সপ্নছোয়া পর্ব-৭+৮

0
1644

#গল্পঃ_সপ্নছোয়া
#লেখাঃ_মেহেদী_হাসান_রিয়াত
#পর্বঃ__৭+৮

পেছন থেকে কেও কোমরটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরতেই শিওরে উঠে মোহনা। সে কে তা বুঝতে বাকি নেই মোহনার। কিন্তু খুব অসস্থি লাগছে তার। নিজেকে ছারানোর চেষ্টা করছে মোহনা।
আদিত্ব মোহনার কাধে থুতনিটা রেখে বলে,

—- কিরে কি হয়েছে তোর? এমন করছিস কেনো?

—- তুমি এমন কেনো ভাইয়া? কেনো এতো কাছে আসো, জদি সারা জিবনের মতো নিজের করে নিতে না পারো তাহলে কেনো এতো কাছে আসো যন্ত্রনা দেওয়ার জন্য?

—- কে বলছে তোকে? তুই সারা জীবনই আমার। জীবনের শেষ নিশ্বাসটার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত মোহনা সুধুই আদিত্বের। কোনো ঝড়ই আলাদা করতে পারবেনা দুজনকে।

—- তাহলে কালকে যে ওই শাক চুন্নিটা আসছে? ওকে দেখলেইতো আমার শরিল ঘিন ঘিন করতে থাকে। সারাক্ষন তোমার পিছে লেগে থাকতো সেই ছোটবেলা থেকেই।

—- তুই কিনো চিন্তা করিস না আদিত্ব সুধুই তোর।

—- ওর কাছ থেকে নিজেকে দুরে রাখবা, ওর সাথে তোমাকে দেখলে একবারে খুন করে ফেলবো। এই বলে দিলাম হুম।

আদিত্ব একটা মৃদ হাসি দিয়ে মোহনাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়। মোহনাও বাচ্চাদের মতো লুকিয়ে যায় আদিত্বের বুকে। ইচ্ছে করছে এই রকম সারা জিবন নিজেকে আদিত্বের বুকে লুকিয়ে রাখতে।
,
,
,
,
ওদিকে মোহন অপেক্ষা করছে কখন তার মা ঘুমাবে। কখন তার জান পাখিকে নিয়ে রাতের আকাশে উড়াল দিবে। কখন হবে ছাদে দাড়িয়ে তার পাখিটার সাথে প্রেম কথন?
ইস জদি আজ একটা মোবাইল থাকতো তাহলে লুকিয়ে লুকিয়ে মায়ের ফোন দিয়ে প্রেম করতে হতোনা।
যাই ভাইয়াকে একবার বলে দেখি কোনো লাভ হয় কিনা।

—- ভাইয়া আসবো?

—- আয়।

মোহন গিয়ে সান্ত ভাবে বসে আদিত্বের পাসে।

—- ভাইয়া তোমার কাছে কি আমি কোনো দিন কিছু চাইছি?

—- না কেনো?

—- একটা জিনিস চাইলে দিবা?

—- বল।

— আমায় একটা ফোন কিনে দিবা?

আদিত্ব ফোনটা অপ করে আড় চোখে মোহনের দিকে তাকায়।

— তুই আবার ফোন দিয়ে কি করবি?

—- ইয়ে মানে, তোমরা যেইটা করো।

—- আগে এস এস সি পাস কর তারপর তোকে ফোন কিনে দিবো আমি নিজেই।

— আচ্ছা তাহলে তুমি কালই আমার কাছ থেকে এসএসসি র পরিক্ষা নিয়ে নিও।

—- এস এস সি মানে বুঝিস? টেন পাস করতে হবে।

—- টেন পাস করতে হবে? আমি এখন টুটে। আরো আট বছর? তার মানে তুমি ফোন দিবানা?

—- বলছিনা টেন পাস করলে কিনে দিবো।

—- ওকে ফাইন, তাহলে আমিও সবাইকে বলে দিবো।

আদিত্ব আবার আড় চোখে মোহনের দিকে তাকিয়ে বলে,

— কি বলবি তুই।

—- হা হা তুমিযে কালকে ছাদের উপর লুকিয়ে লুকিয়ে আপুকে চু……….

