#গল্পঃ_সপ্নছোয়া
#লেখাঃ_মেহেদী_হাসান_রিয়াত
#পর্বঃ__৩+৪
মোহনার দুই হাত বিছানায় চেপে ধরে ঠোট জোড়া দখল করে নিলো আদিত্ব। অনেক্ষন ধরে ঠোটের উপর শ্বাসন চালালো সে। আদিত্ব ঠোট ছেরে ক্রমেশেই গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো। গভির ভাবে কিস করে যাচ্ছে তাকে। মাঝে মধ্য দাত দিয়ে চেপে ধরছে মোহনার চামরা। মোহনার প্রান যায় যায় অবস্থা। কিন্তু কোনো বাধা দিচ্ছেনা সে। কারণ অনেক কষ্টের পর সে তার ভালোবাসাকে নিজের করে পেয়েছে। এরোকম আরো হাজারো কষ্ট সহ্য করতে রাজি আছে সে।
আজ যে তার বাশর রাত আদিত্বের ইচ্ছায় বিয়েটা হয়েছে। ইশ ভাবতেই বিছানা ছেড়ে নাচতে ইচ্ছে করছে।
কিছুক্ষন পর দরজায় ঠকঠক আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় তার। খুজতে থাকে নিজের পাসে আদিত্বকে। ফুলে ফুলে সাজানো ঘরটাও যেনো মুহুর্তেই পূর্বের রুপ ধারন করেছে। এটও সপ্ন ছিলোনাতো আবার? আরে হ্যা, এটাওতো সপ্ন ছিলো। তার মানে এই দিনটা দেখার জন্য তাকে আরো কষ্ট করতে হবে। আবার সেই বেহায়া ছেচড়া উপাদি টা পেতে হবে তাকে। কবে যে এই সপ্নটা বাস্তবে রুপ নেবে? কবে পাবো এই সপ্নের ছোয়াটা?
সকালে আদিত্বকে সেই মেয়েটা সাথে দেখে সোজা বাড়ি চলে আসে মোহনা। দরজা বন্ধ করে সেই সকাল থেকেই কেদে যাচ্ছে মোহনা। দুপুরে খাবার শেষে একা দরজা বন্ধ করে সুয়ে ছিলো মোহনা। শুয়ে থাকার মাঝেই চোখ দুটু লেগে আসলো তার। এর মাঝেই বিয়ে আর হাফ বাসর শেষ করে ফেললো সে।
ওদিকে পূর্বের চেয়েও জোরে জোরে দরজায় টোকা দিতে লাগলো বাইরে দাড়িয়ে থাকা লোকটা।
মোহনা ধিরে পায়ে দরজার দিকে অগ্রসর হচ্ছে সে মনে এক রাশ বিরক্ত নিয়ে। এত সুন্দর ঘুমটা নষ্ট করে ফেললো।
দরজা খুলতেই আদিত্ব রুমে ঢুকৈ দরজা বন্ধ করে ফেলে। মোহনা ভেবাচেকা খেয়ে আদিত্বের দিকে তাকিয়ে আছে। এটাও সপ্ন নয়তো আবার?
আদিত্ব এক পা এক পা করে এগিয়ে আসছে মোহনার দিয়ে। চোখে মুখে আগুনের ফুলকি। মনে হচ্ছে এই আগুনে ভর্শ করে দিবে মোহনাকে। জলে পুরে ছাই করে ফেলবে আজ। আদিত্বের চোখে মুখে রাগ দেখে ভয়ে এক পা এক পা করে পিছাচ্ছে।
আদিত্ব এক পা একপা করে এগুচ্ছে মোহনা এক পা এক পা করে পিচাচ্ছে।
দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে যায় মোহনার। আদিত্ব দুই হাত দুই দিকে দিয়ে মোহনাকে হাত বন্ধি করে ফেলে।
মোহনা ডেব ডেব করে তাকিয়ে আছে আদিত্বের দিকে। বুঝতে বাকি নেই কেনো আদিত্ব এতো রেগে আছে। কারন সকালে বাড়িতে এসে আদিত্বের কথা বলে দিয়েছিলো সবাইকে।
—- সমস্যা কি তোর?
—- ক ক কই?
—- চুপ একধম চুপ, আমি তোর বয়ফ্রেন্ড নাকি জামাই?
—-
—- চুপ করে আছিস কেনো? আমি তোর বয়ফ্রেন্ড?
—- ন না।
—- বিয়ে করা জামাই?
— না।
—- তাহলে আমি যার সাথেই রেস্টুরেন্টে, শপিংমলে যেকনো জায়গায় যাই তোর সমস্যা কোথায়?
—-
—- চুপ করে আছিস কেনো?
— ত তোমাকে অন্য কারো সাথে দেখলে আমার সহ্য হয় না তাই।
— ভাবছিলাম কালকের কথাগুলো তোর মধ্যে বিন্দু মাত্র পরিবর্তন আনবে, কিন্তু তুই যে এতো বেহায়া তা আমার জানা ছিলোনা। শুনে রাখ তৃষ্না আমার গার্ল ফ্রেন্ড, আর আমি বিয়ে করলে ওকেই করবো। সি ইজ মাই হার্ট। আর কয়দিন পর তোর সাথে শ্রাবনের বিয়ে। এসব ব্যপার মাথা থেকে ঝেরে ফেলে দিয়ে নিজেকে প্রস্তুত কর। এমন কিছু করবিনা যার জন্য তোর প্রতি আমার ঘৃনা জম্মাবে। অন্তত আর যাই হোক বিদায়ের সময় যেনো তোকে নিজের বোন মনে করে বিদায় দিতে পারি।
,
,
,
আদিত্ব যাওয়ার পর মোহনার চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরে। ভালোবাসার মানুষটি যতই কষ্ট দিক না কেনো, সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করা যায়। যা এতোদিন সে সহ্য করে আসলো। আজ কিনা সেই ভালোবাসার মানুষটিই অন্য একজনকে নিজের হার্ট বলে সম্বোধন করলো।
আদিত্বের বলা কথাগুলো যেনো প্রতিটা তার বুকে তিরের মতো এক এক করে গাথতে থাকে। আদিত্বের সাথে মেয়েটাকে দেখে য়তটা কষ্ট হয়নি তার চাইতেও বেশি কষ্ট হচ্ছে তার মুখ থেকে মেয়েটার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ দেখে।
,
,
,
,
রাতে সকলেই একসাথে খাবার খেতে বসলো।
—- ভাবছি মোহনার সাথে অনিকার বিয়েটাও সেরে ফেলবো। এক খরচে দুজনারই বিয়ে হবে মন্দ কি?(আদিত্বের বাবা)
—- কি বলছো তুমি? আমাদের বাড়িতে মাত্র দুইটা মেয়ে। দুজনার বিয়েই ধুম ধাম করে হবে অজথা এতো কিপ্টামি করার মানে কি?(আদিত্বের মা, অনামিকা বেগম)
—- বাবা তুমি ঠিকই বলেছো, সময় মতো মেয়েদের বিয়ে না দিলে তারা খারাপ কাজ করতেও দিধা করেনা, আমি চাইনা আমাদের অনিকা অন্য সবার মতো হোক।(আদিত্ব কথাটা বলেই আড় চোখে মোহনার দিকে তাকায়)
—- তো ভাইজান ছেলে কে, কোথায় থাকে?(মোহনার বাবা)
—- আমার বন্ধুরই ছেলে শুভ্র। দেখতেও মাশাল্লাহ্।
মোহনা চুপ চাপ করে খেয়ে যাচ্ছে, অনিকা সবার আড়ালে বার বার চোখের পানি মুচছে। খাবার টেবিল হতেই দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো সে।
মোহনা ও শ্রাবনের সম্পর্কের ভিতর সবাই এক মত থাকলেও দ্বিমত ছিলো তৃতীয় এক ব্যক্তির। আর সে হলো অনিকা। কারন ছোটবেলা থেকেই ফুফাতো ভাই শ্রাবনকে সে অনেক ভালোবাসতো। পারেনি কোনো দিক শ্রাবনের সামনে দাড়িয়ে নিজের ভালোবাসাটা প্রকাশ করতে।
কিন্তু এর মাঝে জড়িয়ে গেলো একটা ভিন্ন ঝামেলা। সম্পর্কটা এমন ভাবে হতে চলছে মনে হচ্ছেনা সবাই সুখি হবে।
,
,
,
,
,
শ্রাবনের প্লাইট আজ, সবাই গেছে শ্রাবনকে রিসিভ করতে। মোহনা আর অনিকা ঘরেই আছে।
অনেকা বার বার মোহনার রুমের বাইরে পায়চারি করছে। ভাবছে মোহনাকে কথাটা বলা ঠিক হবে কিনা? মোহনার হবু স্বামী হয়তো মোহনা আবার কষ্ট পাবেনা তো? কিন্তু ভালোবাসার মানুষটাকে দুলাভাই ডাকতে এর থেকেও তো কষ্ট আমার বেশি হবে।
—- কিরে কিছু বলবি?
