#গল্পঃ_সপ্নছোয়া
#লেখাঃ_মেহেদী_হাসান_রিয়াত
#পর্বঃ__১৩
মোহনা দরজার দিকে তাকাতেই দেখে আদিত্ব দরজা আটকে ধিরে ধরে তার দিকে এগিয়ে আসছে। মোহনা একটা শুক্ন ঢোক নিলো। আদিত্ব যতই তার দিকে এগিয়ে আসছে ততই তার বুকের ভেতরের ধুক ধুক হৃদপিন্ডের আজয়াজ বেড়েই চলছে। কিন্তু এর আগে কোনো দিন আদিত্বকে দেখে সে এতোটা নার্ভাস ফিল করেনি। কিন্তু আজ কেনো এমন লাগছে?
আদিত্ব কি এখন তার কাছে স্বামির অধিকার চাইবে? কিন্তু এভাবে কেনো?
একটা মেয়ের কতইনা সপ্ন থাকে এই দিনটার জন্য। আর আজ কিনা তা চোরের মতো মনে হচ্ছে।
আদিত্ব তার বিছানার কাছা কাছি আসতেই মোহনা আদিত্বের সামনে গিয়ে দাড়ায়। ফুল সজ্জাতে নাকি প্রথমে মেয়েরা গিয়ে স্বামিকে সালাম করে, কিন্তু আজ কি তার ফুল সজ্জা?
মনের অজান্তেই আদিত্বকে সামাল করে ফেললো সে। কিন্তু মনে অদ্ভুদ ধরনের একটা ভয় কাজ করছে। ভয়ে ভয়ে পিছুতে গিয়েই বিছানায় পড়ে গেলো সে।
আদিত্ব এবার তার শরিলের উপর দিয়ে তার মুখুমুখি।
মোহনা আদিত্বের চোখে চোখ পড়তেই চোখ সরিয়ে ফেলছে। কি অদ্ভুদ বর রে বাবা, কিছু বলা নেই কহা নেই সোজা নিজের অধিকার ভোগ? হায়রে কপাল আমার।
মোহনা চোখ দুটু বন্ধ করে মুখটা এক পাসে করে রাখলো, হয়তো আদিত্বের ছোয়ার জন্য অপেক্ষা করছে সে। মুখটা অদ্ভুদ রকমের ভয় ও লজ্জায় মাখামাখি।
কিছুক্ষন পর মিট মিট করে চোখ খুলতেই দেখে আদিত্ব আর নেই। দরজাটাও খোলা। হয়তো চলে গেছে। এক হাতে ভর দিয়ে উঠে বসে সে। দেখে বিছানার পারে একটা চিরেকুট রাখা।
একটু ঝুকে এক হাত বাড়িয়ে চিরেকুট টা তুলে নিলো সে।
“”এই মুহুর্তে তোকে সম্বোধন করে লিখার মতো কোনো শব্দই মাথায় আসছেনা আমার। এটা না হয় অনুভুতিতেই থেকে যাক। স্বামির অধিকার চাইতে আসিনি। অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পর। অধিকার চাইবো সেইদিন, যেদিন সবাইকে মানিয়ে তোকে স্ত্রী হিসেবে সম্বোধন করতে পারবো।””
কগজটা পরতেই মোহনার একটা লজ্জা মাখা হাসি মুখ দিয়ে অজান্তেই বেড়িয়ে যায়।
স্বামী! ইশ, ভাবতেই শরিলটা শিওরে উঠে। এতো বছর ভাই ডেকে আসা লোকটাকেও যে সে কি বলে সম্বোধন করবে ভেবে পাচ্ছে না।
,
,
,
,
রাত প্রায় বারোটা ছুই ছুই_______
সেই দিন থেকেই যেনো চোখের ঘুম বিলিন হয়ে গেলো অনিকার। প্রায় এই সময়টায়ই হয়তো এএকটু আগে, সে তার ভালোবাসার মানুষটির থেকে একটা মিথ্যা অভিযোগ মাথায় নিয়ে দুরে সরে গেলো। সেই মুহুর্তটা বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে তার। তিলে তিলে জ্বালিয়ে শেষ করে দিচ্ছে তাকে। কিন্তু চোখ দিয়ে পানি নামক কোনো কিছুই বেড়িয়ে আসছে না। মনে হচ্ছে চোখ দুটুও আজ জমে পাথরের রুপ ধারন করেছে।
মিট মিট করে বেলকনির দিকে তাকাতেই কারো ছায়ার আভাস দেখতে পায় সে। একটা লোক রুমের ভিতরে প্রবেশ করলো।
দরজার সামনে দাড়াতেই অনিকা তার দিকে ভালোভাবে তাকায়। বাইরে মিঠি মিঠি চাদের আলো অন্ধকার ঘরটায় চেহারাটা বুঝতে পারছেনা সে। অপরিচিত মনে হলেও এতো অপরিচিত নয়।
কাপা গলায় অনিকা বলে উঠে,
—– কে কে আপনি? আর এখানেই বা কি চান?
—- আরে এতো সহজেই ভুলে গেলে তোমার প্রিন্সটাকে?
প্রিন্স! শব্দটা কেমন পরিচিত মনে হচ্ছে তার।
আরে হ্যা, এটাতো সাইমের কমন ডায়লগ।
দুই বছর আগেও যে তার পিছন পিছন ঘুরে ঘুরে তার জীবনের অর্ধেক সময় নষ্ট করেছিলো।
এটা আবার সাইম নয় তো? সেতো হটাৎ করেই হারিয়ে গিয়েছিলো দুই বছর আগে।
— সাইম!
— নামটা দেখি মনে রেখেছো তুমি, শুধু এটাই ভুলে গেছে যে আমি তোমাকে কত ভালোবাসতাম। কি করিনি আমি, তোমার মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দটা শুনার জন্য? অবশেষে শ্রাবনের সাথে বিয়েটা পর্যন্ত ভাঙতে হলো আমার।
মুহুর্তেই অনিকা এগিয়ে গিয়ে সাইমের গালে চর বসিয়ে দেয়।
— কেনো করলেন আমার সাথে এমন? আপনি যেমন আমাকে ভালোবাসতেন তার চাইতেও বেশি ভালো আমি শ্রাবন কে বাসি। যদি আপনি আমায় সত্যিই ভালোবাসতেন তাহলে পারতেন, সবার সামনে আমার আর আমার ফ্যমিলির সম্মানটা মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে?
— আর যাই করো এখন আর শ্রাবনের ফ্যমিলি তোমায় মেনে নিবেনা। আমি এখনো তোমায় ভালোবাসি। আমি শ্রাবনের চাইতেও তোমায় বেশি সুখে রাখবো অনিকা।
—- ঠাস,,,,,,, আপনার মতো মানুষের মুখে ভালোবাসা শব্দটা মানায় না। শব্দটা অনেক পবিত্র আপনার মতো নোংরা মানুষের মুখে তা শোভা পায় না।
— এই মেয়ে এই ভেবেছিস কি তুই? এতোক্ষন ভালো ভাবে বলছি দেখে মাথায় ঢুকছেনা নাকি? আমি চাইলে ভালোবাসা এখনি আদায় করে নিতে পারি। কিন্তু আমি তোমার ইচ্ছেতেই তোমায় ভালোবাসতে চাই।
(অনিকার গালটা টিপে ধরে কথাটা বললো সে)
লোকটা আবার মিঠি মিঠি চাদের আলো অন্ধকার মেশানো হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। অনিকা পিট পিট করে চেয়ে আছে তার চলে যাওয়ার দিকে।
_________________________
—- ভাই আমায় আর কতদিন এভাবে রাখবেন? আমিতো সব কিছু বলেই দিলাম এবার আপাতত আমায় যেতে দিন।
— তুই যে আমার আগুন পড়যন্ত পৌছানোর প্রধন হাতিয়ার। এতো সহজে কি করে যেতে দিই। আর তুই যে মিত্য বলছিস না তারওতো কোনো প্রমান নেই।
মুহুর্তেই লোকটার ফোনটা বেজে উঠে। ফোনের স্কিনে আগুন নামক একটা শব্দ ভেষে উঠলো।
শ্রাবন ইশারা করে বললো, ফোনটা রিসিভ করতে।
— কিরে কোথায় তুই? কাজ শেষ হওয়ার পরতো তোর আর কোনো খোজ পেলাম না। বাকি টাকাটা নিবিনা নাকি?
— শ শশুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম ভাই। এখন বাড়িতেই আছি।
—- কাল ঠিক ওখানেই থাকবি যেখানে আমাদের ডিল হয়েছিলো।
— আচ্ছা ভাই, কখন আসতে হবে?
—- ভোর পাঁচটায়।
—- ওকে ভাই।
ঠাস……. সালা তুইতো বললি, শুধু ফোনেই কথা হয়েছিলো।
,
,
,
,
সকালে ঘুমু ঘুমু চোখে চায়ের কাপ এর সাথে প্রিচের ঘর্ষনের কিছু আওয়াজ কানে আসে তার।
ভাবলো মোহনা চা নিয়ে এসেছে হয়তো।
চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে আদিত্ব, নতুন বৌকে একটু রাগাবে বলে।
এদিকে অনেক্ষন ধরে চা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে অর্পিতা। আদিত্বের উঠার কোনো নাম গন্ধও নেই।
ওদিকে মোহনা মোহনা ঘুম থেকে উঠে এগিয়ে আসছে আদিত্বের রুমের দিকে।
অর্পিতা মনে এক রাশ বিরক্ত নিয়ে চায়ের কাপটা রেখে সেখান থেকে হাটা ধরলো।
পেছন থেকে আদিত্ব তার হাতটা ধরে হিচকে টান দিয়ে নিজের বুকে নিয়ে এলো।
মোহনা দরজার সামনে এসেই এক মুহুর্তের জন্য স্তন্দ হয়ে গেলো। আদিত্ব অর্পিতাকে জড়িয়ে ধরে আছে এটা কি করে মেনে নিবে সে?
হটাৎ আদিত্ব খেয়াল করে তার বুকে মোহনা নয় বরং অর্পিতা। মুহুর্তেই অর্পিতাকে ছেরে দিলো আদিত্ব। কি করতে কি করে ফেললো সে? অর্পিতা এখনো তার বুকের উপর শুয়ে আছে।
দরজার দিকে আদিত্বের চোখ পরতেই দেখে মোহনা মুখে দুইটা হাত দিয়ে চেপে ধরে দৌড় দিলো নিজের রুমের দিকে।
অর্পিতাকে ধাক্কা দিয়ে সরাতেই অর্পিতা একটা লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে সেখান থেকে দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো। আদিত্বের বুঝতে বাকি নেই কত বড় একটা ভুল করে ফেললো সে।
যাষ্ট মিসটেক।
_________________________
To be continue………..