কথাটা বের হওয়ার আগেই আদিত্ব মোহনের মুখ চেপে ধরে।

— এই চুপ।

এবার বলো এস এসসি পাস নাকি গোপন তথ্য ফাস। সমস্যা নাই একটা ছোট ফোন কিনে দিলেও হবে। ওকে আমি যাচ্ছি ফোন যেনো খুব তারাতারি পাই।

আদিত্ব একটা দির্ঘশ্বাস নিয়ে মোহনের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

পরদিন সকালে আহান চৌধুরি, আমান চৌধুরি ও আদিত্ব গিয়ে শ্রাবনের সাথে অনিকার বিয়ের ব্যপারটা পাকা করে আচলো। কিন্তু সর্ত হলো নবিয়েটা শশ্রাবনদের বাড়িতেই হবে।
যদিও আদিত্ব তার ফুফির হটাৎ পরিবর্তন দেখে কিছুরা সন্দেহ হচ্ছে। তার উপর আবার তাদের বাড়িতে বিয়ে বিষয়টা কিছুতেই হজম করতে পারছেনা আদিত্ব।

সকাল থেকেই অনিকার মনে নবজাগরিত খুশির উল্লাস বয়ে যাচ্ছে। খুশিতে আজ লুঙ্গি ডান্স দিতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু সমস্যা হলো লিঙ্গি কই পাবে?

বিকেলে কুচিং থেকে এসে বসে আছে মোহনা আর অনিকা। সাথে মোহন ও।
তখনি কলিং বেল বেজে উঠলো।

— বসে আছিস কেনো দরজাটা খোল(অনিকা)

—- আমি কেনো খুলতে যাবো, তুই খোল। (মোহনা)

— দেখ আমি এমনিতেই কয়দিন পর এই বাড়িছেরে চলে যাচ্ছি। সো কষ্ট দিবিনা। আরে যা না ওরা দাড়িয়ে আছে।

তখনি আরেকবার কলিং বেল বেজে উঠে।

মোহনা উঠতে উঠতে বলে, ইস একবারে বিয়ের জন্য উঠে পরে লেগেছে।

মোহনা গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে একটা ফর্সা মেয়ে লেহেঙ্গাটা দুইহাত দিয়ে উচু করে ঢেং ঢেং করে ঢুকে পরেছে। তার সাথে একজন লোক ও একজন মহিলা।
এরাই কি তাহলে আদিত্বের মামা, মামি, আর ওই শাকচুন্নিটা?

মোহনা এতো সুন্দর হওয়ার পরেও ওকে দেখে কেমন জানি হিংসা হচ্ছে।
আরে ও এতো ফর্সা হলো কিভাবে? নিশ্চই ময়দা বিদ্যা। তানা হলে ওতো আমার চাইতেও কালো ছিলো। মেয়েটা যদি তার সুন্দর্য দিয়ে ভাইয়াকে বস করে ফেলে? না না আমি থাকতে তা কিছুতেই হতে দেবোনা।

অনিকা দৌড়ে এসেই অর্পিতাকে জড়িয়ে ধরলো। মোহনা রাগে খটমট করতে থাকে। বেশি রাগ হচ্ছে অনিকার উপর। বিয়ের কথা শুনে মনে ফুল ফটেছে আজ।
,
,
,
,
,
রাতে সবাই একসাথে খেতে বসে। অর্পিতা বসলো আদিত্বের মুখুমুখি চেয়ারে। খাচ্ছে আর বার বার আড় চোখে আদিত্বের দিকে তাকাচ্ছে। ওই দিকে মোহনা রাগে খটমট করছে কিন্তু প্রকাশ করতে পারছেনা।
শালি সতিনের ঘরে সতিন বার বার আমার জামাইটার দিকেই নজর দিস। তোর নজর আমি ছুটামু, সতিনের ঘরে সতিন।

খাওয়ার সময় মোহনের প্রসঙ্গে কথা উঠে। অর্পিতার বাবা সাইদ সাহেব বলে উঠে,

—- ছেলে ক্লাস টুটে পরে, এখনো মুসলমানিটা করান নি? আমি যখন কালকের দিনটা আছি কালকেই ওর মুসলমানিটা সেরে ফেলুন। স্কুলও বন্ধ আছে এখন।

সাঈদ সাহেব পেসায় একজন ডাক্তার। আহান সাহেবতো সুনেই লাফ দিয়ে উঠে। কম খরচে মুসলমানিটা কমপ্লিট হয়ে যাবে। কিপ্টা লোক, এক হলো নাচার বুড়ি তার ওপরে আবার ঢোলের বাড়ি।

মোহন বেপারটা কিছুই বুঝতে পারছেনা। মাথা নিচু করে খেয়ে যাচ্ছে। এটা আন্দাজ করতে পারছে যে কাল তার সাথে খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে।

মোহনা আদিত্বের রুমের পাস দিয়ে যাচ্ছে হটাৎ দেখে অর্পিতাকে আদিত্বের রুমে। দরজার পাসে দাড়ায় সে। দেখে অর্পিতা, আদিত্ব ও মোহন খুব ভালোভাবে গল্পের আসর জমিয়েছে। আদিত্ব আর অর্পিতার মুখে হাসাহাসিতো আছেই।

আদিত্বের হটাৎ চোখ যায় দরজার দিকে। দেখে মোহনা দাড়িয়ে সেখানে রাগে ফুস ফুস করে নিজের রুমের দিকে হাটা ধরলো।

আদিত্ব জিভ কামরে মোহনার রুমের দিকে হাটা ধরে। ওদিকে অর্পতা একটু অবাক দৃষ্টিতে আদিত্বের দিকে তাকিয়ে আছে।
নিজের হবু বৌকে রেখে আরেকজনের রাগ ভাঙাতে চলে গেলো সে। এই মোহনার বাচ্চাটা আগেও আদিত্বের সাথে আমায় কথা বলার সুজুগ দিতো না।

এদিকে মোহন এখনো গভির চিন্তায় মগ্ন সালা মুসলমানি জিনিস টা কি?
,
,
,
—-তোমাকে বলছিনা ওই শাকচুন্নিটার কাছে যাবেনা।

—- আরে বাবা ভুল হয়ে গেছে আমার, আর আমিতো যাইনি সেইতো এসেছে আমার কাছে।
একটু কথা বলার জন্য।

—- না তুমি কথা বলবানা, ওকে বের করে দিবে রুমের থেকে।

—- আরে ও মেহমান মানুষ। আর তুি আমায় হারানোর ভয় পাচ্ছিস না? এই তোর মাথায় হাত রেখে বললাম, এই আমার এক মাত্র মনের ঘরটাতে শুধু একজনেরই যায়গা চাছে। আর সেই যায়গাটাতে তুই বিহনে অন্য কেও কখনোই নিতে পারবেনা।

—- কথাটা যেনো মনে থাকে।

— হুম।

ওদিকে সবাই মিলে গল্প করছে। সেই ফাকে মোহন তার মায়ের ফোনটা নিয়ে আসে।
ছাদে এসে ফোন দেয় তার সেই জান পাখি তানিশাকে।
একবার কল বাজতেই রিসিভ করলো,

—- এই তোমার এতোক্ষন লাগে ফোন দিতে। কখন থেকে ওয়েট করছি আমি।

—- আর বলোনা, বাড়িতে মেহমান আসছে।

— ও…….. তো বাবু খাইছো?

—- আরে তোমার খাওয়া খাওয়ি বাদ দাও এদিকে আমার জান নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে গেছে।

— কেনো বাবাু কি হইছে?

— আরে ডাক্তার আঙ্কেল আমার বিরুদ্ধে বিদ্রহ ঘোষনা করে দিছে। কাল নাকি আমাকে মুসলমানি করাবে।

— এটা আবার কি জিনিস?

— আরে আমি নিজেও জানিনা। এটা কি?

—- আচ্ছা ভয় পেওনা, হয়তো ভালো কিছুই হবে। তুমি দেখছি অনেক টেনশনে আছো যাও ঘুমিয়ে যাও। আর আমি দেখি ব্যপারটা কি?