—- না কিছুনা এমনি।
—- আমায় একটা কথা বলতো তোর চোখের নিচে ইদানিং কালো কালো দাগ খেয়াল করছি। কান্না টান্না করিস নাকি?
—- আরে না একটু টেনশনে আছি, তাই হয়তো।
— টেনশনে মানুষের চোখের নিচে কালো দাগ পরে আমার আগে জানা ছিলোনা।
—- আমার কথা বাদ দে তোর নিজের ছোখেওতো পানি ছল ছল করছে।
মোহনা হাত দিয়ে পানিটা মুছে, আর বলিসনা একটা পোকা পরে ছিলো চোখে।
মোহনা একটা দির্ঘশ্বাস নেয়। যার জন্য এই চখের জল সে নিজেও তো এই জলের ভাষা বুঝেনা। তুই কি করে বুঝবি?
,
,
,
,
দিন এগুচ্ছে আর দুজনার বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে।
মোহনা দাড়িয়ে আছে বেলকনিতে। বিয়ের আর সাত দিন বাকি। শালা আদিত্বের বাচ্চা কেনো আমার ভালোবাসাটা বুঝেনা? আমিযে তাকে ছারা কিছুতেই বাচতে পারবোনা। কয়দিন পর আমি আর এই বাড়িতে থাকবোনা, আচ্ছা ভাইয়ার মনে কি আমার জন্য এতটুকুও ভালোবাসা জম্মায়নি। ধুর জম্মাবেইবা কি করে সে তো এখন অন্যের প্রেমে অন্ধ। তুবুও কেনো আমার পাগল মনটা বারবার তাকেই চায়?
মোহনা দ্রুত পায়ে আদিত্বের রুমে চলে যায়। রুমে প্রবেশ করেই দেখে সে বেলকনিতে দাড়িয়ে। সে রুমের লাইট অপ করে দেয়। হয়তো কেও দেখলে খারাপ ভাববে।
দৌড়ে গিয়ে পেছন থেকে তারে জড়িয়ে ধরে মোহনা।
—- তুমি যানোনা তোমায় আমি কত ভালোবাসি, কতবছর তোমার জন্য অপেক্ষা করেছি আমি। কেনো তুমি আমার ভালোবাসাটা বুঝোনা। কয়দিন পর বিয়ে, আমমার প্রতি কি তোমার একটুও ভালোবাসা জম্মায় নি? আমি জানি না আমি কি বলছি এই সব। কিন্তু আমি শুধু তোমাকেই চাই। তোমাকেই লাগবে আমার।
—- আরে পাগলি ভালোবাসি বলেইতো এতদুর থেকে ছুটে চলে আসলাম তোমায় নিজের করে নিবো বলে।
মোহনা একটু চমকে উঠে কারন এটা আদিত্বের ভয়েজ নয়। মোহনা তাকে ছেরেই একটু দুরে সরে যায়।
পেছনে ঘুরেই শ্রাবন মোহনার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়।
— তোমায় দেখতে আসলাম, যাকে বিয়ে করবো তাকে না দেখলে কি হয়? সেই ছোটবেলায় দেখেছিলাম তোমায়। আর কয়দিন আগে তোমার ছবি দেখেছিলাম। যার কারনে আমি নতুন করে তোমার প্রেমে পরেছি।
মোহনা সেখান থেকে দৌড়ে নিজের ঘরে চলে যায়। ছি ছি এতক্ষন আমি কাকে এইসব বললাম শ্রাবন ভাইয়াকে?
যতই কিছু হোক আমি এই বজ্জাত টাকে কিছুতেই বিয়ে করছিনা।
বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে, কার্ড দেওয়াও শেষ। আদিত্ব হাতে একটা কার্ড নিয়ে তৃষ্নার বাসায় গেলো। তার দুই বোনের বিয়ে আর এই বাড়ির বড় ভবিষ্যৎ বৌটাকেই যদি না জানাই তাহলে কি হয়?
তৃষ্নাকে কিছু যানায়নি কারন আজ প্রথম আদিত্ব তৃষ্নার বাড়ি যাচ্ছে ভাবলো একটা সার প্রইজ দিবে। তৃষ্না বাড়িতে পৌছে গেলো সে। সদর দরজা খোলাই ছিলো। ভেতরে গিয়ে দেখে কেও নেই। হয়তো উপরে আছে। সে বিয়ের কার্ড ও একটা বুকে নিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছে।
তৃষ্নার রুমের দরজার পাসে দাড়াতেই তার হাত থেকে কার্ড ও ফুল গুলো পরে গেলো। পা দুটু যেনো অবশ হয়ে আসছে।
এটা কি তৃষ্না? অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় আরেক জনের কোলে মাথা রেখে সুয়ে আছে?
তৃষ্নাকে এভাবে দেখে যতটাই না অবাক হচ্ছে তার চাইতেও বেশি অবাক হচ্ছে শুভ্রকে দেখে। যে কিনা তার একমাত্র ছোট বোন অনিকার হবু বর।
To be continue..
#গল্পঃ_সপ্নছোয়া
#লেখাঃ_মেহেদী_হাসান_রিয়াত
#পর্বঃ__৪
নিজের গার্ল ফেন্ড তৃষ্নাকে অন্য একটা ছেলের সাথে অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় দেখে হাত পা দুটু অবস হয়ে আসছে আদিত্বের। তার চেয়েও বেশি অবাক হচ্ছে তৃষ্নার সাথে নিজের এক মাত্র ছোট বোন অনিকার হবু বর শভ্রকে দেখে।
মাথা হ্যাং হয়ে আসছে তার। পুরু মাথাটা যেনো মুহুর্তেই পাথরে রুপ নিয়েছে। মাথায় কিছু ঢুকছে না।
তৃষ্নাকে সারপ্রাইজ দিতে এসে সে নিজেই যে এতো বড় সারপ্রাইজড্ হয়ে যাবে তা ছিলো ভাবনার বাইরে।
যাকে সে তার নিজের বৌ বানানোর সপ্ন দেখে ছিলো, আজ কিনা সেই অন্য একটা কোলে মাথা রেখে নিজের চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত হয়ে পরেছে।
রিলেশনের এক বছরে আদিত্ব এক মুহুর্তের জন্যও বুঝতে পারেনি তৃষ্না এতটা নোংরা।
নিজের বেলায় এমন ধোখাটা সে নিতে না পারলেও এর সাথে জড়িয়ে আছে নিজের ছোট বোন অনিকার জীবন টা।
না, আমি জেনে শুনে নিজের বোনটাকে কোনো ভাবেই জাহান্নামে নিক্ষেপ করতে পারিনা। অনিকা তার একমাত্র আদরের ছোট বোন। আর কোনো ভাই চাইবেনা এরকম একটা ছেলের সাথে নিজের বোনের বিয়ে দিতে।
কিন্তু বাড়িতে আদিত্বের বাবা আহান চৌধুরির মুখের উপর কথা বলার সাহস কারোরই নেই। সে যা একবার বলবে তাই করবে। নিজের বাবার চোখে শুভ্র খুবই ভালো ছেলে। যা এতোদিন আদিত্ব নিজেও বিশ্বাস করতো। আদিত্ব ভালোই বুঝতে পারছে মুখের কথায় তার বাবাকে কিছুতেই বিশ্বাস করানো যাবেনা শুভ্র এতটা খারাপ ছেলে। ভাবলো ফোনে সম্পুর্ন কিছু ভিডিও করে রাখতে। কিন্তু ছেলে হয়ে বাবাকে কিভাবে এটা দেখাবে সে?
কিন্তু এর সাথে জড়িয়ে আছে নিজের ছোট বোনের জীবন টা।
তার যাই হোক তার ছোটবোনের জীবনটা ডে নষ্ট হতে দিবেনা কিছু তেই।
ফোন বের করে সব কিছু ভিডিও করতে লাগলো সে।
—- আচ্ছা তুমি যে সব সময় আমার এতো কাছে আসো আমায় বিয়ে করে ফেললেইতো হয়, আর লুকিয়ে প্রেম করতে হবে না।
—- আরে আমিতো বিয়ে করে সব সময়ই তোমার সাথে থাকবো। কিন্তু তার আগে একটা ছোট্ট কাজ বাকি আছে যে।
—- কি কাজ?
—- আমার বাবার বন্ধুর মেয়েকে বিয়ে করছি কয় দিন পর। খুবই বড়লোক।
—-কি! তাহলে আমার কি হবে? আমি কি এতো দিন সুধু তোমার রক্ষিতা হয়েই ছিলাম?
— ছি ছি এভাবে বলোনা। আরে অবাক হওয়ার কিছু নেই, বিয়ের পর তার সব কিছু নিজের করে নিয়ে তাকে ডিবোর্স দিয়ে তোমায় নিয়ে দেশের বাইরে চলে যাবো, ফুসসসস।
—- তুমি যা করবা তারাতারি করো।
— আচ্ছা, ইদানিং তুমি নাকি কোন ছেলের সাথে ঘুরাফিরা করো।
—- আরে ওতো আমার ফ্রেন্ড, টাইম পাস করি, এর চেয়ে বেসি কিছুনা।
ওই দিকে আদিত্ব চুপ করে সব কিছু সহ্য করে নিচ্ছে।
শুভ্র তৃষ্নার শরিল হতে ছোট কাপরটাও খুলে ফেললো। মুহুর্তেই আদিত্ব ভিডিও অপ করে সোজা বাইরের দিকে হাটা ধরলো।
ড্রইবিং শিটে বসে ড্রাইব করছে আদিত্ব। তৃষ্নার কথা ভেবে তার বুকটা দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এতোদিন তৃষ্না তার সাথে টাইম পাস করেছিলো? আর আদিত্ব সেই টাইম পাসটাই রিয়েল লাভ ভেবে বৌ বানানোর সপ্ন দেখেছিলো এতোদিন। নিশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে আজ তার।
কিন্তু ছোট বোনের জীবনটা সে রক্ষা করতে পারবে এটা ভেবে সে একটা সস্থির নিশ্বাস ফেললো।
গাড়িতে এসি থাকার পরও ঘামে পরু শরিল ভিজে যাচ্ছে আদিত্বের।
গাড়িটা বাইরে রেখে সে সোজা নিজের রুমে চলে যায়। ঘামো একাকার অবস্থা। ওয়াস রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিলো সে। বিছানায় গা এলিয়ে দিলো, প্রচুর মাথা ব্যাথা করছে তার কিছুতেই এটা হজম করতে পারছেনা সে।
গুধুলির লগ্ন শুরু হয়ে গেছে। সাদা সুর্য ধিরে ধিরে লাল বর্ন ধারন করে পশ্চিম দিকে হেলে পরছে।
আদিত্ব অনিকার রুমের দিকে যাচ্ছে।
অনিকা রুমে নেই। হয়তো ছাদেই আছে। আদিত্ব ছাদে গিয়ে দেখে ছাদের এক কোনে কর্নিশ ধরে দারিয়ে আছে অনিকা। আদিত্ব গিয়ে পাসে দাড়ালো। অনিকা আদিত্বের দিকে একবার তাকিয়ে আবার প্রকৃতির দিকে নজর দিলো।
— কিরে তোর মন খারাপ?
অনিকা এবার আদিত্বের দিকে ঘুরে দারায়। তার মনের কথাটা কারো সাথে শেয়ার করতে পারছেনা সে। মনে হচ্ছে এই জমে থাকা কথা গুলো তার দম বন্ধ করে দিচ্ছে।
মুহুর্তেই অনিকা আদিত্বকে ঝাপটে ধরে কান্না করে দেয়।
—- আরে আরে পাগলি কি করছি তুই?
— ভাইয়া আমি এই বিয়ে করতে পারবোনা ভাইয়া।
—- কি! এই বিয়ে করবিনা তুই?
—- ভাইয়া বিশ্বাস কর এই কথাটা আমি কাওকেই বলতে পারছিনা। দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার। প্লিজ ভাইয়া তুই ছারা আমার আর কে আছে বল। আমি প্রয়োজনে মরে যাবো তাও এই বিয়ে করতে পারবোনা।
— চুপ! একধম চুপ, মরার কথা আরেকবার মুখে আনলে আমি নিজেই তোকে মেরে ফেলবো। আর তুই চিন্তা করিসনা। বিয়েটা হবেনা। আমি আজকেই বিয়ে ভাঙার ব্যবস্থা করছি।
অনিকার কান্না জড়িত মুখে যেনো মুহুর্তেই হাসি ফুটে উঠলো।
—- থ্যাংক ইউ ভাইয়া, থ্যাংক ইউ সো মাচ্। আমি যানতাম তুই আমায় অনেক ভালোবাসিস আমার কথা তুই নিশ্চই ফেলবিনা।
কাধে হালকা করে একটা থাপ্পর দিয়ে,
—- পাগলি একটা। কাউকে পছন্দ করিস?
—- হুম।
—- কাকে?
—- ভাইয়া আমি শ্রা………
মুহুর্তেই আদিত্তের ফোনটা বেজে উঠলো।
—-আচ্ছা তোর সাথে আমি পরে কথা বলছি। এখন যা।
আদিত্ব ফোনটা রিসিভ করে কানে নিলো। আর অনিকা না বলা কথাটা মুখে নিয়ে এক পা এক পা করে নিচে চলে গেলো।
—- কেনো ফোন দিলে?
—- মানে কি আমি তোমায় ফোন দিতে পারিনা?
—- না তুমি ফোন দিতে পারোনা, আর কারো সাথে টাইম পাস করার কোনো ইচ্ছেই আমার নেই।
—- কি হয়েছে তোমার।
—- এই তোর এইসব আজাইরা ন্যাকামি সুনার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। আর কি হয়েছে তা খুব শিগ্রই যানতে পারবি।
,
,
,
রাতের বেলায় বেলকনিতে বসে চোখে একটা চশমা দিয়ে খবরের কাগজ পরছে আহান চৌধুরি। আদিত্ব গিয়ে তার পাসে বসলো।
আহান চৌধুরি চশমার উপর দি ভ্রু কুচকে আদিত্বের দিকে তাকালো।
পুনরায় আবার পত্রিকায় চোখ দিলো।
আদিত্ব বাবার দিকে বারবার আড়চোখে তাকালো।চশমার ফাক দিয়ে ঠিকই বুঝতে পারছে আহান সাহেব।
—- কিরে কিছু বলবে?
—- হ্যা বাবা?
আহান চৌধুরি এবার পেপারটা দুই ভাজ করে টেবিলে রেখে চশমাটা খুলে আদিত্বের দিকে তাকায়।
—- বলো কি বলবে?
—- বাবা বলছিলাম যে, শুভ্রর ব্যাপারে সব কিছু না জেনে অনিকার বিয়ে দেওয়াটা বোকামি হয়ে যাচ্ছেনা?
আহান চৌধুরি এবার চশমাটা টেবিলে রেখে আদিত্বের দিকে মুখ ঘুরে তাকায়।
—- ও খুব ভালো ছেলে, ওর ব্যপারে সব কিছুই আমি জানি, ও অনিকা কে সুখে রাখতে পারবে এইটা আমার বিশ্বাস।
—- হতে পারে শুভ্রর খারাপ দিক গুলো এখনো আমাদের অজানা। হতে পারে অনিকা শুভ্রর সাথে সুখি হবেনা।
—- কি বলতে চাইছো তুমি?
—- বলছিলাম কি বাবা, আমি চাইনা অনিকার ওখানে বিয়ে হোক।
—– দেখো আমাদের পরবর্তিতে ফ্যামিলির সিদ্ধান্তটা তুমিই নিবে। কিন্তু এখনো আমরা আছি। তাই তোমার এই বিষয়ে নাগ গলানোর কোনো দরকার নেই।
—- বাবা তোমার চোখে শুভ্র হয়তো ফেরেস্তার মতো ভালো, কিন্তু আমার চোখে সে নর্দমার কাদার চেয়েও নিকৃষ্ট।
—- বুঝলাম তুমি যে তাকে খারাপ বলছো এর কোনো প্রমান আছে।
—- বাবা তুমি যানো আমি ছোটবেলা থেকেই প্রমান ছারা কোনো কথা বলিনা। কিন্তু আমি সেটা তোমাকে দেওয়া ঠিক হবে বলে মনে করছিনা। কিন্তু আপনি আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারেন।
—- দেখো আদি প্রমান ছারা করো দিকে আঙুল তুললে, একটা আঙুল তার দিকে থাকলেও তিনটা তোমার দিকেই থাকে। আর বৃদ্ধ ঋঙুলটা দুজনকেই সাপোর্ট করে।
আহান চৌধুরি আবার চশমা পড়ে পত্রিকায় নজর দিলেন।
আদিত্ব ফোনটা অন করে টেবিলে রেখেই সেখান থেকে চলে যায়।
আহান সাহেব সেই দিকে কোনো চোখ না দিয়েই পত্রিকা পরতে থাকে।
হটাৎ ফোনে শুভ্রর কন্ঠ সুনতে পেয়ে চমকে উঠে আহান চৌধুরি। পত্রিকা টা এক পাসে রেখে ফোনটা হাতে তুলে নেয় আহান চৌধুরি। ভিডিওতে নেগেটিভ অংশ গুলো ব্লার করা। বাকি সবই ঠিক ঠাক। ফোনে স্পর্স দেখতে পায় শুভ্র চেহারা।
আহান চৌধুরি কপাল কুচকে বার বার ঘাম গুলো মুছতে থাকে।
,
,
,
,
,
রাতে আহান চৌধুরি ফোন করে শুভ্র তার বাবাকে নিয়ে আসে তাদের বাড়ি।
এই নিয়ে বেশ কথা কাটা কাটি হয় দুজনার মাঝে।
যখনি ভডিওটি শুভ্রর বাবার হাতে দেওয়া হয়। কিছুক্ষন পরই শুভ্রর গালে একটা চর বসিয়ে দেয় তার বাবা।
ফোনটা প্লোড়ে আছরে ফেলে শুভ্রর কলার ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে। পেছন থেকে আহান চৌধুরি ডাক দিয়ে বলে, এক্সকিওজমি, ফোনটার দাম দের লক্ষ টাকা।
—- ওকে আমি আপনার একাউন্টে দুই লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি।
আদিত্ব আহান চৌধুরির কাধে হাত রেখে বলে, বাবা এখানে আপাতত কিপ্টামিটা না করলেও হতো।
মাঝ রাতে ছাদে দাড়িয়ে সিগারেটের ধোয়ায় কষ্ট গুলো পুরে ছাই করে দিচ্ছে আদিত্ব।
অনিকা গিয়ে কাধে হাত রাখতেই দেখে আদিত্বের হাতে সিগারেট। এর আগে আদিত্বকপ সে কখনো স্মক করতে দেখেনি সে।
আদিত্বের হাত থেকে সিগারেট টা নিয়ে পা দিয়ে পেশে ফেলে অনিকা।
—প্লিজ আমায় বাধা দিস না।
—- সুনলাম মানুষ ছেকা খেলে সিগারেট খায় তুইও খেলি নাকি ভাইয়া?
—- এখান থেকে যাতো।
—- তুই আর কখনো খাবিনা এটা।
,
,
,
,
অনিকার বিয়ে ভেঙে গেলেও আজ মোহনা বিয়ে।
বাড়িটা খুব সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে। বড় ছেলে হিসেবে সব কিছু সামলাচ্ছে আদিত্বই।
আজ মোহনার বিয়ে চলে যাবে সে অন্যের ঘরে এটা ভেবে কেম জানি লাগছে আদিত্বর।
কাল রাতে মোহনা আদিত্বর কাছে এসে অনেক আকুতি মিনতি করলো। হাত দুটু ধরে বললো, প্রয়োজনে সারা জিবন সে তার গোলম হয়ে থাকবে। তবুও আদিত্বকে ছারা বাচবেনা মোহনা।
আদিত্ব মান সম্মানের কথা চিন্তা করে হ্যা বা না এর মাঝামাঝি উত্তর দিতে গিয়ে না বলে দিলো।
তবে কেনো তার আজ এমন লাগছে?
,
,
,
,
বিয়ের আসরে বধু সেজে বসে আছে মোহনা। পাসেই শ্রাবন বড় সেজে। মোহনা বার বার আদিত্বর দিকে করুন চোখে তাকাচ্ছে। আদিত্বের চোখে তা ধরা পরলেও আজ আর কিচ্ছু করার নেই।
মোহনার ছোট ভাই মোহনও সেখানে দাড়িয়ে। মোহনার হাতের দিকে তাকাতেই মোহন চমকে উঠে। কাল রাতেও মোহনাকে অনেক কাদতে দেখেছে মোহন।
হটাৎ মোহন সবার সামবে চেয়ারের উপর দাড়িয়ে যায়।
— এই বিয়ে হবেনা।
সবাই হা করে তাকিয়ে আছে মোহনের দিকে, উত্তর খোজার চেস্টায়।
To be continue……