#গল্পঃ_সপ্নছোয়া
#লেখাঃ_মেহেদী_হাসান_রিয়াত
#পর্বঃ__১৬_শেষ_পর্ব
________________
অনিকার পাসে বসে কপাল ভর্তি কয়েকটা চুমু একে দিলো শ্রাবন। পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে সে। শরিল দুর্বলতার কারনেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো সে।
ডাক্তার কিছু ঔষধ দিলো দুর্লতা কাটার জন্য। কিছুদিন রেস্টে থাকতে বললো অনিকাকে।
তখনি হসপিটালে প্রবেশ করে মেঘলা চোধুরি।
শ্রাবন মেঘলা চৌধুরির দিকে তাকিয়ে আবার অনিকার দিকে মনযোগি হলো।
—- তুই আমার বৌমাটাকে হাসপাতালে নিয়ে এলি আর আমাকে একটাবার জিগ্গাসাও করলিনা?
শ্রাবন তার কথায় কিছুটা অবাক হলো বটেই, অবাক জিগ্গাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেঘলা চৌধুরির দিকে।
অনিকাও পিট পিট করে মেঘলা চৌধুরির দিকে তাকালো।
শ্রাবন কিছু বলতে যাবে তাও বলেনি, কারণ হবু বৌ এর সামনে নিজের মাকে ছোট করার শিক্ষাটা সে পায়নি।
,
,
,
অনিকাকে বিছানায় শুইয়ে দিলো শ্রাবন। ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখে চারটা ছুই ছুই। ভোর হতে চললো প্রায়।
অনিকার কপালে একটা চুমু দিয়ে। পাসে একটা চেয়ার নিয়ে বসে পড়ে সে। গায়ে একটা চাদর দিয়ে জড়ানো।
ক্লান্ততায় অনিকা চলে গেলো ঘুমের রাজ্য ভ্রমন করতে। ঘুম রাজারা ডাকছে তাকে।
দরজাটা হাত দিয়ে হালকা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করে মেঘলা চৌধুরি। মেঘলা চৌধুরিকে দেখেই শ্রাবন বসা থেকে উঠে দাড়ায়।
মেঘলা চৌধুরি বিছানায় বসে অনিকার ঘুমন্ত চেহারাটার দিকে তাকায়। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় অনিকার।
—- আর কতো মা? বয়স তো অনেক হলো। নিশ্চই কোনো নতুন ফন্দি এটে বডেছো? বলো দেখি, একটু শুনি তোমার গড়া ফন্দি গুলো। তুমি পারোও বটে। খুব পারো। নিজের ছেলের সুখটাকি তোমার সহ্য হয়না মা?
মেঘলা চৌধুরি মাথা নিচু করে বসে আছে।
— বলো মা, এমন কেনো করেছিলে অনিকার সাথে? সে তো তোমারই আপন ভাইয়ের মেয়ে তাইনা? ওর কথা না হয় বাদই দিলাম, আমি? আমি কি ছিলাম তোমার? কেনো আমার জিবনের সুখটা কেড়ে নিতে চেয়েছিলে তুমি?
—- আজ তোর এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার মতো কোনো ভাষা আমার জানা নেই। খুব জোড়ে শুধু এতটুকুই বলতে পারি, পারলে আমায় ক্ষমা করে দিস।
—- জদিও মা হয়ে তোমার ছেলের কাছে ক্ষমা চাওয়া সোভা পায়না। কিন্তু তবুও কেন যানি আমার তোমাকে ক্ষমা করতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। এই মেয়েটার দিকে একবার তাকিয়ে দেখো তুমি। কি হাল হয়েছে মেয়েটার? আর সব কিছুর জন্য তুমিই দায়ি মা। শুনেছিলাম নিজের কাছে মেয়ে না থাকলে সে সবসময় আশেপাশে মেয়েদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে ভাকে। আর তুমি? কি করে পারলে এরকোম একটা মেয়েকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে?
—- বিশ্বাস কর শ্রাবন, প্রতিশোধের আগুনে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আমার ব্যক্তিত্ব। ভুলেই গিয়েছিলা যে যদি আমার একটা মেয়ে থাকতো তারও অনিকার মতোই সব কিছু থাকতো। জানিস আমার আজ নিজের প্রতিই ঘৃনা হচ্ছে।
শ্রাবন কিছু না বলেই দাড়িয়ে রইলো।
— পারবি, তোর এই হতভাগা মা টাকে একটিবারের জন্য ক্ষমা করতে? বিশ্বাস কর আমি ওকে সব সময় নিজের মেয়ের মতোই আগলে রাখবো।
শ্রাবন কিছু না বলে মন খুলে একটা দির্ঘস্বাস নেয়।
— আরেকটা কথা বাবা, এই সব কিছু যে আমিই করিয়েছি এটা তুই অনিকা এবং বাকি কাওকে বলিসনা। আমার মান ইজ্জতের প্রশ্ন এটা।
— এইতো তো তোমার আসল চেহারাটা প্রকাশ করে ফেললে। আসলে তুমি অনিকার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করছো না। বরং সম্মানের কথা ভেবেই এইসব নাটক করছো।
—- বিশ্বাস কর বাবা, আমার এটার মাঝে বিন্দু মাত্রও কোনো অভিনয় নেই। আমি যা বলছি সব কিছু মন থেকেই বলছি। সত্যিই আমি আর তোর আগের মা নেই। আমি এখন সম্পুর্ন পাল্টে গেছি।
আজ সকালেই আমি তোদের নিয়ে যাবো ওই বাড়িতে, প্রয়োজনে ক্ষমা চেয়ে নিবো ওদের কাছ থেকে।
— তুমি কি মনে করো সত্যিটা জানলে ওরা তোমায় ক্ষমা করবে?
মেঘলা চৌধুরি কিছু না বলে একটা নিশ্বাস ছেরে বললো, অনেক রাত হলো, কিছুক্ষন পরই সকাল হয়ে যাবে। ঘুমিয়ে পর। কাল সকালেই আমি তোদের নিয়ে ওদের বাড়ি যাবো।
______________________
সকালে কুয়াশা ঘেরা সকল কিছু। একটু দুরের জিনিশও স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছেনা। সুর্যের পুর্বাভাসটাও কিছুটা ভেষে উঠেছে পূর্ব দিগন্তে। শীতের সকালে গায়ে থাকা কম্বলটাও আষ্টে পিষ্টে গয়ের সাথে জড়িয়ে সুয়ে আছে মোহনা। আজ যে তাদের দুজনকে এই বাড়ি ছারতে হবে মনে হয় সেই ব্যাপারে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তার।
কিন্তু আদিত্বের পুরুটা মন জুড়ে শুধুই দুশ্চিন্তের আনাগোনা। এই নিয়ে রাতে ঠিক মতো ঘুমও হলোনা তার।
সকাল নয়টা,
যাওয়ার জন্য ব্যাগ ঘুচাচ্ছে আদিত্ব। মোহনা পাসেই বসে আছে।
—- আমরা চেষ্টা করলে আমাদের বাবা মাকে কি রাজি করাতে পারিনা?(মোহনা)
— তুই তাদের ছোট বেলা থেকে তাদের চিনিস, তাই তাদের ব্যপারে তোকে নতুন করে কিছু বলার দরকার মনে করছিনা আমি।
— তবুও অন্যান্ন বিষয় ও আমাদের মাঝে অনেক ব্যবধান আছে।
আদিত্ব ব্যাগ ঘুচানো বাদ দিয়ে সোজা হয়ে বলে,
— তোর কি মনে হয় বাবা-মা আমাদের মেনে নিবে? মেনে নিলে কিন্তু কালই মেনে নিতো।
— তবুও শেষ চেষ্টা টা করতে প্রব্লেম কোথায়?
— দেখ কোনো এক সময় হয়তো আমাদের উপর থেকে বাবা-মায়ের রাগটা উঠে যাবে। এখন কিন্তু তারা আমাদের উপর প্রচন্ড রেগে আছে।
—- তাহলে আমরা এখন কোথায় যাবো?
— দেখি। একটা ব্যবস্থা নিশ্চই হয়ে যাবে আশা করি।
______________________________
ওদিকে গাড়ি করে রওনা দিলো শ্রাবন, অনিকা ও মেঘলা চৌধুরি। দিনের আলোয় কুয়াশা কিছুটা কমে গেছে।
তারা এসে পরলো তাদের গন্তব্য স্থানে। তারা তিনজন বাড়িতে প্রবেশ করতেই আহান চৌধুরি বসা থেকে উঠে দাড়ায়।
হয়তো মেঘলা চৌধুরিকে দেখেই সে অবাকের চরম পর্যায়ে।
— বুবু তুমি এখানে? আমারতো বিশ্বাসই হচ্ছেনা।
— কেনো তোর বাড়িতে বুঝি আমি আসতে পারিনা? এই বাড়ি থেকে যাওয়ার পর কি আমি তোদের পর হয়ে গেছি?
—- না না কি বলছো তুমি? তুমি এসেছো আমি অনেক খুশি।
আহান চৌধুরি তাদের নিয়ে সোফায় এক সাথে বসলেন। এর মাঝে শ্রাবন একটা বিষয় লক্ষ করে, আহান চৌধুরি একবারও অনিকার দিকে ফিরে তাকায় নি।
তাই সে বলে উঠে,
— মামা আমি বলেছিলাম যে অনিকা কে আমি নির্দোষ প্রমান করবো। এই নিন ভিডিওটা দেখুন।
মুহুর্তেই যেনো মেঘলা চৌধুরির গলা শুকিয়ে গেলো। কি এমন ভিডিও দেখাচ্ছে শ্রাবন?
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাতের অন্ধকারে অনিকার রুমে কেও প্রবেশ করছে। কিন্তু অন্ধকারে চেহারাটা ঠিক বুঝা যাচ্ছেনা।
কিছুক্ষন পর লাইটের আলোতে, চেহারাটা স্পস্ট বুঝা যাচ্ছে।
— চিনতে পাররছেন ছেলেটাকে?
— এতো সাইম যে দুই বছর আগেও অনিকাকে ডিস্টার্ব করতো।
ভিডিওটা ছিলো সেই রাতের, যেই দিন সাইম রাতের অন্ধকারে অনুকার রুমে এসেছিলো।
তার আগেই শ্রাবন সেই রুমে গোপন কেমেরা লাগিয়ে দিয়েছিলো। যার কারনে সব কিছুই রেকর্ড হয়ে গিয়েছিলো।
সিড়ি দিয়ে হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে একে অপরের হাত ধরে নেমে আশছে আদিত্ব ও মোহনা।
— কি ব্যাপার আহান ওরা কোথায় যাচ্ছে?(মেঘলা চৌধুরি)
আহান চৌধুরি কিছু না বলে চুপ করে আছে।
—-ওরা চলে যাচ্ছে, বড় কাকা ওদের বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেছে।(মোহন বলে উঠলো)
— কিন্তু কেনো আহান? কি করেছে ওরা?
— ওরা বিয়ে করে ফেলেছে ফুফি, তাই বাবা ওদের বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেছে(মোহন)
— কি বলছিস আহান? তাই বলে তুই ওদের বাড়ি থেকেই বেড় করে দিবি? তুই কি থাকতে পারবি তোর একমাত্র ছেলেকে ছারা? যেই ছেলেকে নিয়ে তুই অনেক গর্ব করতি। তুই ওদের বের করে দিলেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? হয়তো তারা কেওই অন্যের সাথে সুখি হতোনা। তারা হয়তো একে অপরের সাথে সুখিই হবে। আর তুই কি তোর ছোলের সুখ চাস না?
আদিত্ব ও মোহনা দুজনই মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে।
— কাজটা যখন ওরা করেই ফেলেছে রাগ করে আর কি করবি বল? আর তাররা দুজন ইতো এই বাড়িরই ছেলে মেয়ে।
আহান চৌধুরি বসে আছে কোনো কথা নেই মুখে।
আদিত্ব আহান চৌধুরির দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে উত্তরের অপেক্ষায়।
আদিত্বের মা আনামিকার চোখ বেয়ে বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে। তার এক মাত্র ছেলের জন্য।
আহান চৌধুরির মুখে কোনো উত্তর না পেয়ে আদিত্ব মোহনার হাত ধরে সেখান থেকে হাটা ধরে।
ওদিকে অনামিকার চোখের পানি আরো দিগুন ভাবে প্রবাহিত হতে লাগলো।
দরজার বাইরে পা রাখতেই আহান চৌধুরি পেছন থেকে ডাক দিয়ে উঠে। আহান চৌধুরির ডাকে দাড়িয়ে যায় দুই জন।
— মুখ দিয়ে বলেছি ববলেই ককি চলে যাবি?মনটা কি চচায় তা জানতজানতে চাইবিনা?বাবাকে এভাবে একা ফেলে গিয়ে তোর কষ্ট হবেনা?(করুন সুরে বলে উঠে আহান চৌধুরি)
আহান চৌধুরি আদিত্বের সামনে আসতেই আদিত্ব হুট করেই তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।
— থ্যাংক ইউ সো মাচ বাবা……
—- আমার দুই ছেলে মেয়ের বিয়ে, এভাবে চুপি চুপি হয়ে গেলে মানুষ কি বলবে। আমি কিপ্টা হলেও এতোটা কিপ্টা না। সবাই জানবে তোদের বিয়ের কথা। সবাই।
______
বরের আসরে বসে আছে আদিত্ব ও শ্রাবন। তার মাঝখানেই মোহন গিয়ে বসলো।
—- ভাইয়া একটা কথা বলি?(মোহন)
—– তারাতারি বল কি বলবি।
— বলছিলাম কি, তোমাদেরটা তো শেষ হয়ে যাবে। আমার বেপারটাও একটু দেখো।
— কি বলছিস তুই, তোর মতো ছেলেকে বৌ দিবে কে?
— আরে আমার পাত্রি অনেক আগে থেকেই রেডি। সমস্যা নাই তোমাদেরটার কয়েকমাস পর হলেও চলবে।
—- কি বলছিস তুই? বৌ দিয়ে কি করবি তুই?
— আরে তুমি বুজতেছোনা ব্যপার টা, চার দিকে যেমন ঝড় ঝাপটা দেখলাম তাতে এখন আমার ভিষন ভয় করছে। আপাতত বিয়েটা করে রাখি বড় হলে নাহয় ওকে তুলে নিয়ে আসবো। ভালোনা বুদ্ধিটা?
__________________________
১০ দিন পর,
চেষ বিকেলে হালকা গুধুলির আলোয় টিপ টিপ করে নির্জন রাস্তায় হেটে যাচ্ছে দুইজন। মাঝে মাঝে হোচট খেয়ে পরে যাওয়ার অভিনয় করছে মেয়েটা। আর ছেলেটা তাকে সেইভ করে টান দিয়ে নিয়ে আসছে বুকের কাছে। এক সময় হোচট খেয়ে পরে পা ব্যাথার অভিনয় করছে মেয়েটা। আর ছেলেটা তাকে পাজাকোলা করে হেটে চলছে ওই নিজর্জন পথ। হাটতে হাটতে সন্ধায় বাড়ি ফিরে আসে আদিত্ব ও মোহনা।
সন্ধে পেরিয়ে রাত,
কন কন শীতে ব্যালকনিতে গায়ে হালকা একটা চাদর জড়িয়ে দাড়িয়ে আছে একটা ছেলে। পেছন থেকে ভেষে আসে একটা মেয়ের ডাক।
— ওগো, ঠান্ডা লেগে যাবে তো। ঘরে চলে আসো।
কোমল সুরে ছেলেটা বলে উঠে,
— এদিকে আসো আমার কাছে।
মেয়েটা কাছে যেতেই ছেলেটা এক চাদরের নিচে দুজনকে জড়িয়ে নেয়। কাধে থুতনিটা রেখে বার বার বলে, ভালোবাসি ভালবাসি ভালোবাসি। এই কন কন শীতে এক চাদরের নিচে জড়িয়ে ধরে আছে শ্রাবন অনিকাকে।
ওদিকে হতভাগার মতো একাকিত্ব নিয়ে পড়ার টেবিলে বসে অংক কষে যাচ্ছে মোহন। সেই দিন বাবাকে বিয়ের কথা বলায়, পাছায় পরা লাঠির আঘাতগুলো এই শীতে এখনো কনকন করছে।
……….. সমাপ্ত………
বিঃদ্রঃ গল্পটা কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন। জানতে চাই এই গল্পটা আমি কতটা ভালোভাবে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে পেরেছি। আপনাদের মতামতের উপর ভিত্তি করে পরবর্তি গল্প খুব শিগ্রই নিয়ে আসবো। ধন্যবাদ সবাইকে শেষ পর্যন্ত পাসে থাকার জন্য।