এদিকে রাত প্রায় ১২ টা। ঘুমের ঘরে ছটপট করছে মোহনা। তার চোখের সামনে দিয়ে অর্পিতা নিয়ে যাচ্ছে আদিত্বকে।
লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে টেবিলে রাখা পানিটা এক টানে খেয়ে ফেললো সে।

সোজা আদিত্বের রুমের দিকে হাটা ধরলো সে।

ঐদিকে মোহনের বিপদের কথা শুনে ঘুমাতে পারছেনা তানিশা। তারও খুব টেনশন হচ্ছে তার প্রিয়তম কি এমন বিপদে পরতে যাচ্ছে?

To be continue……
#গল্পঃ_সপ্নছোয়া
#লেখাঃ_মেহেদী_হাসান_রিয়াত
#পর্বঃ__৮

আদিত্বের ঘুমন্ত চেহারাটার দিকে এক পলকে তাকিয়ে আছে মোহনা। মিঠি মিঠি অন্ধকারের মাঝেও জেনো পরিস্কার অনুভব করছে আদিত্বের চেহারাটা। মনে জেগে উঠছে একটা অন্যরকম অজানা অনুভুতি।
মোহনা অজান্তেই আদিত্বের দুই চোখটায় নিজের ঠোট ছুইয়ে দিলো। কিন্তু এতে যেনো তৃপ্তি মিটেনি তার। গালে কপালে অনেক গুলো চুমু দিতে থাকে সে।
হটাৎ দেখলো আদিত্ব চোখ মেলে তার দিকে তাকিয়ে আছে। খনিকটা লজ্জায় পরে গেলো সে। লজ্জায় আদিত্বের চোখে চোখ রাখার সাহস পাচ্ছেনা সে।

—- পুরু মুখতো লাল করে দিলেন মোহারানী, আমার ঠোটজোড়া কেনো বাদ দিলেন? নাকি এটা আপনার চোখে পড়েনি লাল করার জন্য।

মোহনা এবার পুরাই লজ্জায় পরে গেলো।
ইস হদারামটাকি আর জেগে উঠার সময় পেলোনা? এখন জাগতে হলো তার? কি একটা রোমান্টিন সিনএ ছিলাম সব মাটি করে দিলো।

— কিরে বিরবির করে কি বলছিস?

— কই নাতো।

— অনেক রাত হয়েছে যা ঘুমিয়ে পর।

— আমি কোথাও যাবোনা এখানেই ঘুমাবো।

—- মানে কি আমার সাথেই?

— হ্যা।

— দেখ তুই আর আমি কিন্তু স্বামী স্ত্রী না।

— তো কি হয়েছে? আমি কি তোমার কাছে স্ত্রীর অধিকার চেয়েছি। আমি জাস্ট তোমার সাথে ঘুমাবো এতটুকুই।

— ওকে, কিন্তু সকাল হওয়ার আগেই চলে যাবি। বাড়ির কেও দেখলে অন্যকিছু মনে করবে।

— করলে করুক তাতে কি? ও আচ্ছা, ওই শাকচুন্নিটা তোমাকে আর বিয়ে করতে চাইবেনা তাইতো? আর আমি তোমাকে ছেরে চলে গেলেও সমস্যা নাই। ওকে আমি যাচ্ছি, থাকো তুমি তোমার ওই শাকচুন্নিটাকে নিয়ে। আমি আগেই বুঝেছি কেনো তোমার বিয়ে ঠিক করার পরও তুমি কাওকে কিছু বলনি? তমি আগে থেকেই ওই শাকচুন্নিটাকে বিয়ে করতে রাজি আছে। তাই আমাকে এতো এতোদিন অবহেলা করেছো। আমি সবই বুঝি। জদি সেইদিন শ্রাবনকে বিয়ে করে নিতাম তাহলেই ভালো হতো। যেদিন আমার বাচ্ছা এসে তোমায় মামা মামা বলে ডাকবে সেইদিন বুঝবে হুম।

আদিত্ব আর কিছু বলতে না দিয়েই মোহনার দুই গালে দুইটা আঙুল দিয়ে চেপে ধরে তার মুখের কাছে নিয়ে আসে।

— কোথায় শিখেছিস এতো পাকনা পাকনা কথা? অনেক পাকনা হয়ে গেছিস না? আর তোর এতোগুলো প্রশ্নের উত্তর আমি এখন দিবোনা সময় হলে তুই নিজেই জানতে পারবি।

