সব_সম্পর্কের_নাম_হয়_না
#সূচনা পর্ব
#লেখাঃ #বাশরুন_বর্ষা
বিয়ে ঠিক হওয়ার ৪ দিন যেতে না যেতেই ঘরের দড়জা জানালা আটকে ফ্যানে শাড়ি বেধে আত্নহত্যার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে অনু।অনেকক্ষন ধরেই বিছানার ওপর চেয়ারে দাঁড়িয়ে শাড়িটা ফ্যানের সাথে বাধার চেষ্টা করতে করতে শাড়িটা বাধতে সক্ষম হয় অনু।শাড়িটা গলায় বাধতে যাওয়ার আগেই কেউ একজন টেনে চেয়ার থেকে নামিয়ে নেয় অনুকে।
,,,,,ভাবি আমায় ছেড়ে দাও। আমি আর বাঁচতে চাই না। ছাড়ো আমায়।
অনুর কোন কথাই তার ভাবি শুনতে পারছে না।কাউকে যে চিৎকার করে ডাকবে সেই সামর্থ্যও আল্লাহ তাকে দেয় নি।কারণ সে যে জন্ম বোবা। অনুর কথা শুনতে না পেলেও বুঝতে ঠিকই পারছে যে অনু মরতে চায়।কিন্তু তার কারণ টাই কিছু বুঝতে পারছে না কথা।
অনেক জোরজবরদস্তির পরও যখন অনুকে শান্ত করা গেলো না ঠিক তখনি গালে একটা সজরে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় কথা।
নাম তাসনীম জাহান কথা।খান বাড়ির বড় বউ।অনুর বড় ভাবি।বিয়ে হয়েছে ১ মাসও হয় নি।নামটা কথা হলেও কথা বলার মতো কোন শক্তি কথার নেই।বিয়েটাও হয়েছে অদ্ভুত ভাবে।যার কারণে পরিবারের সবার সাথে কথার খুব একটা ভালো সম্পর্ক না।তবে কিছু মানুষের খুব কাছের হয়ে ওঠেছে।তার মধ্যে অনু একজন।
বিছানায় বসে কথার কাধে মাথা রেখে কাঁদছে অনু।কথার মনে শুধু একটাই প্রশ্ন অনুর তো ভালোবেসে পরিবারের সম্মতিতে বিয়েটা হচ্ছে।তাহলে আজকে হঠাৎ এইরকম একটা সিদ্ধান্ত কেন নিতে যাচ্ছিলো অনু?
অনেকক্ষন বাদে স্থির হয় অনু।কথা এবার অনুকে নিজের দিকে ঘুরায়।হাতের ইশারা করে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে। কেনোই বা এরকম করতে চাইছে?
,,,,,ভাবি আমার খুব বড় অন্যায় হয়ে গেছে ভাবি।বিয়ের আগে আদনান কে বিশ্বাস করাটা খুব ভুল হয়ে গেছে।
এবারও অনুর কোন কথাই কথার বোধগম্য হলো না। শুধু এক পলকে চেয়ে রইলো অনুর মুখের দিকে।অনুরও খেয়াল হলো যে তার ভাবি এভাবে বুঝবে না। এবার অনু ইশারাতে কথাকে বলতে লাগলো সবটা,,,,
,,,,বিয়ে ঠিক হওয়ার এক সপ্তাহ আগে আমরা রুমডেট করেছিলাম ভাবি? আর আদনান সেটার ভিডিও করেছিলো।আমার সামনেই করেছিলো।আর সেই ভিডিও টা হয়তো কারো হাতে পরে গেছে আমাকে ফোন করে ব্ল্যাকমেইল করে যাচ্ছে ভাবি।আদনানের সাথে আমি কিছুতেই কন্টাক্ট করতে পারছি না।বারবার ওর ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।ওই ভিডিও যদি ভাইয়ের চোখে পরে যায় ভাই তো মরে যাবে ভাবি। আমাদের পরিবারের মান সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে ভাবি। আমি এখন কি করবো বলো তুমি?
অনুর কথা গুলোর কি জবাব দিবে কথা কিছুই যেন বুঝে ওঠতে পারছে না।তবুও যেভাবেই হোক ওর পাশে থাকতেই হবে।
কথার ভাবনা শেষ হতে না হতেই অনুর নাম্বারে ফোন।যে নাম্বার থেকে ব্ল্যাকমেইল করে যাচ্ছে সেই নাম্বার থেকে।
“ভাবি আবার সেই ফোন।(ইশারায়)
“ফোনটা ধরো।(ইশারায়)
“হ্যালো কে কে বলছেন?
