#সব_সম্পর্কের_নাম_হয়_না💗
পর্বঃ০৪
#লেখাঃ #বাশরুন_বর্ষা
রাত একটু গারো হতেই খান বাড়িতে জলসার আয়োজন।বাড়ির একমাত্র মেয়ের এনগেজমেন্ট। সবাই যেনো হুল্লোড়ে মেতে উঠেছে।অনুর ছেলে কাজিন আর মেয়ে কাজিন রা মিলে দুই দলে ভাগ হয়ে নাচে মগ্ন।সাথে যোগ দিয়েছে বড়রাও।এতো কিছুর মধ্যে যে কথা বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে সে খেয়াল কারোরই হয় নি। খানিক বাদেই অনুর দাদিমা সবাইকে থামার জন্য ইশারা করে।কারণ আসল কাজটাই তো এখনো বাকি।তাই সবাইকে একজায়গায় দাড়াতে বলে।আর অনু আদনানকে সবার মাঝে এনে দাড় করায়।দুজনকে মুখোমুখি দাড় করিয়ে মাঝে দাঁড়িয়ে আছে দাদিমা।
“দেখি দাদুভাই এবার আংটি টা পরাও তো তাড়াতাড়ি।
দাদির কথামতো আদনান আংটি ঠিকই কিন্তু বাধা দেয় অনু নিজেই,
“ভাবি কোথায় দাদি? ভাবিকে কোথাও দেখছি না যে? কথাটা বলতে বলতেই অনু এগিয়ে যায় উচ্ছ্বাসের দিকে।
“ভাই তুমি যে বললে ভাবিকে নিয়ে নিচে আসবে।কোথায় ভাবি।
“অনু ওর হয়তো শরীর খারাপ করছে।তাই ঘুমিয়ে পরেছে।
“শরীর খারাপ নাকি কারো হুমকি সেটা আমি ভালোই বুঝি ভাই।ভাবি এখানে না থাকলে আমি রিং পরবো না। মায়ের দিকে এক নজর তাকিয়ে কথাটা বলে অনু।
ওপাশ থেকে আদনানের মা ও অনুর সাথে তাল দেয়,
“অনু তো ঠিকই বলেছে উচ্ছ্বাস। বাড়ির বড় বউ এখানে নেই মানে কি? আর এতো এতো হৈ-হুল্লোড়ের মধ্যে তো খেয়ালই করা হয় নি কথা এখানে নেই।
ইতিমধ্যে আশেপাশে থাকা মানুষগুলো গুঞ্জন শুরু করে দিয়েছে।
“বিয়েটা তো স্বাভাবিক ভাবে হয় নি তাই এদের এতো সমস্যা।
“যা বলেছো তার ওপর মেয়েটা আবার বোবা। বুঝি না বাবা বড়লোকের বিরাট কারবার।উনারাই বিয়ে করালো এখন আবার উনাদেরই যতো সমস্যা।
আশেপাশের মানুষের এতো কথা শুনে আমজাদ খান উচ্ছ্বাসকে ইশারা করে নিজের কাছে ডাকে,
“প্রবলেম কি তোমার উচ্ছ্বাস? তোমার মা একটা অন্যায় করছে আর তুমি সেটা প্রশ্রয় দিচ্ছো?
“বাবা আমি?
উচ্ছ্বাস কিছু বলবে পাশে এসে দাঁড়ায় দাদি,
“তুই কি হ্যাঁ। অতোটুকু একটা মেয়ে।বিয়ে হয়েছে কয়দিন হলো।আর তোরা মা ছেলে মিলে মেয়েটাকে নাজেহাল করে দিচ্ছিস।কি ভেবেছিস আমি কিছু দেখি না? সব দেখি আমি মেয়েটা মুখে হয়তো কিছু বলতে পারে না। তাই বলে কি কাউকে বুঝানোর ক্ষমতা ওর নেই? আছে সেটা ওর আছে।কিন্তু ও কাউকে বুঝতে দেয় না।
“দাদি তুমি সবটা না জেনেই আমায় দোষ দিচ্ছো।
উচ্ছ্বাসকে তেমন কিছু বলার সুযোগই দেয় না আমজাদ খান।খুব ঝাঝালো কন্ঠে বলতে লাগে,
“আমার এতোকিছু দেখার দরকার নেই।এখানে কোন সিনক্রিয়েট হোক তা আমি চাই না।সো এখনি তুমি বউ মাকে এখানে নিয়ে আসবে যাও বলছি।
“বাবা?
দাদি আর আমজাদ খান দুজনেই যার যার মতো করে উচ্ছ্বাসের থেকে চলে যায়।উচ্ছ্বাসের আর কি করার সিড়ি বেয়ে উপরে চলে আসে।
নিচে পরিবেশ টা পুরোটাই ঠান্ডা। উচ্ছ্বাসকে একা একা সিড়ি নামতে দেখে সবাই ওর দিকে চেয়ে আছে।
“ভাই ভাবিকে পেছনে ফেলে আসছো কেন সাথে নিয়ে আসো।
কথাকে বাড়ির ভেতরে দেখে বৃষ্টি অনেকটা অবাক। কারণ তখন যখন কথা বের হয়ে যায়।বৃষ্টি দেখেছিলো আর অনেক চেষ্টা করেছিলো আটকানোর।কিন্তু লাভ হয় নি কোন। মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে মেইনগেটের বাইরে চলে গেছিলো।আর বৃষ্টি পেছন পেছন গেট পর্যন্ত গেলেও লাভ হয় না কোন।ততক্ষণে কথা উধাও হয়ে গেছে জায়গাটা থেকে।কিন্তু এখন এখানে কিভাবে আসলো সেটাই ভাবছে বৃষ্টি।
কথা নিচে নামতেই অনু দৌড়ে আসে আর কথার হাতটা ধরে দাদির পাশে দাড় করায়,
“তুমি আমার জীবনে অভিশাপ না ভাবি বরং আর্শীবাদ। তুমি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে বুঝছো।
এদিকে মেয়ের এমন কান্ডে রাখে জ্বলছে অজান্তা খান।এতো এতো লোকের জন্য কিছু বলতেও পারছে না।পরিবারের সবাই অনু আর আদনানের দুইপাশে এসে দাঁড়ায়।দাদি সরে গিয়ে উচ্ছাসকে কথার পাশে দাড় করিয়ে দেয়।
এদিকে একটাপাশে হাসিখুশি মুখটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বৃষ্টি ধরতে গেলে অনেকটা দূরেই। পাশ থেকে উজ্জ্বল বৃশু বলে ডাকলে ফিরে তাকায় বৃষ্টি,
“একা একা আর কতোক্ষন থাকবে বলো তো? এর চাইতে তো চলে গেলেই ভালো হতো মনে হয়।
“কোথায় একা একা এতোক্ষন তো সুবর্ণা আসাদ ওরা ছিলো ওদের সাথেই ছিলাম।
যতুমি যে কেমন বন্ধু প্রিয় সেটা কিন্তু আমি এই কয়বছরে বুঝেছি বৃশু।সো প্লিজ আমায় এক্সকিউজ দিও না।তুমি ওদের কারো সাথেই ছিলে না। সারাক্ষন তুমি কথা ভাবির সাথেই উপরে ছিলে।আর যখন নিচে এসেছো একটা সাইড হয়ে আছো।আমায় একটা কথা বলো তো তুমি কি পাও তুমি এমনটা করে?
উজ্জ্বলের প্রশ্নের উত্তরে কিছু বলার আগেই কথা এসে এক প্রকার জোর করেই বৃষ্টিকে টেনে নিয়ে যায়।আর এরপর শেষ হয় অনু আর আদনান এর এনগেজমেন্ট। এরপর আদনান দের বাড়ির লোক সহ অনুদের আত্নীয় স্বজন যারা ছিলো সবাই রাতের ডিনার শেষ করেই চলে যায়।বাড়িতে এখন সব ঘরের লোক।শুধু বৃষ্টি আছে গেস্ট হিসেবে। বাড়ির সবাই একসাথে বসে ডিনার শেষ করে।এদিকে কথা খাওয়া শেষ করে ওঠে উপরে চলে যায়।কথার পিছু পিছু বৃষ্টিও চলে যায়। উপরে যাওয়ার পরেই পেছন থেকে হাতটা ধরে একটু আড়ালে গিয়ে দাঁড়ায় দুজন,
“কোথা থেকে আসলে তুমি। আর কখনই বা আসলে?
বৃষ্টিকে এবার দু ঘন্টা আগের ঘটনাটা বুঝাতে লাগে কথা,
তখন দৌড়ে গেট থেকে বের হয়েই আমি আড়ালে লুকিয়ে যাই।যেনো তুমি আমায় দেখতে না পারো।এরপর তুমি যখন ভেতরে চলে আসলে আমি আবার রাস্তা দিয়ে হাটা শুরু করি।কোন গাড়ি না পাওয়ায় হেটেই যাচ্ছিলাম।হঠাৎ পাশে এসে কোন গাড়ি থামতেই চমকে ওঠি আমি। এরপর দেখি যে উনি আমাকে আবার ফিরিয়ে নিতে এসেছেন।
“ওয়াও কি ভালো গো তোমার বর টা। অভিমান হয়েছে আবার সাথে সাথে ভেঙেও গিয়েছে।খুব ভালোবাসে তোমায় তাই না?
বৃষ্টির কথায় না চাইতেও হাসে কথা।বোঝায় যে সত্যিই খুব ভালোবাসে তার স্বামী তাকে। ওপাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুরোটাই দেখেছে উচ্ছ্বাস।
“শুধু শুধুই মিথ্যা টা বললে কথা।তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি তখন কেন তোমাকে আনতে গিয়েছিলাম। কারন আমি জানতাম অনু তোমাকে ছাড়া কিছুতেই কিছু করবে না।আর এটা নিয়ে পুরো বাড়িতে একটা ঝামেলা হয়ে যাবে।তুমি ফিরে এসেছো ঠিকই তবে শুধু আজকে রাতটার জন্যই। কালকেই আমি বাড়ির সবাইকে সবটা বলে দিবো।আর এরপর সবকিছুর বিচার বাড়ির লোকেই করবে। বি রেডি তাসনীম জাহান কথা।
মনে মনে কথাগুলো বলতে বলতেই রুমে চলে যায় উচ্ছ্বাস। বৃষ্টিকে গেস্টরুমটা দেখিয়ে দিয়ে রুমে আসে কথা।
যতুমি বৃষ্টিকে মিথ্যা কেন বললে? তুমি তো বললেই পারতে তুমি এই বাড়িতে আজ রাতটাই শুধু আছো।আমাকে ভালো সাজিয়ে কি বুঝাতে চাইছো তুমি?
রুমে আসতে না আসতেই সামনে এসে উচ্ছ্বাসের এমন ব্যবহার মোটেই আশা করে নি কথা।আর এর কোন উত্তরও দিতে ইচ্ছে করছে না কথার। তাই বিছানা থেকে বালিশটা নিয়ে সোফায় রাখে।কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ হলো না। উচ্ছ্বাস কথার কাধ ধরে ঘুরিয়ে নেয় নিজের দিকে।
“মহান সাজতে চাইছো তুমি? স্বামীকে উপরে রেখে নিজেকে মহৎ প্রমান করতে চাইছো।
নিজের ডান কাধে থেকে উচ্ছ্বাসের হাত টা নামিয়ে দেয় কথা,
“স্বামী তো উপরে থাকারই জিনিস।শুধু শুধু তাকে নিচে কেন নামাবো আমি?যতোদিন আমার স্বামী আছে আমি তাকে সম্মান করে যাবো।এতে নিজেকে কোনকিছু প্রমান করার কিছু নেই মিঃ।
কথা গিয়ে সোফায় শুয়ে পরে।উচ্ছ্বাস কখনোই কথাকে কোন কিছু বলে জিততে পারে না।এবারেও পারলো না।তাই নিজেও শুয়ে পড়কো।
”
সকালে নাস্তা শেষ করার পরেই বৃষ্টি যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়। যখন থেকে অজান্তা খান শুনেছে বৃষ্টি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে তার খুব পছন্দ হয়েছে বৃষ্টিকে।কালকে এতো এতো ভীরে ঠিকমতো মথা বলতে পারে নি তাই আজকে সকালে ব্রেকফাস্ট শেষ করেই গল্প করতে বসে গেছিলো। সব গল্প শেষ করে যখন বৃষ্টির পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলে অদ্ভুদ এক হাসি দেয় বৃষ্টি। আর খুব আনন্দের সাথেই উত্তর দেয়,
“মারা গেছেন তারা।
সাধারণত সন্তানের মুখে বাবা মায়ের মৃত্যুর কথা শুনতে গেলে তাদের দু-চোখ ভরা পানি চোখে পরে।কিন্তু বৃষ্টির ব্যাপারটা পুরো ওল্টো।। এতে অনেকটা অবাকই হয় অজান্তা খান।অবাক হয়েই জিজ্ঞাসা করেন বাবা মায়ের মৃত্যুর কারন টা। কিন্তু এই কথাটার উত্তর দেওয়ার খুব একটা প্রয়োজন মনে করলো না বৃষ্টি। সোফা থেকে ওঠেই বলতে লাগে,
“আচ্ছা আমার না অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে ১১ টা থেকে ক্লাস শুরু। অলরেডি ১০ টা বেজে গেছে।আর ঢাকা শহরের জ্যাম সম্পর্কে তো আমরা সবই জানি তাই না।আজ আসি আমি অন্যদিন গল্প করবো যদি দেখা হয়।
খাবার টেবিলে বসে চায়ে চুমুক দিতে দিতে দাদি বলতে লাগে,
“আবার দেখা হয় মানে কি হ্যাঁ? এই মাসের ১৮ তারিখে অনুর বিয়ে। ১৫ তারিখ পুরো ব্যাগ গুছিয়ে চলে আসবে।কি হলো বউ মা কিছু বলো।
“মা কিন্তু ঠিকই বলেছেন।তুমি কিন্তু আমাদের ঘরের লোক হয়ে গেছো।তাই তোমাকে আগেই আসতে হবে কিন্তু।
আবারো মৃদু হাসে বৃষ্টি।হাসি মাখা মুখটা নিয়েই বলতে লাগে,
“ঘরের লোক হওয়া এতোটাও সহজ ব্যাপার না।আজ আসি।আচ্ছা বাড়ির বাকি সবাই কোথায়? কথা অনু ওরা কোথায়?
বৃষ্টির কথা শেষ হতে না হতেই বাড়ির সবাইকেই এ কোণ ও কোণ থেকে বের হতে দেখা যায়।সবার থেকে বিদায় নিয়ে বৃষ্টি বেরিয়ে যায়।উজ্জ্বলও আজকে বৃষ্টির সাথেই বের হতে চেয়েছিলো কিন্তু উচ্ছ্বাস না করে।আজকে সবাইকেই বাড়িতে থাকতে বলে।এমনকি আমজাদ খানকেও বাড়ি থেকে কোথাও যেতে না করে।
ড্রয়িংরুমে এ সোফায় ও সোফায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে বাড়ির সবাই।অনেকক্ষন নিরবতা চলার পর বিরক্ত গলায় প্রশ্ন করে আমজাদ খান,
“প্রবলেম কি উচ্ছ্বাস তোমার? এভাবে বাড়ির প্রতিটা মানুষকে বসিয়ে রেখেছো অথচ কিছু বলছো না। তুমি খুব ভালো করেই জানো আমার কাছে টাইমিং টা কতো টা ইম্পর্ট্যান্ট।
সোফায় বসা থেকে ওঠে দাঁড়ায় উচ্ছ্বাস। কোন প্রকার ভনিতা ছাড়াই বাবাকে বলে,
“আমি কথার সাথে এই সম্পর্ক টা আর রাখতে চাই না বাবা।আমি এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি চাই।
উচ্ছ্বাসের এমন কথায় সবার মুখ থমকে যায়।শুধু মুগ্ধ করা হাসি অজান্তা খানের মুখে।আর কথা তো কিছু বুঝতেই পারে নি।না আমজাদ খানের কথা না উচ্ছ্বাসের কোন কথা।দাদি ওঠে এসে একটা ঝাকুনি দেয় উচ্ছ্বাসকে,
“কি বলছিস ভেবে বলছিস? খান বাড়িতে ডিভোর্স শব্দটা কখনো কেউ শুনেছে? আর বিয়ের একমাসও হয় নি তুই এসব বলছিস কোন সাহসে?
এদিক থেকে অজান্তা খান শাশুড়ীর কথায় ওঠে দাঁড়ায়,
“মা উচ্ছ্বাস এখন যথেষ্ট বোঝে।তাই ওকে আর জ্ঞান না দেওয়াই বেটার।আর তাছাড়া যুগ পাল্টে গেছে। খান বাড়িতে আগে অনেক কিছুই হয় নি মা। তাই বলে কি এখন হচ্ছে না? এই তো ওদের বিয়েটাই ধরেন না এরকম ভাবে এই বাড়ির কোন কাজের লোকই বিয়ে করেছে কোনদিন?
উচ্ছ্বাসের মায়ের শেষ কথাটা শোনার সাথে সাথেই অজান্তা বলে একটা ধমক দিয়ে দাঁড়ায় আমজাদ খান।স্বামীর হঠাৎ ধমকে অনেকটা ভরকে যায় অজান্তা খান।
“আমজাদ খান কখনো কোন ভুল সিদ্ধান্ত নেয় না এটা তোমার এতোদিনে বুঝে যাওয়া উচিত ছিলো অজান্তা।কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য তুমি সেটা পারো নি।
“আমি কখনোই তোমার কোন সিদ্ধান্তে বাধা হয়ে দাড়াই নি।কিন্তু তাই বলে যে তুমি আমার ছেলের জীবনে কাটা হয়ে দাঁড়াবে সেটা কিভাবে মেনে নিবো আমি।
বাবা মা প্লিজ চুপ করো তোমরা। আমি কথাকে ডিভোর্স দিবো তার যথেষ্ট কারণ আছে।আর সেই কারণ গুলো শুনলে তোমরাও চাইবে না কথা এই বাড়িতে বউ হয়ে থাকুক।
আমজাদ খান এসে ছেলের সামনে দাঁড়ায়।
“ঠিক আছে বল কি কারণ আছে ওকে ডিভোর্স দেওয়ার।ওকে ডিভোর্স দেওয়ার মতো যদি একটা কারণও তুই দেখাতে পারিস আর সেটার প্রমান করতে পারিস আমি তোকে কথা দিচ্ছি।আমি নিজে কথাকে ওর মায়ের কাছে দিয়ে আসবো।
কথা একপাশ দিয়ে ওঠে এসে অনুর কাছে যায়।আর এখানে কি হচ্ছে সেই ব্যাপারটাই অনুর কাছে জানতে চায়।অনু পুরো ব্যাপারটা বুঝাতেই জ্বলজ্বল চোখে তাকায় কথা।অনুর চোখেও পানি।
কথা এক পা এক পা করে এগিয়ে আসে আমজাদ খানের দিকে।শশুর কে খুব সম্মান করে কথা।আর আমজাদ খান নিজেও কথাকে মেয়ের চাইতে বেশি ভালোবাসে। কথাকে কিছু একটা বোঝানোর আগেই কথা বাড়ির সবাইকে বুঝাতে লাগে,
“উনার আর আমার সম্মতিতেই এই বিচ্ছেদ টা হচ্ছে। আমরা কেউ ই চাই না এই সম্পর্কে থাকতে। আপনারা কেউ উনাকে দোষ দিবেন না।
কথার কোন কথাই আমজাদ খানের বিশ্বাস হয় না,
“এসব কি বলছিস তুই? নিশ্চয় উচ্ছ্বাস তোকে দিয়ে এগুলো বলাচ্ছে তাই না?
বাবার এমন কথায় চিৎকার করে ওঠে উচ্ছ্বাস,
“আমি ওকে দিয়ে কোন কিছু বলাচ্ছি না বাবা।কথা আমার সাথে হ্যাপি না। ও অন্য কারো সাথে থাকতে চায়। যার সাথে ওর বিয়েটা ভেঙে গেছে ওই পিয়াসের সাথেই থাকতে চায়।এবার উচ্ছ্বাস কথাগুলো এমন ভাবে বলছে যাতে কথাও বুঝতে পারে।কিন্তু বুঝতে পারলেও যে প্রতিবাদ করার কোন উপায় নেই কথার।অনুকে যে কখনো ননদ ভাবে নি কথা বরং নিজের ছোট বোনই ভাবে সবসময়।
উচ্ছ্বাসের কথা এখনো শেষ হয় নি।তাই আবারও বলতে লাগে,
পিয়াস যে আদনান এর রিলেটিভ সেটা আমরা কেউ জানতাম না ঠিকই কিন্তু পিয়াস এই বাড়িতে আসার পর থেকে আমি কথাকে ওর সাথে দেখেছি।শুধু দেখি নি খুব বাজে ভাবেই দেখেছি।উচ্ছ্বাসের কথাটা শেষ হতেই বাবা সবার সামনে ছেলের গালে একটা চড় বসিয়ে দেয়।
“কার সম্পর্কে কি বলছো তুমি? তোমার স্ত্রী হয় কথা।তোমার অর্ধাঙ্গিনী। আর তুমি কি না তার ওপরেই এরকম একটা অপবাদ দিচ্ছো?
“অপবাদ না বাবা এটাই সত্যি।
“চুপ একদম চুপ আর একটাও কথা বলবে না তুমি।
“আমি নিজের চোখে দেখেছি সবটা?
“তুমি নিজের চোখে কি দেখেছো না দেখেছো এসবে আমার কোন মাথাব্যাথা নেই।আমি বিশ্বাস করি না এই কথা।
তোর বাবা ঠিকই বলেছে। আর যেই বিশ্বাস করুক এই কথাগুলো আমি বিশ্বাস করি না।
“দাদি??
দাদি তো ভুল কিছু বলে নি ভাই। ভাবি কখনৌ এমনটা করতে পারে না।তোমার ভুল হচ্ছে।
উজ্জ্বলের কথায় একটা ধমক দিয়ে ওঠে অজান্তা খান।
“কতোটুকু জানো তুমি এসব মেয়েদের সম্পর্কে। এদের কাজই ধান্দা বাজী করে চলা।ছোটলোকের বংশ কোথাকার।
“তোমায় আমি চুপ করতে বলেছি অজান্তা।
আমজাদ খানের কথায় রেগে গিয়ে আবারও সোফায় গিয়ে বসে অজান্তা।
আবার শুরু করে উচ্ছ্বাস,
“ঠিক আছে মানলাম।ও এসব কিছু করেনি মানলাম।কিন্তু টাকা এতোগুলো টাকা দিয়ে ও কি করেছে সেটা বলতে বলো ওকে।একটা দুটো টাকা না পুরো ২০ লাখ টাকা বলো কি করেছে ও।
এবার যেনো সবার মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো।এতোগুলো টাকা তার সাথে কথা।উচ্ছ্বাস কথার সামনে যেতেই মুখ ঘুরিয়ে নেয় কথা।
“মুখ ঘুরালে তো হবে না কথা।বলো তুমি টাকা গুলো দিয়ে কি করেছো বলো।
কথা এখনো সেইরকমই কঠিন,
“আপনি আমাকে টাকা টা দিয়েছিলেন। আমার টাকা আমি কি করেছি না করেছি তার কৈফিয়ত আমি কাউকে দিতে রাজি না।
উচ্ছ্বাস রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে খুব জোরে একটা চড় বসিয়ে দেয় কথার গালে।এটা দেখে অনু এবার খুব জোরে কান্না করতে গেলে নিজের মুখ নিজেই চেপে ধরে।
এখনো তোমরা বলবে এই মেয়েটা নির্দোষ এখনো বলবে এর সাথে থাকা সম্ভব। কি হলো বলো?
“হ্যাঁ সম্ভব খুব সম্ভব। সংসার যদি কারো করতে হয় এই রকম একটা মেয়ের সাথেই করা সম্ভব।
অনু যে হঠাৎ এরকম কিছু বলবে কেউ ভাবতেই পারে নি।
অনু বোন তুই এখন ঘরে যা। এখানে থাকার কোন দরকার নেই। চল।
“তুমি দাড়াও ছোট ভাই।আমি কোথাও যাবো না। আর ভাই কি বলছিলে তুমি টাকার হিসাব তাই তো?২০ লাখ টাকার হিসাব? আমি দিচ্ছি সেই হিসাব।
অনু গিয়ে কথার সামনে যায়।কথার চোখের পানি মুছে দিয়ে বুঝাতে লাগে,
“আমি দিবো সেই টাকার হিসাব ভাবি। তুমি চিন্তা করো না।
অনুর কথায় অনেকটা ভয় পেয়ে যায় কথা।এখানে বাড়ির সবাই আছে।বিশেষ করে বাবা আছে এখানে।অনু যদি সত্যিটা বলে দেয়।কি একটা কান্ড হবে।
“কোন কিছু জানো না তুমি অনু।আমি যা বলেছি এটাই সত্যি। আর কোন সত্যি নেই।
অনু কথার কোন কিছুই বোঝার চেষ্টা করে না।তখনি বৃষ্টিকে ফোন করে,
“হ্যালো বৃষ্টি কোথায় তুমি?
“তাড়াতাড়ির জন্য একটা রিক্সা নিয়েছিলাম কিন্তু এখনো এক পা এগোতে পারি নি।
“থ্যাংক গড।তুমি এখনি একবার আমাদের বাড়ি এসো প্লিজ।
“কেন অনু কোন প্রবলেম।কিছু হয়েছে তোমার?
“হ্যাঁ অনেক বড় প্রবলেম আর সেটা ভাবিকে নিয়ে।এখানে তোমাকেও খুব দরকার প্লিজ এসো।
“আচ্ছা আমি আসছি।
“থ্যাংকস।
অনুকে বৃষ্টিকে ফোন করতে দেখে উজ্জ্বল আর উচ্ছ্বাস এক সাথেই বলে ওঠে,
“ওকে কেন ডাকলি?
অনু কোন কথা বলে না কথাকে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসে।কিছুক্ষন পর বৃষ্টিকে দেখে অনু অনেক খুশি হয়ে যায়।মেয়েটা পুরো ঘেমে একাকার। পুরোটা রাস্তা প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতেই এসেছে।
“সরি আসলে অনু এমন ভাবে বললো তাই।।
বৃষ্টিকে আর কোন কিছু বলার সুযোগ দিলো না অনু।
“আমি কি তোমাকে কারো কাছে কোন কৈফিয়ত দিতে বলছি যে তুমি দিচ্ছো।
“কি হয়েছে বলবে তো?
অনু কিছু বলতে যাবে আবারও কথা ওঠে এসে অনুকে বারন করে।কিন্তু অনু শুনে না।লাজ লজ্জার ভয় কাটিয়ে সবটা বলে দেয় বাড়ির সবাইকে।উচ্ছ্বাসের সামনে গিয়ে অঝোরে কাঁদতে লাগে,
“আমায় মাফ করে দাও ভাই। আমি বুঝতে পারি নি এরকম কিছু হবে।আদনানের ফোনটা যে এভাবে কেউ চুরি করে নিয়ে যাবে,
আদনানের ফোন অচেনা কেউ চুরি করেনি অনু।সে তোমাদের সবারই চেনা।
বৃষ্টির কথায় সবাই অবাক।চেনা মানে কি।তখনি বৃষ্টি কথার সামনে যায়,
“কাল বিকেলে যে ছেলেটা জোর করে তোমার হাত ধরে টানছিলো ছেলেটার নাম কি জানো?
“তখন কথা সবাইকে পিয়াসের নামটা বোঝায়।
পিয়াসের নামটা শুনে উচ্ছ্বাস যতটা না অবাক হয়েছে তার চেয়েও অবাক হয় পিয়াস জোর করে কথার হাত ধরেছিলো এটা শুনে,
“জোর করে হাত ধরেছিলো মানে?
তখন বৃষ্টি কাল বিকেলের ঘটনা টা সবাইকে বলে।এরপর কথা এক এক করে পিয়াসের সব কথায় সবাইকে বোঝাতে লাগে।এই বাড়িতে দেখা হওয়ার পর থেকেই পিয়াস যেভাবে কথাকে বিরক্ত করতো সবকিছু।
উচ্ছ্বাসের এখন নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। এভাবে ভুল বুঝতে পারলো? কথার দিকে তাকানোর মুখটাও যে সে পাচ্ছে না এখন।
বৃষ্টি তুমি কি সিউর পিয়াসই আমাকে ব্ল্যাকমেইল করেছে।
“আমি শুধু সিউর না এর প্রমানও দিতে পারবো।
“মানে?
চলবে..
#সব_সম্পর্কের_নাম_হয়_না💗
পর্বঃ০৫
#লেখাঃ #বাশরুন_বর্ষা
রাতের নিস্তব্ধ নিরবতা।পুরো বাগানটা অন্ধকারে ঘেরা।আগের রাতের মতো আজকেও বৃষ্টি গিয়েছে সেই সাদা গোলাপ গাছটার নিচে।তবে আজকে সে একা না। আশেপাশে আরও অনেকেই আছে।টাকার ব্যাগ টা গাছের নিচে রেখেই বৃষ্টি একেবারে বাড়ির ভেতরে চলে আসে।আর উপরে এসে একটা রুমে ঢুকে বেলকনিতে এসে দাঁড়ায়।সেখান থেকে গোলাপ গাছ টা স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে।কিন্তু বেলকনিতে যে কেউ আছে তা বোঝার কোন উপায় নেই।।বাগানের চারদিকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে লুকিয়ে আছে উজ্জ্বল উচ্ছ্বাস সহ কয়েকজন পুলিশ।উদ্দেশ্য একটাই লোকটা যেই হোক না কেন অমানুষ টাকে ধরতেই হবে।
অনেকক্ষন চলে যায় কিন্তু কারো আসার কোন খবর নেই।বৃষ্টি অনেক বেশি অধৈর্য্য হয়ে পরেছে। ইচ্ছে করছে আবার বাগানে চলে যেতে।কিন্তু এখন সেটা কিছুতেই সম্ভব না। হঠাৎই খেয়াল করে যে কালো মানকি টুপি পরে মুখ ঢেকে কেউ একজন খুব সাবধানে গাছটার নিচে এসেছে। আশেপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে কেউ আছে কি না। জায়গাটা কালকের মতো ফাঁকা পেয়েই লোকটা গাছের নিচে হাতরাতে থাকে টাকার ব্যাগটা হাতে নেওয়া মাত্রই লোকটা দৌড়ে পালাতে যায় আর তখনি বৃষ্টি চোর বলে চিৎকার দেয়।আর তখনি সবাই লোকটাকে ঘিরে ফেলে।পুলিশ টর্চ জ্বালিয়েই লোকটার মাথা থেকে টুপিটা খুলে ফেলতেই সবাই অবাক।আসলেই যে এটা পিয়াস।পিয়াসকে দেখা মাত্রই উজ্জ্বল আর উচ্ছ্বাস দুই ভাই মিলে ওকে ইচ্ছেমতো মারতে লাগে।সাথে থাকা পুলিশ গুলো ওদের অনেক কষ্টে ছাড়িয়ে নেয়। না হলে এখানেই একটা খুনোখুনি হয়ে যেতো আজ।
পুলিশ পিয়াসকে আর বাড়ির ভেতরে নিয়ে যায় নি।ওর হাতে থাকা টাকা টা উচ্ছ্বাসের হাতে দিয়ে পিয়াসকে সাথে নিয়ে যায়।আর যাওয়ার আগে বলে যায় আগের টাকাটাও ওদের ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করবে ৩ দিনের মধ্যে। কারণ এক রাতে টাকাটা খরচ করতে পারে নি বলে ধারণা সবার।
”
ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে আছে আমজাদ খান। পাশেই অজান্তা খান।এদিকে একপাশে কথা,বৃষ্টি আর অনু।তার পাশেই দাদি।বৃষ্টির তখনকার চোর বলে চিৎকার শুনে যদিও সবার বাগানে যাওয়া উচিত ছিলো কিন্তু কেউ ই যায় নি।তার কারণ টা আমজাদ খান। উনার একদমই পছন্দ না কোন ব্যাপারে গোলমাল পরিবেশ। উজ্জ্বল আর উচ্ছ্বাস ভেতরে আসতেই দাদি ওঠে দাঁড়ায়।ছেলের দিকে একবার চোখ পরতেই আবার নিজের জায়গায় বসে যায় তিনি।আমজাদ খান বরাবরই গম্ভীর আর অল্প কথার মানুষ। ছেলেদের হাতে পায়ে রক্তের দাগ দেখে এবার আমজাদ খান উঠে দাঁড়ায়।
“মারামারি করেছো?
দুই ভাই ই চুপ কোন কথাই নেই।মাথা নিচু করে আছে। আমজাদ খান আরও কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। উচ্ছ্বাসের হাতে টাকার ব্যাগটা দেখে এবার এটা নিয়েই শুরু করে,
“টাকা পেয়েছো হাতে?
চোখ তুলে তাকায় উচ্ছ্বাস।একই প্রশ্ন আবার,
“এই টাকার জন্যই তো তুমি এতোকিছু করতে গেছিলে তাই না।অথচ এর আগে পরে কি আছে বুঝা তো দূরের কথা ভাবতেও যাও।তুমি যে আমার ছেলে এটাই আমার সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা।
“তোমার কাছে বা বাড়ির কারো কাছে ক্ষমা চাওয়ার কোন মুখ নেই আমার বাবা।আর যদি থাকেও আমি ক্ষমা চাইবো না বাবা।আমি শাস্তি চাই বাবা। আমায় শাস্তি দাও প্লিজ।
ওপাশ থেকে অজান্তা খান এগিয়ে আসে।।ছেলের এমন কথা শুনে পুরো চোখ দুটো কপালে,
“কি বলছো তুমি উচ্ছ্বাস। সামান্য একটা মেয়ের জন্য তুমি কেন শাস্তি পাবে।আর ভুল তো মানুষই করে তাই না?
স্ত্রীর কথায় রাগ টা চরম পর্যায়ে উঠে যায় আমজাদ খানের গর্জে উঠে ওনি,
“কথা সামান্য মেয়ে না অজান্তা।ও তোমার ছেলের বউ। এই খান পরিবারের বড় বউ।শেষ বয়সে এসে ছেলেদের এমন শিক্ষা দিও না যার জন্য ওপরওয়ালার কাছে হিসাব দেওয়ার মতো কিছু খুজে না পাও।আর একটা কথাও তুমি এখানে বলবে না। আমি এখনো জীবিত আছি।যাও গিয়ে মায়ের পাশে বসো।
ধমক টা আমজাদ খান বেশ জোরেশোরেই দেয়। আজন্তা আর দেরি করে না শাশুড়ীর পাশে গিয়ে বসে যায় চুপটি মেরে।
উজ্জ্বল এখনো ভাইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। কথা বৃষ্টি আর অনুকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাইলে দুজনেই ইশারায় একটু শান্ত থাকতে বলে।
আমজাদ খান কিছুক্ষন গম্ভীর ভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে। এরপরই আবার শুরু করে,
“শাস্তি চাইছো তুমি তাই না? শাস্তি তো তোমায় পেতেই হবে।তবে সেটা আমি দিবো না দেবে কথা। তোমার বিয়ে করা স্ত্রী।
আমজাদ খান কথাকে কাছে ডাকে।কাথাও ওঠে আসে।বাবার ইশারায়,
“তোর সিদ্ধান্ত ই শেষ কথা।বল তুই কি চাস।তুই কি কোন শাস্তি দিতে চাস ওকে?
বাবার কথায় কথা মাথা নাড়িয়ে না জানায়।উচ্ছ্বাস এক পলক তাকায় কথার দিকে। আসলেই কি কোন শাস্তি দেবে না কথা ওকে? কিন্তু কেন ওর তো শাস্তি দেওয়া উচিৎ। অবিশ্বাসের সাজা,মিথ্যা অপবাদের সাজা।এগুলো তো সব প্রাপ্য উচ্ছ্বাসের।
কথার সাথে উচ্ছ্বাসের চোখাচোখি হতেই কথা চোখ সরিয়ে নেয়।আর বাবাকে বুঝাতে চায় কিছু একটা,
“আমি কাউকে কোন শাস্তি দিতে চাই না বাবা।কাকে শাস্তি দিবো আমি? আর কেনই বা দিবো? কোন অধিকারে দিবো? যে সম্পর্কে বিশ্বাস নেই ভরসা নেই সেই সম্পর্কে কোন কিছুই মানায় না।৩ বার কবুল বললে হয়তো শরীয়ত মতে বিয়ে টা ঠিকই হয়ে যায় বাবা।কিন্তু তারপর? তারপরেই কি সব দায়িত্ব শেষ। আমরা মেয়েরা কি এই পর্যন্তই সীমাবদ্ধ? আমাদের কি আর কিছু আশাকরা অন্যায়? নিজের স্বামীর কাছ থেকে একটু সম্মান আশা করা টা কি খুব বেশিই অন্যায়?
দু-চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে কথার।ড্রয়িং রুমের পুরোটাই নিঃশব্দ।কারো মুখে কোন কথাই নেই। উচ্ছ্বাস এক পা এগিয়ে আসে কথার দিকে।মুহুর্তেই কথা ৩ পা পিছিয়ে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়ায়।আবারও উচ্ছ্বাস কথার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়,
“একবার একটা কথাই শুধু বুঝার চেষ্টা করো প্লিজ।
কথা উচ্ছ্বাসের কোন কিছুর বুঝলো না।বুঝেও বুঝলো না এক ছুটে উপরে চলে গেলো।আর একটু পরেই চলে আসলো সম্পূর্ণ ভিন্ন সাজে। খান বাড়ির দেওয়া সবকিছুই সে রেখে এসেছে।বিয়ের আগের সেই সাদামাটা কথা সেজেই নিচে নামছে কথা। নিচে নেমেই সরাসরি বাবার সামনে এসে দাঁড়ায়,
“আসছি বাবা।দোয়া করবেন আমার জন্য।
“যা মা আমি তোকে আটকাবো না।শুধু একটা কথাই বলবো।এই বুড়ো বাবাটাকে মাঝে মাঝে একটু মনে করিস। কথাটা বলেই আমজাদ খানের দু-চোখ ভরে ওঠে।না পেরে অন্যদিকে ঘুরে যায়।কথা গিয়ে অনুদের কাছে যায়।সেখানে দাদি সহ বৃষ্টিও আছে।সবার মুখে একটাই কথা। সাবধানে থাকিস।আর ভালো থাকিস। কেউ বলছে না থেকে যেতে।
উচ্ছ্বাস এবার তাড়াহুড়ো করে এগিয়ে আসে।আর কথাকে নিজের দিকে ঘোরায়,
“খুব তো বললে শাস্তি দিবে না।এখন, এখন কি করছো এটা?
কথার একটা হাত ধরে উচ্ছ্বাস,
“প্লিজ যেও না। আমাকে এতো বড় বোঝা ঘারে দিয়ে যেও না।আমি কখনো নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।শাস্তি না দিলে একটা সুযোগ তো দাও প্লিজ।
কথা কিছু বলছে না শুধু নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নেয়। উচ্ছ্বাস এবার চিৎকার করে করে বাড়ি মাথায় করে নেয়,
“তোমরা কেউ কিছু বলছো না কেন? কথা এভাবে চলে কেন যাবে? আমি তো বলছি যে অন্যায় হয়ে গেছে।বলছি তো ভুল হয়ে গেছে।প্লিজ একটু বুঝো তোমরা আমায়। কেউ তো বুঝো?
কথাগুলো বলতে বলতেই উচ্ছ্বাস হাটুগেরে বসে পরে ফ্লোরে। কথা শুধু দড়জার দিকে তাকিয়ে আছে। একটু পরেই মুখে একটু হাসি ফুটে। মা এসে গেছে। কথার মাকে বাড়িতে ঢুকতে দেখা মাত্রই উচ্ছ্বাস উনার দিকে এগিয়ে যায়।
“এসেছেন আপনি? কথাকে নিয়ে যেতে এসেছেন তাই না? একদম ওর কাছে যাবেন না আপনি।আমি ওকে যেতে দিবো না। কথা এখানেই থাকবে। এখানে মানে এখানেই এই খান বাড়িতেই। আপনি চলে যান। চলুন আমি নিজে দিয়ে আসছি আপনাকে। আসুন আমার সাথে।
কথাটা বলেই উচ্ছ্বাস কথার মায়ের হাতটা ধরে বাড়ির বাইরে নিয়ে যেতে লাগে।অনু আর দাদি উচ্ছ্বাসের এমন পাগলামো দেখে কিছু বুঝে ওঠতে পারছে না।কথার মা কোন ভাবেই নিজের হাত ছাড়াতে পারছে না।হঠাৎই বাবার কঠিন ডাকে হুস ফিরে উচ্ছ্বাসের। কথার মায়ের হাত টা ছেড়ে দেয়।কথার মা যেনো হাফ ছেড়ে বাচে।ছুটে গিয়ে মেয়ের হাত ধরে।
উচ্ছ্বাস আবার বাবার কাছে যায়,
“বাবা প্লিজ তুমি কথাকে আটকাও কথা তোমার কথা শুনবে বাবা। আচ্ছা তুমি আমাকে মারো।আমাকে চর দাও থাপ্পড় দাও না হলে অন্যকিছু দিয়ে মারো।তবুও ওকে যেতে দিও না বাবা প্লিজ।ওকে বাড়িতেই রেখে দাও। প্রয়োজনে আমি চলে যাচ্ছি বাড়ি থেকে।আমি এখনি যাচ্ছি।।
“কথা তো এই বাড়ি থেকে যাবেই উচ্ছ্বাস। ও কখনোই এ বাড়িতে থাকবে না।তুমি এই বাড়িতে থাকলেও যাবে না থাকলেও যাবে।আর হ্যাঁ তোমার এই বাড়িতে থাকা না থাকা দিয়ে আমার কিছু আসে যায় না।
কথা আর দেরি করে না। মাকে নিয়ে বেরিয়ে যেতে লাগে। এমন সময় উচ্ছ্বাস কথা বলে একটা চিৎকার দেয়।কথার মা পেছন ঘুরে পুরো ভয় পেয়ে যায়।হাত দিয়ে কথাকে ডেকে উচ্ছ্বাসকে দেখাতেই কথা দৌড়ে যায়।
হাতে খুব ধারালো একটা ছুড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে উচ্ছ্বাস। আর ছুড়িটা সরাসরি নিজের গলায় ধরা। কথা উচ্ছ্বাসের হাত থেকে ছুড়িটা নিতে যাবে এমনি উচ্ছ্বাস পিছিয়ে যায়।ওদিক থেকে অজান্তা খান তো পুরো অস্থির হয়ে গেছে ছেলের এমন কান্ডে।
“বাবু তুই এইটা কি করছিস।এমন করিস না বাবা।মায়ের কথাটা একটু ভাব।প্লিজ ওটা ফেলে দে।আমার ভয় করছে তো।
অনু আর উজ্জ্বল এগিয়ে আসতে গেলেই উচ্ছ্বাস ছুড়িটা আরও গলার সাথে ঘেষিয়ে দেয়।
“কেউ আসবি না আমার সামনে।বাবা তুমি ঠিকই বলেছো কথাও এ বাড়িতে থাকবে না। আমিও থাকবো না।হ্যাঁ থাকবো না।এখনি চলে যাবো।এক্ষনি।কথা তুমি এখন তোমার মায়ের সাথে যাবে না।তুমি আমার সাথে যাবে। চলো। কি হলো বুঝতে পারছো না এখনো।পুরোটা তো বুঝিয়েই বলেছি।তুমি যদি আমার সাথে না যাও আমি কিন্তু এখনি ছুড়িটা গলায় চালিয়ে দিবো।
এই প্রথম অজান্তা খান কথাকে কোন পজিটিভ কিছু বুঝাচ্ছে,
“এই মেয়ে কি বলছে বুঝছো না? আমার ছেলের সাথে যেতে বলছে তো নাকি? যাও এখনি যাও। বাবু দেখ ও তোর সাথেই যাবে। এই মেয়ে যাও বলছি।
কথা কি করবে বুঝতে পারছে না।হঠাৎ যে এরকম কিছু একটা করে বসবে উচ্ছ্বাস ভাবতেই পারে নি।আর এমন পাগলামো করার কোন মানেই খুঁজে পাচ্ছে না কথা।
আমজাদ খানের কঠোর ধমকেও কোন কাজ হলো না একটা সময় এক হাত দিয়ে গলায় ছুড়ি বসিয়ে আর এক হাতে কথাকে ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগে।সবার এটা দেখা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না।কারণ সেই পথ উচ্ছ্বাস রাখে নি।
চলবে