—- চাইনা কোনো উত্তর, আমি সবই বুঝি।

মোহনা ভ্যা ভ্যা করে কাদতে কাদতে নিজের রুমে চলে যাচ্ছে আর আদিত্ব চেয়ে আছে মোহনার চলে যাওয়ার দিকে। মোহনার কান্ড দেখে অজান্তেই যেনো মুখে একটা হাসি ফুটে উঠে আদিত্বের।
,
,
,
,
সকালে জানালা ভেদ করে মিষ্টি আলো পরলো মোহনার মুখে। রাতে হালকা একটু বৃষ্টি হয়েছিলো। গাছের ভেজা পাতা গুলো রোদের আলোয় ঝলমল করছে অনেকটাই আয়নার মতো।

সকালে মিষ্টি আলো চোখে পরতেই ঘুম ভাঙে মোহনার। ঘুম ভাঙতেই দেখে আদিত্বের বুকে সুয়ে আছে সে। অবাকের সাথে হালকা বিরক্তবোধও অনুভব করছে সে। কাল রাতে এমন করে কিনা এখন দরত দেখাতে আসছে।

ওদিকে অর্পিতা হাতে এক কাপ চা নিয়ে আদিত্বের রুমের দিকে যায়। দরজা খোলাই ছিলো ভেতরে দিয়ে দেখে কেওই নেই। কিন্তু এতো সকালে আদিত্বকে বাইরেও যেতে দেখেনি সে। দাত দিয়ে নিচের ঠোটটা চেপে ধরে সে। যা বুঝার বুঝে গেছে সে।
চা টা হাতে নিয়েই সে আদিত্বের মা অনামিকা বেগমের কাছে চলে যায়। চায়ের কাপটা সেখানে রেখেই অনামিকা বেগমকে নিয়ে আসে মোহনার রুমের সামনে।

এদিকে মোহনা এখনো সুয়ে আছে আদিত্বের বুকে।
দরজায় টক টক আওয়াজ। চমকে উঠে মোহনা। এতো সকালেতো কেও তাকে ডাকতে আসেনা। বেপারটা কি?

আদিত্বকে বারবার ধাক্কা দিচ্ছে মোহনা কিন্তু উঠার কোনো নাম গন্ধও নেই। কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা মোহনা।
আদিত্বকি মরার মতো ঘুমাচ্ছে, আচ্ছা ও কি সত্যিই ঘুমিয়ে আছে, নাকি নাটক করছে।

দরজার ওপাস থেকে মোহনা নামক একটা শব্দ তার কানে ভেসে এলো। আদিত্বের উপর এক রাশ রাগ নিয়ে ভয়ে ভয়ে দরজা খুলতে যায় সে। না জানি আদিত্বকে দেখলে সবাই কি মনে করবে?

দরজার সামনে দাড়িয়ে একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজেকে সাভাবিক করার চেস্টা করছে মোহনা।
দরজা খুতেই দেখে আদিত্বের মা আর অর্পিতা দাড়িয়ে আছে বাইরে। একটা বড় সরো ঢোক গিলে সে। তাকে হাত দিয়ে সরিয়েই অর্পিতা ভেতরে প্রবেশ করে।

ভেতরে গিয়ে পুরা রুম চেক করে কারো কোনো চিহ্ন পেলনা সে। ওয়াস রুমে গিয়েও দেখে কেও নেই।
মোহনা একটা সস্থির নিশ্বাস ছোরে বলে উঠে, ও কি করছে ছোট মা।
,
,
,
,
ওদিকে ভোরে তাকিশা চলে যায় তার বান্ধবি টিনার কাছে মুসলমানি সম্পর্কে জানতে।

— কি তুই এতো সকালে?

— আর বলিসনা দোস্ত কাল থেকে একটা টেনশনি আছি।

— কি টেনশন?

— আচ্ছা আগে বল মুসলমানি কি?

— জদিও আমি সিওর জানিনা, তবে হ্যা, শুনেছি ছেলেদের ওইটা কেটে ফেলাকে মুসলমানি বলে।

— ওইটা আবার কোনটা?

— আরে ওইটা।

— ওইটা কি।

— কি করে যে বলি তোকে? এদিকে আয় কানে কানে বলি।

(………………………..)