“বলছি যেই হোক বলছি।কি অবস্থা ম্যাডাম?
“দেখুন আপনি কেন এমন করছেন আমার সাথে।আপনার সাথে কোন জন্মের শত্রুটা আমার? আর এতোদিন ধরে আমায় ফোন দিচ্ছেন আপনি কি চান সেটা তো একবার বলবেন আমাকে? কেন আমাকে এভাবে ভয় ব্ল্যাকমেইল করছেন।
“ওয়েট ওয়েট। কি ব্যাপার আজকে মনে হচ্ছে বুলি ফুটেছে ম্যাডামের।যাই হোক আপনার শেষের কথার আগের কথাটার জবাব দেওয়ার জন্যই আপনাকে ফোনটা দিয়েছি।কি চাই আমাদের?বেশি কিছু না মাত্র ২০ লাখ টাকা চাই আমাদের।আর আপনার পক্ষে সেটা দেওয়া অসম্ভব কিছু না তাই না?
“২০ লাখ?? আপনি কি পাগল এতো টাকা আমি কোথায় পাবো কিভাবে পাবো?
“হা হা হা হাসালেন ম্যাডাম।খান বাড়ির একমাত্র মেয়ে আপনি। আর মাত্র এইকয়টা টাকার কথা শুনে আপনি কি না বলছেন কোথায় পাবেন।কোন কথা শুনতে চাই না।কাল কে আপনার এনগেজমেন্ট অনুষ্ঠান তাই না। ভালোই ভালোই টাকাটা প্যাকিং করে আপনাদের বাগানের সাদা গোলাপ গাছটার নিচে রেখে যাবেন।আর ম্যামোরিটাও যেখানেই পাবেন।উহু সন্দেহের কোন কারণ নেই।আমাদের কাছে ডুপ্লিকেট কোন কপি থাকবে না প্রমিজ। আর তাছাড়া আমরা চোর হলেও অনেকটা ইমানদার। হ্যাঁ সত্যি বলছি।হা হা হা হা হা।
লোকগুলোর বিকট হাসির শব্দে মরে যেতে ইচ্ছে করছে অনুর ফোনটা কেটে দিয়েই আবার কান্নায় ভেঙে পরে।আর কথাকে ইশারায় বুঝাতে লাগে সবটা,
“এরকমটা কেন হলো ভাবি।আদনান এমনটা কেন করলো। আর আমি এখন এতোগুলো টাকা কোথায় পাবো কিভাবে পাবো? কি করবো ভাবি? বলো না?
“তুমি চিন্তা করো না আমি আছি তো নাকি? অনেক রাত হয়েছে চলো ঘুমাবে চলো শুয়ে পরো।
কথা অনুকে জোর করে বালিশে শুইয়ে দিলেও আবার ওঠে বসে,
“এক মিনিট আমার রুমের দড়জা জানালা তো এখনো বন্ধ তুমি এখানে কিভাবে আসলে?
কথা এখনো দাঁড়িয়ে আছে।অনুর পাশে এসে বসে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বোঝাতে লাগে,
“আমি তোমার ওয়াশরুমে ছিলাম। আর ভাগ্যিস ছিলাম না হলে কতো বড় একটা বোকামি করতে যাচ্ছিলে তুমি?আমায় প্রমিজ করো এরকমটা আর কখনো করবে না।তোমার ভাইয়ের নামে প্রমিজ করো।আমি সবটা সামলে নিবো বিলিভ মি। শেষ পর্যন্ত শুধু একটু অপেক্ষা করো।
অনু কথার হাত দুটো ধরে কথা দেয় সে শেষ পর্যন্ত দেখবে কি হয়। আর এরকমটা কখনোই করবে না।
“কথা তো দিয়েছি। চলো তোমাকে তোমার রুমে দিয়ে আসি।ভাই তো অনেকক্ষন হলো অপেক্ষা করে আছে তাই না।চলো চলো।
অনু ওঠে কথার হাত ধরে টানলেও কথা এখনো বসে আছে,
“কি হলো যাবে না?
কথা মাথাটা নাড়িয়ে না জানায়।
“কেনো? কি হলো বলো কিছু? ধ্যাত ওঠো তো।
অনু এক প্রকার টেনেই নিয়ে যায় কথাকে।
ভাই দেখেছো ভাবি রুমে আসতে চাইছে না।কি হয়েছে হ্যাঁ অভিমান হয়েছে বুঝি।ছাড়ো তো ওসব কাল আমার এনগেজড আর তোমরা কিনা এরকম ভাবে আছো? ভাই তুমি কি চাও আমি কাল মুখ গুমরা করে রাখি।
“কে বলেছে এসব তোকে? আচ্ছা ঠিক আছে আর কখনো এমন করবো না তুই গিয়ে ঘুমিয়ে পর। রাত জাগলে কাল সাজার পর একেবারে বাজে লাগবে যাও শুয়ে পরো গিয়ে।
“উহু আগে ভাবির হাতদুটো ধরে বলো ভাব।কি হলো বলো। আরে আসো তো।
উচ্ছ্বাস কথার হাতদুটো ধরে তাকিয়ে আছে কথার চোখের দিকে।এই চোখের দিকে তাকালে যেনো বিশ্বাসই হয় না এই মেয়ে কিছু খারাপ করতে পারে।
ভাই ভাবিকে রোমান্টিক মুহুর্তে দেখে আর এক মিনিটও দেরি করে না অনু।তখনি সেখান থেকে উধাও। এদিকে অনু চলে যেতেই উচ্ছ্বাস কথাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে ঠেলে দেয়।রক্ত চক্ষু নিয়ে কথাকে ইশারা করতে লাগে,
“এখনো তুমি এই বাড়িতে আছো? আর বেছে বেছে আমার বোনের কাছেই গেছো? নিজেকে খুব চালাক মনে করো তুমি তাই না?ভেবেছো অনু বললেই তুমি এই বাড়িতে থাকতে পারবে? কখনো না আসলে অনু তো তোমার আসল রুপ জানে না। জানলে কখনোই তোমাকে এতো ভালোবাসতো না।আমি চাই না কাল তোমার জন্য আমার বোন কষ্ট পাক।তাই কাল অনুষ্ঠান শেষ হতেই তুমি বের হয়ে যাবে বাসা থেকে।সারাজীবনের জন্য বুঝেছো তুমি।
উচ্ছ্বাসকে হাত জোর করে মিনতি করে কথা।যেনো তার একটু কথা অন্তত শোনে।কিন্তু না কথাকে কোন সুযোগই দিলো না সে।
“কি বলার আছে তোমার।আমার চোখকে অবিশ্বাস করতে বলছো নাকি আমার কানকে।আর তোমাকে তো আমি এমনি এমনি ছাড়ছি না। এই যে চেক দিয়ে দিয়েছি তো ইচ্ছেমতো টাকার এমাউন্ট টা বসিয়ে নাও না।আর মুক্তি দাও আমায়।
উচ্ছ্বাস এর কথাগুলো একেবারে বুকের ভেতর গিয়ে বিধে কথার। চাইলেও প্রতিবাদ করতে পারছে না।কারণ কিছু বলার জন্য যে তার একটু সময় প্রয়োজন।কিন্তু সেই সময়টা তাকে কে দিবে।তাই আর কিছু বলা হলো না কথার সোফায় গিয়ে কোনরকম শুয়ে পরলো।
……………..….
সকাল হতেই খান বাড়ি সাজানোর তোরজোড়।সবাই এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে। কথাটা একটা ক্রিম কালারের শাড়ি পরে রেডি হয়ে রুম থেকে বের হতেই ধাক্কা লাগে তার শাশুড়ী অজান্তা খানের সাথে।কথাকে দেখেই যেনো অজান্তা খানের হাসি মুখটায় এক আকাশ কালো মেঘ এসে হানা দিলো।
“দেখে চলতে পারো না তুমি।সকাল সকাল সামনে এসে পরলে।
ওহ গড কাকে কি বলছি আমি। এতো আবার নেচে নেচে কথা না বললে বুঝে না কিছু।এই শোনো লিসেন,
এদিকটায় আছো খুব ভালো। ভুলেও আমার মেয়ের আশেপাশে যাবে না। আমি চাই না তোমার মতো অ লক্ষী আমার মেয়ের ধারের কাছে থাকুক।বুঝেছো?
এবার কথাগুলো কথা ঠিকই বুঝতে পারলো।আর অজান্তা খানের চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলো শুধু। নিচে যেতে চেয়েও দু পা পিছিয়ে ছাদের দিকে যেতে চাইলে কেউ একজন তার হাত টেনে নিয়ে গেলো।
“ভাবি লোকটা বারবার ম্যাসেজ করছে। ফোনও করে যাচ্ছে।কি করবো আমি ভাবি?
“চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।আগে বলো আদনান আসছে তো?
“আমি জানি না ভাবি। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ও নিজেই এইসব করছে।এরকমটা হলে আমি কিভাবে ওকে বিয়ে করবো?
“সবসময় মনের ভাবনা টা সত্যি হয় না অনু।দেখি না কি হয়।ধৈর্য্য ধরো শুধু।
ইশারায় কথাগুলো বলেই কথা ছাদে চলে যায়।আর শুধু পায়চারি করতে লাগে।অনুকে তো সে খুব ভরসা দিয়ে এলো কিন্তু কিভাবে কি করবে এতোগুলো টাকা কিভাবে ম্যানেজ করবে।আর টাকা দিলেই কি লোকগুলো সব কিছু দিয়ে যাবে? আবার যদি ব্ল্যাকমেইল করে? ইস যদি এই মুহুর্তে কথার কাছে একটা ব্ল্যানচেক থাকতো আর ইচ্ছেমতো টাকা বসিয়ে নিত।ভাবনা শেষ হতে না হতেই মুখে এক উজ্জ্বল হাসি ফুটে কথার।হ্যাঁ আছে তো উচ্ছ্বাস যে চেক টা দিয়েছিলো সেটাই তো আছে তার কাছে।আর সেখান থেকেই তো টাকাটা তুলা যেতে পারে।
কথা আর দেরি না করে রুমে এসে সেই চেকটা নিয়েই বেরিয়ে যায় খুব তাড়াহুড়ো করে ব্যাংকের উদ্দেশ্যে।।আর সেটাই চোখে পরে উচ্ছ্বাসের।তাই সেও কথার পিছু নেয়।কথাকে ব্যাংকের দিকে যেতে দেখে খুব অবাক হয় উচ্ছ্বাস। কিছুক্ষন পরেই কথা একটা বড় লাকেজ সহ বেড়িয়ে আসে।কথা একটা সিএনজি নিয়ে কিছুদূর যেতেই।উচ্ছ্বাস ব্যাংকের ভেতরে ঢুকে।এই ব্যাংকেই খান বাড়ির সমস্ত লেনদেন একাউন্ট সবকিছু।
উচ্ছ্বাস ব্যাংকে ঢুকেই ক্যাশিয়ারের কাছে যায়।
“আরে মিঃ খান। কি ব্যাপার ওয়াইফ তো মাত্রই টাকা তুলে গেলো এখন আবার আপনার আগমন যে?
“না একচুয়েলি ওকে বলেছিলাম একটু বেশি করে টাকা তুলার জন্য একা একা কি করছে বুঝতে পারলো কিনা সব তাই আর কি?
“কি বলছেন স্যার। ম্যাডাম তো গুনে গুনে ২০ লাখ টাকাই নিয়ে গেলেন।বোনের এনগেজমেন্টেই যদি এতো খরচ করেন বিয়েতে যে কি করবেন এটাই ভাবছি আমি।
“একটা মাত্র বোন আমাদের। আমাদের একটা পৃথিবী। সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো বোনকে সুখী করার জন্য আসছি। বায়
উচ্ছ্বাস ব্যাংক থেকে ঠিক ভাবে হেটে বের হতে পারছে না। কথা তা হলে সত্যি সত্যিই এতোটা লোভী। উচ্ছ্বাস নিজে যতোটা দেখেছে তার চাইতেও বেশি। ফুল স্পিডে ড্রাইভ করছে আর মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে কথা ২০ লাখ টাকা ক্যাশ ওঠিয়ে নিয়ে এসেছে।এমন সময় হঠাৎই খেয়াল করে উচ্ছ্বাসের গাড়ির সামনে দিয়ে একটা ছোট বাচ্চা দৌড়ে অন্যপাশে যাচ্ছে।উচ্ছ্বাস কোনরকম গাড়িটা ঘুরাতে গেলেই গাড়ি ব্রেক ফেল করে একটা গাছের সাথে ধাক্কা খায় আর গাড়ির দড়জা ভেঙে ছিটকে পরে যায় প্রায় ২৫ হাত দূরে মুহুর্তের মনে হলো কেউ একজন উচ্ছ্বাস কে টেনে আরও দূরে নিয়ে গেলো।৩০ সেকেন্ড যেতে না যেতেই গাড়িটা ব্লাস্ট করলো সেখানেই।
চলবে,,,,,,