#গল্পঃ_সপ্নছোয়া
#লেখাঃ_মেহেদী_হাসান_রিয়াত
#পর্বঃ__১৪+১৫
বেলকনিতে দাড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে মোহনা। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরছে অশ্রু জল। শেষ পর্যন্ত আদিত্ব এতোটা নিচে নেমে যাবে তা ভাবতেই পারছেনা মোহনা। ভাবতেই যেনো বুকটা দুমড়ে মুচরে যাচ্ছে তার। তাহলে কি সে অর্পিতাকেও পছন্দ করে? ভাবতেই অবাক লাগছে তার, প্রেম করে বিয়ে করে আবার নাকি সতিনের ঘরও করতে হবে। প্রচুর ঘৃনা হচ্ছে আদিত্বের প্রতি। ভাবতেই ঘৃনা হচ্ছে যে এটা তার বিয়ে করা স্বামী।
মোহনাকে রুমে না পেয়ে বেলকনিতে চলে এলো আদিত্ব। মোহনার সামনে যেতেই মোহনা এক পা পিছিয়ে যায়।
—- কেনো আসলে এখানে তুমি? এতো তারাতারি রোমান্স শেষ?
—- মোহনা বিশ্বাস কর…….
—- কি বিশ্বাস করতে বলছো আমায়? নিজের চোখে যা দেখলাম তাও কি মিথ্যে?
—- এটা পুরাটাই একটা মিসটেক বিশ্বাস কর।
— যাও তুমি তোমার ওই অর্পিতার কাছেই যাও। আমিই আডলে বোকা ছিলাম, এতোদিন বুঝতে পারিনি কেনো তুমি আমাদের কথা কাওকে বলছোনা। বিষয়টা জানাজানি হয়ে গেলে ওই অর্পিতা তোমায় চিপকা চিপকি করতে দিবেনা তাই?
— এসব কি বলছিস তুই?
—- ঠিকই বলছি, এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছো তুমি। বৌ মানে কি শুধুই রক্ষিতা? যে একটা দিয়ে হবেনা তোমার দুজন কেই লাগবে? তোমার মনের ভেতর যে এতোটা নোংরা তা আমার আগে জানা ছিলোনা।
— ঠাস,,,,,,,,,,
নিজের অজান্তেই মোহনার গালে চর বসিয়ে দিলো আদিত্ব। মোহনা বাম হাতটা গালে দিয়ে ছলছল ভাবে তাকিয়ে আছে আদিত্বের দিকে।
এই সেই আদিত্ব যে কিনা কালও আমায় নিজের বুকে টেনে নিয়েছিলো? এই সেই আদিত্ব যে কিনা সবার চোখ আড়াল করে চির কালের মতো আমায় নিজের করে নিয়ছিলো? অর্পিতা কি এমন করলো যে, একদিনেই আদিত্ব এমন পাল্টে গেলো? একটা মেয়ের জন্য তার সধ্য বিয়ে করা স্ত্রীর গায়ে সে হাত তুললো।
মোহনা গালে এক হাত দিয়ে কাদতে কাদতে সেখান থেকে চলে গেলো। আদিত্ব নিজেও ভেবে পাচ্ছেনা যে কি করে ফেললো সে।
বেলা বারোটা ছুই ছুই, মিষ্টি রোধ কেটে উত্তপ্ত তাপে নিজের ক্ষমতা দেখাতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো সেই প্রকান্ড সুর্য।
ওত্তপ্ত রোদে ছাদের কর্নিশ ধরে দাড়িয়ে আছে অনিকা। প্রকৃতি পাল্টে আস্তে আস্তে শীত ঘনিয়ে আসলো। এখন সকালে কিছুটা কায়াশার ভাবও দেখা যায়। যা প্রকৃতির সুন্দর্যটাকেই ঢেকে রাখে। কিন্তু সূর্যি মামা সেই কুয়াশাকে হাওয়ার সঙ্গে মিলিয়ে দিয়ে পকৃতির প্রকৃত সুন্দর্যটা প্রকাশ করে।
আচ্ছা সুর্যি মামা কি পারেনা তার এই তেজে আমার মনের প্রকৃতিতে জমে থাকা কষ্ট নামক কুয়াশাটা হাওয়ায় মিলিয়ে দিতে? পারে কি?
মাথার এক পাস ধরে বেয়ে বেয়ে পরছে ঘাম নামক এক তরল পদার্থ। সেই দিকে অনিকার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তার জিবনটাই তো একটা অপদাথ্য বস্তুতে পরিনত হয়ে যাচ্ছে ধিরে ধিরে।
কিছুক্ষন পর ছাদে এলো মোহনার মা। মানে অনিকার ছোট মা।
—- আরে কোনো পাগল এই রোদের মাঝে এভাবে দাড়িয়ে থাকে? পুরু শরিল ভিজে গেলো ঘামে চল ঘরে চল।
_____________________
কলিং বেল বাজতেই মেঘলা চৌধুরি গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
—- কিরে তুই রাতে কোথায় ছিলি? আর এখন কোথা থেকেই বা এলি?
— সেটা তোমাকে বলা কি খুবই জরুরি?
— মানে!
— আমি যেখানেই থাকিনা কেনো সেটা তোমাকে বলাটা কি খুবই জরুরি?
মেঘলা চৌধুরি শ্রাবনের গলায়, মাথায় হাত দিয়ে চেক করলো। ছেলের আবার জ্বরে উল্টাপাল্টা বকছে না তো? কারন শ্রাবন কখনো তার সাথে এভাবে রিয়েক্ট করেনি।
শ্রাবন তার মা মেঘলা চৌধুরির উত্তরের উপেক্ষ না করে সোজা ভিতরে চলে গেলো।
দরজা লাগাতে লাগাতে ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে থাকে মেঘলা চৌধুরি।
দুপুরে ফ্রেস হয়ে খেতে বসলো শ্রাবন ও মেঘলা চৌধুরি।
— তোকে দেখে মনে হচ্ছে তোর কোনো বিষয় নিয়ে প্রচন্ড মন খারাপ। আমিতো তোর মা আমাকে বলতে পারিস।
— কাল যে একটা জাদু দেখালাম মনে আছে?
— হ্যা খুব মনে আছে। আমাদের বোকা বানিয়েছিলি।
— সেই যাদুতে তোমাদের চোখের আড়ালে আমি কিভাবে ধোকা দিয়েছিলাম?
— কিভাবে আবার, ফু দিয়ে।
— সেইখানে ফু টা যেমন তোমারের বোকা বানানোর প্রধান মাধ্যম ছিলো তা তোমরা জেনেছো, ঠিক একই ভাবে অনিকার বেপারে আমাকে বোকা বানানোর বিষয়টারও মুল খেলোয়ারের নামটা আমার অজানা নয়।
— মোহনা চৌধুরি আগেই আন্দাজ করতে পেরেছিলো যে এমন কিছুই ঘটেছে। টেবিলের উপরে রাখা গ্লাস ভর্তি পানিটা নিয়ে এক টানে তা পুরুটা শেষ করে নিয়ে নিজেকে একটু সাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো।
একটু ভয় ভয় নিয়ে শ্রাবনকে বললো,
— কি বলছিস তুই? অনিকার বেপারে তোকে ধোকা মানে? আরে দোষ তো ওই মেয়েটারই। কি ভাবে তোকে ঠকালো তুইতো নিজের ছোখেই দেখলি।
— দেখো মা তোমার এই আজাইরা নাটক শুনার টাইম আমার একধম নেই। কালকেই আমি বিয়ে করছি সব কিছুর আয়োজন করো।
— সে কি মেয়েটা কে?
— আপাতত তা তোমার না জানলেও চলবে। আর হ্যা, বিয়ের প্রধান গেষ্ট থাকবে আগুন আহমেদ সাইম। চিনতো নিশ্চই? আর না চিনলেও পরিচয় করিয়ে দিবো।
এতটুকু বলেই শ্রাবন উঠে গেলো। মেঘলা চৌধুরির একটু একটু একটু একটু ভয়ও জেগে উঠচে মনে।
,
,
,
,
গুধুলির আলোয় ছাদের কর্নিশের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে মোহন।
চার দিকে প্রেমে ব্যর্থতার খবর শুনতে শুনতে মোহন আজ ক্লান্ত,
ভাবছে বসে বসে,
হবে কি তার আর তানিসার মিল?
নাকি পেরোতে হবে তাদেরও নানান ঝড় ঝাপটার মধ্য দিয়ে।
হতে পারবে কি তানিশার কোলে গুটি গুটি হাত পা নাড়ানো একটা ফুটফুটে বাচ্চার বাবা?
না, কিছুতেই অনিকার মতো ব্যর্থ প্রেমিক হওয়া যাবেনা। প্রয়জনে গরবো সংগ্রাম, লড়বো প্রকৃতির সাথে, গড়ে তুলবো এক মস্ত বড় প্রেমের ইতিহাস।
যা লাইলি মজনুকেও পেছনে ফেলে স্থান গড়ে নিবে সবার শির্ষে। সকল মানুষের মুখে মুখে থাকবে মোহন তানিশার প্রেম কথন।
ওদিকে অর্পিতার বাবা আসছে আগামি পরশুই। আজ সারাদিনই অর্পিতার মুখে ফুটেছিলো এক বিজয়ি হাসি।
নেই শুধু মোহনা ও অনিকার মুখে হাসির রেখা। অনিকাতো সেই কবেই হাসতে ভুলে গেছে। শিখে গেছে কিভাবে সব সময় চুপচাপ থাকতে হয়।
মোহনা তো সেই দুপুরের খাবার খাওয়ার পর থেকেই দরজা বন্ধ করে উপর হয়ে শুয়ে আছে নিজের রুমে।
সকালের ঘটনাটা মনে পরতেই চোখ দুটু ভিজে যাচ্ছে নিজের অজান্তে।
সন্ধায় কলিং বেল বাজতেই মোহন গিয়ে দরকা খুলে দেয়,
— আম্মু, বড় আম্মু কোথায় গেলে তোমরা? দেখে যাও কে এসেছে। শ্রাবন ভাইয়া এসেছে। (মোহন চিৎকার দিয়ে বলে উঠে)
একটু জোরে বলাতেই অনিকার রুম থেকে তা স্পর্স শুনা গেলো। উপর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে শ্রাবন কে। সামনে আসার সাহস পাচ্ছেনা।
আহান চৌধুরি বাড়িতেই ছিলো। সেখানে আসতেই শ্রাবনের চোখে চোখ পরে তার। লজ্জায় মাথাটা নিচু করে ফেললো আহান চৌধুরি।
শ্রাবন একটু এগিয়ে গিয়েই আহান চৌধুরিকে সালাম দিলো।
দুজন সোপায় বসে আছে।
— আমি খুবই লজ্জিত শ্রাবন, দুইটা মেয়ের ধারা দুই দুইবার তোমরা অপমানিত হলে।
— ছি ছি মামা এভাবে বলবেননা। আপনি আমার মামা, আপনাকে বাবার মতোই সম্মান করি আমি। অনিকার মাথার উপর যে মিথ্যা অপবাদে চাপ দেওয়া রয়েছে তা উম্মোচন করতেই আমি এখানে এলাম।
— দেখো অনিকার বেপারে আমায় কিছু বলতে এসোনা। যেই মেয়ে এই পরিবারের মান ইজ্জত এতটুও রাখেনি তার ব্যপারে আমি কিছুই শুনতে চাইনা।
— মনে হচ্ছে অনিকার ব্যপারে আপনি এখনো রেগে আছেন। কিন্তু অনিকাকে যদি আমি নির্দোষ প্রমান করতে পারি?
— কি বলছো তুমি?
— হ্যা মামা, দোষ অনিকার নয়, বরং প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে উঠা এক হিংশ্র ব্যক্তির।
— তবে কে সে?
—- তা মামা সময় মতো বুঝতে পারবেন আপনি। এখন আপাতত অনিকাকে আমার সাথে যেতে দিন বাকিটা কালকেই বুঝতে পারবেন।
—- কিন্তু কোথায় নিয়ে যাবে অনিকাকে? তোমার মাকে আমি খুব ভালো করেই চিনি, সে কিছুতেই এটা মেনে নিবেনা।
— সে বিষয়ে আপনার ভাবতে হবেনা, নিশ্চিত থাকতে পারেন।
_______________________________
রাত নয়টা,
পেছন থেকে মোহনার কোমরটা খুব শক্ত করে চেপে ধরলো আদিত্ব। মোহনা নিজেকে ছাড়ানোর প্রানপ্রন চেস্টা করছে। সারাদিন কষ্ট দিয়ে এখন আসছে দরদ দেখাতে।
— এতো রাতে এখানে এলে কেনো যাও অর্পিতার কাছে।
— এখনো রাগ করে আছিস? বললামনা বেপারটা পুরাটাই মিসটেক। আমি তুই ভেবেই ওভাবে অর্পিতাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। আমি কি যানতাম এতো সকালে সে আমার রুমে যাবে চা নিয়ে। আমি আরো ভাবলাম এতো সাকালে আমার বৌ টা আমার খেদমত করতে গেলো বুঝি।
— সত্যিই অর্পিতাকে তুমি ইচ্ছে করে ধরনি?
— না না না মোটেও না।
— তাহলে যে সকালে আমায় মারলে?
— সরি সরি সরি একশ বার সরি, আর কক্ষনো আমার এই বৌ টার গায়ে আমি হাত তুলবোনা এই প্রমিস।
মোহনা এবার নিজে থেকেই আদিত্বকে জড়িয়ে ধরে কেদে দেয়।
— তুমি যানো না, তোমাকে ওর সাথে দেখলে আমার সহ্য হয়না তার পরও কেনো তুমি আমায় এতো কষ্ট দাও।
অর্পিতার মা নিশু এতক্ষন দরজার সামনে দাড়িয়ে সবটাই সুনছিলো। তার মানে এতো দিন অর্পিতা মোহনা ও আদিত্বের বেপারে যা বলেছে সবই শত্যি?
আদিত্ব মোহনার কপালে একটা আলতো করে চুমু একে দিয়ে রুম থেকে বের হতেই অর্পিতার মায়ের মুখুমুখি।
To be continue………….
#গল্পঃ_সপ্নছোয়া
#লেখাঃ_মেহেদী_হাসান_রিয়াত
#পর্বঃ__১৫
__________________________________
রাত এগারোটা,
ব্যাগে কাপড় চোপড় ঘুচাচ্ছে অর্পিতার মা নিশু মনি। অর্পিতা রুমে প্রবেশ করতেই দেখে তার মা কাপড় চোপড় ঘুচাতে ব্যস্ত।
অর্পিতা একটু অবাক চোখে জিঙ্গেস করে,
—- কি হলো মা, কাপড় ঘুচাচ্ছো কেনো?
নিশু মনি কাপড় ঘুচাতে ঘুচাতে উত্তর দিলো,
—- কাল সকালেই আমরা বাড়ি চলে যাচ্ছি, রেডি থাকিস।
—- কিন্তু মা…….
— আমি তোর কিন্তু শুনতে ইচ্ছুক নয়, যা বলছি তাই করবি।
—- তুমি যে বললে কাল বাবা আসবে, আমাদের বি……
— স্টপ! যতটুকু এগিয়েছিস ততটুকুতেই থাক। কাকে বিয়ে করার সপ্ন দেখছিস তুই? সতিনের সংসার করতে চাস তুই?
—- মানে!
—- আদিত্ব বিবাহিত।
কথাটা শুনা মাত্রই অর্পিতা দুই পা পিছিয়ে যায়।
— কি! কি বলছো এইসব? তোমার মাথা ঠিক আছে তো?
—- বিশ্বাস না হলে তুই নিজে গিয়ে আদিত্বকে জিঙ্গেস করে দেখনা, যে মোহনা তার স্ত্রী কি না?
মুহুর্তেই অর্পিতা মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে পরে।
প্রচুর রাগ হচ্ছে তার, মোহনার উপর। আগেই সন্দেহ হয়েছিলো তার। কি চেয়েছিলাম জিবনে একজনকেইতো চেয়েছি, তাকেও সে কেড়ে নিলো ওই ডাইনি মোহনা।
রাগে ফুসতে ফুসতে দ্রুত পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে মোহনার রুমের দিকে। আজ হয়তো মেরেই ফেলবে সে মোহনাকে।
এতোক্ষনে মোহনা গভির ঘুমে বিভোর।
________________________
ওদিকে অনিকা বসে আছে শ্রাবনদের বাড়িতে। চোখে ঘুম নেই তার। এখানে আসতে না চাইলেও শ্রাবন জোড় করে নিয়ে এলো তাকে।
বাড়ি থেকে বের হওয়া আর এই বাড়িয়ে পৌছানো এর মাঝখানে বুকের ধুক ধুক শব্দটা যেনো বেড়ে মিনিট প্রতি একশ এর উপরে চলে গেলো।
তার একটাই ভয় ছিলো এই বাড়িতে আসার পর মেঘলা চৌধুরির রিয়েকশানটা কি হবে?
কানো মা ই তার ছেলের জন্য এমন একটা খারাপ মেয়ে চাইবেনা যা সে সবার সামনেই প্রমানিত।
কিন্তু এই বাড়িতে প্রবেশ করার পর তার ধারনাটা যেনো সম্পুর্ন পালটে গেলো।
মেঘলা চৌধুরি নিজেই এগিয়ে এসে তাদের ভিতরে নিয়ে গেলো। কিন্তু কেনো?
,
,
,
,
রাতে খাবার শেষে বিছানায় বসে আছে অনিকা। মাথাটা কেমন জানি ঘুরছে শরিলটাও দুর্বল দুর্বল লাগছে তার।
শ্রাবন রুমে এসেই অনিকার কাছে চলে গেলো। দু হাত বাড়িয়েই অনিকাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো শ্রাবন। অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছে সে এতদিন অনিকাকে। প্রচুর যন্ত্রনা দিয়ে ফেলেছে সে। আর না এবার থেকে নিজের কাছেই রেখে দিবে সে অনিকা কে।
অনিকাকে অনেক্ষন ধরে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে শ্রাবন। প্রিয় মানুষটাকে ফিরে পাওয়ার পিলিংসটাতো একটু অন্যরকম হবেই।
________________________
অর্পিতা দরজাটা ধাক্কাদিয়ে মোহনার রুমে প্রবেশ করে দেখে মোহারানী মনের সুখে ঘুমাচ্ছে। কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা অর্পিতা।
রাগের মাথায় ঘুমের মাঝেই মোহনার গলা চেপে ধরলো অর্পিতা। হটাৎ এমন হওয়াতেই বিছানায় ছটপট করতে থাকে মোহনা। মোহনা যতই ছটপট করছে অর্পিতা ততত জোরেই চেপে ধরছে। মোহনার রুমের পাসেই ছিলো আদিত্বের রুম। আদিত্ব ঘুমানোর জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছে। কিন্তু হটাৎই মোহনার রুম থেকে অদ্ভুদ কিছু আওয়াজ তার কানকে স্পর্স করে গেলো।
আদিত্ব মোহনার রুমের দরজার পাসে দাড়াতেই দেখে এই অবস্থা। দৌড়ে গিয়ে অর্পিতাকে আলাদা করে নেয় মোহনার থেকে।
ছারা পেয়ে মোহনা কাশতে থাকে।
আদিত্বের চরের তাল সামলাতে না পেরে প্লোড়ে ছিটকে পরে অর্পিতা। গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে আদিত্বের দিকে।
নিশু মনি দৌড়ে এসেই হাত ধরে টেনে তুলে নেয় অর্পিতাকে।
,
,
,
,
রাত বারোটা,
সোফায় বসে আছে বাড়ির সকলে সামনে দাড়িয়ে আছে আদিত্ব ও মোহনা।
—- তোরা এতো বড় একটা কাজ করে ফেললি অথছ আমাদের জানানোর প্রয়োজনটাই মনে করলিনা? (অনামিকা বেগম)
— তো দুলা ভাই আপনাদের পাত্র পাত্রি যখন ঘরেই আছে তাহলে এর মাঝখানে আমার মেয়েটাকে জড়ানোর দরকার কি ছিলো?(নিশু মনি)
—- কবে করেছিস এই কাজ?(আহান চৌধুরি)
—- বাবা চারদিন আগে। (আদিত্ব)
—- কবে এতো বড় হয়ে গেছিসরে? যে নিজের ডিসিশান নিজেই নেওয়া শিখে গেলি?
আদিত্ব কিছু না বলে মাথা নিচু করে আছে।
—- যেহেতু তোরা নিজেরাই এতো বড় হয়ে গেলি, নিজের মুল্যবান ডিসিশান টাও আমাদের তুচ্ছ করে নিয়ে নিলি। যেখানে আমারা হলাম তোদের জীবনের একটা মুল্যহিন বস্তু মাত্র। সেখানে আমার মনে হয়না তোদের নিয়ে আমাদের এতো ভাবা দরকার। অতএব, তোদের মতো তোরা বেচে থাক। আশা করি তোদের পার্সোনার লাইফে আমাদের আর কোনো প্রয়োজন হবেনা।
— বাবা কি বলছো তুমি?
— বাবা! কাকে বাবা বলছিস তুই। আমি আমার সন্তান কে এই শিক্ষা দিইনি যে, নিজেদের কোনো বিষয়ে বাবা মাকে তুচ্ছ মনে করবে। আজ থেকে আমার সন্তান আমার কাছে মৃত।
____________________
অনেক্ষন অনিকাকে জড়িয়ে ধরে আছে কিন্তু অনিকার কোনো সারা শব্দ পাচ্ছেনা সে। বুক থেকে আলাদা করতেই দেখে অনিকা অজ্ঞান হয়ে গেলো। মুহুর্তেই যেনো পাগল পারা হয়ে গেলো শ্রাবন। কারণ এই মুহুর্তে তার মাকে এক বিন্দুও বিশ্বাস করতে পারছেনা সে।
বিশ্বাস করবেইবা কিভাবে, বিশ্বাস যে সেই কবেই নষ্ট করে ফেলেছে সে। তার ভদ্র চেহারার আড়ালে যে এক খারাপ চরিত্রর মানুষ লুকিয়ে আছে তা তো সে প্রমান করেই ফেলেছে।
এখন কি গ্যারান্টি আছে যে অনিকার ক্ষতি সে করতে চাইবেনা?
পাজাকোলা করে অনিকাকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো শ্রাবন। পাগলের মতো ড্রাইব করছে সে। এতো রাতে ডাক্তারও ছিলোনা তাই ফোন করে অনেক কষ্টে নিয়ে এলো এক জনকে। তাও আবার তার নিজস্ব চেম্বারে।
,
,
,
রাত একটা,
বেলকনিতে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে মোহনা। একটু আবেগে কখন যে পরিবারের সাথে দুজন এতোটা অন্যায় করে ফেললো বুঝতেই পারেনি। সত্যিই তো অনেক অন্যায় করে ফেলেছে ছোট বেলা থেকেই কোনো আবদারই তারা অপুর্ন রেখেনি। অতি আদরে অনেক ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছে। আর তাদেরকে না জানিয়েই জীবনের এতোবড় সিদ্ধান্তটা নিয়ে নিলাম?
কিছুতেই ঘুম আসছেনা আদিত্বের চোখে। তাই ছাদে গিয়ে হাটাহাটি করছে সে। আজ মনে হয় সকালে কুয়াশাটা একটু বেশিই পরবে। এখনও খুব ভালোভাবে কুয়াশা ধরেছে। ছাদের এই পাস থেকে ওই পাস দেখাটাই টাপ।
এতো কুয়াশার মাঝেও শরিলটা ঘামাচ্ছে তার। দুই চোখ জুড়ে শুধু কুয়াশা আর কুয়াশা। কিন্তু সামনে এগুতেই তা যেনো হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কুয়াশা গুলুও আজ তাকে স্পর্স করতে চাচ্ছেনা।
গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে ছাদে উঠে এলো অর্পিতা। হয়তো আদিত্বের এথে এখনই তার শেষ কথপোকথন হবে।
পেছনে কারো অনুভুতি টের পেয়েই পেছনে ফিরে তাকালো আদিত্ব।
—- কেনো করলে আমার সাথে এমন? তুমিতো আমায় ভালোবাসতে তাইনা?(অর্পিতা)
— আমিতো কখনোই বলিনি তোমায় ভালোবাসি।
— না ও তো বলনি তাইনা?
— ফরিয়ে না দেওয়ার অর্থ এই নয় যে তোমাকে আমি ভালোবাসি।
—- তুমিতো আজ সকালেও আমায় ভালোবেশে বুকে টেনে নিয়েছিলে মনে আছে কি?
— দেখো ব্যাপারটা পুরাটাই অনিচ্ছাকৃত।
— আজ সকালের পর থেকে কেনো জানি এক মুহুর্তের জন্য হলেও মনে হয়ছিলো তুমি আমাকে ভালোবাসো হয়তো বলতে পারছোনা। কিন্তু তোমার পুরুটাই মন জুরে যে মোহনার বসবাস সেটা আমার জানা ছিলোনা। যদি জানতাম তুমি আমায় ভালোবাসোনা, তাহলে কখনোই তোমাদের মাঝে কাবাবের হড্ডি হয়হয়ে থাকতামনা।
আমি কাল চলে যাচ্ছি ভালো থেকো তুমি মোহনাকে নিয়ে। যদি আমার সেক্রিফাইসে ভালোবাসার মানুষটা সুখে থাকতে পারে, তাহলে সেক্রিফাইসটাই না হয় আমি করলাম। আমার সপ্নটা না হয় অপুর্নই থেকে যাক। সবাইতো আর সপ্নেরছোয়া পায়না। আমি না হয় সেই দলেরই একজন হয়ে গেলাম।
______________________