকশনের ফলে রোগীর হার্ট বেড়ে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, উনার এখন জীবনসংশয়৷ বাঁচার একমাত্র আশা হলো, অন্য কোনো মানুষ মারা যাওয়ার ফলে তিনি যদি তাঁর সুস্থ হৃদযন্ত্রটি পান৷

ডক্টরের এমন কথায় আৎকে উঠে বৃষ্টি। একজন কে মেরে আরেকজনকে বাঁচাবে মানে কি?

“আপনার কথা ঠিক বুঝলাম না ডক্টর?

“পেশেন্টের শরীরের যে অবস্থা হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট ছাড়া আর কোনো পন্থা আমাদের জানা নেই।

ডক্টরের কথায় শেষ চমকানো টা চমকালো বৃষ্টি। হার্ট ট্রান্সফার করতে গেলে তো আরেকটা মানুষের মৃত্যু নিশ্চিত। এটা কিভাবে সম্ভব।কাপা গলায় বলতে লাগে বৃষ্টি,

“কেউ কি তার নিজের হার্ট দিতে রাজি হবে ডক্টর?

“রাজি হওয়ার প্রশ্ন অনেক পরে মিস. ২৪ ঘন্টার মধ্যে অপারেশন টা করতে হবে।আর দুঃখজনক হলেও এটাই সত্যি আমাদের কাছে এই মুহুর্তে কোন অপশন নেই। এতো কম সময়ে কোন ডোনার খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

কোনমতে চেয়ার থেকে ওঠে বেরিয়ে আসে বৃষ্টি। বাইরে থাকা নীল রঙা চেয়ারটাতে বসে হাতদুটো মুখের সামনে নিয়েই কান্নায় ভেঙে পরে।এতোটা অসহায় তার কখনো লাগে নি।এতোটা অসহায় তো সেদিন রাতেও লাগে নি যেদিন তার বাবা নামক লোকটা একা রাস্তায় ফেলে চলে গেছিলো।এতোটা দিশেহারা তো সেদিনও লাগে নি যেদিন ওই অচেনা মহিলাটা ওইরকম জঘন্য একটা জায়গায় নিয়ে গেছিলো। ঢুকরে ঢুকরে কাঁদছে বৃষ্টি। কার কাছে যাবে। কে সাহায্য করবে।মানুষটা কি তাহলে এভাবেই শেষ হয়ে যাবে? যার জন্য নতুন একটা জীবন পেল।যার কারনে নতুন ভাবে বাঁচতে শিখলো সেই মানুষটাই আজ মৃত্যুর মুখে।সারাজীবন শুধু করেই গেলো বিনিময়ে কিছু করার সুযোগ হলো না বৃষ্টির। চিৎকার করতে চাইলেও পারছে না সে।কোনভাবেই পারছে।হুট করেই মাথায় কিছু একটা জেগে বসতেই মুখ তুলে তাকায় বৃষ্টি। দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে দু পা বাড়াতেই কারো সাথে ধাক্কা লেগে আবার বসে যায় পেছনে থাকা চেয়ারগুলোর একটায়।

“আর ইউ ওকে?

কথাটা শুনে মুখ তুলে তাকায় বৃষ্টি। সামনে থাকা মানুষটাকে দেখে অনেকটাই অবাক।চোখে চশমা পরনে সাদা শার্ট, সাদা রঙের এপ্রোনটা ডান হাতে ফেলে রাখা।হ্যাঁ মানু্ষটাকে বৃষ্টি চেনে।সনামধন্য কার্ডিয়াক সার্জন ড. সীমান্ত দাস। কলেজেরই সিনিয়র ছিলো। বৃষ্টি যখন এডমিশন নিলো ঠিক সেই বছরই উনারা পরিক্ষা দিয়ে বের হলো। সাইন্সের স্টুডেন্ট থাকার সুবাদে কয়েকমাস টিউশন নিয়েছে বৃষ্টি সীমান্তের কাছ থেকে।ডক্টর হওয়ার গল্প তখনই শুনেছিলো বৃষ্টি তার মুখ থেকে।কিন্তু হঠাৎই কোথায় যেনো উধাও হয়ে গেলো লোকটা। আজকে প্রায় ৬ বছরের কাছাকাছি সময় পর সামনাসামনি দেখা মানুষটার সাথে। এতোদিন পেপারে অনেক সাফল্যের ছবি বের হয়েছে তার। হুট করে যে এভাবে দেখা হয়ে যাবে ভাবতেই পারে নি।

“বৃষ্টি তুমি?

এতো বছর পর যে বৃষ্টিকে সীমান্ত এতো সহজেই চিনে ফেলবে এটাই অবাক লাগছে খুব।চোখের পানিটা কোনরকম মুছে স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায় বৃষ্টি।

“হ্যাঁ আসলে একটু কাজ ছিলো এখানে?

“এনি প্রবলেম? অনেকক্ষন কেঁদেছো মনে হচ্ছে?ওয়েট আমার মনে হচ্ছে এখানে তুমি কম্ফোর্ট ফিল করছো না চলো আমরা বাইরে যাই।

বৃষ্টি একবার আন্নার কেবিনের বাইরে থেকে দেখে সীমান্তের সাথে হসপিটালের বাইরে টায় চলে আসে।বাগানে চারপাশে আলো জ্বলছে।মাঝে মাঝে ঝাপসা অন্ধকার। অনেকটাই নিরিবিলি। পাশেই বসার জায়গা করা সেখানেই বসে দুজনে।কিছুক্ষন নিরব থেকে শুরু করে সীমান্ত,

“এবার বলো এখানে কি জন্য।আর ৪০৬ নাম্বার বেডের পেশেন্ট কি তোমার পরিচিত?

“হুম।

“কি হয় তোমার?

ছলছলে চোখ নিয়ে তাকায় বৃষ্টি। কি হয় আন্না তার। জানা তো নেই।

বৃষ্টির কোন উত্তর না পেয়ে কথা বাড়ায় না সীমান্ত,

“আচ্ছা এটা বলো হার্টের কোন ব্যবস্থা হয়েছে কি না?

চোখের জমানো পানি টুকু গড়িয়ে পরতে দেয় বৃষ্টি।.মুখে এক তৃপ্তির হাসি,

“হ্যাঁ হয়েছে। বাড়ির পাশের আরশি নগর টা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আর কোন চিন্তা নেই।আন্নার কিচ্ছু হবে না এবার।

“তাহলে তো ভালোই। আর হ্যাঁ অপারেশন টা আমিই করছি সো ডোন্ট ওয়ারি ওকে।

“থ্যাংকস।

“বায় দ্যা ওয়ে। ডোনার কখন আসবে? অপারেশন তো ২৪ ঘন্টার মধ্যেই করতে হবে।

“ডোনার আপনার সামনেই আছে। যখন খুশি অপারেশন শুরু করতে পারেন।

বৃষ্টির চোখে মুখে প্রশান্তি দেখা গেলেও সীমান্তের ভ্রু কুচকে আসে আপনা আপনি।

“তুমি ডোনার মানে? কি বলছো বুঝতে পারছো। আর তুমি এমনটা করলে তোমার কাছের মানুষগুলোর কি হবে বুঝতে পারছো? তারা কিভাবে বাঁচবে তোমায় ছাড়া?

উঠে দাঁড়ায় বৃষ্টি। আকাশে আজ খুব বেশি তারা নেই। তবে চাঁদটা পরিপূর্ণ। ছোট্ট একটা শ্বাস নেয় বৃষ্টি।

“আমার কাছের মানুষ? সে তো ওই কেবিনে শুয়ে আছে। শুধু কাছের মানুষ না আমার আত্না,আমার প্রাণ, সেই মানুষটা যদি না থাকে আমার বেঁচে থাকা বৃথা।

“ঝোকের বসে এরকম একটা ডিসিশন নিও না বৃষ্টি। একটু ভাবো।আচ্ছা আমি দেখছি কোন ব্যবস্থা করা যায় কি না।আমার অনেক জানাশুনা আছে।