এ্যা………. কি বলছিস তুই।

ঐদিকে ছাদে গিয়ে হাটা হাটি করছো মোহন। টেনশন নামক ভাইরাসে আক্রান্ত সে আজ।
আদিত্ব ছাদে এসে দেখে মোহন ছাদের কর্নিশ ধরে। মোহনের পাসে গিয়ে দারায় সে।

— ভাইয়া মুসলমানি কিরে।

— তোর ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

— কি বলছো। কিভাবে।

— তোর ওইটা কেটে ফেলবে।

— কি বলো তাহলে এখন উপায়?

— চিন্তা করিসনা ভাই, আমি তোর পাসে আছি।

সকাল বেলায় মোহনের মুসলমানির কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলো। ডাক্তার আঙ্কেল বলছে সাতদিনের ভিতরে ভালো হয়ে যাবে।

দশ দিন পর,
মোহন এখন পুরুপুরি সুস্থ। তানিশার কথায় আজ পার্কে আসলো সে। হাতে একটা কাটা যুক্ত গোলাফ।
তানিশা এসে তার সামনে মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছে।

— তোমার কি হয়েছে এভাবে মন খারাপ করে আছো কেনো?

— আমি তোমাকে আর ভালোবাসতে পারবোনা।

— কিন্তু কেনো?

—- আপু বলেছে আমাদের আর কিওট কিওট বাচ্চা হবেনা।

— এটা কিছুতেই হতে পারেনা। কিন্তু কেনো?

— তোমার ওইটা নাইযে।

— আরে পাগলি আছেতো? ডাক্তার আঙ্কেল একটু খানি কাটছে।

— কি! সত্যি বলছো?

— হ্যা গো হ্যা। বিশ্বাস না হলে দেখবা?

— এই না না থাক, কিন্তু ডাক্তার আঙ্কেলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাইযে তার জন্য আজ আমাদের সাজানো সংসারটা রক্ষা পেলো।
,
,
,
,
এদিকে অনিকার আর শ্রাবনের বিয়ে আগামি কাল। শর্ত অনুযায়ি অনিকাকে নিয়ে চলে এলো সবাই শ্রাবনদের বাসায়। এই কয়দিনে শ্রাবন আর অনিকার সম্পর্কটা এমন আকার ধারন করেছে, যে কেও বলবে এটা এরেন্জ মেরেজ নয়, পুরুটাই লাভ ম্যারেজ।

বাড়িটা সাজানোর কাজ চলছো, মেঘলা চৌধুরির এক মাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা। বড়িতে মেহমান আসতে শুরু করে দিয়েছে।

রাতে গায়ে হলুদ শেষে অনিকাকে ছাদে আসতে বললো, শ্রাবন।

মোহনা আজ সারাদিন অনিকার কাছেই ছিলো। কিন্তু অর্পিতাকে সেই আাশার পর থেকে আর দেখলোনা।
মোহনার মনে কোতো মোতো শুরু করে দিলো। শাকচুন্নিটা আবার আমার জামাইটার পিছনে লেগে নেইতো? ওর জালায় একটু সান্তুতে চলাফেরা তো দুরের কথা শান্তিতে ঘুমুতেও পারিনা। সারাক্ষন সিকিওরিটি গার্ডের মতো পাহারা দেওয়া লাগে। শালি অর্পিতার বাচ্ছা আর কোনো মানুষ পেলোনা, বেছে বেছে আমার স্বমিটাই নজরে পরলো তার?

মধ্য রাতে সকলের আড়ালে অনিকা ছাদে চলে যায় শ্রাবনের কাছে। শ্রাবনের পিছনে গিয়ে দাড়াতেই একটা ছোট্ট কাশি দেয় সে।
শ্রাবন পেছনে ফিরে দাড়ায় দুজন দুজনার মুখুমুখি।

ওদিকে মেঘলা চৌধুরি অপেক্ষার প্রহর গোনছে। প্রতিশোধের আগুন তাকে জালিয়ে শেষ করে দিচ্ছে। কখন আসবে বিয়ের সময় কখন নিবে তার ওই অপমানের প্রতিশোধ?
আর যায়ই হোক অপেক্ষা শব্দটাই পৃথিবির বিরক্তিকর শব্দের মাঝে অন্যতম।

To be continue……….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে