💗#সব_সম্পর্কের_নাম_হয়_না💗
পর্বঃ১২
#লেখাঃ #বাশরুন_বর্ষা
চোখের কোনায় দু ফোটা পানি এসে জমে।কথার দিকে তাকাতেই গড়িয়ে পরে সে পানি।এক হাতে কথার হাত দুটো ধরে।আরেক হাতে নিজের কান ধরে বলে
“সরি
এমন সময় পেছনে অনুর আগমন।ব্যাপারটা উচ্ছ্বাস খেয়াল না করলেও ওলটো দিক থেকে কথা ঠিকই দেখে।আর সাথে সাথেই হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে রুমের দিকে চলে আসে। উচ্ছ্বাস ঘুরে তাকিয়ে দেখে অনু,
“প্রথমেই সরি। আমার নক করে আসা উচিৎ ছিলো।কিন্তু কি করবো বল বাবা এমনভাবে পাঠালো।
অনুর বাম কানটা খুব শক্ত ভাবেই ধরে উচ্ছ্বাস,
“প্রথমেই সরি আমার উচিৎ ছিলো তোর হবু বরের অনুমতি নিয়ে তোর কানটা ধরা। কিন্তু কি করবো বল তুই তো আর সেই সময়টা দিলি না।
“ভাই। আমার কান।ছাড় না হয় এখনি খবর আছে তোর। ভাবি কিছু বলো।
কথা শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দুই ভাইবোনের কান্ড দেখছে আর হাসছে।এমন সময় দরজার সামনে থেকে অজান্তা খানের ডাকে অনুকে ছেড়ে উচ্ছ্বাস,
“বাবা ডাকছে অনেকক্ষন হয় সবাই নিচে আসো।আর হ্যাঁ সবাই মানে সবাই।
অজান্তা খান চলে গেলে ওরা তিন জনও নিচে চলে আসে।
ড্রয়িংরুমে বসে অপেক্ষা করছে আমজাদ খান আর দাদি।অজান্তা খান এসে শাশুড়ির পাশে বসে।উচ্ছ্বাস রা আসতেই ওদের কে বসতে বলে।
“উজ্জ্বল আসে নি এখনো বাসায়?
শাশুড়ির পাশ থেকে অজান্তা খানের গম্ভীর উত্তর,
“লেট হবে আসতে।আজকে ভার্সিটির শেষ দিন তাই আমাকে বলেছিলো,
“লেট হয় নি মা চলে এসেছি। কোন মিটিং আছে নাকি সবাই একসাথে যে?
উজ্জ্বল কে দেখেই ওঠে দাঁড়ায় অজান্তা খান আর ছেলেকে শাশুড়ী আর নিজের মাঝখানে জায়গা করে দেয় বসার জন্য,
“দাদুভাই এই শীতেও চেহারার এই হাল কেন।ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছো?
“বাইরে রোদের তাপটা একটু বেশি দাদিমা।তাই হয়তো।
সবাইকে এক জায়গায় দেখেও যখন আমজাদ খান কিছু বলছে না তখন আবার শুরু করে অজান্তা খান,
“এখন তো বাড়ির সবাই একসাথেই আছি। এখনো এভাবে বসে থাকার মানে কি মা?
বউমার কথায় ছেলেকে তাড়া দেয় দাদি,
“এখনো সবাই আসে নি মা।আর একটু অপেক্ষা করো।
প্রায় ১০-১২ মিনিট নিরবে বসে থাকার পর পরই ওঠে দাঁড়ায় আমজাদ খান।সবার চোখ তখন সদর দড়জায় কথার মায়ের দিকে।এদিকে আমজাদ খান মুখে এক উজ্জ্বল হাসি দিয়ে স্বাগত জানায় অতিথিকে।হঠাৎ করে মাকে দেখে অনেকটা অবাক কথা।এগিয়ে মায়ের কাছে যায়,
“ভাইজান আসতে বললো অনেক জোর করেছিলো ফোনে তাই..
কথা একবার বাবার দিকে তাকায়,
চশমার গ্লাস টা পরিষ্কার করতে করতেই শুরু করে আমজাদ খান,
“তোমাদের তোমার ছোট দাদিমার কথা মনে আছে উচ্ছ্বাস??
“সিলেটের কথা বলছো বাবা?
“হ্যাঁ।। তোমার রমিজ চাচ্চু ফোন করেছিলো চাচি সোহানার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে গতো শুক্রবার।এর জন্যই সেদিন সিলেট গিয়েছিলাম। আগামি বৃহস্পতিবার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। তোমরা সবাই রেডি থেকো। আমরা পরশুই বের হবো।আর বেয়াইন সাহেবা আপনিও কিন্তু যাচ্ছেন আমাদের সাথে।চাচি অনেক করে বলে দিয়েছে তার বড় নাতবউয়ের মাকেও জানি সাথে নিয়ে যাই।
“কিন্তু ভাইজান?? আপনারা পরিবার মিলে যেখানে
“আপনি আমাদের পরিবারের বাইরের কেউ না।আর ভাইয়ের কথা ফেলতে হয় না।এই দুদিন আর কোথাও যাওয়া হবে না আপনার।অনু তোমাদের কেনাকাটা যা কিছু করার থাকলে কালকের মধ্যে সেরে নিও আর আদনান এর বাড়িতে আমি বলে দিয়েছি ওনারা একেবারে পরশু চলে আসবেন।
সিলেটের নাম শুনে যেখানে সবাই খুশিতে আত্মহারা সেখানেই বাধ সাজে উজ্জ্বল। তার পক্ষে কিছুতেই সিলেট যাওয়া সম্ভব নয়।কিন্তু তার যথাযথ কোন কারনও বসাতে পারছে না।বাবার প্রশ্নে অনেকটা থতমতই খেয়ে যায় উজ্জ্বল। তবুও চেষ্টা করছে যে-কোন ভাবে ঢাকা থেকে যাওয়াটা ক্যান্সেল করতে।
“বাবা আসলে ৫ দিন পরেই আমার আবার ভার্সিটিতে যেতে হবে।আজকেই প্রিন্সিপাল জানিয়েছে। আমাদের কয়েকজন কে নিয়ে নাকি কিছু একটা করতে চাইছে।আর সিলেট গেলে তো মিনিমাম ১০ দিন থাকতেই হবে তাই না।শেষ মুহুর্তে এসে যদি এখন.
“বুঝতে পেরেছি।আচ্ছা ঠিক আছে এক কাজ করো ভার্সিটির কাজ শেষ করে পরের দিনই চলে যেও। কিন্তু যাওয়া টা কিন্তু মাস্ট।চাচির মুখ থেকে যেনো আমাকে এটা শুনতে না হয় তোমরা তার নিজের ছেলের নাতি নাতনি না বলে এরকমটা করেছো।
“আমি চেষ্টা করবো বাবা।
আমজাদ খান ওপরে চলে গেলে বাড়ির বড়রাও যার যার রুমে চলে যায়।উচ্ছ্বাস জোনাকি কে কথার মায়ের রুমটা ঠিক করে দিতে বলে। এদিকে অনু এসেই উজ্জ্বলের কাধে কনুই রেখে দাঁড়ায়। উচ্ছ্বাস আর কথাও সাথেই আছে।
“ভাই তোরা এতো লম্বা কেন রে।আমি ঠিকঠাক দাড়াতেও পারছি না।
“সমস্যা কি তোর?
মুখে এক গভীর চিন্তা নিয়ে বলতে শুরু করে উচ্ছ্বাস,
“সমস্যা তো অনুর দেখছি না ভাই সমস্যা তো তোমার দেখছি।এই তো সেদিনও তুমি সিলেটের নাম শোনার আগেই লাফাইছো যাওয়ার জন্য আজ হঠাৎ কি হলো?
“কি হলো মানে কি? আমার ভার্সিটির কাজ শেষ হয়নি বলেই তো??
উজ্জ্বলের বলা মিথ্যা কথায় হাসি আর থামাতে পারছে না অনু।
“এভাবে ছাগলের মতো হাসছিস কেন? ভাবি তুমি কিছু বলবে?
“হ্যাঁ কথা কিছু বলো? তোমার দেবর টা যে নতুন নতুন প্রেমে পরেছে কিছু তো বলো,
উচ্ছ্বাসের কথায় হাসিটা কোনরকম চেপে বুঝাতে লাগে কথা,
“বৃষ্টিকে না আমাদেরও খুব পছন্দ।আর তোমার চিঠির হাত খুব বাজে। তুমি চাইলে অনুর থেকে একটু ট্রেনিং নিতে পারো। ও খুব ভালো চিঠি লিখে।
অনু কোমড়ে হাত দিয়ে ফুসে ওঠে,
“ভাবি আমি আবার কবে কাকে চিঠি দিলাম? আর এখানে আমাকে শুধু শুধুই টানছো।আসল কথায় আসো।
“কি কিসের আসল কথা।আর এখানে বৃশু কে টানছিস কেন তোরা? ওর সাথে আমার সিলেট না যাওয়ার কি সম্পর্ক।
অনু অবাক হয়ে বলতে লাগে,
“যাহ বাবা আমরা কখন বললাম তোর সিলেট না যাওয়ার কারণ বৃষ্টি থুক্কি বৃশু? এই ভাই কিছু বলছিস না কেন তুই? আমরা কি একবারো এরকম কিছু বলেছি?
“কই না তো আমরা এরকমটা কেন বলবো? তবে হ্যাঁ তুই বড্ড সেকালে হয়ে গেছিস ভাই।র্যাপিং পেপারটা আরেকটু সুন্দর দেখে করতে পারতি।
উজ্জ্বল এইবার ক্লিয়ার হয় পুরো ব্যাপারটা। কাল রাতে বৃষ্টির জন্য কেনা গিফট টাই হয়তো ওদের চোখে পরে গেছে।এবার আর ছাড়া পাওয়ার কোন কথাই নেই।
“দেখো ভাই ভাবি অনু।তোমরা যা ভাবছো সেরকম কিছু না। বৃশু আমায় নিয়ে এরকম কিছু কখনো ভাবেই না।শুধু শুধুই ভুল ভাবছো।
উজ্জ্বলক্ব নিজের দিকে ঘুরায় উচ্ছ্বাস,
“তুই ভাবিস তো?
গলার সুরটা আপনা আপনি দমে যায় উজ্জ্বলের,
“ভাবনায় কি আসে যায় ভাই।যদি ওপাশটার মানু্ষটার মধ্যে কোন অনুভুতিই কাজ না করে।
উজ্জ্বল আর দেরি না করে নিজের রুমের দিকে চলে যায়।এদিকে উচ্ছ্বাস কথা অনু তিনজনেরই গালে হাত,
“কিছু একটা করতেই হবে।
”
রুমে এসেই উজ্জ্বল বিছানায় বালিশে হেলান দিয়ে বসে।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে অনেকগুলো মিসডকল ওঠে আছে স্ক্রিনে।তখন বাড়ির সবাই একসাথে থাকার কারনে ফোনটা সাইলেন্ট ছিলো।স্ক্রিনে থাকা নাম্বার টা দেখা মাত্রই কল ব্যাক করে উজ্জ্বল,,,
“হ্যালো বৃশু? ফোন করেছো এতোবার?আমি তো.
“আমি কি তোমার কাছে কোন ব্যাখ্যা চেয়েছি উজ্জ্বল? তুমি এতো অস্থির কেন হও বলো তো?
“না মানে তুমি তো সহজে ফোন দাও না আমায়।তাই ভাবলাম হয়তো কিছু
“কথা টা কি খুব একটা ঠিক বললে তুমি?আমি তোমায় সহজে ফোন দেই না কথাটা কিন্তু এখন বর্তমানে খাটে না। বেশ কিছুদিন হয় আমি কিন্তু তোমায় কারনে অকারণেই ফোন দেই।
“তা এখন কি জন্য ফোন?
“ডাইরিটা খুব সুন্দর হয়েছে। থ্যাংকস।
“শুধু কি ডাইরিটাই ভালো লেগেছে তোমার?
“আমি তো ওসব ইউজ করি না।
“একদিনের জন্য একটু কষ্ট করবে প্লিজ।কাল একবার জিনিসগুলো পরে আসো না কোথাও।
উজ্জ্বলের এমন আবদারে অনেকটা দোটানায় পরে যায় বৃষ্টি। কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না।বৃষ্টির চুপ থাকা দেখে আবারও প্রশ্ন করে উজ্জ্বল,
“কি হলো বৃশু? অনুরোধ টা কি খুব ভারী হয়ে গেলো?
“আসলে উজ্জ্বল তুমি যা ভাবছো সেরকম কিছুই না।
“তাহলে?
“তোমায় একটা কথা জানানো হয় নি।জানানো হয় নি ব্যাপারটা ঠিক নয়।ব্যাপারটা হঠাৎ করেই হয়ে গেছে।
“একটু খুলে বলো না?
“দুদিন পর আমি সিলেট সিফট হচ্ছি। সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৬ মাস আগে আমি একটা এপ্লাই করেছিলাম।আমার থার্ড ইয়ার পর্যন্ত রেজাল্ট দেখে ওনারা ওয়েট করতে বলেছিলেন।আজকেই মেইল টা এসেছে। আপাতত অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে জয়েন করতে বলেছে।ফাইনাল ইয়ার রেজাল্ট দিলেই স্থায়ী করে নিবে।যদিও রুলস এর বাইরে ব্যাপারটা কিন্তু টিচারস শর্ট বলে এই অপর্চুনিটি টা পাচ্ছি।
“কিন্তু তুমি তো চাইলেই আমাদের ভার্সিটিতে জয়েন করতে পারো।জাস্ট কিছুদিনের অপেক্ষা।আর এটা তো সবারই জানা টপার তুমিই হবে।
“আমি একটু অভিজ্ঞতার জন্য যেতে চাইছি আর তাছাড়া আমার একটু ফ্রি স্পেস চাই।এই ইট পাথরের শহরটায় বড্ড ক্লান্ত লাগে আমার।
“আসবে না আর?
“ইচ্ছে নেই।
“পরশু চলো না?
“হবে না।দুদিন অনেক কাজ আছে।শেষ হবে কি না তাও জানি না।
কেন জানি না আর কোন কথা পাচ্ছে না উজ্জ্বল। গলাটা আপনা আপনি ধরে আসছে।কোথাও একটা খালি হয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে।কিন্তু মুখ ফুটে বলার শক্তি টা পাচ্ছে না।
“উজ্জ্বল আছো?
“দুদিন পর আমারও সিলেট যেতে হবে।তুমি যদি চাও একসাথে.
“এতোটা সংকোচ কেন করছো। একা একা জার্নি টা বড্ড বোরিং। একসাথে যাওয়াটাই ভালো হবে।কখন টিকিট নিলে ভালো হবে তোমার?
“বাড়ির সবাই পরশুই যাবে। সো তুমি তোমার সুবিধা মতো একটা সময় বলো আমি টিকিট বুক করে রাখছি।
“টিকিট আমিই বুক করে নিবো। তোমায় এতো কষ্ট করতে হবে না।
“এমনিতেই তুমি বিজি থাকবে। এটুকু আমি করে নিতে পারবো।প্লিজ আর কিছু শুনতে চাইছি না এখন।
“,আচ্ছা ঠিক আছে। আল্লাহ হাফেজ।
বৃষ্টি ফোনটা রেখে দিতেই বিছানায় গা এলিয়ে দেয় উজ্জ্বল। কপালে হাতটা রেখে চোখ দুটো বন্ধ করতেই ভেসে ওঠে বৃষ্টির মুখটা।আর কানে বাজতে থাকে একটু আগের বলা কথাগুলো। তাহলে কি সত্যিই আর আসবে না সে? কাছে আসাটা ক্ষনিকেরই রয়ে গেলো?দুরত্বটাই কি তাহলে দীর্ঘস্থায়ী হবে? অব্যক্ত কথাগুলো কি তবে না বলাই থেকে যাবে? বলা হবে না তাকে ভালোবাসি?
চলবে.
💗#সব_সম্পর্কের_নাম_হয়_না💗
পর্বঃ১৩
#লেখাঃ #বাশরুন_বর্ষা
হুটহাট মুখ ফসকে কথা বের হয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক বিষয়।কিন্তু সেটা যদি হয় ভুল জায়গায় ঝামেলা টা সাজে সেখানেই।আর সেটা নিয়েই দোটানায় ঘুরপাক খেতে হয় অবান্তর সময়। সেরকমটায় ঘটেছে সকালে নাস্তার টেবিলে।কথায় কথায় উজ্জ্বল বলেই ফেলে সে ৫ দিন পরে নয় বরং বাড়ির সবাই যাওয়ার পরের দিনই সিলেট যাবে। ব্যাস।। আমজাদ খানও সবাইকে বলে দিলো তারাও তাহলে একদিন পরেই যাবে একসাথে।কারণ টিকিট তো এখনো বুক করা হয় নি একদিনেরই তো ব্যাপার। কি আর করার হাতি কাঁদায় পরার মতো অবস্থা টা হয়ে গেলো উজ্জ্বলের।বৃষ্টির সাথে আর একসাথে যাওয়াটা মনে হয় হলো না।টেবিলে বসে ল্যাপটপে বৃথাই কিছু একটা করার চেষ্টা করছে উজ্জ্বল। এমন সময় অনু আর উচ্ছ্বাসের দরজায় নক।কাল থেকেই বড্ড পেছনে লেগে আছে ৩ টা মানুষ।কথা হয়তো কোন কাজে আছে তাই দুই ভাইবোনই চলে এসেছে।ঝেড়ে একটা কাশি দেয় অনু,
“আসবো কি,?
“এতো ভালো কবে হলি তুই,?
উজ্জ্বল ওদিকে পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজ করতে লাগে।এদিকে অনু উচ্ছ্বাসও চেয়ারের দুইপাশে দাঁড়ায়।
চোখদুটো ল্যাপটপের স্ক্রিনে রেখেই বলতে থাকে উজ্জ্বল,
“এখন আবার কি কাজ আপনাদের?
চেয়ারের ওপরটায় এক হাতের কনুই রাখে অনু। মুখে তার গভীর চিন্তা।গুটি গুটি হাতে হাত বাড়ায় কম্পিউটার টেবিলের ড্রয়ারে। আর সেখান থেকেই বের করে দুটো টিকিট। হঠাৎ সেদিকে চোখ যেতেই লাফিয়ে ওঠে উজ্জ্বল। ততক্ষণে অনু টিকিট হাতে সরে গেছে বিছানার এক কোণায়,
“বোন ভালো হচ্ছে না কিন্তু এভাবে আমার পেছনে কেন লেগেছিস বল তো?
এদিক থেকে উচ্ছ্বাস এসে কাঁধে হাত রেখে পাশে দাঁড়ায়,
“আচ্ছা ভাই যাবি তো তুই একা। তাহলে দুটো টিকিট কেন? তাও আবার কেবিন বুক করেছিস?
“সে সেরকম কিছু না আমরা কয়েকজন ফ্রেন্ড মিলে যাচ্ছি।ওদের টিকিট ওদের কাছে দিয়ে দিয়েছি।এখানে আমার আর.
“নিশ্চয় তার টিকিট?
“কোন তার টার নেই।ফ্রেন্ড এর টিকিট। ও ব্যস্ত তাই আমাকে দেখতে বলেছিলো ব্যাপার টা।
উচ্ছ্বাস উজ্জ্বলকে নিয়ে সোফায় গিয়ে বসে।অনুও এসে উজ্জ্বলের আরেকপাশে বসে।উজ্জ্বল টিকিট টা নিতে গেলেই অনু হাতটা উঁচু করে সরিয়ে নেয়।এপাশ থেকে উচ্ছ্বাস করুন গলায় বলতে লাগে,
“হ্যাঁ রে ভাই। টিকিট তো কেটে ফেলেছিস।কিন্তু যাবি কিভাবে? আর তাছাড়া দিন দিন তোর মাথার বুদ্ধি কি সব হাটুর নিচে যাচ্ছে? সকালে কথাটা না বললেই কি হতো না?
“মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।কি আর করার যা হবার তা তো হয়েই গেছে।
অনু আর উচ্ছ্বাস দুজনেই বলে ওঠে,
“সো স্যাড।
এমন সময় কথার আগমন,
“আমায় রেখেই সব করে নিলে?
অনু ওঠে গিয়ে কথাকে নিজের পাশে বসায়,
“উফফ ভাবি তোমার এই দেবরটা না মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। এর মুখ থেকে কিছু বের হবে না।
” কিছু থাকলে তো বের হবে।শুধু শুধুই জ্বালাচ্ছিস আমায়।
কথা অনুকে সাইডে আসতে বলে নিজে উজ্জ্বলের পাশে এসে বসে,
“সকাল থেকে কেমন অন্যরকম লাগছে তোমায়।মুখটা কেমন হয়ে আছে।কিছু হয়েছে তোমার?
উজ্জ্বল কিছু একটা বলেও থেমে যায়।
এপাশ থেকে উচ্ছ্বাসেরও একই প্রশ্ন,
“কি হয়েছে ভাই? আমাদেরও বলবি না? তুই স্বীকার করিস আর না করিস বোনের এনগেজমেন্ট এর দিন থেকে বৃষ্টি যতোটুকু সময় এই বাড়িতে ছিলো আমরা কিন্তু অনেকটাই খেয়াল করেছি।যদিও পরিস্থিতির কারনে কথাটা আর তোলা হয় নি।কিন্তু এখন তো সব ঠিকই আছে তোর পরিক্ষাও শেষ চাইলেই কিন্তু তুই.
উচ্ছ্বাসের পুরো কথা টা আর শেষ হলো না নিরাস গলায় বলতে থাকে উজ্জ্বল,
“সবসময় চাইলেই যে সবকিছু হবে তার কিন্তু কোন মানেই নেই ভাই।অনেক সময় সহজ ব্যাপারগুলোও না অনেক বেশিই গোলকধাঁধা হয়ে যায়।
“বৃষ্টি জানে কিছু। বলিস নি ওকে?
“নাহ।আর বলার সেই সুযোগটাও হয়তো নেই।আর ও এমন একটা মেয়ে যাকে হুট করে কিছু বলতে পারবো না আমি।অদ্ভুদ হলেও এটাই সত্যি যে ৪ বছরের পরিচয়ে বৃশু আমার সাথে লাস্ট ১৫ দিন হবে হয়তো ফ্রি লি কথা বলেছে।ইনফেক্ট সবটায় বলেছে। হয়তো খুব কাছের একজন বন্ধু ভেবেই বলেছে।আমি চাই না হুট করে কিছু বলে এই বন্ধুত্বটা নষ্ট করতে।
কথা আছে দেখে উজ্জ্বল এতোক্ষন মুখের সাথে সাথে হাতদুটোও সমান ভাবেই চালাচ্ছিলো।গলাটা শুধুই ধরে আসছে। উচ্ছ্বাস শুধু চেয়ে আছে ছোট ভাইটার দিকে।আর যাই হোক নিজের মতো উগ্র মেজাজের মানুষ উজ্জ্বল নয়। উজ্জ্বলের কাঁধে একবার হাত রাখে কথা।এরপরেই নিজের মতো করে বুঝাতে লাগে,
পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে।কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।আলাদিনের প্রদীপটা তোমার কাছে আছে ভাই।বৃষ্টিকে না হয় ঘুমন্ত দৈত্য ভাবো।আর সেই দৈত্য টাকে কিভাবে জাগাবে সেটাই না হয় ভাবো। ভালোবাসাটা সত্যি হলে সবকিছুই সম্ভব ভাই।একবার চেষ্টা তো করে দেখো।মেয়েটা তো আর পালিয়ে যাচ্ছে না।
“পালিয়েই যাচ্ছে ভাবি।অনেক দূরেই পালিয়ে যাচ্ছে।এই ইট পাথরের শহরটা নাকি তার কাছে খুব ভারী হয়ে গেছে।তাই সে পালাচ্ছে।
তিনজনেই চুপসে গেছে।মানেটা বুঝতে পারছে না ঠিক।এরপর পুরোটাই বলে উজ্জ্বল। সবাই ঠিক বুঝে ওঠতে পারছে না কি বলা যায়,
“ভেবেছিলাম একটা দিন অন্তত পাবো হয়তো ওর সাথে কাটানোর জন্য। কিছু বলতে না পারতাম শেষ বিদায়ে ওর চোখের ভাষা টা তো বোঝার চেষ্টা করতে পারতাম।অপেক্ষাটা না হয় সেখান থেকেই শুরু করতাম।কিন্তু আল্লাহ হয়তো চাই না এরকমটা।তাই তো,
এবার মিটিমিটি হাসছে সবাই।উজ্জ্বলের ব্যাপারটা মোটেও ভালো লাগছে না। অধৈর্য ভাইকে দেখে আর অধৈর্য্য করতে চাইছে না কেউ। তাই অনু সবটা খোলসা করে বলেই দেয়,
“ভাই বলছি কি বাবা না আমার আর ভাইয়ের জন্য আলাদা দুটো কেবিন নিতে বলেছে।মানে আদনান আর আমি একটাতে। ভাই আর ভাবি একটাতে।আর তোকে তোর জায়াগায় পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব টা এবার না হয় আমাদের ওপরেই ছেড়ে দে।
ভ্রু কুচকে তাকায় উজ্জ্বল।ওরা হাসবেন্ড ওয়াইফ আলাদা স্পেস নিতেই পারে।কিন্তু উজ্জ্বল তো সিংগেল। ও কিভাবে সবার থেকে আলাদা যাবে?
“আজগুবি কথা বাদ দে। এটা কখনোই সম্ভব না।
“খুব সম্ভব। আমরা তোর মতো গাধা না বুঝলি আমরা সব পারি। নে কি কাজ করছিলি কর।আমরা এখন যাই।
উচ্ছ্বাস আর কথা দরজা পার হতেই ঘুরে আসে অনু,
বলছি কি ভাই মাঝে মাঝে কিন্তু তুই বেশ গুছিয়ে কথা বলিস।আই সয়ার ৩ বছর প্রেম করেও এতো আবেগ জন্মায়নি আমার।
উজ্জ্বল বিছানা থেকে ওঠে দাড়াতেই ছুট্টে পালায় অনু।
”
রান্নাঘরে বিকেলের নাস্তা বানাতে ব্যস্ত কথা।বড়রা সবাই যার যার রুমেই আছে। সিঙ্গারা বানানোর জন্য সবকিছু রেডি করছে।সাথে পাকোড়ার জন্য সবজিও কাটছে।সাথে হেল্প করছে জোনাকি।
“বড় ভাবি পেয়াজ কি আরও কাটবো?
“নাহ তুমি বরং সবজিগুলো একটু ধুয়ে আনো। আমি ময়দা টা মেখে নিচ্ছি।
এদিকে পুরো বাড়ির এপাশ ওপাশ ভালোভাবে নিরিক্ষণ করছে উচ্ছ্বাস।উদ্দেশ্য রান্নাঘর।কিন্তু দরজা পর্যন্ত যেতেই থেমে যায় জোনাকিকে দেখে। জোনাকি বেসিংয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবজি ধুচ্ছিল। হঠাৎ চোখ যায় দরজায়।উচ্ছ্বাস এগিয়ে এসে জোনাকিকে ঘরে যেতে বলে,
,কিন্তু ভাই। ভাবি একা একা কষ্ট হবে তো।
,তুই যা আমি আছি এখানে।
জোনাকি আর কিছু বলে না। শুধু মুচকি হেসে বেরিয়ে যায় রান্নাঘর থেকে।
ময়দায় পানি দিয়ে সেটা মাখতেই ব্যস্ত কথা।হঠাৎ পেছন থেকে কাঁধে কারো স্পর্শে ঘাবড়ে যায় কথা হুট করে পেছনে ঘুরতেই ডানহাতটা উচ্ছ্বাসের বুকে গিয়ে ঠেকে।সাদা ময়দার গোলা বেশ ভালোভাবেই টি-শার্টে গিয়ে লাগে। ভ্রু কুচকে তাকায় উচ্ছ্বাস।সাথে সাথেই জিহ্বায় কামড় দিয়ে ঘুরে তাকায় কথা আর নিজের কাজে ভীষন ব্যস্ত হয়ে পরে,
“এটা কি হলো?
শুনতে পায় না কথা।তাই নিজের দিকে ঘুরিয়ে আবারও জিজ্ঞেস করে উচ্ছ্বাস,
যরান্নাঘরে আসলে এই বাড়িরই কেউ আসবে। এতে ভুত দেখার মতো চমকানোর কি আছে। এতো ভয় কেউ পায়?
নিমিষেই মুখটা মলিন হয়ে যায় কথার।হুট করে কারো ছোয়ায় তেমন একটা ভয় পায় না কথা।তবে পুরুষের ন্যায় শক্ত কোন হাতের ছোয়া পেলেই চমকে ওঠে কথা। কারণ কিছুদিন আগে পর্যন্ত যে পিয়াস হুটহাট কথাকে হেনস্তা করে গেছে।অনেক কষ্টে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে ঠিকই কিন্তু ভয়টা কোথাও একটা ঠিক রয়ে গেছে।
কথার মুখটা এরকম দেখে উচ্ছ্বাস কিছুটা আন্দাজ করতে পারে।তাই বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ভাবে।হঠাৎই পাশে থাকা শুকনো ময়দা কথার নাকে লাগিয়ে দেয় উচ্ছ্বাস। চোখ বড় বড় তাকায় কথা।রাগে অনেকটা ফুসে ওঠে।হাতটা কোনরকম ধুয়ে এসে পুরো ময়দায় ডিব্বাটা উচ্ছ্বাসের মাথায় ঢালতে যায়।দুইহাত দিয়ে ধরে নেয় উচ্ছ্বাস।
“আরে আরে করছো কি? রাখো রাখো। ময়দার ডিব্বা টা কিচেন টেবিলে রেখে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকে উচ্ছ্বাস,
“তুমি তো ভারী ডেঞ্জারাস। এখনি তো গোসল করিয়ে দিচ্ছিলে আমায়।
মুখ ফুলিয়ে বোঝায় কথা,
“আমার অনেক কাজ আছে এখন আপনি যান। কথার এখন খেয়াল হয় রান্নাঘরে কোথাও জোনাকি নেই।এদিক ওদিক তাকিয়ে বাইরে যেতে নিলেই হাতটা ধরে নেয় উচ্ছ্বাস,
“জোনাকি কে খুজতে যাচ্ছো? ও বেচারি কতো কাজ করে সারাদিন। চলো আমিই আজকে তোমায় হেল্প করি।
উচ্ছ্বাসের দিকে তাকিয়ে বার কয়েক খুব দ্রুত পলক ফেলে কথা,
“এরকম ভাবে দেখছো কেন? আমি কিন্তু আসলেই অনেক কিছু পারি।তুমি নিশ্চয় পিজা বানাবে তাই না?
ঠোঁট উল্টিয়ে তাকায় কথা।এখানে পিজা বানানোর মতো কি দেখলো উচ্ছ্বাস।আর কবেই বা বাসায় বানানো পিজা কেউ খেলো।বাইরে থেকে এনেই না খাওয়া হয়।
“কি হলো? মুখটা এমন করে আছো কেন? কি বানাবে তাহলে?
“সিঙ্গারা আর পাকোড়া।
“ওকে ফাইন। চলো শুরু করা যাক কেমন?
কথা ঘুরে দাঁড়িয়ে সিঙ্গারার আলু আর মাংস গুলো ভুনা শুরু করে দেয়।ভুনা শেষ হলে রুটি বেলতে লাগে।উচ্ছ্বাস শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে এটা ঠিক কি হচ্ছে। হুট করেই আবার ডেকে বসে কথাকে।অধৈর্য্য হয়ে তাকায় কথা,
“তুমি না বললে সিঙ্গারা বানাবে এটা তো রুটি?
বাম হাত টা মাথায় চাপে কথা।নখ টা ঠোঁটের ওপর রেখে উচ্ছ্বাসকে চুপ করতে বলে।সিঙ্গারার প্যাচ দিতে লাগে কথা।আর উচ্ছ্বাস শুধু হা করে দেখছে এটা কিভাবে দিলো,
যএই দাড়াও দাড়াও আমিও একটা করবো প্লিজ প্লিজ।
কথাকে সাইডে সরিয়ে একটু কাটা রুটির টুকরো হাতে নিয়ে সিঙ্গারার প্যাচ দিতে যায় উচ্ছ্বাস।কিন্তু সেটা ঠিক কিসের প্যাচ হচ্ছে এটাই ভেবে পাচ্ছে না কথা।কোনরকম হাসি টা সামলে রেখে ফোনটা হাতে নিয়েই অনু আর উজ্জ্বলকে ম্যাসেজ দিয়ে কিচেনে আসতে বলে কথা।এদিকে উচ্ছ্বাস তো রুটির টুকরোটার সাথে রীতিমতো যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে।এটা দিয়ে আদেও কিছু করা সম্ভব কিনা তাই ভাবছে কথা। প্রায় ৫ মিনিট যুদ্ধ করার পর রুটিটাকে ছোট খাটো একটা লাড্ডুতে পরিনত করে উচ্ছ্বাস। ততোক্ষণে অনু আর উজ্জ্বল এসে পেছন থেকে ওর কান্ড দেখে যাচ্ছে। ৩২ টা দাঁত বের করে কথার দিকে তাকায় উচ্ছ্বাস। মুহুর্তেই হাসির রোল পরে যায় রান্নাঘরে।উচ্ছ্বাস তাকিয়ে দেখে অনু আর উজ্জ্বল। অনু তো হাসতে হাসতে কথাকে নিয়ে গড়িয়ে পরার উপক্রম।উজ্জ্বলের শুকনো গলায় কাশি ওঠে যায়।গ্লাসে পানি ঢেলে কোনরকম গলাটা ভেজায় উজ্জ্বল।
উচ্ছ্বাসের হাত থেকে রুটির লাড্ডুটা হাতে নেয় অনু,
বাহ বাহ বাহ কি সুন্দর আলুর লাড্ডু। উফফ খেতে যা হবে না।ভাবি এরকম আরও কয়েকটা বানাতে দাও তো ভাইকে। ওগুলো শুধু ভাই একাই খাবে।
পানির গ্লাস টা টেবিলে রেখে এগিয়ে আসে উজ্জ্বল,
যভাই তুমি শুধু শুধুই রুটির টুকরো নিয়ে লাড্ডু বানাচ্ছো।সহজ একটা টেকনিক আছে আমার কাছে।এই দেখো ময়দার লেচি টা নিলে।হাতের মধ্যে শুধু ঘোরাবে। এই দেখো লাড্ডু রেডি।ততোক্ষণে উজ্জ্বলের হাত থেকে সেটা নিয়ে নিয়েছে অনু।ছুরিটা হাতে নিয়ে ওটাকে কেটেই যাচ্ছে শুধু,
যভাই এগুলোকে বলে নিমকি। দেখেছো কতো সুন্দর।
তিন ভাইবোনের আজগুবি সব কান্ড দেখে বোকাবনে যায় কথা।এদের ডাকলো কি জন্য আর করছে টা কি।আর ৫ মিনিট এখানে থাকলে তো সামনে থাকা একটা জিনিসও আস্ত থাকবে বলে মনে হচ্ছে না কথার।অনুর হাত থেকে ছুরি টা নিয়েই কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়ায় কথা।পেছন থেকে একটা হাতা হাতে নিয়েই তিনজনের দিকে ওঠায়,
মুহুর্তেই গায়েব সবগুলো। একা একাই হাসতে থাকে কথা। মনে মনে শুধু একটা কথায় ভাবে এই আনন্দগুলো দীর্ঘস্থায়ী হবে তো? নাকি হঠাৎ কোন নতুন ঝড় এসে ওলট পালট হয়ে যাবে সবটা? না চাইতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কথা।এরপরেই আবার নিজের কাজে লেগে পরে।একটু পরেই দেখা যাবে সবাই নিচে এসে গেছে।
চলবে।