“তার কোন দরকার নেই।আর আমি ঝোকের বসে কোন সিদ্ধান্ত একদমই নিচ্ছি না।আর আমি বাঁচবো না কে বলেছে।আমি তো বাঁচবো আমার আন্নার মাঝেই বাঁচবো।তার মধ্যে দিয়ে বলবো শুনবো। আপনি প্লিজ অপারেশন টা ঠিক করে করবেন।আন্না যেনো একেবারে সুস্থ হয়ে যায়।


শুনশান নিরব একটা কেবিন এক বেডে শুয়ে আছে বৃষ্টি পাশের বেডে আন্না।আর কিছুক্ষনের অপেক্ষা তাই সুস্থ হয়ে যাবে আন্না।একটু বাদেই উঠে বসে বৃষ্টি।কি মনে করে জানি ফোন করে উজ্জ্বলকে। উপাশ থেকে হ্যালো বলার সাথে সাথেই বৃষ্টি বলে ওঠে,

“তোমায় ভালোবাসি উজ্জ্বল। ভালো থেকো সবসময়।কথাটা শেষ হতেই ফোন রাখে বৃষ্টি। ওপাশে উজ্জ্বল যেনো এখনো ঘোরে পরে আছে।

চলবে,,

#সব_সম্পর্কের_নাম_হয়_না

অন্তিম পর্ব(বর্ধিত অংশ)

লেখাঃ #বাশরুন_বর্ষা

“অনেকক্ষন হয়ে যায় কিন্তু ডক্টর সীমান্তের কোন খবর নেই।বেড থেকে উঠে বসে বৃষ্টি। সামনে থাকা নার্স সহ আরেকজন সিনিয়র ডক্টরকে প্রশ্ন করে,

“ডক্টর সীমান্ত কোথায় ডক্টর?

“উনি এই অপারেশন টা করবে না।অন্য ডক্টর আসবেন এখানে আর পাঁচমিনিট হয়তো লাগবে।

বৃষ্টির খুব হতাশ লাগে।মনের ভেতর সংকা জাগে।অপারেশন টা ঠিকঠাক হবে তো?

এক বছর পর,

দুপুর গরিয়ে বিকেল। ভেপসা গরমে বিকেলটাও অনেকটাই অসহ্যকর হয়ে উঠেছে।ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছে কথা। তারই পাশের সোফায় উচ্ছ্বাস সহ পরিবারের সবাই।সাথে আছে বৃষ্টিও। প্রায় আড়াই মাস হয় কথাকে হিয়ারিং এইড পরানো হয়েছে। যার ফলে এখন শুনতে পায় সে। আর সারাদিনই চলে কথাকে কথা শেখানোর তোরজোর। এসবের একমাত্র উদ্যোক্তা বৃষ্টি। উজ্জ্বলের সাথে বিয়েটা করেই নেয় সে। এরপরেই অনেক চেষ্টার পর উপায়টা কাজে লাগায় কথার জন্য। প্রতিদিন একটু একটু করে শিখছে কথা। আর তাতে সবচেয়ে বেশি যে সামিল হয়েছে সে হলো অজান্তা খান।ছেলের বউয়েরা এখন তার দুটো মেয়ে। ঘড়ির কাটায় ঠিক সাড়ে ছয়টা বাজতেই উঠে দাঁড়ায় উজ্জ্বল আর বৃষ্টি। পাশে থাকা সাইড ব্যাগটা নিয়েই বেরিয়ে পরে বাসা থেকে। এতোটা সময় ধরে হাসিমাখা ড্রয়িংরুমটা নিমিষেই শান্ত হয়ে যায়।

এতিমখানার একটা নিরব রুমে বৃষ্টি আর উজ্জ্বল। সামনেই ৬০ বছর ঊর্ধ্ব এক বৃদ্ধা কানে তার স্টেথোস্কোপ যেটা বৃষ্টির বুকে ধরা। হৃদ স্পন্দন শুনছে বৃদ্ধা। খুব পরিচিত কাছের কারো হৃদ স্পন্দন।দীর্ঘসময় পর ভেজা চোখ তুলে তাকায় বৃদ্ধা।কাপা হাত দুটো বৃষ্টির গালে রাখে আলতো করে। আর তাতেই দু-চোখ ভরে উঠে বৃষ্টির। আজ আর থাকতে ইচ্ছে করছে না এখানে। প্রতিদিন নিজেকে শক্ত করে সামনে থাকা মানুষটাকে স্বান্তনা দিলেও আজ সম্ভব হচ্ছে না।কারণ আজকেই সেই দিনটা যেদিন বৃষ্টির হার্ট ট্রান্সফার হয়েছিলো।নিশ্চিত মৃত্যুটা কেউ একজন নিজের হাতে নিয়ে নিজের প্রানটা বিলিয়ে দিয়েছিলো ওই দিনটাতেই। এক মুহুর্ত দাঁড়ায় না বৃষ্টি পালিয়ে বাঁচে জায়গাটা থেকে।

রাত প্রায় ২ টা।বিছানা ছেড়ে আলমারি খুলে বৃষ্টি। সেখান থেকেই একটা কাগজের টুকরো বের করে চলে যায় বেলকনিতে। সামনে থাকা টি টেবিলের ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে বসে বৃষ্টি। কাপা হাতে হাতে থাকা চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করে ৩৫৮ বারের মতো।

“তোমায় না পাওয়ার অপূর্নতাটা থেকেই যেতো। থেকে যেতো তোমার অভাবটা।পূরন হতো না রাত জেগে দেখা স্বপ্নগুলো।চলা হতো না হাতে হাত রেখে।দেখা হতো না একসাথে আকাশের তারাগুলো। ধর্মের দেয়ালটা যে বড্ড বাধা হয়ে গিয়েছিলো।সমাজের বাধা ধরা নিয়মগুলো বড় বিষাক্ত হয়ে গিয়েছিলো।আর তাই তো পালিয়ে গিয়েছিলাম হুট করে তোমার থেকে।কিন্তু কি অদ্ভুদ দেখো সেই দেখা হলো।না চাইতে নয়। খুব করে চাওয়াতে হলো।রোজ প্রার্থনায় তুমি থাকতে।সৃষ্টিকর্তার কাছে খুব অভিযোগ ছিলো আমার জানো? খুব করে অভিমান করতাম কেন তুমি আমার হলে না? কেন মাঝে এই নির্মম দেয়ালটা আসতেই হলো। কিন্তু তার কাছে করা সকল অভিযোগ যেনো নিভে গেলো এক মুহুর্তে। সুযোগ হলো তোমায় পাওয়ার। সুযোগ হলো তোমার ভিতরে নিজেকে নেওয়ার।তোমার মধ্যে দিয়ে বাঁচার। না হয় আমার হাটা হলো না তোমার হাতে হাত রেখে।না হয় আমার চলা হলো না তোমার পায়ে পা মিলিয়ে।না হয় আমার ঘর বাধা হলো না তোমার ওই উঠোনে।।কিন্তু তোমার নিঃশ্বাসে থাকাতো হলো।বলা হলো না ভালোবাসি।তবে বুকের ভেতরটাতে জায়গা তো হলো। সৃষ্টিকর্তা সব না পাওয়াগুলো একসাথে পাইয়ে দিলো আমায়।আমি থাকবো তোমার সাথে সবসময়। তোমার প্রতিটি নিঃশ্বাসে। শেষ একটা ইচ্ছে আমার। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে আমি একটা মানুষের কাছে যেতাম ঠিক তোমার মতো।আমারও কেউ নেই পৃথিবীতে শুধু ওই মানুষটা ছাড়া। পারলে তাকে দেখে রেখো একটু।তোমার মাঝেই যে আমি আছি বুঝিও তাকে।

চিঠি পরা শেষে প্রতিরাতের মতোই ভেজা চিঠিতে তাকায় বৃষ্টি। দু-চোখ বন্ধ করে ভাবে সেই দিনটার কথা।

অপারেশন শেষে যখন নিজেকে জীবিত দেখলো যতটা না অবাক হয়েছিলো তার চাইতে বেশি ভয় পেয়েছিলো বৃষ্টি। ভেবেছিলো হয়তো আন্না নেই।অপারেশনটা হয়তো করে নি কেউ।অস্থির হয়ে বেড থেকে উঠে গিয়েছিলো।কিন্তু পাশের কেবিনেই মানুষটাকে দেখে পুরোপুরি অবাকই হয়ে যায় বৃষ্টি। একসাথে দুটো মানুষ কিভাবে বেঁচে আছে তারা? তাহলে কি তৃতীয় কোন ব্যক্তির আগমন ঘটেছিলো? কিন্তু সে কে? এমন কেউ কে হতে পারে? ভাবনার মাঝেই একজন নার্স বৃষ্টির কাছে আসে জোর করে নিজের বেডে শুইয়ে দিয়ে হাতে একটা চিঠি দিয়ে চলে যায়।এই সেই চিঠি যেখানে সীমান্ত সবটা বলে গিয়েছিলো।নিজের জীবনটা ত্যাগ করে ভালোভাসার মানুষটাকে পৃথিবীতে রেখে গেছে। সীমান্তর বলা শেষ কথাটা রাখতেই প্রতিদিন সন্ধ্যায় এতিম খানায় যায় বৃষ্টি। সেখানে গিয়ে তার শেষ ইচ্ছেটা পূরন করে আসে সে।আজও নিজের মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করে বৃষ্টির এমনটা কি সত্যিই হওয়ার ছিলো।কেউ একজন তাকে এতোটা ভালো সত্যিই বেসেছিলো? হ্যাঁ বেসেছিলোই তো। না হলে এতো বড় ত্যাগ কেউ কিভাবে করতে পারে।

তারায় ভরা ঝলমলে আকাশটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকায় বৃষ্টি। হঠাৎই কাধে পরিচিত স্পর্শ। ঠোঁটে এক চিলতে হাসি নিয়ে ঘুরে তাকায় বৃষ্টি বরাবরের মতোই প্রশ্ন করে উজ্জ্বলকে,

“আজও ঘুমাও নি?

“তুমিও তো চিঠিটা পড়া বাদ দাও নি?

“নিষেধ তো করো না।

“সেই সাধ্য যে আমার নেই।

“তুমি বড্ড বেশিই ভালো উজ্জ্বল।

যার জন্য তোমার মুখ থেকে এই কথাটা শুনছি তার থেকে ভালো আমি কখনোই হতে পারবো না বৃশু। মানুষটা শুধু তোমার নতুন জীবন দেয় নি।বরং আমার জীবনটাও বাঁচিয়ে দিয়ে গেছে।বিশ্বাস করো আমি এক সেকেন্ডও এই পৃথিবীতে থাকতে পারতাম না। মরে যেতাম আমি।

“আবার শুরু করলে তুমি? এই তো আমি তোমার সামনে।ধরে দেখো। কোথাও যাই নি আমি।কোথাও না।

রাতের শেষ প্রহরে বিছানায় গা এলায় দুজন। উজ্জ্বলের বাহু ধরেই ঘুমায় বৃষ্টি। চোখ বন্ধ করে শুধু একটা কথায় ভাবে সে জীবনে চলার পথে শুধু নামযুক্ত সম্পর্ক লাগে না মাঝে মাঝে নামহীন সম্পর্কগুলোও আত্না হয়ে যায়।হয়ে যায় প্রাণ।তখন চিৎকার করে পৃথিবীকে জানাতে ইচ্ছে করে দেখেছো তো রক্তের বাধন ছাড়াও মানুষ বাঁচে।খুব ভাল৷ ওয়া+ ম ভাবেই বাঁচে। সেই সম্পর্কগুলোর নাম লাগে না। কারণ #সব_সম্পর্কের_নাম_হয়_না।

#সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে