সব সম্পর্কের নাম হয় না পর্ব-১৪

0
991

💗#সব_সম্পর্কের_নাম_হয়_না💗

পর্বঃ১৪

#লেখাঃ #বাশরুন_বর্ষা

ঝকঝক শব্দে ট্রেন চলছে।পার করছে একের পর এক সবুজ ক্ষেত,গাছপালা, জানালার স্বচ্ছ কাচ বেয়ে গড়িয়ে পরছে কোয়াশার পানি। শ্বৈত্যপ্রবাহের কারণে বেলা ১১ টাকেও ভোর ৬ টা লাগছে।পাশে বসে সেগুলোই চেয়ে দেখছে কথা। হঠাৎই মাথায় কিছু একটার হালকা স্পর্শ পেয়ে ঘুরে তাকায় কথা।সামনে তাকিয়ে দেখে উচ্ছ্বাস কপালে হাত রেখে শুয়ে আছে সামনের সিটটায় । মাথাটা অপরপাশে। কিছু না ভেবেই আবার ঘুরতে যায় কথা।পাশে চোখ যেতেই দেখে লম্বা সিটটায় সাদা একটা কাগজ চারভাজ হয়ে পরে আছে।কাগজটা হাতে ওঠিয়ে আরেকবার উচ্ছ্বাসের দিকে তাকায় কথা। এখনো সে যেমনভাবে ছিলো তেমনই আছে। কাগজ খুলতেই চোখে পরে কালো কালির কতোগুলো লাইন। আগ্রহ বসত জানালার দিকে ঘুরেই পড়তে শুরু করে কথা,

মেঘের‘পরে মেঘ জমেছে, আঁধার করে আসে,

আমায় কেন বসিয়ে রাখ, একা দ্বারের পাশে?

কাজের দিনে নানা কাজে থাকি নানা লোকের মাঝে,

আজ আমি যে বসে আছি, তোমারি আশ্বাসে।

আমায় কেন বসিয়ে রাখ একা দ্বারের পাশে?

তুমি যদি না দেখা দাও, কর আমায় হেলা,

কেমন করে কাটে আমার এমন বাদল-বেলা।

দূরের পানে মেলে আঁখি

কেবল আমি চেয়ে থাকি,

পরান আমার কেঁদে বেড়ায় দুরন্ত বাতাসে।

আমায় কেন বসিয়ে রাখ একা দ্বারের পাশে?

বাইরে থেকে আসা তুখোড় বাতাসে খোলা চুলগুলো উড়ছে কথার। ফর্সা গালদুটো যেনো নিমিষেই লাল হয়ে ওঠেছে। অদ্ভুত এক শিহরণ খেলে যাচ্ছে মনে।পেছন ঘুরে মানুষটাকে দেখার ইচ্ছেটা প্রবল হলেও ঘুরতে পারছে না একদমই।এটা কি তাহলে তার কাছে যাওয়ার আহবান।নাকি কোন ভ্রম।হাতে থাকা চিরকুটটা অন্যকারো না তো? হতেও তো পারে কোন এক স্বার্থক প্রেমিকের লেখা। এতোশত ভাবনার মাঝেই কাধে সেই পরিচিত স্পর্শ। ঘুরে তাকাতেই দেখে উচ্ছ্বাসের হাতে একটা বকুল ফুলের মালা।

“এটা অন্য কারো হাতে লেখা না কথা।আমিই লিখেছিলাম। হ্যাঁ জানি আমি আমার ভেতরে হয়তো গোছানো কিছু নেই।তাই রবীন্দ্রনাথের সাহায্যটাই নিলাম।আমার এই অগোছালো আমিটাকে গোছানোর জন্য না একটা তুমি চাই। আর সেই তুমিটা একমাত্র তুমিই কথা।

মালাটা হাতে নিয়ে একটু একটু করে বুঝিয়ে যাচ্ছে উচ্ছ্বাস। সত্যিই সে অনুতপ্ত। সত্যিই সে চায় সবকিছু গোছাতে। কিন্তু সামনে থাকা মানুষটা কি বুঝবে তাকে?

পেছনে থাকা ট্রেনের দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ায় কথা।চোখে অঝোর ধারায় জল গরাচ্ছে।কাপা কাপা হাত দুটো ওঠিয়ে বুঝায়,

“আমার না খুব বলতে ইচ্ছে করছে।অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু পারছি না।কেন পারছি না বলুন তো?

কাঁদতে কাঁদতেই নিচে বসতে লাগে কথা।দুই বাহু ধরে উঠে দাড় করায় উচ্ছ্বাস।চোখের পানি মুছে দিয়ে আলতো করে হাত রাখে দুই গালে,

“তোমার কিছু বলতে হবে না।তুমি না হয় আমাকে এভাবেই বুঝিয়ে বলো সব।আমি না হয় তোমার না বলা কথা গুলোই বোঝার চেষ্টা করে যাবো।তোমার অব্যক্ত কথাগুলো না হয় আমি তোমার ভাষাতেই বুঝে নিবো।শুধু একটা কথা ভুল করলে একটু শুধরে নিও।যেভাবে পারো শুধরে নিও।তবু ছেড়ে যেও না প্লিজ। তুমি চলে যাওয়ার পরেই বুঝেছি কতোটা জুড়ে ছিলে তুমি। আর এটাকে যদি ভালোবাসা বলে তাহলে ভালোবেসে ফেলেছি তোমায় অনেক বেশিই ভালোবেসে ফেলেছি।

দু পা এগিয়ে আসে কথা।উচ্ছ্বাসের হাতে থাকা ফুলের মালাটা হাতে নিয়ে একবার দেখে। জানালার গ্রিল টা ধরে ঘুরে দাঁড়ায়।খানিক বাদের খোলা চুলগুলো একপাশে সরিয়ে দেয় উচ্ছ্বাস।গলায় শীতল হাতের স্পর্শে শিউরে ওঠে কথা।চোখ দুটো বন্ধ করতেই ঘাড়ে আসে তপ্ত গারো নিঃশ্বাস। বাম হাতের ওপর হাতটা রেখে উচ্ছ্বাসও তাকায় জানালার বাইরে। সময়টা এখন হয়তো সবচেয়ে সুন্দর যাবে তাদের।

পরনে নীল সাদা রঙের থ্রি পিছ।ঠোঁটে হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক। কানে ছোট্ট এক জোড়া দুল। উড়নাটা আজকে মেলে নিয়েছে বৃষ্টি। এই প্রথম বৃষ্টিকে খোলা চুলে দেখছে উজ্জ্বল। ভাবতেও পারে নি উজ্জ্বলের দেওয়া উপহারগুলো পরেই সামনে আসবে আজকে। বাবাকে চার পাঁচ বুঝিয়েছে অনু।তাই তো আলাদা ভাবে আসার সুযোগটা হলো দুজনের।কিন্তু এভাবে আলাদা কেবিনে অনেকটাই নারাজ বৃষ্টি। উজ্জ্বলেরও বেশ অস্বস্তিই লাগছে এখন। ঠিক হয়নি হয়তো এমনটা করা। কোন একটা কামড়াতে আর পাঁচটা মানুষের মতো বসলেই হয়তো ভালো হতো। অনেকক্ষন ধরেই নিরবতা চলছে বৃষ্টি আর উজ্জ্বলের মধ্যে। হাতে থাকা ফোনের স্ক্রিনেই মগ্ন বৃষ্টি। আর সেই সুবাদেই তাকিয়ে দেখার সুযোগ পাচ্ছে উজ্জ্বল। কেবিনের এক প্রান্তে বৃষ্টি আরেক প্রান্তে উজ্জ্বল। কিন্তু এভাবে তো আর এতোটা পথ পার করা যায় না। উপায় না পেয়ে দু কাপ কফি অর্ডার করে উজ্জ্বল। একটু পরেই এসে যায় সেটা।কফিহাতে এগিয়ে এসে সামনে থাকা টেবিলটায় রাখে উজ্জ্বল। ফোন থেকে মুখ তুলে তাকায় বৃষ্টি।

“কফি টা নাও। আর ভুলেও জানালা খুলো না কিন্তু।ভীষন ঠান্ডা।

শান্ত গলায় জবাব বৃষ্টির,

এসিটা কি খেয়ে অন করেছো? অফ করে দিলেই ওয়েদার টা নরমাল লাগবে।অন্তত যতোক্ষন ভেতরে আছি।

এতোটা নার্ভাসনেসে কখন যে এসিটা অন করেছে উজ্জ্বল সেটাই খেয়াল নেই।তাই তাড়াহুড়ো করে আগে এসি অফ করে নেয়।

যসরি বৃশু। আমার আসলে উচিৎ হয় নি এভাবে আলাদা..

“এখন কি এই গিলটি নিয়েই বাকি পথ যাবে।পারোও তুমি উজ্জ্বল। কি হয়েছে? ভোর ৬ টায় ট্রেনে ওঠেছি আমরা ২ টার মধ্যে নেমে যাবো।অলরেডি ১২ টা বাজতে চললো।

“আর এতোটা সময় তুমি শুধু ফোনেই ব্যস্ত ছিলে। আমি ওঠে এদিকে আসলাম বলেই না মনে পরলো তোমার, তুমি ছাড়াও আরও একটা মানুষ এখানে আছে।

“রাগ করলে?

“ওদিকটায় তাকাও একবার বৃশু।দেখো কি সুন্দর পরিবেশটা। পুরোটা জুড়ে কতোটা সবুজ।

কফির কাপে চুমুক দিতে দিতেই তাকায় বৃষ্টি। কোনরকম দেখেই বলে,

“হুম সুন্দর।

সামনে থেকে ওঠে এসে বৃষ্টির পাশে বসে উজ্জ্বল। বাম হাতটা সামনের টেবিলটাতেই ছিলো বৃষ্টির।হুট করেই সেই হাতের ওপর হাত রাখে উজ্জ্বল।চমকে যায় বৃষ্টি। পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে উজ্জ্বলের মুখটা বৃষ্টির মুখের থেকে একটু ওপরে। চোখের ইশারায় জানালার দিকে তাকাতে বলে উজ্জ্বল। বৃষ্টি ঘুরে তাকাতেই বলতে শুরু করে উজ্জ্বল,

“এই কাচের জানালার সামনে দেখো একবার।শিশির ফোটাগুলো কিভাবে গড়িয়ে পরছে দেখেছো? দূরের ওই সবুজ গাছগুলো দেখছো বৃশু? দেখো প্রকৃতি টা কতো সুন্দর। আল্লাহর সৃষ্টি পুরো পৃথিবীটাই কতোটা সুন্দর।আর সেই সুন্দরটাকে তুমি কেন এতোটা অবজ্ঞা করো বলো তো? দেখো না ওই ভিজে থাকা পাতাগুলোকে। কতোটা স্বচ্ছ দেখাচ্ছে না? ঠিক তোমার মতোই কিন্তু।

উজ্জ্বলের শেষ কথাটায় আবারও ঘুরে তাকায় বৃষ্টি। হাত টা সরিয়ে নিতে গেলেই সেটা আরও শক্ত করে ধরে বসে উজ্জ্বল,

“তুমি কি সত্যিই আমায় বুঝো না? নাকি বুঝতে চাও না বলো তো? কেন এভাবে পালাচ্ছো তুমি? তুমি চলে গেলে আমার কিছু একটা খালি হয়ে যাবে বৃশু প্লিজ এখানে থেকো না তুমি। কংক্রিটের শহরটায় যে তোমাকে খুব বেশিই প্রয়োজন আমার।হ্যাঁ তোমাকে চাই সেই শহরটায়। হাতটা ধরার জন্য তোমায় চাই।কাধে মাথাটা রাখার জন্য হলেও তোমায় চাই।এক পশলা বৃষ্টিতে ভিজার জন্যও তোমায় চাই। ফিরিয়ে দিও না প্লিজ।মানতে পারবো না।বেঁচে থাকাটা মূল্যহীন হয়ে যাবে।

আকস্মিক এমন কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিলো না বৃষ্টি। এক ঝটকায় হাত টা ছাড়িয়ে ওঠে দাঁড়ায়। উজ্জ্বল এখনো বসেই আছে।

“এসব তুমি কি বলছো উজ্জ্বল?

“যেটা এতোদিন ধরে মনে জমা ছিলো সেটাই।

“এটা কখনো হতেই পারে না।

বৃষ্টির হাতটা ধরে আবারও বসিয়ে দেয় উজ্জ্বল।,

যকেন হতে পারে না? একবার তাকাও আমার চোখের দিকে।আমি জানি তুমিও আমাকে,

“ভুল জানো তুমি।আমি চাই না তোমাকে। কখনোই না।কোনভাবেই না।

“সত্যিই কি তুমি চাও না আমায়? কোনভাবেই চাও না?

চোখের কোনে জমে থাকা পানি টা কোনরকম আড়াল করেই কঠিন গলা বলে বৃষ্টি,

“না।।

সামনে থাকা টেবিলে হাতের সর্বোচ্চ শক্তিটা এবার খাটায় উজ্জ্বল।চিৎকার করে বলতে লাগে,

“একটা মানুষ কে আর কিভাবে বুঝানো যায় বলো তো? আর কতোভাবে তোমায় ব্যাখা করতে হবে? আমায় একটা কথা বলো তো? সত্যিই কি আমার ওপর কোন ফিলিংস নেই তোমার? তাহলে এতোদিন যে সম্পর্ক টা আমাদের ছিলো সেটার কি নাম দিবে তুমি? কি ভেবে তুমি আমার পাশে বসতে তুমি? কেনোই বা আমার জোর করাতে তোমার গল্পটা বলেছিলে।কেনোই বা আমার সঙ্গতে তুমি বিরক্ত হও নি? কেনোই বা.

উজ্জ্বলকে থামিয়ে দেয় বৃষ্টি। অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শুধু।গলাটা ধরে গিয়েছে একদম,

“তোমার সঙ্গ নেওয়াটা কি খুব বেশি অন্যায় ছিলো আমার? মনের কোণের জমে থাকা হাহাকার গুলো বলে ফেলে কি অনেক বড় পাপ করে ফেলেছি আমি? তোমার পাশে আমি বসি নি উজ্জ্বল একটু ভেবে দেখো তুমিই পাশে বসেছো আমার। তুমিই জানতে চেয়েছিলে আমার না বলা গল্পটা। তুমিই চেয়েছিলে আমার.

আর কিছু বলতে পারলো না বৃষ্টি। শব্দ করেই কেঁদে দেয়।এতো বছর পর কাউকে একজন ভরসা করে যে এরকম একটা দায় নিতে হবে ভাবতেও পারে নি। পৃথিবী টা সুন্দর হলেও মানুষগুলো খুব বেশিই অসুন্দর। খুব বেশিই।

বৃষ্টির এরকম কান্নায় হঠাৎই হুস ফিরে উজ্জ্বলের। অবেগের বসে কারো অনুভূতিতে আঘাত করে ফেললো না তো সে? একটা মানুষ যেখানে প্রতিটা পদে পদে বাস্তবতা দেখে এসেছে। কতোদিনের চাপা যন্ত্রণা বয়ে বেরিয়েছে একা একা। সে নিজে থেকে পাশে গিয়েছিলো বলেই না দু পা এগিয়েছিল মেয়েটা।

“বৃশু???

“থাক উজ্জ্বল। আর ডেকো না আমায় এই নামে।অনেক ডেকেছো আর না।ভুল হয়ে গেছে আমার অনেক বড় ভুল। সব সম্পর্কের নাম হয় না উজ্জ্বল। দিন শেষে কোন সম্পর্কেরই নাম হয় না।যাকে তুমি বন্ধু ভাবো সেও তোমায় ধোকা দেয়। যার পেটে আমার জন্ম হয়েছিলো সেও আমায় ছুড়ে ফেলে গেছে উজ্জ্বল। দিনের পর দিন যাদের আমি মা বাবা জেনেছিলাম তারাও আমায় ফেলে দিয়েছিলো কোন এক রাতের আধারে। অথচ দেখো যার সাথে আমার রক্তের কোন সম্পর্ক নেই।ছিলো একটা দিনের পরিচয়। ছিলো না কোন জানা-শোনা সেই মানুষটাই ঘুরিয়ে দিয়েছিলো আমার পৃথিবীটা। দিয়েছিলো একটা নতুন জীবনের সন্ধান। এই সম্পর্ক গুলোকে আমি কি নাম দিবো বলো তো? আদেও কি কোন নাম হয় সম্পর্ক গুলোর?

ছুটে চলা ট্রেনের শব্দটা ক্রমশই কমছে একটু বাদেই থেমে গেলো গতি।গন্তব্যে পৌঁছে গেছে সবাই।এবার নামার পালা পাশে থাকা ব্যাগটা নিয়েই তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে যায় বৃষ্টি। উজ্জ্বল নিজের ব্যাগটা সাথে নিয়ে বের হলো ঠিকই আশেপাশে কোথাও আর দেখা মিললো না বৃষ্টির।এপাশ ওপাশ অনেকক্ষন দৌড়ালো উজ্জ্বল কিন্তু না এতো অপরিচিত মানুষের ভীরে সেই পরিচিত মানুষটার ছায়াটার দেখাও পেলো না উজ্জ্বল।

স্টেশন থেকে কোনরকম আড়াল হয়েই একটা সিএনজি নেয় বৃষ্টি। উদ্দেশ্য ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। কিছুক্ষন পর পরই হাতে থাকা ব্যাগটা কেপে ওঠছে। শব্দটা ফোনের ভাইব্রেটের।উজ্জ্বল একেরপর এক ফোন করেই যাচ্ছে। কলেজ গেটে এসে নামতেই ফোনটা বের করে বৃষ্টি। দেখে স্ক্রিনে শুধু উজ্জ্বলের নাম্বার না ঢাকা থেকে আন্নার নাম্বার থেকেও অনেকবার ফোন এসেছে। মুখে এক চিলতে হাসি নিয়েই কল ব্যাক করে বৃষ্টি। এক হাতে ফোন আর এক হাতে ভাড়াটা দিতে গিয়েই আটকে যায় বৃষ্টি। আগেপরে কিছু না ভেবেই ওঠে বসে আবার সেই সিএনজিতেই। অস্থির হয়েই বলতে লাগে,

“স্টেশন চলুন প্লিজ

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে