#সন্ধ্যালয়ের_প্রণয়
#আফসানা_মিমি
| তেরো তম পর্ব |
❌[কোনোভাবেই কপি করা যাবে না]❌
প্রদোষকালের অগ্রভাগে দূর আকাশের নিলীমায় লাল আভা সরে গিয়েছে। ধরণীতে অন্ধকারের আগমন ঘটেছে। পুরো আকাশ গাঢ় অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। প্রকৃতির গুমোট রূপে হাজির যখন তখন পৃথিবীর বুকে বৃষ্টি ঝড়ঝড় করে ঝড়ে পড়বে।
বাহিরের পরিবেশের গুমোট রূপেও আজ সরকার বাড়ির অন্দরমহলে ঝলমলে করে তুলেছে। নানান সাজ সজ্জায় সজ্জিত সরকার বাড়ির অন্দর মহল। বিশিষ্ট ব্যাক্তি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ আজ উপস্থিত হয়েছেন সরকার বাড়িতে।
নিলয় পূর্বের মত কোন ত্রুটি রাখতে চায়নি অনুষ্ঠানে তারজন্য এবারের অনুষ্ঠান বাগানে না করে সরকার বাড়ির অন্দরমহলে আয়োজন করেছে। আরিফ সরকার তার রাজকীয় চেয়ারে বসে সবকিছু পর্যালোচনা করছেন। আজ সরকার বাড়ির বঁধূরা অনুষ্ঠানে শামিল হয়েছেন। নিলয়ের মা এবং সন্ধ্যার মা আজ কয়েক বছর পর মন খুলে গপিস করছে। ফারুক সরকারের বউ বাবার বাড়ি। নিলয় মা-চাচীর খোশ গল্প দেখে হাসে। চোখ বারবার ঘুরিয়ে সন্ধ্যাকে খোঁজ করে সে।
” সন্ধ্যা আপু, দরজা খুলো। আমি নীলিমা।”
ল্যাপটপের স্ক্রিনে খুব মনোযোগ সহকারে কিছু দেখছে সন্ধ্যা। নিচের জমকালো অনুষ্ঠানের দিকে মন নেই তার। নিলয়কে দোষী প্রমাণ করতে এবং নিজ হাতে ধ্বংস করতে তার এত ব্যস্ততা। নীলিমার ডাকে সে ভয় পেয়ে যায়। ল্যাপটপের কাজ আংশিক রেখেই উঠে পড়ে সে। দরজা খুলতেই নীলিমার হাস্যজ্বল মুখশ্রী সে দেখতে পায়। প্রশ্নবিদ্ধ চোখে সে তাকায় তা দেখে নীলিমা মুখ ফুলিয়ে বলে,
” আমি বড়ো আপুর আদর পাওয়ার জন্য দিবারাত্রি ছটফট করছি। একটু আদর দিবে আপুনি?”
সন্ধ্যার চোখ ভরে আসে জলে। দুই হাত বাড়িয়ে দেয় নীলিমার দিকে। এই মেয়েকে সন্ধ্যাবতী খুব ভালোবাসে। দূর থেকে শুধু নীলিমাকে বড়ো হতে দেখেছে সন্ধ্যা। সে দেখেছে ছোট বোনের ছটফটে ভাব। ছোট বেলা সন্ধ্যার কাছাকাছি থাকতে চাইতো সদা। সন্ধ্যা এড়িয়ে চলতো। আজ বুকের পাথর সরিয়ে ছোট বোনকে আলিঙ্গন করে নিল সন্ধ্যা।
” মিস ইউ বেবি ডল লিলিপুট!”
নীলিমার সন্ধ্যাকে ছেড়ে দেয় তার চোখেও পানি। হাতের শপিং ব্যাগ সন্ধ্যাকে দেখিয়ে সে বলে,
” আমাকে সাজিয়ে দাও আপুনি। আম্মু ছাড়া আমার চুল বাঁধা হয় না।”
নীলিমার বাচ্চামো দেখে সন্ধ্যার মন ভালো হয়ে যায়। নীলিমাকে সুন্দর করে সাজিয়ে দেয় সে। গোলাপী গাউনে সন্ধ্যাকে পরী দেখাচ্ছে। ঠোঁটে লিপস্টিক লাগিয়ে সন্ধ্যা নীলিমার কটালে চুমু এঁকে বলে, ” মাশাআল্লাহ আমার লিলিপুটকে সত্যি সত্যিই বেবি ডল লাগছে।”
বড়ো আপুর মুখের তারিফ শুনে নীলিমার ঠোঁটের হাসি আরো প্রশস্ত হয়। সে সন্ধ্যাকে ছেড়ে সারা ঘর ঘুরঘুর করে দেখছে। ল্যাপটপের সামনে যেতেই নীলিমা দাঁড়িয়ে যায়। ল্যাপটপের স্ক্রিনে নিলয়ের নাম দেখে সন্ধ্যাকে প্রশ্ন করে সে,
” ভাইয়ার সাথে ঝগড়া লেগেছো নাকি? লাল কালি দিয়ে ভাইয়ার নামের উপর ক্রস চিহ্ন দিয়েছ যে?”
” তোমার ভাইয়ের সাথে কঠিন হিসাবনিকাশ বাকী আছে। সেই কাজই করছি।”
নীলিমার মাথায় কিছুই ঢুকেনি। সে সন্ধ্যার সামনে এসে বলে,
” তুমি ভাইয়াকে আমার মত ভালোবাসতে পারো না? ভাইয়া তো তোমাকে অনেক ভালোবাসে।”
” ভালোবাসা যে কেড়ে নেয় সে কী আদৌও ভালোবাসতে পারে? একজন মানুষের মনে ভালোবাসা থাকলে সে কখনো অপরজনের ভালোবাসাকে দূরে সড়াতে পারে না।”
সন্ধ্যাকে তৈরী হতে না দেখে নীলিমা অবাক হয়ে যায়। সন্ধ্যার সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলে,
” আপু তুমি তৈরি হবে না?”
” আমি সেখানে যাব না। তুমি চলে যাও লিলিপুট।”
” আমি তোমাকে ছাড়া এক পা এগোবো না। এই আমি বিছানার উপর বসলাম। তুমি এখনই তৈরি হয়ে আমার সাথে নিচে যাবে।”
নীলিমার জিদের কাছে সন্ধ্যা হার মানে। নীলিমার সাথে ম্যাচিং করে শাড়ি পড়ে নেয় সে। হালকা একটু সেজে কানের বড় পাথরের ঝুমকো পরে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় দুই বোন।
নিলয় বারবার হাতের বন্ধনীতে তাকাচ্ছে। কাঙ্খিত একজন মানুষের অপেক্ষা করছে সে। সরকার বাড়ির প্রধান ফটকে এই নিয়ে বিশ বারের মতো নজর দিয়েছে সে। কাঙ্খিত মানুষের কোন আভাস নেই। সে মানুষটা না আসলে যে নিলয় অনুষ্ঠান শুরু করতে পারবে না।
” স্যার কিছু কথা ছিল।”
আকাশের ডাকে নিলয়ের স্তম্ভিত ফিরে আসে।
” বলো আকাশ, কি বলবে?”
” আপনি আমাকে যেই কাজটা দিয়েছেন সেই কাজ শেষ করেছি। এফাইলে আপনার দেওয়া কাজের এ টু জেড সবকিছু পাবেন। সবচেয়ে আশ্চর্যকর বিষয় হচ্ছে, কয়েকমাস পূর্বে যে মারা গেছে সে আমাদের অফিসের কেউ না। যাকে সন্দেহ করেছিলাম সে গ্রামে চলে গিয়েছিল আপনাদের বাসার অনুষ্ঠানের পর পরই।”
নিলয় চিন্তায় পড়ে যায়। রহস্যের সমাধান যে কবে,কীভাবে হবে সেটাই ভাবছে সে। আকাশের সাথে আলোচনার মধ্যে নিলয়ের সিঁড়ির দিকে নজর যায়। নিলয়ের পুরো দুনিয়া সেখানেই থমকে যায়, চোখ জোড়া স্থির হয়ে যায়। গোলাপি রঙে গোলাপি পরী সেজে সন্ধ্যা নিচে নামছে। কানের বড়ো ঝুমকা সন্ধ্যার হাসির তালে দুলছে। নিলয় চোখ বন্ধ করে নেয়। ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে ঠিক করে নেয়। নিলয় ভাবে সে আর সেদিকে তাকাবে না কিন্তু অবাধ্য চোখ জোড়া সেদিকেই চলে যায়। সন্ধ্যা কাছাকাছি আসতে নীলিমা ঘুরে বলে,
“আমাকে কেমন লাগছে ভাইয়া?”
নীলিমার প্রশ্নের উত্তরে নিলয় আনমনে উত্তর দেয়,
” অপূর্ব।”
নীলিমা ভাইয়ের চাহনি অনুসরণ করে। সন্ধ্যার দিকে তার স্থির চাহনি। মুচকি হেসে সে বলে,
“অপূর্ব আমাকে লাগছে। নাকি সন্ধ্যা আপুকে লাগছে?”
নীলিমার পাকা কথা পাশ থেকে রেহানা শুনে ফেলে। নীলিমার কান শক্ত করে ধরে বলে,
“ওরে পাকা মেয়ে! এত পাকা পাকা কথা শিখেছিস কবে থেকে? আর এদিকে আয় দেখি, তোর মাথার চুলগুলো ঠিক করে দেই।
সন্ধ্যাকে দেখে আকাশের ইচ্ছে করছে, শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে। সন্ধ্যাকে এতটাই প্রিটি লাগছে যে আকাশের ইচ্ছে করছে সন্ধ্যাকে বসিয়ে তাকিয়ে থাকতে। মনের অনুভূতি গোপন রাখলেও মুখের কথা আটকে রাখতে পারে না আকাশ। নিলয়ের সামনেই বলে,
” দোস্ত তোরে যা লাগছে না! বিশ্বাস কর দোস্ত, তোরে যদি আমি জানের জিগার দোস্ত না বানাতাম তাহলে একটা চান্স নিতাম এবং আজকে তোকে ধরে নিয়ে বিয়ে করে ফেলতাম।”
নিলয় আকাশের কথা শুনে ভ্রু কুচকায় সন্ধ্যা তা দেখে দাঁতের দাঁতে চেপে বলে,
” মুখে লাগাম দে আক্কাইস্সা। তোর যেন জন্য যেন আমার বাঁশ খেতে না হয়।”
আকাশ ঠোঁটে আঙ্গুল চেপে দাঁড়িয়ে রয় তা দেখে নিলয় আকাশের উদ্দেশ্য বলে,
” আপনার মা-বাবার নাম্বার দেন তো মিস্টার আকাশ। তাদেরকে বলি তাদের ছেলের অতি শীঘ্রই বিবাহের ব্যবস্থা করতে। কেননা তাদের ছেলের নজর আজকাল বড্ড খারাপ হয়ে যাচ্ছে, আর মুখের কথা নাই বললাম। মুখ তো যেখানে সেখানে অনবরত চলছে। দিন দিন নাম্বার দিন।”
আকাশ শুকনো ঢোক গিলে। সন্ধ্যা নাক মুছে বিড়বিড় করে বলে,
” ফেঁসেছে ফেঁসেছে আক্কাইস্সা ফেঁসেছে।”
আকাশ নিলয়ের দিকে বোকা হাসি ছুঁড়ে বলে,
” দুঃখিত স্যার আর কোনদিনও মেয়েদের দিকে তাকাবো না। সরি সরি মেয়েদের সাথে কথাই বলব না। আর সন্ধ্যার সাথে তো আরো আগে না। তবুও আমার বাবা মার নাম্বার চাইবেন না। আমি বাবা মাকে খুব ভয় পাই। এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাই না। আর আমার ভালবাসার মানুষ আছে তাকে আমি খুব ভালোবাসি বিয়ে করলে তো তাকেই করব। সন্ধ্যা আমার জানের জিগার দোস্ত। এমনি মজা করলাম আর কি।”
আকাশ বরাবরের মতো সন্ধাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে চলে যায় অন্য প্রান্তে। নিলয় সন্ধ্যা দুজনেই নীরব। আকাশ সন্ধ্যার সামনাসামনি দাঁড়ায়। সন্ধ্যার ভাবভঙ্গি লক্ষ্য করে। সন্ধ্যার একদম কাছাকাছি এসে বলে,
“ভালোবাসা অঙ্গীকার বলতে পারো। তুমি যদি কাউকে ভালবাসো আর প্রতিশ্রুতি নাও তার কাছে থাকার। দেখবে মায়া কাটাতে পারবেনা। সে চিরদিনের মত চলে গেলে মৃত লাশ হয়ে যাবে। ভালোবাসাকে এতটা সস্তা মনে করো না সন্ধ্যাবতী। ভালোবাসার মানুষটি খাঁটি হলে সে তোমাকে মন থেকে ভালবাসবে। ফেলে চলে যাবে না।”
” আমাকে এসব বলার কারণ কি জানতে পারি মিস্টার অসভ্য দুর্লয়?”
” প্রয়োজনীয় তাই বললাম।”
” ভালোবাসা তো আপনি কেড়ে নিয়েছেন। প্রতিহিংসার সৃষ্টি করেছেন মনে। প্রতিশোধ নিতে বাধ্য করেছেন। আপনার জন্য এমনকি পৃথিবীর কোন পুরুষের জন্য মনে কখনো অনুভূতি তৈরি হবে না। আপনি কি জানেন মিস্টার নিলয় নীলাভ! আপনি শুধুমাত্র ঘৃণার পাত্র!”
সন্ধ্যার কর্কশ কথা শুনে নিলয়ের মাথা গরম হয়ে যায়। সকলের আড়ালে সন্ধ্যবতীর হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় সরকার বাড়ির বাহিরে। সন্ধাকে একদম নিজের কাছে টেনে এনে বলে,
” এত ঘৃণা! কার জন্য এত ঘৃণা করছো যে কিনা তোমাকে ভালোবাসেনি। তোমাকে বোকা পেয়ে শুধুমাত্র ব্যবহার করেছে যে! এমন কিছু করিও না সন্ধ্যাবতী যার কারণে পরবর্তীতে আফসোস করবে। মনে রেখো আমি তোমার চেয়ে বড় এবং আমি যা করি ভেবেচিন্তে করি।”
সন্ধ্যা নিজেকে নিলয়ের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চিৎকার করে বলে,
” তাই বলে আপনি তাকে মে’রে ফেলবেন? এত বুঝেন আপনি? কেন করলেন এমন, কেন আমার ভালোবাসাকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিলেন। আপনার কাছে তো সব আছে। আমার কাছে তো শুধু এই ভালোবাসাটাই ছিল তাকেও কেড়ে নিয়েছেন। আমার হাসির কারণ কি আপনার সহ্য হয় না? তাকে আপনি আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। কেন, কেন?”
” শান্ত হও সন্ধ্যা। আমি কাউকে হ’ত্যা করিনি। সেই ঘটনা কেবলমাত্র দুর্ঘটনা ছিল। তাকে আটক রেখে আমি তোমার নিকট শুধু প্রমাণ করতে চাইছিলাম যে সে তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।”
সন্ধ্যা থামে না ফুঁপিয়ে কান্না করতে থাকে। এতদিনের জমানো সকল দুঃখ আজ কান্নার মাধ্যমে ধুয়ে মুছে দিচ্ছে সে।
সরকার বাড়িতে প্রধান ফটকে একটি গাড়ি প্রবেশ করায় নিলয় এবং সন্ধ্যা দুজনে সেদিকে তাকায়। নিলয় সন্ধ্যার কাছাকাছি এসে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,
” তোমার কান্না আমার সহ্য হচ্ছে না সন্ধ্যাবতী। আমি সেদিনের অপেক্ষায় আছি যেদিন তোমার চোখে মুখে আমার জন্য ঘৃণা নয় বরং অন্য কিছু দেখব। এবার চলো আমার সাথে, প্রধান অতিথি এসেছে। আপ্যায়ন করতে হবে এবং সেখানে আমাদের দুজনেরই উপস্থিত থাকতে হবে। ”
—————
অনুষ্ঠান জমজমাটভাবে আয়োজন করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানের পরিচিত মুখদের মধ্যে একটি মাত্র অপরিচিত মুখ রয়েছে সে হচ্ছে রাফসান। নিলয়ের জন্মদিনের প্রধান অতিথি রাফসান। যার আগমনে নিলয় খুব খুশি হয়েছে।
সন্ধ্যার রাফসানকে দেখামাত্রই আবারো ভাবনায় ডুবে যায়। লোকটার চোখ দুটো সন্ধ্যার খুব চেনা। হাঁটার ধরণ তার পরিচিত। ফুল দিয়ে স্বাগতম জানার সময় রাফসানের হাতের সাথে সন্ধ্যার হাত স্পর্শ করে। সন্ধ্যা রাফসানের দিকে তাকালে দেখতে পায় রাফসান বাঁকা চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। বর্তমানে রাফসানকে সন্ধ্যার কাছে উটকো ঝামেলা মনে হচ্ছে।
কেক কা’টা’র মুহূর্তে নিলয়ের মা সন্ধ্যাকে নিলয়ের পাশে দাঁড় করায়। দূর থেকে মন ভরে দুজনকে দেখে নেয়। বলা তো যায় না কখন আবার এমন সুযোগ আসবে।
নিলয়ের সকল ব্যস্ততা রাফসানকে ঘিরে। তাকে যদি কোন ভাবে খুশি করা যায় তাহলে তাদের প্রজেক্টটা আরো ভালো আগাবে।
কেক কা’টা হলে নিলয় আরিফ সরকারের মুখে তুলে দেয়। এরপর তার মাকে খাওয়ায় এরপর নীলিমাকে। এরপর কেক হাত চলে যায় সন্ধ্যার দিকে। সন্ধ্যার মনোযোগ অদূরে বসা রাফসানের দিকে। এখানে কে কি করছে না করছে তার দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই তার। সন্ধ্যার মুখের সামনে কেক ধরায় সন্ধ্যা নিলয়েরর মুখের দিকে ফিরে তাকায়। দরকারি কাজে ব্যাঘাত ঘটায় সে খুবই বিরক্ত।
” কি! খেতে বলছি। আমাকে দেখতে বলিনি। আমি জানি আমি অনেক সুদর্শন এবং তোমার চোখে বুড়া লোক।”
সন্ধ্যা ভেংচি কে’টে অল্প একটু কেক মুখে নেয়। নিলয় বাঁকা হাসে। সন্ধ্যা চলে যেতে নিলেই হাত আটকে ধরে এরপর সন্ধ্যা খাওয়া অংশ থেকে কেক মুখে ঢুকিয়ে বলে,
” কেক অনেক মিষ্টি, তাই না মিস ঐরাবতী?”
” আপনি ইচ্ছে করে এমনটা করেছেন তাই না! আমি আপনাকে,,,,,
” এই মেয়ে চুপ। সবসময় শরীরে এত কারেন্ট থাকে কেন। হ্যাঁ! যখন তখন শুধু আমার সাথে ঝগড়া করতে ইচ্ছে করে।”
সন্ধ্যা কিছু বলতে নেবে তার আগেই আরিফ সরকারের কথা কানে ভেসে আসে। নিলয় সন্ধ্যার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে দাদার কাছে চলে যায়। টেবিলের পর থেকে এক টুকরো কেক দাদার মুখে কেক ঢুকিয়ে বলে,
” দাদা দোয়া করে দাও।”
আরিফ আজাদের মন আজ ভীষণ খুশি। নিলয়ের কথার প্রত্যুত্তরে বলে,
” কি দোয়া করব। যেন সন্ধ্যার মত বউ পাও!”
নিলয় চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায় আড়চোখে আরিফ আজাদের মুখের ভাবভঙ্গি বুঝে নেয়।
” বুড়ো হয়েছ এখনো তোমার দুষ্টুমি যায় নাই, তাই না! আমি বিয়ে করছি না। মেয়ে মানুষ প্রতারক হয়। তারা ছেলেদের মন ভাঙতে জানে, ভালোবাসতে জানে না।”
” আচ্ছা! তাহলে আমার নাতনিকে এত যত্ন করে কেক খাইয়ে সেই অংশ আবার মুখে নিলে বিষয়টা কেমন না!”
নিলয় বুঝতে পারছে আরিফ সরকার আজ তাকে ইচ্ছা মতো ধুলাবে। তাই মুঠোফোনে কল আসার বাহানা করে কাজ সামনে থেকে কে’টে পড়ে সে।
নিলয় আশেপাশে তাকিয়ে সন্ধ্যাকে খুঁজছে। কিন্তু সন্ধ্যার কোন খবর নেই। অবশেষে সন্ধ্যাকে খুঁজে পায় নীলিমার সাথে। দুই বোন মিলে সেলফি তুলছে। নিলয়ের একটু হিংসে হলো যেন দুই বোনের উপর। নিলয়কে একটু সাথে নিলে কি হয় তাদের? নিলয় গায়ের ব্লেজার ঠিক করে একটু ভাব নিয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে দুই বোনের ঠিক পিছনটা গিয়ে দাঁড়ায়।
” এখানে কি হচ্ছে শুনি?”
সন্ধ্যা নিলয়কে দেখে ভ্রু যুগল কুঁচকায়। সন্ধ্যা যেখানে যাচ্ছে নিলয় ঠিক সেখানেই চলে আসে। ব্যাপারটা তার মোটেও পছন্দ না। তাই সে নিলয়েরকে খোঁচা দিয়ে বলে,
” আপনাকে বলা যাবে না। এখানে এসেছেন কেন? আপনার যত অতিথি আছে তাদের সমাদর করুন। যান এখান থেকে।”
” আজকাল আপনার মুখ একটু বেশি চলে মিস ঐরাবতী। আপনি ভুলে যান যে আমি আপনার,,,,,,
নিলয়ের পুরো কথা শেষ হতে দিল না সন্ধ্যা তার আগেই বলে,
” হ্যাঁ হ্যাঁ আপনি আমার বস লাগেন। আপনি আমার গুরুজন হন। আপনি আমার বয়সে খুবই বড়ো। আপনি অনেক বুদ্ধিমান, আপনি হেন আপনি তেন। ভাই! এবারে মাফ করুন। বাড়িতে অন্ততপক্ষে মন ভরে শ্বাস নিতে দেন।”
নিলয় ভ্রু কুঁচকায়। সন্ধ্যার মুখের চঞ্চলতা দেখে মনে মনে খুশি হয়।
“আমি তো বস বলতে চাইনি। বলতে চেয়েছিলাম আজকে আমার জন্মদিন। সো যেখানে পরিবারের সবাই থাকবে সেখানে আমিও থাকব।”
দুজনের কথা কাটাকাটিতে নীলিমা বাচ্চাটা খুবই বিরক্ত।
” তোমরা দুজন সারাক্ষণ কি ঝগড়াই করে যাবে! আসো সেলফি তুলি।”
নীলিমা সামনে সন্ধ্যা আর নিলয় তার থেকে একটু দূরে। দুজনে এখনো ঝগড়া করছে। আঙ্গুল তুলে। এর মাঝেই ক্লিক। সুন্দর একটি ঝগড়াটে ছবি উঠে পড়েছে নীলিমার ফোনে।
নীলিমা কোমড়ে হাত দিয়ে দুজনের সামনে দাঁড়ায়।
” দিলে তো ছবিটা নষ্ট করে? তোমরা সারাদিন এত ঝগড়া করো কেন। একটা কাজ কর, তোমরা ঝগড়া না করে দুষ্টু মিষ্টি আলাপ করো। দেখবে তোমাদের মাঝখানে ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে।”
সন্ধ্যা নিলয়ের পাশ থেকে নীলিমার কাছে দাঁড়ায়। নিলয়ের দিকে গরম চোখে তাকিয়ে বলে
” দুষ্টু মিষ্টি কথা! আর সেটা তোমার এই ডাম্বল মার্কা ভাইয়ের সাথে? অসম্ভব। তোমার ভাই হচ্ছে আস্ত একটা অসভ্য, রা’ক্ষ’স। এর সাথে কখনো মিষ্টি কথা বলা যায় না। তেতো কথা এর জন্য ঠিক আছে।”
সন্ধ্যা নিলয়কে ফেলে আবারো চলে যায়। সেখান থেক যাওয়ার আগে আঙ্গুল তুলে বলে যায়,
” আমার একদম আমার পিছু নিবেন না। নয়তো নাকে এমন একটা ঘুসি দিব যেন নিজের নাম ভুলে যান।”
নিলয় আজ মন খুলে হাসছে। সন্ধ্যার পাগলামি দেখে ভীষণ মজা পাচ্ছে। এদিকে নীলিমা দুজনের কান্ড দেখে মাথায় হাত দিয়ে চলে যায় মায়ের কাছে আজকের ঘটনা বলার জন্য।
আজ সন্ধাকে একটু না, একটু বেশি জ্বালাতে ইচ্ছে করছে নিলয়ের। তাইতো সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে সন্ধ্যার পেছনে ছুটে।
—————–
আসমান গাঢ় অন্ধকার। এলোমেলো বাতাস বইছে। সন্ধ্যা ছাদে চলে আসে। দু হাত মেলে রয়েছে। এতে বাতাস সন্ধ্যার শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে। ফোনের ম্যাসেজের টিংটং আওয়াজে সন্ধ্যার সতেজ মন নষ্ট হয়ে যায়। মুঠোফোনের দিকে তাকিয়ে ম্যাসেজ অপশনে ক্লিক করে ম্যাসেজ দেখে সন্ধ্যার শরীর কাঁপতে থাকে। ফোন হাত থেকে ফেলে দেয় সে। মাথার কেশব টেনে বলে,
” এ হতে পারে না। সে কীভাবে আসবে! সে তো ম’রে গেছে, আমারই চোখের সামনে।”
চলবে……….
#সন্ধ্যালয়ের_প্রণয়
#আফসানা_মিমি
| চোদ্দ তম পর্ব |
❌[কোনোভাবেই কপি করা যাবে না]❌
” তুমি আজকাল আরিফ সরকারের পরিবারে একটু বেশীই মেলামেশা করছো। কারণ কী?”
অপরাধীর ন্যায় মা-মেয়ে নীরব সরকারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অনুষ্ঠান শেষে এই মাত্র ফিরেছে তারা। নীরব সরকার তখন দরজার সামনেই বসা ছিল। আজ সে অনুষ্ঠানে যায়নি। স্ত্রী এবং মেয়েকেও নিষেধ করেছিল সেখানে যেতে। তারা নীরবের আদেশ অমান্য করে সেখানে গিয়েছিল। নীরব সরকার রেগে আছেন। স্ত্রী সন্তানের নীরবতা তার রাগকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।
” চুপ করে আছো কেন? সন্ধ্যার তো কিছু মনে নেই। তুমি কীভাবে ভুলে গেলে সুমি? তুমি কী ভুলে গিয়েছ আমার এই অবস্থার জন্য ওরা দায়ী?”
সুমি স্বামীর ধমকে কেঁপে উঠে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ের হাত শক্ত করে ধরে রয়েছেন।
” বাবা আর কতো এভাবে একা বন্দি থাকবে। দাদা আর নিলয় ভাইয়া ছাড়া বাকী সবাই তো কোন দোষ করেনি। মাকে কেন তাদের থেকে দূরে রাখছো।”
মুখের উপর কথা বলা নীরব সরকার একদমই পছন্দ করেন না। তার মধ্যে এত কষ্টে গড়ে তোলা মেয়ে যখন তার মুখের উপর কথা বলে তখন রাগ আরো উচ্চ শিখরে উঠে যায়। নীরব সরকার পা অচল হলেও হাত অচল নয়। টেবিলের উপর থাকা ফুলদানি সজোরে মাটিতে আঘাত করে চিৎকার করে উঠে সে।
” যেই মেয়ে আমার মুখের উপর কোনদিনও কথা বলেনি, আমি যা বলেছি তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। আজ সেই মেয়ে আমাকে গলা উঁচু করে কথা বলছে। আমি বুঝেছি, সবকিছুই আরিফ সরকারের পরিকল্পনা। আমার কাছ থেকে আমার পরিবারকে আলাদা করতে চাইছে সে। এত অবনতি সন্ধ্যা! একদিন আমার চোখের আড়াল হয়েছিস বলে তোর এত অবনতি হয়েছে? আজ বুঝলাম আমার পাশে কেউ নেই। আজ অচল বলে সবাই দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।”
” বাবা আমি এভাবে বলতে চাইনি। আমি শুধু বলতে চাইছি বড়ো মা আর নীলিমা তো কোন দোষ করেনি। এছাড়া ছোট চাচ্চু এবং চাচীও তো কোন দোষ করেনি। তাদের থেকে কেন আমরা আলাদা থাকবো? কেন তাদের সাথে কথা বলতে পারব না?”
নীরব সরকারের হুইল চেয়ারে এগিয়ে আসেন। নিজের স্ত্রীর গালে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলেন,
” তোমার জন্য আজকে আমার মেয়ে আমার উপর আঙ্গুল তুলছে। তুমি যদি আজকে অনুষ্ঠানে না যেতে তাহলে আমার মেয়েও যেত না। তুমি তো এটাই চেয়েছিলে। বন্দি জীবন তো তোমার পছন্দ নয়। নিজে যেমন উড়নচণ্ডী মেয়েকেও তেমন বানাতে চেয়েছিলে। এবার খুশি তো? যাও দুজনে বিদায় হও আমার বাড়ি থেকে। আমার কাউকে লাগবে না। আমি একাই যথেষ্ট। পরবর্তী পরিকল্পনা আমি একাই করব।”
নীরব সরকার যেন আজ নিজের মধ্যে নেই। হিতাহিতবোধশূন্য হয়ে গেছে সে। একাই চলে যায় নিজের ঘরে। শব্দ করে দরজা আটকে বসে রয় সেখানে। এদিকে মা-মেয়ে দুজনে চোখে অঝোর ধারায় পানি ঝরছে।
” মা! বাবা এমন কেন? আমি কেন সবার মত হতে পারলাম না মা? কেন আমাকে প্রতিশোধের মতো এত কঠিন কাজের বাহক হতে হলো। এই প্রতিশোধ কবে শেষ হবে মা? আমি আর পারছি না।”
সুমি মেয়েকে বুকে আগলে নেয়। আদর করতে থাকে মেয়েকে।
” সব ঠিক হয়ে যাবে মা। চিন্তা করিস না। যেদিন আমার লাশ এ বাড়িতে পড়বে সেদিনই সব নীরব হয়ে যাবে। তোর বাবা ও নিরব হয়ে যাবে।”
—————–
ধরণীতে আরো একটি নতুন দিনের আগমন ঘটেছে। সকলে ব্যস্ত নিজ কর্মজীবনে। অফিসের সময় হওয়ার আধা ঘন্টা পূর্বেই সন্ধ্যা অফিসে চলে আসে। পুরোনো ফাইল গুলো দেখতে থাকে সে। অফিসের দারোয়ান সন্ধ্যার আগমনটা নিলয়ের কাছে ফোন করে জানিয়ে দেয়। সন্ধ্যার এত দ্রুত অফিসে আসা নিলয়কে ভাবায়। তাই সেও দ্রুত অফিসে চলে আসে।
অফিসে পৌঁছাতেই নিলয়ের সর্বপ্রথম সন্ধ্যার ডেক্সের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। মেয়েটা এক মনে কাজ করছে। তার পাশে যে একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে সেটার খবর নেই তার।
“আজ এত সকালে অফিসে?বাসার সবকিছু ঠিক আছে তো?”
সন্ধ্যা ভাবে নিলয় সন্ধ্যার মুখের ভাবভঙ্গি কীভাবে বুঝতে পারে? সন্ধ্যার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। তবুও হাসি মুখে তাকালো নিলয়ের দিকে এবং বলল,
” সব ঠিক আছে। আমার কিছু কাজ বাকি ছিল তাই তাড়াতাড়ি চলে এসেছি।”
নিলয় সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে খেয়াল করে দেখল সন্ধ্যার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে যা সাধারণত কান্না করলে হয়ে থাকে। নিলয় কিছু না বলে নিজের কেবিনে চলে যায়। সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে সে সন্ধাকে দেখছে। সন্ধ্যা নিচের দিকে তাকিয়ে কাজ করছে ঠিকই কিন্তু কিছুক্ষণ পরপর নাক টানছে। নিলয়ের মন খারাপ হয়ে যায়। অন্তরে ব্যাথা শুরু হয়। মুঠোফোন বের করে সন্ধ্যাকে কল করে সে।
” দুই কাপ কফি নিয়ে আমার কেবিনে আসুন মিস ঐরাবতী। খবরদার! গতবারের মতো উল্টাপাল্টা কোন কাজ করবেন না।”
নিলয়ের ফোন পেয়ে সন্ধ্যা খানিকটা ভয় পায়। আজ অফিসে সে একা। সে ভাবে নিলয় যদি তার সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করে বসে! পরক্ষণে ভাবে, নিলয় তো এমন না। সে পাশে থাকলে সন্ধ্যার ভয় কম হয়। সন্ধ্যা কখনো প্রকাশ করে না। কিছুক্ষণ পর সে বুকে কিছুটা সহজ সঞ্চয় করে এগিয়ে যায় নিলয়ের আদিশ পালন করতে।
আজ সন্ধ্যার নিলয়ের সাথে ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছে না। এমনকি তার আদেশ পালন করতে ইচ্ছে করছে না। বর্তমানে তার একজন সঙ্গীর প্রয়োজন যার পাশে সন্ধ্যা শুধু বসে থাকলেই চলবে। তাই তো সন্ধ্যা নিজের জন্য, হ্যাঁ শুধুমাত্র নিজের জন্য নিলয়ের কথা শুনছে।
দুই কাপ কফি বানিয়ে সন্ধ্যা দরজায় করাঘাত না করে, অনুমতি না নিয়েই সন্ধ্যা প্রবেশ করে নিলয়ের কেবিনে। নিলয় তখন ফাইল দেখায় ব্যস্ত। দরজায় খোলার আওয়াজ পেয়ে চোখ তুলে তাকায়। সন্ধ্যার মুখ দেখে বুঝতে পারে সত্যিই তার মন খারা।প তাই বেয়াদবির জন্য শাস্তি না দিয়ে তাকে চেয়ারে বসতে বলে সে।
” চাচ্চু বকেছে?”
সন্ধ্যা নিজেকে আটকে রাখতে পারে না। রাগ, অহংকার সব ভুলে কান্না করে দেয় সে। নিলয় চমকে তাকায় সন্ধ্যার কাছে যেতে নিয়েও কিছু ভেবে বসে থাকে সে।
” কি হয়েছে বলো আমাকে।”
পাঁচ মিনিট পর সন্ধ্যা মুখ খুলে। চোখের পানি মুছে প্রতুত্তুরে বলে,
” কিছু হয়নি। পুরোনো মানুষের কথা স্বরণে এসেছে।”
নিলয় খুব বুঝতে পারে পুরোনো মানুষটা কে। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে সন্ধ্যার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সে।
” অতীত ভুলে যাওয়াই ভালো। অতীত যত মনে করবে তত কষ্ট পাবে। বর্তমান নিয়ে ভাবো! ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করো। তোমার সামনে যে আছে তার দিকে মনোনিবেশ করো।”
সন্ধ্যা চোখ তুলে নিলয়ের দিকে তাকায়। এক কাপ কফি নিলয়ের দিকে এগিয়ে ধরে।
” আজ আমার জন্য যে কফি বানিয়েছ সেটা তুমি খাবে এবং তোমারটা আমি খাব। আমার কেন যেন তোমাকে বিশ্বাস হচ্ছে না।”
সন্ধ্যা কিছু না বলে তাই করে। নিজের জন্য বানানো কফিটা নিলয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে নিলয়ের জন্য বানানো কফিতে চুমুক বসায়।
কক্ষজুড়ে পীনপতন নীরবতা। শুধু দুজন মানুষের নিশ্বাসের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। কফি খাওয়ার মাঝেই সন্ধ্যার ফোনে একটি মেসেজ আসে।
মেসেজ ওপেন করতে সন্ধ্যার হাত থেকে কফির কাপ নিচে পড়ে যায়। নিলয় কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ বনে যায় চেয়ার থেকে উঠে সন্ধ্যার কাছে গিয়ে সন্ধ্যাকে আগলে নেয় সে।
” কি হয়েছে সন্ধ্যাবতী?”
সন্ধ্যা কাঁপছে। তার দ্বারা এত বড়ো ভুল হয়েছে ভেবে আফসোস করছে। কাঁপা কন্ঠস্বরে সে নিলয়ের উদ্দেশ্যে বলে,
” আপনি ভুল ছিলেন না। সে বেঁচে আছে। আমাদের ধোঁকা দিয়েছে সে। আমাদের নিয়ে খেলছে।”
নিলয়ের মাথায় সন্ধ্যার কথার আগামাথা কিছুই ঢোকেনি। সন্ধ্যাকে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই সন্ধ্যা চেয়ার থেকে উঠে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়। নিলয়ের সন্ধ্যার পিছু নিতেই দেখতে পায় সন্ধ্যা অঠিস থেকে বের হয়ে গেছে।
নিলয় হতাশ হয়ে যায়। মুঠোফোন বের করে সন্ধ্যাকে কয়েকবার ফোন করে। ফোন বন্ধ। নিলয়ের চিন্তা হয়। আপনমনে বলে,
” কি হয়েছে তোমার?”
——————
অন্ধকার ঘরে দুজন মানুষ বসে আছে। তাদের পাশেই দেয়ালে সরকার বাড়ির প্রতিটি সদস্যের ছবি টাঙানো। অর্নব সরকারের ছবির উপর ক্রস চিহ্ন দেওয়া। দুজন লোক হাসছে। একে অপরকে বলছে,
” সরকার বাড়ির বিনাশ পনেরো বছর আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। শা’লা অর্নব সরকার ম’রা’র আগে আমাদের এমনভাবে ফা’সি’য়ে’ছি’ল। ছোটটাকেও মে’রে ফেলতে চাইছিলাম কিন্তু পারিনি। অর্নব বাঁচিয়ে নিজে ম’রে’ছে। তবে যাই হোক এখন আমরা আবার ফিরে এসেছি। এবার আমাদের সাথে করা প্রতিটি অন্যায়ের প্রতিশোধ নিবো।”
” তুমি একা নয়। এবার আমিও আছি তোমার সাথে। আমাদের প্রথম টার্গেট হবে সরকার বাড়ির বিশ্বস্ত মেয়ের উপর। মিস সন্ধ্যা। যে শেষ হলে, সরকার বাড়ি অর্ধেক আমাদের হাতে চলে আসবে।
দুজন লোক উচ্চস্বরে হাসছে। সরকার বাড়ির সদস্যদের উপর তাদের নজর পড়েছে। নিলয় কী বাঁচাতে পারবে নিজের পরিবারকে?
চলবে……..